খেলোয়াড় জন্মায় না, সৃষ্টি করতে হয়। মেধা ও প্রতিভা থাকলেই হবে না, এটি বিকশিত করতে না পারলে তো সবকিছু অর্থহীন। জনমিতিক লভ্যাংশ (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) অধরাই থেকে যাবে। সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াঙ্গনে চিন্তাশীল প্রক্রিয়া।
আর এই প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম শুরু হয় একদম ‘এন্ট্রি লেভেল’ থেকে। যে দেশগুলো খেলাধুলায় এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, তাদের সংস্কৃতিতে ‘ক্যাচ দেম ইয়ং’ স্লোগানটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের অধিকারী। বর্তমান ও ভবিষ্যতের ক্রীড়াঙ্গনের গতিপথ নির্মাণের মৌলিক উপাদান তো এখান থেকেই জোগান দেওয়া হয়। হঠাৎ করে জোড়াতালি দিয়ে ভবিষ্যতের পথ তৈরি করা যায় না।
ক্রীড়াঙ্গনে বড় সত্যি হলো এন্ট্রি লেভেল থেকে স্বপ্নের পথ ধরে হাঁটা শুরু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানেই লুকিয়ে আছে আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্ন। ছোট ছোট ছেলে ও মেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত এবং আনন্দের সঙ্গে ফুটবল খেলার জন্য এগিয়ে আসছে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্রীড়াঙ্গনে আধুনিক বিজ্ঞানের চর্চার এখন জয়জয়কার।
বিজ্ঞান ছাড়া ক্রীড়াঙ্গন ভাবা যায় না। দেহ ও মনোবিজ্ঞানের সমন্বয়ে খেলার চর্চা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এটি কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয়। ক্লাবের ফুটবল একাডেমিতে প্রবল উৎসাহ নিয়ে সম্পৃক্ত হচ্ছে শিশু, কিশোর ও তরুণ। একাডেমির পাকা জহুরিরা তাদের ঘষে-মেজে ছাঁচমাফিক তৈরি করে দিচ্ছেন।
দেশে দেশে ক্লাবগুলো খেলোয়াড় সৃষ্টি করে থাকে তাদের একাডেমি ও সুস্থ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
ক্লাবের আবাসিক ও অনাবাসিক একাডেমি হলো খেলোয়াড় তৈরির আসল কারখানা। ক্লাব তার একাডেমির মাধ্যমে নিজস্ব চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তৈরি করা খেলোয়াড়দের অন্যদের কাছে নিয়মিতভাবে বিক্রি করে। এটি একটি বহুল স্বীকৃত রমরমা ব্যবসা। এই সংস্কৃতিতে আমাদের দেশের ফুটবল ইন্ডাস্ট্রি অনেক পিছিয়ে আছে। তবে আশার কথা, ফুটবল ক্লাবের একাডেমির প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। ফুটবলে পেশাদারির কোনো বিকল্প নেই। ফুটবল তো শুধু খেলা নয়, শিল্পের চর্চাও বটে।
স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ফুটবল চত্বরে দুটি ক্লাবের আগমন ও ভূমিকা স্মরণীয় এবং উল্লেখ করার মতো। একটি হলো আবাহনী ক্রীড়া চক্র, বর্তমানে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড হিসেবে পরিচিত এবং অন্যটি হলো খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপিপাসু পরিবারের মালিকানাধীন দেশের বৃহৎ করপোরেট গ্রুপ বসুন্ধরার ‘বসুন্ধরা কিংস’। দুটি ক্লাবের শুরু এলাকার ক্লাব হিসেবে হলেও জাতীয় ক্লাবের পরিচিতি পেতে সময় লাগেনি। ক্লাব দুটির পরিচিতি শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও আছে। তবে ফুটবলের জন্য আধুনিক কাঠামো নির্মাণ, আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি এবং পেশাদার ক্লাব হিসেবে বসুন্ধরা কিংস ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের চেয়ে অনুপাতে অনেক ওপরে। বসুন্ধরা গ্রুপ সময়কে পড়তে পেরেছে বলেই এগিয়ে চলেছে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘এন’ ব্লকে আধুনিক মাল্টিস্পোর্টস কমপ্লেক্সে বসুন্ধরা কিংসের নিজস্ব আধুনিক অ্যারেনা নির্মাণের পাশাপাশি (অ্যারেনাটি ফিফা ও এএফসি কর্তৃক স্বীকৃত) কয়েকটি উন্নতমানের প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ায় আর কোনো প্রাইভেট ক্লাব এখন পর্যন্ত করেনি। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রথম থেকেই চেয়েছে দেশের ফুটবলের মানোন্নয়নের পাশাপাশি খেলার সংস্কৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধন করতে! গ্রুপের চেয়ারম্যান ক্রীড়ানুরাগী আহমেদ আকবর সোবহান প্রথম থেকেই চেয়েছেন শুধু গ্রুপের নিজস্ব ক্লাব বসুন্ধরা কিংস নয়, ফুটবলসংশ্লিষ্ট সব ক্লাব ও অংশীদারকে সম্পৃক্ত করে হারিয়ে যাওয়া ফুটবলের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে এবং মানুষকে আবার ফুটবল মাঠের প্রতি আকৃষ্ট করতে।
বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট মো. ইমরুল হাসান জানিয়েছেন, ‘আমরা কখনো চেয়ারম্যান স্যারের নীতি, দর্শন এবং স্বপ্নের বাইরে যাইনি। বিভিন্ন সময়ে প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে, আর এটাই জীবন, সবকিছু মোকাবেলাও করা হয়েছে পেশাদার মনোভাব নিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, একতাবদ্ধ শক্তি কখনো পরাজিত হয় না। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবই।’
২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার উদ্বোধন করেন গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। সেদিন তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন হলো ক্লাবের বড় একটি আবাসিক একাডেমি, যেখানে এক হাজার ছেলে থেকে ফুটবল খেলা শিখবে।’ একাডেমি বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার আগে ছোট পরিসরে অনাবাসিক একাডেমি শুরু হয়ে যাবে। সেদিন তিনি আরো বলেছেন, দেশের বাইরে থেকে বেশ কয়েকটি ক্লাব একাডেমিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে।
২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর তিন গ্রুপে ছয় থেকে ১০, ১১ থেকে ১৪ এবং ১৫ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত ১৮০ জন ছেলে নিয়ে অনাবাসিক ফুটবল একাডেমির উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট মো. ইমরুল হাসান। এর মধ্যে একটি মেয়েও প্রবল উৎসাহ নিয়ে ফুটবল খেলা শিখতে এসেছিল। সে এখনো ফুটবলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। খেলে কম বয়সের ছেলেদের সঙ্গে। ১৮০ জন নিয়ে একাডেমির যাত্রা হলেও ভালো কোচের অধীনে ফুটবল রপ্ত করে ভালো ফুটবল খেলার জন্য ৪৩০ জনের বেশি ছাত্র একাডেমিতে একসময় ভর্তি হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ৩০০ বিভিন্ন বয়সের ছেলে তিন গ্রুপে সপ্তাহে পাঁচ দিন ট্রেনিং করে পাঁচটি মাঠে। মজার বিষয় হলো, যখন ছেলেরা বিশেষ করে ছুটির দিন ট্রেনিং করতে আসে, তাদের অভিভাবক যাঁরা সঙ্গে আসেন, তাঁদের অনেকেই পাশের খালি মাঠে মজা করে ফুটবল খেলেন। এই আনন্দটা সত্যি অন্য রকম।
