৩ নভেম্বর ২০২৪, ৭:৪০ পিএম
লোকে বলে, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আসলেই কী তাই? আপনার উত্তরটা যাই হোক, উইল ইয়ংয়ের কাছে পাবেন ইতিবাচক উত্তরই। স্বপ্ন দেখা ও সেটা পূরণেরও তো একটা সীমা থাকে। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কিউই ব্যাটারের জীবনে যা যা ঘটেছে, সেটা স্রেফ রুপকথারই শামিল। ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের ঐতিহাসিক জয়ের পর সিরিজ সেরা নির্বাচিত হয়েছে ইয়ং। অথচ সব ঠিক থাকলে তারই কিনা এই সিরিজ খেলারই কথা ছিল না! নিয়তির খেল তো একেই বলে।
ভারত সফরে কীর্তির আগে যদি ইয়ংয়ের ক্যারিয়ারের দিকে একটু ফিরে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে তাকে ফেলা যায় ‘লেট ব্লুমার’-দের কাতারে। শুরুর দিক বা এমনকি এখনও তাকে প্রতিটি ম্যাচে লড়তে হয়ে দলে জায়গার জন্য, সংগ্রাম করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয় বারবার। ভারতকে সিরিজ হারানোর পথে স্পিনের বিপক্ষে খেললেন দুর্দান্ত সব ইনিংস, অথচ কে বলবে এই ভারতেই সাত বছর আগে স্রেফ স্পিন খেলা রপ্ত করতে চেন্নাইয়ে একটি বিশেষ ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিলেন ইয়ং!
আরও পড়ুন
জাদেজা-অশ্বিন ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন |
![]() |
শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্টে ভীষণ বাজেভাবে হেরে ভারতে পা রেখেছিল নিউজিল্যান্ড। তখনও দেশের বাইরে কেন উইলিয়ামসন। চোট থেকে সেরে না ওঠায় প্রথমে ছিটকে যান প্রথম টেস্ট থেকে। দলে ডাক পান উইল ইয়ং। সোজা পেয়ে যান মহাগুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশন। ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সিরিজের পরও যে ব্যাটারের গড় মোটে ৩০, তাকে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সিরিজের প্রাক্কালে ছিল না বাড়তি প্রত্যাশা।
তবে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মাঝে একটা জিনিস বেশ লক্ষ্যনীয়, আর সেটা হল সুযোগ পেলে তা দুহাতে কাজে লাগানো। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারতকে মাত্র ৪৬ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর নিউজিল্যান্ড পায় বিশাল স্কোর। ৩৩ রান আসে ইয়ংয়ের ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য খেলেন ভালো একটি ইনিংস। রান তাড়ায় দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর ৪৮ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জেতান ৮ উইকেটে।
উইলিয়ামসনের ‘কভার’ হিসেবে দলে এসে এমন পারফরম্যান্সের পরও ইয়ংয়ের জানা ছিল না দ্বিতীয় টেস্টে খেলার ব্যাপারে। তবে উইলিয়ামসনের সেরে ওঠার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাওয়ায় ফের মেলে আরেক সুযোগ। টার্নিং উইকেটে এবার অবশ্য সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি এই ডানহাতি ব্যাটার। দুই ইনিংসে করেন যথাক্রমে ১৮ ও ২৩ রান। তবে একটি ম্যাচে দুই দলের পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায় ১১৩ রান, সেখানে ইয়ংয়ের ৪১ রানও ভালোই অবদান রেখেছিল নিউজিল্যান্ডের জয়ে।
আরও পড়ুন
স্যান্টনারের ঘূর্ণিতে কুপোকাত ভারত, ইতিহাস গড়া সিরিজ জয় নিউজিল্যান্ডের |
![]() |
উইলিয়ানসন শেষ পর্যন্ত ছিটকে যান শেষ টেস্ট থেকেও। পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করা হয়, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসছে টেস্ট সিরিজে খেলবেন প্রথম ম্যাচ থেকেই। ইয়ংয়ের সামনে তাই মুম্বাই টেস্ট হয়ে দাঁড়ায় নিজেকে মেলে ধরার এবং উইলিয়ামসন দলে ফিরলেও একাদশে জায়গা ধরে রাখার লড়াই।
