দুই দলের সবশেষ দিবারাত্রির টেস্টের প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে বেঁধে দিয়েছিলেন ম্যাচের সুর। ভারতের বিপক্ষে আরেকটি দিবারাত্রির টেস্টের প্রথম বলেই আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইয়াশাশভি জয়সওয়ালকে ফিরিয়ে দিলেন মিচেল স্টার্ক। অভিজ্ঞ এই পেসারের ফাইফারে ঘুরে দাঁড়াতেই পারল না ভারতের ইনিংস। সম্ভব হলো না দুইশ ছোঁয়াও। শুরুতেই উইকেট হারালেও অস্ট্রেলিয়ার দিনটা শেষ করল সুবিধাজনক অবস্থায় থেকেই।
অ্যাডিলেড ওভালে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফ্রির দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ভারত গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৮০ রানেই। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ১ উইকেটে ৮৬ রান, পিছিয়ে আছে ৯৪ রানে।
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ফেলে আইপিএলের নিলামে যাচ্ছেন স্পিন কোচ ভেট্টোরি |
প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইনআপের ওপর দাপট দেখিয়ে শতক হাঁকান জয়সওয়াল। ওই ইনিংসে স্টার্ককে বেধড়ক পিটুনিই দিয়েছিলেন ভারত ওপেনার। ফলে এই দুজনের লড়াইয়ের আশায় ছিলেন সবাই। তবে এবার শতভাগ সফল নন অজি তারকা পেসার। সুইং করা ডেলিভারিটি আঘাত হানে জয়সওয়ালের প্যাডে। গোল্ডেন ডাকের তেতো অভিজ্ঞতা হয় তরুণ এই ব্যাটারের।
এই ম্যাচ দিয়ে একাদশ ফেরা অধিনায়ক রোহিত শর্মা ওপেনিং ছেড়ে নেমে যান ছয় নম্বরে। প্রথম টেস্টে মেকশিফট ওপেনার হিসেবে খেলা লোকেশ রাহুল প্রথম ঘণ্টায় অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের সামাল দেন সলিড ডিফেন্সে। এই টেস্ট দিয়ে একাদশে ফেরা তিনে নামা শুবমান গিল প্রথম ওভারে ক্রিজেই গিয়েই মারেন তানা দুই বাউন্ডারি।
এরপর রয়েসয়ে খেলে রাহুলকে দেন যোগ্য সঙ্গ। জমে যাওয়া এই জুটিতে যোগ হয় ৬৯ রান। দুজনই যখন পুরোপুরি সেট, তখন ফের আঘাত হানেন সেই স্টার্কই। ৬ চারে ৩৭ রানে শেষ হয় রাহুলের প্রতিরোধ। ভারতকে আরও চাপে ফেলে আগের ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান বিরাট কোহলিকেও ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি এই পেসার। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল তাড়া করে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন এই তারকা ব্যাটার।
জশ হ্যাজলউডের চোটে এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া স্কট বোল্যান্ড দিবারাত্রির টেস্টে বরাবরই দারুণ এক বোলার। সেই খ্যাতি ধরে রেখে জোড়া ধাক্কায় ভারতের চাপ আরও বাড়িয়ে দেন তিনি। ৩১ রান করা গিলের পর শিকার বানান ২৩ বলে ৩ করা রোহিতকেও। ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত চলে যায় ব্যাকফুটে।
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে গিলকে ‘পাচ্ছে না’ ভারত |
স্বভাবসুলত আগ্রাসী ব্যাটিং না করে কিছুটা ধরে খেলার দিকেই মনোযোগী ছিলেন রিশাভ পান্ত। তবে পারেননি বড় স্কোর গড়তে। ২ বাউন্ডারিতে করতে পারেন ২১ রান। তবে আগ্রাসী ব্যাটিংটা করেন এই ম্যাচ দিয়েই একাদশে আসা অভিজ্ঞ স্পিনার রবিচন্দন অশ্বিন। খেলেন ২২ বলে ২২ রানের ক্যামিও।
