
পাওয়ার প্লে শেষে একদলের স্কোর ২ উইকেটে ৩৯, অন্যদলের ২ উইকেটে ৭১। ম্যাচের ফলাফল ছাপিয়ে স্রেফ এখানেই ফুট ওঠে বাংলাদেশ ও ভারতের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বাস্তব চিত্র। ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটে নাজমুল হোসেন শান্তর দল দেখালেন মন্থরগতির সেকেলে পারফরম্যান্স, আর ছোট রান তাড়ায় ভারত ব্যাটারা সেটা উড়িয়ে দিলেন তুড়ি মেরে। তাতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বড় পরাজয়ই বরণ করতে হল বাংলাদেশকে।
গোয়ালিয়রের মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রবিবারের ম্যাচে ভারতের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ১৯.৫ ওভারে মাত্র ১২৭ রানে গুটিয়ে যায় শান্তর দল। স্বাগতিকরা সেই রান তাড়া করে ফেলেছে মাত্র ১১.৫ ওভারেই, ৭ উইকেট হাতে রেখেই।
ইনিংসের একদম শুরু থেকেই টানা উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। তাতে রানের গতিও যায় কমে। ব্যাটাররা না পেরেছেন টিকে থাকতে, না পেরেছেন কেউ আগ্রাসী ব্যাটিং করে বোলারদের চাপে ফেলতে। আর্শদ্বীপ সিংয়ের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন লিটন দাস। তবে এক ডিজিটে সেই ওভারেই তাকে সাজঘরের পথ দেখান আর্শদ্বীপ।
এরপর দ্বিতীয় সিনিয়র টি-টোয়েন্টি খেলা পারভেজ হোসেন ইমনকেও ফেরান তিনি। বোল্ড হওয়ার ৯ বলে এক চারে মাত্র ৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে অভিষিক্ত মায়াঙ্ক যাদবকে মেডেন দেন তাওহীদ হৃদয়।
বাংলাদেশের ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে এরপর চাপ বাড়ান রহস্য স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী। তার প্রথম শিকার হওয়ার আগে ১৮ বলে দুটি চারে ৬৬.৬৭ স্ট্রাইক রেটে ১২ রানের এক সংগ্রামী ইনিংস খেলেন তাওহীদ।
ক্রিজে গিয়েই গতিময় পেসার মায়াঙ্ককে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। ৪৩ রানে চার উইকেট হারানোর সেই চাপ থেকে পুরো ইনিংসেই আর বের হতে পারেনি বাংলাদেশ।
জাকের আলি অনিকও ফেরেন এক ডিজিটে। ওয়ানডে মেজাজে ২৫ বলে ২৭ রান করেন শান্ত, যা রানের গতি বেশ কমিয়ে দেয়। সেখান থেকে দলকে একটা সম্মানজনক স্কোর এনে দেওয়ার সব দায়িত্ব একাই নেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদ খেলেন দুটি ছোট ক্যামিও। তবে একপ্রান্ত আগলে মিরাজের তিন বাউন্ডারিতে করা ৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংসই বাংলাদেশকে ১০০ রান পার করতে সাহায্য করে। ৩১ রানে তিন উইকেট নেন বরুন।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে এই রান যে কিছুই নয়, সেটা প্রমাণ করতেই যেন প্রথম ওভার থেকেই বোলারদের ওপর চড়াও হন ভারত ওপেনাররা। শরিফুল ইসলামের প্রথম ওভারে দুটি চার মেরে শুভসূচনা করেন সঞ্জু স্যামসন। অন্যপ্রান্তে ঝড় তোলার আভাস দেন আরেক ওপেনার অভিষেক শর্মা৷ তাসকিন আহমেদকে ছক্কা মেরে আক্রমণে স্বাগত জানান। এরপর আসে আরও দুই বাউন্ডারি।
তবে ওই ওভারে ১৬ রান করার পর রান-আউট হয়ে যান অভিষেক৷ তবে উড়ন্ত সূচনা পেয়ে যাওয়া ভারতকে আর পেছনে ফেরে তাকাতে হয়নি। মুস্তাফিজুর রহমানের করা প্রথম বল ছক্কায় ওড়ান ভারত অধিনায়ক সুরিয়াকুমার যাদব।
তাসকিনের দ্বিতীয় ওভারে তার ওপর তান্ডব বইয়ে দেন স্যামসন ও সুরিয়াকুমার। এক ছক্কা ও দুই চারে যোগ করেন ১৬ রান৷ ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা সুরিয়াকুমারকে মুস্তাফিজুর ফেরান ষষ্ঠ ওভার। তার আগে মাত্র ১৪ বলে খেলেন ২৯ রানের ইনিংস, যেখানে ছিল তিনটি ছক্কা ও দুটি চারের মার।
ছয় ওভারে ভারতের করা ৭১ রান এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে দলটির সর্বোচ্চ স্কোর। ব্যাটিংয়ে আলো ছড়ানো মিরাজ বোলিংয়েও আক্রমণে এসে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন। উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড-উইকেটে রিশাদকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় স্যামসনের ২৯ রানের পথচলা।
তবে ম্যাচে এর কোনো প্রভাবই পড়েনি। মাত্র ১২ বলে অপরাজিত ২৫ রান করে হার্দিক পান্ডিয়া ভারতকে জয় এনে দেন বেশ আগেভাগেই। তার সাথে আনুষ্ঠানিকতা সারার কাজটা করেন নিতিশ রেড্ডি।
একই ভেন্যুতে আগামী বুধবার মাঠে গড়াবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।
No posts available.