৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১:২৫ পিএম
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে অনেকেরই রয়েছে বিশেষ পরিচিতি। তবে স্রেফ টি-টোয়েন্টি ধারাভাষ্যকার হিসেবে যদি একজনের নাম বলতে বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা হবে ড্যানি মরিসন। নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই ক্রিকেটার খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় যা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, খেলা ছাড়ার পর মাইক হাতে তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেছেন বিশ্বজুড়ে। মজার ছলে কথা বলা, অদ্ভুত বাচনভঙ্গি আর হাস্যকর সব অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ধারাভাষ্যকে তিনি দেন ভিন্ন মাত্রা। চলতি বিপিএলেও ধারাভাষ্য দিচ্ছেন মরিসন।
টি-স্পোর্টসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার মরিসন কথা বলেছেন ধারাভাষ্য, এই পেশায় ভালো করার উপায়, বিপিএল, সাকিব আল হাসান সহ নানা বিষয়ে।
পাঠকদের জন্য মরিসনের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল :
প্রশ্ন : প্রথমেই ধন্যবাদ আরও একবার বাংলাদেশে আসার জন্য। নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন মানুষ এখানে আপনাকে কতোটা আন্তরিকভাবে ভালোবাসে?
মরিসন : তা আর বলতে! ওদের ভালোবাসা আর সেলফির সিরিয়াল দেখে আমার তো মনে হয় এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় তারকা বুঝি আমিই (হাসি)। সত্যি বলতে, আমি কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। আগেও লোকেদের ভালোবাসা পেয়েছি বাংলাদেশে, তবে এবার কিছুটা আবেগী হয়ে যাচ্ছি। ধন্যবাদ বাংলাদেশ।
প্রশ্ন : আবেগের কথা বললেন। মাইক হাতে আপনি পুরোটা সময় ধরেই যেভাবে হাসি-ঠাট্টা করে যান, মজার মজার সব কথা বলেন… পেশাদার জায়গা থেকেও যদি বলি, বছরের পর বছর প্রতিদিন এই একটা কঠিন কাজ করে যাওয়া নিশ্চয় চ্যালেঞ্জিং লাগে? কারণ, লোক হাসানো দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি বলেই মনে করা হয়।
মরিসন : নো মাই ফ্রেন্ড। দেখুন, আপনি যখন নিজের কাজটাকে ভালোবাসবেন, তখন সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই হয়ে যাবে। বাড়তি কিছু আর চেষ্টা করা লাগে না তখন। তবে এটাও ঠিক, আমাকে দেখলেই সবাই ধরেই নেয়, এই লোকটা এখন আমাদের হাসাবে। এই প্রত্যাশার চাপটা মাঝে মধ্যেই টের পাই।
প্রশ্ন : আপনার ইউনিক একটা ডায়লগ ডেলিভারি স্টাইল তো আছেই, সাথে এইযে একটু ভ্রু কুচকে, অঙ্গভঙ্গি দিয়ে দর্শকদের বাড়তি বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেন, এক্ষেত্রে কি কিংবদন্তি চার্লি চ্যাপলিনের সাথে নিজের কোনো মিল পান?
মরিসন : ইউ মিন চার্লি মরিসন? (হাসি)। আমি আসলে ওভাবে দেখিনি কখনও বিষয়টা। গ্রেট চার্লি চ্যাপলিনের কথা বললেন। তার কাজের সাথে আসলে তুলনা চলে না কারোরই। ডায়লগ ছাড়া স্রেফ অঙ্গভঙ্গি দিয়েই তো তাকে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হত। সেদিক থেকে আমার কাজ তো অনেক সহজ। যখন ইচ্ছা, কথা তো বলতে পারি। এই যেমন এখন আপনার সাথে কথা বলছি কোনো অঙ্গভঙ্গি ছাড়াই।
প্রশ্ন : একজন ধারাভাষ্যকারের জন্য মৌখিক অঙ্গভঙ্গি জানাটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
মরিসন : এটা আসলে নির্ভর করে একেকজনের ব্যক্তিত্বের ওপর। এটা যে থাকতেই হবে, তা নয়। কিংবদন্তি রিচি বেনোর কথাই যদি বলেন, আমরা তো রেডিওতে তার ওই ধারাভাষ্যই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম। আমি এই পেশায় যখন আসি, তখন ভেবেছিলাম অন্যদের চেয়ে ভিন্ন কিছু না করতে পারলে হয়ত বেশিদিন টিকতে পারব না।
প্রশ্ন : এটা নিছকই আপনার বিনয়…
মরিসন : নো মাই ফ্রেন্ড। দেখুন, আমি পুরো ব্যাপারটাকে আপনাদের সামনে প্যাকেজ হিসেবে তুলে ধরি বলেই হয়ত আপনারা আমাকে পছন্দ করেন। আপনি আমাকে যদি মাইকেল হোল্ডিংয়ের মত ক্রিকেট নিয়ে বিশ্লেষণ করতে দশ মিনিট দাঁড় করিয়ে দেন, লোকেরা তাহলে টিভি বন্ধ করে দেবে। আমাকে এখনও প্রতিদিন পড়ালেখা করতে হয় এই কাজে সেরাটা দেওয়ার জন্য। সব নোট করে রেখেও প্রায়ই তালগোল পাকিয়ে ফেলি। তখনই আপনাদের বোকা বানাতে মুখের একটা অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে বসি।
প্রশ্ন : ধারাভাষ্যকারদের জন্য ইম্প্রোভাইজেশনের গুরুত্ব কতটুকু তাহলে?
