ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে খুব দ্রুতই এর প্রভাব পড়েছে দুই দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। একই সময়ে চলা পিএসএলের পর স্থগিত হয়ে গেছে আইপিএলও। এই দুই টুর্নামেন্টের মধ্যে পিএসএলে খেলছেন বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন ও নাহিদ রানা। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ মনে করেন, বিকল্প ভেন্যুতে নিরাপদেই খেলতে পারবেন রিশাদ-নাহিদরা।
গত কয়েকদিন ধরে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও পাল্টাপাল্টি আক্রমণের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার কারনে শুক্রবার ঘোষণা আসে পিএসএল স্থগিতের। সাথে এও জানানো হয়, বাকি অংশ হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ফলে শুরুতে রিশাদ ও নাহিদরা দেশে ফিরতে চাইলেও তাদের এখন সেখানে গিয়ে খেলার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন
অবসরে যাওয়া রোহিতের কাছে টেস্ট খেলাটাই ‘সর্বোচ্চ সম্মান’ |
![]() |
শুক্রবার বিসিবির পক্ষ থেকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় ফারুক জানালেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন তারা।
“গত মঙ্গলবার থেকে আমাদের প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক আমাদের বোর্ডের জন্যও। আপনারা জানেন আমাদের জাতীয় দলের দুজন ক্রিকেটার পাকিস্তানে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলছেন। সেখানে যখন থেকে পরিস্থিতি প্রতিকূল, তখন থেকেই ক্রিকেট বোর্ড, ক্রিকেট অপারেশনন্স থেকে শাহরিয়ার নাফীস নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। আমি ব্যক্তিগত উদ্যেগে পিএসএলের সিএও-এর সাথে যোগাযোগ করেছি। আমি পিসিবি সভাপতিকেও বার্তা দিয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছিলাম।”
গত বৃহস্পতিবার পিএসএলে করাচি কিংস এবং পেশোয়ার জালমি রাওয়ালপিন্ডিতে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল। তবে স্টেডিয়ামের কাছে একটি ড্রোন পড়ার পর ম্যাচটি বাতিল করা হয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এরপর খেলোয়াড়দের ওপর হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান ও বিদেশি ক্রিকেটারদের লক্ষ্য করে এটি ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের ইচ্ছাকৃত এক হামলা।
স্বাভাবিকভাবেই দুই দেশের চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিদেশী ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা নাকি এরই মধ্যে তাদের বোর্ডকে জানিয়েছে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা। এমন অবস্থায় বিসিবিকে ভাবতে হচ্ছে পাকিস্তানে অবস্থান করা বাংলাদেশের দুই সাংবাদিকের নিরাপত্তার দিকটিও।
ফারুক জানিয়েছেন, তারা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দিকটিও দেখবেন।
“আপনারা জানেন তারা বাংলাদেশের দুজন সব সব বিদেশী খেলোয়াড়দেড় একত্র করেছিল এজন্য যাতে তারা তাদের নিরাপদে একটা জায়গায় সরিয়ে নিতে পারে। তার সাথে সাথে আমাদের বোর্ড থেকে পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমাদের দুজন ক্রীড়া সাংবাদিক সেখানে আছে, আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। আমরা তাদের বলেছি যাতে খেলোয়াড়দের সাথে এই দুজনের দিকটিও দেখা হয়। তারা পেশাগত দায়িতে পালনে সেখান গেছে। তাই আমরা মনে করি তাদের প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে।”
গত কয়েকদিন ধরেই খবর আসছিল যে, নিরাপত্তার চিন্তায় বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাচ্ছেন রিশাদ ও নাহিদ। সেই সাথে যোগ হয় বাংলাদেশের এই মাসের পাকিস্তানের সম্ভাব্য সাদা বলের সিরিজ নিয়েও, যেখানে দলের অনেকেই যেতে অনাগ্রহী নিরাপত্তা নিয়ে।
আরও পড়ুন
পাকিস্তানে হচ্ছে না পিএসএল, ধোঁয়াশায় বাংলাদেশ সিরিজ |
![]() |
সেই সিরিজ নিয়ে কিছু না বললেও বিসিবি প্রধান বললেন, রিশাদ ও নাহিদ আপাতত দেশে ফিরেছেন না।
“গত তিন দিন ধরে আমরা সারাক্ষণ পিসিবি, পিএসএলের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। আশা করি তারা আজকে বিকালের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত নেবে। এরই মধ্যে টুর্নামেন্ট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে তারা। আমি জানতে পেরেছি সব ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারা খেলোয়াড়দের সেখানে নিয়ে যাবে। এই ব্যাপারটা বোর্ড সভাপতি হিসেবে প্রথম থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি আমি। আমি আশা করি এটার একটা সুন্দর সমাধান হবে।”
No posts available.
