২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৭ পিএম
বয়সভিত্তিক দল থেকেই নাজমুল হোসেন শান্তর মাঝে দেখা হচ্ছিল ভবিষ্যৎ জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার সব গুণাবলী। চলতি বছর পেয়েও যান তিন ফরম্যাটের অধিনায়কত্বও। সফলতার পাশাপাশি এই সময়ে ব্যর্থতাও এসেছে বেশ। তাতে ধেয়ে এসেছে সমালোচনা। ব্যাট হাতেও পারেননি যথেষ্ট ভালো করতে। বাতাসে ভাসছে গুঞ্জন, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষেই নাকি অধিনায়কত্ব ছাড়তে চান শান্ত। তবে বিসিবি পরিচালক নাজমূল আবেদীন মনে করেন, অতিরিক্ত চাপে ফেলা হয়েছে বাঁহাতি এই ব্যাটারকে এবং নেতা হিসেবে বেড়ে উঠতে তাকে আরও সময় দেওয়া উচিত।
দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ফরম্যাটের সিরিজের আগে দায়িত্ব পান শান্ত। এরপর তার নেতৃত্বে একটি বিশ্বকাপ, কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সেরা অর্জন পাকিস্তানে গিয়ে টেস্ট সিরিজ জয়। তবে ভারত সফরে সব ম্যাচ হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট হারের পর প্রশ্ন উঠছে শান্তর অধিনায়কত্ব নিয়েও। ব্যাট হাতেও অধারাবাহিক হওয়ায় সেটা সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে তার জন্য। এরই মধ্যে শনিবার গুঞ্জন আসে শান্তর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার।
মেঘনা ব্যাংক তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগের ট্রফি উন্মোচনে এসে এই ব্যাপারে প্রশ্নের মুখে নাজমূল আবেদীন বলেন, রাতারাতি খুব ভালো অধিনায়ক হওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। “শান্ত যদি (অধিনায়ক) না থাকে, তাহলে কারও না কারও কাছে আমাদের তো যেতেই হবে। তাকেও কিন্তু একই বিষয়গুলোর মুখে পড়তে হবে। তাই আমাদের উচিত হবে যেই অধিনায়ক হোক না কেন, তার পাশে থাকা। হঠাৎ করে তো স্টিভ ওয়াহ, মাধুগালে, ইমরান খান বা ধোনি হওয়া যায় না। এজন্য আপনাকে সময় দিতে হবে। আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে সেভাবে অধিনায়ক গড়েও ওঠে না। তাই অধিনায়কের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করা ঠিক নয়।”
মূলত দুটি ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ ও ইএসপিএনক্রিনইনফোই প্রথমে শান্তর অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর খবরটি প্রকাশ করে। তবে নাজমূল আবেদীন এই ব্যাপারে এখনও বাকি সবার মতোই আছেন অন্ধকারে। “আমি সকাল থেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। মিটিংয়ে ছিলাম, কথাবার্তার মধ্যে ছিলাম। আমিও টিভির স্ক্রলে দেখেছি, আপনাদের কাছ থেকেও শুনেছি সে নাকি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে কোথাও ব্যাপারটা। যদি সেটা হয়ে থাকে, আনুষ্ঠানিক কোনো কাগজ আমার কাছে আসেনি।”
শান্তকে অধিনায়ক করার সময়ই বলা হয়েছিল, দীর্ঘ মেয়াদের চিন্তা করেই তার হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। ছয় মাস না যেতেই তাই তিন ফরম্যাটেই নতুন অধিনায়ক খুঁজে বের করাটা বিসিবির জন্য মোটেও সহজ হওয়ার নয়। তাছাড়া তিন ফরম্যাটেই দলে নিয়মিত, এমন খেলোয়াড়ের সংখ্যা খুব কম। সামনেই আছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফ্রি। দল গুছিয়ে নিতে তাই নতুন অধিনায়ক খুব একটা সময়ও পাবেন না।
নাজমূল আবেদীন তাই শান্তকেই অধিনায়ক রেখে দেওয়ার রাস্তা বন্ধ করতে চান। “এটা আমাদের জন্য একটা বড় খবর। এখন যদি নতুন অধিনায়ক তৈরি করতে হয়, তাহলে বড় একটা পদক্ষেপ নিতে হবে। বা তাকেই আবার অনুরোধ করে রাখা হয় কিনা, এটা আমাদের বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, ঘটনাটা এখন জানা গেছে। তাই আমাদের এটা নিয়ে বিবেচনা করতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
বাংলাদেশের মত একটি দল, যেখানে স্রেফ খেলোয়াড় হিসেবেই থাকতে হয় প্রচুর চাপের মুখে, সেখানে অধিনায়কের জন্য কাজটা হয়ে যায় আরও কঠিন। এই কারণেই শান্তর ব্যাপারে তড়িঘড়ি নিতে চায় না বিসিবি, বললেন নাজমূল আবেদীন। “বিসিবি তার সাথে আলোচনা করতে চাইবে। কারণ, শান্ত এত দিন ধরে অধিনায়কত্ব করে আসছে, তাই এটা তো আমাদের সময়ের বিনিয়োগেরও ব্যাপার। আমরা (অধিনায়ক হিসেবে) একজনকে তৈরি করার চেষ্টা করছি। সে যদি হঠাৎ করে সরে যায়, তাহলে নতুন একজন কিন্তু কিছুটা অপ্রস্তুত এখন। তাই সেদিকে যেতে না চাওয়াটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক হবে। তারপরও এরকম কিছু ঘটনা ঘটতে পারে।”
১৩ মে ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম
আইসিসির এপ্রিল মাসের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। গেল মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দারুণ পারফরম্যান্স করায় এই স্বীকৃতি মিলেছে মিরাজের। জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি ও নিউজিল্যান্ডের পেসার বেন শিয়ার্সকে পেছনে ফেলে সেরা হন তিনি।
গত এপ্রিলে সিলেট ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ ১–১ ব্যবধানে ড্র করে বাংলাদেশ। এই দুই টেস্টে ৩ ইনিংসে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে আলো ছড়ান মিরাজ। ব্যাট হাতে ৩৮.৬৬ গড়ে এক সেঞ্চুরিসহ করেন ১১৬ রান। আর বল হাতে ৪ ইনিংসে নেন সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট। যেখানে প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই ফাইফার নেন মিরাজ। আবার দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও নেন ৫ উইকেট।
সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের পর তৃতীয় বাংলাদেশি পুরুষ হিসেবে আইসিসির মাসসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলেন মিরাজ। ২৭ বছর বয়সী এই স্পিন অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ারে এটিই প্রথম আইসিসির মাসসেরার তকমা।
আরও পড়ুন
সকালে গেছেন কোচ, সন্ধ্যায় যাবেন অধিনায়ক |
![]() |
আইসিসির ওয়েবসাইটে মিরাজের সেরা হবার খবরের পাশাপাশি জানানো হয় এই খবর শোনার পর মিরাজের প্রতিক্রিয়াও। আইসিসিকে মিরাজ জানান নিজের আনন্দ অনুভূতির কথা।
‘আইসিসির মাসসেরা হওয়া অবিশ্বাস্য সম্মান। যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য আইসিসির পুরস্কারই সর্বোচ্চ, আর বৈশ্বিকভাবে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়াটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। এসব মুহূর্ত আমার ক্যারিয়ারের যাত্রা মনে করিয়ে দেয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে ২০১৬ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় হওয়া ছিল আমার জন্য অনেক বড় প্রেরণা। এই পুরস্কারটিও তেমনই বিশেষ কিছু। আইসিসির এমন স্বীকৃতি আমাকে দেশের জন্য আরও ভালো করার প্রেরণা দেয়। সেই সঙ্গে সতীর্থ, কোচ ও ভক্তদেরও আমি ধন্যবাদ জানাই, এই পুরস্কার তাদেরও।’
ছেলেদের পাশাপাশি প্রতিযোগিতা হয়েছিল নারী ক্রিকেটারদের মধ্যেও। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক হেইলি ম্যাথিউজ ও পাকিস্তানের অধিনায়ক সানা ফাতিমাকে পেছনে ফেলে এপ্রিল মাসের সেরা নারী ক্রিকেটার নির্বাচিত হন স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক ক্যাথরিন ব্রাইস। পাকিস্তানে গত মাসে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ রান করার পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন ব্রাইস।