মরিসন : অনেক। আপনি সব প্রস্তুতি নিয়েও সব পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন না। একটা খেলায় চার হবে, ছয় হবে, আউট হবে - এসব তো আমরা জানিই৷ তবে ক্রিকেট খেলায় প্রতিটি বলই একটা নতুন ইভেন্ট, আর তাই আপনাকে মানসিকভাবে নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখতেই হবে একটা চটকদার শব্দ বা পাঞ্চ লাইন বলে পরিস্থিতিটা তুলে ধরার জন্য। আপনাকে দর্শকদের এই ধারণা দিতে হবে যে আপনি এই ইভেন্টের জন্য শতভাগ প্রস্তুত ছিলেন। কারণ, মাঠে কী হচ্ছে সেটা তারা খালি চোখেই দেখছেন। আপনার কাজ সেখানে বাড়তি কিছু যোগ করে ইভেন্টটিকে আকর্ষণীয় করে তোলা।
প্রশ্ন : হার্ষা ভোগলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একজন ধারাভাষ্যকারের জন্য ভুল স্বীকার করে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এতে একমত হবেন?
মরিসন : অবশ্যই। দেখুন, এআইও কিন্তু হরদম ভুল করছে আজকল। সেখানে একটা মানুষ তো ভুল করবেই। আপনি ধারাভাষ্য দিচ্ছেন বলেই তো আপনি সবজান্তা হয়ে গেছেন বা আপনাকে সবজান্তা হতে হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। খেলোয়াড়ের নাম ভুল হবে, শটের নাম ভুল বলবেন - এসব তো হবেই। আপনি ভুল করলে লোকেরা কিন্তু তা নিয়ে হাসাহাসি করবে না, যদি আপনি সেটা শুধরে নেন। ভুল করেও সেটাকে ঠিক প্রমাণের চেষ্টা করলে সেটা হাস্যরসের জন্ম তো দেবেই।
প্রশ্ন : হার্ষা ভোগলের কথা আসায় প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক মনে হল। সাবেক খেলোয়াড় না হলে ধারাভাষ্যকার হওয়া যাবে না, বা তিনি ভালো করতে পারবেন না, বর্তমানে এমন চর্চা দেখা যাচ্ছে বেশ। অথচ হার্ষা ভোগলেই কিন্তু প্রমাণ, খেলাটির প্রতি নিখাদ ভালোবাসা থাকলে এই পেশায় চূড়ান্ত সফল হওয়া সম্ভব। আপনার কী মনে হয়?
মরিসন : আপনি তো উত্তরটা দিয়েই দিলেন। খেলাটির প্রতি ভালোবাসা, হ্যাঁ, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি ক্রিকেট খেলাটা বোঝেন, বিশ্লেষণ করতে জানেন আর নিজের মত করে সেটা উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে আপনি পেশাদার ক্রিকেটার না হয়েও এই পেশায় স্বাগতম।
প্রশ্ন : আপনার সমসাময়িক অনেকেই তিন ফরম্যাটে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। কিন্তু আপনি বলা যায় একরকম টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হয়ে গেছেন। অনেকেই মজার ছলে বলেন, এই ফরম্যাটটির আবিষ্কার হয়েছে আপনি ধারাভাষ্য দেবেন বলেই। টেস্ট ক্রিকেটকে মিস করেন?
মরিসন : দেখুন, জীবনের একটা পর্যায়ে এসে আপনাকে কিছু জিনিস বেছে নিতেই হবে। আপনি চাইলেও সব জায়গায় নিজের সেরাটা দিতে পারবেন না। সীমাবদ্ধতার ব্যাপার আছে। তাছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে কিন্তু আমার ধারাভাষ্য আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। কুড়ি ওভারের ক্রিকেট আর পাঁচ দিন ধরে চলা একটা ম্যাচের যে বিস্তর ব্যবধান, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। নিজের সীমাবদ্ধতা বোঝাটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। একবার ভাবুন, প্যাট কামিন্স সারাদিন বল করে পাঁচ উইকেট নিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে যাচ্ছে, তার আগে তাকে দাঁড় করিয়ে আমি মজার মজার প্রশ্ন করা শুরু করলাম। খেলোয়াড় বা দর্শক, কারো কাছেই এটা ভালো লাগবে না।
প্রশ্ন : বিপিএলে ফেরা যাক। আগেও এসেছেন এই টুর্নামেন্টে। সব মিলিয়ে কেমন লাগে বিপিএল?
মরিসন : আমার কাছে তো দুর্দান্ত লাগে। এজন্যই তো অন্যদের ডাক উপেক্ষা করে চলে এলাম বাংলাদেশে। এটা অন্যদের আবার বলবেন না (হাসি)। বাংলাদেশের যে ভেন্যুতেই যাবেন, দর্শকদের যে উদ্দীপনা দেখবেন আপনি, এটা অবিশ্বাস্য। এই দেশের মানুষ ক্রিকেটকে ভীষণ ভালোবাসে। আর তাই এখানে কাজ করার সুযোগ পেলেই সেটা লুফে নিতে চাই। এখানকার লোকেদের সরল ভালোবাসা আমাকে ভীষণচ ছুঁয়ে যায়।
প্রশ্ন : আপনার জন্মদিন উদযাপন দেখে সেটা কিছুটা আন্দাজ করা যায়। এই বিপিএলে কোনো খেলোয়াড়ের জন্মদিন নিয়েও এত মাতামাতি দেখা যায়নি।
মরিসন : যেমনটা আগেই বললাম, নিজেকে এই বিপিএলের সবচেয়ে বড় তারকা মনে হচ্ছে (হাসি)। হ্যাঁ, যেটা বললেন, এত মানুষ আমার জন্মদিন মনে রাখবে, স্টেডিয়ামে কেকও কাটবে… ভাবা যায় না আসলে। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ বিসিবির প্রতিও, তারা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে আবার বিপিএলে আসার জন্য।
প্রশ্ন : বিসিবির প্রতি আপনি কৃতজ্ঞতা জানালেন, তবে তাদেরও কী আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত? কারণ, প্রায় একই সময়ে চারটা টি-টোয়েন্টি লিগের মধ্যেও আপনি বিপিএলকে বেছে নিয়েছেন?
মরিসন : আপনি চাইলে ওভাবে দেখতে পারেন। তবে আমার কাছে পেশাদারিত্ব সবার আগে। লিগ চারটা হোক বা দশটা, সবার আগে যারা আমার সাথে যোগাযোগ করবে, তাদের সেই সম্মানটা তো আমাকে দিতেই হবে, তাই না? বিসিবির সাথে আমার সবার আগে কথা হয়েছে, তাই আমি তাদেরই প্রাধান্য দিয়েছি।
প্রশ্ন : তাহলে আপনাকে আরও প্রশ্নটা করাই যায় এই সূত্র ধরেই। বর্তমানে হরমেশাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট চুক্তি করে একেক দিন একেক লিগে খেলতে। এই বিপিএলেই যদি বলি, আন্দ্রে রাসেল, টিম ডেভিড, জেসন হোল্ডাররা বিপিএল খেলতে এলেন আগেরদিন রাতে আইএলটি২০ খেলে। আবার এই বিপিএলেই কয়েকজন খেলোয়াড়কে দেখা গেল এই লিগে আগে চুক্তিবদ্ধ হয়েও পরে তা বাতিল করে অন্য লিগে খেলতে। খেলোয়াড়দের মাঝে পেশাদারিত্ব কী দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে মনে হয়?
মরিসন : ভালো প্রশ্ন। আমি শুধু নিজের জায়গা থেকেই উত্তরটা দিতে পারি। আর সেটা হল, না আপনি দুটোর কোনোটাই করতে পারেন না। নিজে খেলোয়াড় ছিলাম বলে জানি, হোক সেটা টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে, এরপর রিকভারি টাইম আপনার লাগবেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ঘুম এসবের দরকার তো আছেই। আপনি যদি সেটা না করে নিজেকে রোবট ভাবেন আর আগেরদিন রাতে খেলে, বিমান ধরে সকালে আরেক দেশে নেমে জার্সি গায়ে চাপিয়ে নেমে পডেন, সেরাটা কীভাবে দেবেন? ক্লান্তি তো ভর করবেই আপনার ওপর। তাছাড়া দলের অন্যদের সাথে তো মিশতেও পারলেন না ওভাবে। আর চুক্তি বাতিলের ব্যাপারটা একটা দলের জন্য খুব শকিং। আপনি একটা খেলোয়াড়কে নিলেন, তাকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজালেন, মাঠে নামার আগে তাকে পেলেন না, এটা হতাশাজনক। তবে যুগ বদলে গেছে, এখন হয়ত এটাই পেশাদারিত্ব।
প্রশ্ন : এই যুগে এসে পেশাদার ক্রিকেটারদের জন্য পেশাদারিত্ব বজায় রাখাটাই কী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ?
মরিসন : অবশ্যই। একটা সময় ছিল স্রেফ ঘরোয়া, টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেটই৷ আর এখন সারা বছরই খেলোয়াড়দের ব্যস্ত থাকতে হয় আন্তর্জাতিক বা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট নিয়ে। ফিটনেস বজায় রেখে দিনের পর দিন কাজটা চালিয়ে যাওয়া নিশ্চয় সহজ হওয়ার নয়। হয়ত এই কারণেই এখন ফ্রিল্যান্স ক্রিকেটারদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের এটার সাথে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।
প্রশ্ন : এই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু কিছু অনিশ্চয়তাও তৈরি হচ্ছে। আগে বোর্ডের চুক্তিতে থাকলেই মিলত অর্থ। এখন সেটার বাইরে থাকলে, চোট পেলে সেটাও সারাতে হয় নিজের অর্থেই। আবার এই বিপিএলে আমরা দেখলাম, খেলোয়াড়দের পেমেন্ট নিয়ে নানা বিতর্ক। রীতিমত ম্যাচ বয়কট করতে হয়েছে প্রাপ্য পারিশ্রমিক বুঝে পেতে। খেলোয়াড় বা একটা লিগের জন্য এগুলো নিশ্চয় ভালো ব্র্যান্ডিং নয়?
মরিসন : অবশ্যই না। আপনি প্রথমে যেটা বললেন, সেটা একজন খেলোয়াড় জেনেই কিন্তু কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে রাখে নিজেকে। তবে বিপিএলে আমি যতটুক শুনেছি, তাতে মনে হয়েছে খেলোয়াড়দের পেমেন্ট নিয়ে যা যা হয়েছে, সেটা বিপিএলের জন্য ভালো বিজ্ঞাপন নয়। এমনিতেই এখন অনেক প্রতিযোগিতা লিগগুলোর মধ্যে, এভাবে চললে ভবিষ্যতে বড় তারকারা বিপিএলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। প্রশ্ন : একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে নাম লেখানো বা এর রেশ ধরে তার বাংলাদেশের হয়ে খেলা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেটা কীভাবে দেখছেন?
মরিসন : কঠিন প্রশ্ন। সাকিব কেন রাজনীতিতে আসল বা বাংলাদেশে এরপর কী কী হয়েছে, আমি এসবের খুব বেশি জানি না। তবে আমি মনে করি, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে রাজনীতি করাটা যদি তার খেলায় প্রভাব না ফেলে, তাহলে হয়ত সেটা খুব বড় সমস্যা হওয়ার কথা না। আবারও বলছি, আমি জানি না ঠিক কেন সাকিব বাংলাদেশে তার শেষ ম্যাচটা খেলতে পারল না। তবে বিপিএলে তাকে আমি মিস করেছি। আমি নিশ্চিত সমর্থকরাও তাকে মিস করেছে ভীষণ।
প্রশ্ন : এই বিপিএলে বাংলাদেশের কার খেলা মনে ধরেছে আপনার?
মরিসন : নাঈম শেখ। এবার দেখে মনে হচ্ছে ব্যাটিংয়ে সে অনেক উন্নতি করেছে। বড় বড় ছক্কা মারতে পারে এখন। বোলারদের মধ্যে তাসকিনের কথাই বলব। ওর দল প্লে-অফে খেললে হয়ত (এক আসরে) ৩০ উইকেট নিয়ে ফেলত। তবে আমি তার এই পারফরম্যান্সে অবাক না। সে যথেষ্ট অভিজ্ঞ। ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একজন বোলারকে আপনি আক্রমণের নেতা হিসেবেই দেখতে চাইবেন।
প্রশ্ন : আরেক অভিজ্ঞ পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে কেমন দেখলেন?
মরিসন : শেষ ম্যাচেও তো দারুণ বোলিং করল ফিজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে যদি বলেন, আমি তার কাছ থেকে তাসকিনের মতোই বিশেষ কিছু আশা করেছিলাম। সামনেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, বাংলাদেশের ভালো করতে হলে ফিজকে জ্বলে উঠতেই হবে।
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্নটা এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়েই। কোন দলকে ফেভারিট মনে হচ্ছে আর বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন দেখেন?
মরিসন : কাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকেই রাখতাম ফেভারিট হিসেবে। তবে এখন আমি ভারতের সাথে সেখানে পাকিস্তান, ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখব। বাংলাদেশ চমকে দিতে পারে, তবে সেজন্য ফিজ, মুশি, রিয়াদের মত অভিজ্ঞদের সেরা ফর্মে থাকতেই হবে।
১৫ জুন ২০২৫, ৩:২৮ পিএম
১৪ জুন ২০২৫, ৭:২১ পিএম
১৪ জুন ২০২৫, ৬:১৯ পিএম
১৪ জুন ২০২৫, ৫:৪৮ পিএম
নীল আকাশের নীচে আমি, রাস্তা চলেছি একা… বাংলার কিংবদন্তি এই গান এইডেন মার্করামের শোনার কোনো কারণ নেই। যদি শুনে থাকতেন, তাহলে লর্ডসের ব্যালকনিতে ফেরার পথে গুনগুন করে নিশ্চয় এই গানটিই গাইতে চাইতেন তিনি। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস গড়া জয়ে যে তিনি একাই ছুটেছেন অমরত্বের পথে, যেখানে তার পেছনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল গোটা একটা জাতির দীর্ঘদিনের হাহাকার আর না পাওয়ার বেদনা।
রান তাড়ায় মার্করাম ১৩৬ রানে থাকা অবস্থায় জশ হ্যাজেলউডের ওভারেই হয়ত চেয়েছিলেন ম্যাচটা শেষ করে দিতে। তবে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়লেন ট্রাভিস হেডের হাতে। করতালির মাধ্যমে পুরো লর্ডস দাঁড়িয়ে গেল সম্মান জানাতে। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা একে একে এগিয়ে আসলেন মার্করামের কাছে, যিনি ১৫ বছর পর তাদের স্বাদ দিয়েছেন ফাইনালে হারের ভুলে যাওয়া এক অভিজ্ঞতার। তবে আশেপাশের সবকিছু যেন তখন ধারন করতে পারছিলেন না দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্টাইলিশ ব্যাটার। তিনি ব্যাটটাকে এমনভাবে কাঁধে নিয়ে নিলেন, যেন একজন কাঠুরে সদ্যই কেটে আসলেন এক শতবর্ষী বটগাছ। ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত এক চাহনিতে ফুটে উঠল অনেক না পাওয়া কষ্টের পূর্ণতা দেওয়ার অভিব্যক্তি।
আপনি যদি পুরো ম্যাচটা না দেখে কেবল মার্করামের আউট হওয়ার পরের চিত্রগুলো দেখেন লর্ডসের বিখ্যাত ড্রেসিংরুমে যাওয়া পর্যন্ত, মনে হতেই বাধ্য যে হয়ত দলকে বিপদে ফেলে বাজে এক শট খেলে তিনি উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। নির্লিপ্ত, ধীরগতিতে এমনভাবে নিজেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন, যেন নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেননি। আসলেই কি তাই?
মার্করাম তো তার আগে খেলে ফেলেছেন সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এক ইনিংস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন অমিত সম্ভাবনা নিয়ে। অ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আভাস দিয়েছিলেন ভবিষ্যতে জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ারও। তবে লর্ডসের ফাইনালের আগ পর্যন্ত ক্রিকেটার ও অধিনায়ক হিসেবে নিজের নামের প্রতি সেভাবে সুবিচর করতে পারেননি। দুই বার টেস্ট দল বাদ পড়েছিলেন ফর্মের কারণে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগেও প্রশ্ন ছিল, মার্করাম কীভাবে দলে থাকে!
আরও পড়ুন
মার্করাম বীরত্বে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা দক্ষিণ আফ্রিকার |
![]() |
সেই মার্করামই যখন চতুর্থ দিনের ঝকঝকে সকালে আউট হলেন, তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিহাস গড়া থেকে কয়েক কদম দূরে। মূল কাজটা করার পর তিনি চেয়েছিলেন দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়তে, সেটা না হওয়াতেই হয়ত সাজঘরের ফেরার পথে দেখা মেলেনি তার হাসি মুখের। নাকি এর সাথে মিশে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের যুগ যুগের চাপা কান্নাও?
১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত এখনকার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে, তখন কে ভেবেছিলে যে পরের আইসিসি ইভেন্টে শিরোপা জিততে তাদের অপেক্ষা করতে হবে ২৭ বছরের? কে ভেবেছিল বৃষ্টি, ভাগ্য, ক্রিকেটের আইন সব দাঁড়িয়ে যাবে তাদের সাফল্য রুখে দিতে? কে ভেবেছিল দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বয়ে বেড়াতে হবে ‘চোকার্স’ নামের এক অনাকাঙ্ক্ষিত খেতাব? কেউই হয়ত নয়।
আর এই কারণেই বারবার শিরোপার খুব কাছে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই বিখ্যাত টাই হওয়া সেমিফাইনাল থেকে শুরু করে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের হার… মার্করাম শৈশব থেকে ক্রিকেটার হওয়ার পথচলায় সবই দেখেছেন মাঠের বাইরে ও মাঠে থেকে। তিনিও তাই ধারণ করেন কষ্টের সেই বোঝা, যা এতদিন চেপে ছিল গোটা দক্ষিণ আফ্রিকার কাঁধে। হয়ত এই কারণেই ফাইনালে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করে ব্যাটটা কাঁধে নিয়েছিলেন মার্করাম, পুরো জাতির বোঝা যে এই ইনিংসের প্রতিটি বলেই বয়ে বেরিয়েছেন তিনি।
অবশ্য বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই মার্করামের মাঝে এমন কিছুর সম্ভাবনা দেখা হচ্ছিল। একজন ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাটার হওয়ার সব স্কিলই আছে তার। নতুন বল খেলার দক্ষতা, ইনিংস মেরামত করা, পাল্টা আক্রমণ করা বা বড় ইনিংস খেলা, সবই আছে তার মাঝে। তবে ক্রিকেটে আপনি কি করতে পারেন, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন আপনি কি করে দেখাতে পারছেন। আর এখানেই বারবার তিনি আটকে যাচ্ছিলেন একটি সীমার মাঝে। হয়ত এজন্যই যে, তিনি ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটা বরাদ্দ রেখেছেন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাইনালের জন্য।
আরও পড়ুন
অবশেষে দ.আফ্রিকার ‘চোকার্স’ ট্যাগ মুক্তির আনন্দ |
![]() |
অথচ প্রবল চাপ নিয়ে নামা সেই ফাইনালে প্রথম ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ব্যাট করতে নামেন, ২৮২ রানের টার্গেটের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার আবার চোক করার সম্ভাবনা নিয়েই তখন আলোচনা ছিল বেশি। তবে ইনিংসের প্রথম ডেলিভারি থেকেই মার্করাম এমনভাবে ব্যাট চালানেন, যেন এই ইনিংসে তিনি যতক্ষন চাইবেন, ঠিক ততক্ষণই ব্যাট করে যেতে পারবেন।
আর শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। নির্ভুল এক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে সুযোগই দেননি কোনো। তৃতীয় উইকেটে পুরো ইনিংসে চোট নিয়ে খেলা টেম্বা বাভুমাকে সঙ্গ দেন ঢাল হয়ে। অধিনায়ককে সাহস যুগিয়েছেন চালিয়ে যেতে। হয়ত মার্করাম জানতেন, এই ফাইনালটা তাকে জেতার জন্যই খেলতে হবে। আর শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে তিনিই হবেন কাণ্ডারি। হয়ত রি কারণেই এক বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে অল্পের জন্য শিরোপার স্বাদ পাননি অধিনায়ক হিসেবে।
মাঠে থেকে শেষটা না করতে পারলেও মার্করাম কাজের কাজটা করে তবেই আউট হয়েছেন। এরপরও কেন মার্করামের আউট হয়ে ফেরার পথে অমন মিশ্র অনুভূতি? তৃপ্তির আনন্দ বোধহয় এমনই হয়। সময়টা তাই মার্করামের, সময়টা তাই দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের জয়গান গাওয়ার, যা তাদের হাতে ধরা দিয়েছে সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত উৎস থেকে। যা পারেননি গ্রায়েম স্মিথ, হার্শেল গিবস, শন পোলক, এবি ডি ভিলিয়ার্স বা ডেল স্টেইন, তা কিনা ধরা দিল মার্করামের হাত ধরে! ক্রিকেট বা জীবন এভাবেই তো বারবার মিলিয়ে দেয় সব হিসাব-নিকাশ।
নিজের আন্তুর্জাতিক ক্যারিয়ার পরে দেখেছেন কাছ থেকে, আর আগে মাঠের বাইরে থেকেও সাক্ষী জাতীয় দলের একের পর এক হতাশার গল্পের। বারবার শিরোপার খুব কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেমেছিল দক্ষিন আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই লড়াইয়ে বারদুয়েক হোঁচট খেলেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছেড়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াস অধিনায়ক মনে করেন, এবার ভাগ্য তাদের সহায় হয়েছিল বলেই মিলেছে সাফল্য।
সেই ১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপ (বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর থেকে ২৭ বছরে দলটি আইসিসি ইভেন্টে সেমিফাইনাল-ফাইনাল খেলেছে এর আগে ২০ বার। প্রতিবারই তুমুল সম্ভাবনা জাগিয়েও তারা পারেনি শেষ হাসি হাসতে। এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এসেছিল টানা সাত ম্যাচ জিতে। এরপরও ছিল শঙ্কা। তবে সেটা উড়িয়ে দিয়ে ৫ উইকেটের জয়ে শিরোপা খরা কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
আরও পড়ুন
যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে বাভুমারা, মানছেন কামিন্স |
![]() |
রান তাড়ায় চোট নিয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা বাভুমা ম্যাচের পর জানালেন উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া।
“শেষ কয়েকটা দিন ছিল অসাধারণ। কিছু কিছু সময়ে তো মনে হচ্ছিল আমরা যেন দক্ষিণ আফ্রিকাতেই খেলছি। আমরা কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, জয়ের বিশ্বাস নিয়ে এখানে এসেছিলাম। যদিও অনেকেই আমাদের নিয়ে সন্দিহান ছিল। ভালো খেলতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। আমরা বারবার সাফল্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছেছি, আবার হতাশাও পেয়েছি। এবার সৌভাগ্য আমাদের সাথে ছিল। আশা করি এই জয় দিয়ে আরও অনেক কিছুর সূচনা হতে যাচ্ছে।”
ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন পেসার কাগিসো রাবাদা ও ওপেনার এইডেন মার্করাম। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নেওয়া রাবাদা দাঁড়াতেই দেননি অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারকে। আর প্রথম ইনিংসে ডাক মারা মার্করাম রান তাড়ায় উপহার দেন ১৩৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস, যা তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস বললেও কমই বলা হবে।
আরও পড়ুন
অবশেষে দ.আফ্রিকার ‘চোকার্স’ ট্যাগ মুক্তির আনন্দ |
![]() |
দুজনের জন্যই বাড়তি প্রশংসা বরাদ্দ বাভুমার।
“কাগিসো রাবাদা আমাদের এই দলের বড় শক্তি। কয়েক দিন আগে আমি 'হল অব ফেম'-এর নতুন সদস্যদের তালিকা দেখছিলাম। আমার বিশ্বাস, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তার নামও সেখানে চলে যাবে। আর এইডেন মার্করামও অসাধারণ ছিল। দলে তার জায়গা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তার যে মানসিক দৃঢ়তা আছে, সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। রাবাদা আর এইডেন দুজনেই দলের হার না মানা মানসিকতার প্রতিনিধিত্ব করেছে।”
বারবার হতাশ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দেশ হিসেবে জয়ের মাহাত্ব কেমন, সেটাও অনুধাবন করতে পারছেন বাভুমা।
“যত বিভক্তই হই না কেন, এটা আমাদের জন্য, আমাদের গোটা জাতির জন্য একটা সুযোগ এক হওয়ার। এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আমরা সবাই একসাথে মিলেমিশেই এই সাফল্য উদযাপন করব।”
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবারের ফাইনালেও নেমেছিল ফেভারিট হিসেবে। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটা চমক দেখিয়েই টানা সাত ম্যাচ জিতে শিরোপার লড়াইয়ে জায়গা করে নিলেও, তাদের ফেভারিট হিসেবে কেউই সেভাবে রাখতে চাননি। তবে চারদিনের লড়াইয়ের পর টেম্বা বাভুমার দলই মাঠ ছেড়েছে বিজয়ীর বেশে। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স মনে করেন, যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে তাদের প্রতিপক্ষ।
ফাইনালের প্রথম দিনেই অনেকটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ২১২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরও অবশ্য টিকিয়ে রাখেন বোলাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ১৩৮ রানেই। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটাররা সেভাবে বড় স্কোর না করলেও টার্গেট দাঁড় করাতে সক্ষম হয় ২৮২ রানের, যা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে হেরে টানা দ্বিতীয়বার এই প্রতিযোগিতার শিরোপা আর জেতা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার।
আরও পড়ুন
অবশেষে দ.আফ্রিকার ‘চোকার্স’ ট্যাগ মুক্তির আনন্দ |
![]() |
অধিনায়ক কামিন্স মনে করেন, নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি তারা দল হিসেবে।
“পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলে যেতে পারত, কিন্তু আমাদের জন্য এবার কাজটা একটু বেশিই কঠিন ছিল। কিছু জায়গায় আমরা ঠিকভাবে খেলতে পারিনি। প্রথম ইনিংসে ভালো লিড নিয়েও আমরা প্রতিপক্ষকে পুরোপুরিভাবে চাপে রাখতে পারিনি। (রান তাড়ায়) দক্ষিণ আফ্রিকা চতুর্থ ইনিংসে আমাদের কোনো সুযোগই দেয়নি। এইডেন (মার্করাম) আর টেম্বা (বাভুমা) আমাদের কোনো সুযোগ দেয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা দেখিয়ে দিয়েছে যে কেন তারা এই মঞ্চে এসেছে, আর যোগ্য দল হিসেবেই তারা জিতেছে।”
দুই ইনিংসেই অস্ট্রেলিয়াকে ভুগিয়েছে টপ অর্ডার। দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো একটা লিড নেওয়ার পর সুযোগ ছিল বড় টার্গেট ছুঁড়ে দেওয়ার। তবে মাত্র ৭৩ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে পড়ে যায় দলটি। সেখান থেকে টেল এন্ডারদের সহায়তায় একটা ভালো লক্ষ্যই দক্ষিণ আফ্রিকাকে দিয়েছিল অজিরা। তবে এইডেন মার্করামের সেঞ্চুরি ও টেম্বা বাভুমার ফিফটিতে অনায়াসেই জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এই হারের জন্য কামিন্স অবশ্য ব্যাটারদের দায় দিতে নারাজ।
“আমাদের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে কিছু চিন্তা আছে। তবে গত দুই বছরে তাদের অনেকেই ভালো করেছে। বোলাররা প্রথম দুই দিন বেশ ভালো করেছে। আমরা সবকিছুই দিয়েই চেষ্টা করে গেছি। নাথান লায়ন দুর্দান্ত বোলিং করেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে উইকেট পায়নি। ফাইনালে ওঠাও একটা বিশাল অর্জন। এক ম্যাচের শিরোপা নির্ধারণী লড়াই দারুণ রোমাঞ্চকর। যদিও ফলটা আমাদের পক্ষে আসেনি, তবুও একটা অসাধারণ সপ্তাহ কাটল।”
হাতে ৮ উইকেট, প্রয়োজন মাত্র ৬৯ রান, ক্রিজে দুই অপরাজিত ব্যাটার গড়েছেন ১৪৩ রানের জুটি - এমন প্রেক্ষাপটে একটা দল টেস্টে হারবে এটা ভাবাটাও বেশ কঠিন কাজ। তবে দলটা দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের চতুর্থ দিনের শুরুতেও অনেকেই নিশ্চিত ছিলেন না দলটির জয়ের ব্যাপারে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলেই নয়, এর মূল কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা চিরায়ত মোক্ষম সময়ে ‘চোক’ করার ইতিহাস।
চাইলেই আইসিসি ইভেন্টের অনেক ম্যাচ টেনে আনা যেতে পারে এর কারণ হিসেবে। তবে সবচেয়ে তাজা স্মৃতি এক বছর আগেরই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে এক পর্যায়ে ৩০ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল মাত্র ৩০ রান। হাতে ৬ উইকেট, ক্রিজে হাইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। এই ম্যাচ কীভাবে হারা সম্ভব?
তবে দলটার নাম যে দক্ষিণ আফ্রিকা। যে অবস্থান থেকে হেরে যাওয়াটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ, তারা করে ফেলে ঠিক সেটাই। নাটকীয়ভাবে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করে আরও একবার চোখের জলে নিজেদের অনাকাঙ্ক্ষিত চোকার্স খেতাবকে বরণ করতে বাধ্য হয় প্রোটিয়াসরা।
আরও পড়ুন
‘এবার ভাগ্য আমাদের সাথেই ছিল’, শিরোপা জিতে বললেন বাভুমা |
![]() |
এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগে তাই তাদের কেউই রাখেননি ফেভারিট হিসেবে। টানা সাত ম্যাচ জিতে ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার পরও এমনটা ভাবার পেছনে যুক্তি একটাই, দক্ষিণ আফ্রিকা বড় মঞ্চে জেতার দল না। চাপের মুখে, সবচেয়ে কাজের সময়ে তারা তাসের ঘরে মত ভেঙে যায়।
ফাইনালের প্রথম ইনিংসেই বজায় ছিল সেই চিত্র। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২১২ রানে আটকে দেওয়ার পর নিজেরা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৩৮ রানেই। শেষ পাঁচ উইকেট যায় স্রেফ ১২ রানে। এরপর ৭৩ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেট শিকার করে আশা ছিল টার্গেট ২০০ রানের কমেই রাখার। তবে আরও একবার বড় মঞ্চের স্নায়ুচাপ পেয়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
বোলার মিচেল স্টার্ক করে বসেন ফিফটি, খেলে ফেলেন একশর বেশি বল। আর এমনভাবে ব্যাট চালাচ্ছিলেন, যেন তাকে আউট করতেই ভুলে গেছেন রাবাদা-ইয়ানসেনরা। ফলে শেষ পর্যন্ত টার্গেট গিয়ে দাঁড়ায় ২৮২ রানে, যা লর্ডসে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জেতার জন্য ভীষণ দুরূহ এক লক্ষ্যই।
৭০ রানে দুই উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার চোক করার ভূত যেন আবার তাড়া করছে তাদের। ইনিংসের শুরুতেই টেম্বা বাভুমার দেওয়া ক্যাচ স্লিপে যদি ফেলে না দিতেন স্টিভ স্মিথ, ইতিহাস হয়ত অনুসরণ করতে চেনা চিত্রপটই। তবে সেটা আর হয়নি।
আরও পড়ুন
মার্করাম বীরত্বে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা দক্ষিণ আফ্রিকার |
![]() |
এরপরই বাভুমা আবার পেলেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট। তবে অসামান্য লড়াইয়ের মানসিকতা দেখিয়ে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে পার করে দিলেন তৃতীয় দিন। সাথে সেঞ্চুরি করা এইডেন মার্করাম ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে চতুর্থ দিনের জন্য জমা রাখেন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা।
অবশ্য দিনের শুরুতে বাভুমার ৬৬ রানে বিদায়ে সবার মনেই জেঁকে বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার চোক করার শঙ্কা। তবে গত ২৭ বছরে অজস্র হৃদয়ভঙ্গের যন্ত্রণার সাক্ষী হওয়া দলটি এবার আর ভুল করেনি। মার্করাম শেষটা না করতে পারলেও ১৩৬ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে নিশ্চিত করেন দেশের ইতিহাস গড়ার প্রেক্ষাপট।
কাইল ভেরেইনের জয়সূচক বাউন্ডারির পর বাধভাঙ্গা উল্লাসে ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোয়াড। এই দলের অধিকাংশ সদস্যই যে এরই মধ্যে তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ‘চোকার্স’ ট্যাগের তেতো স্বাদ পেয়েছেন। আর যারা পাননি, তারাও সেই শৈশব থেকে দেখে এসেছেন পূর্বসূরিদের বারবার চাপের মুখে ভেঙে পড়ার কাব্য। এই এক জয় দিয়ে যেন মুক্তি মিলল তাদের ও অতীতের সব দলেরও। অন্তত দক্ষিন আফ্রিকাকে এখন আর কেউ এই ট্যাগ দেবেন না। কারণ তাদের পরিচয় এখন একটাই, চ্যাম্পিয়ন!
হাতে ৮ উইকেটে নিয়ে ৬৯ রান প্রয়োজন, এমন সমীকরণ থেকে হারাটাই হত বেশি কঠিন কাজ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বারবার তীরে গিয়ে তরী ডোবানোর লম্বা ইতিহাসের কারণে কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তা ছিলই। দিনের শুরুতে টেম্বা বাভুমার উইকেটে আশা জাগল অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। তবে আগেরদিন সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া এইডেন মার্করাম পূর্ণতা দিলেন নিজের দুর্দান্ত ইনিংসের, দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে। প্রথমবারের মত আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরল দক্ষিণ আফ্রিকা।
লর্ডসে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮২ রানের টার্গেটে জয় তুলে নিয়েছে ৫ উইকেটে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর পর আইসিসি ইভেন্টে শিরোপার দেখা পেল প্রোটিয়াসরা। এর আগের শিরোপা ছিল ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
আরও পড়ুন
‘এবার ভাগ্য আমাদের সাথেই ছিল’, শিরোপা জিতে বললেন বাভুমা |
![]() |
আগের দিন হ্যামস্ট্রিং চোট নিয়েই বীরোচিত এক ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন বাভুমা। এদিনও শুরু থেকেই দৃশ্যমান ছিল তার আঘাতের বিষয়টি। কয়েকবার বিটও হন কামিন্সের বলে। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিতেই খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় বাভুমার ৬৬ রানের অনবদ্য ইনিংস।
তবে এরপরও ম্যাচে ফিরতে হলে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল উজ্জীবিত একটি স্পেল, যা তিন পেসারের কেউই উপহার দিতে পারেননি। আগেরদিন যেখানে থেমেছিলেন, ঠিক যেন সেখানে থেকেই শুরু করা মার্করাম ছিলেন যথারীতি সাবলীল।
রানের চাপ না থাকায় ব্যাট করেন রয়েসয়েই। তবে অন্যপ্রান্তে ক্রিস্টান স্তাবস শুরু থেকেই ব্যাট করেন খোলসবন্দী থেকে। আক্রমণে ফিরেই তাকে শিকার বানান এই ইনিংসে আগে দুই উইকেট পাওয়া মিচেল স্টার্ক। বোল্ড করেন ৮ রানে।
এরপরও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ জেতার সামান্যতম আশাও জাগেনি। কারণ, ক্রমেই জয়কে নাগালের মধ্যে নিয়ে আসেন মার্করাম ও ডেভিড বেডিংহাম মিলে। একটু একটু করে দুজন মিলে চলে যান জয়ের খুব কাছাকাছি। তবে জয় থেকে মাত্র ছয় রান দূরত্বে থাকা সাজঘরে ফিরতে হয় মার্করামকে।
আরও পড়ুন
যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে বাভুমারা, মানছেন কামিন্স |
![]() |
জস হ্যাজেলউডকে একটি চার মারার পর চেষ্টা করেছিলেন আরেকটি বাউন্ডারি হাঁকানোর, তবে বল চলে যায় সোজা মিড-উইকেটে থাকা ট্রাভিস হেডের হাতে। শেষ হয় ডানহাতি এই ব্যাটারের ১৪ চারে সাজানো ১৩৬ রানের ঝকজকে ইনিংস। এরপর অনায়াসেই বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন বেডিংহাম (২১*) ও কিপার-ব্যাটার কাইল ভেরেইনে (৭*) মিলে।
১ দিন আগে
২০ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৭ দিন আগে
২৭ দিন আগে
২৭ দিন আগে
২৭ দিন আগে