ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের সোনালি যুগের শেষ যে কয়েকজন প্রতিনিধি নিজের সময়ে দেখিয়েছেন দাপট, তিনি তাদের মধ্যে সেরাদের কাতারেই থাকবেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রেট কার্টলি অ্যামব্রোসকে আধুনিক যুগের অনেক পেসাররাই তাদের আইডলও মানেন। ইতিহাদের স্মরণীয় কিছু স্পেল উপহার দেওয়া সাবেক এই পেসার নিজের দিনে ব্যাটারদের জন্য ছিলেন এক বিভীষিকার নাম। কোর্টনি ওয়ালসের সাথে নব্বইয়ে গড়েছিলেন ভয়ংকর এক পেস জুটি, যা আজও হয়ে আছে রুপকথার গল্প।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬৪০ উইকেট নেওয়া সেই অ্যামব্রোস এবারের বিপিএলেও এসেছিলেন ধারাভাষ্য দিতে। দেশে ফেরার আগে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি টি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন নিজের খেলোয়াড়ি জীবন থেকে শুরু করে পেস বোলিংয়ের খুটিনাটি সহ নানা বিষয়ে।
পাঠকদের জন্য অ্যামব্রোসের সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল :
প্রশ্ন : শুরুতেই জানতে চাই, বাংলাদেশে আবার আসা এবং বিপিএলে ধারাভাষ্য দেওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
অ্যামব্রোস : অসাধারণ অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে যতবারই আসি, যেখানেই যাই, মানুষের যে ভালোবাসা পাই, সেটা দুর্দান্ত। দুই যুগ আগে অবসরে যাওয়া সাবেক এক পেসারকে এই দেশের মানুষ যে সম্মান দেয়, আমার কাছে সেটা অবিশ্বাস্যই লাগে। আর ধারাভাষ্য দিতে তো ভালোই লাগে। এখানে আমার পুরনো বন্ধু আতাহারের সাথে দেখা হয়, আবার অন্যদের সাথেও বোঝাপড়াটা বেশ ভালো আমার আগে কাজ করার সুবাদে। সব মিলিয়ে উপভোগ করছি।
প্রশ্ন : এই প্রশ্নটা এল আপনার কথা থেকেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসের অন্যতম গ্রেট পেসার আপনি। আরও যদি বলি, ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা কয়েকজন পেসারদের একজন হিসেবে ধরা হয় আপনাকে। সেই আপনি নিজেকে যেভাবে স্রেফ সাবেক একজন পেসার হিসেবে উল্লেখ করলেন, এটা আপনার বোলিংয়ের একজন ভক্তের জন্য মেনে নেওয়া কঠিন নয় কি?
অ্যামব্রোস : দেখুন, কার কী মনে হবে সেটা ভেবে তো আপনি জীবন চালাতে পারবেন না। নাকি? আমি নিজেকে যেভাবে দেখি, সেটাই বলি। আমরা যখন খেলেছি, সেই সময়ের দর্শকদের কাছে হয়ত আমার পরিচিত ছিল, হয়ত খেলাও দেখেছে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের কাছে আমার পরিচয় স্রেফ একটা নাম দিয়ে, পরিসংখ্যান আর ইউটিউব ভিডিও দেখেই। আমি ধারাভাষ্যকার হিসেবে যখন থেকে কাজ করছি, তখন থেকে আমি নিজের খেলোয়াড় জীবনকে একপাশে সরিয়ে রাখি। দুটি জিনিস একসাথে মিলিয়ে ফেললে সেটা খুব ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
প্রশ্ন : জীবনকে এত সরলভাবে দেখার শিক্ষাটা কি পরিবার দেখেই পাওয়া?
অ্যামব্রোস : হয়ত। আমার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা স্বচ্ছল ছিল না। বাবা ছিলেন কারপেন্টার। ক্রিকেটের সাথে তিনি বা তার আগের প্রজন্মের কারও সেভাবে আগ্রহ হয়নি খেলোয়াড় হওয়ার। মায়ের উৎসাহে তাই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা যখন শুরু করলাম, তখন থেকেই বুঝতে পারছিলাম যে পথটা খুব মসৃণ হবে না। আমাদের পরিবারের ক্রিকেটে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। বাবা আমার ক্রিকেটার হওয়ার পক্ষে না থাকলেও বাধাও দেননি। তার বলা একটা কথাই মাথায় গেঁথে গিয়েছিল, ‘জীবনে যত বড় যাই কিছু হওনা কেন, কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়।’ তাই পেশাদার জীবনের অর্জন আর ব্যক্তিগত জীবনকে আমি আলাদা রাখতে পারি।
প্রশ্ন : এই যার জীবনবোধ, তার সাথে ১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিখ্যাত সেই টেস্টের ঘটনার মিল পাওয়া বেশ কঠিন। ওই ম্যাচে তো আপনার সাথে রীতিমত লেগে গিয়েছিল স্টিভ ওয়াহের। একবার শুনেছিলাম, আপনি নাকি সরাসরি তাকে হুমকিও দিয়েছিলেন মাঠে। হিট অব দ্য মোমেন্ট?