আরব আমিরাতের সঙ্গে দুই ম্যাচের টি টুয়েন্টি সিরিজ খেলতে বুধবার সকালে দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একাংশ। সকাল ১০টায় প্রথম ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন ১০ জন খেলোয়াড় ও কয়েকজন কোচিং স্টাফ, যার মধ্যে রয়েছেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্সও।
পরের ধাপের সদস্যরা সন্ধ্যা ৭টায় রওনা দেবেন। যেখানে থাকবেন অধিনায়ক লিটন দাস নাজমুল হোসেন শান্ত, মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
সূচি অনুযায়ী, আগামী ১৭ মে আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচটি হবার কথা ১৯ মে। দুটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়।
আরও পড়ুন
সকালে গেছেন কোচ, সন্ধ্যায় যাবেন অধিনায়ক |
![]() |
আরব আমিরাতের সঙ্গে এই সিরিজটি দিয়েই ২০২৬ আইসিসি টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির শুরু করবে বাংলাদেশ। লিটন দাসের অধিনায়ক হিসেবে পূর্ণকালীন দায়িত্বে থাকা এই সিরিজে তাঁর সঙ্গে সহ অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন শেখ মেহেদী হাসান।
মূলত পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি টুয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা রয়েছে বাংলাদেশ দলের। সেই সিরিজের জন্য আরব আমিরাত হয়ে পাকিন্তানের যাবার সময় সেখানেও দুটি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা।
তবে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে সেই সিরিজের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। যদিও ওই সিরিজের জন্য পরিবর্তিত সূচি দিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে এ ব্যাপারে।
আইপিএলের সাময়িক বিরতি ও পরিবর্তিত সূচির কারণে বিদেশী খেলোয়াড়দের সময় মত পাওয়া নিয়ে সব দলই আছে চ্যালেঞ্জিং সময়েরর মধ্যে। তবে কিছুটা নির্ভার থাকতে পারে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। কারণ, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল সামনে থাকলেও আইপিএলের বাকি অংশ খেলার জন্য সম্মতি দিয়েছেন দলটির দুই অজি তারকা প্যাট কামিন্স ও ট্রাভিস হেড, এমনটাই দাবি ইএসপিএনক্রিনইফোর।
পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত উত্তেজনার কারণে গত ৯ মে আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। ফলে অধিকাংশ বিদেশী ক্রিকেটাররাই আইপিএল নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে ভারত ছেড়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যান।
আরও পড়ুন
কোহলি : টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন! |
![]() |
ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতি দেওয়ায় আগামী ১৭ মে থেকে আইপিএল পুনরায় শুরু হবে। ফলে সব দল নেমে পড়েছে দল গুছিয়ে নেওয়ার কাজে। তবে হায়দ্রাবাদের দুই ক্রিকেটার কামিন্স ও হেড ১১ জুন লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দলে থাকায় তাদের খেলা নিয়ে ছিল শঙ্কা।
তাছাড়া হায়দ্রাবাদ এরই মধ্যে প্লে-অফের লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়ায় তারা ফাইনালের প্রস্তুতি রেখে আইপিএলে ফিরবেন কিনা, সেটাও ছিল দেখার বিষয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দুজনই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে জানিয়েছেন যে, তারা বাকি অংশ খেলতে ভারতে ফিরে যাবেন। কামিন্সের ম্যানেজার নীল ম্যাক্সওয়েল মঙ্গলবার বলেছেন,
