প্রথম দুই ম্যাচের মত আরও একবার জ্বলে উঠলেন তানজিদ হাসান তামিম। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন পারভেজ হোসেন ইমন, জুটিতেই এল শতক। আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে এরপর অনায়াসেই দলগুলো এগিয়ে যায় দুইশ প্লাস স্কোরের দিকে। তবে মিডল অর্ডারে সেভাবে কেউই পারলেন না ফিনিশিংটা দিতে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে মোহাম্মদ হারিসের অনবদ্য শতকে পেশাদার রান তাড়ায় সহজেই জয় তুলে নিল পাকিস্তান। তাতে একরাশ হতাশায় শেষ হল বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান জিতেছে ৭ উইকেটে। বাংলাদেশের করা ৬ উইকেটে ১৯৬ রান দলটি পাড়ি দিয়েছে ১৬ বল হাতে রেখেই। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল পাকিস্তান।
ব্যাট হাতে ফিনিশিংটা ভালো না হলেও বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভালোই। আগের ম্যাচে মলিন থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাহিবজাদা ফারহানকে। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ দেন রিশদ হোসেনকে।
ক্রিজে গিয়েই হাসান মাহমুদকে দুই চার মেরে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে শুরুটা করেন মোহাম্মদ হারিস। টি-টোয়েন্টি অভিষেকের ম্যাচে খালেদ আহমেদ প্রথম ওভারেই ছিলেন খরুচে। টানা দুই বলে হারিস মারেন চার ও ছক্কা। অন্যপ্রান্তে সাইম আইয়ুব অবশ্য ব্যাট চালাচ্ছিলেন ধীরলয়ে, প্রথম ২৪ বলে করেন ২৪ রান!
তবে সেই চাপ বুঝতে না দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন হারিস। ছয় ওভারেই রান হয়ে যায় ৫৬। নিজের প্রথম ওভারে এসে ১২ রান দেন আগের দুই ম্যাচে ৫০-এর বেশি রান দেওয়া রিশাদ। পার্টটাইমার শামিম হোসেন তার করা প্রথম ওভারে ছক্কা হজম করেন সাইমের কাছে। মাত্র ২৫ বলে ফিফটি তুলে নেন হারিস।
ইনিংস এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ক্রমেই হাত খুলে খেলা সাইম ছিলেন ফিফটির পথেই। তবে ফিরতি স্পেলে এসে স্লোয়ারে তাকে বিভ্রান্ত করেন তানজিম। ২৯ বলে ৪৫ রানে থামেন তরুণ এই ওপেনার।
চার মেরে রানের খাতা খোলেন নাওয়াজ। অন্যপ্রান্তে মিরাজ আক্রমণে এসে নাওয়াজের হাতে ছক্কা ও চার খাওয়ার পর একই ওভারে হাসেন শেষ হাসি। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ২৬ রানে আউট হন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।
ভুলে যাওয়ার মত এক সিরিজে আরও একবার মাঝের ওভারে দলকে হতাশ করেন রিশাদ। তিন বাউন্ডারিতে তৃতীয় ওভারে দেন ১৬ রান। দলের জয় নিশ্চিত করার পথে হারিস তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। অপরাজিত থাকেন মাত্র ৪৬ বলে ১০৭ রানে। আর অধিনায়ক সালমান আগা করেন ১৫।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ পেয়েছিল স্বপ্নের এক শুরু। সাম্প্রতিক সময়ে দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার তানজিদ বজায় রাখেন তার ফর্ম। সিরিজে প্রথমবারের মত রানের দেখা পাওয়া ইমন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভড়কে দেন পাকিস্তানের বোলারদের। ফলে প্রতি ওভারেই হয় বাজে বল, আর রানও আসতে থাকে চার-ছক্কায় দ্রুততার সাথেই।
দুজনের মধ্যে ইমন ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। আবরার আহমেদের এক ওভারে দুই চার ও এক ছক্কা মেরে মাত্র ২৭ বলে পা রাখেন পঞ্চাশে। সাথে তানজিদও খেলেন কিছু বড় শট। তাতে ১০ ওভারে ৯৯ রান হয়ে যায়। এরপর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি কেউই।
৩২ বলে ৪২ করে ফাহিম আশরাফের বলে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তানজিদের ইনিংস। পরের ওভারেই ফের উইকেট। এবার শাদাব খানের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন ইমন, শেষ হয় তার ১৯৪ স্ট্রাইক রেটে খেলা ৬৬ রানের ইনিংস, যা তিনি সাজান ৭ চার ও ৪ ছক্কায়।
তাওহীদ হৃদয় ও লিটন দাস এরপর কিছুটা চেষ্টা করেন রানের গতি ধরে রাখার। তবে এই সময়েই ম্যাচে ফিরে আসে পাকিস্তান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই দুজনের পাশাপাশি শামিম ও মিরাজের বিদায়ে রানের গতি কমে যায় বাংলাদেশের। ফলে আশা জাগিয়েও আর করা হয়নি ২০০ প্লাস স্কোর, যা শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণিত আর হয়নি।
২৫ জুন ২০২৫, ৭:২৩ পিএম
২৫ জুন ২০২৫, ৬:৪৩ পিএম
২৫ জুন ২০২৫, ৬:০৫ পিএম
২৪ জুন ২০২৫, ৮:১৭ পিএম
সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠে বাংলাদেশের অতীত মোটেও সুখকর নয়। তিন টেস্টের দুটিতে ইনিংস আর অন্যটিতে বড় রানের ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এখানকার পীচ গল-এর মতো নয়, শুরু থেকেই টার্ন পেতে শুরু করে স্পিন। তাই এখানে অনায়াসে ছড়ি ঘোরাতে পারেন স্পিনাররা - এই মাঠের অতীত রেকর্ড বলছে তাই। ১৮ বছর পর এসএসসিতে ফিরেতা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা। গল-এ বীরত্বপূর্ণ ড্র থেকে টনিক নিতে পারেনি বাংলাদেশ দল। প্রথম দিন ধুঁকেছে ব্যাটাররা। বৃষ্টি বিঘ্নিত প্রথম দিনে ১৯ ওভার কম ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। তারপরও লেজের জোরে প্রথম দিন পাড়ি দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। এদিন স্কোর টেনে নিতে পেরেছে ২২০/৮ পর্যন্ত।
দিনের প্রথম ঘন্টায় উইকেট পড়েছে ১টি। তবে ওই ঘন্টায় রান পাওয়া যে কতোটা কষ্টের, টপঅর্ডাররা তা জানিয়ে দিয়েছেন। বিজয়কে হারিয়ে ওই ঘন্টায় ১২ ওভারে রান উঠেছে মাত্র ২৩! এক যুগেও টেস্টের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি বিজয়, নিজেই এই ফরম্যাট থেকে নিষ্কৃতি চান, এসএসসিতে টেস্টের প্রথম দিন নির্বাচকদের তা জানিয়ে দিয়েছেন এনামুল হক বিজয়। লঙ্কান পেসার আসিথা ফার্নান্দোর দ্বিতীয় ওভারে পর পর দুই বলে উইকেটের পেছনে দুবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পরও রানের মুখ দেখেননি।
আসিথার পরের ওভারে প্লেড অনে থেমেছে তার টেস্টে ১৪তম ইনিংসে। গল টেস্টের প্রথম ইনিংসের ছবিটাই যেনো মনে করিয়ে দিয়েছেন বিজয়। সেই ইনিংসে ১০ বলে ০ তে শেষ তার ইনিংস, এসএসসির প্রথম ইনিংসেও তা-ই! শ্রীলঙ্কা সফরে টানা তিন ইনিংসের চিত্র ০,৪ ও ০! ৮ টেস্টে ১৪ ইনিংসের সমষ্টি ১৪৩। একজন ওপেনারের ১২ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে নেই কোনো ফিফটি, গড় মাত্র ১০.২১। এর পরও কী টেস্ট খেলার দাবি করবেন বিজয়?
প্রথম ঘন্টায় রানের জন্য যতোটা ধুঁকেছে বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ঘন্টায় ততোটা ধুঁকতে হয়নি। এই ঘন্টায় মুমিনুলকে হারিয়ে বাংলাদেশ যোগ করেছে ৪৮ রান। সেট হয়ে মুমিনুল আত্মাহুতি দিয়েছেন। ধনঞ্জয়ার বলে কাভারে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ফিরে এসেছেন তিনি ২১ রানের মাথায়।
দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশকে ভালই ধাক্কা দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এই সেশনে স্কোরশিটে ৭৩ উঠতে হারিয়েছে বাংলাদেশ ৩ উইকেট। বিশ্ব ফার্নান্ডোর আউটসাইড অফ ডেলিভারিতে পুশ করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন শান্ত (৮)।
থারিন্দুর আউটসাইড অফ ডেলিভারিতে স্ল্যাশ করতে যেয়ে সাদমান মিস করেছেন ফিফটি (৯৩ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪৬)। অভিষিক্ত বাঁ হাতি স্পিনার সোনাল দিনুশার আউটসাউড অফ ডেলিভারিতে খেলতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন (৫৬ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ৩৪)।
দিনের শেষ সেশন পাড়ি দিতে সংযমী হতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। দিনুশাকে সুইপ করতে চেয়ে ডিপ স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে এসেছেন তিনি (৭৫ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৩৫)।
৭ম উইকেট জুটিতে নাঈম হাসানকে নিয়ে ভালই প্রতিরোধ করছিলেন মিরাজ। ইনজুরি থেকে ফিরে বড় ইনিংস খেলার সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন তিনি। তবে বিশ্ব ফার্নান্ডো দ্বিতীয় স্পেলের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন তিনি ৩১ রানে।
মিরাজকে দারুণ সঙ্গ দেয়া টেল এন্ডার নাঈম হাসান দুর্ভাগের শিকার। আসিথা ফার্নান্ডোর আউটসাইড অফ ডেলিভারি খেলতে যেয়ে ইনসাইড এজ হয়ে স্ট্যাম্পের উপরের বেলস নিয়েছে উড়িয়ে। তার ২১ রানের ইনিংসে দুইশ-তে পৌছে গেছে বাংলাদেশ।
সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে প্রথম দিনে শ্রীলঙ্কার দুই পেস বোলার আসিথা ( ২/৪৩) এবং বিশ্ব ফার্নান্ডোর (২/৩৫) পাশে অভিষিক্ত বাঁ হাতি স্পিনার সোনাল দিনুশা করেছেন দারুণ বোলিং (২/২২)। প্রথম দিনের স্কোরের সঙ্গে শেষ দুই জুটি কতোটা যোগ করতে পারে এবং মিরাজের প্রত্যাবর্তন টেস্টে ৫ বোলারকে নিয়ে শ্রীলঙ্কার উপর প্রতি আক্রমন কতোটা জোরালো হয়, সেদিকে তাকিয়ে এখন বাংলাদেশ সমর্থকরা।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অন্যতম শীর্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্স এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় মার্কেটিং সংস্থা ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিসের মধ্যে সম্প্রতি কৌশলগত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এই অংশীদারিত্ব চুক্তির আওতায় ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিস রংপুর রাইডার্সের ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি, কনটেন্ট নির্মাণ, ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা ও ফ্যান এনগেজমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। তাদের লক্ষ্য থাকবে রংপুর ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্র্যান্ডের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করা এবং দর্শকদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলা।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন রংপুর রাইডার্সের হেড অব ডিজিটাল ও চিফ প্যাট্রনের উপদেষ্টা মেহরাব আলম চৌধুরী ও ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদেল ওয়াহিদ।
রংপুর রাইডার্স ও ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিসের এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ব্র্যান্ড মার্কেটিং ও দর্শক সম্পৃক্ততার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
একবারের বিপিএল চ্যাম্পিয়ন রংপুর গত বছর প্রথমবারের মত হওয়া গ্লোবাল সুপার লিগের শিরোপা ঘরে তোলে। এবারের আসরে নুরুল হাসান সোহানের দল অংশ নিবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র দল হিসেবে রংপুরই খেলছে এই টুর্নামেন্টে।
বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল, খবরটা পুরনো হলেও সূচি এতদিন জানানো হয়নি। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী মাসের টি-টোয়েন্টি সিরিজের সময়সূচি প্রকাশ করল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানিয়েছে, টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ২০, ২২ ও ২৪ জুলাই। প্রতিটি ম্যাচই শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। আর সবগুলোই অনুষ্ঠিত হবে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে আগামী ১৬ জুলাই ঢাকায় পা রাখবে পাকিস্তান স্কোয়াড। আর সিরিজ শেষ হওয়ার পরদিন, অর্থাৎ আগামী ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ত্যাগ করবে সফরকারীরা।
বাংলাদেশ দল এখন ব্যস্ত শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট সিরিজে। এখন চলছে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এরপর লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবেন লিটন-শান্তরা। সেই রেশ না কাটতেই এরপর দেশে ফিরে মুখোমুখি হতে হবে পাকিস্তানের।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানে গিয়ে দলটির সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। শুরুতে ৫ ম্যাচ হওয়ার কথা থাকলেও পরে সেটা নেমে আসে তিন ম্যাচে। সিরিজে বাংলাদেশ হেরে যায় ৩-০ ব্যবধানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের প্রথম ড্র হওয়া ম্যাচে ব্যাটে-বলে দারুণ সময় কাটিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তাতে সবচেয়ে উজ্জ্বল থাকা নাজমুল হোসেন দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে ব্যাটারদের র্যাঙ্কিংয়ে দিয়েছেন বড় লাফ, উন্নতি করেছেন ২১ ধাপ। মুশফিকুর রহিম ও নাঈম হাসানও এগিয়েছেন যথাক্রমে ব্যাটার ও বোলারদের তালিকায়।
আর সেই পারফরম্যান্সের ফল পাওয়া গেল বুধবার প্রকাশিত আইসিসির সর্বশেষ র্যাঙ্কিং হালনাগাদে শান্ত টেস্ট ব্যাটারদের তালিকায় ২৯তম স্থানে উঠে এসেছেন শান্ত।
গল টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে শান্তর ব্যাট থেকে আসে ১২৫ রানের ইনিংস। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো এক ম্যাচে দুই সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। আর অধিনায়ক হিসেবে শান্তর আগে এমন কীর্তি গড়েছেন মাত্র ১৬ জন।
এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বড় স্কোর গড়ায় অবদান রেখে অভিজ্ঞ মুশফিকুর খেলেন ১৬৩ রানের চমৎকার ইনিংস। এরপর পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৪৯ রান। দারুণ ব্যাটিংয়ের সুবাদে ১১ ধাপ এগিয়ে তিনি আছেন ২৮তম স্থানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন ওপেনার শাদমান ইসলাম। তার এই পারফরম্যান্স তাকে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে দিয়েছে ৩ ধাপ, যার সুদবাএ তিনি এখন উঠে এসেছেন ৫৫তম স্থানে।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তরুণ স্পিনার নাঈম দেখান ঘূর্ণিতে ম্যাজিক। প্রথম ইনিংসে নেন ৫টি উইকেট, যা তার ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত বিদেশের মাটিতে ফাইফারের কীর্তি। দ্বিতীয় ইনিংসে এরপর এক উইকেট নিয়ে ৬ ধাপ এগিয়ে ৪৮ নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি।
আর দুই ইনিংস মিলিয়ে তিন উইকেট নেওয়া পেসার হাসান মাহমুদও ঝলক দেখিয়েছেন। এতে তিনি ৫ ধাপ এগিয়ে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শামার জোসেফের সঙ্গে যৌথভাবে অবস্থান করছেন ৫৪ নম্বরে।
এক সময়ে সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠ বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের কাছে পরিচিত ছিল বেশ। ২০০১ থেকে ২০০৭, এই সময়ে ৩টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ কলম্বোর অভিজাত এই টেস্ট ভেন্যুতে। বেশ লম্বা বিরতি দিয়ে এই ভেন্যুতে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ২৫ জুন ফিরবে বাংলাদেশ। ১৮ বছর পর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠে ফিরছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির রজত জয়ন্তীর ঠিক আগের দিন বাংলাদেশ দল প্রত্যাবর্তন করছে এসএসসিতে দুঃস্মৃতি নিয়ে। যে ভেন্যুতে অতীতে ৩ টি টেস্টের সব কটিতে বিপর্যস্ত হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি আছে জমা।
২০০১ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে ইনিংস ও ১৩৭ রানে হার দিয়ে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের এই ভেন্যুতে। পরের বছর দ্বি-পাক্ষিক টেস্ট সিরিজের ম্যাচে ২৮৮ রানে এবং ২০০৭ সালে ইনিংসও ২৩৪ রানে হার তৈরি করে দিয়েছে স্বাগতিকদের সঙ্গে বড় ব্যবধান। ওই তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ দলের সামনে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছেন সর্বকালের সেরা স্পিনার মুরালীধরন। এসএসসি ভেন্যুটাই যে তার লাকি গ্রাউন্ড। টেস্টে ৮০০ উইকেটের মধ্যে ১৬৬টি শিকার তার এই ভেন্যুতে।
২৪ টেস্টে ২০.৬৯ গড়ে উইকেট শিকার মুরালীকে প্রতিপক্ষদের সামনে উপস্থাপন করিয়েছে মহা আতঙ্ক হিসেবে। এসএসসি লাকি গ্রাউন্ড মাহেলা জয়বর্ধনেরও। লারার বিশ্বরেকর্ড ৪০০'র পেছনে ছুটতে ছুটতে ৩৭৪ পর্যন্ত ইনিংস টেনে নেয়ার বীরত্ব দেখিয়েছেন মাহেলা এই ভেন্যুতে। এই ভেন্যুতে টেস্টে ৩ হাজার রানের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন মাহেলা। ৭৯ রানের আক্ষেপ নিয়ে থামতে হয়েছে শ্রীলঙ্কার এই লিজেন্ডারির।
আরও পড়ুন
২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিকিট পেল কানাডা |
![]() |
মুরালী-মাহেলার এই লাকি গ্রাউন্ডে সব কৃতি ছাপিয়ে গেছেন বাংলাদেশের একজন। তিনি মোহাম্মদ আশরাফুল। টেস্ট অভিষেকে মাত্র ১৭ বছর ৪২ দিন বয়সে মুরালীর ফনা তোলা ছোবল সামাল দিয়ে দুই যুগ আগে করেছেন সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড। যে রেকর্ডটি আজও অটুট। আশরাফুলের সেই স্মৃতিময় ভেন্যু স্বাগত জানাচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তদের।
গল টেস্টে উভয় ইনিংসে শান্ত'র সেঞ্চুরি, প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি, এই জুটির ২৬৪ও ১৪৯ রানে বীরত্বপূর্ণ ড্র থেকে টনিক নিয়ে এবার এসএসসিতে অবতীর্ন হবে বাংলাদেশ। গল টেস্টের চেয়েও ভাল কিছু করার প্রত্যয় বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্সের-‘আমরা গল-এ যেভাবে প্রথম টেস্টে খেলেছি, এখানে সেই মান ধরে রাখা কিংবা আরও ভালো কিছু করা দরকার। এখানে আমরা জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামব। কীভাবে জেতা যায়, সেই উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
ইনজুরির কারণে সিরিজের প্রথম টেস্ট মিস করেছেন অফ স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। এসএসসিতে সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে ফিরছেন তিনি, তা নিশ্চিত করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরাজের জায়গায় গল টেস্টে সুযোগ পেয়ে সেই সুযোগের সদ্বব্যহার করেছেন অফ স্পিনার নাঈম হাসান। বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়ে প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট। কলম্বো টেস্টে একাদশ চূড়ান্ত করার আগে নাঈমকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে টিম ম্যানেজমেন্ট।
এসএসসির টেস্ট ইতিহাস কথা বলবে স্পিনারদের পক্ষে। মুরালীর ১৬৬ উইকেটের পাশে হেরাথের ৮৮ উইকেট-সে স্বাক্ষ্যই দিবে। সে কারণে তিন স্পিনার, না তিন পেসার-কম্বিনেশন সাজানোটাই এখন ভাবনায় ফেলেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। গল টেস্টে উইকেটহীন নাহিদ রানার জায়গায় আসতে পারে পরিবর্তন। ফিরতে পারেন খালেদ।
আরও পড়ুন
অফ স্পিনার নাঈমে লিড, ড্র-র পথে গল টেস্ট |
![]() |
গল টেস্টে অভিষিক্ত স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েকের বোলিং শ্রীলঙ্কা টিম ম্যানেজমেন্টকে আকৃষ্ট করেছে। দু'হাতে স্পিন করতে পারেন, এবং করে দেখিয়েছেন সেই ম্যাচে এই স্পিনার। এবার একই বৈশিষ্ট্যের আর এক স্পিনার দিনুশার অভিষেকের সম্ভাবনা প্রবল। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুউজের অবসর পরবর্তী টেস্টে দিনুশার সাম্প্রতিক অলরাউন্ড পারফরমেন্স তৈরি করেছে সুযোগের ক্ষেত্র। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৮ ম্যাচে বাঁহাতি স্পিনে ৯৯ উইকেট ও ৭ সেঞ্চুরিতে ৪০.৬২ গড়ে ২৪৭৮ রান করা দিনুশাকে এসএসসি টেস্টে ১২ জনের দলে রেখে সে আভাসই দিয়েছে শ্রীলঙ্কা টিম ম্যানেজমেন্ট।
এসএসসিতে হয়ে যাওয়া ৪৫ টেস্টে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা পেয়েছে ২১টি-তে জয়। প্রতিপক্ষদের জয়ের সমষ্টি সেখানে ১০টি। এই ভেন্যুতে সর্বশেষ ৫টি টেস্টের ৩টিতে হেরেছে স্বাগতিকরা। ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডের কাছে হারের সেই ক্ষতটাও আছে স্বাগতিকদের।
গল-এ মাহেলার ট্রিপল সেঞ্চুরির (৩৭৪) ম্যাচে শ্রীলঙ্কার রান পাহাড়ের (৭৫৬/৬ডি.) অতীত আছে। উইকেট প্রতি ৩৪.৭৮ রানের অতীতও আছে। ব্যাটারদের তাই চাঙ্গা থাকারই কথা। তবে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট ম্যাচের ভেন্যুতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্টের গতিপথ বদলে দিতে পারে বৃষ্টি। আবহওয়ার পূর্বাভাস সে শঙ্কাও দেখাচ্ছে