অনাবাসিক একাডেমির পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বে আছেন ক্লাবের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বায়েজিদ আলম জুবায়ের নিপু। ফুটবলের এই বিশেষজ্ঞ বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছাড়া বাফুফের ফুটবল একাডেমির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে প্রথম থেকেই জড়িত। তাঁর ডিজাইন করা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি (প্র্যাকটিক্যাল এবং থিওরি ক্লাস) বাস্তবায়িত করার দায়িত্বে আছেন বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ এএফসি লাইসেন্সধারী এবং এএফসি ডিপ্লোমা হোল্ডার কোচ। এ ছাড়া আছেন ফিজিওথেরাপিস্ট, চিকিৎসক এবং অন্যরা। কোচরা হলেন মো. মাহবুব হোসেন রক্সি, এ কে এম নুরুজ্জামান, সৈয়দ গোলাম জিলানী, সেলিম মিয়া, তৌফিকুল ইসলাম পলাশ প্রমুখ।
ভবিষ্যতে ভালো খেলোয়াড় হতে চায়, বসুন্ধরা কিংসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চায়, চায় জাতীয় দলের হয়ে খেলতে—এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা ছাড়াও ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ছেলেরা একাডেমিতে নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ জন ছেলে তো কিংস অ্যারেনার পেছনে ‘ডুমনীতে’ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সবাই যে ছাত্র তা কিন্তু নয়, কয়েকজন শ্রমজীবীও আছে। সবার স্বপ্ন ভালো কারখানায় ফুটবল খেলা শিখে একটি সময় নিজকে তুলে ধরা। ১৪ থেকে ১৮ বছরের গ্রুপে ১০০ জনের বেশি ছেলে আছে। কোচরা মনে করছেন, তাদের কারো কারো ক্লাবের অনূর্ধ্ব-১৮ দলে খেলার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে খুব একটা সময় লাগবে না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ফুটবলের প্রতি অনুরাগ ও মনঃসংযোগ।
বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড় তৈরির কারখানায় বর্তমানে জিমের ফ্যাসিলিটিসহ যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, এটি তো দেশের দুই শর বেশি অনাবাসিক ফুটবল একাডেমির আর কোথাও নেই। কোথাও নেই এত টেকনিক্যাল পারসন। কোথাও নেই শতভাগ ‘সিস্টেমেটিক’ ভাবে প্রশিক্ষণকার্য পরিচালনা। আর এ ক্ষেত্রে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব রয়েছে পেশাদারির। একাডেমির জন্য বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজ শেষ হলে যখন আবাসিক একাডেমি কাজ করতে শুরু করবে, তখন দেশি-বিদেশি আরো ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একাডেমির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। লক্ষ্য একটিই, দেশের ফুটবলের মানোন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখা। দেশের ফুটবলের প্রেক্ষাপট এবং চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন সাধন করা।
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। প্যানেল রাইটার, ফুটবল এশিয়া
৭ আগস্ট ২০২৫, ৪:১৬ পিএম
গাজায় এবার এক সাবেক তারকা ফুটবলারকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েলী বাহিনী। ফিলিস্তিন জাতীয় দলের ‘পেলে’ বলে খ্যাত সাবেক ফরোয়ার্ড সুলাইমান আল-ওবেঈদ হামলায় নিহত হয়েছেন। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে ৪১ বছর বয়সী ওবেঈদ গাজার দক্ষিণাংশে মানবিক সহায়তা পেতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এমন সময় হঠাৎ আক্রমণে নিহত হন তিনি। ফিলিস্তিন ফুটবল এসোসিয়েশন (পিএএফ) এক বিবৃতিতে এ খবর নিশ্চিত করেছে।
গাজায় জন্ম নেয়া সুলাইমান ক্যারিয়ার শুরু করেন সার্ভিসেস বিচ ক্লাবের হয়ে, এরপর ওয়েস্ট ব্যাংকের ক্লাব আল আমারি ইয়ুথের হয়ে খেলেছেন দীর্ঘ সময়। বেশ ক’বার হন সর্বোচ্চ গোলদাতা। পাঁচ সন্তানের জনক সুলাইমানকে ‘পেলে অব প্যালেস্টাইন’ বলা হয়! ২০০৭ সালে শুরু হয় তাঁর জাতীয় দলের ক্যারিয়ার। শেষ ম্যাচটি খেলেন ২০১৩ সালে। জাতীয় দলের হয়ে ২৪ ম্যাচে ২ গোল করেছেন আক্রমণাত্মক এই ফুটবলার।
ফিলিস্তিন ফুটবল এসোসিয়েশন জানিয়েছে-
“দীর্ঘ পেশাদার ক্যারিয়ারে আল-ওবাঈদ ১০০’র বেশি গোল করেছেন। ফিলিস্তিন ফুটবলের বড় এক তারকা সে।”
গাজা স্ট্রিপ পেশাদার লিগে পরপর তিন মৌসুম সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিল আল-ওবাঈদ। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে গোল্ডেন বুটের পুরস্কার জেতে সে।
সুলাইমানের মৃত্যুতে গভীর শোক নেমে এসেছে বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনে! কিংবদন্তি এরিক কাঁতোয়া তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে লিখেছেন-
“ফিলিস্তিন জাতীয় দলের ফুটবলার সুলাইমান আল-ওবাঈদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল! আমরা তাদের আর কত গণহত্যা করতে দেব? ফিলিস্তিনের মুক্তি চাই।”
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত খেলাধুলা সংশ্লিষ্ট শহীদের সংখ্যা ৬৬২! ফুটবল এসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট শহীদ মানুষের সংখ্যা ৩২১! শোকস্তব্ধ ফিলিস্তিনের ক্রীড়াঙ্গন। এদিকে, সম্প্রতি ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে শুধু গত জুলাই মাসেই গাজা ও পশ্চিম তীরে ৪০ জন ফিলিস্তিনি অ্যাথলেটকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
গাজায় গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে গত ২২/২৩ মাসে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অসাধ্য সাধন করেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। চারটি শ্রেয়তর দলের বিপক্ষে অপরাজিত থাকার রেশ হিসেবে এক ধাক্কায় ২৪ ধাপ উত্তরণ হয়েছে আফঈদা-সাগরিকাদের। ১২৮ থেকে ১০৪ নাম্বারে উত্তরণ হয়েছে নারীদের। বাংলাদেশ হয়েছে 'বেস্ট ক্লাইম্বার!' ফিফা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হালনাগাদ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের এই উত্তরণকে আলাদাভাবে উল্লেখ করেছে, কারণ এটিই ছিল যে কোন দেশের সর্বোচ্চ লাফ। ১৯৭ দেশের র্যাঙ্কিংয়ে এখন ১০০’র মধ্যে ঢোকার অপেক্ষায় বাংলাদেশ দল।
একের পর এক সুখবর আসছে নারী ফুটবল ঘিরে। প্রথমবারের মত এশিয়ান কাপের চূড়ান্তপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে নারীরা। আছে ২০২৭ নারী বিশ্বকাপে খেলার হাতছানি। সেইক্ষণে ইতিহাস সেরা র্যাঙ্কিংয়ে নারী দল। সর্বশেষ র্যাঙ্কিংয়ে ৮০.৫১ পয়েন্ট যোগ হয়েছে বাংলাদেশের হিসেবে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এককালীন হিসেবে এত পয়েন্ট আর কখনও পায়নি বাংলাদেশের ফুটবল। এগিয়েছে ভারতও, ৭ ধাপ এগিয়ে তাদের র্যাঙ্কিং এখন ৬৩! যে মিয়ানমারকে হারিয়ে বাংলাদেশ এশিয়ান কাপের চূড়ান্তপর্বে তাদের র্যাঙ্কিং একধাপ নেমেছে, তারা আছে ৫৬ নাম্বারে।
২১১ দেশের পুরুষ র্যাঙ্কিং ইতিহাসে অবশ্য সেরা লাফ ২৮ ধাপের, যদিও পুরুষ দলের বর্তমান র্যাঙ্কিং ১৮৪! সাফল্যের বিচারে ইতিমধ্যে এগিয়ে গেছে নারীরা। এরআগে ২০১৩ ও ২০১৭ সালে দু’বার ১০০ নাম্বার র্যাঙ্কিংয়ে পৌঁছেছিল নারী দল।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের আগে প্রীতি ম্যাচে জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ার মত শক্তিশালী দু’টি দেশের বিপক্ষে ড্র করে বাংলাদেশ। এরপর এশিয়ান কাপে হারায় মিয়ানমার ও বাহরাইনের মত শক্তিশালী দলকে, যার প্রভাব পড়েছে র্যাঙ্কিংয়ে।
ইউরো রানার্সআপ স্পেন টেবিলের শীর্ষে উঠেছে। দুই নাম্বারে নেমে গেছে সবচে সফল দেশ যুক্তরাষ্ট্র। পরের দুই অবস্থানে সুইডেন ও ইংল্যান্ড। কোপা আমেরিকা জিতলেও তিন ধাপ অবনমন হয়েছে ব্রাজিলের, তারা আছে ৭ নাম্বারে। শীর্ষ দশে আছে এশিয়ার দুই দেশ, জাপান ৮ নাম্বারে, আর উত্তর কোরিয়া ১০ নাম্বারে। চীন ১৬ ও দক্ষিণ কোরিয়া আছে ২১ নাম্বারে।
এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দারুণ সূচনা করল বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে ২১ ধাপ এগিয়ে থাকা শক্তিশালী লাওসকে বড় ব্যবধানেই হারাল পিটার বাটলারের দল, যা ভালোভাবেই আশা জাগাল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।
ভিয়েনতায়েনে নিউ লাওস ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বুধবারের ম্যাচে স্বাগতিক লাওসকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
এই জয়ে ‘এইচ’ গ্রুপে আপাতত শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এখান থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে সরাসরি জায়গা মিলবে চলতি বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য মূল পর্বে। রানার্স-আপ হলেও থাকবে সুযোগ। সেরা তিন রানার্স-আপ দলও পাবে মূল পর্বের টিকিট।
সিনিয়র ও বয়সভিত্তিক মিলিয়ে লাওসের বিপক্ষে এটা ছিল বাংলাদেশের প্রথম সাক্ষাৎ। প্রথম ২০ মিনিটে কয়েকটি ভালো সুযোগ নষ্টের পর ৩৬তম মিনিটে মেলে সাফল্য। শান্তি মার্ডির কর্নার থেকে হেড করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন মোসাম্মাৎ সাগরিকা।
এরপর ৫৮তম মিনিটে মুনকি আক্তার দারুণ একটি ড্রিবলিংয়ের পর নিখুঁত শটে ব্যবধান ২-০ করেন। তবে ইনজুরি টাইমে লাওস এক গোল শোধ দিলে কিছুটা রোমাঞ্চ জাগে ম্যাচে। তবে শেষ মুহূর্তে তৃষ্ণার পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করে জয় নিশ্চিত করেন সাগরিকা।
বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচে ৮ আগস্ট, প্রতিপক্ষ পূর্ব তিমুর, এরপর ১০ আগস্ট শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে সাগরিকারা।
চলতি বছর কয়েকবারই চোটের শিকার হয়েছেন। আর তাই লিওনেল মেসির সাম্প্রতিক চোটের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। তবে ইন্টার মায়ামির কোচ হাভিয়ের মাসচেরানো বেশ নির্ভারই আছেন বিষয়টি নিয়ে। তিনি আশাবাদী, আর্জেন্টিনা তারকার চোট গুরুতর হবে না।
গত শনিবার লিগস কাপের ম্যাচে নেকাক্সা-এর বিপক্ষে ম্যাচের ১১তম মিনিটে ডান পায়ে চোটে পেয়ে মাঠ ছাড়েন মেসি। এরপর সেখান থেকে সরাসরি চলে যান ড্রেসিংরুমে। মায়ামি এক বিবৃতিতে জানায়, ৮ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির ফেরাটা নির্ভর করছে তার চোটের ধরণ এবং সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার ওপর।
এই চোটের কারণে বুধবার পুমাস ইউএনএএম-এর বিপক্ষে লিগস কাপের ম্যাচ মিস করবেন মেসি। তবে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মাসচেরানো বলেছেন, শীঘ্রই ফিরেন তাদের অধিনায়ক।
“আমি মেসির সাথে কথা বলেছি। ক্লাব যে বিবৃতিটি দিয়েছে, সেটা খুব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। মেসির চোটের খারাপ খবরের মধ্যেও এটা কিছুটা ভালো দিক যে, চোটটা বড় নয়। আমরা মেসির বেলায় মাঠে ফেরার সময় নিয়ে কোনো অনুমান করতে চাই না। সাধারণত সে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। তাই কালকের (লিগস কাপ) ম্যাচে না খেললেও তার ফেরার বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।”
মাসচেরানো আশাবাদী হলেও মেসির পরবর্তী ম্যাচে অংশ নেওয়া নিয়েও এখনো অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। বুধবারের ম্যাচের পর মায়ামির পরের ম্যাচ আগামী রবিবার, এমএলএসে তাদের প্রতিপক্ষ অরল্যান্ডো সিটি।
তবে তার আগে মেসিকে ছাড়া লিগস কাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই মায়ামির সামনে। নতুন ফরম্যাট অনুযায়ী, প্রতিটি লিগ থেকে সেরা চারটি দলই উঠবে নকআউট পর্বে। দুই ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে মায়ামি এখন তৃতীয় স্থানে।
নতুন মৌসুম থেকে সেরি আ-তে ম্যাচ পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। রেফারিরা এখন থেকে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শক ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে ভিএআরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইতালির ফুটবল ফেডারেশনের রেফারিং নিয়োগ কর্মকর্তা জিয়ানলুকা রোক্কি।
ভিএআর প্রযুক্তি রেফারিদেদ মাঠের সিদ্ধান্তের যথার্থতা আনার জন্যই চালু করা হয়েছিল। তবে সেটার ব্যাখ্যার অভাব প্রায়ই সময়েই গ্যালারিতে থাকা দর্শক ও খেলোয়াড়দের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে। সেদিক থেকে সেরি আয় রেফারিদের তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিএআরের এই সরাসরি ব্যাখ্যা প্রদান হতে পারে দারুণ এক পদক্ষেপ। কারণ, এটা শুধু একটি সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতাই নয়, সাথে দর্শকদের অভিজ্ঞতাকেও উন্নত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত মঙ্গলবার ইতালীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোক্কিও শোনান ইতিবাচক কথা।
“এটা রেফারি ও দর্শকের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্তগুলোকে আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও সহজবোধ্য করতে চাই।”
রোক্কি আরও জানান, এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার জন্য নির্বাচিত রেফারিদের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। সেখানে তাদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা একই রকম ভাষায় এবং আরও স্পষ্টভাবে সিদ্ধান্তগুলো ব্যাখ্যা করতে পারেন।
ইতালির আগে এই ধরনের সরাসরি সিদ্ধান্ত ঘোষণার ব্যবস্থা ইংল্যান্ড ও জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এছাড়া বিশ্বকাপে এবং ফিফা কিছু টুর্নামেন্টেও রেফারিদের সিদ্ধান্তগুলো মাইক্রোফোনের মাধ্যমে মাঠেই ঘোষণা করতে দেখা গেছে, যা সাধারণ দর্শকরা ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন।