ফ্লাশিং মিডোসে জমে উঠেছে ইউএস ওপেনের লড়াই। নাটকীয় এক সেমিফাইনাল জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠলেন যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস তারকা আমান্ডা আনিসিমোভা। আর শিরোপার মঞ্চে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বের এক নম্বর নারী টেনিস খেলোয়াড়, বেলারুশের আরিনা সাবালেঙ্কা।
আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে প্রায় তিন ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে আনিসিমোভা ৬-৭(৪-৭), ৭-৬(৭-৩), ৬-৩ গেমে হারান দুইবারের ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন নাওমি ওসাকাকে। প্রথম সেট টাইব্রেকারে হারলেও ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন ২২ বছর বয়সী মার্কিন তারকা।
ওসাকা চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা খেলোয়াড়, তবে দীর্ঘ সময় ছন্দহীন ও বিরতি কাটানোর পর এবার সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠে বেশ লড়াই করলেন। কিন্তু আনিসিমোভার এগিয়ে চলায় তা আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
আরও পড়ুন
স্টার্কের অবসরের কথা জানতেন না অধিনায়ক |
![]() |
আনিসিমোভার জন্য এবারের ফাইনালটা অনেকটা স্বপ্নপূরণের লড়াই। গত উইম্বলডনের ফাইনালে ইগা শিয়াওতেকের কাছে হোঁচট খেয়েছিলেন তিনি- একতরফা ৬-০, ৬-০ গেমে বিধ্বস্ত হয়েছিলেন। তবে এ টুর্নামেন্টেই কোয়ার্টার ফাইনালে সেই শিয়াওতেককে সরাসরি সেটে হারিয়ে প্রতিশোধও নিয়েছেন। এবার লক্ষ্য একটাই- প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের ট্রফি ছোঁয়ার অপেক্ষা।
সেই পথে আনিসিমোভার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবালেঙ্কা, যিনি ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। জেসিকা পেগুলার বিপক্ষে সেমিফাইনালে প্রথম সেট হারলেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪-৬, ৬-৩, ৬-৪ গেমে জিতেছেন তিনি। শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্নে দারুণ ছন্দেই এগোচ্ছেন বিশ্বের এক নম্বর এই তারকা।
এখন অপেক্ষা কেবল আগামী পরশু ফাইনালের। আনিসিমোভার প্রথম না সাবালেঙ্কার চতুর্থ- কে হাসবেন শেষ হাসি?
No posts available.
দাপুটে জয়ে ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিলেন টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইয়ানিক সিনার। কোয়ার্টার ফাইনালে বৃহস্পতিবার স্বদেশি ১০ নম্বর বাছাই লরেঞ্জো মুসেত্তিকে সরাসরি সেটে ৬-১, ৬-৪, ৬-২ গেমে হারিয়ে শেষ চারে উঠেছেন বিশ্বের এক নম্বর তারকা।
নিউইয়র্কের আর্থার অ্যাশলে স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক টেনিস খেলেন সিনার। মাত্র ২৭ মিনিটে প্রথম সেট জিতে নেন ৬-১ গেমে।
দ্বিতীয় সেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ডাবল ফল্ট করে সার্ভিস হারান মুসেত্তি, সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৬-৪ গেমে সেট নিজের করে নেন সিনার। তৃতীয় সেটেও ব্রেক দিয়ে শুরু করেন সিনার, পরে আরও একবার ব্রেক করে ৬-২ গেমে জয় নিশ্চিত করেন।
গ্র্যান্ড স্লামের ইতিহাসে এটি ছিল প্রথম অল ইতালিয়ান পুরুষ কোয়ার্টার ফাইনাল। ম্যাচ শেষে সিনার বলেন, ‘ম্যাচ চলাকালীন বন্ধুত্ব ভুলে থাকতে হয়। তবে শেষে করমর্দনের পর সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। শুরু থেকেই খুব ভালো খেলেছি।’
২৪ বছর বয়সী সিনারের এটি গ্র্যান্ড স্লামে ৮৬তম জয়, ইতালির কিংবদন্তি নিকোলা পিয়েত্রাঞ্জেলির রেকর্ড জয়ে ভাগ বসালেন সিনার। পাশাপাশি হার্ড কোর্ট গ্র্যান্ড স্লামে এটি তার টানা ২৬তম জয়।
চলতি মৌসুমে সিনার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও উইম্বলডন শিরোপা জিতেছেন। ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে অবশ্য পাঁচ সেটের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে কার্লোস আলকারাজের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে রজার ফেদেরারের পর আর কেউ ইউএস ওপেনে শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি টানা। এবার সিনারের সামনে সেই সুযোগ।
ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে সিনারের প্রতিপক্ষ কানাডার ২৫ নম্বর বাছাই ফেলিক্স অগার আলিয়াসিমে। গত মাসে সিনসিনাটি ওপেনে ফেলিক্সকে ৬-২, ৬-০ গেমে হারিয়েছিলেন সিনার।
দাপুটে জয়ে ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে কার্লোস আলকারাজ। চেক প্রজাতন্ত্রের জিরি লেহেকাকে একতরফা লড়াইয়ে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করেছেন এই স্প্যানিশ টেনিস তারকা।
আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে লেহেকাকে সরাসরি সেটে ৬-৪, ৬-২, ৬-৪ গেমে ম্যাচটি জেতেন আলকারাজ। এবারের ইউএস ওপেনে এখন পর্যন্ত একটি সেটও হারেননি তিনি। পুরো ম্যাচে ২৮টি উইনার মারেন এবং একবারও ব্রেক পয়েন্টের মুখোমুখি হননি ২২ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়।
আরও পড়ুন
রেকর্ড গড়ে ইউএস ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে জোকোভিচ |
![]() |
শুরুর দিক থেকেই আধিপত্য বিস্তার করেন আলকারাজ। প্রথম গেমেই ব্রেক করেন এবং প্রথম সেটের শেষ গেমে নেটের কাছে দারুণ এক ব্যাকহ্যান্ড উইনারে দর্শকদের মাতান। দ্বিতীয় সেটেও একই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শুরুতেই ব্রেক নিয়ে এগিয়ে যান। লেহেকার একাধিক ডাবল ফল্ট কাজে লাগিয়ে সহজেই সেট জিতে নেন স্প্যানিশ তারকা।
শেষ সেটে নবম গেমে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক নিশ্চিত করে জয় তুলে নেন আলকারাজ। নিখুঁত খেলেছেন মন্তব্য করে আলকারাজ বলেন, 'আজ আমি প্রায় নিখুঁত ম্যাচ খেলেছি। দারুণ লাগছে এবং আমি আরও জেতার ক্ষুধা অনুভব করছি।'
সেমিফাইনালে আলকারাজের প্রতিপক্ষ সার্বিয়ান তারকা নোভাক জোকোভিচ। আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে টেলর ফ্রিটজকে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করেন জোকো। ৬-৩, ৭-৫, ৩-৬ ও ৬-৪ গেমে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিটজকে হারান রেকর্ড ২৪ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী তারকা।
ইউএস ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে আলেকজান্ডার বুবলিককে উড়িয়ে দিয়ে শেষ আটে পৌঁছালেন ইয়ানিক সিনার। নিউ ইয়র্কের আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে বুবলিকের বিপক্ষে সরাসরি সেটে ৬-১, ৬-১, ৬-১ গেমে সহজ জয় তুলে নেন বিশ্বের এক নম্বর তারকা।
মাত্র ১ ঘণ্টা ২১ মিনিটের লড়াইয়ে সিনার নিজের দ্রততম গ্রান্ড স্ল্যাম ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ভাঙেন। এই জয়ের মাধ্যমে হার্ড-কোর্ট গ্র্যান্ড স্ল্যামে টানা ২৫ ম্যাচ জিতলেন সিনার। নোভাক জোকোভিচের রেকর্ডের চেয়ে মাত্র দুই জয় দূরে রয়েছেন ইতালিয়ান তারকা।
আরও পড়ুন
রেকর্ড গড়ে শেষ আটে ‘সর্বকনিষ্ঠ’ আলকারাজ |
![]() |
কার্লোস আলকারাজের পর সিনারকে গত ১২ মাসে হারানো একমাত্র খেলোয়াড় ছিলেন বুবলিক। এবারের টুর্নামেন্টে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে সার্ভিস হারানো ছাড়া চতুর্থ রাউন্ডে পৌঁছান এই কাজাখ তারকা।
ম্যাচের আগে বুবলিক বলেছিলেন, তার লক্ষ্য হলো প্রথম সার্ভিস গেমটি না হারানো। কিন্তু ম্যাচ শুরুর পরই তিনি প্রথম সার্ভিস গেম হারান। পুরো ম্যাচে ১৩টি ডাবল ফল্ট করেন বুবলিক যার মধ্যে প্রথম সেটেই দুটি আন্ডারআর্ম সার্ভও ছিল।
ম্যাচের আগে সিনারকে ‘এআই জেনারেটেড’ আখ্যা দেওয়া বুবলিক ম্যাচ শেষে বলেন, ‘তুমি এতটাই ভালো, এটা অবিশ্বাস্য। আমি কিন্তু খারাপ নই।’
সিনার বলেন, “আগের ম্যাচে টমি পলের সঙ্গে দীর্ঘ ম্যাচ খেলার কারণে বুবলিক ক্লান্ত ছিল। তার সেই ম্যাচটা খুব কঠিন হয়েছিল। সে সাধারণত যেভাবে সার্ভ করে, আজ সেটা করতে পারেনি। আমি খুব খুশি। এ বছর প্রথমবারের মতো এখানে রাতের ম্যাচ খেললাম, আর এটা অনেক বড় পার্থক্য তৈরি করেছে।”
আরও পড়ুন
রেকর্ড গড়ে ইউএস ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে জোকোভিচ |
![]() |
প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ড স্ল্যামে অল-ইতালিয়ান পুরুষদের কোয়ার্টার ফাইনালে সিনার মুখোমুখি হবেন লরেঞ্জো মুসেত্তির। তাই উচ্ছ্বসিত সিনার।
“এটা দারুণ একটি ব্যাপার। ইতালিয়ান টেনিস এখন দুর্দান্ত সময় পার করছে। লরেঞ্জো আমাদের খেলাধুলার অন্যতম বড় প্রতিভা। ইতালির দৃষ্টিকোণ থেকে, অন্তত একজন ইতালিয়ান খেলোয়াড়কে সেমিতে দেখা হবে দারুণ ব্যাপার।”
ইউএস ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে জয় পেয়েছেন দ্বিতীয় বাছাই কার্লোস আলকারাজ। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে ফ্রান্সের আর্থার রিন্দেরনেককে সরাসরি সেটে ৭-৬(৭-৩), ৬-৩, ৬-৪ গেমে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নেন স্প্যানিশ তারকা।
গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ ১৩টি টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে আলকারাজ। এখন তাঁর বয়স ২২ বছর ৩ মাস। বরিস বেকারের চেয়ে ছয় মাস কম বয়সে এই মাইলফলকে পৌঁছলেন তিনি।
আরও পড়ুন
অবিশ্বাস্য ইমাম, চার সেঞ্চুরিতে নির্বাচকদের দিলেন বার্তা |
![]() |
ম্যাচ চলাকালীন আলকারাজ একটি চমকপ্রদ 'বিহাইন্ড দ্য ব্যাক' শট খেলেন, যা দেখে দর্শকেরাও অনকে সময় অবাক হন। নিউ ইয়র্কের কার্ড কোটে রাউন্ড সিক্সটিনের ম্যাচেও আলকারাজের সেই অসাধারণ শট মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।
খেলা শেষে সেই বিহাইন্ড দ্য ব্যাক শট প্রসঙ্গে আলকারাজ বলেন,
‘কখনো কখনো আমি এটি অনুশীলন করি। মিথ্যা বলব না। অনুশীলন বা ম্যাচে সুযোগ থাকলে চেষ্টা করি।'
কোয়ার্টার ফাইনালে আগামীকাল আলকারাজের প্রতিপক্ষ চেক প্রজাতন্ত্রের ২০তম বাছাই জিরি লেহেকা।
অসাধারণ জয়ে ইউএস ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে নোভাক জোকোভিচ। চতুর্থ রাউন্ডে ইয়ান-লেনার্ড স্ট্রাফকে ৬-৩, ৬-৩, ৬-২ গেমে উড়িয়ে দিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী সার্বিয়ান তারকা। এর সৌজন্যে গ্র্যান্ড স্ল্যামে গড়েছেন রেকর্ডও।
সবচেয়ে বেশি বয়সী পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে এক মৌসুমের চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লিখিয়েছেন জোকোভিচ। সব মিলিয়ে রেকর্ড ৬৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছালেন টেনিসের মহাতারকা।
স্ট্রাফ টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও জোকোভিচের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেননি। সার্ভিস ও রিটার্নে শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জোকোভিচ ম্যাচ শেষ করেন মাত্র এক ঘণ্টা ৪৯ মিনিটে।
ম্যাচ চলাকালীন কাঁধ-ঘাড় ও হাতে অস্বস্তি অনুভব করে দুবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় জোকোভিচকে। তবে চিকিৎসা বিরতি থেকে ফিরে নিজেকে আরও নিংড়ে দেন।
ম্যাচ শেষে জোকোভিচ বলেন, 'আমি এমন একজন খেলোয়াড়কে সার্ভে হারালাম, যিনি এবারের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি এস (সরাসরি পয়েন্ট জয় করা সার্ভ) করেছেন। এটা আমার জন্য বড় আত্মবিশ্বাসের বিষয়।'
কোয়ার্টার ফাইনালে জোকোভিচের প্রতিপক্ষ চতুর্থ বাছাই টেলর ফ্রিটজ। তবে অতীত পরিসংখ্যান কথা বলছে সার্বিয়ান তারকার পক্ষেই, ফ্রিটজের বিপক্ষে জোকোভিচের একতরফা রেকর্ড ১০-০।