গোটা ইনিংস জুড়েই চিটাগং কিংস ব্যাটারদের ভোগালেন ফরচুন বরিশাল বোলাররা। মোহাম্মদ মিঠুন ও আরাফাত সানির দুটি লড়িয়ে ইনিংসে মিলল টেনেটুনে একটা সম্মানজনক স্কোর। এরপর বল হাতে দ্রুত কয়েকটি উইকেট তুলে জাগল জয়ের আশাও। তবে দাভিদ মালানের ফিফটি ও মোহাম্মদ নবির দায়িত্বশীল ব্যাটিংতে তামিম ইকবালের দল পেল অনায়াস জয়।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ২৫তম ম্যাচে বরিশাল পেয়েছে ৬ উইকেটের সহজ জয়। প্রতিপক্ষের ৮ উইকেটে ১২১ রান দলটি পাড়ি দিয়েছে ১৯ বল হাতে রেখেই। ৭ ম্যাচে এটি বরিশালের পঞ্চম জয়। পয়েন্ট টেবিলে দলটি আছে দুইয়ে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ মালান |
রান তাড়ায় বরিশালের শুরুটা আদর্শ হয়নি। দুই বাউন্ডারিতে ১৪ বলে ৮ করে রান আউট হয়ে যান তামিম। অল্পেও ফেরেন তাওহীদ হৃদয়ও। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে কমে যায় রানের গতি। চাপ বাড়িয়ে আরাফাত সানিকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বিদায় নেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
সানিকে দুই চার মেরে পাল্টা আক্রমণের সুর ছিল মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। তবে সুবিধা করতে পারেননি তিনিও। ৫৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপেই পড়ে যায় বরিশাল।
তবে সেখান থেকেই দলের হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ মালান ও নবি মিলে। আলিস আল ইসলামকে চার ও ছক্কা মেরে শুরুটা ভালো করেন নবি। এরপর অতি আগ্রাসী না হয়ে, স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাট করেই প্রতি ওভারে চার-ছক্কা আদায় করেন দুই ব্যাটার।
৬৯ রানের অপরাজিত জুটিতে শেষ পর্যন্ত দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন মালান (৪১ বলে ৫৬) ও নবি (২১ বলে ২৬)।
আরও পড়ুন
মালান-নবির ব্যাটে চড়ে বরিশালের পঞ্চম জয় |
ব্যাট হাতে শেষটা খারাপ হলেও শুরুটা ভালোই ছিল চিটাগংয়ের। তবে ১৯ রানে উসমান খানের বিদায়ের পর ক্রমেই পথ হারায় দলটি। রিপন মন্ডল ও ফাহিম আশরাফের সাড়াশি আক্রমণে খেই হারান ব্যাটাররা। ধীরলয়ে এগিয়ে যায় রানের চাকা।
৫৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও দলটির ১২০ পাফ করা কৃতিত্ব মিঠুন ও সানির। দুজনের ব্যাট থেকে আসে যথাক্রমে ৩৫ ও অপরাজিত ২৭ রান। সমান তিনটি করে উইকেট নেন রিপন ও ফাহিম।
২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম
এই কিছুদিন আগেও রংপুর রাইডার্সকে মনে হচ্ছিল অজেয় এক দল। একের পর এক ম্যাচ জিততে উড়তে থাকা দলটি ৮ ম্যাচ জিতে সবার আগে নিশ্চিত করে ফেলে প্লে-অফ। তবে এরপরই হয়েছে ছন্দপতন। টানা তিন ম্যাচ হেরে গেছে নুরুল হাসান সোহানের দল। তিন বিভাগেই মনে হচ্ছে এক ভিন্ন দল যেন খেলছে এখন। হতাশ সাইফ হাসানের আশা, বিদেশীদের পাশাপাশি দেশী ক্রিকেটারদের সমান অবদান পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়াবে রংপুর।
এবারের বিপিএলের শুরু থেকেই দুরন্ত গতিতে ছুটছিল রংপুর। দাপুটে জয় যেমন ছিল, আবার ছিল ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে এক ওভারে ২৬ রান নিয়ে জয়ও। অদম্য গতিতে এগিয়ে চলা সেই দলটিকে মাটিতে নামিয়ে আনে দুর্বার রাজশাহী। তাদের কাছে পরপর দুই ম্যাচে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে বুধবার দলটি হেরে গেছে চিটাগং কিংসের কাছেও। এক বিদেশী অ্যালেক্স হেলস আগেই দল ছাড়ার পর এই ম্যাচের আগে দল ছেড়েছেন ফর্মে থাকা অলরাউন্ডার খুশদিল শাহ।
তাহলে কী অতিরিক্ত বিদেশী নির্ভরতাই সমস্যায় ফেলছে রংপুরকে? সাইফ অবশ্য সেটা মানতে নারাজ বলেই জানালেন সংবাদ সম্মেল্লনে। “অ্যালেক্স (হেলস) যাওয়ার পরও কিন্তু আমরা তিনটা ম্যাচ জিতেছি। আমার মনে হয় আমরা কিছুটা মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের এখন সেই মোমেন্টাম ফিরিয়ে আনতে হবে। সামনের ম্যাচটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচটা যদি জিততে পারি, তাহলে আমরা সরাসরি ফাইনালে (কোয়ালিফায়ারে) যাব।”
রংপুর টানা আট ম্যাচ জেতার পর মাঝে ছিল ছয়দিনের লম্বা একটি বিরতি। সেই ফাঁকে দলটি রংপুরে গিয়েছিল একদিনের ট্যুরেও। কোচ মিকি আর্থার সম্প্রতি বলেছেন, ওই বিরতিটা হয়ত তাদের মোমেন্টাম হারানোর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে সাইফ বললেন ভিন্ন কথাই। “হয়ত ভুল-ত্রুটি ছিল। কিছুদিন আমরা বোলিং খারাপ করেছি, কিছুদিন আবার ব্যাটিংটা ভালো হয়নি। সব মিলে দল হিসেবে আমরা একসাথে ভালো করতে পারিনি। আশা করি পরবর্তী ম্যাচে আমরা দলগতভাবে একটা ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারব।”
আপাতত ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে রংপুর। তবে শেষ ম্যাচে যদি দলটি হেরে যায়, আর চিটাগং তাদের শেষ দুই ম্যাচে জিতে যায়, তাহলে নেট রান রেটের মারপ্যাচে সেরা দুইয়ে থেকে নাও শেষ করতে পারে রংপুর। আর সেটা হলে দলটিকে খেলতে হবে নকআউট এলিমিনেটরে। যেখানে প্রথমে একটি ম্যাচে জিতলেও ফাইনালে যেতে জিততে হবে আরেক ম্যাচ। আর সেখানে শীর্ষ দুইয়ে থাকতে পারলে ফাইনালে যাওয়ার জন্য প্লে-অফে প্রথম ম্যাচ হারলেও সুযোগ থাকবে আরেকটি।
তরুণ ব্যাটার সাইফ মনে করছেন, সেরা দুইয়েই থাকবেন তারা। “আমার মনে হয় আপনি যদি দেখেন, আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়রাও পারফর্ম করেছে। বিদেশী ক্রিকেটাররা অবশ্যই ভালো খেলছে, তবে আমার মনে হয় একটা দলকে জিততে হলে সবারই ভালো খেলা দরকার। বিদেশীদেরও ভালো খেলা দরকার, স্থানীয়দের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। আমরা সেই দলগত পারফরম্যান্সের জন্যই অপেক্ষা করছি। আশা করি পরবর্তী ম্যাচেই সেটা দেখাতে পারব।”
রংপুরের পরের ম্যাচ আগামী বৃহস্পতিবার, প্রতিপক্ষ খুলনা টাইগার্স।
টানা আট ম্যাচ জয়ের সময় রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিংটা হচ্ছিল দারুণ। আগের দুই ম্যাচে হারের মত চিটাগং কিংসের বিপক্ষেও ব্যাট হাতে মলিন একটি দিন পার করল দলটি। শেষ পর্যন্ত লড়ে ইফতিখার আহমেদ লড়াকু এক ফিফটি না করলে মিলত না একটা ফাইটিং স্কোরও। তবে রানটা যে কম, সেটা চিটাগংয়ের ইনিংস যত এগিয়েছে, ততই স্পষ্ট হল। তার মাঝেও কিছুটা লড়াইয়ের আশা জাগালেন রংপুরের বোলাররা। তবে হায়দার আলির খুনে ব্যাটিংয়ে স্রেফ উড়ে গেল দলটি। টানা তিন হারের তেতো অভিজ্ঞতা হল নুরুল হাসান সোহানের দলের।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ৩৭তম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে চিটাগং। প্রতিপক্ষের ৫ উইকেটে ১৪৩ রান দলটি পাড়ি দিয়েছে ১৭.৪ ওভারেই।
বল হাতে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি হজম করেন মাহেদি হাসান। থার্ড ম্যান দিয়ে চার আসে লাহিরু মিলান্থার ব্যাট থেকে। তবে সেই শেষ। এরপর রানের জন্য সংগ্রাম করা শ্রীলঙ্কান এই ব্যাটারকে ফেরান আকিফ জাভেদ। দুই চারে ১৫ রান করে ফেলে গ্রাহাম ক্লার্ক দিচ্ছিলেন ছন্দময় ব্যাটিংয়ের আভাস। তবে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে মাপা এক ইয়র্কারের তাকে বোল্ড করেন আকিফ।
এই দুই উইকেটের পর কমে যায় চিটাগংয়ের রান তোলার গতি। সাত ওভারে আসে মাত্র ৩৩ রান। মোহাম্মদ মিঠুনকে টানা দুই ছক্কা মারে পাল্টা আক্রমণের সম্ভাবনা জাগালেও, ওই ওভারেই বোল্ড হয়ে শেষ হয় তার ২০ রানের ইনিংসের।
রংপুরের বোলারদের চাপে রাখেন হায়দার আলি। বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানকে পরপর দুই বলে হাঁকান দুই ছক্কা। পারভেজ হোসেন ইমন ক্রিজে সেট হয়ে গেলেও প্রথম ২৪ বলে করেন মাত্র ২৮ রান।
নাহিদ রানাকে চার ও ছক্কা মেরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তরুণ এই ব্যাটার। তবে পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। সাইফউদ্দিনের বলে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৩ বলে ৪১।
ক্রিজে গিয়েই টানা দুই চারে শামিম হোসেন কমিয়ে রানেন বল ও রানের ব্যবধান। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে কাঁটা পড়ে বিদায় নিতে হয় তাকে।
১৮ বলে ২০ রান প্রয়োজন, এই সমীকরণে বল করতে এসেছিলেন আকিফ। ছন্দে থাকা এই বাঁহাতি এই পেসারের ওভারেই রংপুরের জয়ের সব আশা শেষ হয়ে যায়। টানা চার ছক্কা মেরে ওই ওভারেই ম্যাচ শেষ করে দেন হায়দার আলি। মাত্র ১৮ বলে ৬ ছক্কা ও ১ চারে ৪৮ রানের ইনিংসে ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেওয়া ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
এর আগে দিনের শুরুতে, রংপুরের ব্যাট হাতে শুরুটা ছিল হতাশাময়। প্রথম ওভার মেডেন দেওয়ার পর স্টিভেন টেলর আউট হন শূন্য রানেই। সৌম্য সরকার কয়েকটি বড় শট খেললেও পারেননি সেরা ছন্দে ব্যাট করতে। টপ অর্ডারের অন্য ব্যাটাররাও পারেননি সেভাবে অবদান রাখতে। ৬৭ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলা রংপুরের ইনিংস এরপর একাই টেনে নেন ইফতিখার। অন্যপ্রান্তে ২১ বলের ৯ রানের ইনিংসে তার ওপর কিছুটা চাপ বাড়িয়েই দেন সোহান। তবে সেটা সামাল দিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালান পাকিস্তান ব্যাটার।
২২ রানের ইনিংসে তাকে সঙ্গ দেন মাহেদি। দুজনের ফিফটি জুটিই রংপুর এনে দেয় প্রায় দেড়শর কাছাকাছি স্কোর। ৪৭ বলে ৬৫ রান করেন ইফতিখার। তবে শেষ পর্যন্ত বোলারদের ব্যর্থতায় বিফলে যায় তার লড়িয়ে ইনিংস।
রংপুর রাইডার্সকে হতাশ করে আরও একবার ব্যর্থ হলেন স্টিভেন টেলর। সৌম্য সরকার শুরুটা পেলেও ইনিংস বড় করতে পারলেন না। মাঝে নুরুল হাসান সোহানের স্বভাববিরুদ্ধ ইনিংসে চাপে পড়ে গেল একবারের বিপিএল চ্যাম্পিয়নরা। তবে চাপের মুখে দারুণ এক ফিফটিতে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন ইফতিখার আহমেদ। সাথে মাহেদি হাসানের ক্যামিওতে শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটা রানই বোর্ডে জমা করল রংপুর।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ৩৭তম ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিং করা রংপুর দাঁড় করিয়েছে ৫ উইকেটে ১৪৩ রানের স্কোর।
চলতি বিপিএলে এখন পর্যন্ত রংপুরের জন্য বড় এক হতাশার নাম হয়ে আছেন স্টিভেন টেলর। যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাটার একটি ম্যাচেও পারেননি ভালো করতে। এই ম্যাচেও বজায় থাকে সেই চিত্র। প্রথম ওভারটি মেডেন দিয়ে চাও বাড়িয়ে শরিফুল ইসলামের বলে বোল্ড হন রানের খাতা খোলার আগেই।
সাইফ হাসান দ্রুত ফিরলেও সৌম্য সরকার ছিলেন ছন্দেই। দর্শনীয় কিছু শটে চলে যান ত্রিশের ঘরে। তবে খালেদ আহমেদকে ছক্কা হাঁকিয়ে তার শিকার হয়েই তাকে থামতে হয় ২৩ রানে। ছয় ওভারে রান হয় মাত্র ৩৭।
চলতি আসরে কয়েকটি আগ্রাসী ইনিংস খেলে রংপুরের ত্রাতা হওয়া সোহান এদিন শুরু থেকেই ছিলেন আড়ষ্ট। ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না একেবারেই। একপ্রান্তে ইফতিখার রান বের করলেও অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের একের পর এক ডট বলে চাপে পড়ে যায় দল।
প্রথম ১১ বলে মাত্র দুই রান করা রংপুর অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত আউট হন স্রেফ ৯ রানে। ২১ বলের ইনিংসটিতে তার ব্যাটে জড়তা ছিল স্পষ্ট। খুশদিল শাহর জায়গায় দলে আসা ইরফান শুক্কুর ব্যর্থ হন সুযোগ কাজে লাগাতে। ১২.২ ওভারে রংপুরের রান তখন পাঁচ উইকেটে মাত্র ৬৭।
ইফতিখার একপ্রান্ত আগলে রাখে চেষ্টা চালিয়ে যান দলকে একটা মোটামুটি লড়িয়ে স্কোর এনে দেওয়ার জন্য। চার মেরে রানের খাতা খোলা মাহেদি হাসান আভাস দেন ভালো কিছুর।
খালেদের করা ১৮তম ওভারটি রংপুরের জন্য ফলপ্রসূ হয়। নো-বলে ছক্কা মারার পর ফ্রি-হিট থেকে পরের ডেলিভারিতেও সীমানা পার করে ৩৯ বলে ফিফটিতে পা রাখেন ইফতিখার। ওই ওভারে মাহেদির ব্যাট থেকে একটি বাউন্ডারিতে আসে মোট ১৯ রান।
শরিফুলের করা ২০তম ওভারে চার ও ছক্কা মারা শেষ পর্যন্ত ইফতিখার অপরাজিত থাকেন ৬৫ রানে, বল খেলেন ৪৭টি। মাহেদির রান ২২।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নিয়মিতই ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন। ফারভিজ মাহরুফ বাংলাদেশে তাই বেশ চেনা এক মুখই। সাবেক শ্রীলঙ্কান এই অলরাউন্ডার এসেছিলেন এবারের বিপিএলে ধারাভাষ্য দিতে। দেশে ফেরার আগে যতটুকু দেখেছেন কাজ থেকে, সেই অভিজ্ঞতায় তার কাছে বেশ উপভোগ্যই লেগেছে ব্যাটে-বলের লড়াই। তবে সেখানে নাহিদ রানার মত কয়েকজন বিশেষ নজর কেড়েছে মাহরুফের।
বাংলাদেশ ছাডার আগে টি-স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাহরুফ কথা বলেছেন নাহিদ রানাকে নিয়ে তার সম্ভাবনার কথা। নানা প্রসঙ্গে এসেছে সাকিব আল হাসান সহ বাংলাদেশের ক্রিকেটের নানা দিকও।
প্রশ্ন : টুর্নামেন্টের যখন জমে উঠেছে, প্লে-অফও কড়া নাড়ছে দরজায়, এমন সময়ে বিপিএল ছেড়ে যেতে নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে?
মাহরুফ : অবশ্যই। দেখুন, আমি আগেও বাংলাদেশ, বিপিএলে কাজ করেছি। এখানে আমার অনেক বন্ধু আছে, কাজের পরিবেশও এখন অনেক চেনা লাগে। ফলে এখানে প্রতিবার কাজ করতে আসলে সেটা আমি উপভোগই করি। এবার যখন চুক্তি হল, তখনই জানতাম টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত থাকা হবে না আমার। তবে হ্যাঁ, কিছুটা খারাপ তো লাগবেই, কারণ মাঠের ক্রিকেটটা এবার অসাধারণ হচ্ছে বিপিএলে।
প্রশ্ন : মাঠের ক্রিকেটের কথা বললেন, এর আগেও বিপিএলে ধারাভাষ্য দিয়েছেন। উইকেট, বিশেষ করে মিরপুরে লো-স্কোরিং ম্যাচের কারণে খেলোয়াড়দের মাঝেও অতীতে হতাশা দেখে গেছে। তবে এবার শুরু থেকে সব ভেন্যুতেই বড় স্কোর হচ্ছে। এই পরিবর্তনটা কীভাবে দেখছেন?
মাহরুফ : এটা একটা ভালো প্রশ্ন, কারণ আপনি মাঠের ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ আছেন। এবার তো সবার আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মাঠের বাইরের বিষয়গুলো (হাসি)। নাহ, বলতেই হবে এবারের উইকেটের আচরণ খুবই ভালো হচ্ছে। আসলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মজা এখানেই। রান হবে, চার-ছক্কার মার হবে, দর্শকরা তো এসবই দেখতে চায়। সেদিক থেকে চিন্তা করলে, এবারের বিপিএলটা আসলেই উপভোগ্য হচ্ছে। তবে স্রেফ বড় রানই যে হচ্ছে, তাও না। বোলারদের জন্যও উইকেটে অনেক কিছু আছে। তাসকিন এক আসরের সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড করে ফেলল, এটা বলে দেয় বোলাররাও বেশ সাহায্য পাচ্ছে।
প্রশ্ন : নিজে একজন পেসার ছিলেন বলেই হয়ত তাসকিনের নামটা আগে নিলেন?
মাহরুফ : না না (হাসি)। এমন কিছু না। বাংলাদেশের অন্য পেসারদেরও আমি যথেষ্ট সম্মান করি। তবে তাসকিনের কথা আলাদা করে বলতেই হয়, কারণ দেখতেই পাচ্ছেন কি বোলিংটাই না করছে! এক ম্যাচে সাত উইকেট তো চাট্টিখানি কথা না। যদি তাই হত, তাহলে হরমেশাই আমরা এমন কীর্তি দেখতে পেতাম। এটার অর্থ হল সে আসলেই দুর্দান্ত ছন্দে আছে। সম্ভবত ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা পার করছে ও। বাংলাদেশের একজন পেসার এভাবে পারফর্ম করছে সব কন্ডিশনে, এটা দেখাটাও আনন্দের ব্যাপার।
প্রশ্ন : তাসকিনের কোন দিকটি দেখে মনে হচ্ছে যেখানে তিনি উন্নতি করেছেন?
মাহরুফ : এটা এক বাক্যে বলা আসলে কঠিন। তবে যদি বলতেই হয়, আমি বলব উইকেটের আচরণ বুঝে সেভাবে বল করার স্কিলটা সে খুব খুব ভালো রপ্ত করেছে। আপনি অনেক ভালো বোলার তখনই হবেন, যখন আপনি উইকেটের আচরণ, প্রতিপক্ষ এবং ব্যাটারদের শক্তিমত্তা বা দুর্বলতা বুঝে বোলিং করতে পারবেন। এই তাসকিনকে দেখে মনে হয়, ও প্রতিটা ডেলিভারি নিয়ে আলাদা করে চিন্তা করে। আর এটাই ওকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের পেস বোলিং আর তাসকিনের কথার প্রসঙ্গে আপনার কাছে জানতে চাইব আরেকজনের ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন নামটা?
মাহরুফ : আমার জীবনে কুইজের সবচেয়ে সহজ উত্তর হয়ত এটাই। অবশ্যই আমি জানি আপনি নাহিদ রানার কথাই বলবেন। আর সেটাই যৌক্তিক। পুরো বিশ্বেই টেস্ট ক্রিকেটে ঘণ্টায় ১৫০ কি.মি. গতিতে বল করা বোলার খুব বেশি পাবেন না। সেখানে বাংলাদেশ, যারা একটা সময় স্পিনের জন্যই বেশি পরিচিত ছিল, তাদের এখন তরুণ পেসার এমন গতিতে বল করছে, এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য দারুণ এক বিজ্ঞাপন। তার মাঝে অপার সম্ভাবনা আছে। বিপিএলেও দেখলাম তার বোলিং। সাদা বলের ক্রিকেটেও ও বাংলাদেশের জন্য বড় সম্পদ হতে যাচ্ছে। তবে তার ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই যুগে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ডাকও আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। বিসিবিকে তাই নাহিদের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে, যাতে টানা না খেলে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায়।
প্রশ্ন : এবার জানতে চাইবা আরেক বাংলাদেশির ব্যাপারে, যিনি না চাইতেও এখন আছেন বিশ্রামে। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে জটিলতায় সাকিব আল হাসান এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল করা থেকে নিষিদ্ধ। রাজনৈতিক ও নানা বাস্তবতায় জাতীয় দলেও নেই অনেকদিন ধরেই। বিপিএলেও নেই সাকিব। কতোটা মিস করছেন তার উপস্থিতি?
মাহরুফ : অনেক। দেখুন, সাকিব তো বাংলাদেশের একজন আইকন। খেলোয়াড় হিসেবে তার অর্জন কী, সেটা বিশ্ব জানে। দেশের মাটিতে খেলে অবসর নিতে চেয়েও সেটা সে পারেনি, এটা একজন খেলোয়াড়ের জন্য অবশ্যই হতাশার। আমি জানি না এখানে তার খেলতে মানার আসল কারণ কি, তবে এটা মেনে নেওয়ার ওর জন্য কঠিনই।
প্রশ্ন : বোলিং অ্যাকশন শুধরে সাকিবের পক্ষে কি ফিরে আসা সম্ভব মনে করছেন?
মাহরুফ : আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে বলব কেন নয়! লঙ্কা টি-টেন খেলার সময় বোলিংয়ের নিষেধাজ্ঞাটা পেল। এরপর ব্যাটার হিসেবে খুব ভালো করল। তবে কাছ থেকে দেখেছি সে বোলিং নিয়েও অনেক কাজ করেছে। আমার কাছে মনে হয়, এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ওর বেশি সময় লাগবে না।
প্রশ্ন : বিপিএলে ফেরা যাক। তাসকিন, নাহিদের কথা বললেন। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে নতুন কেউ আপনার নজর কাড়তে পেরেছে?
মাহরুফ : কঠিন প্রশ্ন। কারণ, এবার বাংলাদেশের অনেক তরুণ ক্রিকেটার ভালো করছে। যদি আলাদা করে বলতে হয়, তাহলে বলব মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের কথা। গত বছরও ওকে দেখেছিলাম, তখন হাতে এত বড় বড় শট ছিল না। তবে বোঝাই যাচ্ছে, টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং নিয়ে সে অনেক কাজ করেছে। শেষের দিকে নেমে নিয়মিতভাবে বড় শট খেলার স্কিল রপ্ত করাটা বিশেষ কিছুই। এছাড়া ইয়াসির (আলি), আবু হায়দার, মৃত্যুঞ্জয়রা (চৌধুরী) ভালো করছে।
প্রশ্ন : এবার আসি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের মধ্যে মাঠের বাইরে দারুণ বন্ধুত্ব থাকলেও মাঠে নামলেও কয়েক বছর ধরেই এটা পেয়ে গেছে ভিন্ন মাত্রা। নানা রকমের উদযাপনের পর গত বিশ্বকাপের সেই টাইমড আউটের ব্যাপারটা মিলিয়ে এই দুই দলের ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। কীভাবে দেখেন বিষয়টি?
মাহরুফ : দেখুন, আমি এগুলো নিয়ে খুব বেশি চর্চার পক্ষে না। শ্রীলঙ্কান অনেকেই কোচ হিসেবে বা অন্য ভূমিকায় বাংলাদেশে কাজ করছেন। আবার বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা শ্রীলঙ্কায় গিয়ে সম্প্রতি খেলে এলেন। ক্রিকেট সম্পর্কটা তাই দারুণ রয়েছে দুই দেশের মধ্যে। যেসব বিষয় টেনে আনলেন, সেটা স্রেফ সমর্থকদের জন্যই হচ্ছে আর সেটা খুব একটা মন্দও নয়। ভারত-পাকিস্তান বা ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মত একটা নতুন দ্বৈরথ তো দেখতে পাচ্ছি আমরা।
প্রশ্ন : কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের চাপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো ক্রমেই এর আবেদন হারিয়ে ফেলছে। তিন ফরম্যাটে ভবিষ্যৎ নিয়ে কি আপনি চিন্তিত?
মাহরুফ : সত্যি বলতে, একেবারেই না। টেস্ট ক্রিকেট আমার তো মনে হয় ইতিহাসের সেরা সময় পার করছে। সব দল এখন ফলাফলের জন্য খেলছে। ওয়ানডে ক্রিকেট কিছুটা জৌলুস হারিয়েছে, তবে বিশ্বকাপ বলতে কিন্তু লোকেরা ৫০ ওভারের বিশ্বকাপই চিন্তা করে। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তো খেলাটির ভবিষ্যৎ। সব মিলিয়ে যদি বলেন, খুব বেশি চিন্তার নেই।
প্রশ্ন : চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শ্রীলঙ্কাকে টপকেই জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে কেমন করতে পারে বাংলাদেশ?
মাহরুফ : আমি তো বাংলাদেশ দলের বেশ সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছি। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে সুযোগ বেশিই থাকবে। যদি আগে ব্যাট করে ২৫০ রানের বেশি করে ফেলতে পারে, তাহলে ভারতকে চমকে দিতেও পারে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাটিতে অন্য দুটি ম্যাচ একটু কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে দলে ভারসাম্য আছে বেশ। সাকিব, তামিমের মত অভিজ্ঞদের পেলে আরও ভালো হত দলটা। তবে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তাসকিনরা তো আছেই। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে জায়গা করে নিলে আমি অবাক হবো না।
বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে ২০২১ সালে অবসর নেওয়ার পর কয়েকবারই আলোচনায় এসেছে প্রত্যাবর্তনের খবর। তবে এবি ডি ভিলিয়ার্স আর ফেরেননি জাতীয় দল বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। সমর্থকদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মাঠে ফিরতে প্রস্তুত সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লিজেন্ড (ডাব্লুসিএল) দ্বিতীয় আসরে গেম চেঞ্জার্স সাউথ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়নদের হয়ে খেলবেন ডি ভিলিয়ার্স।
জাতীয় দলকে আগেই বিদায় জানানোর পর ডি ভিলিয়ার্স ২০২১ সাল পর্যন্ত চালিয়ে যান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলা। তবে ওই বছর সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই অবসর নিয়ে নেন। বারবার তার ফেরার গুঞ্জন উঠলেও সাড়া দেননি তাতে আর। কয়েকদিন আগে ক্রিকেট মাঠে ফেরার আভাস দেওয়ার পর এবার নাম লেখালেন লিজেন্ড লিগে।
ডাব্লুসিএলের দেওয়া এক বিবৃতিতে ডি ভিলিয়ার্স জানিয়েছেন তার ক্রিকেটে ফেরার আনন্দময় প্রতিক্রিয়া। “চার বছর আগে আমি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলাম, কারণ আমি তখন আর খেলার তাগিদটা অনুভব করিনি। এখন আমার তরুণ ছেলেরা খেলাটি খেলতে শুরু করেছে। আমরা উঠোনে আরও বেশি বেশি খেলছি, আর সেখান থেকেই মনে হচ্ছে যেন আমার ভেতর নতুন বারুদের সঞ্চার হয়েছে। আর তাই আমি জিম এবং নেট সেশনগুলোতে ফিরতে যাচ্ছি। আমি জুলাইয়ে ডাব্লুসিএলের জন্য প্রস্তুত থাকব।”
ডাব্লুসিএলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, হর্ষিত তুমার মনে করেন, ডি ভিলিয়ার্সদের মত সাবেকদের সুযোগ করে দেওয়াটাই তাদের লিগের স্বার্থকতা। “এই কারণেই আমরা ডাব্লুসিএল চালু করেছিলাম, কারণ আমরা এই খেলাটির কিংবদন্তিদের খুব মিস করি। এবি ডি ভিলিয়ার্সের একজন ভক্ত হিসেবে আমি তাকে মাঠে ফিরে আসতে দেখে রোমাঞ্চিত। আমি নিশ্চিত যে ইংল্যান্ড ও এর বিশ্বের অন্যান্ত প্রান্তের ক্রিকেট প্রেমীরাও তার প্রত্যাবর্তন দেখে আনন্দিত হবে।”
ডাব্লুসিএলের উদ্বোধনী আসরে সাবেক ভারত ব্যাটার যুবরাজ সিংহের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়নরা শিরোপা জিতেছিল। সাউথ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন্স তিনটি ম্যাচের দুটিতে জিতে পয়েন্ট টেবিলে পঞ্চম স্থানে থেকে শেষ করেছিল।
১২ দিন আগে
১৬ দিন আগে
১৭ দিন আগে
২২ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৯ দিন আগে
৩০ দিন আগে