১০ নভেম্বর ২০২৪, ২:৫৮ পিএম
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ছোট রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া জিতলেও ভালোই কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তান পেসাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের হাত ধরে বড় জয় পাওয়া সফরকারীরা আরও একবার গুঁড়িয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডার। শাহিম শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ ও হারিস রউফের পেসের সামনে খেই হারালেন অজি ব্যাটাররা। মামুলি রান তাড়ায় মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল তুলে নিল দাপুটে জয়।
পার্থের গতিময় উইকেটে পুরো ইনিংস জুড়েই রানের জন্য সংগ্রাম করা অস্ট্রেলিয়া ৩১.৫ ওভারে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪০ রানে। ২৬.৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে সেই রান তাড়া করেছে পাকিস্তান। তিন ম্যাচের সিরিজে রিজওয়ানের দল জিতেছে ২-১ ব্যবধানে।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাটিং করে অলআউট হয়েছিল মাত্র ১৬৩ রানে। পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন রউফ, যিনি প্রথম ম্যাচে শিকার করেছিলেন তিন উইকেট। তৃতীয় ম্যাচে আরও একবার প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন এই ডানহাতি পেসার।
আরও পড়ুন
রউফের ফাইফারে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিল পাকিস্তান |
![]() |
তবে এই ম্যাচে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বোলিং করেছেন অন্য পেসাররা। জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ককে শুরুতেই ফিরিয়ে দেন নাসিম শাহ। তার ও শাহিনের দারুণ বোলিংয়ে মাত্র ৫৬ রানে ৩ উইকেটে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করা ওপেনার ম্যাথু শর্টকে ২২ রানে ফিরিয়ে দেন রউফ। এই ধাক্কাই আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি।
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার জন্য ব্রেট লি’র ‘বাইসন বল’ থিওরি |
![]() |
আটে নামা সিন অ্যাবোটই কেবল যাওয়া-আসার মিছিলে কিছুটা লড়াই করেন। খেলেন দলীয় সর্বোচ্চ ৩২ রানের ইনিংস। তবে পুরো দলই যেখানে ব্যর্থ, সেখানে এই রানও পারেনি দলকে দুইশ রানের ধারেকাছেও নিতে।
তিনটি করে উইকেট নেন শাহিন ও নাসুম। রউফ নেন দুটি, আর একটি উইকেট যায় আরেক পেসার মোহাম্মদ হাসনাইনের ঝুলিতে।
আগের ম্যাচে ১৬৩ রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া হেরেছিল ৯ উইকেটে। তার চেয়েও কম রান নিয়ে তাই বোলারদের জন্য করার ছিল না বলতে গেলে কিছুই। হয়েছেও তাই শেষ পর্যন্ত। বলা যায়, ম্যাচের প্রথম দশ ওভারেই সামান্যতম লড়াইয়ের সব সম্ভাবনা শেষ করে দেন পাকিস্তান ওপেনাররা।
আবদুল্লাহ শফিক কিছুটা রয়েসয়ে খেললেও সাইম আইয়ুব ছিলেন চেনা আগ্রাসী ছন্দে। অস্ট্রেলিয়ার অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপকে এলোমেলো করে দেন শুরু থেকেই। যেভাবে ছুটছিলেন তিনি ও শফিক, তাতে দুজনের ফিফটি নিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছিল। তবে ৮৪ রানের জুটি গড়ার পর একই ওভারে বিদায় নেন উভয় ব্যাটার।
প্রথমে ৩৭ রান করা শফিককে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন ল্যান্স মরিস। এরপর বোল্ড করেন ৫২ বলে ৪২ করা সাইমকে। তবে তাতে পরাজয়ের ব্যবধানই কমেছে কেবল।
আনুষ্ঠানিকতা সারার বাকি কাজটা নির্বিঘ্নে করেন বাবর আজম ও রিজওয়ান। দুজন অপরাজিত থাকেন যথাক্রমে ২৮ ও ৩০ রানে।
৯ জুলাই ২০২৫, ৬:৩৫ পিএম
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন আগেই। ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও ব্যস্ত সময় কাটালেও জোফরা আর্চার দীর্ঘ সময় ধরেই ছিলেন টেস্টের বাইরে। অবশেষে ফুরাচ্ছে সেই প্রতীক্ষা। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের একাদশে জায়গা মিলেছে গতিময় এই পেসারের।
লর্ডসে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টকে সামনে রেখে বুধবার আর্চারকে রেখে একাদশ ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। এর মধ্য দিয়ে চার বছর পর লাল বলের ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন হচ্ছে তার।
২০১৯ সালে এই লর্ডসেই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল আর্চারের, লম্বা বিরতির পর এই ফরম্যাটে ফিরছেন সেখানেই। আর তাকে জায়গা করে দিতে একাদশ থেকে সরে যেতে হয়েছে জশ টাংকে। দুই ম্যাচে সিরিজের সর্বোচ্চ ১১ উইকেট নেওয়া এই পেসারকে ইংল্যান্ড বিশ্রাম দিয়েছে।
আরও পড়ুন
ইতিহাস গড়া ইনিংসের পর ব্যাটিং-অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ মুল্ডারের |
![]() |
আর্চার ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১৩ টেস্টে মাত্র ৩১.০৪ গড়ে নেন ৪২ উইকেট। ২০১৯ অ্যাশেজে তার ২০ উইকেট শিকার করেছিলেন মাত্র ২০.২৭ গড়ে। তবে টানা ম্যাচ খেলার কারণে পিঠে চোট পান ২০২১ সালে, যা তাকে একটা বড় সময়ের জন্যই ছিটকে দেয় টেস্ট ক্রিকেট থেকে।
এই গ্রীষ্মেও ইংল্যান্ড আর্চারকে খুব সতর্কভাবে ফিরিয়েছে। আঙুলের চোটের কারণে প্রথম টেস্টে খেলতে পারেননি তিনি, দ্বিতীয় টেস্টে ফিট থাকলেও না খেলিয়ে আরও এক সপ্তাহ বেশি অনুশীলন করানো হয়।
আর্চারের ফেরার ম্যাচে ইংল্যান্ড একাদসে আর পরিবর্তন নেই। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে সমতা ১-১ ব্যবধানে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া দ্বিতীয় টেস্টে ঐতিহাসিক এক ইনিংস খেলে টেস্টের দুই ক্যাটাগরিতে ক্যারিয়ার সেরা অবস্থান অর্জন করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার ভিয়ান মুল্ডার। অপরাজিত ৩৬৭ রানের ইনিংস খেলে টেস্ট ব্যাটারদের তালিকায় ৩৪ ধাপ এগিয়ে এখন ২২ নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি।
বুধবার আইসিসির প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে মুল্ডার উন্নতি করেছেন অলরাউন্ডারদের তালিকাতেও। ১২ ধাপ এগিয়ে এখন ৩ নম্বরে অবস্থান করছেন ২৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
চলতি সপ্তাহে জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্টে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে খেলা মুল্ডার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে তোলেন ঝড়। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করে প্রথম দিনেই করে ফেলেন ডাবল সেঞ্চুরি। এর দ্বিতীয় দিন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে করেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। দলীয় ইনিংস ঘোষণার সময় তার রান ছিল অপরাজিত ৩৬৭, যা টেস্টের ইতিহাসের ইতিহাসের এখন চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর এখন মুল্ডারের দখলেই।
আরও পড়ুন
‘৪০০ রানের সুযোগ একবারই আসে, কিংবদন্তি হতে হলে রেকর্ড ভাঙতেই হবে’ |
![]() |
সাথে বল হাতেও ভালো করেন মুল্ডার। ডানহাতি পেসে দুই ইনিংসে তুলে নেন ৩ উইকেট, যা তাকে জায়গা করে দিয়েছে অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে সেরা তিনে। ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা তালিকায় শীর্ষে আছেন, দুইয়ে আছেন বাংলাদেশের মেহেদি হাসান মিরাজ।
শ্রীলঙ্কার সাথে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজে পারফরম্যান্সের সুবাদে মিরাজ সহ অন্যদের র্যাঙ্কিংয়ের অবস্থানে এসেছে রদবদল। তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত ছয় ধাপ পিছিয়ে চলে গেছেন ৩৪তম অবস্থানে। সিরিজে দুই ফিফটি করা তাওহীদ হৃদয় সাত ধাপ উন্নতি করেছেন, তিনি আছেন ৫১-তে।
বোলারদের মধ্যে এই সিরিজ দিয়ে চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদ ২৮ থেকে উঠে এসেছেন ২৬ নম্বরে। এক ধাপ নিচে নেমে গেছেন অধিনায়ক মিরাজ, তিনি আছেন ২৯ নম্বরে। বড় অবনমন হয়েছে মুস্তাফিজুর রহমানের। ১১ ধাপ নিচে নেমে গেছেন অভিজ্ঞ এই পেসার। এখন তার অবস্থান ৪৬তম।
জিতলেই ইতিহাস। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের উৎসব। কলম্বোর প্রেমাদাসায় প্রথম দুই ম্যাচের ফল ১-১এ অমিমাংসিত থাকায় ক্যান্ডির পাল্লেকেলেতে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি রূপ পেয়েছে ফাইনাল। পাল্লেকেলেতে অতীত সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশ দলের। শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়টা সূচিত হয়েছে এই মাঠেই। ২০১৩ সালে ৩ উইকেটে জয় থেকে সিরিজ জয়ের সেই টনিক নিয়ে শ্রীলঙ্কার মাঠে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের উৎসবে ফেটে পড়বে মিরাজের দল, এমন স্বপ্নই দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।তবে ১৯ মাস আগে দিল্লীতে ২৮২ রান তাড়া করে ৫৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ে শান্ত, মিরাজ, তানজিদ, তানজিমদের সেই গৌরবগাঁথা পাল্লেকেলের মাঠে পুনরাবৃত্তি হয়নি। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ২৮৬ রানের চ্যালেঞ্জটা নিতেই পারেনি বাংলাদেশ দল। ৯৯ রানে হেরে সিরিজের শেষের ছবিটা হয়েছে হতাশার।
প্রেমাদাসার উইকেট অনেকটা মিরপুরের মতো। রান করতে হয় কষ্ট করে। প্রথমে ব্যাট করে আড়াইশ স্কোরকে যথেষ্ট মনে হয়েছে। কিন্তু পাল্লেকেলের উইকেটের বৈশিষ্ট্য একটু আলাদা। উইকেটে বল পড়ে ব্যাটে ঠিকঠাক মতো এসেছে। এমন সুবিধাজনক ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচ পেয়ে কুশল মেন্ডিজের ব্যাট উঠেছে জ্বলে। তার সেঞ্চুরিতে (১১৪ বলে ১৮ বাউন্ডারিতে ১২৪) ভর করে ২৮৫/৭ স্কোর করেছে শ্রীলঙ্কা।
ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ স্পিনারদের সাপুড়ে নৃত্য দেখে ভয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। হয়তবা সে কারণেই স্লো উইকেট প্রস্তুত করার আইডিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়ে ব্যাটারদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন পাল্লেকেলের কিউরেটর।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০ ওভারের ম্যাচে রেকর্ডটা দারুণ কুশল মেন্ডিজ-আসালাঙ্কার। দু'জনেই ছিল ইতোপূর্বে সেঞ্চুরি-আসালাঙ্কার দুটি, কুশল মেন্ডিজের ১টি। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে ম্যাচ উইনিং সেঞ্চুরির তরতাজা স্মৃতি নিয়ে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নেমেছেন অধিনায়ক আসালাঙ্কা। ২০১৭ সালে ডাম্বুলায় বাংলাদেশের বিপক্ষে কুশল মেন্ডিজের সেঞ্চুরির অতীত সুখস্মৃতি তো আছেই, চলমান সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফটি থেকেও নিয়েছেন টনিক। চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ বোলারদের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছেড়েছে এই জুটি। ১১৭ বলে যোগ করেছে তারা ১২৪ রান।
গত বছর ডাম্বুলায় নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের সর্বোচ্চ ১৪৫ রানের ইনিংস ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ডের নেশায় বিভোর কুশল মেন্ডিজ এদিন শুরু থেকে করেছেন ইতিবাচক ব্যাটিং। তানজিম হাসান সাকিবকে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারির চুমোয় ইনিংস শুরু করে ৫৮ বলে ফিফটি এবং ৯৫ বলে ওডিআই ক্যারিয়ারে ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি উদযাপন করেছেন কুশল মেন্ডিজ। দ্বিতীয় ফিফটিতে লেগেছে তার মাত্র্র ৩৭টি বল। ৯০'র ঘরে এসে রানের জন্য ধুঁকতে হয়নি তাকে। শেষ ১০ রান নিতে লেগেছে তার মাত্র ৬টি বল। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি ইনিংসকে টেনে নিয়েছেন ১২৪ পর্যন্ত। ওডিআই ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসে ১০৮.৭৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন রান। যে ইনিংসে মেরেছেন তিনি ১৮টি বাউন্ডারি। ব্রেক থ্রু দিয়েছেন অকেশনাল স্পিনার শামীম পাটোয়ারী। তার চতুর্থ ওভারে পুল করতে যেয়ে রিটার্ন ক্যাচে থেমেছেন কুশল মেন্ডিজ। শেষ পাওয়ার প্লে'র প্রথম ওভারে আসালাঙ্কাকে (৬৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৫৮) পুল শটে খেলার ফাঁদে ফেলে দিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচে থামিয়েছেন তাসকিন।
তিনশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস ছিল যে ইনিংসে, সেই ইনিংসটা থেমেছে ২৮৫/৭-এ। শেষ পাওয়ার প্লে'র ৬০ বলে বাংলাদেশ বোলাররা ৬২ রানের বেশি শ্রীলঙ্কার স্কোরশিটে যোগ করতে দেননি। ওই ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ বোলাররা।
মিরাজ এদিন ছিলেন সবচেয়ে মিতব্যয়ী (১০-০-৪৮-২)। পেসার তাসকিনও ছিলেন সফল (২/৫২)। আগের ম্যাচের ফাইফার বাঁ হাতি স্পিনার তানভির এদিন মার খেয়েছেন (৬-০-৪১-১)। তবে অকেশনাল স্পিনার শামীম পাটোয়ারী সিক্সথ বোলারের অভাব ঠিকই পূরণ করেছেন (৪-০-৩০-১)।
তবে যে পিচে প্রথম ইনিংসে লঙ্কান অধিনায়ক আসালাঙ্কা, টপ অর্ডার কুশল মেন্ডিজের ব্যাটে ফুলকি উঠেছে, সেই পিচই বাংলাদেশের ইনিংসে দেখিয়েছে উল্টা চরিত্র। স্পিনারদের বল কখনো থেমে, কখনো অপ্রত্যাশিত লো বাউন্স করে বাংলাদেশ ব্যাটারদের কাজটা কঠিন করে দিয়েছে। ইনিংসের মাঝপথে বাঁ হাতি স্পিনার ওয়েল্লালাগে (২/৩৩), লেগ স্পিনার হাসারাঙ্গার (২/৩৩) বল স্বাভাবিকভাবে খেলতে পারেনি বাংলাদেশের মিডল এবং লোয়ার অর্ডাররা। পুরো ইনিংসে পার্টনারশিপ বলতে দুটি-৪২ ও ৪৩ রানের!
বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছেন লঙ্কান পেসার আসিথা। তার ইনসুইংয়ে বোল্ড তানজিদ হাসান তামিম (১৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৭)। আর এক পেসার চামিরার বলে প্লেড অন শান্ত (৩ বলে ০)। ৪২ রানের জুটিটা লম্বা করতে পারেননি পারভেজ ইমন। ওয়েল্লালাগেকে সুইপ করতে যেয়ে ফাইন লেগে দিয়েছেন ক্যাচ (৪৪ বলে ৪ বা্উন্ডারিতে ২৮)। অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলবেন বলে পন করেও দলের উপকারে আসতে পারেননি মিরাজ। ওয়েল্লালাগেকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে লং অনে দিয়েছেন ক্যাচ (২৫ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ২৮)। শামীম পাটোয়ারিও ভরসা দিতে পারেননি। হাসারাঙ্গাকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে কাটা পড়েছেন (১৮ বলে ১ বাউন্ডারিতে ১২)।
টাইগারদের বিপক্ষে আসিথা ফার্নান্দর ৩ উইকেট শিকার
এক এন্ডে টিমমেটদের আসা-যাওয়ার মিছিল দেখেও হতোদ্যম হননি হৃদয়। তবে ফিফটি পূর্ন করে থেমেছেন তিনি। চামিরার অন এন্ড অফ পিচিং ডেলিভারিতে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে মিডল স্ট্যাম্প উড়ে গেছে তার (৭৮ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৫১)। শেষ স্পেলে সেই চামিরার ১৪৬ কিলোমিটার গতির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব (৮ বলে ৫)। হারের ব্যবধান কমানোর চেষ্ঠা থেমেছে জাকের আলী অনিকের ২৭ রানের মাথায় এসে। আসিথার বলে ক্রস খেলতে যেয়ে হয়েছেন বোল্ড। এক ইনিংসে ৪টি বোল্ড! কৃতিত্ব যতোটা না লঙ্কান বোলারদের, তার চেয়ে ঢের বেশি অপরাধী বাংলাদেশ ব্যাটাররা। এমন এক ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দুই পেসার আসিথা (৩/৩৩)-চামিরা (৩/৫১) দিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান। তবে ব্যবধানটা গড়ে দিয়েছেন কুশল মেন্ডিজের সেঞ্চুরি।
উইকেটে বোলারদের জন্য সহায়তা কিছু ছিল বটে, তবে সেটা আহামরি কিছু যে নয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন কুসাল মেন্দিস। তার দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কা তিনশ’র কাছাকাছি টার্গেট দেওয়ার পরও তাই আশা ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আবারও ভেঙে পড়ল ব্যাটিং অর্ডার। এক তাওহীদ হৃদয় যা কিছুটা লড়লেন, যা কেবল হতাশাই বাড়াল। বিশাল পরাজয়ে টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজেও হারল বাংলাদেশ।
পাল্লেকেল্লেতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৯৯ রানে। স্বাগতিকদের ৭ উইকেটে ২৮৫ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ৩৯.৪ ওভারে ১৮৬ রানেই। শ্রীলঙ্কা সিরিজ জিতল ২-১ ব্যবধানে। এর আগে টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল লঙ্কানরা।
কন্ডিশন বিবেচনায় এই রান তাড়া করাটা মোটেও সহজ হওয়ার ছিল না। বাংলাদেশকে তাই শুরু থেকেই রান তুলতে হত দ্রুত। সেই আভাস ছিল তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাটে, তবে পারেননি ইনিংস বড় করতে। আসিথা ফার্নান্দোর বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৩ বলে তিনটি চারের মারে করেন ১৭ রান।
প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্তর কাছ থেকে একটা দায়িত্বশীল ইনিংসের আশায় ছিল বাংলাদেশ। তবে আরও একবার দলকে হতাশ করেন এই সিরিজের আগে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া এই ব্যাটার। দুশমান্থ চামিরার বলে লাইন মিস করে বোল্ড হন রানের খাতা খোলার আগেই।
২০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ। তাতে রান হয় বটে, তবে কমে যায় রানের গতি। ফলে ক্রমেই জয়ের জন্য ওভার প্রতি রানের লক্ষ্য যায় বেড়ে, যা চাপ তৈরি করে দুই ব্যাটারের ওপর। দারুণ কিছু শট খেললেও তাই ডট বলের চাপে পড়ে যান ইমন, যা সরাতে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ৩৩ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে।
এরপর তাওহীদ ও মিরাজের ব্যাটে কিছুটা গতি ফেরে বাংলাদেশের ইনিংসে। চতুর্থ উইকেটে দুজন মিলে ৩৯ বলে গড়েন ৪০ রানের জুটি। তবে সেটাও যথেষ্ট ছিল না। দুনিথ ওয়েলালাগের বলে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় লং অফে ক্যাচ দিয়ে থামে বাংলাদেশ অধিনায়কের ইনিংস। ৪ চার ও এক ছক্কায় মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান।
২৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে মাত্র ১২১ রান। তাওহীদ একপ্রান্ত আগলে রাখলেও বড় জুটি না হওয়ায় চাপ প্রতি ওভারেই বেড়ে যায়। আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে স্টাম্পড হন শামীম (১২ রান)।
আগের ম্যাচে লড়িয়ে ফিফটি রানের ইনিংস খেলা তাওহীদ ধীরলয়ে তুলে নেন আরেকটি অর্ধশতক। ৭৫ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় পা রাখেন ক্যারিয়ারের নবম ফিফটিতে। তবে আরও একবার ব্যর্থ হন ইনিংস লম্বা করতে। বোল্ড করে দেন চামিরা। এর আগে তরুন এই ব্যাটার ৭৮ বলে করেন ৫১ রান।
বাংলাদেশের জয়ের আশাও সেখানেই শেষ হয়ে যায়। জাকের আলি অনিককে একপ্রান্তে রেখে এক ডিজিটে সাজঘরের পথ ধরেন তানজিম হাসান সাকিব ও তাসকিন আহমেদ। কিছু বড় শট খেলে জাকেরের ২৭ রানের ইনিংসের ইতি ঘটে আসিথার বলে বোল্ড হয়ে। এরপর বাকি ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিকতার।
এর আগে দিনের শুরুতে এক পরিবর্তন নিয়ে নিয়ে নামা বাংলাদেশ টস হেরে আগে বোলিং পায়। আর সেটা দারুণভাবেই কাজে লাগান তানজিম। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে নিশান মাদুশকাকে ফিরিয়ে শুরুতেই শ্রীলঙ্কাকে ধাক্কা দেন এই ডানহাতি পেসার। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে।
প্রেমাদাসার উইকেট অনেকটা মিরপুরের মতো, রান করতে হয় কষ্ট করে। তবে পাল্লেকেলের উইকেটের বৈশিষ্ট্য একটু আলাদা। উইকেটে বল পড়ে ব্যাটে ঠিকঠাক মতো এসেছে। এমন সুবিধাজনক ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচ পেয়ে কুশল মেন্ডিসের ব্যাট উঠেছে জ্বলে। তার সেঞ্চুরিতে (১১৪ বলে ১৮ বাউন্ডারিতে ১২৪) ভর করে ২৮৫/৭ স্কোর করেছে শ্রীলঙ্কা।
ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ স্পিনারদের সাপুড়ে নৃত্য দেখে ভয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। হয়তবা সে কারণেই স্লো উইকেট প্রস্তুত করার আইডিয়া থেকে বের হন পাল্লেকেলের কিউরেটর। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০ ওভারের ম্যাচে রেকর্ডটা দারুণ কুশল মেন্ডিস-আসালাঙ্কার। দু'টি সেঞ্চুরি আছে আশালাঙ্কার , কুশল মেন্ডিসের ১টি। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে ম্যাচ উইনিং সেঞ্চুরির তরতাজা স্মৃতি নিয়ে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নেমেছেন অধিনায়ক আশালাঙ্কা। ২০১৭ সালে ডাম্বুলায় বাংলাদেশের বিপক্ষে কুশল মেন্ডিসের সেঞ্চুরির অতীত সুখস্মৃতি তো আছেই, চলমান সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফটি থেকেও নিয়েছেন টনিক। চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ বোলারদের কাঁদিয়ে ছেড়েছে এই জুটি। ১১৭ বলে যোগ করেছে তারা ১২৪ রান।
গত বছর ডাম্বুলায় নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের সর্বোচ্চ ১৪৫ রানের ইনিংস ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ডের নেশায় বিভোর কুশল মেন্ডিস এদিন শুরু থেকে করেছেন ইতিবাচক ব্যাটিং। তানজিম হাসান সাকিবকে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারির চুমোয় ইনিংস শুরু করে ৫৮ বলে ফিফটি এবং ৯৫ বলে ওডিআই ক্যারিয়ারে ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি উদযাপন করেছেন কুশল। দ্বিতীয় ফিফটিতে লেগেছে তার মাত্র ৩৭টি বল। ৯০'র ঘরে এসে রানের জন্য ধুঁকতে হয়নি তাকে। শেষ ১০ রান নিতে লেগেছে তার মাত্র ৬টি বল। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি ইনিংসকে টেনে নিয়েছেন ১২৪ পর্যন্ত। ওডিআই ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসে ১০৮.৭৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন রান। যে ইনিংসে মেরেছেন তিনি ১৮টি বাউন্ডারি। ব্রেক থ্রু দিয়েছেন অকেশনাল স্পিনার শামীম পাটোয়ারী। তার চতুর্থ ওভারে পুল করতে যেয়ে রিটার্ন ক্যাচে থেমেছেন কুশল মেন্ডিস। শেষ পাওয়ার প্লে'র প্রথম ওভারে আশালাঙ্কাকে (৬৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৫৮) থামিয়েছেন তাসকিন। তিনশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস ছিল যে ইনিংসে, সেই ইনিংসটা থেমেছে ২৮৫/৭-এ। শেষ পাওয়ার প্লে'র ৬০ বলে বাংলাদেশ বোলাররা ৬৩ রানের বেশি শ্রীলঙ্কার স্কোরশিটে যোগ করতে দেননি। ওই ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ বোলাররা।
মিরাজ এদিন ছিলেন সবচেয়ে মিতব্যয়ী (১০-০-৪৮-২)। পেসার তাসকিনও ছিলেন সফল (২/৫২)। আগের ম্যাচের ফাইফার বাঁ হাতি স্পিনার তানভির এদিন মার খেয়েছেন (৬-০-৪১-১)। তবে অকেশনাল স্পিনার শামীম পাটোয়ারী সিক্সথ বোলারের অভাব ঠিকই পূরণ করেছেন (৪-০-৩০-১)।
পাল্লেকেলেতে অতীত সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশ দলের। শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়টা সূচিত হয়েছে এই মাঠেই। ২০১৩ সালে ৩ উইকেটের জয় থেকে সিরিজ জয়ের টনিক নিয়ে শ্রীলঙ্কার ২৮৫/৭ স্কোরের চ্যালেঞ্জ নিতেই পারে বাংলাদেশ ব্যাটাররা। ১৯ মাস আগে দিল্লীতে ২৮২ রান তাড়া করে ৫৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের ছবিটা এখন ব্যাটের চোখের সামনে ভেসে উঠলেই হয়।
৩ দিন আগে
৪ দিন আগে
৪ দিন আগে
১৫ দিন আগে
১৫ দিন আগে
১৬ দিন আগে
১৮ দিন আগে
১৮ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৮ দিন আগে