“ফ্র্যাঞ্চাইজির অধিনায়ক হিসেবে প্যাটের একটি দায়িত্ব আছে। সে ফিরে আসার কথা ভাবছে।”
২০২৪ সালে রানার্সআপ হওয়া হায়দ্রাবাদ এবার ১১ ম্যাচে মাত্র তিনটি জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে অষ্টম স্থানে রয়েছে। দলটির ম্যাচ বাকি আছে আর তিনটি, যা শেষ হবে আগামী ২৫ মে।
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের জেরে মাঝে স্থগিত ছিল পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। বন্ধ হয়েছিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএলও)। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও মাঠে ফিরছে দুই দেশের দুই লিগ। আগে-পরে বন্ধ হলেও দুই লিগই পুনরায় শুরু হচ্ছে একই তারিখে।
সোমবার আইপিএল কর্তৃপক্ষ ১৭ মে থেকে বাকি অংশ শুরুর কথা জানিয়েছে। একদিন পর পিএসএল কর্তৃপক্ষও জানালো, চলতি মাসের ১৭ তারিখে শুরু হচ্ছে পিএসএলও।
পিসিবি প্রধান মহসিন নাকভি নিজের এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফের খেলা শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন সূচি অনুযায়ী বাকি থাকা ৮ ম্যাচ মাঠে গড়াবে ১৭ মে থেকে আর ফাইনাল হবে ২৫ মে।
পিএসএল আবারও মাঠে গড়ালেও হারাতে পারে রেশ। এই দফায় বিদেশি ক্রিকেটারদের পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। বিদেশি ক্রিকেটারদের দুবাইয়ে সরিয়ে নেওয়ার পর অনেকেই নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেনও ফিরেছেন বাংলাদেশে।
পিএসএলের সূচি বদলানোতে বদল আসতে পারে বাংলাদেশ পাকিস্তান-সিরিজেও। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সিরিজ শেষ করে ২১ মে পাকিস্তানে পৌঁছানোর কথা টাইগারদের। ২৫ মে থেকে শুরু পাঁচটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ। যার মধ্যে প্রথম দুটি ফয়সালাবাদে এবং বাকি তিনটি লাহোরে।
অবশ্য সিরিজটি মাঠে গড়ানো নিয়ে এখনো আছে ধোঁয়াশা। বিসিবি জানিয়েছে তারা এখনও এই সফর নিয়ে আলোচনা করছে পিসিবির সাথে।
“সবাই শুধু তোমার রেকর্ড আর মাইলফলকগুলো নিয়েই কথা বলবে - কিন্তু আমি মনে রাখব সেই অশ্রুগুলোর কথা, যা তুমি কখনও কাউকে দেখাওনি; আমি মনে রাখব সেই যুদ্ধগুলো, যা কেউ দেখেনি; আর তোমার সেই নিঃশর্ত ভালোবাসা, যা তুমি এই ফরম্যাটটাকে দিয়েছ। প্রতিটি টেস্ট সিরিজের পর তুমি ফিরে এসেছো আরও একটু বেশি জ্ঞানী হয়ে, একটু বেশি স্থির হয়ে। তোমার এই পুরো যাত্রাটা দেখা ছিল আমার জন্য অনন্য এক সৌভাগ্য। কোনো এক অজানা কারণে আমি সবসময় ভেবেছি তুমি সাদা পোশাকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবে। কিন্তু সবসময়ের মত নিজের হৃদয়ের কথাই শুনেছো।”
- কথাগুলো বিরাট কোহলিকে নিয়ে বলেছেন তার সহধর্মিণী ও বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা। ক্রিকেটের প্রতি বিরাট কোহলির নিবেদন সবচেয়ে কাছ থেকে যিনি দেখেছেন, তার বলা কথাগুলোই বুঝিয়ে দেয় লাল বলের ক্রিকেটকে কীভাবে ধারণ করতেন ভারতীয় এই ব্যাটিং গ্রেট।
এই করতেন বলার কারণ, গত কয়েকদিনের গুঞ্জনকে সত্যি করে অনেকটা নীরবেই ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন কোহলি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে নাকি জোর চেষ্টাই ছিল অত্যন্ত ইংল্যান্ড সফরে তাকে খেলানোর। মাস দুয়েক আগেও ব্যাপারটি নিয়ে যে আলোচনা হতে পারে, সেটাই তো ছিল বিস্ময়কর। কারণ, টেস্টকেই তো সবচেয়ে বেশি লালন করলেন। তবে আনুশকা শর্মা যেমনটা বলেছেন, মনের কথা শুনেছেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার।
আরও পড়ুন
নাহিদ-তাসকিনদের নতুন বোলিং কোচ টেইট |
![]() |
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসেও কোহলি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বর্ণিল এক চরিত্র হিসেবে। শচীন টেন্ডুলকার ভারতের ক্রিকেট ‘ঈশ্বর’, যিনি ছিলেন ব্যক্তি হিসেবে ধীরস্থির, শান্ত আর নিখুঁত ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। আর কোহলি তার ঠিক বিপরীত। তিনি বুনো চরিত্রের ভীষণ আগ্রাসী একজন ক্রিকেটার, যিনি ব্যাটসম্যানশিপের চূড়ান্ত স্তরে থাকার পাশাপাশি মাঠে প্রতিপক্ষকে একচুল ছাড় দিতে নারাজ। অধিনায়ক ও খেলোয়াড় হিসেবে ভারতকে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে হয়। আর এই বিষয়গুলো অনেক সময়ই আড়াল হয়ে যায় হাজার হাজার রান বা সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরির স্তুতিগাথায়।
কোহলির অধিনায়কত্বে ভারত প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতে ২০১৮-১৯ মৌসুমে। তার সময়েই ভারত একটা লম্বা সময় ধরে থাকে টেস্টের র্যাংকিংয়ে শীর্ষে।
লাল বলের ক্রিকেটে কোহলির অবসরের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শচীন বলেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের পরের প্রজন্মকে এই ফরম্যাটের প্রতি আগ্রহী করে তোলায় তার উত্তরসূরি রেখেছেন বিশাল এক অবদান। খুব একটা ভুল বলেননি তিনি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে যে নিবেদন, আগ্রাসন দেখাতেন কোহলি, তা পুরো বিশ্ব ক্রিকেটেই ছিল উপভোগ্য এক বিষয়।
আর সেই কাজটা করতে গিয়ে অধিনায়ক হিসেবে বড় একটা পরিবর্তন আনেন ভারতীয় ক্রিকেট সংস্কৃতিতে। ফিটনেস ও পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব এসেছে তার হাত ধরেই। কীভাবে টেস্টের প্রতিটি বলেই সমান একাগ্রতা নিয়ে লড়তে হয়, খাদের কিনারায় থেকেও আশার প্রদীপ জ্বালাতে হয়, সেটা সামনে থেকে দেখিয়েছেন ম্যাচের পর ম্যাচ ধরে।
সবসময়ই স্পিনে শক্তিশালী হওয়ায় ভারতের জন্য দেশের মাটিতে জেতাটা সহজ হলেও বিদেশের মাটিতে টেস্টে বড় সাফল্য পাওয়া ছিল ভীষণ অনিয়মিত ঘটনা। সেটা বুঝতে পেরে কোহলি সবার আগে জোর দেন গতিময়, আগ্রাসী পেসারদের দলে নেওয়ার। সেটার ফলও ভারত পায় হাতেনাতে। ‘সেনা’ দেশগুলোতে তার অধিনায়কত্বেই দলটি পায় নিজেদের ইতিহাসের সেরা সব সাফল্য। এই ফরম্যাটকে বিদায় জানানোর সময় কোহলি যখন দেখছেন দলে পেসারদের আধিপত্য এমনকি ঘরের মাটিতেও, তখন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই পারেন তিনি।
এক নজরে কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ার :
• ১২৩টি টেস্ট
• ৯ হাজার ২৮৩ রান
• গড় : ৪৬.৮৫
• শতক : ৩০
• ডাবল সেঞ্চুরি : ৭ (ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ)
• ফিফটি ৩১
• সর্বোচ্চ : ২৫৪*
• অধিনায়ক হিসেবে ৬৮ ম্যাচে, ৪০টি জয় - ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
তবে টেস্টের কোহলিকে স্রেফ রান-সেঞ্চুরি দিয়ে মাপতে গেলে ভুলই করবেন আপনি। যে সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জোয়ারে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পাঁচদিনের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ, সেই সময়েই কোহলি এই ফরম্যাটকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব। ব্যাটিংয়ে প্রতিটি রানের জন্য তার লড়াই, ফিল্ডিংয়ে প্রতিটি বলেই আগ্রাসন দেখানো, উইকেট পতনে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠা, এই জিনিসগুলোর কারণেই তিনি সবার চেয়ে আলাদা হয়ে থাকবেন। এভাবেই এই যুগে এসেও ভারতের তরুণ প্রজন্ম কোহলিকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়, হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট খেলার, রেকর্ড গড়ার, ইতিহাসের অংশ হওয়ার।
আরও পড়ুন
রোহিতের পর টেস্ট অবসরের পথে কোহলিও? |
![]() |
এই প্রসঙ্গে স্টিভেন স্মিথ একবার বলেছিলেন,
“সে শুধু একজন গ্রেট খেলোয়াড়ই নয়, একজন দুর্দান্ত প্রতিপক্ষও। খেলার মাঠে বিরাট শুধুমাত্র নিজের প্রাণশক্তিই নিয়ে আসে না, পুরো দলের মাঝেও সেটা ছড়িয়ে দেয়।”
খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দর্শকদের কাছেও কোহলি ছিলেন এমন একজন, যিনি টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি তৈরি করতে পেরেছিলেন অন্যরকম এক আবেদন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তেমনই একজন যেমনটা বলেছেন,
“আমরা শুধু তাকে খেলতেই দেখতাম না, আমরা তার করা প্রতিটি রান, প্রতিটি চিৎকার, শূন্যে মারা প্রতিটি ঘুষিকেও অনুভব করতাম। সে কেবল ক্রিকেট খেলতই না, সে এটিকে কেন্দ্র করেই চলত।”
একজন স্পোর্টসম্যানের জন্য এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! কোহলি সেটা করতে পেরেছেন, কারণ টেস্ট ক্রিকেটকে তিনি সত্যিকারের ভালোবাসাই দিয়ে গেছেন শেষ দিন পর্যন্ত। এই কারণেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের বিদায়ী টেস্ট সিরিজে তিনি সংগ্রাম করে একটা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, ছন্দে না থেকেও ছিলেন সিরিজের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। এতোটাই ছিল টেস্ট ক্রিকেটার কোহলির প্রভাব।
হার না মানা মানসিকতার কারণেই কোহলি ২০২০ সালের পর থেকে এই ফরম্যাটে সেরা ছন্দে না থেকেও লড়াই চালিয়ে যেতে পেরেছেন। আসলে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের সময়টা বাদ দিলে কোহলির টেস্ট গড়টা থাকতে পারত আরও ইর্ষনীয়। এই মাপের একজন ব্যাটার কেন আর কীভাবে এত লম্বা সময় অফ ফর্মে আটকে থাকলেন, সেটা বড় এক রহস্যই থেকে যাবে। তবে ওয়ানডে গ্রেট কোহলিকে এরপরও আপনাকের টেস্টের সেরাদের কাতারের বিবেচনা করতেই হবে।
সেটা কেন, তা নিয়ে চলতে পারে নানা তর্ক। তবে ২০১৪ সালে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চতুর্থ ইনিংস রান তাড়ায় যে ইনিংসটি খেলেছিলেন, সেটা ক্রিকেটের প্রিয় একজন ছাত্র সহজে ভুলতে পারবেন না। একটা হেরে যাওয়া ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি কীভাবে দাগ কেটে যেতে পারে, সেটা অনুভব করতে হলে আপনাকে সেই ম্যাচটি দেখতে হবে বারবার।
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর ৩৬৪ রানের টার্গেটে নেমে ড্রয়ের আশা বাদ দিয়ে ব্যাট চালান জয়ের লক্ষ্যে, প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যা ছিল অবিশ্বাস্য এক চেষ্টাই। এই দফায়ও সেঞ্চুরি করে ছুটছিলেন জয়ের লক্ষ্যেই। তবে নাথান লায়নের বলে ক্যাচ দিয়ে তার ফেরার পরই পথ হারিয়ে ভারত ম্যাচও হেরে যায়। আউট হওয়ার পর চোখেমুখে যে অবিশ্বাস আর হতাশা ছিল কোহলির, ঠিক সেই কারণেই তিনি টেস্ট গ্রেট হয়ে উঠেছেন। জয়ের জন্য শেষ বিন্দু নিংড়ে দেওয়া কোহলি তাই লাল বলের ক্রিকেটের একজন বড় বিজ্ঞাপন হয়েই প্রাণবন্ত থাকবেন ইতিহাসের পাতায়।
১৩ দিন আগে
১৬ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৭ দিন আগে
২৭ দিন আগে