৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১:২৫ পিএম
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে অনেকেরই রয়েছে বিশেষ পরিচিতি। তবে স্রেফ টি-টোয়েন্টি ধারাভাষ্যকার হিসেবে যদি একজনের নাম বলতে বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা হবে ড্যানি মরিসন। নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই ক্রিকেটার খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় যা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, খেলা ছাড়ার পর মাইক হাতে তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেছেন বিশ্বজুড়ে। মজার ছলে কথা বলা, অদ্ভুত বাচনভঙ্গি আর হাস্যকর সব অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ধারাভাষ্যকে তিনি দেন ভিন্ন মাত্রা। চলতি বিপিএলেও ধারাভাষ্য দিচ্ছেন মরিসন।
টি-স্পোর্টসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার মরিসন কথা বলেছেন ধারাভাষ্য, এই পেশায় ভালো করার উপায়, বিপিএল, সাকিব আল হাসান সহ নানা বিষয়ে।
পাঠকদের জন্য মরিসনের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল :
প্রশ্ন : প্রথমেই ধন্যবাদ আরও একবার বাংলাদেশে আসার জন্য। নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন মানুষ এখানে আপনাকে কতোটা আন্তরিকভাবে ভালোবাসে?
মরিসন : তা আর বলতে! ওদের ভালোবাসা আর সেলফির সিরিয়াল দেখে আমার তো মনে হয় এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় তারকা বুঝি আমিই (হাসি)। সত্যি বলতে, আমি কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। আগেও লোকেদের ভালোবাসা পেয়েছি বাংলাদেশে, তবে এবার কিছুটা আবেগী হয়ে যাচ্ছি। ধন্যবাদ বাংলাদেশ।
প্রশ্ন : আবেগের কথা বললেন। মাইক হাতে আপনি পুরোটা সময় ধরেই যেভাবে হাসি-ঠাট্টা করে যান, মজার মজার সব কথা বলেন… পেশাদার জায়গা থেকেও যদি বলি, বছরের পর বছর প্রতিদিন এই একটা কঠিন কাজ করে যাওয়া নিশ্চয় চ্যালেঞ্জিং লাগে? কারণ, লোক হাসানো দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি বলেই মনে করা হয়।
মরিসন : নো মাই ফ্রেন্ড। দেখুন, আপনি যখন নিজের কাজটাকে ভালোবাসবেন, তখন সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই হয়ে যাবে। বাড়তি কিছু আর চেষ্টা করা লাগে না তখন। তবে এটাও ঠিক, আমাকে দেখলেই সবাই ধরেই নেয়, এই লোকটা এখন আমাদের হাসাবে। এই প্রত্যাশার চাপটা মাঝে মধ্যেই টের পাই।
প্রশ্ন : আপনার ইউনিক একটা ডায়লগ ডেলিভারি স্টাইল তো আছেই, সাথে এইযে একটু ভ্রু কুচকে, অঙ্গভঙ্গি দিয়ে দর্শকদের বাড়তি বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেন, এক্ষেত্রে কি কিংবদন্তি চার্লি চ্যাপলিনের সাথে নিজের কোনো মিল পান?
মরিসন : ইউ মিন চার্লি মরিসন? (হাসি)। আমি আসলে ওভাবে দেখিনি কখনও বিষয়টা। গ্রেট চার্লি চ্যাপলিনের কথা বললেন। তার কাজের সাথে আসলে তুলনা চলে না কারোরই। ডায়লগ ছাড়া স্রেফ অঙ্গভঙ্গি দিয়েই তো তাকে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হত। সেদিক থেকে আমার কাজ তো অনেক সহজ। যখন ইচ্ছা, কথা তো বলতে পারি। এই যেমন এখন আপনার সাথে কথা বলছি কোনো অঙ্গভঙ্গি ছাড়াই।
প্রশ্ন : একজন ধারাভাষ্যকারের জন্য মৌখিক অঙ্গভঙ্গি জানাটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
মরিসন : এটা আসলে নির্ভর করে একেকজনের ব্যক্তিত্বের ওপর। এটা যে থাকতেই হবে, তা নয়। কিংবদন্তি রিচি বেনোর কথাই যদি বলেন, আমরা তো রেডিওতে তার ওই ধারাভাষ্যই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম। আমি এই পেশায় যখন আসি, তখন ভেবেছিলাম অন্যদের চেয়ে ভিন্ন কিছু না করতে পারলে হয়ত বেশিদিন টিকতে পারব না।
প্রশ্ন : এটা নিছকই আপনার বিনয়…
মরিসন : নো মাই ফ্রেন্ড। দেখুন, আমি পুরো ব্যাপারটাকে আপনাদের সামনে প্যাকেজ হিসেবে তুলে ধরি বলেই হয়ত আপনারা আমাকে পছন্দ করেন। আপনি আমাকে যদি মাইকেল হোল্ডিংয়ের মত ক্রিকেট নিয়ে বিশ্লেষণ করতে দশ মিনিট দাঁড় করিয়ে দেন, লোকেরা তাহলে টিভি বন্ধ করে দেবে। আমাকে এখনও প্রতিদিন পড়ালেখা করতে হয় এই কাজে সেরাটা দেওয়ার জন্য। সব নোট করে রেখেও প্রায়ই তালগোল পাকিয়ে ফেলি। তখনই আপনাদের বোকা বানাতে মুখের একটা অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে বসি।
প্রশ্ন : ধারাভাষ্যকারদের জন্য ইম্প্রোভাইজেশনের গুরুত্ব কতটুকু তাহলে?
মরিসন : অনেক। আপনি সব প্রস্তুতি নিয়েও সব পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন না। একটা খেলায় চার হবে, ছয় হবে, আউট হবে - এসব তো আমরা জানিই৷ তবে ক্রিকেট খেলায় প্রতিটি বলই একটা নতুন ইভেন্ট, আর তাই আপনাকে মানসিকভাবে নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখতেই হবে একটা চটকদার শব্দ বা পাঞ্চ লাইন বলে পরিস্থিতিটা তুলে ধরার জন্য। আপনাকে দর্শকদের এই ধারণা দিতে হবে যে আপনি এই ইভেন্টের জন্য শতভাগ প্রস্তুত ছিলেন। কারণ, মাঠে কী হচ্ছে সেটা তারা খালি চোখেই দেখছেন। আপনার কাজ সেখানে বাড়তি কিছু যোগ করে ইভেন্টটিকে আকর্ষণীয় করে তোলা।
প্রশ্ন : হার্ষা ভোগলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একজন ধারাভাষ্যকারের জন্য ভুল স্বীকার করে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এতে একমত হবেন?
মরিসন : অবশ্যই। দেখুন, এআইও কিন্তু হরদম ভুল করছে আজকল। সেখানে একটা মানুষ তো ভুল করবেই। আপনি ধারাভাষ্য দিচ্ছেন বলেই তো আপনি সবজান্তা হয়ে গেছেন বা আপনাকে সবজান্তা হতে হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। খেলোয়াড়ের নাম ভুল হবে, শটের নাম ভুল বলবেন - এসব তো হবেই। আপনি ভুল করলে লোকেরা কিন্তু তা নিয়ে হাসাহাসি করবে না, যদি আপনি সেটা শুধরে নেন। ভুল করেও সেটাকে ঠিক প্রমাণের চেষ্টা করলে সেটা হাস্যরসের জন্ম তো দেবেই।
প্রশ্ন : হার্ষা ভোগলের কথা আসায় প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক মনে হল। সাবেক খেলোয়াড় না হলে ধারাভাষ্যকার হওয়া যাবে না, বা তিনি ভালো করতে পারবেন না, বর্তমানে এমন চর্চা দেখা যাচ্ছে বেশ। অথচ হার্ষা ভোগলেই কিন্তু প্রমাণ, খেলাটির প্রতি নিখাদ ভালোবাসা থাকলে এই পেশায় চূড়ান্ত সফল হওয়া সম্ভব। আপনার কী মনে হয়?
মরিসন : আপনি তো উত্তরটা দিয়েই দিলেন। খেলাটির প্রতি ভালোবাসা, হ্যাঁ, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি ক্রিকেট খেলাটা বোঝেন, বিশ্লেষণ করতে জানেন আর নিজের মত করে সেটা উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে আপনি পেশাদার ক্রিকেটার না হয়েও এই পেশায় স্বাগতম।
প্রশ্ন : আপনার সমসাময়িক অনেকেই তিন ফরম্যাটে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। কিন্তু আপনি বলা যায় একরকম টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হয়ে গেছেন। অনেকেই মজার ছলে বলেন, এই ফরম্যাটটির আবিষ্কার হয়েছে আপনি ধারাভাষ্য দেবেন বলেই। টেস্ট ক্রিকেটকে মিস করেন?
মরিসন : দেখুন, জীবনের একটা পর্যায়ে এসে আপনাকে কিছু জিনিস বেছে নিতেই হবে। আপনি চাইলেও সব জায়গায় নিজের সেরাটা দিতে পারবেন না। সীমাবদ্ধতার ব্যাপার আছে। তাছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে কিন্তু আমার ধারাভাষ্য আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। কুড়ি ওভারের ক্রিকেট আর পাঁচ দিন ধরে চলা একটা ম্যাচের যে বিস্তর ব্যবধান, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। নিজের সীমাবদ্ধতা বোঝাটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। একবার ভাবুন, প্যাট কামিন্স সারাদিন বল করে পাঁচ উইকেট নিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে যাচ্ছে, তার আগে তাকে দাঁড় করিয়ে আমি মজার মজার প্রশ্ন করা শুরু করলাম। খেলোয়াড় বা দর্শক, কারো কাছেই এটা ভালো লাগবে না।
প্রশ্ন : বিপিএলে ফেরা যাক। আগেও এসেছেন এই টুর্নামেন্টে। সব মিলিয়ে কেমন লাগে বিপিএল?
মরিসন : আমার কাছে তো দুর্দান্ত লাগে। এজন্যই তো অন্যদের ডাক উপেক্ষা করে চলে এলাম বাংলাদেশে। এটা অন্যদের আবার বলবেন না (হাসি)। বাংলাদেশের যে ভেন্যুতেই যাবেন, দর্শকদের যে উদ্দীপনা দেখবেন আপনি, এটা অবিশ্বাস্য। এই দেশের মানুষ ক্রিকেটকে ভীষণ ভালোবাসে। আর তাই এখানে কাজ করার সুযোগ পেলেই সেটা লুফে নিতে চাই। এখানকার লোকেদের সরল ভালোবাসা আমাকে ভীষণচ ছুঁয়ে যায়।
প্রশ্ন : আপনার জন্মদিন উদযাপন দেখে সেটা কিছুটা আন্দাজ করা যায়। এই বিপিএলে কোনো খেলোয়াড়ের জন্মদিন নিয়েও এত মাতামাতি দেখা যায়নি।
মরিসন : যেমনটা আগেই বললাম, নিজেকে এই বিপিএলের সবচেয়ে বড় তারকা মনে হচ্ছে (হাসি)। হ্যাঁ, যেটা বললেন, এত মানুষ আমার জন্মদিন মনে রাখবে, স্টেডিয়ামে কেকও কাটবে… ভাবা যায় না আসলে। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ বিসিবির প্রতিও, তারা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে আবার বিপিএলে আসার জন্য।
প্রশ্ন : বিসিবির প্রতি আপনি কৃতজ্ঞতা জানালেন, তবে তাদেরও কী আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত? কারণ, প্রায় একই সময়ে চারটা টি-টোয়েন্টি লিগের মধ্যেও আপনি বিপিএলকে বেছে নিয়েছেন?
মরিসন : আপনি চাইলে ওভাবে দেখতে পারেন। তবে আমার কাছে পেশাদারিত্ব সবার আগে। লিগ চারটা হোক বা দশটা, সবার আগে যারা আমার সাথে যোগাযোগ করবে, তাদের সেই সম্মানটা তো আমাকে দিতেই হবে, তাই না? বিসিবির সাথে আমার সবার আগে কথা হয়েছে, তাই আমি তাদেরই প্রাধান্য দিয়েছি।
প্রশ্ন : তাহলে আপনাকে আরও প্রশ্নটা করাই যায় এই সূত্র ধরেই। বর্তমানে হরমেশাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট চুক্তি করে একেক দিন একেক লিগে খেলতে। এই বিপিএলেই যদি বলি, আন্দ্রে রাসেল, টিম ডেভিড, জেসন হোল্ডাররা বিপিএল খেলতে এলেন আগেরদিন রাতে আইএলটি২০ খেলে। আবার এই বিপিএলেই কয়েকজন খেলোয়াড়কে দেখা গেল এই লিগে আগে চুক্তিবদ্ধ হয়েও পরে তা বাতিল করে অন্য লিগে খেলতে। খেলোয়াড়দের মাঝে পেশাদারিত্ব কী দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে মনে হয়?
মরিসন : ভালো প্রশ্ন। আমি শুধু নিজের জায়গা থেকেই উত্তরটা দিতে পারি। আর সেটা হল, না আপনি দুটোর কোনোটাই করতে পারেন না। নিজে খেলোয়াড় ছিলাম বলে জানি, হোক সেটা টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে, এরপর রিকভারি টাইম আপনার লাগবেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ঘুম এসবের দরকার তো আছেই। আপনি যদি সেটা না করে নিজেকে রোবট ভাবেন আর আগেরদিন রাতে খেলে, বিমান ধরে সকালে আরেক দেশে নেমে জার্সি গায়ে চাপিয়ে নেমে পডেন, সেরাটা কীভাবে দেবেন? ক্লান্তি তো ভর করবেই আপনার ওপর। তাছাড়া দলের অন্যদের সাথে তো মিশতেও পারলেন না ওভাবে। আর চুক্তি বাতিলের ব্যাপারটা একটা দলের জন্য খুব শকিং। আপনি একটা খেলোয়াড়কে নিলেন, তাকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজালেন, মাঠে নামার আগে তাকে পেলেন না, এটা হতাশাজনক। তবে যুগ বদলে গেছে, এখন হয়ত এটাই পেশাদারিত্ব।
প্রশ্ন : এই যুগে এসে পেশাদার ক্রিকেটারদের জন্য পেশাদারিত্ব বজায় রাখাটাই কী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ?
মরিসন : অবশ্যই। একটা সময় ছিল স্রেফ ঘরোয়া, টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেটই৷ আর এখন সারা বছরই খেলোয়াড়দের ব্যস্ত থাকতে হয় আন্তর্জাতিক বা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট নিয়ে। ফিটনেস বজায় রেখে দিনের পর দিন কাজটা চালিয়ে যাওয়া নিশ্চয় সহজ হওয়ার নয়। হয়ত এই কারণেই এখন ফ্রিল্যান্স ক্রিকেটারদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের এটার সাথে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।
প্রশ্ন : এই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু কিছু অনিশ্চয়তাও তৈরি হচ্ছে। আগে বোর্ডের চুক্তিতে থাকলেই মিলত অর্থ। এখন সেটার বাইরে থাকলে, চোট পেলে সেটাও সারাতে হয় নিজের অর্থেই। আবার এই বিপিএলে আমরা দেখলাম, খেলোয়াড়দের পেমেন্ট নিয়ে নানা বিতর্ক। রীতিমত ম্যাচ বয়কট করতে হয়েছে প্রাপ্য পারিশ্রমিক বুঝে পেতে। খেলোয়াড় বা একটা লিগের জন্য এগুলো নিশ্চয় ভালো ব্র্যান্ডিং নয়?
মরিসন : অবশ্যই না। আপনি প্রথমে যেটা বললেন, সেটা একজন খেলোয়াড় জেনেই কিন্তু কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে রাখে নিজেকে। তবে বিপিএলে আমি যতটুক শুনেছি, তাতে মনে হয়েছে খেলোয়াড়দের পেমেন্ট নিয়ে যা যা হয়েছে, সেটা বিপিএলের জন্য ভালো বিজ্ঞাপন নয়। এমনিতেই এখন অনেক প্রতিযোগিতা লিগগুলোর মধ্যে, এভাবে চললে ভবিষ্যতে বড় তারকারা বিপিএলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। প্রশ্ন : একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে নাম লেখানো বা এর রেশ ধরে তার বাংলাদেশের হয়ে খেলা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেটা কীভাবে দেখছেন?
মরিসন : কঠিন প্রশ্ন। সাকিব কেন রাজনীতিতে আসল বা বাংলাদেশে এরপর কী কী হয়েছে, আমি এসবের খুব বেশি জানি না। তবে আমি মনে করি, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে রাজনীতি করাটা যদি তার খেলায় প্রভাব না ফেলে, তাহলে হয়ত সেটা খুব বড় সমস্যা হওয়ার কথা না। আবারও বলছি, আমি জানি না ঠিক কেন সাকিব বাংলাদেশে তার শেষ ম্যাচটা খেলতে পারল না। তবে বিপিএলে তাকে আমি মিস করেছি। আমি নিশ্চিত সমর্থকরাও তাকে মিস করেছে ভীষণ।
প্রশ্ন : এই বিপিএলে বাংলাদেশের কার খেলা মনে ধরেছে আপনার?
মরিসন : নাঈম শেখ। এবার দেখে মনে হচ্ছে ব্যাটিংয়ে সে অনেক উন্নতি করেছে। বড় বড় ছক্কা মারতে পারে এখন। বোলারদের মধ্যে তাসকিনের কথাই বলব। ওর দল প্লে-অফে খেললে হয়ত (এক আসরে) ৩০ উইকেট নিয়ে ফেলত। তবে আমি তার এই পারফরম্যান্সে অবাক না। সে যথেষ্ট অভিজ্ঞ। ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একজন বোলারকে আপনি আক্রমণের নেতা হিসেবেই দেখতে চাইবেন।
প্রশ্ন : আরেক অভিজ্ঞ পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে কেমন দেখলেন?
মরিসন : শেষ ম্যাচেও তো দারুণ বোলিং করল ফিজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে যদি বলেন, আমি তার কাছ থেকে তাসকিনের মতোই বিশেষ কিছু আশা করেছিলাম। সামনেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, বাংলাদেশের ভালো করতে হলে ফিজকে জ্বলে উঠতেই হবে।
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্নটা এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়েই। কোন দলকে ফেভারিট মনে হচ্ছে আর বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন দেখেন?
মরিসন : কাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকেই রাখতাম ফেভারিট হিসেবে। তবে এখন আমি ভারতের সাথে সেখানে পাকিস্তান, ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখব। বাংলাদেশ চমকে দিতে পারে, তবে সেজন্য ফিজ, মুশি, রিয়াদের মত অভিজ্ঞদের সেরা ফর্মে থাকতেই হবে।
নানা কারণেই গত কয়েক মাসে ক্রমেই পথ হারাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। মাঠের বাইরের একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার সাথে মাঠের চিত্রটাও আশা জাগানিয়া নয়। দর্শকরাও যেন ক্রমেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এসবের মধ্যে যোগ হয়েছে জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্টে বিব্রতকর হার। সময়টা কী আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটের জন্য? জাকের আলি অনিকও সেটা মেনে নিচ্ছেন। তবে এটাও মনে করিয়ে দিলেন, ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে খারাপ সময় পেছনে ফেলা সম্ভব।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বাংলাদেশ জাতীয় দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ নিয়ে। বেসরকারি কোনো চ্যানেল সিরিজটি দেখাতে আগ্রহ না দেখানোয় বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দারস্থ হয়েছে সরকারি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনের। সিলেটে প্রথম টেস্ট দেখতে চারদিনের একদিনেও চোখে মেলেনি দর্শকদের তেমন সাড়া। সেই ম্যাচেই আবার তিন উইকেটে হেরে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের ওপর চাপ যেন বেড়ে গেছে আরও। আর ক্রিকেটের জোয়ারেও যেন বইছে ভাঁটা।
দ্বিতীয় টেস্টের আগের সংবাদ সম্মেলনে শনিবার জাকের অবশ্য শোনালেন ইতিবাচক কথাই।
“আমাদের ভালো পারফরম্যান্স করা উচিত। ভালো পারফরম্যান্সের ওপর তো আর কিছু নেই। আমাদের সবারই তাই লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলা। যেহেতু সিনিয়র ক্রিকেটাররা চলে যাবেন, তাই তরুণদের মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগতেই পারে। আমি মনে করি এটা ঠিক হতে কিছুদিন সময় লাগবে। এটা সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন
তামিমদের আপত্তির পর স্থগিত হল তাওহীদের শাস্তি |
![]() |
৯৫ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মুশফিকুর রহিম বাদে বেশ তরুণ একটা দল নিয়েই এই সিরিজে খেলছে বাংলাদেশ। কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বিদায়ের ফলে ক্রমেই দলে বাড়ছে তারুণ্যের ভিড়। আর তাদের মধ্যে অন্যতম সম্ভাবনাময় ও ধারাবাহিক পারফর্মারদের একজন জাকের। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই খেলেছেন লড়িয়ে ইনিংস। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে বোলার হাসান মাহমুদকে অতিরিক্ত বল (৫৮) খেলানোর কারণে কিছুটা সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাকে।
তবে কাজটা কেন করেছেন, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে এই কিপার-ব্যাটারের।
“(দ্বিতীয় ইনিংসে) ৭ উইকেটে চলে যাওয়া মানে আমাদের হাতে আরও তিনটা উইকেট আছে। আমরা যেহেতু টার্গেট দিচ্ছিলাম, তাই প্রতিটি রানই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেখেন, হাসান কিন্তু ৫৮ বল খেলেছে। আমাদের মধ্যে ৩৭ রানের একটা জুটি হয়েছে। এই রান যদি হাসান একাই করত, তাহলে আমার সমস্যা নেই। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ম্যাচটা বড় করার, যতদূর সম্ভব টেনে নেওয়ার। চেষ্টা করেছি, হয়নি আসলে।”
টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছয় থেকে আট নম্বর পজিশনে খেলতে হচ্ছে জাকেরকে। ফলে প্রায় নিয়মিতভাবেই তাকে ইনিংস টেনে নিতে হচ্ছে স্বীকৃত ব্যাটারদের ছাড়াই আর বোলারদের সঙ্গী করে। ফলে কয়েকবারই হারাতে হয়েছে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ।
আরও পড়ুন
প্রায় ৩ বছর পর টেস্ট দলে বিজয় |
![]() |
তবে ব্যক্তিগত এসব অর্জন নিয়ে আক্ষেপ নেই জাকেরের।
“ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আমি এভাবে ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত। ঘরোয়াতেও আমি ৬-৭ নম্বরে ব্যাট করেছি। তাই টেল এন্ডারদের নিয়ে খেলার অভ্যাস আমার আগেও ছিল। এই কারণেই কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমার সেঞ্চুরি করতে পাঁচ বছর লেগে গেছে। তাই এসব হবেই। এই কঠিন দিকগুলো সামলেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন মোড়। বসুন্ধরা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য প্রথমে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন তরুণ এই ব্যাটার। পরে সেটা কমে আসে এক ম্যাচে। এরপর আবার সেটা জারি করার সিদ্ধান্ত নিলে আপত্তি জানান তামিম ইকবাল সহ ক্রিকেটাররার। সেটার জেরে শেষ পর্যন্ত তাওহীদের শাস্তি আপাতত স্থগিত করেছে বিসিবি। ফলে এই মৌসুমে আর নিষেধাজ্ঞা থাকছে না মোহামেডানের এই ব্যাটারের।
এর পরিবর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে তাওহীদে শাস্তি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। অর্থাৎ, আগামী বছরের ডিপিএলের প্রথম ম্যাচে বাকি এক ম্যাচের শাস্তি ভোগ করবেন তিনি।
আরও পড়ুন
প্রায় ৩ বছর পর টেস্ট দলে বিজয় |
![]() |
গত ১২ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকতের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তাওহীদ। সেখানেই থেমে না থেকে এরপর সংবাদ সম্মেলনেও আম্পায়ারকে আক্রমণ করে বসেন। সেই কারণে তাকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করে বিসিবি।
তবে এরপর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আপিল করে মোহামেডান। এরপর নাটকীয়ভাবে এক ম্যাচে নামিয়ে আনা হয় শাস্তির মেয়াদ। এরপর বিসিবির চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিসিবিকে জানান বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র এলিট আম্পায়ার।
সেটার প্রেক্ষাপটে শাস্তি কাটিয়ে দুই ম্যাচ খেলে ফেলা তাওহীদের নিষেধাজ্ঞা ফের দুই ম্যাচে নিয়ে যায় বিসিবি, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল মোহামেডানের পরবর্তী ম্যাচেই। তবে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে শুক্রবার বিসিবি কার্যালয়ে মিটিংয়ে বসেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার তামিম ইকবাল সহ ডিপিএলের অন্য দলের অনেক খেলোয়াড়রা।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা সেই মিটিংয়ের পর তামিম সরাসরি তাওহীদের ওপর আরোপিত দ্বিতীয় মেয়াদে শাস্তি নিয়ে আপত্তি তোলেন। তার মতে, যেহেতু বিসিবি একবার শাস্তি কমিয়েছে, ফলে দুই ম্যাচ খেলার পর আবার শাস্তি দেওয়াটা হাস্যকর ঘটনা। পাশাপাশি এও বলেন, এটা কোনো প্রক্রিয়া মেনে দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ, নিজেদের দোষে বাদ পড়ার হতাশায় ক্যারিবিয়ানরা |
![]() |
এর খানিক বাদে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিসিবি জানায় তাওহীদের শাস্তি স্থগিতের খবর।
“গত ১৯ এপ্রিল আম্পায়ার্স কমিটির ইস্যুকৃত শাস্তি বাতিলের সেই সিদ্ধান্তের পরবর্তী আদেশ অকার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির পর সভা হয়েছে, যেখানে বিষয়টি আবারও বিবেচনায় নিয়ে ম্যাচ নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি। যা কার্যকর হবে ১২ মাস পর।”
আইসিসি টেস্ট ফান্ডের রেভিনিউ শেয়ারিং মডেল প্রবর্তিত হওয়ায় ২০১৯ সালের মে থেকে বদলে গেছে আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামের (এফটিপি) সূচি। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে থাকা শীর্ষ ৯টি দেশকে নিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ প্রবর্তনের পরিকল্পনা গৃহিত হওয়ায় পর পর দুটি ৪ বছর মেয়াদী এফটিপি চক্রে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরে থাকা তিনটি দল জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডের সাথে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৯ টি দলের দ্বি-পাক্ষিক টেস্ট সিরিজ খেলা বাধ্যতামূলক নয়।
মূলত সেই কারণেই এফটিপির সর্বশেষ চক্রে (২০১৯-২০২৩ সালের এপ্রিল) জিম্বাবুয়ে এবং টেস্ট ক্রিকেটের নবাগত আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে টেস্টে এড়িয়ে চলেছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষস্থানীয় দলগুলো। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলমান চক্রেও (২০২৩-২৭) একই পথে হাঁটছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হয়ে থাকা দলগুলোর অধিকাংশই।
আইসিসির এফটিপি এখন দ্বি-পাক্ষিক সূচিতে পরিণত হওয়ায়, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জিম্বাবুয়ে,আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে আগ্রহী নয় অধিকাংশ টেস্ট দল। অথচ, আইসিসির এফটিপির বিগত চক্রের মত চলমান এফটিপিতেও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তিন ফরম্যাটের ম্যাচের সিরিজ খেলতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিসিবি। চলমান চক্রে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট খেলা থেকে বিরত থেকেছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে জিম্বাবুয়ের টেস্ট উন্নতিতে সহায়কের ভুমিকায় নিউ জিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এফটিপির চলমান চক্রের চার বছরে জিম্বাবুয়ে ১৮টি টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪টি। এর বাইরে এফটিপির বর্তমান চক্রে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে ৮টি ওডিআই এবং ৮টি টি-টোয়েন্টিও খেলার সুযোগ পাচ্ছে।
তিন ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড তুলনামূলক ভালো। চলমান সিরিজের আগে ১৮টি টেস্টে ৮-৭-এ এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। মুখোমুখি ৮১টি ওডিআই ম্যাচে ৫১টি জয়ের বিপরীতে ৩০টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। দুই দলের ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচে ১৮-৭-এ এগিয়ে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এক সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে অবদান রাখা জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
সেই কারণেই জিম্বাবুয়ে দলকে আতিথ্য দেয়াকে একটা রেওয়াজে পরিণত করেছে বিসিবি।
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্টে জয়-পরাজয় আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান নড়চড় করবে না। শুধু তা-ই নয়, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। হোমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ৩টি দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ আয়োজনে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বিসিবি।
অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ২ টেস্ট এবং ৩ ওডিআই ম্যাচের সিরিজ আয়োজন করে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭১ হাজার ৩২৫ টাকা ভর্তুকী দিয়েছে বিসিবি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ২ টেস্ট, ৩ ওডিআই এবং ২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজ আয়োজনে অবশ্য ভর্তুকী গুনতে হয়নি। সেই দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৭ টাকা মুনাফা করতে পেরেছে বিসিবি। তবে যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ২০২৪ সালের এপ্রিলে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে জিম্বাবুয়েকে আতিথ্য দিয়ে নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বাধীন বোর্ড বড় অঙ্ক ভর্তুকী দিয়েছে। প্রচারসত্ব থেকে প্রত্যাশিত অর্থ আয়ের পরও ভর্তুকীর অঙ্ক ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৫ টাকা!
এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রচারসত্ব বিক্রি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ভর্তুকীর অঙ্কটা কোথায় দাঁড়ায়, সেই হিসাবটা জানা যাবে সিরিজ শেষেই।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিয়ে শুধু আর্থিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না বিসিবি, টেস্টে নীচের সারির দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরমেন্স নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেককে স্মরণীয় করতে চেয়ে জিম্বাবুয়েকে আতিথ্য দিয়ে চরম শিক্ষা পেয়েছিল বিসিবি। পূর্ণশক্তির বাংলাদেশ দল ১৫১ রানে হেরেছে সেই টেস্ট। সাড়ে ছয় বছর পর সেই সিলেটে ফিরতি টেস্টেও লজ্জা দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে ৩ উইকেটে।
আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামের (এফটিপি) চলমান চক্রের (২০২৩-২৭) সূচি চূড়ান্ত হয়েছে অনেক আগে। বিসিবির পদচ্যুত সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আমলে। সে কারণেই এফটিপির পরবর্তী সূচি (২০২৭-৩১) চূড়ান্ত হওয়ার আগে সতর্ক হওয়ার পক্ষে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম, “ওদের সাথে খেলে উন্নতি হবে কিংবা সিরিজ আয়োজন করা লাভজনক হবে, এমন তো নয়। জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট সিরিজ এড়াতে পারলে ভালো হতো। আইসিসির পরবর্তী এফটিপির আগে কীভাবে প্লান করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।”
একদিন আগেই শেষ হওয়া প্রথম টেস্টের ঘন্টাখানেক বাদেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে৷ দলের উল্লেখযোগ্য নাম অভিজ্ঞ ওপেনার এনামুল হক বিজয়, যিনি তিন বছর পর ডাক পেয়েছেন টেস্ট দলে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজের শেষ ম্যাচের বাংলাদেশ স্কোয়াডে আরেকটি পরিবর্তন অবশ্য অনিবার্যই ছিল। পিএসএল খেলতে যাওয়া পেসার নাহিদ রানার জায়গায় এসেছেন স্পিনার তানভীর ইসলাম।
টেস্ট দলে ডাক পাওয়া বিজয় পুরষ্কার পেলেন চলমান বসুন্ধরা ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট লিগে অসাধারণ ফর্ম দেখিয়ে। সম্প্রতি স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে ৫০টি সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
টেস্টে অবশ্য বিজয়ের পরিসংখ্যান খুব আশা জাগানিয়া নয়। ৫ টেস্টে ১০ গড়ে রান মাত্র ১০০, নেই কোনো ফিফটি। শেষবার লাল বলের ক্রিকেটে তাকে দেখা গিয়েছিল ২০২২ সালের জুনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
আর তানভীর এখনও আছেন টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের।
আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতেছে জিম্বাবুয়ে।
দ্বিতীয় টেস্টের বাংলাদেশ স্কোয়াড :
নাজমুল হোসাইন শান্ত (অধিনায়ক), মাহমুদুল হাসান জয়, শাদমান ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, মমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহিদুল ইসলাম, জাকের আলি আনিক, মেহেদি হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে মুমিনুল হক আশা করছিলেন ২৭০ থেকে ৩০০ রানের লিড নেওয়ার। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তার এমন প্রত্যাশা ভুল ছিল না। তবে ব্যাটারদের সেই দায়িত্বটা তো বুঝতে হবে এবং মাঠে করে দেখাতে হবে। এর কিছুই হলো না চতুর্থ দিনে। ভালো অবস্থানে থেকেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দুইশর কম টার্গেট দিতে পারল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। পুরো ম্যাচে হতাশ করা বোলাররাও পারলেন না বিশেষ কিছু করে দেখাতে। রান তাড়ায় কিছুটা নাটকীয়তা জন্ম দেওয়ার পর রেকর্ড গড়ে স্মরণীয় এক জয় তুলে নিল জিম্বাবুয়ে।
সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ১৭৪ রানের টার্গেটে জিম্বাবুয়ে জয় তুলে নিয়েছে ৩ উইকেটের। দুই ম্যাচের সিরিজে সফরকারীরা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার শান্ত ও জাকের আলি অনিকের কাছে দলের আশা ছিল বড় একটা জুটির, যা দলকে নিয়ে যেতে পারত সুবিধাজনক অবস্থায়। তবে একরাশ হতাশারই জন্ম দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দিনের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই তাকে আউট করেন ব্লেসিং মুজারাবানি। বাউন্সারে টাইমিং না করতে পেরে লং লেগে ক্যাচ তুলে ৬০ রানে থামে শান্তর ইনিংস।
বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ভীতি সঞ্চার করার মুজারাবনি এরপর দেখা পেয়ে যান ফাইফারের। স্রেফ ১১ রানেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় মেহেদি হাসান মিরাজকে। তাইজুল ইসলামও অল্পে ফিরলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে লড়াই চালান জাকের ও হাসান মাহমুদ মিলে।
ওভারের পর হাসান কাটিয়ে দেন ব্লক করে। আর অন্যপ্রান্তে সুযোগ বুঝে রান বের করা জাকের আলি তুলে নেন ফিফটি। তবে হাসানের ওপর অতিরিক্ত বিশ্বাস রাখার কারণেই কিনা, একটা পর্যায়ে গিয়ে তাকে ওভারের পাঁচটা ডেলিভারিই খেলার ভার দিয়ে দেন জাকের। শেষ পর্যন্ত সেটাই কাল হয় দলের জন্য।
ওয়েলিংটন মাসাকাদজার পরপর দুই বলে দুই উইকেট পতনের পর দ্রুত রান বের করার চেষ্টায় ৫৮ রানে থামতে হয় দারুণ এক ইনিংস খেলা জাকেরকে। ৭২ রানে ৬ উইকেট নেন মুজারাবানি।
চতুর্থ ইনিংসে ১৭৪ বা তার বেশি রান তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে নেই। সেই কারণেই হয়ত ব্যাটিং সহায়ক এই উইকেটেও কিছুটা জয়ের আশা ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে সেটা মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি খুব একটা। প্রথম দশ ওভারে পেসার ও স্পিনাররা কেউই পারেননি ব্যাটারদের চাপে রাখতে।
উল্টো জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার রান করতে থাকেব ইতিবাচক ব্যাটিংয়েই। উইকেটের জন্য মরিয়া হওয়ার কারণেই কিনা, প্রতি ওভারেই দেখা মেলে বাজে ডেলিভারির। ফলে চার-ছক্কায় সহজেই রানের চাকা সচল রাখেন ব্যাটাররা। আর এতে দ্রুতই ম্যাচের লাগাম একেবারেই চলে যায় জিম্বাবুয়ের হাতে।
অবশেষে দলীয় শতক থেকে পাঁচ রান দূরে থাকতে আসে ব্রেকথ্রু। মিরাজের বলে মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বেন কারান। তবে তার আগে উপহার দেন ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। স্পেলে শুরু থেকেই এলোমেলো বোলিং করা আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম অন্যপ্রান্তে ছন্দ খুঁজে পান নিক ওয়েলচকে ফিরিয়ে। ২ উইকেটে ১১৭ রান নিয়ে চার বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে।
সেখান থেকে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে দরকার ছিল দ্রুত কয়েকটি উইকেট। আর মিরাজের হাত ধরে সেটা চলেও আসে। প্রথমে সিন উইলিয়ামসকে শিকারের পর ইনিংসের ৩৩তম ওভারে এনে দেন বড় উইকেট। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫৮ রান করা ব্রায়ান বেন্নেট। ১২৮ রানে প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট তুলে কিছুটা হলেও ম্যাচে ফেরার আভাস জাগে বাংলাদেশ দলে।
সেই পালে আরও হাওয়া দেন তাইজুল। লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন অভিজ্ঞ ক্রেইগ এরভিন। পরের ওভারে ফের উইকেট। দারুণ এক টার্নিং ডেলিভারিতে নায়াশা মায়াভোকে ক্লিন বোল্ড করে ইনিংসে চতুর্থ উইকেটের দেখা পান মিরাজ।
ক্রমেই জমা ওঠে ম্যাচে এরপর বাংলাদেশকে কিছুটা চাপে ফেলে ওইয়েলিংটন মাসাকাদজা। তাইজুলের পরপর দুই ওভারে ছক্কা ও চার মেরে অনেকটাই চাপ সরান। জিম্বাবুয়ের দরকার যখন আর মাত্র ১৩ রান, ঠিক তখন ফের বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে হাজির হন মিরাজ। মাসাকাদজাকে বোল্ড করে প্রাণ ফেরার স্বাগতিক শিবিরে।
তবে ওই ওভারেই চার মেরে জিম্বাবুয়েকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান রিচার্ড এনগারভা। তাইজুলের করা পরের ওভারের প্রথম বলেই আসে আরেকটি চার। খানিক বাদে ওয়েসলি মাধেভেরের আরেকটি বাউন্ডারিতে ঐতিহাসিক এক জয় নিশ্চিত হয় জিম্বাবুয়ের। বিফলে যায় মিরাজের ৫৪ রানে ৫ উইকেটের দারুণ এক স্পেল।
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
১০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে