৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭:৪৯ পিএম
নির্দিষ্ট একজন ব্যাটার বা বোলারের বিপক্ষে কোনো ক্রিকেটারের বিশেষভাবে ভালো পারফর্ম করার অসংখ্য নজির রয়েছে ইতিহাসে। আবার কিছু খেলোয়াড় রয়েছেন, যারা গোটা দলকেই বানিয়ে ফেলেন ‘প্রিয় প্রতিপক্ষ’। ফর্ম, ম্যাচের পরিস্থিতি যেমনই হোক, সেই দলটির বিপক্ষে তার ব্যাট বা বল হাতে জ্বলে ওঠাটা যেন অনিবার্য। গত দেড় বছর ধরে ভারতের বিপক্ষে ঠিক সেই কাজটাই সব ফরম্যাটে বারবার করে অজি ব্যাটার তাই হয়ে উঠেছেন দলটির মাথাব্যথার কারণ। প্রিয় প্রতিপক্ষক ভারতকে পেলেই যেন একটু বেশি হাসছে হেডের ব্যাট।
হেডের এই ‘ভারতপ্রেমের’ শুরুটা সেই গত বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল দিয়ে। প্রথম ইনিংসে খেলেন ১৭৪ বলে ১৬৩ রানের এমন ইনিংসে, যা প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবেও একদম গুঁড়িয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত অনায়াস জয় পায় অস্ট্রেলিয়ার। ম্যাচ সেরাও হন হেড। এরপরের মঞ্চ গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। তবে এখানে বাড়তি কিছু তথ্য যোগ করে নেওয়া যেতেই পারে।
আর সেটা হল, চোটের কারণে বিশ্বকাপের অর্ধেক মিস করা হেড প্রথম ম্যাচ খেলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর মাঠে নেমেই হাঁকান শতক। মানে, বাঁহাতি এই ব্যাটার স্রেফ ভারতই নন, অন্য দলের বিপক্ষেও বড় রান করতে জানেন। তবে সেটা যে রোহিত-বুমরাহদের তুলনায় একেবারেই যৎসামান্য, সেটা স্পষ্ট এক পরিসংখ্যানেই। যেখানে দেখা যাচ্ছে ২০২৩ সাল থেকে সব ফরম্যাটে ভারতের বিপক্ষে ১৯ ইনিংসে ৪টি সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে ১ হাজার ৫২ রান করেছেন হেড। গড় অবিশ্বাস্য ৬১.৯০!
আরও পড়ুন
আইপিএলে তান্ডবে চালানো হেড চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশ্বকাপে |
একজন ব্যাটারের এমন গড় অবিশ্বাস্য এমনিতেই বলা যায়। তবে হেডের অন্য দলের বিপক্ষে একই সময়ের পরিসংখ্যান দেখলে আপনিও মানতে বাধ্য হবেন তার অসামান্য কীর্তি। ভারত বাদে বাকি দলের বিপক্ষে গত বছর থেকে ৫৪ ম্যাচে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৮৭৫ রান করেছেন হেড। গড়? মোটে ৩৬.৮০! ফিফটি ১০টি, আর সেঞ্চুরি ভারতের সমান ৩টিই। জার্সি সাদা হোক বা রঙ্গিন প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতকে পেলেই হেডের এই দানবীয় ব্যাটিংয়ের দেখা মিলছে বারবার।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেই যেমন। ২৪১ রানের টার্গেটে জাসপ্রিত বুমরাহ তোপে মাত্র ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ত্রাহিত্রাহি অবস্থা অস্ট্রেলিয়ার। ইনিংসের শুরুর দিকে ভারতের তারকা পেসাদের কয়েকটি ডেলিভারিতে পুরোপুরি পরাস্ত হন হেড, অল্পের জন্য হননি বোল্ড বা ক্যাচ আউট। তবে একটু সেট হওয়ার পর ক্রমেই ভারতের মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে নেন নান্দনিক সব শটের পসরা সাজিয়ে। স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে খেলেন ১২০ বলে ১৩৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। আসরে প্রথমবার ভারত পায় হারের দেখা। উল্লেখ্য, গ্রুপ পর্বে দুই দলের মুখোমুখি ম্যাচটি খেলেননি হেড।
তবে ফাইনালে নেমেই হয়ে যান আরও একবার ম্যাচ সেরা। ১২ বছর বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ, তাও ঘরের মাটিতে - এমন মেলবন্ধনের পথে কাঁটা হয়ে যাওয়ায় আজও ভারতের কাছে হেড এক দুঃখ, আক্ষেপ ও বিভীষিকার নামই বটে। বুমরাহর ওই স্পেলেই যদি তার বিদায় হত, কে জানে হয়ত কাপটা উঠত রোহিত শর্মার হাতেই!
আরও পড়ুন
কীভাবে এমন তাণ্ডব চালাচ্ছেন ট্রাভিস হেড? |
হেড এরপর চলতি বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের ম্যাচে আরও একবার জ্বলে ওঠেন ভারতের বিপক্ষে। মাত্র ৪৩ বলে খেলেন ৭৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। এবার অবশ্য দলকে জেতাতে পারেননি। তবে চলমান ভারত-অস্ট্রেলিয়ার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে যা করেছেন, সেটা হয়ত গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।
গোলাপি বলের এই ম্যাচে ভারতের বোলারদের আর একবার বেধড়ক পিটিয়ে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরেন তিনি। ১৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১৪১ বলে হেডের ব্যাট থেকে এসেছে ১৪০ রান। দ্বিতীয় দিন শেষে হাতে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারত পিছিয়ে আছে ২৯ রানে। দলটি যদি এখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে না পেরে হেরে যায়, তাহলে সম্ভবত আরও একবার ভারতের হারের মূল কারণ হওয়ার পাশাপাশি ম্যাচ সেরাও হয়ে যাবেন হেডই। এমন প্রিয় প্রতিপক্ষ কে না চায়!
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩:৫৪ পিএম
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টের দল ঘোষণার আগেরদিনই নাথান ম্যাকসুইনি বলেছিলেন, বক্সিং-ডে টেস্ট খেলাটা হবে তার কাছে স্বপ্নপূরণের মত। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দল থেকেই বাদ পড়তে হয়েছে তাকে। অনেক আশা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পাওয়ার পর দ্রুতই বাদ পড়াটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তরুণ এই ব্যাটারের। সিরিজের মাঝপথে ছিটকে যাওয়াট তাকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে।
চলমান সিরিজে ম্যাকসুইনির ওপেনার হিসেবে দলে ডাক পাওয়াটাই ছিল চমক জাগানিয়া। মূলত তিনি মিডল অর্ডার ব্যাটার হলেও অস্ট্রেলিয়া তাকে ওপেনার হিসেবেই খেলায় তিনটি টেস্টে। ছয় ইনিংসে মাত্র ৭২ রান করার পর শেষ দুই ম্যাচের জন্য তার জায়গায় ডাক পেয়েছেন ১৯ বছর বয়সী স্যাম কনস্টাস।
বাদ পড়ার হতাশার পাশাপাশি চ্যানেল সেভেন-কে দেওয়া ম্যাকসুইনি ব্যক্ত করেন ফিরে আসার আশাবাদও।
“হ্যাঁ, আমি বিধ্বস্ত, আমি স্বপ্নটা সত্যি হয়েছিল, কিন্তু এরপর আমি যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে তা কাজ করেনি। তবে এটাও একটা প্রক্রিয়ার অংশ এবং আমি আবার মাথা নিচু করে নেটে ফিরে যাব এবং কঠোর পরিশ্রম করব এবং আশা করি পরবর্তীতে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকব।”
এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার আরেক ওপেনার উসমান খাজাও নেই ফর্মে। ম্যাকসুইনির ওপর তাই প্রত্যাশা ছিল কিছু ভালো ইনিংস উপহার দেওয়ার। তবে ছয়টির মধ্যে পাঁচ ইনিংসে শুন্য থেকে ১০ রানের মধ্যে আউট হয়ে যান তিনি। সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংসে অবশ্য প্রশংসা পায় তার মাটি কামড়ে পড়ে থাকার দক্ষতা। তবে আপাতত বাজে ফর্মই তাকে ছিটকে দিয়েছে।
ম্যাকসুইনির জন্য ফিরে আসার পথটা অবশ্য সহজ হবে না। ওপেনিং পজিশনে ব্যর্থ হওয়ায় আপাতত তাকে বিবেচনা করলে সেটা হবে মিডল অর্ডারে। আর সেক্ষেত্রে তাকে পড়তে হবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেই। কারণ, চোটের কারণে এই সিরিজ মিস করা ক্যামেরন গ্রিন দলে ফিরলে মিডল অর্ডারে তিনি চলে আসবেন নিয়মিত পছন্দ হিসেবেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগেও জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। তবে প্রতিবারই লিটন দাস দায়িত্ব সামলেছেন অস্থায়ীভাবে। আর সেখানে ভালো করার কেউ কেউ এই ফরম্যাটে তার মাঝে দেখতে পান ভবিষ্যৎ অধিনায়কের ছায়া। তিনি নিজে কী ভাবছেন? লিটন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বোর্ডের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে তিনি সেটা লুফে নিতে প্রস্তুত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবারের সিরিজটি সবদিক থেকেই কঠিন ছিল লিটনের জন্য। ওয়ানডে সিরিজ গেছে ভীষণ বাজে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাননি দলের সেরা কিছু ক্রিকেটারকে। তার ওপর প্রতিপক্ষ দল আবার এই ফরম্যাটেই খেলে নিজেদের সেরা ক্রিকেট। ব্যাট হাতে এই সিরিজেও লিটন নিস্প্রভ থাকলেও বাজিমাত করেছে তার দল। প্রথমবারের মত ক্যারিবিয়ানদের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে।
ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতায় পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়কত্ব করা নিয়ে ইতিবাচক উত্তরই দিয়েছেন লিটন। “বিসিবি যদি দায়িত্ব দেয়, আমি সেটা নিতে রাজি আছি। এখানে দ্বিমত থাকার কোনো কথা না। আমি এই কাজটা উপভোগ করছি। এতদিন খেলার অভিজ্ঞতা থেকে আমি অনেক সিদ্ধান্ত নেই, বোলাররাও স্কিল দেখাচ্ছে, তাতে মাঠে আমার কাজ সহজ হয়ে যায়।”
তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। চোটের কারণে পুরো ক্যারিবিয়ান সফরই তিনি মিস করেছেন। মাঝে গুঞ্জন ছিল, টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চান তিনি। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। তবে তিনি যদি সামনে সরে দাঁড়ান, অন্তত এই ফরম্যাটে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার যোগ্য দাবিদার থাকবেন লিটনই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে বোলিং পরিবর্তন থেকে শুরু করে ফিল্ডিং সাজানো, সব জায়গাতেই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি।
লিটন নিজে অবশ্য কৃতিত্ব ভাগ করে দিতে চান দলের সবার মাঝেই।
“ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের মাঠে খুব ভালো দল। বলবো না খুব বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপ, তবে আমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যালেন্সড ব্যাটিং অর্ডার। আমরা যদি বোর্ডে প্রতিদিন কিছু রান দিতে পারি, তাহলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। আমাদের বোলারদের স্কিল বাড়ছে, প্রতি ম্যাচেই নিজে থেকে তারা দায়িত্ব নিচ্ছে, ফিল্ডিং নিজে থেকে সাজাচ্ছে, অনেক কিছু শিখছে। এটা ভালো দিক। আমার কাজ সহজ হয়ে যায়।”
ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে আগেও কাজ করেছেন, সফলতাও পেয়েছেন। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে লিটন দাসের জন্য দায়িত্বটা ছিল কঠিনই। ওয়ানডে সিরিজে নিজে ছিলেন ব্যর্থ, দলও যে হেরেছিল সব ম্যাচেই। সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ২০ ওভারের সিরিজে শক্তিশালী ক্যারিবিয়ানদের ধবলধোলাই করেছেন। লিটন মনে করছেন, চাপ না নিয়ে খেলার সুফল পেয়েছে দল।
চাপে অবশ্য বাংলাদেশ দল ছিল ওয়ানডে সিরিজের পারফরম্যান্সের কারণেই। নিজেদের পছন্দের এবং সেরা ফরম্যাটে তিনটি ম্যাচের দুটিতে হারতে হয়ে বড় স্কোর নিয়েই। অথচ র্যাংকিংয়ে চারে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তুলনামূলক কম শক্তিশালী দল নিয়েও বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছে দাপট দেখিয়েই। তাতে ইতিহাস গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবার এই ফরম্যাটে ৩-০ তে সিরিজ জয়ও ধরা দিয়েছে।
ম্যাচের পর অধিনায়ক লিটন বলেছেন, ভারমুক্ত থেকে খেলার মন্ত্রটাই সাহায্য করেছে তাদের।
“আপনি যদি দেখেন, আমরা টেস্ট এবং ওয়ানডেতেও ভালো খেলেছি। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা সব ম্যাচ জিততে পারিনি। তবে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তাই আমাদের সাথে সব সিরিজ খুব ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি সবসময় ছেলেদের বলি চাপ না নিতে, আর স্রেফ খেলাটা উপভোগ করতে। কারণ, আমরা জানি আমাদের খুব ভালো একটা বোলিং আক্রমণ আছে এবং আমরা যে কোনও স্কোরই ডিফেন্ড করতে পারি।”
তিনটি ম্যাচই হয়েছেন কিংসটাউনে এবং তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেছে। প্রথম দুই ম্যাচে বোর্ডে বড় স্কোর না থাকলেও বোলাররা কাজের কাজটা করে দেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে থাকা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব বড় নাম থাকার পরও টানা তিন ম্যাচে তাদের আটকে দেওয়া বড় এক অর্জনই। সিরিজের শেষ ম্যাচে ১৮৯ রান করা বাংলাদেশ ক্যারিবিয়ানদের গুটিয়ে দেয় মাত্র ১০৯ রানেই।
অধিনায়কের কাছ থেকে বোলাররা তাই বাহবাই পেলেন।
“আমরা দিন দিন উন্নতি করছি। আপনি যদি প্রথম এবং দ্বিতীয় ম্যাচ দেখেন, এই উইকেটটি ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো ছিল। আমাদের বোলাররা যেভাবে বল করেছে, সেটা দুর্দান্ত ছিল। কারণ, এই মুহূর্তে তাদের শ্রেয়তর ব্যাটিং অর্ডার রয়েছে। তাদের দলে পাওয়ার হিটার আছে এবং আমরা ১৮০ রান (১৮৯) ডিফেন্ড করে তাদের ১০৯ রানে আটকে দিয়ে জিতেছি। বোলিং ইউনিটের জন্য এটা একটা বড় অর্জন।”
বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স দায়িত্ব নিয়েছেন, খুব বেশিদিন হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই কোচ অল্প সময়েই পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। সাথে বাংলাদেশের স্থানীয় কোচদের মধ্য অন্যতম সফল মোহাম্মাদ সালাহউদ্দিন এই সফরে কাজ করেন ব্যাটিং কোচ হিসেবেও।
নিজেদের সাফল্যের কৃতিত্ব কোচদের সাথেও তাই ভাগাভাগি করে নিলেন লিটন।
“সে (ফিল সিমন্স) আমাদের ওপর কখনো কোনো চাপ দেননি। আমরা শুধু নির্দ্বিধায় ক্রিকেট খেলেছি। আমি শুধু তার কাছে আমাদের সিদ্ধান্ত এবং সবকিছু ব্যাখ্যা করেছি। শুধু তিনিই নন, পুরো কোচিং স্টাফ এবং ম্যানেজমেন্টের লোকরাও ভালো কাজ করেছে। তারা আমাদের জন্য খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেই এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষ ব্যাটারদেরই একজন নিকোলাস পুরান। পেসের পাশাপাশি স্পিনেও রয়েছে দারুণ দক্ষতা। তবে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে পুরো টি-টোয়েন্টি সিরিজেই তাকে নিস্ক্রিয় রেখেছেন একজন - শেখ মাহেদি হাসান। টানা তিন ম্যাচে এই বাঁহাতি ব্যাটারকে আউট করে দলকে এগিয়ে রেখেছেন অনেকটাই। পুরানের বিপক্ষে এমন সফলতার রহস্য কী? মাহেদি শুনিয়েছেন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আনন্দ।
প্রথম ম্যাচে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন পুরান। দ্বিতীয় ম্যাচে তাকে আর্ম ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত করেন মাহেদি, স্লিপে সহজ ক্যাচ দেন এই মারমুখী ব্যাটার। আর সিরিজের শেষ ম্যাচে ব্যাকফুটে গিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে হয়ে যান বোল্ড। এমন মাপের একজন ব্যাটারকে হ্যাটট্রিক শিকার বানানো চাট্টিখানি কথা নয়।
৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হওয়া মাহেদি বলেছেন, পুরানকে নিয়ে তাদের ভিন্ন কৌশল ছিল, যা কাজে লেগেছে।
“(রংপুর রাইডার্সের হয়ে) গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে খেলার ভালো অভিজ্ঞতা ছিল, আর সেটা এখানে সাহায্য করেছে। আমি এই ধরণের উইকেটে বোলিং করাটা উপভোগ করেছি। আমরা সিরিজ শুরুর আগে উইকেট টু উইকেটে বল করার পরিকল্পনা করেছি। আমি পুরানকে চিনি, তার সাথে বিপিএল এবং অন্যান্য লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ডানহাতি অফ স্পিনারের বিপক্ষে সে খুব কঠিন একজন ব্যাটার। কিন্তু তাকে সামলানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনা ছিল।”
মাহেদি বাংলাদেশ দলের সাথে এই সফরের স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার ঠিক আগে অংশ নেন গায়ানায় হওয়া গ্লোবাল সুপার লিগে। রংপুর রাইডার্সের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে খেলেন প্রতিটি ম্যাচেই। এই সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে টুর্নামেন্টটি তাকে তাই বেশ সাহায্য করেছে, যা প্রতীয়মান হয় গোটা সিরিজ জুড়ে মাহেদির বোলিংয়েই।
প্রথম ম্যাচে চার ওভারে মাত্র ১৩ রানে নেন ৪ উইকেট, যা এই ফরম্যাটে তার সেরা বোলিং ফিগার। পরের দুই ম্যাচে নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। পাওয়ার প্লেতে নিয়মিতই উইকেট শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের পাওয়ার প্লেতে চাপে ফেলার কাজটা সবগুলো ম্যাচেই করেছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
একবার যখন রান আউট হয়েও নাটকীয়ভাবে ফিরে এসেছিলেন, তখন বোর্ডে ছিল না তেমন রান। জাকের আলি অনিক নিজেও ছিলেন না সেরা ছন্দে। তবে ইনিংসের শেষের দিকে সাম্প্রতিক সময়ে ঝড় তোলা এই ব্যাটার আরও একবার ঠিক সেটাই করেন, যে কাজটা তিনি রপ্ত করে ফেলেছেন দারুণভাবেই। ম্যাচ জেতানো ফিফটি করে জাকের বললেন, শেষের ঝড় তোলার বিশ্বাসটা তার ছিলই।
১৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল মাত্র ৬ উইকেটে ১১৪। জাকের তখন ব্যাট করছিলেন প্রায় ১০০ স্ট্রাইক রেটে। ব্যাটে ছিল না ধার। তবে চার-ছক্কার পসরা সাজিয়ে শেষ চার ওভারে এলোমেলো করে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ফিফটি করা ছাড়াও আলজারি জোসেফের করা ২০তম ওভারে তুলে নেন ২৫ রান, যা বাংলাদেশকে এনে দেয় ১৮৯ রানের বিশাল স্কোর।
ম্যাচ সেরার খেতাব জিতে জাকের বললেন, ডেথ ওভারে রান করার ব্যাপারে শতভাগ বিশ্বাস ছিল তার মাঝে।
“এটা আমার জন্য এটা বেশ চমৎকার একটি সফর ছিল। আজকে আমি সময় নিতে চেয়েছিলাম এবং আমি জানতাম, আমি যদি শেষ পর্যন্ত টিকতে পারি, তাহলে রান করতে পারব। রান আউটে (শামীম হোসেনের সাথে) ভয়ঙ্কর ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, আর এরপর তৃতীয় আম্পায়ার আমাকে ফিরে ডাকেন। ভাগ্য ভালো, আমি এর পর রান করেছি এবং আমি এটা নিয়ে খুশি। এটা পুরোটাই মানসিকতার ব্যাপার। আমি এখানে বিশ্বকাপ খেলেছি এবং তখন ভালো না করলেও এই ফরম্যাটে আমার জন্য সময়টা ভালোই যাচ্ছে।”
জাকের এই ইনিংস সম্ভবই হতো না, যদি তিনি রান আউটই হয়ে যেতেন শেষ পর্যন্ত। তবে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পর আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বদলে তার বদলে রান আউট দেন শামীম হোসেনকে। এরপরই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে ৬টি ছক্কা ও ৩ চারের মারে খেলেন মাত্র ৪২ বলে ৭১ রানের ইনিংস, যা এই ফরম্যাটে এখন জাকেরের সেরা ইনিংস।
জাকেরের ওই ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ বিশাল স্কোর পাওয়ার পর বোলারদের হাত ধরে পেয়েছে ৮০ রানের বড় জয়, যা নিশ্চিত করে ৩-০ তে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।