২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:৫৪ পিএম
ক্রিকেটার হিসেবে দুজনের সবই ভিন্ন হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাকিব আল হাসান ও মাহেন্দ্রা সিং ধোনির মাঝে রয়েছে দারুণ একটি মিল। তার একটি হল অবসর নিয়ে অতিরিক্ত আয়োজনে বিরক্তি। সাবেক ভারত অধিনায়ক আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন ইনস্টাগ্রামে এক পোস্ট দিয়ে। সাকিবও হুট করে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন ম্যাচ-পূর্ব এক সংবাদ সম্মেলনে। তবে তাকে ঘিরে মাঠে ও মাঠের বাইরে যে বাস্তবতা, তাতে লাল বলের ক্রিকেটে শেষ ম্যাচটি দেশের মাটিতে খেলার তার যে চাওয়া, সেটার বাস্তবায়ন যে বড্ড কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তার আগে একটা প্রশ্ন রাখা যাক। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই ফরম্যাটে সাকিব যেহেতু তার শেষ ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন, ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুধু তার টেস্ট ক্যারিয়ারই নয়, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেরও শেষ ম্যাচ হতে পারে দেশের মাটিতে। কারণ, ওয়ানডেতে অবসর হয়ত নিয়ে নেবেন আগামী বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেই। তবে কী জাতীয় দলের হয়ে শেষবার সাকিবকে দেখা যাবে মিরপুরেই?
আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন যদি সাকিব মাঠে নামেন, তাহলে সেই মুহূর্তে আবহটা কেমন হবে? এই দেশের ক্রিকেটপ্রেমিদের তো দুহাত ভরে সাকিব তাদের কম দেননি দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে। বাংলাদেশের মাটিতে সাকিবের সম্ভাব্য শেষ ম্যাচে তারা কি ম্যাচটিকে ঘিরে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করবেন? উত্তরটা ভাবতে থাকুন, এর মাঝে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ক্রিকেটার, ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে সাকিবের অবস্থানটা।
ক্রিকেটার সাকিবই সবার আগে, সেটা তিনি এমপি হওয়ার পরও। কারণ, দেশের মানুষ তথা পুরো বিশ্ব তাকে চিনেছে ব্যাটে-বলে অনন্য দ্যুতি ছড়ানো এক চরিত্র হিসেবেই। বর্ণিল ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে সাকিব চূড়ায় গিয়েছেন, আবার সবচেয়ে খারাপ অবস্থানটাও দেখেছেন। অভিষেকের পর থেকে পুরো সময়টা দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থেকেছেন। আবার ভারতের বিপক্ষে এই চলমান সিরিজেই শুনতে পাচ্ছেন ফিসফাস, অনেকেই যে তাকে একাদশ থেকে ছুঁড়ে ফেলার পক্ষে মত দিচ্ছেন। সাকিবের মত একজন ক্রিকেটার, যিনি পারফর্মার হিসেবেই খেলতে চান, তার পক্ষে এমন কিছু মেনে নেওয়াটা ভীষণ কঠিন বৈকি। তবে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন, তিনি নিজেও এসব ব্যাপার মেনে নেওয়ার মত লোক নন একদমই, যিনি কিনা স্রেফ খেলার জন্য খেলে যাবেন।
ব্যাটে নেই পুরনো ধার, টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ প্রায় ভুলতেই বসেছেন, ফিফটি করতেও করতে হচ্ছে সংগ্রাম। বরাবারই লাল বলের ক্রিকেটে আন-অর্থোডক্স ব্যাটিং করা সাকিবকে ইদানিং লড়তে হচ্ছে প্রতিটি রানের জন্যই। বয়সের কারণে নেই সেই রিফ্লেক্স, মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে চোখের সমস্যা। এক বছরের মত এটি নিয়ে ভুগে এখন হেড পজিশন ঠিক রাখতেই হচ্ছে গলঘদর্ম অবস্থা। ফিতা কামড়ে ব্যাট করেও মিলছেনা সাফল্য। উল্টো বোলাররা যেনে যাচ্ছেন সাকিবের দুর্বলতার জায়গা। ছয়ে নামা ব্যাটার সাকিব তাই ক্রমেই হয়ে উঠেছেন দলের জন্য ‘বোঝা’।