অ্যামব্রোস : বলতে পারেন। এই ব্যাপারে আগেও অনেক কথা বলেছি। তবুও জানতেই যখন চাইলেন, তাই বলি। দেখুন, অজিরা অনেক কঠিন মানসিকতার। মাঠে জেতার জন্য প্রতিপক্ষকে সম্ভাব্য সব উপায়ে গুঁড়িয়ে দিতে চায় ওরা। সেখানে আমি একজন মানুষ, যে আগ্রাসনকে কখনই ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে না। কিন্তু স্টিভ আমাকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলেছিল, যা আমাকে সাথে সাথেই তাতিয়ে দেয়। হুমকি কিনা জানিনা, তবে আমি তাকে সরাসরি বলে দিয়েছিলাম, ‘এই ম্যাচের পর হয়ত আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে, তবে আমি এটাও নিশ্চিত করে দেব যাতে তোমারটাও শেষ হয়।’
প্রশ্ন : আমি স্টিভ ওয়াহকে যা বলেছেন, সেই ঘটনার সাথে কি আমরা ২০০৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে জিনেদিন জিদানের সেই ঘটনার মিল ছিল?
অ্যামব্রোস : আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাচ্ছি না আসলে। তবে খেলোয়াড় হিসেবে স্টিভকে আমি আগেও সম্মান করটাম, এখনও করি। সেদিন সেই ম্যাচে আমি যা বলেছিলাম, তা নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই কোনো। তবে অতীত নিয়ে পড়ে থাকার লোকও না আমি।
প্রশ্ন : নব্বইয়ের দশকে যে ম্যাচকে ঘিরে আপনাদের এই ঘটনাটি হল, ঠিক ওই সময়টাকে বলা হয় ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের সূর্যাস্তের সময় আর অস্ট্রেলিয়ার সূর্যোদয়ের। এই হাতবদলটা খুব কাছ থেকে দেখেছেন আপনি। মূল কারণ কি ছিল?
অ্যামব্রোস : এটা বলা আসলে কঠিন। কারণ, এখানে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। বোর্ড, সরকার, ক্রিকেট কাঠামো, তারকা খেলোয়াড়ের ইগো সহ আরও অনেক কিছুই। তবে যত্ন না নিলে হীরাও তো কয়লা হয়ে যায়, তাই না? সত্তর দশক থেকে নব্বই পর্যন্ত যে দলটা এত এত গ্রেট ক্রিকেটার উপহার দিল, আধিপত্য বিস্তার করল - এরপর হঠাৎ করে তারা শুধু পতনের দিকেই গেল। এটা তো হতে পারে না। এখন না হয় তরুণরা টি-টোয়েন্টির দিকে ঝুঁকেছে, কিন্তু নব্বই দশক থেকেই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট পথ হারাল, সেটার পেছনে ক্রিকেটীয় ছাড়াও আছে অনেক বিষয়। আমি সেসব নিয়ে কথা বলতে চাই না।
প্রশ্ন : টি-টোয়েন্টির কথা বললেন, গত এক যুগে এই ফরম্যাটে যে কয়েকজন নিজেদের কিংবদন্তির কাতারে নিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে দুজন ডোয়াইন ব্রাভো ও কিয়েরন পোলার্ড। তবে দুজনের কেউই জাতীয় দলের হয়ে একটা সময়ের পর সেভাবে সার্ভিস দেননি, বা দিতে চাননি বা পারেননি। এই তালিকায় আরও আসতে পারেন সুনিল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলরা। হতাশাজনক?
অ্যামব্রোস : একদমই না। যে খেলতে চায় না, আপনি তো তাকে জোর করে খেলাতে পারবেন না। হ্যাঁ, চাইলেই তারা জাতীয় দলের হয়ে লম্বা ক্যারিয়ার গড়তে পারত। কিন্তু তারা সেটা চায়নি। এখানে তো আমি দোষের কিছু দেখি না। আপনি তাদের ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের প্রতি নিবেদনের কমতি নিয়ে কথা বলতে পারেন। তবে কে জাতীয় দলে খেলবে আর কে খেলবে না, এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার কাছে।
প্রশ্ন : এটা কি ভালো উদাহারণ? বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য?
অ্যামব্রোস : দেখুন, ভালো উদাহারণ বলতে আপনি কি বোঝেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু আমি মনে করি যদি উদাহারণ তৈরি করাই যেত, তাহলে সত্তর থেকে নব্বই দশকের ওই সোনালি সময়ের পর কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল হিসেবে শুধু পিছিয়েই যাচ্ছে? আগের প্রজন্মের খেলা দেখেই তো ব্রাভো-পোলার্ডরা বড় হয়েছে। তারা সেটাই করেছে, যেটা তাদের কাছে ঠিক লেগেছে। এখানে কে ভুল আর কে ঠিক, সেই বিচার করাটা কঠিন কাজ।
প্রশ্ন : এবার একটু বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলি। সাকিব, তামিম, মাশরাফিরা যখন খেলা শুরু করেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট তখনও ছিল পেছনের বেঞ্চের ছাত্র। খুব বড় উন্নতি হয়ত হয়নি, তবে তারা সহ একটা ব্যাচের হাত ধরে বাংলাদেশ দল বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছেন। লিগ্যাসির কথা যে বলা হয়, তাদের প্রভাবটা কি বাংলাদেশের ক্রিকেটে সামনে দেখা যেতে পারে?
অ্যামব্রোস : আপনি ভুল মানুষকে প্রশ্নটা করেছেন। আমি এখানে আসি স্রেফ ধারাভাষ্য দিতে। আর দূর থেকে খেলা দেখি মাঝেমধ্যে। এর বাইরে আমি সেভাবে জানি না এখানে ক্রিকেটের উন্নতি নিয়ে কেমন কাজ হচ্ছে বা তরুণরা সাকিব-তামিমের মানে যাওয়ার মত কিনা। তবে এটা তো বলাই যায়, যাদের নাম বললেন, তারা তো বাংলাদেশের কিংবদন্তি। আমি নিশ্চিত তাদের দেখে অনেকেই সাকিব, তামিম হতে চাইবে। সেই অনুপ্রেরণার জায়গাটা অবশ্যই এগিয়ে নেবে বাংলাদেশকে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ আইসিসির পূর্ণ সদস্য হয়েছে ২০০০ সালে। ওয়ানডেতে কিছু বিচ্ছিন্ন সাফল্য থাকলেও এখনও সাদা বলের ক্রিকেটে নেই আইসিসি ইভেন্টে কোনো শিরোপা। টেস্ট ক্রিকেটের চিত্রটা এত বছর পরও আশানরুপ নয়। একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশের উন্নতির এই ধারা আপনি কীভাবে দেখেন?
অ্যামব্রোস : দেখুন, উন্নতি কে কতটুক করল, সেটা বোঝার আগে তার কাছে উন্নতির সংজ্ঞাটা কেমন। কেউ ক্লাসের ফার্স্ট বয় হতে চাইবে, আবার কেউ পাস করতে পারলেই খুশি। অন্য দেশগুলোকে সরিয়ে রেখে যদি শ্রীলঙ্কার দিকেও তাকান, তারা ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জিতেছিল সীমিত সামর্থ্য নিয়েই। অথবা বলা যায় ১৯৯২ বিশ্বকাপের ইমরানের খানের সেই পাকিস্তান দলের কথাও। নিজেদের ওপর বিশ্বাসটাই ওদের সবার চেয়ে এগিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ যদি এমন উচ্চতায় যেতে চায়, তাদের সবার আগে নিজেদের সামর্থ্যের ওপর অমন বিশ্বাস আনতে হবে। সাকিব, তামিম, মাশরাফি বা আশরাফুলের মত অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার প্রায় একই সময়ে এই দলে খেলেছে। সেই অনুযায়ী সাফল্য যে আসেনি, সেটা দৃশ্যমান। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তারা অন্তত সেই বিশ্বাসটা দিতে পেরেছে যে, তারা বড় দলগুলোর সাথে চোখে চোখ রেখে লড়তে পারে। তরুণ ক্রিকেটারদের দায়িত্ব এখন পরের ধাপে যাওয়ার।
প্রশ্ন : সেই তরুণদের একজন নাহিদ রানার ব্যাপারে আপনার কাছে একটু জানতে চাই। বাংলাদেশ তো বটেই, তরুণ এই গতিময় পেসার এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটেও অন্যতম আলোচিত এক নাম। বিপিএলে খুব কাছ দেখলেন তাকে। তাকে কি বেছে বেছে খেলানো উচিত বাংলাদেশের?