প্রথম দিন থেকেই সাপের মত টার্ন নেওয়া উইকেটে দুই দলের জন্যই ব্যাটিং এবং রান করাটা ছিল ভীষণ কঠিন এক কাজ। এমন উইকেটে প্রতিটি রানই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেখানেই নিজের ব্যাটিং সামর্থ্য প্রমাণের চ্যালেঞ্জটা নেন ইয়ং। ভারতের স্পিন ত্রয়ীকে সামলান সুইপ, ‘হার্ড’ সুইপ, রিভার্স সুইপ, কাট এবং ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলা দারুণ সব শটে। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করে ২৩৫ রান, যেখানে ইয়ংয়ের অবদান দলীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭১।
ভারত প্রথম ইনিংসে ২৮ রান নেওয়ার পর এটা একরকম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, ম্যাচ জিততে মোটামুটি একটা টার্গেট ছুঁড়ে দিতেও ভালোই কাঠগড় পোড়াতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। ভারত স্পিনারদের তোপের মুখে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছিল সফরকারীরা। তবে একপ্রান্ত আগলে বোলারদের লড়াকু পুঁজি এনে দিতে রান বের করে নেন ইয়ং। অষ্টম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে করেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি (৫১)।
দুই অফস্পিনার রবিচন্দন অশ্বিন, ওয়াশিংটন সুন্দর এবং বাঁহাতি রবীন্দ্র জাদেজার বিপক্ষে ইয়ং পরিচয় দেন তার স্পিন বোলিংয়ে তার চূড়ান্ত স্কিলের। ‘রাফ’ এরিয়াতে পিচ করা ডেলিভারি সামলেছেন ফরওয়ার্ড ডিফেন্সে। বাউন্ডারি বা বড় শট এড়িয়ে এই ইনিংসে মনোযোগ দেন সিঙ্গেলসের ওপর। দুই চার ও এক ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি পরিস্থিতির বিবেচনায় সিরিজে তার সেরাই বটে। যে উইকেটে টিকে থাকতেই দুই দলের ব্যাটারদের নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার দশা, সেখানে ১০১ বল খেলাটা বিশেষ স্কিলেরই প্রদর্শনী।
আরও পড়ুন
৩৬ বছর পর নিউজিল্যান্ডের জয় ভারতের মাটিতে |
![]() |
ইয়ংয়ের সেই ইনিংস নিউজিল্যান্ডকে এনে দেয় ১৪৬ রানের লিড, যা শেষ পর্যন্ত দলটিকে এনে দেয় ২৫ রানের নাটকীয় জয়। সিরিজের ৬ ইনিংসে ২৪৪ রান করে তারকায় ঠাসা সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ওঠে ইয়ংয়ের হাতে।
তিন ম্যাচ ধরে যে তিনটি ভিন্ন উইকেটে রানের জন্য সংগ্রাম করেছেন ভারতের দুই তারকা ব্যাটার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি, সেই একই সিরিজে প্রতিটি ইনিংসেই যেভাবে মূল্যবান রান করেছেন ইয়ং, সেটা বোধকরি তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না। সিরিজটি খেলার মানসিক প্রস্তুতিই যে ছিল না তার। সেখানে দেশের মাটিতে প্রায় অপরাজেয় হয়ে ওঠা একটি দলকে ধবলধোলাই করার অন্যতম নায়ক বনে যাওয়া রূপকথার গল্পই কেবল হতে পারেন।
ভারতবধের পর সবসময়ই একটু চুপচাপ স্বভাবের ইয়ং এমন পারফরম্যন্সের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “আমাকে আমার ডিফেন্সের ওপর আস্থা রাখতে হয়েছে। আর এটা নিশ্চিত করতে হয়েছে যে আমি কোথায় রান বের করতে চাই। চেয়েছি যতক্ষণ সম্ভব সেটা চালিয়ে যেতে। আমার যদি জানা থাকে যে আমি কোথায় রান করতে চাই এবং নিজের ডিফেন্সের ওপর বিশ্বাসটা রাখি, তাহলে সেটা মনকে অনেক পরিষ্কার করে দেয়।”