তবে ভারতের দেড়শ পার করে দুইশ রানের কাছাকাছি যাওয়ার একমাত্র কৃতিত্ব পেস বোলিং অলরাউন্ডার নিতিশ রেড্ডির। প্রথম টেস্টেও জানান দিয়েছিলেন ব্যাট হাতে নিজের সামর্থ্যের। এবার দলের বিপদে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে পরীক্ষাই নেন অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের। সমান তিনটি করে চার ও ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ৪২ রান।
৪৮ রানে ৬ উইকেট নেন স্টার্ক। টেস্টে এই নিয়ে ১৫বার ইনিংসে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট পেলেন তিনি।
পার্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসেও দুইশর কম করেও শেষ পর্যন্ত বড় জয় পেয়েছিল ভারত, যেখানে অবদান রাখেন দলটির পেসাররা। এবারও শুরু থেকেই অজি ওপেনারদের প্রতিটি রানের জন্য রীতিমত সংগ্রাম করিয়ে ছাড়েন জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজ। বিশেষ করে বুমরাহকে ব্যাটাররা যেন একটু বেশিই সমীহ করে খেলছিলেন। সাথে হারশিত রানাও আঁটসাঁট বোলিং ধরে রাখেন চাপটা।
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে গিলকে ‘পাচ্ছে না’ ভারত |
ফলে রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা দুই ওপেনার নাথান ম্যাকসুইনি ও উসমান খাজা কয়েকবার বেঁচে যান অল্পের জন্য। তাদের অতিরিক্ত ডিফেন্সিভ ব্যাটিং দেখে ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রি বলছিলেন, এই ধরণের ব্যাটিং ভারতকে ম্যাচে ফেরার বিশ্বাসটা বাড়িয়ে দিতে পারে। ১০ ওভারে রান আসে মাত্র ২৪।
শেষ পর্যন্ত ফর্মের তুঙ্গে থাকা বুমরাহ শেষ পর্যন্ত পান সাফল্যের দেখা। অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম স্লিপে রোহিতের ক্যাচ শেষ হয় খাজার ১৩ রানের সংগ্রামী ইনিংস।
সেই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জই। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটে এখনও নতুন ম্যাকসুইনি প্রথম টেস্টে পারেননি নিজেকে মেলে ধরতে। আর মার্নাস লাবুশেন তো লম্বা সময় ধরেই নেই রানের মধ্যে। বেশ খানিকটা সময়েই তাই দুই ব্যাটারকে ভারতের পেসারদের সামনে দিতে হয় কঠিন পরীক্ষা।
বুমরাহর কয়েকটি ইনসুইঙ্গার দুই ব্যাটারকে পারেননি অল্পের জন্য আউট করতে। কয়েকটি দুর্দান্ত আউটসুইঙ্গার আবার পরাস্ত করে পুরোপুরিভাবে। তবে সেই সময়ে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাটিংয়ের সুফল ধীরে ধীরে পেতে শুরু করেন ম্যাকসুইনি ও লাবুশেন।
রানের চাকাও তাতে সচল হয় কিছুটা। দুজনই হাঁকান চমৎকার কিছু শটে বাউন্ডারি। রানের জন্য সংগ্রাম করতে থাকা লাবুশেন কিছু শটে মনে করান সেরা সময়ের কথা। আর তরুণ ম্যাকসুইনিও নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিয়ে ক্রমশ ব্যাটিংয়ে দেখান আত্মবিশ্বাসের ছাপ। দর্শকদের আনন্দে মাতিয়ে নিতিশকে মারেন টানা দুটি চার।
আরও পড়ুন
শাহিন-নাসিম-রউফ তোপে উড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া, সিরিজ জয় পাকিস্তানের |
জমে ওঠা এই জুটি একবার রান-আউটে কাঁটা পড়ার খুব কাছাকাছি গিয়ে রক্ষা পায়। ফিরতি স্পেলে শেষ ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেন্থে বোলিং করে আরও একবার ব্যাট-বলের লড়াই জমিয়ে তোলেন বুমরাহ। সেটা সামলে দিনটা শেষ পর্যন্ত পার করে দিতে সমর্থ হন ম্যাকসুইনি-লাবুশেন জুটি।
ম্যাকসুইনি অপরাজিত আছেন ৩৮ রানে, আর লাবুশেনের সংগ্রহ ২০ রান।
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩:৫৪ পিএম
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টের দল ঘোষণার আগেরদিনই নাথান ম্যাকসুইনি বলেছিলেন, বক্সিং-ডে টেস্ট খেলাটা হবে তার কাছে স্বপ্নপূরণের মত। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দল থেকেই বাদ পড়তে হয়েছে তাকে। অনেক আশা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পাওয়ার পর দ্রুতই বাদ পড়াটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তরুণ এই ব্যাটারের। সিরিজের মাঝপথে ছিটকে যাওয়াট তাকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে।
চলমান সিরিজে ম্যাকসুইনির ওপেনার হিসেবে দলে ডাক পাওয়াটাই ছিল চমক জাগানিয়া। মূলত তিনি মিডল অর্ডার ব্যাটার হলেও অস্ট্রেলিয়া তাকে ওপেনার হিসেবেই খেলায় তিনটি টেস্টে। ছয় ইনিংসে মাত্র ৭২ রান করার পর শেষ দুই ম্যাচের জন্য তার জায়গায় ডাক পেয়েছেন ১৯ বছর বয়সী স্যাম কনস্টাস।
বাদ পড়ার হতাশার পাশাপাশি চ্যানেল সেভেন-কে দেওয়া ম্যাকসুইনি ব্যক্ত করেন ফিরে আসার আশাবাদও।
“হ্যাঁ, আমি বিধ্বস্ত, আমি স্বপ্নটা সত্যি হয়েছিল, কিন্তু এরপর আমি যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে তা কাজ করেনি। তবে এটাও একটা প্রক্রিয়ার অংশ এবং আমি আবার মাথা নিচু করে নেটে ফিরে যাব এবং কঠোর পরিশ্রম করব এবং আশা করি পরবর্তীতে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকব।”
এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার আরেক ওপেনার উসমান খাজাও নেই ফর্মে। ম্যাকসুইনির ওপর তাই প্রত্যাশা ছিল কিছু ভালো ইনিংস উপহার দেওয়ার। তবে ছয়টির মধ্যে পাঁচ ইনিংসে শুন্য থেকে ১০ রানের মধ্যে আউট হয়ে যান তিনি। সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংসে অবশ্য প্রশংসা পায় তার মাটি কামড়ে পড়ে থাকার দক্ষতা। তবে আপাতত বাজে ফর্মই তাকে ছিটকে দিয়েছে।
ম্যাকসুইনির জন্য ফিরে আসার পথটা অবশ্য সহজ হবে না। ওপেনিং পজিশনে ব্যর্থ হওয়ায় আপাতত তাকে বিবেচনা করলে সেটা হবে মিডল অর্ডারে। আর সেক্ষেত্রে তাকে পড়তে হবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেই। কারণ, চোটের কারণে এই সিরিজ মিস করা ক্যামেরন গ্রিন দলে ফিরলে মিডল অর্ডারে তিনি চলে আসবেন নিয়মিত পছন্দ হিসেবেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগেও জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। তবে প্রতিবারই লিটন দাস দায়িত্ব সামলেছেন অস্থায়ীভাবে। আর সেখানে ভালো করার কেউ কেউ এই ফরম্যাটে তার মাঝে দেখতে পান ভবিষ্যৎ অধিনায়কের ছায়া। তিনি নিজে কী ভাবছেন? লিটন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বোর্ডের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে তিনি সেটা লুফে নিতে প্রস্তুত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবারের সিরিজটি সবদিক থেকেই কঠিন ছিল লিটনের জন্য। ওয়ানডে সিরিজ গেছে ভীষণ বাজে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাননি দলের সেরা কিছু ক্রিকেটারকে। তার ওপর প্রতিপক্ষ দল আবার এই ফরম্যাটেই খেলে নিজেদের সেরা ক্রিকেট। ব্যাট হাতে এই সিরিজেও লিটন নিস্প্রভ থাকলেও বাজিমাত করেছে তার দল। প্রথমবারের মত ক্যারিবিয়ানদের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে।
ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতায় পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়কত্ব করা নিয়ে ইতিবাচক উত্তরই দিয়েছেন লিটন। “বিসিবি যদি দায়িত্ব দেয়, আমি সেটা নিতে রাজি আছি। এখানে দ্বিমত থাকার কোনো কথা না। আমি এই কাজটা উপভোগ করছি। এতদিন খেলার অভিজ্ঞতা থেকে আমি অনেক সিদ্ধান্ত নেই, বোলাররাও স্কিল দেখাচ্ছে, তাতে মাঠে আমার কাজ সহজ হয়ে যায়।”
তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। চোটের কারণে পুরো ক্যারিবিয়ান সফরই তিনি মিস করেছেন। মাঝে গুঞ্জন ছিল, টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চান তিনি। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। তবে তিনি যদি সামনে সরে দাঁড়ান, অন্তত এই ফরম্যাটে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার যোগ্য দাবিদার থাকবেন লিটনই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে বোলিং পরিবর্তন থেকে শুরু করে ফিল্ডিং সাজানো, সব জায়গাতেই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি।
লিটন নিজে অবশ্য কৃতিত্ব ভাগ করে দিতে চান দলের সবার মাঝেই।
“ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের মাঠে খুব ভালো দল। বলবো না খুব বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপ, তবে আমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যালেন্সড ব্যাটিং অর্ডার। আমরা যদি বোর্ডে প্রতিদিন কিছু রান দিতে পারি, তাহলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। আমাদের বোলারদের স্কিল বাড়ছে, প্রতি ম্যাচেই নিজে থেকে তারা দায়িত্ব নিচ্ছে, ফিল্ডিং নিজে থেকে সাজাচ্ছে, অনেক কিছু শিখছে। এটা ভালো দিক। আমার কাজ সহজ হয়ে যায়।”
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে আগেও কাজ করেছেন, সফলতাও পেয়েছেন। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে লিটন দাসের জন্য দায়িত্বটা ছিল কঠিনই। ওয়ানডে সিরিজে নিজে ছিলেন ব্যর্থ, দলও যে হেরেছিল সব ম্যাচেই। সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ২০ ওভারের সিরিজে শক্তিশালী ক্যারিবিয়ানদের ধবলধোলাই করেছেন। লিটন মনে করছেন, চাপ না নিয়ে খেলার সুফল পেয়েছে দল।
চাপে অবশ্য বাংলাদেশ দল ছিল ওয়ানডে সিরিজের পারফরম্যান্সের কারণেই। নিজেদের পছন্দের এবং সেরা ফরম্যাটে তিনটি ম্যাচের দুটিতে হারতে হয়ে বড় স্কোর নিয়েই। অথচ র্যাংকিংয়ে চারে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তুলনামূলক কম শক্তিশালী দল নিয়েও বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছে দাপট দেখিয়েই। তাতে ইতিহাস গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবার এই ফরম্যাটে ৩-০ তে সিরিজ জয়ও ধরা দিয়েছে।
ম্যাচের পর অধিনায়ক লিটন বলেছেন, ভারমুক্ত থেকে খেলার মন্ত্রটাই সাহায্য করেছে তাদের।
“আপনি যদি দেখেন, আমরা টেস্ট এবং ওয়ানডেতেও ভালো খেলেছি। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা সব ম্যাচ জিততে পারিনি। তবে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তাই আমাদের সাথে সব সিরিজ খুব ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি সবসময় ছেলেদের বলি চাপ না নিতে, আর স্রেফ খেলাটা উপভোগ করতে। কারণ, আমরা জানি আমাদের খুব ভালো একটা বোলিং আক্রমণ আছে এবং আমরা যে কোনও স্কোরই ডিফেন্ড করতে পারি।”
তিনটি ম্যাচই হয়েছেন কিংসটাউনে এবং তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেছে। প্রথম দুই ম্যাচে বোর্ডে বড় স্কোর না থাকলেও বোলাররা কাজের কাজটা করে দেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে থাকা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব বড় নাম থাকার পরও টানা তিন ম্যাচে তাদের আটকে দেওয়া বড় এক অর্জনই। সিরিজের শেষ ম্যাচে ১৮৯ রান করা বাংলাদেশ ক্যারিবিয়ানদের গুটিয়ে দেয় মাত্র ১০৯ রানেই।
অধিনায়কের কাছ থেকে বোলাররা তাই বাহবাই পেলেন।
“আমরা দিন দিন উন্নতি করছি। আপনি যদি প্রথম এবং দ্বিতীয় ম্যাচ দেখেন, এই উইকেটটি ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো ছিল। আমাদের বোলাররা যেভাবে বল করেছে, সেটা দুর্দান্ত ছিল। কারণ, এই মুহূর্তে তাদের শ্রেয়তর ব্যাটিং অর্ডার রয়েছে। তাদের দলে পাওয়ার হিটার আছে এবং আমরা ১৮০ রান (১৮৯) ডিফেন্ড করে তাদের ১০৯ রানে আটকে দিয়ে জিতেছি। বোলিং ইউনিটের জন্য এটা একটা বড় অর্জন।”
বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স দায়িত্ব নিয়েছেন, খুব বেশিদিন হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই কোচ অল্প সময়েই পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। সাথে বাংলাদেশের স্থানীয় কোচদের মধ্য অন্যতম সফল মোহাম্মাদ সালাহউদ্দিন এই সফরে কাজ করেন ব্যাটিং কোচ হিসেবেও।
নিজেদের সাফল্যের কৃতিত্ব কোচদের সাথেও তাই ভাগাভাগি করে নিলেন লিটন।
“সে (ফিল সিমন্স) আমাদের ওপর কখনো কোনো চাপ দেননি। আমরা শুধু নির্দ্বিধায় ক্রিকেট খেলেছি। আমি শুধু তার কাছে আমাদের সিদ্ধান্ত এবং সবকিছু ব্যাখ্যা করেছি। শুধু তিনিই নন, পুরো কোচিং স্টাফ এবং ম্যানেজমেন্টের লোকরাও ভালো কাজ করেছে। তারা আমাদের জন্য খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেই এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষ ব্যাটারদেরই একজন নিকোলাস পুরান। পেসের পাশাপাশি স্পিনেও রয়েছে দারুণ দক্ষতা। তবে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে পুরো টি-টোয়েন্টি সিরিজেই তাকে নিস্ক্রিয় রেখেছেন একজন - শেখ মাহেদি হাসান। টানা তিন ম্যাচে এই বাঁহাতি ব্যাটারকে আউট করে দলকে এগিয়ে রেখেছেন অনেকটাই। পুরানের বিপক্ষে এমন সফলতার রহস্য কী? মাহেদি শুনিয়েছেন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আনন্দ।
প্রথম ম্যাচে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন পুরান। দ্বিতীয় ম্যাচে তাকে আর্ম ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত করেন মাহেদি, স্লিপে সহজ ক্যাচ দেন এই মারমুখী ব্যাটার। আর সিরিজের শেষ ম্যাচে ব্যাকফুটে গিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে হয়ে যান বোল্ড। এমন মাপের একজন ব্যাটারকে হ্যাটট্রিক শিকার বানানো চাট্টিখানি কথা নয়।
৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হওয়া মাহেদি বলেছেন, পুরানকে নিয়ে তাদের ভিন্ন কৌশল ছিল, যা কাজে লেগেছে।
“(রংপুর রাইডার্সের হয়ে) গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে খেলার ভালো অভিজ্ঞতা ছিল, আর সেটা এখানে সাহায্য করেছে। আমি এই ধরণের উইকেটে বোলিং করাটা উপভোগ করেছি। আমরা সিরিজ শুরুর আগে উইকেট টু উইকেটে বল করার পরিকল্পনা করেছি। আমি পুরানকে চিনি, তার সাথে বিপিএল এবং অন্যান্য লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ডানহাতি অফ স্পিনারের বিপক্ষে সে খুব কঠিন একজন ব্যাটার। কিন্তু তাকে সামলানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনা ছিল।”
মাহেদি বাংলাদেশ দলের সাথে এই সফরের স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার ঠিক আগে অংশ নেন গায়ানায় হওয়া গ্লোবাল সুপার লিগে। রংপুর রাইডার্সের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে খেলেন প্রতিটি ম্যাচেই। এই সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে টুর্নামেন্টটি তাকে তাই বেশ সাহায্য করেছে, যা প্রতীয়মান হয় গোটা সিরিজ জুড়ে মাহেদির বোলিংয়েই।
প্রথম ম্যাচে চার ওভারে মাত্র ১৩ রানে নেন ৪ উইকেট, যা এই ফরম্যাটে তার সেরা বোলিং ফিগার। পরের দুই ম্যাচে নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। পাওয়ার প্লেতে নিয়মিতই উইকেট শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের পাওয়ার প্লেতে চাপে ফেলার কাজটা সবগুলো ম্যাচেই করেছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
একবার যখন রান আউট হয়েও নাটকীয়ভাবে ফিরে এসেছিলেন, তখন বোর্ডে ছিল না তেমন রান। জাকের আলি অনিক নিজেও ছিলেন না সেরা ছন্দে। তবে ইনিংসের শেষের দিকে সাম্প্রতিক সময়ে ঝড় তোলা এই ব্যাটার আরও একবার ঠিক সেটাই করেন, যে কাজটা তিনি রপ্ত করে ফেলেছেন দারুণভাবেই। ম্যাচ জেতানো ফিফটি করে জাকের বললেন, শেষের ঝড় তোলার বিশ্বাসটা তার ছিলই।
১৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল মাত্র ৬ উইকেটে ১১৪। জাকের তখন ব্যাট করছিলেন প্রায় ১০০ স্ট্রাইক রেটে। ব্যাটে ছিল না ধার। তবে চার-ছক্কার পসরা সাজিয়ে শেষ চার ওভারে এলোমেলো করে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ফিফটি করা ছাড়াও আলজারি জোসেফের করা ২০তম ওভারে তুলে নেন ২৫ রান, যা বাংলাদেশকে এনে দেয় ১৮৯ রানের বিশাল স্কোর।
ম্যাচ সেরার খেতাব জিতে জাকের বললেন, ডেথ ওভারে রান করার ব্যাপারে শতভাগ বিশ্বাস ছিল তার মাঝে।
“এটা আমার জন্য এটা বেশ চমৎকার একটি সফর ছিল। আজকে আমি সময় নিতে চেয়েছিলাম এবং আমি জানতাম, আমি যদি শেষ পর্যন্ত টিকতে পারি, তাহলে রান করতে পারব। রান আউটে (শামীম হোসেনের সাথে) ভয়ঙ্কর ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, আর এরপর তৃতীয় আম্পায়ার আমাকে ফিরে ডাকেন। ভাগ্য ভালো, আমি এর পর রান করেছি এবং আমি এটা নিয়ে খুশি। এটা পুরোটাই মানসিকতার ব্যাপার। আমি এখানে বিশ্বকাপ খেলেছি এবং তখন ভালো না করলেও এই ফরম্যাটে আমার জন্য সময়টা ভালোই যাচ্ছে।”
জাকের এই ইনিংস সম্ভবই হতো না, যদি তিনি রান আউটই হয়ে যেতেন শেষ পর্যন্ত। তবে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পর আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বদলে তার বদলে রান আউট দেন শামীম হোসেনকে। এরপরই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে ৬টি ছক্কা ও ৩ চারের মারে খেলেন মাত্র ৪২ বলে ৭১ রানের ইনিংস, যা এই ফরম্যাটে এখন জাকেরের সেরা ইনিংস।
জাকেরের ওই ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ বিশাল স্কোর পাওয়ার পর বোলারদের হাত ধরে পেয়েছে ৮০ রানের বড় জয়, যা নিশ্চিত করে ৩-০ তে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।