অ্যামব্রোস : সেই সিদ্ধান্ত বিসিবিকেই নিতে হবে। একজন তরুণ পেসার এত জোরে বল করছে - আপনি চাইবেন যত সম্ভব তাকে খেলাতে। কারণ, এই ধরণের পেসাররা প্রতিপক্ষকে বাড়তি দুর্ভাবনায় ফেলে দেয়। উইকেট যদি নাও পায়, এক-দুইটা স্পেলে ব্যবধান গড়ে দেওয়ার সক্ষমতা থাকে নাহিদের মত বোলারদের। এখন আপনি কীভাবে সেই ভারসাম্যটা রাখবেন, সেটার ওপর নির্ভর করবে সে কততুকু এগিয়ে যেতে পারবে। তার নিজেরও সচেতন হতে হবে। একজন পেসারের জীবন মোটেও সহজ নয়। খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুম, সব ব্যাপারেই আপনাকে নিজের যত্ন নিতে হবে। আর এই যুগে এসে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কাড়াকাড়ি তো আছেই। সেখানেও আপনাকে সচেতন হবে। এবার আসি তার বোলিংয়ের দিকে। নাহিদের বোলিং অ্যাকশন খুব স্মুথ। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি তার অনুশীলনও। তার রানিং থেকে শুরু করে বোলিং অ্যাকশন সবই একজন ফাস্ট বোলারের জন্য আদর্শ। অনভিজ্ঞতার কারণে প্রায়ই সে খরুচে হবে, তবে তাতে প্রভাবিত হওয়া চলবে না। এই ধরণের বোলাররা যত বেশি খেলবে, তত বেশি নিজেকে গড়বে আর নতুন নতুন স্কিল রপ্ত করবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ দলের অন্য দুই পেসার হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদদের কেমন দেখলেন?
অ্যামব্রোস : হাসান সত্যি বলতে আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি শুনে অবাক হয়েছি যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে তার জায়গা হয়নি। ডেথ ওভারে টানা ইয়র্কার করে যাওয়া এই যুগে খুব কঠিন। কারণ, ব্যাটাররা এখন অনেক স্কিলড। ইয়র্কারকেও তারা বাজে বল বানিয়ে চার-ছয় মেরে দেয়। আর তাই আপনাকে খুব নিখুঁত হতেই হবে। তাসকিনের ব্যাপারেও একই কথাই বলব। আমি ইম্প্রেসড তার বোলিংয়ে। গত দুই-তিন বছর ধরে তাসকিন খুব ভালো করছে। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। যার নামটা বলেননি, সেই খালেদও (আহমেদ) দারুণ বোলার। পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশ উজ্জ্বল একটা ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।
প্রশ্ন : ২০১০ থেকে ২০২০, এই সময়ে ব্যাটারা সব ফরম্যাটেই করেছেন রাজত্ব। বিশেষ করে টেস্টে ফ্যাভ ফোর খ্যাত কোহলি, রুট, উইলিয়ামসন, স্টিভ স্মিথের পাশাপাশি বাবর আজমরাও রান করেছেন অনেক, ছিলেন ভীষণ ধারাবাহিকও। তবে কয়েক বছর ধরেই তাদের বেশ সংগ্রাম করতে হচ্ছে। অন্যদিকে একই সময়ে ক্রমেই আধিপত্য দেখা যাচ্ছে বোলারদের, বিশেষ করে পেস বোলিংয়ে। বাংলাদেশের মত একসময়ের স্পিন নির্ভর দলে পেসারদের একটা বিপ্লব হয়ে গেছে। ব্যাপারটা কীভাবে দেখেন?
অ্যামব্রোস : আসলে যুগে যুগে এভাবেই তো চলে আসছে, তাই না? তবে এটা তো মেনে নিতেই হবে যে মাঝে খেলাটা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যাটারদের জন্য উপযোগী হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে চিন্তা করলে এখন অনেক বদল এসেছে। অস্ট্রেলিয়া বলুন আর বাংলাদেশ, টেস্ট ম্যাচে সবাই এখন নামে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার মত বোলার নিয়েই। কারণ, সবাই ফলাফল বের করতে চায়। সব দলেই কমবেশি প্রতিভাবান বোলার থাকায় ব্যাটারদের তাই কাজটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। বোলারার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি আগ্রাসী, ফলে ব্যাটারদের তারা বাড়তি চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হচ্ছে। কিন্তু আপনার যদি স্কিল থাকে, আপনি ঠিকই উপায় একটা বের করেই ফেলবেন। যেমনটা আমরা দেখলাম (স্টিভ) স্মিথের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে। খেলাটির জন্য এই ভারসাম্য খুব জরুরি।
প্রশ্ন : টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাহলে চিন্তার খুব বেশি কিছু নেই?
অ্যামব্রোস : আমি তো এমন কোনো সম্ভাবনাই দেখি না। টেস্ট ক্রিকেট তো এখন ইতিহাসের অন্যতম সেরা সময় পার করছে। কেউই আর ড্রয়ের জন্য খেলতে নামে না। এরচেয়ে ভালো বিজ্ঞাপন আর কী হতে পারে! নেটফ্লিক্স যখন আসল, কিছু লোক বলা শুরু করল যে সিনেমা নাকি আর চলবে না। মানে সিনেমা হলে গিয়ে আর কেউ সিনেমা দেখবে না। কিন্তু আমরা তো দেখছি দুটোই চলছে একসাথে। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির ব্যাপারটা একই। তবে ওয়ানডের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত নই।
এক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জলঘোলার মধ্যে নতুন করে শাস্তি পেলেন তাওহীদ হৃদয়। খেলোয়াড় এবং খেলোয়াড় সাপোর্ট স্টাফদের জন্য বিসিবি আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে মোহামেডানের এই ব্যাটারকে। ফলে বসুন্ধরা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট ক্রিকেট লিগে (ডিপিডিসিএল) তাকে চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গত ২৬ এপ্রিল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ম্যাচে মোহামেডান অধিনায়ক তাওহীদের বিরুদ্ধে অন-ফিল্ড আম্পায়ার মনিরুজ্জামান টিঙ্কু এবং আলি আরমান রাজন, তৃতীয় আম্পায়ার মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং চতুর্থ অফিসিয়াল এটিএম ইকরাম আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে মতবিরোধ দেখানোর অভিযোগ আনেন।
রোববার বিসিবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাওহীদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং শুনানিতে নিজের পক্ষ সমর্থনের কথা বলেন। তবে আগে জানানো হলেও তিনি আম্পায়ারদের ড্রেসিংরুমে নির্ধারিত শুনানিতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হন।
ফলে ডিপিডিসিএল ২০২-২৫ এর আচরণবিধির ধারা ৫.২.৬ অনুসারে ম্যাচ রেফারি আখতার আহমদ তাওহীদে দোষী সাব্যস্ত করে দশ হাজার টাকা জরিমানা এবং একটি ডিমেরিট পয়েন্ট দেন।
এই ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ হওয়ার ফলে সব মিলিয়ে তাওহীদের ডিমেরিট পয়েন্ট হয়েছে ৮। এর ফলে তাকে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিসিবি, যা কার্যকর হবে এই আসর থেকেই। ফলে জাতীয় দলের এই ব্যাটার মিস করবেন ২৯ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচ।
উল্লেখ্য, চলতি মাসেই একবার আম্পায়ারের সাথে তর্কে জড়িয়ে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তাওহীদ। পরে সেটা নেমে আসে এক ম্যাচে। খেলেন দুই ম্যাচ। এরপর ফের এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হলে ক্রিকেটারদের প্রতিবাদের পর বিসিবি বাকি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে এক বছরের জন্য।
নানা কারণেই গত কয়েক মাসে ক্রমেই পথ হারাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। মাঠের বাইরের একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার সাথে মাঠের চিত্রটাও আশা জাগানিয়া নয়। দর্শকরাও যেন ক্রমেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এসবের মধ্যে যোগ হয়েছে জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্টে বিব্রতকর হার। সময়টা কী আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটের জন্য? জাকের আলি অনিকও সেটা মেনে নিচ্ছেন। তবে এটাও মনে করিয়ে দিলেন, ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে খারাপ সময় পেছনে ফেলা সম্ভব।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বাংলাদেশ জাতীয় দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ নিয়ে। বেসরকারি কোনো চ্যানেল সিরিজটি দেখাতে আগ্রহ না দেখানোয় বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দারস্থ হয়েছে সরকারি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনের। সিলেটে প্রথম টেস্ট দেখতে চারদিনের একদিনেও চোখে মেলেনি দর্শকদের তেমন সাড়া। সেই ম্যাচেই আবার তিন উইকেটে হেরে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের ওপর চাপ যেন বেড়ে গেছে আরও। আর ক্রিকেটের জোয়ারেও যেন বইছে ভাঁটা।
দ্বিতীয় টেস্টের আগের সংবাদ সম্মেলনে শনিবার জাকের অবশ্য শোনালেন ইতিবাচক কথাই।
“আমাদের ভালো পারফরম্যান্স করা উচিত। ভালো পারফরম্যান্সের ওপর তো আর কিছু নেই। আমাদের সবারই তাই লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলা। যেহেতু সিনিয়র ক্রিকেটাররা চলে যাবেন, তাই তরুণদের মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগতেই পারে। আমি মনে করি এটা ঠিক হতে কিছুদিন সময় লাগবে। এটা সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন
তামিমদের আপত্তির পর স্থগিত হল তাওহীদের শাস্তি |
![]() |
৯৫ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মুশফিকুর রহিম বাদে বেশ তরুণ একটা দল নিয়েই এই সিরিজে খেলছে বাংলাদেশ। কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বিদায়ের ফলে ক্রমেই দলে বাড়ছে তারুণ্যের ভিড়। আর তাদের মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনাময় ও ধারাবাহিক পারফর্মারদের একজন জাকের। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই খেলেছেন লড়িয়ে ইনিংস। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে বোলার হাসান মাহমুদকে অতিরিক্ত বল (৫৮) খেলানোর কারণে কিছুটা সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাকে।
তবে কাজটা কেন করেছেন, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে এই কিপার-ব্যাটারের।
“(দ্বিতীয় ইনিংসে) ৭ উইকেটে চলে যাওয়া মানে আমাদের হাতে আরও তিনটা উইকেট আছে। আমরা যেহেতু টার্গেট দিচ্ছিলাম, তাই প্রতিটি রানই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেখেন, হাসান কিন্তু ৫৮ বল খেলেছে। আমাদের মধ্যে ৩৭ রানের একটা জুটি হয়েছে। এই রান যদি হাসান একাই করত, তাহলে আমার সমস্যা নেই। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ম্যাচটা বড় করার, যতদূর সম্ভব টেনে নেওয়ার। চেষ্টা করেছি, হয়নি আসলে।”
টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছয় থেকে আট নম্বর পজিশনে খেলতে হচ্ছে জাকেরকে। ফলে প্রায় নিয়মিতভাবেই তাকে ইনিংস টেনে নিতে হচ্ছে স্বীকৃত ব্যাটারদের ছাড়াই আর বোলারদের সঙ্গী করে। ফলে কয়েকবারই হারাতে হয়েছে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ।
আরও পড়ুন
প্রায় ৩ বছর পর টেস্ট দলে বিজয় |
![]() |
তবে ব্যক্তিগত এসব অর্জন নিয়ে আক্ষেপ নেই জাকেরের।
“ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আমি এভাবে ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত। ঘরোয়াতেও আমি ৬-৭ নম্বরে ব্যাট করেছি। তাই টেল এন্ডারদের নিয়ে খেলার অভ্যাস আমার আগেও ছিল। এই কারণেই কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমার সেঞ্চুরি করতে পাঁচ বছর লেগে গেছে। তাই এসব হবেই। এই কঠিন দিকগুলো সামলেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন মোড়। বসুন্ধরা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য প্রথমে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন তরুণ এই ব্যাটার। পরে সেটা কমে আসে এক ম্যাচে। এরপর আবার সেটা জারি করার সিদ্ধান্ত নিলে আপত্তি জানান তামিম ইকবাল সহ ক্রিকেটাররার। সেটার জেরে শেষ পর্যন্ত তাওহীদের শাস্তি আপাতত স্থগিত করেছে বিসিবি। ফলে এই মৌসুমে আর নিষেধাজ্ঞা থাকছে না মোহামেডানের এই ব্যাটারের।
এর পরিবর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে তাওহীদে শাস্তি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। অর্থাৎ, আগামী বছরের ডিপিএলের প্রথম ম্যাচে বাকি এক ম্যাচের শাস্তি ভোগ করবেন তিনি।
আরও পড়ুন
প্রায় ৩ বছর পর টেস্ট দলে বিজয় |
![]() |
গত ১২ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকতের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তাওহীদ। সেখানেই থেমে না থেকে এরপর সংবাদ সম্মেলনেও আম্পায়ারকে আক্রমণ করে বসেন। সেই কারণে তাকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করে বিসিবি।
তবে এরপর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আপিল করে মোহামেডান। এরপর নাটকীয়ভাবে এক ম্যাচে নামিয়ে আনা হয় শাস্তির মেয়াদ। এরপর বিসিবির চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিসিবিকে জানান বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র এলিট আম্পায়ার।
সেটার প্রেক্ষাপটে শাস্তি কাটিয়ে দুই ম্যাচ খেলে ফেলা তাওহীদের নিষেধাজ্ঞা ফের দুই ম্যাচে নিয়ে যায় বিসিবি, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল মোহামেডানের পরবর্তী ম্যাচেই। তবে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে শুক্রবার বিসিবি কার্যালয়ে মিটিংয়ে বসেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার তামিম ইকবাল সহ ডিপিএলের অন্য দলের অনেক খেলোয়াড়রা।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা সেই মিটিংয়ের পর তামিম সরাসরি তাওহীদের ওপর আরোপিত দ্বিতীয় মেয়াদে শাস্তি নিয়ে আপত্তি তোলেন। তার মতে, যেহেতু বিসিবি একবার শাস্তি কমিয়েছে, ফলে দুই ম্যাচ খেলার পর আবার শাস্তি দেওয়াটা হাস্যকর ঘটনা। পাশাপাশি এও বলেন, এটা কোনো প্রক্রিয়া মেনে দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ, নিজেদের দোষে বাদ পড়ার হতাশায় ক্যারিবিয়ানরা |
![]() |
এর খানিক বাদে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিসিবি জানায় তাওহীদের শাস্তি স্থগিতের খবর।
“গত ১৯ এপ্রিল আম্পায়ার্স কমিটির ইস্যুকৃত শাস্তি বাতিলের সেই সিদ্ধান্তের পরবর্তী আদেশ অকার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির পর সভা হয়েছে, যেখানে বিষয়টি আবারও বিবেচনায় নিয়ে ম্যাচ নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি। যা কার্যকর হবে ১২ মাস পর।”
আইসিসি টেস্ট ফান্ডের রেভিনিউ শেয়ারিং মডেল প্রবর্তিত হওয়ায় ২০১৯ সালের মে থেকে বদলে গেছে আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামের (এফটিপি) সূচি। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে থাকা শীর্ষ ৯টি দেশকে নিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ প্রবর্তনের পরিকল্পনা গৃহিত হওয়ায় পর পর দুটি ৪ বছর মেয়াদী এফটিপি চক্রে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরে থাকা তিনটি দল জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডের সাথে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৯ টি দলের দ্বি-পাক্ষিক টেস্ট সিরিজ খেলা বাধ্যতামূলক নয়।
মূলত সেই কারণেই এফটিপির সর্বশেষ চক্রে (২০১৯-২০২৩ সালের এপ্রিল) জিম্বাবুয়ে এবং টেস্ট ক্রিকেটের নবাগত আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে টেস্টে এড়িয়ে চলেছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষস্থানীয় দলগুলো। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলমান চক্রেও (২০২৩-২৭) একই পথে হাঁটছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হয়ে থাকা দলগুলোর অধিকাংশই।
আইসিসির এফটিপি এখন দ্বি-পাক্ষিক সূচিতে পরিণত হওয়ায়, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জিম্বাবুয়ে,আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে আগ্রহী নয় অধিকাংশ টেস্ট দল। অথচ, আইসিসির এফটিপির বিগত চক্রের মত চলমান এফটিপিতেও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তিন ফরম্যাটের ম্যাচের সিরিজ খেলতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিসিবি। চলমান চক্রে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট খেলা থেকে বিরত থেকেছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে জিম্বাবুয়ের টেস্ট উন্নতিতে সহায়কের ভুমিকায় নিউ জিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এফটিপির চলমান চক্রের চার বছরে জিম্বাবুয়ে ১৮টি টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪টি। এর বাইরে এফটিপির বর্তমান চক্রে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে ৮টি ওডিআই এবং ৮টি টি-টোয়েন্টিও খেলার সুযোগ পাচ্ছে।
তিন ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড তুলনামূলক ভালো। চলমান সিরিজের আগে ১৮টি টেস্টে ৮-৭-এ এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। মুখোমুখি ৮১টি ওডিআই ম্যাচে ৫১টি জয়ের বিপরীতে ৩০টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। দুই দলের ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচে ১৮-৭-এ এগিয়ে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এক সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে অবদান রাখা জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
সেই কারণেই জিম্বাবুয়ে দলকে আতিথ্য দেয়াকে একটা রেওয়াজে পরিণত করেছে বিসিবি।
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্টে জয়-পরাজয় আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান নড়চড় করবে না। শুধু তা-ই নয়, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। হোমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ৩টি দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ আয়োজনে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বিসিবি।
অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ২ টেস্ট এবং ৩ ওডিআই ম্যাচের সিরিজ আয়োজন করে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭১ হাজার ৩২৫ টাকা ভর্তুকী দিয়েছে বিসিবি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ২ টেস্ট, ৩ ওডিআই এবং ২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজ আয়োজনে অবশ্য ভর্তুকী গুনতে হয়নি। সেই দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৭ টাকা মুনাফা করতে পেরেছে বিসিবি। তবে যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ২০২৪ সালের এপ্রিলে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে জিম্বাবুয়েকে আতিথ্য দিয়ে নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বাধীন বোর্ড বড় অঙ্ক ভর্তুকী দিয়েছে। প্রচারসত্ব থেকে প্রত্যাশিত অর্থ আয়ের পরও ভর্তুকীর অঙ্ক ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৫ টাকা!
এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রচারসত্ব বিক্রি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ভর্তুকীর অঙ্কটা কোথায় দাঁড়ায়, সেই হিসাবটা জানা যাবে সিরিজ শেষেই।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিয়ে শুধু আর্থিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না বিসিবি, টেস্টে নীচের সারির দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরমেন্স নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেককে স্মরণীয় করতে চেয়ে জিম্বাবুয়েকে আতিথ্য দিয়ে চরম শিক্ষা পেয়েছিল বিসিবি। পূর্ণশক্তির বাংলাদেশ দল ১৫১ রানে হেরেছে সেই টেস্ট। সাড়ে ছয় বছর পর সেই সিলেটে ফিরতি টেস্টেও লজ্জা দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে ৩ উইকেটে।
আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামের (এফটিপি) চলমান চক্রের (২০২৩-২৭) সূচি চূড়ান্ত হয়েছে অনেক আগে। বিসিবির পদচ্যুত সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আমলে। সে কারণেই এফটিপির পরবর্তী সূচি (২০২৭-৩১) চূড়ান্ত হওয়ার আগে সতর্ক হওয়ার পক্ষে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম, “ওদের সাথে খেলে উন্নতি হবে কিংবা সিরিজ আয়োজন করা লাভজনক হবে, এমন তো নয়। জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট সিরিজ এড়াতে পারলে ভালো হতো। আইসিসির পরবর্তী এফটিপির আগে কীভাবে প্লান করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।”
একদিন আগেই শেষ হওয়া প্রথম টেস্টের ঘন্টাখানেক বাদেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে৷ দলের উল্লেখযোগ্য নাম অভিজ্ঞ ওপেনার এনামুল হক বিজয়, যিনি তিন বছর পর ডাক পেয়েছেন টেস্ট দলে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজের শেষ ম্যাচের বাংলাদেশ স্কোয়াডে আরেকটি পরিবর্তন অবশ্য অনিবার্যই ছিল। পিএসএল খেলতে যাওয়া পেসার নাহিদ রানার জায়গায় এসেছেন স্পিনার তানভীর ইসলাম।
টেস্ট দলে ডাক পাওয়া বিজয় পুরষ্কার পেলেন চলমান বসুন্ধরা ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট লিগে অসাধারণ ফর্ম দেখিয়ে। সম্প্রতি স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে ৫০টি সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
টেস্টে অবশ্য বিজয়ের পরিসংখ্যান খুব আশা জাগানিয়া নয়। ৫ টেস্টে ১০ গড়ে রান মাত্র ১০০, নেই কোনো ফিফটি। শেষবার লাল বলের ক্রিকেটে তাকে দেখা গিয়েছিল ২০২২ সালের জুনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
আর তানভীর এখনও আছেন টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের।
আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতেছে জিম্বাবুয়ে।
দ্বিতীয় টেস্টের বাংলাদেশ স্কোয়াড :
নাজমুল হোসাইন শান্ত (অধিনায়ক), মাহমুদুল হাসান জয়, শাদমান ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, মমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহিদুল ইসলাম, জাকের আলি আনিক, মেহেদি হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব।
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
১০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে