২৮ অক্টোবর ২০২৪, ৪:৩৯ পিএম
৮৩, ৯৫*, ৫২, ৮৩, ৫৫* - ইমার্জিং এশিয়া কাপ ২০২৪-এ পাঁচ ম্যাচে আফগানিস্তান ব্যাটার সেদিকুল্লাহ অটলের স্কোর ছিল ঠিক এমনটাই। ২০ ওভারের ক্রিকেটে এমন ধারাবাহিকতা বড় বড় তারকা ব্যাটারদের জন্যও বিশাল ব্যাপার বলেই ধরা হবে। সেখানে তরুণ এই ক্রিকেটার ম্যাচের পর পর যেভাবে পরিণত ব্যাটিং করেছেন, দলের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাটিং করে জিতিয়েছেন, সেটা তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে রাতারাতি উঠতি তারকা হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। আর তার এমন ব্যাটিং বড় আশা যোগাবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দল রংপুর রাইডার্সকে, যারা সেদিকুল্লাহকে আসছে আসরের জন্য এরই মধ্যে দলে টেনেছে।
বিপিএলের ১১তম আসরের জন্য প্লেয়ার ড্রাফট ও তার আগে যে দল সাজিয়েছিল রংপুর রাইডার্স, সেটা যথেষ্ট শক্তিশালীই ছিল। দেশী-বিদেশী বড় কয়েকজন তারকাই খেলবেন দলটিতে। তবে সদ্য শেষ হওয়া ইমার্জিং এশিয়া কাপ চলাকালীন সম্ভবত টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা সাইনিংটিই করিয়ে ফেলেছে রংপুর। আফগানিস্তানের তরুণ ওপেনার সেদিকুল্লাহ পুরো আসরে যেভাবে ব্যাটিং করেছেন, তাতে তার মাঝে দেখা হচ্ছে আগামীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। স্বাভাবিকভাবেই এটা দারুণ খবর রংপুরের জন্যও।
গত কয়েক বছরে আফগান ক্রিকেট থেমে উঠে আসছে একের পর এক তরুণ ও সম্ভাবনাময় ব্যাটার। তাদেরই একজন সেদিকুল্লাহ। ইমার্জিং এশিয়া কাপের আগে অবশ্য তাকে নিয়ে সেভাবে আলোচনা ছিল না। তবে বড় মঞ্চই তো একজন খেলোয়াড়ের জন্য নিজেকে মেলে ধরার সেরা সুযোগ। আর সেটা কি দারুণভাবেই না কাজে লাগিয়েছেন সেদিকুল্লাহ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সবচেয়ে কঠিন কাজ, অথচ প্রতিটি ম্যাচেই হেসেছে তার ব্যাট, এসেছে বড় বড় স্কোর। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও।
সেদিকুল্লাহর সবচেয়ে বড গুণ হল পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারার দক্ষতা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচ খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটার প্রয়োজনে ১৫০ স্ট্রাইক রেটে যেমন ব্যাট করতে জানেন, আবার ১০০ স্ট্রাইক রেটেও দলের জয়ে রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অর্থাৎ, মারমুখী বা ধরে খেলা, ২৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার দুটিই রপ্ত করে ফেলেছেন সুচারুভাবে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচই ধরা যাক। ১৬৫ রানের টার্গেটে আফগানিস্তানের ব্যাটাররা যেভাবে কেউই রান করতে পারছিলেন না। তবে একপ্রান্ত আগলে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলটির জয়ের আশা টিকিয়ে রাখেন সেদিকুল্লাহ। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৫৫ বলে তার অপরাজিত ৯৫ রানের ইনিংসে পাঁচ বল হাতে রেখেই জিতে যায় আফগানরা। বাঁহাতি এই ব্যাটার ইনিংস সাজান ৯টি চার ও ৫ ছক্কায়। কয়েকটি ছক্কা তো গিয়ে পড়ে গ্যালারিতে।
আবার শ্রীলঙ্কার বিপক্কে ফাইনালে সম্পূর্ণ ভিন্ন রুপে হাজির হন সেদিকুল্লাহ। লো-স্কোরিং উইকেটে টার্গেট ছিল ১৩৪। এমন রান তাড়ায় প্রয়োজন বাজে বলে রান বের করে চাপ তৈরি না হতে দেওয়া। তরুণ এই ব্যাটার ঠিক সেই কাজটাই করেছেন। অনর্থক বড় শট খেলার চেষ্টা করেননি। দলকে চ্যাম্পিয়ন করানোর পথে খেলেন ৫৫ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৫৫ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস।
ঠিক এই ইনিংসের কারণেই আসছে বিপিএলে রংপুরের তুরুপের তাস হতে পারেন সেদিকুল্লাহ। কারণ, ২০ ওভারের ক্রিকেটে যেমন দরকার, সেই আগ্রাসী ব্যাটিং তিনি করতে পারেন ভালোই। তবে বিশেষ করে মিরপুরের উইকেটে হওয়া ম্যাচ, সেখানে গড়ে ১৪০-১৬০ রানের স্কোরই জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়, সেখানে সেদিকুল্লাহর এমন ধরে খেলার স্কিল বেশ কাজে লাগবে।
এছাড়াও রংপুরের জন্য প্লাস পয়েন্ট হতে পারে সব ঠিক থাকলে সেদিকুল্লাহর পুরো আসরের জন্য পাওয়ার বিষয়টি। গত আসরে পাকিস্তান তারকা বাবর আজম কয়েকটি ম্যাচে দারুণ খেললেও এরপর তিনি চলে গেলে ওপেনিং নিয়ে ভালোই সমস্যায় পড়ে যায় দলটি। এবার সেদিকুল্লাহ পুরো আসর খেলতে পারলে একজন ওপেনার নিয়ে স্থায়ীভাবেই হয়ত চিন্তার অবসান হবে একবারে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন রংপুরের।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ৪৩ ম্যাচে ১৩১.১৭ স্ট্রাইক রেট ও ৩৬.৮৬ গড়ে ১ হাজার ৪০৬ রান করেছেন সেদিকুল্লাহ। ফিফটি করেছেন ১২টি। যা বলে দেয়, এই ফরম্যাটে বড় স্কোর ভালোই আসছে তার ব্যাট থেকে।