তবে সবসময়ই ব্যাটিং বা বোলিংয়ের একটিতে খারাপ করলে সাকিব পুষিয়ে দিয়েছেন অন্যটিতে ভালো করে। সময় খারাপ হলে যা হয়, সাকিব এখন বোলার হিসেবেও পার করছেন কঠিন একটা সময়। কালেভদ্রে কিছু ঝলক দেখাচ্ছেন বটে, তবে বোলিং লাইনআপের সবচেয়ে দুর্বল নামটিও তিনি হয়ে যাচ্ছেন দিনকে দিন। চেন্নাই টেস্টেই দুই ইনিংস মিলিয়ে ২১ ওভার বোলিং করে একটি উইকেটও পাননি, রান দিয়েছেন ছয়ের ওপর ওভারপ্রতি। আর্ম বল ছিল শক্তির জায়গা, গতি কমে যাওয়ায় সেটারও নেই সেই ধার। টার্ন তো কখনই সাকিবের শক্তির জায়গা নয়। ফলে একসময়ে টেস্টে দলের সেরা বোলার এখন পরিণত হয়েছেন চতুর্থ বা পঞ্চম বোলারে। বোলার সাকিবও তাই দলের জন্য খুব একটা কাজে আসছেন না।
একসময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে এখন দলের জন্য ব্যাটে বা বলে সেভাবে অবদান না রাখতে পাড়ার বিষয়টি দর্শকরা তাই ভালোভাবে নিতে পারছেন না। গত কয়েক মাসে তাই ক্রমেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে চায়ের আড্ডা, সব জায়গাতেই আলোচনায় উঠে আসছে একটি প্রশ্ন, ‘সাকিবকে কি দলের প্রয়োজন?’ মাথায় এমন একটা প্রশ্ন রেখেই তারা দিনের পর দিন দেখছেন দুই ভূমিকাতেই ভীষণ অধারাবাহিক সাকিবকে, যিনি বল হাতে সাদামাটা হয়ে যাচ্ছে বেশ। আর ব্যাট হাতে হেড পজিশন নিয়ে নানা কসরত করার পাশাপাশি আউট হচ্ছে দৃষ্টিকটু কিছু শট খেলে। দলের প্রতি সাকিবের নিবেদন নিয়েও তাই দর্শকদের মনে জাগছে প্রশ্ন।
ক্রিকেটার সাকিবের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সাকিবকে নিয়ে দর্শকদের মনে নেই কোনো প্রশ্ন। রাজনীতিতে বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা ছাড়াই খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে জড়ানো, এমপি যেভাবে হয়েছিলেন, সেটা ক্রিকেট ভক্তরা মেনে নিতে পারেননি। প্রিয় ক্রিকেটার কেন দেশের একটি রাজনৈতিক দলের ছায়ায় চলে গেলেন, এটাই ছিল মূল হতাশা।
সেই সরকার গত ৫ আগস্ট পতন হওয়ার সময় সাকিব ছিলেন কানাডায়। তবে মামলার মিছিলে তার নামেও অন্য অনেক আওয়ামী লীগের এমপিদের মত যোগ হয় হত্যা মামলা। আপামর জনতা এর বিরোধিতা করলেও কানাডায় থাকা অবস্থায় সেই সময়ের সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে সাকিব চুপ থাকায় সবাই চরম হতাশ হন। সেটা কয়েকগুণ বেড়ে যায় এক প্রবাসীকে দেশের জন্য অবদান নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে।
ব্যবসায়ী সাকিবও জন্ম দিয়েছেন বেশ কিছু বিতর্কের। সম্প্রতি শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার জন্য তাকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া আগে-পরে সাকিবের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন অন্যান্য ব্যবসা নিয়েও এসেছে নানা অভিযোগ। ফলে রাজনীতিবিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সাকিবের বিরুদ্ধেও ক্রিকেট ভক্ত ও সাধারণ মানুষের রয়েছে বিশেষ ক্ষোভ।
এবার আসা যাক শুরুর সেই প্রশ্নে। ধরে নেওয়া যাক মামলা মাথায় নিয়ে, বিসিবির কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেয়ে সাকিব শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসেছেন। প্রথম টেস্টের প্রথম দিন বিসিবি তাকে সংবর্ধনা দিলেও দর্শক উপস্থিতি কেমন থাকবে? হাজার পাঁচেক লোক সমাগম কী হবে? যদিও হয়ও, তারা কী ‘বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ, সাকিব আল হাসান’ - গানটা একযোগে গেয়ে উঠবেন? সাকিব একটা উইকেট নিলে বা চার-ছক্কা মারলে ‘সাকি………………ব, সাকি………………ব’ - বলে গর্জে উঠবেন?
