পাকিস্তান টস জিতে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ভারতকে। বাবর আজম হয়তো চেয়েছিলেন নিজের পেসারদের দিয়ে ম্যাচের শুরুতেই ভারতকে চেপে ধরতে। তবে পাকিস্তানের সেই পরিকল্পনা খুব একটা সফল হতে দেননি ভারতের দুই ওপেনার।
ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা শুরুটা করেছেন দেখে শুনে। অন্যদিকে ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী শুভমান গিল। শাহীন শাহ আফ্রিদি কিংবা নাসিম শাহদের উল্টো আক্রমণ করেছেন গিল। ব্যাট হাতে এই গিলকে আটকানোর পথ খুঁজে পায়নি পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে আবারো বৃষ্টির বাধা
ফলে পাওয়ার প্লে টা দুর্দান্তই কেটেছে ভারতের। প্রথম ১০ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়েই তাঁরা তুলে নিয়েছে ৬১ রান। প্রেমাদাসার উইকেটে যা বেশ ভালো শুরুই বলা যায়।
এবারের এশিয়া কাপে এই নিয়ে দ্বিতীয় অর্ধশতকের দেখা পেলেন গিল। এর আগে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচেও ৬৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি। তবে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটায় অবশ্য রানের দেখা পাননি তিনি সেদিন আউট হয়েছিলেন মাত্র ১০ রান করেই।
তবে শুভমান গিল আজ সেই আক্ষেপ মিটিয়েছেন। সুপার ফোরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে শুরু থেকে জ্বলে উঠেছে তাঁর ব্যাট। নিজের অর্ধশতক তুলে নিতে খেলেছেন মাত্র ৩৭ বল।
রোহিতকে নিয়ে অবশ্য আরো বড় স্কোরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন শুভমান। তাঁর ব্যাটে চড়েই বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছে ভারত।
২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ পিএম
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ৬:৫৯ পিএম
লামিন ইয়ামাল যখন মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্পেনের হয়ে ইউরো জিতলেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল মজার সব ‘মেমে’। যেখানে বলা হত, ইয়ামাল ১৬ বছরে এটা করছেন, আর অন্য ১৬ বছর বয়সীরা তখন ফিফা গেমস খেলেই সময় পার করতে ব্যস্ত। তবে ১৪ বছর বয়সী বৈভব সুরিয়াভানসি যেহেতু উপমহাদেশের একজন, তাই আইপিএলে তার তাক লাগানো ব্যাটিং দেখে মেমেতে চলে আসছে এই বয়সে অন্য বালকদের মার্বেল খেলার গল্প। স্থান, কাল ভেদে এভাবেই একই চিত্রের উদাহারনও বদলে যায়। তবে মিল থাকে একটাই, এই অল্প বয়সেই এমন জেনারেশনাল ট্যালেন্টদের পরিণতবোধ।
এর আগে একটু বয়সের আলোচনায় যাওয়া যাক। উপমহাদেশের ক্রিকেটারেরদের বয়স নিয়ে বেশ আগে থেকেই থেকে যায় একরকম ধোঁয়াশা। কোনটা আসল বয়স, আর কোনটা যে স্রেফ সার্টিফিকেট বয়স, তা নিয়ে পুরো ক্যারিয়ারেই তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যেমন ধরুন সাবেক পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদির কথা। ১৮-তে পা দেওয়ার আগেই সেই সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড তিনি গড়েন, সেই সময়েই তার আসল বয়স ২২ বা তার চেয়েও বেশি বলে জোর গুঞ্জন।
হাল সময়ের আফগান মহাতারকা রশিদ খান তো আরেক জলন্ত উদাহারন। অফিশিয়ালি সব জায়গায় তার বয়স ২৬ দেখালেও আসল বয়সটা যে প্রায় ৩০ ছুঁইছুঁই বা তার চেয়েও বেশি, সেটা তার ভিন্ন ভিন্ন সাক্ষাৎকারে দেওয়া কথা শুনলেও আন্দাজ করা যায়। এছাড়া উপমহাদেশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে নির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে অনেক বেশি বয়সের খেলোয়াড়দের নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও হয় অহরহ।
আর ঠিক এই কারণেই ভারতের অমিত প্রতিভাবান ব্যাটার সুরিয়াভানসির অফিশিয়াল বয়স ১৪ বছর বলা হলেও তা নিয়ে বেশ আগে থেকেই চলছে আলোচনা। বিশেষ করে আইপিএলে অভিষেকের পর থেকে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আইপিলের মত তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার একটি টুর্নামেন্টে রাজস্থান রয়্যালসের মত একটি দলে তিনি যখন জায়গা পেয়ে যান, অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন তাতে বেশ। তবে যারা ভারতীয় ক্রিকেটের টুকটাক খোঁজ খবর রাখেন, তারা জানতেন, এমন কিছু হওয়াটাই বরং স্বাভাবিক।
নাহ, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স এখানে মূল বিষয় নয়। সেটা সুরিয়াভানসির ক্ষেত্রে এখনও খুব হাইলাইট করার মত জায়গা নয়। তবে যা আলোচ্য বিষয়, তা হল তিনি এই বয়সেই ভারতের অ-১৯ দলে খেলছেন। মাত্র ১২ বছর বয়সেই হয়ে গেছে রঞ্জি অভিষেক। গত জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছেন মাত্র ৫৮ বলের সেঞ্চুরি, যা যুব টেস্টের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম। এসব বলে দেয়, বিশাল স্কোর বা এসবের রেকর্ডের চেয়েও বালক বয়সেই সুরিয়াভানসি পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছেন তার পরিণতবোধ এবং আধুনিক ক্রিকেটের ব্যাপক পরিচিত শব্দ ‘ইন্টেন্ট’-এর জন্য। ফরম্যাট যাই হোক, প্রথম বল থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংটা তিনি করতে জানেন ক্লাসিক্যাল ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞা ধরে রেখেই।
আর সেই কারণেই গেল বছর আইপিলের মেগা নিলামের সময় মাত্র ১৩ বছর বয়সী সুরিয়াভানসির নাম আসতেই একটা কাড়াকাড়ি লেগে যায়। রীতিমত যুদ্ধ করে তাকে দলে নেয় রাজস্থান। দলটির মেন্টর ও সাবেক ভারত অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় প্রতিভা চেনা এবং তা ঘষামাজা করার কাজটা করেন বেশ ভালো। তিনি নিলামের আগে সুরিয়াভনসিকে ট্রায়ালে দেখেই বলেছিলেন, এই ছেলের মাঝে অবিশ্বাস্য স্কিল আছে।
তবে রঞ্জিতে, অ-১৯ দলে এবং আইপিএলে খেলার জন্য সুরিয়াভানসির মানসিকভাবে ভীষণ পরিণতবোধ রেখেছে বড় একটা ভূমিকা। তার জন্মের আগে থেকে ক্রিকেট খেলা আন্তর্জাতিক মানের বোলারদের যেভাবে পেটাচ্ছেন প্রথম বল থেকেই, সেটিকে আপনি ‘ঝড়ে বক’ এর মধ্যে চাইলেও ফেলতে পারবেন না। কোন বলটিকে কোথায় মারতে হবে, কোন বোলারকে শুরুতেই আক্রমণ করে চাপে ফেলে দিতে হবে, এই বিষয়গুলো ব্যাটাররা রপ্ত করেন খেলতে খেলতে, অভিজ্ঞতায় রিদ্ধ হয়ে।
তবে আপনি যদি হুট করে এই আইপিএলে সুরিয়াভানসির ব্যাটিং দেখেন, বলতে বাধ্য হবেন এই ছেলে নিশ্চয় কয়েক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলেছে। মাথাটা ঠিক সেভাবেই যে কাজ করে তার। সাবেক ভারত ওপেনার ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জারেকার যেমন বলেছেন,
“বয়সটা মাত্র ১৪ হলেও সুরিয়াভানসি চিন্তা করে একজন ৩০ বছর বয়সীর মত।”
গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই তাই ভারতীয় ক্রিকেটে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন সুরিয়াভানসি। আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচের প্রথম বলেই যে হাঁকিয়েছেন বিশাল এক ছক্কা। তবে আপনি যত বড় প্রতিভাবানই হন না কেন, মাত্র ১৪ বছর বয়সে যখন আপনার মার্বেল বা ইয়ামালদের মত ফিফা গেমস খেলার কথা, তখন আপনাকে আইপিএলের মত অবিশ্বাস্য কঠিন মঞ্চে নামিয়ে দেওয়া যায়… এটা একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি তখনই ভাবতে পারে, যখন আপনি প্রমাণ করতে পারেন অন্যদের চেয়ে নিজের বয়সের তুলনায় ঢের এগিয়ে থাকার সামর্থ্য।
সুরিয়াভানসি নিশ্চয় নেটে এবং অনুশীলনেও রাজস্থানকে এটা বোঝাতে পেরেছিলেন যে, তার ওপর বাজিটা ধরা যায়। প্রথম কয়েক ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা পেলেও বড় ইনিংস অবশ্য হচ্ছিল না। সাবেক ভারত ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ তাই আশঙ্কা করে বলেও ফেলেছিলেন, এক বছরের ঝলক দেখিয়ে অতীতের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের মত না আবার হারিয়ে যান সুরিয়াভানসি।
তবে তার মত প্রতিভারা তো প্রতিদিন আসেন না। এই কারণেই অন্যদের সাথে সুরিয়াভানসিদের মেলানো যায় না। শেবাগকে ভুল প্রমাণ করে তাই গুজরাটের বিপক্ষে রান তাড়ায় খেললেন বড় ইনিংস। সেটাও টর্নেডো গতিতে। ৭ চার ও ১১ ছক্কায় মাত্র ৩৮ বলে ১০১ রান করার পথে হয়েছেন আইপিলের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান। আর বয়সের হিসেবে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টির ইতিহাসের কনিষ্ঠ সেঞ্চুরি করা ব্যাটারের নাম এখন সুরিয়াভানসি। পুরো ইনিংসে যে দাপট দেখিয়েছেন, ব্যাট সুইং করেছেন, স্লগ করেছেন, নিখুঁত টাইমিং দেখিয়েছেন, তা অতিমানবীয় কিছুই ছিল।
হ্যাঁ, এই ইনিংস খেলার পথে বেশ কিছু শটে ভাগ্যের সহায়তাও তিনি পেয়েছেন। অল্পের জন্য ক্যাচ আউট হতে পারতেন কয়েকবারই। তবে এটাই তো ক্রিকেট। আর ভাগ্য তো সাহসীদের পক্ষেই থাকে। আর সুরিয়াভানসি সেই সাহসের শিক্ষাটা পেয়েছেন পরিবার থেকেই। ভারতীয় মিডিয়ার খবরে যা এসেছে, তাতে জানা যায় তার বাবা একজন কৃষক ও পার্টটাইম সাংবাদিক ছিলেন।
তবে ছেলের ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসাকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য তিনি কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, যা সুরিয়াভানসি নিজেই বলেছেন। নিয়ম করে ছেলেকে অনুশীলন করতে নিয়ে যাওয়া, অপেক্ষা করে বসে থাকার কাজটা তিনি করে গেছেন। বিহারের মত জায়গার একটা দরিদ্র পরিবারের জন্য এটা অনেক বড় একটা ঝুঁকি। তবে সন্তানের মঙ্গলের জন্য বাবারা তো হরমেশাই এমন ত্যাগ স্বীকার করেই থাকেন…
অবশ্য তিনি সেই সাহসটা করতে পেরেছিলেন বড় ছেলের জন্য, যিনি ভাইয়ের স্বপ্নকে লালন করে দায়িত্ব নেন পরিবারের। নেমে যান আয় উপার্জনে। বাবা-ভাইয়ের এমন অবদানে আড়াল করার সুযোগ নেই সুরিয়াভানসির মায়ের গল্প। দিনের পর দিন তিনি মাত্র তিন ঘণ্টা করে ঘুমিয়েছেন, রাত ২টায় যখন সবাই ঘুমে কাতর, তখন উঠে ছেলের জন্য খাবার প্রস্তুত করতে নেমে গেছেন, যাতে ভোরে ছেলেটা বের হওয়ার আগে সময় মত খাবারটা টেবিলে পায়…
সুরিয়াভানসির মা-বাবা, ভাই তার জন্য এসব যখন করেছেন, তখন তাদের কল্পনাতে ছিল না আজকের দিনের চিত্রটা। হয়ত ছিল। তবে সেখানে যে ছিল স্বপ্ন বাস্তবে রুপ হওয়ার চিন্তাও। এসবের পরও তারা একটি বালকের স্বপ্নকে পরিবার হিসেবে ধারণ করেছেন, সাহস করেছেন একসাথে এগিয়ে যাওয়ার।
কাছ থেকে দেখার কারণে সেই সাহসটা সুরিয়াভানসির মধ্যেও অনুদিত হয়ে গেছে। ফলে, দুনিয়ার বাঘা বাঘা বোলারদের বিপক্ষে মাঠ ভর্তি দর্শকের চাপেও তিনি ভেঙে পড়েন না। চোখে চোখ রেখে তাদের উল্টো আক্রমণ করেন, চার-ছক্কায় ওড়ান বারবার। নামও তাই জুটে গেছে 'বেবি বস'! ভবিষ্যৎ তাকে কোথায় নিয়ে যায়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই আইপিএলে সুরিয়াভানসি দেখিয়ে দিয়েছেন, স্রেফ বয়সের দাঁড়িপাল্লায় যদি মাপতে যান, তাহলে বড্ড ভুলই করবেন বোলাররা। সেটা আজকেও, আগামীতেও…
গত বছর হয়ে যাওয়া জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের রেশ পড়েছে আবাহনী লিমিটেড ক্লাবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে আবাহনীর সাফল্যে এতোটাই ক্ষুব্ধ হয়েছে প্রতিপক্ষ সমর্থকরা যে, সরকার পতনের পর ক্লাব ভবনের শোকেশে সাজানো ট্রফিগুলো লুট করে নিয়েছিল দুবৃত্তরা! আবাহনী ক্রিকেট দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড জন-আক্রোশে পড়ায় এবং এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান কারাবন্দি হওয়ায় ক্রিকেট টিম গঠন নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়তে হয় আবাহনীর পরীক্ষিত সংগঠকদের।
গতবার যেখানে আবাহনীতে ছিল তারকার সমাবেশ, সেখানে এবার জোড়াতালি দিয়ে একটা মিডিওকার দল তৈরি করাই ছিল এক ধরণের চ্যালেঞ্জ। অথচ, আবাহনী ক্রিকেট কমিটির দায়িত্ব নিয়ে পরিচালক তানভীর মাজহার তান্না, শেখ বশির আল মামুন এবং ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব ফিরে পাওয়া জি এস হাসান তামিম আবাহনী সমর্থকদের করেছেন চাঙ্গা। সর্বশেষ আসরে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বাজেটের টিমের চ্যাম্পিয়নশিপে ছিল কলঙ্কের দাগ। এবার একই অঙ্কের বাজেটে দল গঠন করে রানার্স আপের সস্তুষ্টি নিয়ে লিগ শেষ করেছে তামিম-মুশফিক-রিয়াদ-হৃদয়দের মোহামেডান।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে আবাহনী ক্রিকেট দলের ৭ বার লিগের ট্রফি জয়ের প্রতিটিতেই ছিল প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং। এবার সেই কলঙ্কের দাগ পড়েনি আবাহনী ক্রিকেট দলের গাঁয়ে।
তাতেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন লিগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারি জি এস হাসান তামিম। “অনেক দিন পর ক্রিকেট লিগের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মোহামেডান-আবাহনী মুখোমুখি হয়েছে। এ এক অন্য উত্তেজনা। এবার আর কেউ বলতে পারবে না, আবাহনী আম্পায়ারদের ফেভার পেয়েছে। এভাবে ফেয়ার প্লে-তে ট্রফি জেতার মজা আলাদা।”
এবার আবাহনী ক্রিকেট টিম গঠনে যে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, তা স্বীকার করছেন তামিম। “বর্তমানে ক্লাবের যে পরিস্থিতি, তাতে আবাহনী ক্লাবকে টাকা দেয়ার মতো লোকের এখন বড়ই অভাব। তাই এবার আড়াই কোটি টাকার মধ্যে টিমের বাজেট রাখতে চেয়েছি।”
তামিম-তাওহিদ হৃদয়রা মোহামেডানে খেলে যেখানে ৬০-৭০ লাখ টাকা করে নিয়েছেন, সেখানে আবাহনী থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা সম্মানী পেয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, এমনটাই জানিয়েছেন জি এস হাসান তামিম। “শান্ত যে মানের ক্রিকেটার, ও-কে ছেড়ে দিলে চোখ বুজে ৫০-৬০ লাখ টাকা অন্য ক্লাব থেকে নিতে পারতো। আমরা সেখানে ৪০ লাখ টাকার মতো দিতে পারব বলে কথা দিয়েছি। আবাহনী নিবেদিতপ্রাণ মোসাদ্দেক সৈকতকে সেখানে ২৫ লাখ টাকায় রাজি করিয়েছি। গতবারের ২২ জন প্লেয়ারের মধ্যে বেশ ক'জনকে ছেড়ে দিয়েও তাই দুর্ভাবনায় পড়তে হয়নি।”
আবাহনী ক্রিকেট টিম এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন দৃষ্টান্ত আর কোনো দলের নেই। এবারের ট্রফি জয়ে কোচ হান্নান সরকারের অবদানকে এগিয়ে রাখছেন ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারি। “যখন শুনতে পেলাম জাতীয় দলের নির্বাচকের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইছে হান্নান সরকার, তখন ও-কে কোচের অফার দিলাম। ১৫ লাখ টাকার মতো দিতে পারব বলেছিলাম তাকে। তারপরও হান্নানকে রাজি করাতে পেরেছি। হান্নান প্লেয়িং ক্যারিয়ারে আবাহনীতে খেলেছে, আবাহনী ক্লাবের পরিবেশ ওর জানা আছে। তাই তাকে তেমন কোনো নির্দেশনা দিতে হয়নি। হার-জিত বড় কথা নয়, টিম হিসেবে আবাহনী খেলতে পারলে খুশি আমরা, এটাই হান্নানকে বলেছিলাম। ও নিজ থেকে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল এবং সেই চ্যালেঞ্জে জিতেছে।”
এর-ওর কাছ থেকে টাকা পয়সা জোগাড় করে চুক্তির ৬০ শতাংশ পেমেন্ট খেলোয়াড়দের হাতে ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে আবাহনী ক্রিকেট দল। বাকিটাও খুব দ্রুত দিয়ে দেয়া হবে বলে বিদেশ থেকে ফোনে জানিয়েছেন জি এস হাসান তামিম। “আমার জানামতে প্রায় ৪০% পেমেন্ট এখন বাকি আছে। চ্যাম্পিয়ন যখন হয়েছি, তখন এই টাকা যোগাড় করা কঠিন হবে না।”
আবাহনী ক্রিকেট দলের সবার জন্য বিশেষ বোনাস দেয়ার কথাও ভাবছেন জি এস হাসান তামিম। “তান্না ভাই, মামুনের সঙ্গে কথা বলে ক্রিকেটার এবংসাপোর্ট স্টাফদের জন্য বোনাস দেয়ার কথা বলেছি। টিমের কেউ বোনাস থেকে বাদ যাবে না। বোনাস মিলে বাজেটটা ৩ কোটির মধ্যে রাখতে চাইছি।”
আবাহনীর ক্লাব টেন্ট থেকে লুট হয়ে যাওয়া ট্রফিগুলো ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারি। তবে লুট হওয়া ট্রফির রুম আবারও ভরে উঠবে ট্রফিতে, সে স্বপ্ন দেখছেন এই কর্মকর্তা। “সব ট্রফি হারিয়ে নতুন করে ট্রফি সাজানোর স্বপ্ন দেখছি আমরা। এটাই আবাহনীর সৌন্দর্য।”
১ উইকেটে বোর্ডে রান ১৯৪, ক্রিজে সেঞ্চুরিয়ান সাদমান ইসলাম, উইকেটে নেই বিশেষ কিছু। প্রথম ইনিংসে রান পাহাড়ে চড়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা। তবে এমন শক্ত অবস্থান থেকে নিজেরাই পথ হারানোর মঞ্চ তৈরি করল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের ধারাবাহিকতায় নিজেরাও শেষ বিকেলে শিকার হল ব্যাটিং ধসের। তাতে দুর্দান্ত একটা পজিশন থেকে নাজমুল হোসেন শান্তর দল শেষ করল অস্বস্তিকর অবস্থায় থেকে। আর সফরকারীরা পেল ম্যাচে ফিরে আসার সঞ্জীবনী শক্তি।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ৭ উইকেটে ২৯১। লিড ৬৪ রানের। দিনের শুরুতে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে যায় ২২৭ রানে।
দিনের প্রথম ডেলিভারিতেই জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ইতি টানেন আগের দিন পাঁচ উইকেট পাওয়া তাইজুল ইসলাম। ওপেনিং নিয়ে লম্বা সময় ধরে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ দল এই ম্যাচ খেলছে নতুন জুটি সাদমান ও ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে থাকা এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে। প্রথম পরীক্ষাতেই উতরে যান তারা।
লাঞ্চের আগেই জিম্বাবুয়ের বোলারদের ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়ে দুজন মিলে করে ফেলেন দলীয় শতক। একটু রয়ে সয়ে খেলা সাদমান শটস খেলেন বেশ। অন্যপ্রান্তে তিন বছর পর টেস্ট খেলা বিজয় করেন সাবধানী ব্যাটিং। তাতেই হয়ে যায় কাজের কাজ।
বেশ দেখেশুনে খেলতে থাকা বিজয়কে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়ের ফিরে আসার লড়াই শুরু করেন প্রথম টেস্টে দারুণ বোলিং করা ব্লেসিং মুজারাবানি। আম্পায়ার্স কল হওয়ায় ডিআরএস নিয়েও লেগ বিফোর হওয়া থেকে রক্ষা হয়নি বিজয়ের। তবে তার আগে উপহার দেন ৩৯ রানের ইনিংস, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ স্কোর।
এরপর মুমিনুল হককে নিয়ে ভালোই এগিয়ে চান সাদমান। ২৮ মাস পর দেখা পান মহা আকাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরির। এর আগেরটিও ছিল একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। তবে এমনভাবে সেট হওয়ার পর তার কাছে দলের প্রত্যাশা যখন আরও বড় ইনিংসের, তখন তিনি সেটা করতে পারলেন না।
ব্রায়ান ব্যানেটের বলে ১২০ রানে তিনি আউট হওয়ার এক ওভার আগেই সাজঘরে ফেরেন মুমিনুলও। এই জোড়া ধাক্কার চাপ সামাল দেওয়াটাই কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য।
মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে পাল্টা আক্রমণের একটা চেষ্টা চালান। ফিফটি পার করে ফেলা সেই জুটির দিকেই তখন তাকিয়ে ছিল দল। তবে জিম্বাবুয়ের ফাইটব্যাক অব্যাহত রেখে শান্তর (২৩) পর রানের মধ্যে থাকা জাকের আলি অনিককে (৫) আউট করে দেন ভিনসেন্ট মাসেকসা।
একপ্রান্ত আগলে নিজের সেরা সময় মনে করিয়ে দেওয়া মুশফিকুর যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ফিফটি ছিল অনিবার্য। তবে ভাগ্যের সহায়তাও পায়নি বাংলাদেশ। মাসেসকার বলে মিড-অনে ঠেলে এক রান নিতে চেয়েছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। তবে সরাসরি থ্রয়ে ডাইভ দিয়েও শেষ রক্ষা আর হয়নি মুশফিকুরের। শেষ হয় ৫৯ বলে ৪০ রানের সম্ভাবনাময় এক ইনিংসের।
বলের পর বল ঠেকিয়ে দিন পার করে দেওয়ার চেষ্টা ছিল স্পিনার নাঈম হাসানের। তবে সেই পরিকল্পনা আর সফল হয়নি। মাসেসকার লেগ স্পিনে ক্যাচ দেন দ্বিতীয় স্লিপে। থামে তার ২৩ বলে ৩ রানের প্রতিরোধ। ২৭৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের সামনে তখন দিনের আলো শেষের আগেই অল আউটের শঙ্কা।
তবে মেহেদি হাসান মিরাজ (১৬) ও তাইজুল (৫) মিলে বাকি সময়টা পার করেন বিপদ ছাড়াই। তৃতীয় দিনে ১০০ প্লাস লিডের জন্য তাদের ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার মাসেসকা ৩ উইকেট নিতে গুনেছেন ৪৪ রান।
বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার চলমান টেস্ট সিরিজ শুরু থেকেই ভুগছে দর্শক খরায়। সেটা কমাতে ও দর্শকদের আগ্রহী করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে খবরটি জানায় বিসিবি। “বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়ের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শুরু করে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য চট্টগ্রাম বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা বিনামূল্যে হবে।”
এজন্য ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রাখা হয়েছে সহজ শর্ত। বিনামূল্যে স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ নিজ স্কুল ইউনিফর্ম পরতে হবে এবং একটি বৈধ স্কুল আইডি বহন করতে হবে।
সিলেটে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরে যায় ৩ উইকেটে। ম্যাচের চারদিনের একদিনও দর্শক উপস্থিতি ছিল না চোখে পড়ার মত। সেই ধারায় চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেও দেখা যায় একই চিত্র, যেখানে ৯ উইকেটে ২২৮ রান করতে সমর্থ হয় জিম্বাবুয়ে।
পদচ্যুত সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পরিষদ গত এক যুগ ধরে সীমাহীন আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়ম এতোদিন আড়ালে ছিল। আওয়ামী লীগ শাসনামলের সর্বশেষ টানা তিন মেয়াদে পাপন-মল্লিকদের দুর্ণীতি-অনিয়ম নিয়ে 'টু' শব্দ করেনি কেউ। বিসিবির পরিচালনা পরিষদের নির্দেশে অর্থ বিভাগও অতি গোপনীয় রেখেছিল আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব।
গত বছরের ৮ অক্টেবর দুদকের বিসিবির বিভিন্ন খাতে আর্থিক অনিয়ম এবং দুর্নীতি নিয়ে ২৮ পৃষ্ঠার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক)। সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১১ মার্চ অভিযোগ গৃহিত করে উপপরিচালক সাইদুজ্জামানকে দলনেতা করে এসব অভিযোগ উচ্চতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দুদক। গত ১৫ এপ্রিল দুদকের দুই সহকারী পরিচালক মাহামুদুল হাসানও আল আমিনের নেতৃত্বে গঠিত দুদকের টিম বিসিবির হিসাব বিভাগ থেকে বিপিএলের টিকিট বিক্রি এবং মুজিব শতবর্ষের কনসার্টে আর্থিক দুর্ণীতির প্রমান পেয়েছে। তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের ৯টি আসরকে প্রহসনে পরিণত করার কারণও উদঘাটন করেছে ওই টিম।
গতকাল উপ-পরিচালক সাইদুজ্জামান সাক্ষরিত চিঠিতে দুদক বিসিবিকে আরও একটি নোটিশ পাঠিয়েছে। বিসিবির সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজনকে দেয়া নোটিশে ২৭টি খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম চিহ্নিত করেছে দুদক। যার মধ্যে পূর্বাচলে স্টেডিয়ামে নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ এবং ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছে দুদক।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসিকে সম্পৃক্ত না করে পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পপুলাসকে ৬.৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ করে দুদকের আতশি কাঁচে এখন বিসিবি। বিপিএলে নীট মুনাফা থেকে ১১৬ কোটি টাকা উধাও হওয়া এবং বিদেশী কোচদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং তাদের পেছনে খরচের অসঙ্গতি নিয়েও দুদক অনুসন্ধানে নেমেছে।
পাপন আমলে আয়-ব্যয়ের সকল অডিট রিপোর্ট, আইসিসি-এসিসি থেকে প্রাপ্ত অনুদান, লজিস্টিকস খরচ, বিপিএলের আয়-ব্যয়ের সকল রেকর্ড, বিপিএল পরিচালনার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সকল তথ্য, ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০-এ আয়-ব্যয়ের হিসাব, এ আর রহমানের কনসার্টের সকল পেপার্স, লোক দেখানো তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট, বিসিবিতে পাপন আমলে যে সমস্ত অডিট ফার্মকে দিয়ে নীরিক্ষা রিপোর্ট করানো হয়েছে তাদের যাবতীয় তথ্য, এজিএম-এর খরচ, বিসিবি পরিচালকদের বিদেশ সফরের খরচ, হেলিকপ্টারের খরচ, স্টেডিয়াম শোভাবর্ধন এবং সংস্কার খরচ, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিপিএলের খরচ, আয়ারল্যান্ড সফরে সিকিউরিটি প্রোভাইডারের পেছনে খরচ, কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের মতো ঘটনার বিস্তারিত জানতে চেয়েছে দুদক।
১ দিন আগে
১০ দিন আগে
১০ দিন আগে
১০ দিন আগে
১২ দিন আগে
২২ দিন আগে
২২ দিন আগে