১১ মে ২০২৫, ১০:৩২ পিএম
ম্যাচের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে ভিন্ন ছন্দেই হাজির রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথম দিকে এলেমেলো ফুটবল খেলা বার্সেলোনা খুব দ্রুতই নিজেদের গুছিয়ে নিল। বিরতির আগেই চার গোল খেয়ে বসা রিয়ালের হয়ে একাই লড়ে গেলেন কিলিয়ান এমবাপে, করলেন দারুণ এক হ্যাটট্রিক। তবে কার্লো আনচেলত্তির দলের রক্ষণভাগের ভুলে যাওয়ার মত এক ম্যাচে শেষ হাসি হাসল ইয়ামাল-রাফিনিয়ারাই। আর তাতে চলে গেল লা লিগা জয়ের আরও কাছে।
লা লিগায় রোববারের এল ক্লাসিকোর মহারণে আরও একবার বার্সেলোনার কাছে হেরেছে রিয়াল। ৪-৩ গোলে দুর্দান্ত জয়ে মৌসুমে রিয়ালকে টানা চার ম্যাচে হারের তেতো স্বাদ উপহার দিল ফ্লিকের দল।
আরও পড়ুন
| ‘ইয়ামাল বাচ্চা না, এমন পারফরম্যান্সই চায় বার্সা’ |
|
এই জয়ে বার্সেলোনার লিগ জয়ও প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। তিন ম্যাচ হাতে রেখে ৮২ পয়েন্ট কাতালান ক্লাবটির। আর দুইয়ে থাকা রিয়ালের অর্জন ৭৫ পয়েন্ট।
লা লিগায় বড় ধরণের নাটকীয়তা না দেখা দিলে এই হারে নিশ্চিত হয়ে গেছে রিয়ালের শিরোপাহীন মৌসুম। দুই দফায় রিয়ালকে অসাধারণ সব সাফল্য এনে দেওয়া আনচেলত্তির জন্য শেষটা হতে যাচ্ছে ভুলে যাওয়ার মতোই।
ম্যাচে রিয়ালের শুরুটা অবশ্য হয় স্বপ্নময়। পাউ কুবার্সির দুর্বল ব্যাকপাস থেকে বল পেয়ে গতিতে বক্সের ভেতর প্রবেশ করেন এমবাপে। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তাকে ফাউল করে বসেন গোলকিপার ওয়েজেচ সেজনি। পেনাল্টির বাঁশি সাথে সাথেই বাজিয়ে দেন রেফারি। ফরাসি তারকার বাঁদিকে নেওয়া নিচু শটে হাত লাগালেও আটকাতে পারেননি সেজনি।
এটি ছিল চলতি মৌসুমে লিগে এমবাপের ২৫তম গোল। লিড নিয়ে রিয়াল অব্যাহত রাখে ইতিবাচক ফুটবল। একের পর পর আক্রমণ শানায় দলটি। বিপরীতে ফ্লিকের দল গুছিয়ে নিতেই নষ্ট করে কিছুটা সময়।
নবম মিনিটে বলার মত প্রথম আক্রমণে বক্সের ভেতর কঠিন এঙ্গেল থেকে শট নিয়েছিলেন এরিক গার্সিয়া, তবে রিয়ালের জন্য তা বিপদের কারণ হয়নি।
১৪তম মিনিটে ফের বার্সেলোনার জালে বল, আর এবারও স্কোরার সেই এমবাপেই। তবে বল বানিয়ে দেওয়ার একটা বড় কৃতিত্ব পাবেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। প্রায় মাঝমাঠ থেকে দারুণ এক ডিফেন্সচেড়া পাসে খুঁজে নেন ফ্রানের বিশ্বকাপ জয়ী তারকাকে। বল রিসিভ করে জায়গা বানিয়ে সেজনিকে পরাস্ত করে রিয়ালের লিড বড় করেন এমবাপে।
গোলের লক্ষ্যে প্রথম দুই শট থেকেই জালের দেখা পাওয়া রিয়ালের আক্রমণের সামনে সেই সময়ে বেকায়দায় ছিল বার্সেলোনা। ১৮তম মিনিটে বক্সের একটু বাইরে থেকে লামিন ইয়ামালের কার্লিং শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ব্লক করেন থিবো কোর্তোয়া।
পরের মিনিটে আরেকটি ভালো সেভ দিলেও শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় কোর্তোয়াকে। ফেররান তরেসের কর্নার কিক থেকে হেডারে জাল খুঁজে নেন এরিক গার্সিয়া, যিনি কোপা দেল রের ফাইনালেও রিয়ালের বিপক্ষে গোল করেছিলেন।
আরও পড়ুন
| আবেগে ভেসে, চোখের জলে বায়ার্নকে বিদায় জানালেন কিংবদন্তি মুলার |
|
এক গোল শোধ দিয়ে ক্রমেই রিয়ালকে চেপে ধরে বার্সেলোনা। খেই হারিয়ে ফেলা রিয়ালের খর্বশক্তির রক্ষণের জন্য গতিময় ইয়ামালকে সামলানো শুরু থেকেই ছিল কঠিন। ৩২তম মিনিটে তরেসের পাস থেকে কাট করে বক্সের ভেতর বাঁদিক থেকে বা পায়ের কোনাকুনি এক শটে গোল করেন স্প্যানিশ এই উইঙ্গার, লা লিগায় এটি এই মৌসুমে ইয়ামালের সপ্তম গোল।
পরপর দুই গোলের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে ফের গোল হজম করে বসে রিয়াল, যেখানে ফুটে ওঠে তাদের ছন্দপতন। বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এমবাপে, তবে ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে যান সতীর্থ লুকাস ভাজকেস। দুজনের ভুল বোঝাবুঝি থেকে পাল্টা আক্রমণে বল পেয়ে যান রাফিনিয়া। নিখুঁত ফিনিশিংয়ে প্রথমবারের মত বার্সেলোনাকে লিড এনে দেন ব্রাজিল ফরোয়ার্ড।
শুরুতে ঝলক দেখানো রিয়াল এরপর আশা জাগিয়েছিল সমতা টানার। পেনাল্টি আদায় করেছিলেন এমবাপে। তবে তিনি নিজেই অফসাইড থাকায় সেটা আর মেলেনি।
উল্টো ৪৫তম মিনিটে আরেক গোল খেয়ে বসে রিয়াল। এবারও কেন্দ্রবিন্দু সেই ভাজকেসই। রিয়াল অধিনায়কের কাছ থেকে বক্সের বাইরে বল কেড়ে রাফিনিয়াকে পাস বাড়ান তরেস, ফাঁকায় থাকা দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই উইঙ্গারের সমস্যা হয়নি জালের দেখা পেতে। লা লিগায় এটি মৌসুমে রাফিনিয়ার ১৮তম গোল ছিল।
অবিশ্বাস্য এক প্রথমার্ধে রিয়াল শুরুর দুই গোলের পর লক্ষ্যেই আর শটই রাখতে পারেনি। বিপরীতে ১১টি শট নিয়ে ৭টি লক্ষ্যে রাখে বার্সেলোনা।
বিরতির পরও একই ছন্দ ধরে রাখে বার্সেলোনা। রিয়ালের জোড়াতালি দেওয়া রক্ষণভাগকে আরও একবার বিপদে ফেলেই দিচ্ছিলেন রাফিনিয়া। ৫৩তম মিনিটে বাঁদিক থেকে তার পাস থেকে ফাঁকায় দাঁড়ানো ইয়ামাল টোকা দিয়ে বল জালে পাঠালেও অফসাইডের কারণে আর মেলেনি গোল।
ম্যাচের ধারার বিপরীতে এর তিন মিনিট পর একটা সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে, তবে শট উঁচিয়ে মেরে হতাশ করেন রিয়ালকে। পাল্টা আক্রমণ থেকে এরপর দুরন্ত গতিতে এগিয়ে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ানোর চেষ্টা করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, তবে সেটা বাধাপ্রাপ্ত হয় আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেনের ক্লিয়ারিংয়ে।
শেষ পর্যন্ত এই জুটির হাত ধরেই গোল পায় রিয়াল। আরও একটি কাউন্টার এটাক থেকে বল পেয়ে দুজন এগিয়ে যান বার্সেলোনার বক্সে। নিজের সামনে সুযোগ থাকলেও গোলের সামনে এমবাপেকে দিয়ে হ্যাটট্রিক করান ভিনিসিয়ুস। ২৭তম গোলের মাধ্যমে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের তালিকায় রবার্ট লেভানদভস্কির চেয়ে দুই গোলে এগিয়ে যান ফরাসি ফরোয়ার্ড।
৭৪তম মিনিটে স্কোরলাইন ৫-৩ করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন রাফিনিয়া। তার সামনেও ছিল হ্যাটট্রিকের আশা। ইয়ামালের ক্রসে ছিলেনও ভালো পজিশনে, তবে ছয় গজের ভেতর থেকে বল পোস্টের ওপর দিয়ে মেরে টিকিয়ে রাখেন রিয়ালের ম্যাচে ফেরার আশা।
আরও পড়ুন
| ড্র করে সুযোগ মিসের হতাশায় গার্দিওলা |
|
জমে ওঠা ম্যাচের ৮২তম মিনিটে বার্সেলোনা শিবিরে জোর দাবি ওঠে পেনাল্টির। বক্সের ভেতর অহেলিয়া চুয়ামেনির সম্ভাব্য হ্যান্ডবল সময় নিয়ে স্ক্রিনে দেখে রেফারি নাকচ করেন পেনাল্টির আবেদন। হাফ ছেঁড়ে বাচে রিয়াল।
৮৮তম মিনিটে ভিনিসিয়ুসের বদলি হিসেবে নামা তরুণ ফরোয়ার্ড ভিক্টর মুনজ প্রথম টাচেই পেয়েছিলেন হিরো হওয়ার সুযোগ। তবে লক্ষ্যে শট রাখলেই গোল, এমন পজিশন থেকে তিনি বল মেরে দেন পোস্টের বাইরে।
গোলের জন্য মরিয়া রিয়ালকে আরও একবার পাল্টা আক্রমণে চমকে দেয় বার্সেলোনা। ৯৫তম মিনিটে কাট করে বক্সে ঢুকে কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠান ফেরমিন লোপেজ। তবে হ্যান্ডবল হওয়ায় বাতিল হয় সেই গোল। বাকি সময়ে কোনো দলই পারেনি বলার মত আর সুযোগ তৈরি করতে।
No posts available.
২৭ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৪১ পিএম
২৭ অক্টোবর ২০২৫, ৮:৪৭ পিএম

২০২৫ মৌসুমের কারাবাও কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের অপেক্ষায় আট দল। ইতোমধ্যে হেভিওয়েট-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, অ্যাস্টন ভিলা ও নটিংহ্যাম ফরেস্ট টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছে।
আর্সেনাল ও ম্যানচেস্টার সিটি এখনও প্রতিযোগিতায় টিকে আছে। শেষ আটে উঠতে ব্রাইটন ও সোয়ানসির মতো দলের মুখোমুখি হতে হবে তাদের। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলও শেষ আটে জায়গা পেতে লড়াই করছে। যেখানে অল রেডসদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ক্রিস্টাল প্যালেস।
ওলভসের পরীক্ষা হবে চেলসির বিপক্ষে। এছাড়া কার্ডিফ সিটি ও ব্রেন্টফোর্ডও কোয়ার্টার-ফাইনালের লড়াইয়ে রয়েছে।
গোল.কম জানাচ্ছে, কারাবাও কাপের কোয়ার্টার-ফাইনালের ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামী বুধবার। ম্যাচগুলো শুরু হবে ডিসেম্বর ১৫ তারিখ থেকে।
ড্র সরাসরি সম্প্রচার করবে স্কাই স্পোর্টস ও সিবিএস স্পোর্টস নেটওয়ার্ক।

টানা আট ম্যাচে জয়হীন থাকার দায়ে চাকরি হারালেন ইউভেন্তুস কোচ ইগর টুডোর। প্রধান কোচের পদ থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ইউভেন্তুস।
চলতি বছরের মার্চে থিয়াগো মোত্তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন টুডোর। তাঁর কোচিংয়ে গত মৌসুমে ইউভেন্তুস সেরি আ-তে চতুর্থ স্থানে শেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকেট পায়। চলতি মৌসুমও শুভভাবে শুরু হয় যাত্রা।
সিরি আ-তে প্রথম তিন ম্যাচের সবকটিতে জয় পায় ওল্ড লেডিরা। এরপরই পথ হারায় তারা। এই সময়ে পাঁচ ড্রয়ের বিপরীতে তিনটিতে হেরেছে তারা।
সেরি আ-তে বর্তমানে ৮ নম্বরে অবস্থান করছে ইউভেন্তুসস। ৮ ম্যাচে ৩ জয় ও ৩ ড্রয়ের বিপরীতে দুইটি হারের রেকর্ড তাদের। শীর্ষে থাকা নাপোলির চেয়ে ৬ পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছে তারা।

লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত ওমানের লিগ চ্যাম্পিয়ন আল সিবের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে যায় বসুন্ধরা কিংস। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে আগামীকাল টিকে থাকার লড়াই বাংলাদেশের পাঁচবারের লিগ চ্যাম্পিয়নদের। তাদের সামনে লেবাননের ক্লাব আল আনসার। দুই দলের মধ্যকার ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায়।
চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে কালকের ম্যাচে জিততেই হবে বসুন্ধরা কিংসকে। এমন ম্যাচে অবশ্য প্রতিপক্ষ দলটিও মনস্তাত্ত্বিক দিকে থেকে খুব একটা এগিয়ে নেই। ‘বি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে তাঁরাও বসুন্ধরার সমান ২-৩ ব্যবধানে হেরেছে স্বাগতিক ক্লাব আল কুয়েতের কাছে।
তবে নিয়মিত এএফসির মঞ্চে খেলা আল আনসার এ দিক কিছুটা এগিয়েই থাকছে অভিজ্ঞতায়। নিজেদের লিগে রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়নরা ঘরে তুলেছে ১৬টি রেকর্ড লেবানিজ এফএ কাপের শিরোপা। এছাড়া এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে একাধিকবার দলটি খেলেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
তবে বসুন্ধরা কিংস আত্মবিশ্বাসী। অধিনায়ক তপু বর্মণ সোমবার বলেছেন,
‘আমরা আত্মবিশ্বাসী। তাদের (আল আনসার) খেলা দেখেছি এবং আমাদের কোচও এটা নিয়ে কথা বলেছেন- কীভাবে আমরা খেলব। আমাদের মনোযোগী হতে হবে, টিম এফোর্ট যা আছে সেটি আরও বাড়াতে হবে।’
অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার তপু জানিয়েছেন প্রথম ম্যাচে দারুণ খেলেও হারের পর তাঁরা মানসিকভাবে ভালো ছিলেন না ম্যাচের পর। তবে সেখান থেকেই প্রেরণা খুজে নিতে চাইছেন জাতীয় দলের হয়েও অধিনায়কত্ব করা তপু। এই ম্যাচকে বাঁচা-মরার ম্যাচ উল্লেখ করে বলেন,
‘গতকাল রেস্ট ছিল। আজকে ট্রেনিং করেছি। আসলে খুব বেশি ভালো নেই আমরা। একজন খেলোয়াড় হিসেবে কেউ-ই ভালো নেই। আগের ম্যাচ ভালো খেলেও পয়েন্ট নিতে পারিনি। আমাদের টার্গেট কালকের ম্যাচ, এই ম্যাচটা জিততে চাই। এটা আমাদের জন্য ডু অর ডাই ম্যাচ।’
চ্যালেঞ্জ লিগে পশ্চিমাঞ্চলের ‘বি’ গ্রুপে পড়েছে বসুন্ধরা কিংস। তিন গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলটি সরাসরি যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে। আর এই তিন দলের মধ্যে বেস্ট রানার্সআপ দলটি চার নম্বর দল হয়ে পাবে শেষ আটে যাওয়ার সুযোগ।
বসুন্ধরা কিংস অবশ্য কুয়েতে ঘরের মাঠের আবহেই খেলছেন। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ফেডারেশন কাপের ৪বারের চ্যাম্পিয়নদের সাপোর্ট দিতে মাঠে এসেছিলেন বেশ কিছু প্রবাসী বাংলাদেশী। এই ম্যাচে তাদেরকে মাঠে আসার আহবান জানিয়েছেন কিংসের জাতীয় দলের উইঙ্গার রাকিব হোসেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে জয় ছাড়া বিকল্প নেই সেটিও জানা ২৮ বছর বয়সি তারকার
‘আসলে প্রথম ম্যাচটা অনেক ভালো খেলেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ফল আমাদের পক্ষে আসেনি। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে জয় দরকার। পরের ম্যাচে আশা করি তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ব।’
এই প্রতিযোগিতার পূর্বাঞ্চলের ‘ডি’ এবং ‘ই’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ- মোট চার দল পাবে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ।

প্রায় সাড়ে তিন মাস পর মাঠে ফেরাটা সুখকর হল না বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের। চার দিনের ব্যবধানে দুবার হারল পিটার বাটলারের দল। প্রথম ফিফা প্রীতি ম্যাচে ৩-০ গোলে হারের পর সোমবার থাইল্যান্ডের কাছে দ্বিতীয় ম্যাচে পরাজয়ের ব্যবধান ৫-১। প্রায় দুই বছর পর বাংলাদেশের জালে ৫ গোল দিল কোনো দল। তারপরও এই ম্যাচের পর বাংলাদেশ কোচ খুশি। বলেছেন- ‘থাইল্যান্ডে এই টার্ফে আমরা দশবার খেললে নয়বারই হারব।’ তবে নিজেদের মাঠে খেলা হলে টক্কর দিতে পারতেন বলেও জানান ব্রিটিশ কোচ।
ডিফেন্ডারদের একাধিক ভুলে এদিন গোল হজম করেছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের চেয়ে শারীরিক দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন আফঈদা খন্দকাররা। সেটি মনে করিয়ে দিয়ে কোচ বাটলার ম্যাচ শেষে নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
‘খেলার কিছু দিক নিয়ে আমি সত্যিই সন্তুষ্ট, যদিও কিছু জায়গায় আমরা সংগ্রাম করবই। বিশেষ করে শারীরিক দিক, রিসোর্স, অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধায়।’
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে এদিন বাংলাদেশকে বেশ অসহায় লেগেছে। প্রতিপক্ষ কেবল র্যাঙ্কিংয়েই এগিয়ে নয়, দুইবার বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁদের। এমন দলের বিপক্ষে তাঁদেরই মাঠে খেলাটা চ্যালেঞ্জিং ছিল আফঈদাদের জন্য। ম্যাচ শেষে তাঁরা পাশে পেয়েছেন কোচ বাটলারকে,
‘আমি দোষারোপ করি না, আবার অজুহাতও খুঁজি না। থাইল্যান্ডে এই টার্ফে আমরা দশবার খেললে নয়বারই হারব। আমরা নিজ মাঠে থাইল্যান্ডকে টক্কর দিতে পারি, কিন্তু এখানে এই পরিবেশে খুব কঠিন।’
সর্বশেষ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটিও ছিল তাঁদেরই মাঠে। বাছাইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে ৭-০ গোলে পরাজিত করে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই দলের সঙ্গে এই দলের যেন বিস্তর ফারাক।
ম্যাচ শেষে তবুও ইতিবাচক বাটলার। এদিনের খেলায় তিনি সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন বলেও জানান,
‘তবুও আমি আমাদের মেয়েদের নিয়ে গর্বিত। তারা যেভাবে খেলেছে, যেভাবে লড়েছে, আমি খুশি। আমি মনে করি না থাইল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করা উচিত। তারা একেবারেই ভিন্ন স্তরের দল, সম্পূর্ণ আলাদা পর্যায়ে আছে। কিন্তু আমাদের মেয়েরা দারুণ সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, এটা স্বীকার করতেই হবে।’
আগামী বছরের মার্চে এশিয়ান কাপে খেলবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গ্রুপে পড়েছে ৯ বারের চ্যাম্পিয়ন চীন ও তিনবারের চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া। আরেক প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তান। ওই টুর্নামেন্টের আগে প্রস্তুতি হিসেবে থাইল্যান্ডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ।

সান্তিয়াগো— ভ্রমণ আর গুপ্তধনের সন্ধান ছিল যার একমাত্র নেশা। বিশ্ব দেখার ইচ্ছে নিয়ে দক্ষিণ স্পেনের আন্দালুসিয়ার ছোট্ট গ্রাম থেকে মেষপাল সমেত বেরিয়ে পড়েছিলেন। নতুন দেশ আর সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়, বাবার আশীর্বাদপুষ্ট ১৮ বছর বয়সি সান্তিয়াগো ছুটেছিলেন মিশরের পথে, স্বপ্নের খোঁজে।
পথে ঘটেছিল অনেক কিছু। সলোমনের রাজার সাক্ষাৎ, মরক্কোর বাজারে টাকা খোয়ানো, ক্রিস্টাল ব্যবসা, কারাভানের সঙ্গে মরুভূমি মাড়ানো, দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়া, আলকেমিস্টের সাক্ষাৎ, ফাতিমার প্রেমে হাবুডুবু— সবশেষে গন্তব্যে গিয়ে বুঝেছিলেন, আসল গুপ্তধন তাঁর দেশেই, বাড়ির পাশের ভাঙা গির্জায়।
ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহোর অমর সৃষ্টি ‘দ্য আলকেমিস্ট’-এর সান্তিয়াগো অবশেষে স্বপ্ন ও সুখ খুঁজে পান। শত ঝঞ্জা পেরিয়ে উপলব্ধি করেন জীবনের প্রকৃত অর্থ। সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই কবিতায় যেমন বলা হয়েছিল—‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ, স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার।’ ঠিক সেই স্পর্ধা ও সাহসই দেখিয়েছিলেন সান্তিয়াগো।
তেমনই আঠারো বছর বয়সে লামিন ইয়ামালও এগিয়ে চলেছেন বাষ্পের বেগে। আঠারোর ঘরে পা দেওয়া এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড এখন পার করছেন নানা ঝড় ঝাপটা। কখনও ভুল করছেন, কখনও বিপাকে পড়ছেন; কানে আসছে সমালোচনার ধ্বনি। গোল না পাওয়া, অফ ফর্মে থাকা, বাইরের জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া, প্রেমে মশগুল থাকা— সব মিলিয়ে এক ভিন্নরকম সময় পার করছেন বার্সেলোনার তরুণ উইঙ্গার। অথচ ২০২৪-২৫ মৌসুমে গোল-অ্যাসিস্টে দারুণ এক প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন। ব্যালন ডি’অর তালিকায়ও ছিলেন ওপরের সারিতে।
নতুন মৌসুমে পা দেওয়া ইয়ামালকে গিলে খাচ্ছে ব্যর্থতা। লা লিগায় এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ৬ ম্যাচে দুটি গোল, চ্যাম্পিয়নস লিগে তিন ম্যাচে একটি। প্রত্যাশার চেয়ে যা কিছুটা কমই বটে। তবে এই সময়ে ইনজুরির সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে, লিগে বার্সেলোনার ১০ ম্যাচের চারটিই খেলতে পারেননি। ফিফা উইন্ডোতে খেলতে গিয়ে চোট, শারীরিক সমস্যা আর কম গেম টাইম। অস্বস্তিকর অধ্যায়ে বার্সার এই লেফট উইঙ্গার।
লামিন নতুন করে সমালোচিত হচ্ছেন মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোর পর। রাফিনিয়া ও রবার্ট লেভানডফস্কির অনুপস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর। কোচ হ্যান্সি ফ্লিক ও সমর্থকরা তাকিয়ে ছিলেন ইয়ামালের দিকে। কিন্তু রোববার রাতে ভুলে যাওয়ার মতো একটি ম্যাচ খেলেছেন এই স্প্যানিয়ারর্ড। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দর্শকদের দুয়োতে অতিষ্ঠ ছিলেন তিনি। রিয়ালের লেফটব্যাক আলভারো কারেরাস যেন তাঁকে একরকম পকেটেই ঢুকিয়ে রেখেছিলেন। শট নেওয়ার সুযোগ পাননি, ড্রিবলেও সুবিধা করতে পারেননি। পুরো ম্যাচে দুটি শট ও দুটি সুযোগ তৈরি করেছেন, আটবার ড্রিবলের চেষ্টায় সফল হয়েছেন মাত্র চারবার।
মাঠের বাইরের ঘটনাতেও ছিলেন ইয়ামাল। তর্কে জড়ান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও দানি কারভাহালের সঙ্গে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা জানিয়েছে, রিয়ালের রাইট-ব্যাক কারভাহাল তাঁকে বলেন, ‘তুমি অনেক কথা বলো, এখন বলো দেখি!’ ইয়ামাল তখন কারভাহালের দিকে এগিয়ে গেলে তাঁকে থামিয়ে দেন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। ভিনিসিয়ুস নাকি মজা করে বলেন,
‘ব্যাক পাস ছাড়া আর কিছুই তো করলে না! শুধু ডিফেন্ডারদের কাছেই বল দিলে!’
মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে ইয়ামালের আচরণে ক্ষুব্ধ ছিল বার্নাব্যুর যোদ্ধারা। প্রশ্ন উঠছে— এমন ঘটনার পর ইয়ামাল কি থমকে যাবেন?
মাত্র সাত বছর বয়সে লা মাসিয়ায় যোগ দেওয়া। ১৫ বছর ৯ মাস বয়সে রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে বার্সেলোনার হয়ে অভিষেক। ১৬ বছর বয়সে গোল-অ্যাসিস্টে রেকর্ড, ১৬ বছর ৫৭ দিনে জাতীয় দলে অভিষেক, স্পেনের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা— সবই যেন এক অবিশ্বাস্য উত্থান। কিন্তু এখানেই কি শেষ?
সান্তিয়াগোর মতো ১৮ বছর বয়সি ইয়ামাল ভীরু বা কাপুরুষ নন। প্রয়োজন কেবল নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা— বাবা-মায়ের দিক নির্দেশনা, প্রেমিকা নিকোর সহযোগিতা, আর কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের সঠিক দিকনির্দেশ। তবেই সান্তিয়াগোর মতো এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানো ইয়ামাল খুঁজে পাবেন আসল গুপ্তধন এবং নিজের হারানো পারফরম্যান্স।
পাওলো কোয়েলহো যেমন নিজেদের মাকতুব বইয়ে লিখেছেন, ‘বর্তমানকে উপভোগ করার সর্বোত্তম উপায় হলো অতীত ভুলে যাওয়া।’ নিজেকে জানার, বোঝার মধ্য দিয়েই ইয়ামাল পৌঁছাতে পারেন নিজের প্রকৃত গন্তব্যে। তার সঙ্গে ‘চুপ থাকা’ও হতে পারে তাঁর জন্য সবচেয়ে কার্যকর নিয়ামক। ইয়ামালের উচিত, কোথায় থামতে হবে, সেটাও ভালোভাবে জানা। কারণ, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে তাঁর কথার আগুনের আঁচ লেগেছে ৭৮ হাজার দর্শকদেরও।
সাবেক বার্সা মিডফিল্ডার রাফিনিয়া বলেছেন,
‘বয়সের কারণেই এমন আচরণ ইয়ামালের। তাঁর কথাই রিয়ালকে বাড়তি প্রেরণা দিয়েছে।’
আর রিয়ালের সাবেক তারকা গুতির মন্তব্য—
‘রিয়াল আর বার্সার ইতিহাস এখনো পুরোপুরি বোঝার বয়স হয়নি ইয়ামালের। ওর মুখে এমন কথা শুনলে আমারও ভালো লাগত না।’