এবারই প্রথম বিদেশী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলতে যাওয়া সেদিকুল্লাহ তাই রংপুরের ওপেনিংয়ের পাশাপাশি পুরো দলের চিত্রই বদলে দিতে পারেন অনেকটাই। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নরা চাইবে, যেন ইমার্জিং এশিয়া কাপের ফর্মটাই ধরে রাখতে পারেন বিপিএলেও।
এক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জলঘোলার মধ্যে নতুন করে শাস্তি পেলেন তাওহীদ হৃদয়। খেলোয়াড় এবং খেলোয়াড় সাপোর্ট স্টাফদের জন্য বিসিবি আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে মোহামেডানের এই ব্যাটারকে। ফলে বসুন্ধরা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট ক্রিকেট লিগে (ডিপিডিসিএল) তাকে চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত ২৬ এপ্রিল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ম্যাচে মোহামেডান অধিনায়ক তাওহীদের বিরুদ্ধে অন-ফিল্ড আম্পায়ার মনিরুজ্জামান টিঙ্কু এবং আলি আরমান রাজন, তৃতীয় আম্পায়ার মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং চতুর্থ অফিসিয়াল এটিএম ইকরাম আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে মতবিরোধ দেখানোর অভিযোগ আনেন।
রোববার বিসিবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাওহীদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং শুনানিতে নিজের পক্ষ সমর্থনের কথা বলেন। তবে আগে জানানো হলেও তিনি আম্পায়ারদের ড্রেসিংরুমে নির্ধারিত শুনানিতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হন।
ফলে ডিপিডিসিএল ২০২-২৫ এর আচরণবিধির ধারা ৫.২.৬ অনুসারে ম্যাচ রেফারি আখতার আহমদ তাওহীদে দোষী সাব্যস্ত করে দশ হাজার টাকা জরিমানা এবং একটি ডিমেরিট পয়েন্ট দেন।
এই ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ হওয়ার ফলে সব মিলিয়ে তাওহীদের ডিমেরিট পয়েন্ট হয়েছে ৮। এর ফলে তাকে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিসিবি, যা কার্যকর হবে এই আসর থেকেই। ফলে জাতীয় দলের এই ব্যাটার মিস করবেন ২৯ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচ।
উল্লেখ্য, চলতি মাসেই একবার আম্পায়ারের সাথে তর্কে জড়িয়ে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তাওহীদ। পরে সেটা নেমে আসে এক ম্যাচে। খেলেন দুই ম্যাচ। এরপর ফের এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হলে ক্রিকেটারদের প্রতিবাদের পর বিসিবি বাকি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে এক বছরের জন্য।
নানা কারণেই গত কয়েক মাসে ক্রমেই পথ হারাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। মাঠের বাইরের একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার সাথে মাঠের চিত্রটাও আশা জাগানিয়া নয়। দর্শকরাও যেন ক্রমেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এসবের মধ্যে যোগ হয়েছে জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্টে বিব্রতকর হার। সময়টা কী আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটের জন্য? জাকের আলি অনিকও সেটা মেনে নিচ্ছেন। তবে এটাও মনে করিয়ে দিলেন, ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে খারাপ সময় পেছনে ফেলা সম্ভব।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বাংলাদেশ জাতীয় দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ নিয়ে। বেসরকারি কোনো চ্যানেল সিরিজটি দেখাতে আগ্রহ না দেখানোয় বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দারস্থ হয়েছে সরকারি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনের। সিলেটে প্রথম টেস্ট দেখতে চারদিনের একদিনেও চোখে মেলেনি দর্শকদের তেমন সাড়া। সেই ম্যাচেই আবার তিন উইকেটে হেরে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের ওপর চাপ যেন বেড়ে গেছে আরও। আর ক্রিকেটের জোয়ারেও যেন বইছে ভাঁটা।
দ্বিতীয় টেস্টের আগের সংবাদ সম্মেলনে শনিবার জাকের অবশ্য শোনালেন ইতিবাচক কথাই।
“আমাদের ভালো পারফরম্যান্স করা উচিত। ভালো পারফরম্যান্সের ওপর তো আর কিছু নেই। আমাদের সবারই তাই লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলা। যেহেতু সিনিয়র ক্রিকেটাররা চলে যাবেন, তাই তরুণদের মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগতেই পারে। আমি মনে করি এটা ঠিক হতে কিছুদিন সময় লাগবে। এটা সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন
তামিমদের আপত্তির পর স্থগিত হল তাওহীদের শাস্তি |
![]() |
৯৫ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মুশফিকুর রহিম বাদে বেশ তরুণ একটা দল নিয়েই এই সিরিজে খেলছে বাংলাদেশ। কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বিদায়ের ফলে ক্রমেই দলে বাড়ছে তারুণ্যের ভিড়। আর তাদের মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনাময় ও ধারাবাহিক পারফর্মারদের একজন জাকের। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই খেলেছেন লড়িয়ে ইনিংস। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে বোলার হাসান মাহমুদকে অতিরিক্ত বল (৫৮) খেলানোর কারণে কিছুটা সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাকে।
তবে কাজটা কেন করেছেন, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে এই কিপার-ব্যাটারের।
“(দ্বিতীয় ইনিংসে) ৭ উইকেটে চলে যাওয়া মানে আমাদের হাতে আরও তিনটা উইকেট আছে। আমরা যেহেতু টার্গেট দিচ্ছিলাম, তাই প্রতিটি রানই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেখেন, হাসান কিন্তু ৫৮ বল খেলেছে। আমাদের মধ্যে ৩৭ রানের একটা জুটি হয়েছে। এই রান যদি হাসান একাই করত, তাহলে আমার সমস্যা নেই। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ম্যাচটা বড় করার, যতদূর সম্ভব টেনে নেওয়ার। চেষ্টা করেছি, হয়নি আসলে।”
টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছয় থেকে আট নম্বর পজিশনে খেলতে হচ্ছে জাকেরকে। ফলে প্রায় নিয়মিতভাবেই তাকে ইনিংস টেনে নিতে হচ্ছে স্বীকৃত ব্যাটারদের ছাড়াই আর বোলারদের সঙ্গী করে। ফলে কয়েকবারই হারাতে হয়েছে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ।
আরও পড়ুন
প্রায় ৩ বছর পর টেস্ট দলে বিজয় |
![]() |
তবে ব্যক্তিগত এসব অর্জন নিয়ে আক্ষেপ নেই জাকেরের।
“ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আমি এভাবে ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত। ঘরোয়াতেও আমি ৬-৭ নম্বরে ব্যাট করেছি। তাই টেল এন্ডারদের নিয়ে খেলার অভ্যাস আমার আগেও ছিল। এই কারণেই কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমার সেঞ্চুরি করতে পাঁচ বছর লেগে গেছে। তাই এসব হবেই। এই কঠিন দিকগুলো সামলেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন মোড়। বসুন্ধরা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য প্রথমে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন তরুণ এই ব্যাটার। পরে সেটা কমে আসে এক ম্যাচে। এরপর আবার সেটা জারি করার সিদ্ধান্ত নিলে আপত্তি জানান তামিম ইকবাল সহ ক্রিকেটাররার। সেটার জেরে শেষ পর্যন্ত তাওহীদের শাস্তি আপাতত স্থগিত করেছে বিসিবি। ফলে এই মৌসুমে আর নিষেধাজ্ঞা থাকছে না মোহামেডানের এই ব্যাটারের।
এর পরিবর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে তাওহীদে শাস্তি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। অর্থাৎ, আগামী বছরের ডিপিএলের প্রথম ম্যাচে বাকি এক ম্যাচের শাস্তি ভোগ করবেন তিনি।
আরও পড়ুন
প্রায় ৩ বছর পর টেস্ট দলে বিজয় |
![]() |
গত ১২ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকতের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তাওহীদ। সেখানেই থেমে না থেকে এরপর সংবাদ সম্মেলনেও আম্পায়ারকে আক্রমণ করে বসেন। সেই কারণে তাকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করে বিসিবি।
তবে এরপর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আপিল করে মোহামেডান। এরপর নাটকীয়ভাবে এক ম্যাচে নামিয়ে আনা হয় শাস্তির মেয়াদ। এরপর বিসিবির চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিসিবিকে জানান বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র এলিট আম্পায়ার।
সেটার প্রেক্ষাপটে শাস্তি কাটিয়ে দুই ম্যাচ খেলে ফেলা তাওহীদের নিষেধাজ্ঞা ফের দুই ম্যাচে নিয়ে যায় বিসিবি, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল মোহামেডানের পরবর্তী ম্যাচেই। তবে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে শুক্রবার বিসিবি কার্যালয়ে মিটিংয়ে বসেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার তামিম ইকবাল সহ ডিপিএলের অন্য দলের অনেক খেলোয়াড়রা।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা সেই মিটিংয়ের পর তামিম সরাসরি তাওহীদের ওপর আরোপিত দ্বিতীয় মেয়াদে শাস্তি নিয়ে আপত্তি তোলেন। তার মতে, যেহেতু বিসিবি একবার শাস্তি কমিয়েছে, ফলে দুই ম্যাচ খেলার পর আবার শাস্তি দেওয়াটা হাস্যকর ঘটনা। পাশাপাশি এও বলেন, এটা কোনো প্রক্রিয়া মেনে দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ, নিজেদের দোষে বাদ পড়ার হতাশায় ক্যারিবিয়ানরা |
![]() |
এর খানিক বাদে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিসিবি জানায় তাওহীদের শাস্তি স্থগিতের খবর।
“গত ১৯ এপ্রিল আম্পায়ার্স কমিটির ইস্যুকৃত শাস্তি বাতিলের সেই সিদ্ধান্তের পরবর্তী আদেশ অকার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির পর সভা হয়েছে, যেখানে বিষয়টি আবারও বিবেচনায় নিয়ে ম্যাচ নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি। যা কার্যকর হবে ১২ মাস পর।”
আইসিসি টেস্ট ফান্ডের রেভিনিউ শেয়ারিং মডেল প্রবর্তিত হওয়ায় ২০১৯ সালের মে থেকে বদলে গেছে আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামের (এফটিপি) সূচি। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে থাকা শীর্ষ ৯টি দেশকে নিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ প্রবর্তনের পরিকল্পনা গৃহিত হওয়ায় পর পর দুটি ৪ বছর মেয়াদী এফটিপি চক্রে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরে থাকা তিনটি দল জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডের সাথে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৯ টি দলের দ্বি-পাক্ষিক টেস্ট সিরিজ খেলা বাধ্যতামূলক নয়।
মূলত সেই কারণেই এফটিপির সর্বশেষ চক্রে (২০১৯-২০২৩ সালের এপ্রিল) জিম্বাবুয়ে এবং টেস্ট ক্রিকেটের নবাগত আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে টেস্টে এড়িয়ে চলেছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষস্থানীয় দলগুলো। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলমান চক্রেও (২০২৩-২৭) একই পথে হাঁটছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হয়ে থাকা দলগুলোর অধিকাংশই।
আইসিসির এফটিপি এখন দ্বি-পাক্ষিক সূচিতে পরিণত হওয়ায়, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জিম্বাবুয়ে,আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে আগ্রহী নয় অধিকাংশ টেস্ট দল। অথচ, আইসিসির এফটিপির বিগত চক্রের মত চলমান এফটিপিতেও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তিন ফরম্যাটের ম্যাচের সিরিজ খেলতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিসিবি। চলমান চক্রে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট খেলা থেকে বিরত থেকেছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে জিম্বাবুয়ের টেস্ট উন্নতিতে সহায়কের ভুমিকায় নিউ জিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এফটিপির চলমান চক্রের চার বছরে জিম্বাবুয়ে ১৮টি টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪টি। এর বাইরে এফটিপির বর্তমান চক্রে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে ৮টি ওডিআই এবং ৮টি টি-টোয়েন্টিও খেলার সুযোগ পাচ্ছে।
তিন ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড তুলনামূলক ভালো। চলমান সিরিজের আগে ১৮টি টেস্টে ৮-৭-এ এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। মুখোমুখি ৮১টি ওডিআই ম্যাচে ৫১টি জয়ের বিপরীতে ৩০টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। দুই দলের ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচে ১৮-৭-এ এগিয়ে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এক সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে অবদান রাখা জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
সেই কারণেই জিম্বাবুয়ে দলকে আতিথ্য দেয়াকে একটা রেওয়াজে পরিণত করেছে বিসিবি।
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্টে জয়-পরাজয় আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান নড়চড় করবে না। শুধু তা-ই নয়, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। হোমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ৩টি দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ আয়োজনে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বিসিবি।
অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ২ টেস্ট এবং ৩ ওডিআই ম্যাচের সিরিজ আয়োজন করে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭১ হাজার ৩২৫ টাকা ভর্তুকী দিয়েছে বিসিবি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ২ টেস্ট, ৩ ওডিআই এবং ২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজ আয়োজনে অবশ্য ভর্তুকী গুনতে হয়নি। সেই দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৭ টাকা মুনাফা করতে পেরেছে বিসিবি। তবে যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ২০২৪ সালের এপ্রিলে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে জিম্বাবুয়েকে আতিথ্য দিয়ে নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বাধীন বোর্ড বড় অঙ্ক ভর্তুকী দিয়েছে। প্রচারসত্ব থেকে প্রত্যাশিত অর্থ আয়ের পরও ভর্তুকীর অঙ্ক ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৫ টাকা!
এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রচারসত্ব বিক্রি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ভর্তুকীর অঙ্কটা কোথায় দাঁড়ায়, সেই হিসাবটা জানা যাবে সিরিজ শেষেই।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিয়ে শুধু আর্থিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না বিসিবি, টেস্টে নীচের সারির দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরমেন্স নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেককে স্মরণীয় করতে চেয়ে জিম্বাবুয়েকে আতিথ্য দিয়ে চরম শিক্ষা পেয়েছিল বিসিবি। পূর্ণশক্তির বাংলাদেশ দল ১৫১ রানে হেরেছে সেই টেস্ট। সাড়ে ছয় বছর পর সেই সিলেটে ফিরতি টেস্টেও লজ্জা দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে ৩ উইকেটে।
আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামের (এফটিপি) চলমান চক্রের (২০২৩-২৭) সূচি চূড়ান্ত হয়েছে অনেক আগে। বিসিবির পদচ্যুত সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আমলে। সে কারণেই এফটিপির পরবর্তী সূচি (২০২৭-৩১) চূড়ান্ত হওয়ার আগে সতর্ক হওয়ার পক্ষে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম, “ওদের সাথে খেলে উন্নতি হবে কিংবা সিরিজ আয়োজন করা লাভজনক হবে, এমন তো নয়। জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট সিরিজ এড়াতে পারলে ভালো হতো। আইসিসির পরবর্তী এফটিপির আগে কীভাবে প্লান করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।”
একদিন আগেই শেষ হওয়া প্রথম টেস্টের ঘন্টাখানেক বাদেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে৷ দলের উল্লেখযোগ্য নাম অভিজ্ঞ ওপেনার এনামুল হক বিজয়, যিনি তিন বছর পর ডাক পেয়েছেন টেস্ট দলে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজের শেষ ম্যাচের বাংলাদেশ স্কোয়াডে আরেকটি পরিবর্তন অবশ্য অনিবার্যই ছিল। পিএসএল খেলতে যাওয়া পেসার নাহিদ রানার জায়গায় এসেছেন স্পিনার তানভীর ইসলাম।
টেস্ট দলে ডাক পাওয়া বিজয় পুরষ্কার পেলেন চলমান বসুন্ধরা ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট লিগে অসাধারণ ফর্ম দেখিয়ে। সম্প্রতি স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে ৫০টি সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
টেস্টে অবশ্য বিজয়ের পরিসংখ্যান খুব আশা জাগানিয়া নয়। ৫ টেস্টে ১০ গড়ে রান মাত্র ১০০, নেই কোনো ফিফটি। শেষবার লাল বলের ক্রিকেটে তাকে দেখা গিয়েছিল ২০২২ সালের জুনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
আর তানভীর এখনও আছেন টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের।
আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতেছে জিম্বাবুয়ে।
দ্বিতীয় টেস্টের বাংলাদেশ স্কোয়াড :
নাজমুল হোসাইন শান্ত (অধিনায়ক), মাহমুদুল হাসান জয়, শাদমান ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, মমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহিদুল ইসলাম, জাকের আলি আনিক, মেহেদি হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব।
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
১০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে