একজন কোচের মাঠে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাতে হয় অধিনায়কের সাথে। পরিকল্পনা থেকে শুরু করে দল গঠন, সবই অধিনায়কের সাথেই সারতে হয় কোচকে। ফিল সিমন্স অধ্যায় শুরু বাংলাদেশে। মিরপুরের শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে নেমে নতুন কোচ আলোচনা কর নিয়েছেন ক্রিকেটারদের সাথে। সেখানে বাড়তি নজরে ছিলেন বাংলাদেশের তিন ফরম্যাটের কোচ নাজমুল হোসেন শান্ত।
বুধবার সকালে ঢাকায় পা রাখেন ৬১ বছর বয়সী নতুন টাইগার কোচ। হোম অব ক্রিকেটের ড্রেসিংরুমের সামনে এসে ব্যাটিং করতে থাকা লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তদের সাথে আলাপ সেরেছেন, যাকে অবশ্য পরিচয় পর্বই বলাই শ্রেয়। মিরপুরের কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার সাথেও দেখেছেন উইকেট।
এর আগে চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে সরানোর পর এই দায়িত্ব পান সিমন্স। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২৬ টেস্ট ও ১৪৩ ওয়ানডে খেলা সাবেক এই অলরাউন্ডার ২০০২ সালে খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরপর নাম লেখান ক্রিকেট কোচিংয়ে। জিম্বাবুয়ের হারারেতে এক একাডেমির হয়ে কোচিং শুরু, এরপরে বছর দুয়েক পর জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান। ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের কোচ হন তিনি। লম্বা সময় কাজ করেছেন আইরিশদের হয়ে। এরপরে উইন্ডিজকে জেতান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও।
আফগানিস্তানের ব্যাটিং কোচ ও প্রধান কোচও ছিলেন ২০১৭ সালে। ২০১৯ সালে আরেক দফায় ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচের দায়িত্বে, যেটি শেষ হয় ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নানা ভূমিকায় দেখা গেছে ৬১ বছর বয়সী সিমন্সকে।
২২ অক্টোবর ২০২৪, ৯:৪১ এম
আগের দিন উইয়ান মুল্ডার ও কাইল ভেরেইন যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন দ্বিতীয় দিন সকালে। বাংলাদেশ বোলারদের হতাশ করে জুটি বড় হতে থাকল, জুটির পাশাপাশি লিডও ছাড়িয়ে গেল একশ। ক্যাচ মিসও হল কয়েকটি। ম্যাচ যখন ক্রমেই বাংলাদেশের হাত থেকে ছিটকে যাওয়ার পথে, ঠিক সেই সময়েই দুর্দান্ত এক স্পেলে টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে কিছুটা হলেও দলকে লড়াইয়ে ধরে রেখেছেন হাসান মাহমুদ।
এখন পর্যন্ত এই টেস্টে বাংলাদেশ উইকেট নিয়েছে মোট আটটি। যার মধ্যে পাঁচটিই নিয়েছেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশের এই একাদশের একমাত্র পেসার হাসান গতকাল ইনিংসের প্রথম ওভারেই দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন এইডেন মার্করামকে। তবে তিন স্পিনারের আধিপত্যে সেভাবে বোলিংয়ের সুযোগ আর মেলেনি। যাও কিছুটা বোলিং করেছেন, সেই ধার আর বজায় রাখতে পারেননি।
দ্বিতীয় দিন সকালের প্রথম ঘণ্টায় হাসান অবশ্য ভালোই বল করেছেন। তবে উইকেটের দেখা আর পাচ্ছিলেন না। সপ্তম উইকেটে রেকর্ড ১১৯ রানের জুটিতে ক্রমেই যখন বিপজ্জনক হচ্ছিল মুল্ডার ও ভেরেইন, তখনই ফিরতি স্পেলে এসে দলকে ম্যাচে ফেরান তরুণ এই পেসার।
অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে পাঞ্চ করতে গিয়ে স্লিপে সাদমান ইসলামকে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় মুল্ডারের ৫৪ রানের ইনিংস। পরের বলেই ফের আঘাত হাসানের। এবার ইনসাইড-এজের শিকার হয়ে বোল্ড হন কেশভ মহারাজ। তাতে জাগে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। তবে পরের ওভারের প্রথম বলে সেটা আর করতে পারেননি হাসান।
এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৬৭ ওভারে ৮ উইকেটে ২৩৬, লিড ১৩০ রানের। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছিল ১০৬ রানেই।
মিরপুরের সাম্প্রতিক বছরগুলোর যে চেনা উইকেট, সেটারই দেখা মিলেছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্টে। প্রথম দিন থেকে বল নিচ্ছে বড় টার্ন, বোলাররা পাচ্ছেন বেশ সহায়তা। প্রথম দিনেই যেভাবে উইকেট পড়েছে দুই দলের, তাতে এই ম্যাচ যে পাঁচ দিনে গড়াবে না, তা বলাই যায়। আর সেই কারণেই ম্যাচে ফেরার জন্য বাংলাদেশের হাতে সময় খুবই কম। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের লিড যত বাড়বে, ততই জয়ের আশা কমবে স্বাগতিকদের।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ছয় উইকেটের পাঁচটিই তাইজুল নিলেও বাংলাদেশের ইনিংসে চিত্রটা ভিন্নই ছিল। গতিময় পেসার কাগিসো রাবাদা ও মিডিয়াম পেসার উইয়ান মুল্ডার মিলেই ভাগাভাগি করেন ছয় উইকেট। স্পিনারারা নেন বাকি চারটি। অধিকাংশ উইকেটই গেছে বাজে শট খেলে। এক মাহমুদুল হাসান জয় ছাড়া আর কেউই পারেননি ক্রিজে সময় কাটানোর সামান্যতম প্রচেষ্টা চালাতে। তাতে যা হওয়ার তাই হয়েছে, ৭৬ রানে ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় মাত্র ১০৬ রানে।
দিন শেষে তাইজুলও স্বীকার করেছেন, রানটা অনেকে কম হয়ে গেছে। অন্তত ২২০-২৫০ রান করলে তারা ভালো অবস্থান থাকতে পারতেন। তবে প্রশ্ন হল, অন্তত ২০০ রান করার মত ব্যাটিংও কেন করতে ব্যর্থ হল বাংলাদেশ? লো বাউন্স ছিল, স্পিনাররা টার্নও পেয়েছেন, তবে উইকেটের আচরণ এতোটাও ভয়ংকর ছিল না যে এখানে একশ রান করতেই লেজেগোবরে অবস্থা হয়ে যেতে পারে।
চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট না করতে চাওয়ায় টস জিতে আগে ব্যাট নেওয়া বাংলাদেশের সামনে এখন তৃতীয় ইনিংসের মধ্যেই তাই ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আর এর মূল কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার সপ্তম উইকেট জুটি। মুল্ডার (১৭*) ও কাইল ভেরেইন আছেন (১৮*) মিলে এরই মধ্যে যোগ করে ফেলেছনে মহামূল্যবান ৩২ রান। তাইজুলের ফাইফারে প্রটিয়াসদের তাই ১২০-১৩০ রানের মধ্যে আটকে দেওয়ার আশা জাগলেও সেটা আর সম্ভব হয়নি। উল্টো দলটি পেয়ে গেছে ৩৪ রানের লিড। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই উইকেটে এটাই ১০০ রানের সমান লিড। আর রাবাদা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১০০ রানের লিডই যথেষ্ট হবে।
ভয়টা এখানেই বাংলাদেশের। টেনেটুনে যদি কমপক্ষে ৭০-৮০ রানের লিডও পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা, তাহলে এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো ভীষণ কঠিন হয়ে যাবে বাংলাদেশের জন্য। তাইজুলই গতকাল শেষ বিকেলে যে বিশাল টার্ন পেয়েছেন, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনাররাও নিশ্চয়ই মিটিমিটি হেসেছেন বেশ। আর কেশভ মহারাজ তো আছেনই, যিনি এই উইকেটে রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টি করতে সক্ষম।
দ্বিতীয় দিন সকালে তাই বাংলাদেশের লক্ষ্য একটাই, যত দ্রুত সম্ভব মুড়িয়ে দিতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। লিডটা ৫০ রানের মধ্যে রাখতে পারলে সেটা হবে মন্দের ভালো। এরপরও ম্যাচ জেতার প্রেক্ষাপট গড়তে দ্বিতীয় ইনিংসে করতে হবে দারুণ কিছু। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং অবশ্য সেই আশা দেখাতে পারছে না। দ্বিতীয় দিনে ব্যাটে-বলে ভিন্ন কিছু দেখাতে পারবেন তো শান্ত-তাইজুলরা?