একজন ক্রিকেটার, যাকে অনেকে দলেই দেখতে চান না, একজন সাবেক এমপি, যার রাজনীতিতে জড়ানো আপনাকে বিরক্ত করেছে, একজন ব্যবসায়ী, যিনি এই পেশায় নিরেট থাকতে পারেননি - তাকে কী মিরপুর টেস্টে দর্শকরা বীরের সংবধর্না দিবে? দুই বছর আগে এই প্রশ্ন হতে পারত ভীষণ অবান্তর। তবে জীবনের নির্মম বাস্তবতা সাকিবকে এমন জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তাতে দেশের মাটিতে শেষ টেস্টে তাকে হয়ত দুয়োও দিতে পারেন আগত দর্শকরা।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারের এমন নির্মম বিদায় নিশ্চয় আপনি দেখতে চাইবেন না। তবে এক জীবনে তো আপনি সব হিসেব চাইলেও মেলাতে পারবেন না। সাকিব কী পারতেন?
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩:৫০ এম
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১:০০ এম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৭:১৫ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৫:৩৮ পিএম
প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিনেও যে উইকেটে বিশেষ জুজু নেই, সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার, এমনকি টেল এন্ডাররাও দেখিয়েছেন বেশ। আর সেটা কাজে লাগিয়ে জাস্টিন গ্রিভসের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ক্যারিবিয়ানরা পেল বিশাল স্কোর। ভারত সফর থেকেই টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের ব্যাটারা আরও একবার পারলেন না শুরুটা ভালো এনে দিতে। দুই দিন পার হওয়ার পর তাই ভালোভাবেই ম্যাচের লাগাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে।
অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসের বাংলাদেশ করেছে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ৪০ রান। দুই অপরাজিত ব্যাটার হলেন মুমিনুল হক (৭) ও শাহাদাত হোসেন দিপু (১০)। পিছিয়ে আছে ৪১০ রানে। ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দেড় দিনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান করেছিল ধীরগতিতেই। সেটা ধরে রেখে বাংলাদেশও ইনিংস শুরু করে স্বভাবজাত ব্যাটিংয়েই। প্রথম সাত ওভারে আসে মাত্র ৫ রান! অষ্টম ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান জাকির হাসান। পরের আলজারি জোসেফের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তবে বল তালুবন্দি করতে পারেননি ফিল্ডার, বেঁচে যান তরুণ এই ওপেনার। তবে সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।
চমৎকার এক স্পেলে প্রথম ছয় ওভারে তিন মেডেন দেওয়া জেডেন সিলসের এক ওভারে দুই চার মেরে কিছুটা আগ্রাসনের আভাস ছিল জাকিরের ব্যাটে। তবে সেই ওভারেই অফস্ট্যাম্পের বাইরেরর বল টেনে খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান ১৫ রানে।
পাঁচ রানে জীবন পাওয়া জয় আউট হন একই স্কোরে। আলজারির বলেই প্রায় একই ডেলিভারিতে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে দলে জায়গা পাওয়া তরুণ দিপু প্রথম ১৬ বলে করেন এক রান। এরপর চার মেরে কিছুটা চাপ সরান। অন্যপ্রান্তে মুমিনুল একপ্রান্ত আগলে রাখার কাজটা সামলান ঠিকঠাকভাবেই। তাতে দিনের খেলা শেষের আগে আর বিপদ হয়নি।
তবে দিনের আগের অংশে বাংলাদেশের সর্বনাশ করেন গ্রিভস ও কেমার রোচ। হাসান মাহমুদের দারুণ এক স্পেলে শুরুতেই দুই উইকেট পেয়ে গিয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজের দল। তবে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা ক্রমেই কমিয়ে এনেন গ্রিভস-রোচ জুটি। কয়েক দফায় সুযোগ দিলেও বেঁচে যান দুজনই। সেটার পাশাপাশি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করে ধীরে ধীরে তার জমিয়ে তোলেন জুটি।