ইয়ং যতোটা নির্লিপ্তভাবে নিজের ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ভারতের বিপক্ষে সিরিজে তার ব্যাট মোটেও সেভাবে কথা বলেনি। স্কোয়াডের বাইরে থাকা একজন ব্যাটার দলে এসে তিন নম্বর পজিশনে নেমে ইনিংসের পর ইনিংস যেভাবে ব্যাট করে গেছেন, ব্যবধান গড়ে দেওয়া ইনিংস খেলেছেন, তা করাটা ভারতের মাটিতে টেস্টে একজন ‘বিদেশী’ ব্যাটারদের জন্য কেবল স্বপ্নই হতে পারে।
আরও পড়ুন
যার ছিল না খেলারই কথা, সেই ইয়ংই হলেন ভারতের হন্তারক |
![]() |
ইয়ং মুখে না বললেও সেই স্বপ্নটা নিশ্চয়ই এঁকেছিলেন। আর সেটা করেছিলেন বলেই প্রতিটি ম্যাচেই না খেলার অনিশ্চয়তা সঙ্গী করে মাঠে নেমেছেন, রান করেছেন এবং দলকে জিতিয়েছেন। তবে ইয়ংএর জন্য পুরো ব্যাপারটা একটা স্বপ্ন হয়ে থাকতে পারে। কারণ, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ সেরা হওয়ার পরও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে যে তার খেলার নেই নিশ্চয়তা। একই চিত্র যে ছিল ভারত সিরিজের আগেও। মাঝের এই কয়েক সপ্তাহ তাই ইয়ংয়ের জন্য হয়ে থাকতে পারে ঘোরলাগা এক স্বপ্ন, যার পরদে পরদে মিশে থাকতে অবিশ্বাসের সুবাতাস।
৬ আগস্ট ২০২৫, ৯:২৬ পিএম
৫ আগস্ট ২০২৫, ৮:৫৪ পিএম
গত এক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে ‘এ’ দলে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। তবুও নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাইরেই থাকতে হচ্ছে নুরুল হাসান সোহানকে। অস্ট্রেলিয়ায় টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ তার জন্য হতে পারে নিজেকে প্রমাণের আরেকটি মঞ্চ। অভিজ্ঞ এই কিপার-ব্যাটার মনে করেন, জাতীয় দলে ফেরার জন্য তিনি কেবল নিজের কাজটাই ঠিকটাক করতে পারেন।
বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের নিয়মিত অধিনায়ক সোহান টানা দুই আসরে দলটিকে নিয়ে গেছেন গ্লোবাল সুপার লিগের ফাইনালে। একবার হয়েছেন চ্যাম্পিয়নও। এছাড়া বিপিএল, ডিপিএল, এনসিএল বা ‘এ’ দল, সব জায়গাতেই ব্যাট হাতে ও নেতা হিসেবেও নিজের মুন্সিয়ানা দেখাচ্ছেন সোহান। সেই ধারায় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাকে অধিনায়ক করা হয়েছে। তবে জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার অপেক্ষা লম্বাই হচ্ছে তার।
বুধবার মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক সুরেই কথা বললেন সোহান।
“জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া আসলে আমার হাতে নেই। এটা নিয়ে মন্তব্য করাটাও তাই ঠিক হবে না। তবে যেখানেই খেলি না কেন, ভালো করার চেষ্টা করি। নিজের জায়গা থেকে উন্নতির চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলা ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল, এখনও সেই স্বপ্নই দেখি। সুযোগ পেলে অবশ্যই নিজের সর্বোচ্চটা দিতে চাই।”
সোহানের জন্য সেই সুযোগটা আসতে পারে এই সিরিজটি দিয়েই। জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা ক্রিকেটারদের বাজিয়ে দেখতেই সাজানো হয়েছে ‘এ’ দলের স্কোয়াড। আর বলার অপেক্ষা রাখে না, এখানে ভালো করলে সোহান বা অন্যদের জন্য খুলে যেতে পারে নেদারল্যান্ডস সিরিজের দুয়ার। সেটা না হলেও সুযোগ মিলতে পারে এশিয়া কাপেও।
“আমরা একটা ভালো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছি। এখানে অনেক ভালো ভালো দল রয়েছে। আমাদের জন্য তাই দারুণ একটা সুযোগ। অবশ্যই চাইব ফাইনাল খেলতে। তবে শেখার প্রক্রিয়ায় আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, শেখার ব্যাপারটা কিন্তু চলতেই থাকবে, এটা জীবনেরই অংশ। কিন্তু যেহেতু একটি প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি, তাই সেখানে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ফাইনালে খেলা এবং শিরোপা জেতা। দলের প্রতিটি ক্রিকেটার, টিম ম্যানেজমেন্ট এখানে সবাই চোখ রাখছে কেবল শিরোপার দিকেই।”
দুই ম্যাচ হাতে রেখে ত্রিদেশীয় অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের যুবারা। ফাইনালে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে আগামী ১০ আগষ্ট ট্রফি নির্ধারণী ম্যাচে অবতীর্ণ হওয়ার আগে বুধবার ফাইনালের ড্রেস রিহার্সল ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে পর্যুদস্ত করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
এক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৫ উইকেটে হারের বদলা এদিন নিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। জিম্বাবুয়ের হারারেতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে সামিউন বশিরের অলরাউন্ড পারফরমেন্স (২/২৩ও ৫২*) এবং বাঁ হাতি স্পিনার সানজিদ মজুমদারের ছোবলে ( ৪/৩৯) ১২৩ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জিতে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশ যুবারা।
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে পেসার আল ফাহাদ (২/২০) এবং দুই বাঁ হাতি স্পিনার সানজিদ মজুমদার (৪/৩৯)ও সামিউন বশিরের (২/২৩) বোলিংয়ে ১২.৪ ওভার হাতে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে মাত্র ১৪৭ রানে অল আউট করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বোলারদের তোপে এক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের স্কোর ছিল ৪৫/৫। সেখান থেকে ৬ষ্ঠ উইকেট জুটির ৩৭ রানে বড় বিপর্যয় এড়িয়ে ১৪৭ পর্যন্ত ইনিংস টেনে নিতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার যুবারা। বান্ডিল মাবিথা করেছেন সর্বোচ্চ ৩৯ রান। পল জেমস করেছেন ৩৩ রান।
১৪৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের টপ এবং মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় এক পর্যায়ে স্কোর ছিল ৬৮/৫। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করে ৫ উইকেটের বিশাল জয় উপহার দিয়েছেন ৬ষ্ঠ জুটির দুই ব্যাটার আব্দুল্লাহ এবং সামিউন বশির। অবিচ্ছিন্ন এই জুটি যোগ করেছে ৮০ রান। আবদুল্লাহ ৪৭ বলে ২০ এবং সামিউন বশির ৩৬ বলে ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন। সামিউন বশির এই ইনিংসে মেরেছেন ৬টি চার, ৩টি ছক্কা। ওপেনার রিফাত বেগ করেছেন ৪৭ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৪৩ রান।
সদ্য সমাপ্ত রোমাঞ্চকর ওভাল টেস্টে ভারতের নাটকীয় জয়ে বল হাতে জ্বলে উঠেছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। ভারত পেসারের সেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের প্রতিফলন পড়েছে আইসিসির টেস্ট বোলারদের র্যাঙ্কিংয়েও। ১২ ধাপ উন্নতি করে উঠে এসেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৫তম অবস্থানে।
বুধবার আইসিসি প্রকাশ করেছে র্যাঙ্কিংয়ের সাপ্তাহিক হালনাগাদ, যেখানে বাজিমাত করেছেন সিরাজ। এর আগে একবার শীর্ষ বিশের মধ্যে এসেছিলেন এই ডানহাতি পেসার। সেটা ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে।
ওভালে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেওয়া সিরাজ পুরো সিরিজেই ছিলেন অন্যতম সেরা বোলার। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের দেওয়া ৩৭৪ রানের লক্ষ্যে দারুণভাবে এগিয়ে চলা ইংলিশদের তিনি আটকে দেন ফাইফার নিয়ে, আর দলকে মাত্র ৬ রানে। ম্যাচ সেরার খেতাবও জেতেন সিরাজই।
ভারতের এই জয়ে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন আরেক পেসার প্রাসিধ কৃষ্ণও। দুই ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে তিনি দিয়েছেন বড় লাফ। ২৫ ধাপ উন্নতিতে উঠে এসেছেন ৫৯তম স্থানে, যা তারও ক্যারিয়ার অবস্থান।
দল হারলেও ইংল্যান্ডের পেসারদের জন্যও রয়েছে ভালো পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি। ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সেরা দশে (১০ নম্বর) জায়গা করে নিয়েছেন গাস আটকিনসন, যেখানে যৌথভাবে তার সাথে দশে আছেন অজি পেসার মিচেল স্টার্ক। আরেক ডানহাতি পেসার জস টাং উঠে এসেছেন ৪৬তম স্থানে, তার উন্নতি ১৪ ধাপ।
টেস্ট বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ তিনে আগের মতোই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছেন জাসপ্রিত বুমরাহ, কাগিসো রাবাদা ও প্যাট কামিন্স। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে শীর্ষ ২৫-এর মধ্যে আছেন কেবল মেহেদি হাসান মিরাজ। এক ধাপ উন্নতি করে তিনি আছেন ২৫তম স্থানে।
ভারত-ইংল্যান্ডের ২-২ সমতায় শেষ হওয়া এই সিরিজের দারুণ কিছু ইনিংস খেলা ইয়াশাশভি জয়সওয়াল ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে করেন শতক। তিন ধাপ উন্নতিতে ভারত ওপেনার এখন আছেন পঞ্চম স্থানে। একই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা জো রুট ধরে রেখেছেন শীর্ষস্থান।
আরেক ইংলিশ ব্যাটার হ্যারি ব্রুক দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে উঠে এসেছেন দুইয়ে। ফলে তিনি নেমে যেতে হয়েছে কেন উইলিয়ামসনকে। ব্যাটারদের মধ্যে বাংলাদেশের সেরা অবস্থান মুশফিকুর রহিমের, তিনি আছেন ৩২ নম্বরে।
আর অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে যথারীতি প্রথম স্থান ধরে রেখেছেন ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এক সিরিজ কাটানো ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা (৪০৫ রেটিং পয়েন্ট)। দুইয়ে আছেন মিরাজ (৩০৫ রেটিং পয়েন্ট)।
ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যকার এক অসাধারণ টেস্ট সিরিজের শেষ দিনের শুরুতেও ক্রিকেট প্রেমীরা জানতেন না, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ইতিহাসের অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের। তারা জানতেন কেবল নিজ নিজ দলের জয়ের সম্ভাবনাটাই কেবল। তবে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে ওভাল টেস্টের পঞ্চম দিক সকালে টানটান উত্তেজনার মঞ্চে সবচেয়ে হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্তটি নিয়ে ক্রিস ওকস, যিনি কিনা তিন দিন আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন ম্যাচ থেকেই। সেই ক্রিকেটার স্রেফ এক হাত নিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটার হিসেবে যখন নেমে যান, তখন আক্ষরিক অর্থে সেটাই ছিল তার জয়, টেস্ট ক্রিকেটেরই জয় বৈকি।
প্রথম দিনের খেলার শেষের দিকে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ওকসের বাঁ কাঁধের হাড় সরে গিয়েছিল। এরপর থেকে আঘাত প্রাপ্ত হাতটিকে স্লিংয়ে বেঁধে রাখতে হচ্ছে তাকে। দ্বিতীয় দিনই জানিয়ে দেওয়া, এই ম্যাচ শেষ ওকসের জন্য। অথচ সেই তিনিই পঞ্চম দিন তুমুল করতালির মধ্যে এক হাতে ব্যাট করতে যখন নেমে যান, তখন এক উইকেট হাতে রেখে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ১৭ রান।
ওকস ডানহাতি ব্যাটার হওয়ায় অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন, চাইলেও এই ম্যাচে তার ব্যাটিং করা অসম্ভব। তবে বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া এই সৈনিক যে শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও লড়তে প্রস্তুত। আর তাই সেই আহত কাঁধ থেকে পুরো হাত স্লিংয়ে বেঁধে জার্সির নিচে লুকিয়ে রেখেই হাজির হন দলকে জেতাতে। তার সংক্ষিপ্ত কিন্তু সাহসী এই ইনিংসে নেই কোনো চার-ছক্কা বা রান, তবে যা আছে তা হল না মানা চোয়ালবদ্ধ এক যোদ্ধার শেষটা নিংড়ে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছাশক্তি।
আর এটাই ওকসকে সাহস যুগিয়েছে স্রেফ এক হাতে ব্যাটিং করার, যা আবার কিনা বাঁহাতি হিসেবে। ক্যারিয়ারে এমনটা আগে কখনও না করায় স্বাভাবিকভাবেই এটা তার জন্য মোটেও সহজ কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। আর যুদ্ধটা তো কেবল মাঠে নামাতেই নয়, তার আগেও ছিল বেশ। ফিজিওর সাহায্যে প্যাড পরেছেন, বাঁ হাতে যাতে চাপ না পড়ে এমনভাবে গার্ড নিয়েছেন। এমনকি ডান হাতে দুইটি ছোট আর্ম গার্ড পরে ব্যাট ধরেছেন। এরপরও মাঠে যাওয়ার প্রতিটি মুহূর্তেই ব্যথা আর যন্ত্রণা তার মুখের অভিব্যক্তিতেই ফুটে উঠছিল বারবার।
যদিও ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো বল খেলতে হয়নি ওকসকে, কারণ পরপর দুই ওভারের শেষ বলে অন্য ব্যাটার প্রান্ত বদল করতে সমর্থ হন। তবুও নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে দাঁড়িয়ে বারবার ছুটে গিয়ে রান নিতে হয়েছে ওকসকে। আর প্রতিটি দৌড়ে চোখেমুখে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ ছিল স্পষ্ট। স্লিং বেঁধে রাখা হাতে যে দৌড় দিলেই ব্যথা অনুভব করছিলেন। একবার তো আম্পায়ার আহসান রাজার সাহায্যও চেয়েছিলেন গ্লাভস পরিয়ে দিতে।
শেষ পর্যন্ত গাস আটকিনসন বোল্ড হয়ে গেলে ওকসের বীরত্ব স্বত্বেও ছয় রানে হার্টে হয় ইংল্যান্ডকে। সিরিজ ড্রয়ের আনন্দ থাকলেও ভারতের খেলোয়াড়রাও ম্যাচ শেষে প্রথমেই এগিয়ে যান ওকসের দিকেই। একে একে তারা শ্রদ্ধা জানান তার এই সাহসিকতাকে।
ওকসের এই এক হাতে ব্যাট করতে নেমে যাওয়া, ব্যথা নিয়ে দৌড় দেওয়ার দৃশ্যগুলো আরও একটি কারণেই তার জন্য ইতিহাস হয়ে থাকতে পারে। কারণ, এটাই যে হতে পারে তার শেষ আন্তর্জাতিক ইনিংস। ৩৬ বছর বয়সী এই পেসার এখন আর ইংল্যান্ডের সাদা বলের দলে নেই। মূলত খেলেন টেস্টেই। কাঁধের এই চোট সারিয়ে বছরের শেষের আগে তার ফেরার আর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ইংলিশদের পেসারদের এখন যে দাপট, তাতে একবার দলে জায়গা হারিয়ে ফেললে সেটা এই বয়সে ওকসের জন্য বেশ কঠিনই হতে পারে।
তবে আপাতত সেসব ছাপিয়ে ওকসের এই ক্ষণিকের উপস্থিতি শুধু একটা ম্যাচ নয়, পুরো সিরিজের আবেগ ও নিবেদনের উঁচু মানদণ্ডই যেন তুলে ধরে। যেখানে পাঁচ টেস্টের ২৫ দিনের লড়াইয়ে ৩২ জন খেলোয়াড় শারীরিক ও মানসিক ধাক্কা সামলেছেন, সেখানে ওকস দেখিয়ে দিয়েছেন, আসল লড়াইটা নিজের প্রতি মুহূর্তে নিজের সামর্থ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ারও।
নিজের সম্ভাব্য শেষ আন্তর্জাতিক ইনিংসে তাই বোলার ওকস স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ব্যাট হাতে তার কীর্তির। রেকর্ডের পাতায় না থাকলেও যুগ যুগ ধরে খেলাটির প্রতি তার এই নিবেদন হৃদয়ে গেঁথে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।