৩০ অক্টোবর ২০২৪, ৭:০১ পিএম
প্রায় এক মাস ধরেই তুমুল আলোচনার ছিল বিষয়টি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট দিয়ে সাকিব আল হাসান অবসর নিতে চাইলেও সেখানে চলে আসে নান মাঠের বাইরের বাস্তবতা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ছাড়াও সেখানে চলে আসে বর্তমান সরকারের অবস্থানও। শেষ পর্যন্ত শুরুতে স্কোয়াডে থাকলেও বাদ পড়ে আর দেশে আসাই হয়নি সাকিবের। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন সাবেক অধিনায়ককে প্রাপ্য সম্মানটা দিতে।
বাংলাদেশে গত আগস্টে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের একজন এমপি ছিলেন সাকিব। রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথেই তার বিরুদ্ধে হয়েছে একটি হত্যা মামলা। ফলে বিদায়ী টেস্ট খেলতে সাকিব শর্ত দিয়েছিলেন তাকে দেশে এসে খেলতে এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তা দিতে। শুরুতে সবুজ সংকেত পেলেও শেষ পর্যন্ত তাকে দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়।
বিসিবির কী এখানে বাড়তি কিছু করা উচিত ছিল? মিরপুরে বুধবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় ফারুক অকপটে বলেছেন, তাদের এখানে কিছুই করার ছিল না। “আপনি যেটা বললেন যে শেষ টেস্ট খেলতে ফিরতে পারেনি… একেবারেই আমরা কোনোভাবে জড়িত নই এই ব্যাপারটায়। এটা হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও সাকিব আল হাসান (তাদের ব্যাপার)..। এখানে আমাদের পুরোপুরি অক্সিলারি একটা পার্ট নেওয়ার কথা ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের সামনে যত কথাই বলি, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি যাতে সাকিব আল হাসান দেশ থেকে অবসরে যেতে পারে। আমার চেষ্টা আমি করেছি।”
সাকিবকে মিরপুর টেস্টের দলে রাখার প্রতিবাদে ম্যাচ শুরুর কয়েকদিন আগে থেকে স্টেডিয়ামের বাইরে শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থকদের নানা পদক্ষেপ। একদল সাকিবকে দেশের মাটিতেই আর দেখতে চান না, আবার আরেকদল দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারকে তার রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে সম্মান দেওয়ার পক্ষে দাবি জানান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পুরো টেস্ট জুড়েই তৈরি হয় এক যুদ্ধময় পরিস্থিতি। নিরাপত্তার চাদরে ধেকে ফেলা হয় স্টেডিয়ামের চারপাশ।
ফারুক তাই মনে করছেন, তাদের পক্ষে চাইলেও এখানে বাড়তি কিছু করার সুযোগ ছিল না। “সাকিব এখন শুধু একজন খেলোয়াড় নয়। তার একটা পরিচয় আছে যে, গত সরকারের একজন এমপি ছিল এবং কিছু সেন্টিমেন্ট আছে (তাকে নিয়ে)। সব মিলিয়ে সরকারের দৃষ্টিকোণ ও ক্রিকেট বোর্ডের দৃষ্টিকোণ তো এক নয়।”
সাকিব আলাদা কিছু না বললেও মিরপুর টেস্ট না খেলতে পারায় বলাই যায়, ২০ ওভারের পাশাপাশি টেস্টেও তার ক্যারিয়ারে ইতি ঘটেছে। লম্বা সময় ধরে দেশে ও দেশের বাইরে সাকিব তার নানা অর্জনের মধ্য দিয়ে বয়ে এনেছেন গৌরবময় সব মুহুর্ত। অথচ তিনি ইচ্ছা থাকলেও পারলেন না দেশের মাঠে দর্শকদের সামনে খেলে টেস্টকে বিদায় জানাতে। ওয়ানডেতেও এমন কিছুর আশা করাটা এখন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিসিবি প্রধান মনে করেন, বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া সবার আর কিছু করার নেই। “আমি সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে মনে করেছি যে, একটা ছেলে ১৭ বছর ক্রিকেট খেলেছে, সে একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, বাংলাদেশের জন্য অনেক করেছে, এজন্য আম মনে করেছি, এটা (দেশ থেকে অবসর) হলে ভালো হতো। কিন্তু সঙ্গে অন্য জিনিসগুলোও তো দেখতে হবে আপনার। ওই জিনিসগুলো মিলিয়ে শেষ মুহূর্তে সে আসতে পারেনি, এটার ব্যাপারে বোর্ডের কিছু করার ছিল না। এটা পুরোপুরি আইনগত ব্যাপার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে জড়িত আছে। সুতরাং এটা সাকিব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপার ছিল। বোর্ড এটার অংশ ছিল না। সে এলে বোর্ডের যতটুকু ক্ষমতা আমরা তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষটা করতাম। যেহেতু সে আসেনি, এটা নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই।”
আগামী মাসে ক্যারিবিয়ান সফরে ওয়ানডেও খেলবে বাংলাদেশ। সেই দলে কী থাকবেন সাকিব? ফারুক রেখে দিলেন ধোঁয়াশা। “সাকিব আল হাসানের ব্যাপারটা… এখনও যেহেতু দল দেয়নি (ঘোষণা হয়নি), আমার মনে হয় অ্যাভেইলঅ্যাবল আছে সে।”