চা বিরতির আগে ভাঙে দুর্দান্ত এই জুটি। ইতি টানেন সেই হাসানই। তবে তার আগে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৪০ রানের রেকর্ড গড়েন এই দুজন। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সাত উইকেটের পরও এটাই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান করেছিলেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খান।
হাসানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন রোচ। টেস্ট ক্রিকেটে এটাই তার এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। তিনি মাইলফলক মিস করলেও গ্রিভস সেই ভুল করেননি। দারুণ সব শটের এক ইনিংসকে পূর্ণতা দেন শতকে রুপ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন চার চারে ১১৫ রানে। ৮৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে হাসান ছিলেন বাংলাদেশের সেরা বোলার।
প্রথম সেশনে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশ রানের মধ্যেই আটকে দেওয়ার আশা যুগিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে টেল এন্ডার কেমার রোচকে নিয়ে জাস্টিন গ্রিভস গড়ে তুললেন অসাধারণ প্রতিরোধ। একজন করলেন সেঞ্চুরি, আর দুজনে মিলে অষ্টম উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন বেশ শক্ত অবস্থানে। এতে ভর করে প্রথম ইনিংসে বড় স্কোরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের চা বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১৩৯ ওভারে ৮ উইকেটে ৪১৫ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (১০৯) ও জেডেন সিলস (১)।
২৬১ রানে পতন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সপ্তম উইকেটের। কে ভেবেছিল, পরের উইকেটের জন্য রীতিমত ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার দশা হবে বাংলাদেশের বোলারদের? গ্রিভস ব্যাটিংটা ভালো জানলেও রোচও যে যেভাবে ‘ব্যাটার’ হয়ে যাবেন, সেটা না ভাবাটাই ছিল স্বাভাবিক।
অথচ অষ্টম উইকেটে এই দুজন মিলে খেললেন চিরায়ত টেস্ট মেজাজে। রান বের করলেন দেখেশুনে খেলে। বোলারকে প্রয়োজন মত দিয়েছেন সম্মান, আবার বাজে বল পেলেই মেরেছেন বাউন্ডারি। সিঙ্গেলস, ডাবলসে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন ফিল্ডারদেরও। সেই প্রক্রিয়ায় তিনশ ছাড়িয়ে দল পার করে ফেলেছে চারশ রানও।
শেষ পর্যন্ত চা বিরতির খানিক আগে জুটিতে ভাঙন ধরিয়েছেন দিনের সেরা বোলার হাসান মাহমুদ। তবে তার আগে গ্রিভস-রোচ জুটি যোগ করে ফেলেন ১৪০ রান, যা এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আর টেস্ট ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি এখন এটি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটিটি ছিল জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিক ও ট্রাভিস ফ্রেন্ডের। ২০০১ সালে তারা যোগ করেছিলেন ১০৮ রান। গ্রিভস-রোচের জুটি সাত উইকেটের পর সব মিলিয়েও এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান ছিল শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খানের।
হতাশাময় সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর চারশ পার করার পরই রোচকে ফেরান হাসান। বোল্ড করেন দেন ডানহাতি ব্যাটারকে। তবে তার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। অন্যপ্রান্তে সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল হয়নি গ্রিভসের। ক্যারিবিয়ানরা প্রথম ইনিংসে আরও কিছু রান যোগ করার জন্য শেষ সেশনে তাকিয়ে থাকবে তার দিকেই।