সিরিজ আগেই খুঁইয়ে শেষটা অন্তত ভালো করতে পারত বাংলাদেশ। তবে আফগানিস্তারের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটি আরও বাজেভাবেই হারে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানের এই হারে ধবলধোলাইয়ের লজ্জা নিয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
ব্যাটি-বোলিং কোনো বিভাগেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে নূন্যতম প্রতিরোধও গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে হারানো ছন্দ খুঁজে পাওয়াটা মিরাজদের জন্য যেন অসম্ভই হয়ে পড়েছে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স থেকে বাংলাদেশ আরও ভালো দল বলছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক,
‘আসলে আমরা এত খারাপ দলও না যতটা খারাপ খেলছি। এখানে যদি উন্নতি না করতে পারি আরও কঠিন হবে। ভুলগুলো যদি বারবার রিপিট করি তাহলে আরও কঠিন হবে আমাদের জন্য।’
দলের কিছুই পরিকল্পনা মতো হচ্ছে না। সব ভুলের ম্যাচে বাংলাদেশের কোচিং স্টাফরা আসলে কি করছেন? জবাবে মিরাজ বলেন,
‘সবাই কাজ করছে। ইচ্ছা করে কেউ খারাপ খেলে না। সবাই চেষ্টা করে ভালো ক্রিকেট খেলার জন্যই। অনেক সময় অনেক কিছু পক্ষে আসে না। খারাপ সবাই একসাথেই খেলছি। যারাই ভালো করছে আউট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের স্কোরও ৩০-৩৫ করে আউট হচ্ছি। ব্যাটাররা এভাবে আউট হলে আমাদের জন্য কঠিন। বিশ্বাস রাখি, আমরা এতটা খারাপ দল না, যতটা খারাপ খেলছি।’
আমিরাত সফর শেষে বাংলাদেশের পরের পরীক্ষা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আফগানদের বিপক্ষে হারের ক্ষত শুকানোর আগেই ঘরের মাঠে ক্যারিবিয়দের বিপক্ষে সাদা বলের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজের আগে মানসিকভাবে শক্ত হয়ে ফিরে আসার কথা বলেন মিরাজ,
‘দেখেন দলটা অবশ্যই (সবার) একটু খারাপ লাগছে যেহেতু এই সিরিজ হেরেছি। এই দুই দিন যদি ফ্যামিলির সাথে সময় কাটায় মনে হয় আমরা ফ্রেশভাবে খেলতে পারব। আমার যেটা চাওয়া থাকবে, ব্যাটাররা যেখানে উন্নতি আনা দরকার, মানসিকভাবে শক্ত থাকা দরকার। কোচিং স্টাফরা আমাদের মানসিকভাবে অনেক সাপোর্ট দিচ্ছি। অধিনায়ক হিসেবে আমারও এই কাজটাই করা উচিত।’
তিনদিন আগে আবুধাবিতে ১০৯/১০ স্কোর ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বনিম্ন। ৭২ ঘন্টা পর একই মাঠে ৯৩ রানে অল আউট হয়ে লজ্জাটা ভারী হয়েছে। আফগানিস্তানের কাছে দ্বি-পাক্ষিক ওডিআই সিরিজে হ্যাটট্রিক হার। এই প্রথম হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা (০-৩) পেতে হয়েছে।
হারের ব্যবধান ২০০ রান। বাংলাদেশের ওডিআই ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ। আফগানিস্তানের কাছে এটাই রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। আফগানিস্তানের ওডিআই ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় বড় ব্যবধানে জয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই রানের ব্যবধানে তাদের সবচেয়ে বড় জয়।
তিন ম্যাচের সিরিজের কোনোটিতেই ৫০ ওভার পার করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। প্রথম ম্যাচে ৭ বল বাকি থাকতে ২১০ রানে এ অল আউট। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৫ বল বাকি থাকতে ১০৯ রানে অল আউট বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ম্যাচে সেখানে ১৩৭ বল আগেই শেষ বাংলাদেশ ৯৩ রানে!
তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজে হাফ সেঞ্চুরি মাত্র ২টি, হৃদয় এবং মিরাজের।
আবুধাবিতে লজ্জার এই সিরিজ ২০২৭ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সরাসরি কোয়ালিফাই করার সমীকরণটা কঠিন করে দিয়েছে।
ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০। রেটিং পয়েন্ট ৭৪। বাংলাদেশের এক ধাপ উপরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেটিং পয়েন্ট সেখানে ৮০। আসন্ন ওডিআই সিরিজ জিতলে রেটিং পয়েন্ট বেড়ে যাবে, সম্ভাবনা থাকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উপরে উঠে যাওয়ারও। তারপরও কিন্তু ৭ কিংবা ৮ এ র্যাঙ্কিং উঠিয়ে নেয়ার কাজটা দুরূহ।
অন্যদিকে বাংলাদেশকে ওডিআই সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করে আফগানিস্তান র্যাঙ্কিংয়ে ৭ সুসংহত করে এখন ৬ এ চোখ রেখেছে। ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করার দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেছে আফগানিস্তান। বর্তমানে ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে ৬-এ থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে চোখ রাঙাচ্ছে আফগানিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার রেটিং পয়েন্ট যেখানে ৯৯, সেখানে আফগানিস্তানের ৯৫।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ এই পরিণতি ? এটাই জনমনে প্রশ্ন। যদি ৩ টি ম্যাচের স্কোরকার্ডের দিকে তাকান, তাহলে বিষয়টা স্পষ্ঠ হবে। প্রতিটি ম্যাচে মিডল অর্ডার, লোয়ার অর্ডার এবং টেল এন্ডাররা পড়েছে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দল শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে ৪৬ রানে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সেখানে শেষ ৫ উইকেটের পতন ঘটেছে ১০ রানে। সিরিজের শেষ ম্যাচে ৭ উইকেট পড়েছে ২৩ রানে!
সিরিজের তিনটি ম্যাচে রশিদ খানের গুগলি ধাঁধায় ফেলেছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। ৩ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে ১১ উইকেট শিকারে নিজের এবং আফগান বোলারদের মধ্যে সেরা কৃতিত্ব এই বিশ্বসেরা লেগ স্পিনারের। প্রথম দুই ম্যাচে পেসার আজমতউল্লাহ ওমরজাই দিয়েছিলেন তাকে দারুণ সঙ্গ। সিরিজের শেষ ম্যাচে ২১ বছর বয়সী তরুণ বিলাল সামি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে দিয়েছেন ধসিয়ে (৭.১-০-৩৩-৫)।
সিরিজের শেষ ম্যাচে টিম ম্যানেজমেন্টকে পড়তে হবে প্রশ্নের মুখে। নিয়মিত পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে সাইড লাইনের দুই পেসার নাহিদ রানা-হাসান মাহমুদকে একাদশে বিবেচনা করে তারা বড় ভুলই করেছে। ২ উইকেট পেলেও ওভারপ্রতি ৯.৫০ রান খরচা করেছেন হাসান মাহমুদ। উইকেটহীন নাহিদ রানার খরচা সেখানে ওভারপ্রতি ৬.৭২।
প্রতি ম্যাচে বাজে ফিল্ডিং বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। সিরিজের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তান কীভাবে স্কোর টেনে নিয়েছে ২৯৩/৯ পর্যন্ত ? তার কারণ, খুঁজতে গেলে কেউ কেউ কৃতিত্ব দিবেন উপযুপরি দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৫ রানে থেমে যাওয়া ইব্রাহিম জাদরানকে। ওপেনিং পার্টনারশিপের ৯৯ রানকেও দিতে হবে কৃতিত্ব। তবে এই পার্টনারশিপ থামিয়ে দেয়া যেতো ১৩ রানে, ৯ রানে ফিরিয়ে দেয়া যেতো ইব্রাহিম জাদরানকে। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নাহিদ রানার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে নাঈম শেখের হাত থেকে বেঁচে গেছেন ইব্রাহিম জাদরান।
শেষ পাওয়ার প্লে'র অনিয়ন্ত্রিত বোলিংও ভুগিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। এই ৬০ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান করেছে আফগানিস্তান। যার মধ্যে শেষ দুই ওভারে ৪১ রান খরচা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে মিরাজ-হাসান মাহমুদকে। বলে কয়ে ফিফটি করেছেন মোহাম্মদ নবী। ৩৫ বলে ফিফটি করে ছিলেন ৩৭ বলে ৪ বাউন্ডারি, ৫ ছক্কায় ৬২ রানে নট আউট নবী।
লজ্জার এই ম্যাচে অলরাউন্ড পারফর্ম করেছেন সাইফ হাসান। অকেশনাল এই অফ স্পিনারের বোলিং (৪-১-৬-৩) ছড়িয়েছে বিস্ময়। ব্যাটিংয়েও ছিলেন বাংলাদেশের অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম (৫৪ বলে ২ চার, ৩ ছক্কায় ৪৩)।
নাঈম শুধু স্লিপে ক্যাচই ছাড়েননি, ওডিআই ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ইনিংসটিও ছিল যাচ্ছেতাই। ২৪ বল খেলে ৭ রান, ওমরজাইয়ের শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে নিজের অফ ফর্মের কথাই প্রকারান্তরে দিয়েছেন জানিয়ে নাঈম। ওডিআই ক্যাপ্টেন্সি হারিয়ে শান্তও এলোমেলো হয়ে গেছেন। বিলাল সামিকে অফ ষ্ট্যাম্পের উপরের বলে কাট করতে যেয়ে প্লেড অন হয়েছেন তিনি (১৬ বলে ৩)। রশিদ খানের গুগলি অনুমান করতে পারেননি হৃদয়, হয়েছেন বোল্ড (১২ বলে ৭)। বিলাল সামির বলে মিরাজ কট বিহাইন্ড (৯ বলে ৬)। পরের বলে শামীমের ক্যাজুয়াল সিঙ্গলের দৌড় ছিল অপেশাদারী ব্যাটারের আদর্শ উদাহরন। ভাগ্যটা খারাপ সোহানের। রশিদ খানের বলে আম্পায়ার্স কলে রান আউট (৬ বলে ২) তিনি। তানভির রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে, রিশাদ মিড উইকেটে ধরা পড়ে এবং হাসান মাহমুদ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিলালকে প্রথম ৫ উইকেটের ইনিংস দিয়েছেন উপহার।
প্রচলিত ফরম্যাট ভেঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ এশিয়া কাপ। সে সময়ে এশিয়া মহাদেশে থাকা আইসিসির পূর্ণ ৪ সদস্য দেশকে নিয়ে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলে সেই নিয়ম ভেঙ্গেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। নিরাপত্তা শঙ্কায় বাংলাদেশে পূর্ব নির্ধারিত এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে না বলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) অবস্থান জেনে যাওয়ায় চতুর্থ দল হিসেবে আফগানিস্তানকে নেয়া হয়েছিল সেই আসরে। যদিও পরবর্তীতে অবস্থান পরিবর্তন করে পাকিস্তান খেলেছে এশিয়া কাপে।
ভাগ্যক্রমে সুযোগ পাওয়া সেই আসরটিই আফগানিস্তানের টার্নিং পয়েন্ট। ফতুল্লায় বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারিয়ে আইসিসির প্রথম কোনো পূর্ণ শক্তির দেশের বিপক্ষে জয় উদযাপন করেছে আফগানিস্তান। সেই জয়ে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে উৎসব হয়েছে হাজার হাজার গুলির শব্দে।
এখন সেই আফগানিস্তান বাংলাদেশের সামনে আতঙ্কের নাম। উপর্যুপরি ৩টি ওডিআই সিরিজ হেরে, প্রথমবারের মতো ১০০'র নীচে স্কোর করে, হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা পেয়ে এখন প্রিয় ফরম্যাটে অস্তিত্ব বিপন্নের মুখে বাংলাদেশ।
‘ব্যাটল অব স্পিন’-এ রূপ নিয়েছে লাহোর টেস্ট। ম্যাচের বর্তমান চিত্র বলছে, চতুর্থ দিনেই ফল জানা যাবে। বিশেষ করে দুই দলের স্পিনাররা যেভাবে প্রতিপক্ষকে নাচিয়ে ছাড়ছে, তা উপভোগ্যের চেয়েও বেশি বিষাদের। আর চেনা মাঠে পাকিস্তানের এই দুর্দশা দেখে বেশ বিরক্ত দলটির প্রধান কোচ আজহার মাহমুদ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে এক পর্যায়ে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৫০ রান। সেখান থেকে ১৭ রান যোগ করতেই বাকি ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পেসার ও বর্তমান কোচ আজহার মাহমুদ।
আজ (তৃতীয় দিন) দিন শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা ৪ উইকেটে ১৫০ রানে ছিলাম। সেখান থেকে মাত্র ১৭ রান যোগ করতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলি। কাউকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই, দায় শুধু আমাদের শট নির্বাচন আর সিদ্ধান্ত গ্রহণে।’
আজহার আরও বলেন, ‘এটা একেবারে সোজা হিসাব— ১৭ রানে ৬ উইকেট হারানো কখনোই আদর্শ হতে পারে না। পিচ বল ঘুরাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু আউট হওয়াটা ব্যাটসম্যানদের ভুলেই হয়েছে, পিচের কারণে নয়। আমাদের শট সিলেকশন মোটেও ভালো ছিল না। এ দিক থেকে আরও উন্নতি করতে হবে। যদি আমাদের এমন পিচে খেলতে হয়, তবে ধৈর্য নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে।’
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের তিন ব্যাটার কোনো রান না করেই সাজঘরে ফেরেন এটিও কোচের হতাশার বড় কারণ। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা ব্যবহৃত পিচে খেলেছি। এমন পিচে যদি তুমি ভালো ব্যাটিং করো, তাহলে টিকে থাকা সহজ হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে আমাদের ব্যাটাররা ভালো শুরু পেলেও সেটা ৫০ বা ১০০ রানে পরিণত করতে পারেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে শফিক আব্দুল্লাহ (৪১) ও বাবর আজম (৪২) রান করেছে, কিন্তু কেউই সেটিকে বড় ইনিংসে রূপ দিতে পারেনি।’
আজহার স্বীকার করেছেন, এমন পিচে রান করাটা কঠিন। তবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা সহজ নয়। তবে আমাদের বিভিন্ন ধরনের শটে পারদর্শী হতে হবে। মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটাররা চেষ্টা করেছে, কিন্তু পেসারদের সামলাতে পারেনি। আমাদের উচিত ছিল পুরো সেশন ব্যাটিং করা, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। আমরা ভুল করেছি। ভবিষ্যতে এই দিকটায় নজর দিতে হবে।’
শেষে টেস্ট ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যাটসম্যানদের মনোযোগ হারানো নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি:
‘টেস্টে আপনি বুঝতে পারেন, কখন আপনি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন— সেটা সাধারণত সেশন শেষ হওয়ার সময়। সৌদ শাকিল টি-ব্রেকের ঠিক আগে যে অপ্রয়োজনীয় লফটেড শটটা খেলেছে, সেটা ওকে অযথা চাপে ফেলেছে। টি-ব্রেকের পরপরই রিজওয়ান আউট হয়ে যায়। এরপর আমরা শাহিনকে (শাহিন আফ্রিদি) পাঠাই।’
ওয়ানডে সিরিজে ক্রমাগত নতুন তলানিতে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওয়ানডেতে হতাশাজনক পরাজয়ের পর শেষটিতে যেন সেই বিশেষণ ব্যবহারেরও সুযোগ নেই। কারণ ব্যাখ্যাতীত ব্যাটিংয়ে বিশাল ব্যবধানে হেরে হোয়াইটওয়াশড হয়েছে তারা।
আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ২০০ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৯৩ রান করে স্বাগতিকরা। জবাবে ২৭.১ ওভারে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০৯ রানে অল আউট হয়ে রেকর্ড গড়েছিল তারা। এবার সেটি ছাপিয়ে পৌঁছে গেল নতুন তলানিতে।
এছাড়া ওয়ানডেতে দেশের বাইরে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ঠিক ২০০ রানেই হেরেছিল তারা।
সিরিজের তিন ম্যাচ জিতে এই প্রথম বাংলাদেশকে হোয়াইওয়াশ করল আফগানিস্তান। একইসঙ্গে দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যানেও ১১-১১ সমতা ফিরিয়ে আনল তারা।
শেষ ম্যাচে বল হাতে বাংলাদেশের ইনিংস গুঁড়িয়ে দেন বিলাল সামি। ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে ৩৩ রানে ৫ উইকেট নেন তরুণ পেসার। এছাড়া ১২ রানে ৩ উইকেট নেন রশিদ খান। সিরিজে তার শিকার ১১ উইকেট।
রান তাড়ায় সাইফ হাসানের ব্যাট থেকে আসে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৪ বলে ৪৩ রান। পরের দশ ব্যাটারের স্কোর অনেকটা টেলিফোন নম্বরের মতোই- ৭, ৩, ৭, ৬, ০, ২, ৪, ৫, ৯, ২*!
৩ উইকেটে ৭০ থেকে হঠাৎ ধসে ২৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে এক পর্যায়ে ২৫ ওভারে ১ উইকেটে ১৫০ রান ছিল আফগানদের। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের ২২ ওভারে মাত্র ৮৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু নবীর ঝড়ে শেষ ৩ ওভারে ৫৪ রান করে তিনশর কাছে চলে যায় স্বাগতিকরা।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। পাওয়ার প্লেতে দুজন মিলে যোগ করেন ৬৬ রান। এতে অবশ্য বড় অবদান ছিল বাংলাদেশের এলোমেলো বোলিংয়ের।
১৬তম ওভারে ৯৯ রানে এই জুটি ভাঙেন তানভির ইসলাম। ৪৪ বলে ৪২ রান করে এলবিডব্লিউ হন গুরবাজ। এরপর সেদিকউল্লাহ অতলকে নিয়ে ৭৪ রানের জুটি গড়েন ইব্রাহিম। ২৫ ওভারে তাদের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ১৫০ রান।
৩২তম ওভারে সাইফের হাতে বল দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তৃতীয় বলেই অতলকে ফিরতি ক্যাচে আউট করেন সাইফ। ২৯ রান করতে ৪৭ বল খেলেন অতল।
এরপর হাশমতউল্লাহ শহিদি ও ইকরাম আলি খিলকেও আউট করেন সাইফ। মাঝে ইকরামের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান ইব্রাহিম। দ্বিতীয় ম্যাচের মতো এবারও ৯৫ রান করেন আফগান ওপেনার।
আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান, নানগেলিয়া খারোটেরা অল্পেই ফিরে গেলে মনে হচ্ছিল আড়াইশও করতে পারবে না আফগানিস্তান। কিন্তু ভিন্ন ভাবনাই ছিল নবীর।
৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ধুন্ধুমার ব্যাটিং চালিয়ে নেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মাত্র ১২ বলে তিনি যোগ করেন ৪৪ রান। যেখানে দশম ব্যাটার বিলাল সামির নেই কোনো অবদান।
ক্যারিয়ারের ১৮তম ফিফটি করে ৪ চার ও ৫ ছক্কায় ৩৭ বলে ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন নবী।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সাইফ নেন ৩ উইকেট। এছাড়া হাসান মাহমুদের শিকার ২টি উইকেট।
আরেকটি
অ্যাশেজ সিরিজ শুরুর আগে বরাবরের মতো
কথার লড়াইয়ে মেতেছেন অস্ট্রেলিয়ার ও ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটাররা। ডেভিড ওয়ার্নারের
খোঁচার জবাব দিয়ে স্টুয়ার্ট ব্রড বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার এই দলটি ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে
বাজে।
পার্থে
আগামী ২১ নভেম্বর শুরু হবে অ্যাশেজ সিরিজ। মাসখানেক আগেই ওয়ার্নার বলে দিয়েছেন, নিজ
দেশে ইংল্যান্ডকে ৪-০তে হারাবে অস্ট্রেলিয়া। যা শুনে চুপ থাকতে পারেননি ব্রড। ওয়ার্নারের
মন্তব্যের জবাবে খোঁচা মারতে ছাড়েননি ব্রডও।
২০১০-১১
মৌসুমের পর আর অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে অ্যাশেজ সিরিজ জিততে পারেনি ইংল্যান্ডের। সেবার ৩-১
ব্যবধানে জিতে ঐতিহ্যবাহী ছাইদানি ধরে রেখেছিল তারা। সেই সাফল্য এখন বিস্মৃত অতীত।
অস্ট্রেলিয়াতে
গিয়ে সবশেষ তিন সফরে ৫-০, ৪-০- ও ৪-০ ব্যবধানে হেরেছে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়াকে তাই
যথাযথ সমীহ করতে ভুল করেননি ব্রড। তবে ঘরের মাঠে তারাই যে চাপে থাকবে সেই কথাও বলেন
ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার।
“ইংল্যান্ড হোক বা অন্য যে কোনো দল, অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতা খুব খুব কঠিন। অস্ট্রেলিয়াই নিঃসন্দেহে ফেবারিট। তাই প্রশ্ন হলো, কোন দল সবচেয়ে বেশি চাপে থাকবে?”
“চাপে থাকবে অস্ট্রেলিয়াই। কারণ তাদের জয়ের প্রত্যাশা বেশি। তারা ঘরের মাঠে দুর্দান্ত। তবে স্কোয়াড নিয়ে একটু তাদের একটু সংশয় আছে, প্যাট কামিন্সের ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন আছে।”
এরপর
ব্রড জানান, গত দেড় দশকে আর এত বাজে ছিল না অস্ট্রেলিয়ার কোনো দল।
“আমি
এখন যেটি বলব, সেটি মতামত নয়, বাস্তব সত্য। ২০১০ সালের পর থেকে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে
বাজে দল। সেবার ইংল্যান্ড জিতেছিল। আর একইসময়ে ২০১০ সালের পর থেকে এটিই ইংল্যান্ডের
সবচেয়ে ভালো দল।”
“তাই
এসব মিলে আসলে বোঝাই যাচ্ছে যে, এটি দুর্দান্ত এক অ্যাশেজ হবে।”