প্রথম দিনের শেষ দিকে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে অনেকটাই ভারসাম্য এনেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেই ধারাটা বজায় রেখে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে দারুণ এক স্পেলে হাসান মাহমুদ এনে দিলেন জোড়া উইকেট। তবে এরপরই যেন কমে গেল সফরকারীদের বোলিংয়ের ধার। সেই সুযোগে অষ্টম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন জাস্টিন গ্রিভস ও কেমার রোচ। বড় স্কোরের পথে তাতে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের লাঞ্চ বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১১০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৩৬ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (৬৩) ও রোচ (১৯)।
আরও পড়ুন
হাসানের প্রথম টেস্ট উইকেট, শক্ত ভিতে শ্রীলঙ্কা |
অথচ প্রথম ঘণ্টায় হাসানের স্পেল বাংলাদেশ শিবিরে আশা জাগিয়েছিল প্রতিপক্ষকে ২৮০-৩০০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলার। দিনের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই গ্রিভসের বিরুদ্ধে হাসানের ছিল কট বিহাইন্ডের আবেদন। তবে সাড়া মেলেনি। তবে তিন বল বাদে জোশুয়া দা সিলভাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তরুণ এই ডানহাতি পেসার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি এই কিপার-ব্যাটারের।
পরের ওভারের প্রথম বলে হাসানকে চার মারেন আলজারি জোসেফ। পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে। তবে এই উইকেটে বোলারের চেয়ে বড় কৃতিত্ব পেতে পারেন গালিতে দাঁড়ানো জাকির হাসান। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে নেন অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ। ওই ওভারেই রোচকে প্রায় ফিরিয়েই দিচ্ছিলেন হাসান। তবে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান ক্যারিবিয়ান পেসার।
আরও পড়ুন
হাসানের তোপ সামলে অশ্বিন-জাদেজার ব্যাটে চড়ে শক্ত অবস্থানে ভারত |
দুই ব্যাটার মিলে এরপর জুটি গড়েন ধীরলয়ে। ৫ রানে থাকতে তাইজুল ইসলামের বলে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন রোচ। ডিপে থাকা হাসান দৌড়ে গিয়ে পাননি বলের নাগাল, বাংলাদেশ হারায় উইকেটে সুযোগ। অন্যপ্রান্তে দেখেশুনে খেলা গ্রিভস। প্রায় নিখুঁত এই ইনিংস খেলার পথে তিনি পরিচয় দেন দুর্দান্ত টেম্পারমেন্টের, যা বাংলাদেশ বোলারদের কাজটা আরও কঠিন করে দেয়।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের একটা বড় অংশ জুড়ে রানের জন্য করতে হয়েছে সংগ্রাম। সেই ম্যাচে তাও একটা লড়াকু স্কোর ছিল দলটির। তবে নিউইয়র্ক স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের দলের কেউই পারলেন না আলো ছড়াতে ব্যাটে বা বলে। মামুলি পুঁজি নিয়ে সামান্যতম লড়াইও তাই জমাতে ব্যর্থ হল বাংলা টাইগার্স।
আবুধাবি টি-টেনের শনিবারের ম্যাচে বাংলা টাইগার্স হেরেছে ৭ উইকেটে। তাদের করা ৮ উইকেটে ৬৮ রান ৪ ওভার ও ২৪ বল হাতে রেখেই পাড়ি দিয়েছে নিউইয়র্ক।
শুরুতেই দুই ওপেনার হারানো বাংলা টাইগার্সের বড় আশা ছিলেন দাসুন শানাকা। আগের ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ রান করা এই শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার এদিনও ছন্দেই ছিলেন। তবে মাত্র ১০ ওভারের খেলায় যে ধরনের ব্যাটিং প্রয়োজন, সেটা করতে পারেননি। ১৯ বলে ২ ছক্কায় করেন মোটে ২২।
আরও পড়ুন
সাকিবে ট্রফি জিতবে বাংলা টাইগার্স? |
তবে দলকে বিপদে ফেলেন মূলত দুই তারকা স্পিন অলরাউন্ডার লিয়াম লিভিনস্টোন ও ইফতিখার আহমেদ। যাওয়া-আসার মিছিলের মধ্যে এক সাকিবই যা কিছুটা লড়াই করেন। খেলেন ১২ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ১৯ রানের ক্যামিও। তবে তাতেও কাজের কাজ হয়নি আর। তার দল বোর্ডে জমা করতে পারে মামুলি স্কোর।
এরপর বল হাতে বলতে গেলে প্রথম ওভারেই আশা মিলিয়ে যায় দলটির। ওয়াইড-নো বলময় ওভারে মোট ১২টি ডেলিভারি করা ডেভিড পেইনে দেন ১৭ রান। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে এভিন লুইসকে ফেরান ইমরান তাহির।
ছুটতে থাকা নিউইয়র্ককে জোড়া আঘাতে ধাক্কাটা দেন সাকিবই। প্রথম বলেই ডেল্যাড ব্রেভিসকে ফেরানোর পর আসিফ আলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এক বল বাদে। সেই ওভারে বাংলা টাইগার্স অধিনায়ক দেন মাত্র দুই রান।
আরও পড়ুন
সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলাতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি বিসিবি, বললেন ফারুক |
তবে হার আটকাতে তা যথেষ্ট হয়নি। চার ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেন নিউইয়র্ক।
দেশের ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির ঝড় তুলতে আসছে আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক এনসিএল টি-টোয়েন্টি পাওয়ার্ড বাই ওয়ালটন। সিলভার স্পন্সর হিসেবে থাকছে লিলি ময়েশ্চারাইজ লোশন। শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ, পরিচালক ফাহিম সিনহা। স্পন্সরদের পক্ষ থেকে ছিলেন আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ফরমান আর. চৌধুরী, ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিনুল ইসলাম খান ও রিমার্ক-হারল্যান গ্রুপের ব্র্যান্ড এম্বোসেডর, চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ।
বিসিবি সভাপতি ফারুক মনে করেন, এই টুর্নামেন্টে দেশীয় ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।
“বিপিএলের আগে এই টুর্নামেন্ট দেশী ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ। আমি আশা করি ক্রিকেটাররা সে সুযোগ নেবে এবং নিজেদের মেলে ধরবে, যা কিনা দেশের ক্রিকেটকে সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। এছাড়া আমি টুর্নামেন্টের ব্রডকাস্টার টি স্পোর্টসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করবে।”
শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এনসিএল টি-টোয়েন্টি। আগামী ১১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্ট। অংশ নেবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের সাত দল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, সিলেট বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো। আট দলের লিগ পর্বের ম্যাচগুলো হবে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম ও সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম আউটার মাঠে। প্লে-অফের চারটি ম্যাচ হবে ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
সবগুলো ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের প্রথম ও একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে। এছাড়া ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ফ্যানকোড ও বিশ্বের বাকি অংশে ম্যাচগুলো দেখা যাবে টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেলে।