১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬:০০ পিএম

এশিয়া কাপের প্রায় চার দশকের ইতিহাসে একবারও হয়নি ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে এবারে আশা জেগেছিলো, এশিয়াসেরার লড়াইয়ের ফাইনালটায় এবারে অবশেষে দেখা যাবে এই দুইয়ের মহারণ। তবে সে স্বপ্নকে ধূলিস্যাৎ করে উত্তেজনার চূড়ান্ত শেষে ফাইনালের টিকেট মিললো শ্রীলঙ্কারই।
বৃষ্টির বাগড়ায় ৪৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে টস জিতে ক্যাপ্টেন বাবর আজমের সোজাসাপ্টা ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত। প্রেমাদাসায় রান তাড়া করে ম্যাচ জেতাটা একটু কঠিন বলেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত। তবে শুরুটা অবশ্য বলে ভিন্ন কথাই। ধীরলয়ের ব্যাটিং-এও রক্ষা হলো না। প্রামোদ মাদুশানের বলে উদ্বোধনী জুটি ভাঙলো ৯ রানেই। ফখর জামান আউট মাত্র চারে।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপের সুপার ফোরে গেল এশিয়ার টপ ফোরই
শুরুর ধকল অবশ্য সামাল দিয়েছে আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শাফিক আর বাবর আজম। ৬৪ রানের জুটি ভাঙেন আগের ম্যাচে ফাইফার নিয়ে বাজিমাত করা ওয়েলালাগে। সেট হয়ে ২৯-এই কাটা পড়েন বাবর।
৩ চার আর ২ ছয়ে ভালোই এগুচ্ছিলেন এশিয়া কাপে এ ম্যাচেই প্রথম সুযোগ পাওয়া আব্দুল্লাহ শফিক। তবে হাফ সেঞ্চুরির কোটা পূরণ করতে না করতেই ফেরেন পাথিরানার বলে প্রমোদ মাদুশানকে ক্যাচ দিয়ে। নিজের পরের ওভারেই মোহাম্মদ হ্যারিসের উইকেটটাও তড়িঘড়ি করে তুলে নেন পাথিরানা।
আশা জাগানিয়া শুরুর পর ১২ বলে ১২ করেই আউট মোহাম্মদ নাওয়াজ। ২৭ ওভার ৪ বল শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিদের সংগ্রহ তখন ১৩০। বড় সংগ্রহ না পাবার শঙ্কাকেও অবশ্য ছাড়িয়ে গেলো বৃষ্টির আগমণ। পৌনে এক ঘণ্টার বৃষ্টি গিলে নিলো তিনটা ওভার।
ফিরে এসে অবশ্য অন্য রূপে পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইফতিখার আহমেদের একশো পেরোনো জুটিতে একটা ভালো সংগ্রহই খুঁজে পায় পাকিস্তান। ১০৮ রানের জুটিটা ভাঙেন পাথিরানাই। ৪৭ বলে ৪০ করে ইফতিখার ফিরলেও, ৭৩ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেন রিজওয়ান। ৪২ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৫২।
ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন মেথডের মারপ্যাঁচে শ্রীলঙ্কার টার্গেটটা দাঁড়ালো সমান ২৫২তেই। ইনজুরি ছোবলে হারিস রউফ-নাসিম শাহরা নেই, তবু শুরুর জুটি ভাঙতে সময় লাগেনি পাকিস্তানের। কোভিড ধকল কাটিয়ে ফিরে আসা কুশাল পেরেরা শুরুতে খেললেন বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায়। তবে দম ফুরালো ৮ বলে ১৭ করেই ।
অন্য ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে একট শক্ত জুটির খোঁজে কুশাল মেন্ডিস। তবে সে আশায় গুড়েবালি ২৯ রানে শাদাব খানের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড নিসাঙ্কা। তবে তাতে অবশ্য থামেনি লঙ্কানদের রানের গতি। সামারাউইকরামাকে নিয়ে কুশাল মেন্ডিস গড়ে তুলেন শতরানের জুটি। এশিয়া কাপের এবারের আসরে মেন্ডিস তুলে নেন নিজের তৃতীয় অর্ধশতক।
১০০ রানের জুটি ভেঙে সাদিরা সামারাউইক্রামা ফেরেন ৪৮-এ। সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে পুড়ে কুশাল মেন্ডিসও আউট ৮৭ বলে ৯১ রানের চমৎকার নকে। ক্যাপ্টেন শানাকাও আউট দুই রান যোগ করেই। তিনজনই ধারাশায়ী ইফতিখার আহমেদের স্পিনে।
পুরো ইনিংসে মলিন শাহীন শাহ আফ্রিদির ঝুলিতে শেষমেশ মিললো ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আর দুনিথ ওয়েল্লালাগের উইকেট। শেষ ওভারে দরকার ৮টা রান। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল ওভারে শেষমেশ নায়কটা বনে গেলেন চারিথ আসালাঙ্কাই! তার ৪৭ বলে ৪৯-এ ভর করে দুই উইকেটের জয় লঙ্কানদের। ১৭ তারিখ ফাইনালের ভারতের প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাই!
No posts available.
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২:১৬ পিএম
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১:১৪ পিএম
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭ এম

২০২৫ বিদায় নিচ্ছে। নতুন বছরের ভোর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। তার আগেই স্মৃতির পাতা উল্টালে চোখে পড়ে এক বছরের অম্ল-মধুর সব ঘটনা- উচ্ছ্বাসের হাসি, হতাশার দীর্ঘঃশ্বাস, আর ইতিহাস ছোঁয়ার কিছু দুর্লভ মুহূর্ত।
বাংলাদেশ ফুটবলের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো হয়ে উঠলেন হামজা চৌধুরী। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানো শুধু একজন ফুটবলারের অভিষেক নয়, যেন নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস। মাঠে তাঁর উপস্থিতি ফিরিয়ে আনল দেশের নিস্তব্ধ ফুটবলকে। গ্যালারি আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হলো নতুন উন্মাদনা।
নারী ফুটবলে সাবিনা খাতুন ও ঋতুপর্ণাদের ‘কোচ হটাও' বিদ্রোহে উত্তাল সময় পেরিয়েও দলটি থামেনি। সংকটের ভেতর দিয়েই তাঁরা গড়েছেন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূলপর্ব নিশ্চিত করে প্রমাণ করেছে, লড়াই শুধু কথায় নয়, খেলাতেও।
ক্রিকেটে বছরজুড়ে চলেছে ওঠানামা। কখনো প্রত্যাশার আলো, কখনো হতাশার ছায়া। এই মিশ্র পারফরম্যান্সের মাঝেই একটি অধ্যায়ের ইতি টানলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টে নতুন আরেক ইতিহাস।
তবে বছরের শেষটা যে রঙিন হয়ে উঠবে, সে গল্প লিখে দিল জুনিয়র হকির আমিরুল। বিশ্বমঞ্চে তাঁর হাত ধরেই ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিল বাংলাদেশ। বছরের ক্লান্তি, হতাশা, সবকিছুকে ছাপিয়ে এই অর্জন এনে দিল এক টুকরো গর্ব।
এর সঙ্গে যুক্ত হলো নারী কাবাডি বিশ্বকাপে আর ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে পাওয়া পদক। নীরবে, দৃঢ়তায়, বাংলাদেশ প্রমাণ করল সব আলো ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ নয়।
হামজার অপেক্ষার অবসান
৫ মার্চ, ২০২৫ বাংলাদেশ ফুটবলের ক্যালেন্ডারে দিনটি বিশেষ। ইংলিশ লিগের তারকা, লেস্টার সিটির ডিফেন্ডার হামজা চেৌধুরী সেদিন প্রথমবার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে নামলেন মাঠে। শিলংয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে জয়ের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগাভাগিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। কূলে এসে তরী ডোবার মতোই এক অনুভূতি।
অপেক্ষা অবশ্য দীর্ঘ হয়নি। পরের প্রীতি ম্যাচেই নেপালের বিপক্ষে দুর্দান্ত হেডে গোলের খাতা খুললেন হামজা। অল্প সময়েই হয়ে উঠলেন দলের নির্ভরতার নাম। এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচে তঁার গোল চারটি। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত এলো ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে, যেখানে হামজার উপস্থিতিই দলের দৃঢ় রক্ষণ দেয়াল তৈরি হয়।
হামজার সঙ্গে জাতীয় দলে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী ফুটবলার সমিত সোম, ফাহমিদুল ইসলাম, জায়ান হাকিম ও কিউবা মিচেল। তাঁদের আগমনে দলে এসেছে গভীরতা আর নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত।
বাংলাদেশ ফুটবল ইতিহাসে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার স্মৃতি ছিল একটাই ১৯৮০ সালে কুয়েতে। দীর্ঘ ৪৫ বছরের অপেক্ষার গেরো খুলেছে ২০২৫ সালে। এই বছরে বাংলাদেশ খেলেছে মোট ১০টি ম্যাচ সাতটি হোম, তিনটি অ্যাওয়ে। জয় ও পরাজয় তিনটি করে, বাকি চারটি ম্যাচ ড্র।
সাবিনাদের বিদ্রোহ
বছরের শুরুতেই ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ ছিল নারী ফুটবলারদের কোচ হটাও বিদ্রোহ। সাবিনা, সানজিদা, শামসুন্নাহার, ঋতুপর্ণা, মাসুরা, মনিকার মতো তারকা ফুটবলারসহ মোট ১৮ জন সাংবাদিকের কাছে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বিবৃতি দেন।
দলের অস্থিরতা ঝেড়ে বছরের মাঝামাঝিতে আফঈদা খন্দকারের নেতৃত্বে এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাই করে বাংলাদেশ। সিনিয়রদের পর অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপেও জায়গা করে বাংলাদেশ।
ফিফার নিষেধাজ্ঞা ও বিএফএল
ক্লাব ফুটবলে ঘটেছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের ওপর ট্রান্সফার নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফিফা। গত মেৌসুমে উজবেক ফুটবলার সারদর জাখোনভের বকেয়া বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এই সদ্ধিান্ত জানায় বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বছরের শেষদিকে পেশাদার লিগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ (বিপিএল) থেকে Èবাংলাদেশ ফুটবল লিগ' (বিএফএল) হিসেবে নাম পরিবর্তন করা হয়।
ক্রিকেটে মিশ্র পারফরম্যান্স
নিজেদের প্রিয় সংস্করণ ওয়ানডেতেই বছরজুড়ে বেশি অচেনা ছিল বাংলাদেশ দল। বছর শুরু হয়েছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দিয়ে—যেখানে প্রত্যাশা ছিল নতুন বছরের সূচনা হবে আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্সে। কিন্তু পাকিস্তানে সেই টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সুযোগ ছিল, প্রস্তুতিও ছিল—ফলটা আসেনি।
পুরো বছরে ওয়ানডে খেলেছে ১১টি। জয় এসেছে মাত্র তিনটিতে, হেরেছে সাত ম্যাচে, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। পরিসংখ্যানের এই খসড়া চিত্রই বলে দেয়, কীভাবে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্রিকেটে ফলাফল তুলনামূলক ভালো দেখালেও তাতে স্বস্তি পুরোপুরি আসে না। ছয় টেস্টে তিন জয়, দুই হার ও একটি ড্র—সংখ্যার হিসেবে ভারসাম্য থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বছরের শুরুতেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু, পরের টেস্টে জিতে সিরিজ সমতায় শেষ। জুনে শ্রীলঙ্কা সফরে একটি টেস্ট ড্র, অন্যটিতে হার। বছর শেষ হয়েছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে—তবে প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনায় সেটিও বড় অর্জন হিসেবে ধরা কঠিন।
টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচের সংখ্যা আর পারফরম্যান্স—দুটোই ছিল চোখে পড়ার মতো। এক বছরে বাংলাদেশ খেলেছে ৩০টি টি-টোয়েন্টি, যা আগে কখনও হয়নি। ১৫টি জয়, ১৪টি হার ও একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত—জয়ের হার ৫১.৭২ শতাংশ। দলীয় ফলাফল ওঠানামায় ভরা হলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল ছিলেন একাধিক ক্রিকেটার।
ব্যাটাররা মিলিয়ে করেছেন ২৩টি ফিফটি। এক বছরে সর্বোচ্চ আটটি ফিফটির রেকর্ড গড়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। রান করেছেন সর্বোচ্চ ৮১৪, হাঁকিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ ৪১টি ছক্কা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকালে ছক্কায় তার ওপরে ছিলেন শুধু ভারতের অভিষেক শর্মা ও পাকিস্তানের সাহিজদা ফারহান। রানেও এগিয়ে কেবল অভিষেক শর্মা ও জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান বেনেট।
বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টিতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক আসে মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে। সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে তিনি বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির কীর্তি গড়েন—১৫৮ উইকেট নিয়ে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে উইকেটের ফিফটি পূরণ করেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন, যা তার উত্থানের ইঙ্গিত দেয়।
বিসিবির নির্বাচন
ক্রিকেট মাঠের বাইরেও বছরটি ছিল অস্থিরতায় ভরা। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেন বোর্ডের পরিচালকেরা। পদ হারানোর পর দায়িত্ব নেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অক্টোবরে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান।
তবে তার অধীনে প্রথম বড় ধাক্কা আসে ঘরোয়া ক্রিকেটে। প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ খেলতে অস্বীকৃতি জানায় আটটি ক্লাব—যা দেশের ক্রিকেট কাঠামোর ভেতরের অসন্তোষের চিত্র স্পষ্ট করে।
মুশফিকের শততম টেস্ট
বছরের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত আসে নভেম্বরে। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলেন মুশফিকুর রহিম। শুধু ম্যাচ খেলেই থেমে থাকেননি, ব্যাট হাতে তুলে গড়েছেন অভিজাত এক কীর্তি।
প্রথম ইনিংসে ১০৬ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানে অপরাজিত—শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা বিশ্বের মাত্র ১১তম ব্যাটার হিসেবে নিজেকে যুক্ত করেছেন অভিজাত তালিকায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এই কীর্তি আলাদা করে জায়গা করে নেয়, একটি মিশ্র বছরের মাঝে হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জার্স ট্রফি
টুর্নামেন্টের আগে তড়িঘড়ি প্রস্তুতি। তিন-চার মাসের জন্য কোচ নিয়োগ, অল্প সময়ের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। দেশের হকিতে এ যেন বহু দিনের চেনা ছবি। সীমাবদ্ধতার এই বৃত্ত ভেঙে বড় স্বপ্ন দেখার সুযোগ খুব কমই আসে। তবু সেই বাস্তবতার ভেতর দাঁড়িয়েই জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে নিজেদের গল্পটা লিখে ফেলেছে বাংলাদেশ।
২৪ দলের বিশ্বকাপে ১৭তম হয়ে চ্যালেঞ্জার্স ট্রফি জেতা কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি এক ধরনের প্রতিরোধের ভাষ্য। যেখানে প্রত্যাশা কম, প্রস্তুতি স্বল্প, সেখান থেকেই উঠে এলো বিজয়ের গল্প। ফাইনালে ইউরোপের শক্তিশালী অস্ট্রিয়াকে ৫৩ ব্যবধানে হারিয়ে লাল-সবুজের তরুণরা জানিয়ে দিল, সাহস থাকলে পথ তৈরি হয়।
এই গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আমিরুল ইসলাম। টুর্নামেন্টজুড়ে যেন অপ্রতিরোধ্য এক নাম। গোলের পর গোল, প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে দেওয়া ধারাবাহিক আঘাত। সর্বোচ্চ ১৮ গোলের সঙ্গে চারটি হ্যাটট্রিক। সংখ্যাগুলো নিজেরাই কাব্য হয়ে ওঠে। তার পাশে রাকিবুল হাসানসহ আরো কয়েকজন প্রথমবার বিশ্বমঞ্চে পা রেখেই আলো ছড়িয়েছেন, দেখিয়েছেন ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।
তবু এই উজ্জ্বলতার পরেও প্রশ্ন থেকে যায় এরপর কী? ট্রফি হাতে নিয়ে ফেরা এই তরুণদের সামনে পথটা কি আরো মসৃণ হবে, নাকি আবারও তারা হারিয়ে যাবে অবহেলা আর অনিশ্চয়তার ভিড়ে? উত্তর জানা নেই কারো।
তার পরও বছরের শেষ প্রানে্ত দঁাড়িয়ে জুনিয়র হকির এই সাফল্য এক টুকরা আশা হয়ে থাকে। মনে করিয়ে দেয়, অল্প প্রস্তুতিতেও ইতিহাস লেখা যায়, যদি প্রতিভা আর দৃঢ়তা একসঙ্গে হঁাটে।
কাবাডি বিশ্বকাপে মেয়েদের ব্রোঞ্জ
মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে থাইল্যান্ডকে ৪০-৩১ পয়েন্টে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। প্রথমবার নারী কাবাডি বিশ্বকাপে সে জয়ের পরই ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত হয়ে যায়∏মেয়েদের বুনো উদযাপন। সুযোগ ছিল ফাইনাল নিশ্চিত করার। তবে সেমিফাইনালে চায়নিজ তাইপের গতি ও কেৌশলের কাছে ২৫-১৮ পয়েন্টের ব্যবধানে হার মানতে হয় স্বাগতিক দলকে। সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে।
ঢাকায় এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ
নভেম্বরে ঢাকা হয়েছিল এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ৩০টি দেশের আর্চাররা। টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত ও দলীয় ইভেন্টে পদক তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারত। ছয়টি স্বর্ণ, তিনটি রেৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জ মিলিয়ে ১০টি পদক জিতেছে দেশটি। দুটি স্বর্ণ, চারটি রেৌপ্য ও চারটি ব্রোঞ্জ জেতে দক্ষিণ কোরিয়া। আয়োজক বাংলাদেশ একটি করে রেৌপ্য ও ব্রোঞ্জ জিতেছিল।
খই খই মারমার চমক
সৌদি আরবের রিয়াদে হৈচৈ ফেলে দিলেন রাঙামাটির রাজস্থলীর পাহাড়ি গ্রামের খই খই সাই মারমা। ১৮ বছর বয়সী খই খইয়ের হাতেই বাংলাদেশ টেবিল টেনিসের ইতিহাসে রচিত হয়ে গেল এক নতুন অধ্যায়। ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে জাবেদ আহমেদের সঙ্গে জুটি বঁেধে মিশ্র দ্বৈতে রুপা জিতেছেন খই খই। এই অর্জন বাংলাদেশের টেবিল টেনিস তথা ক্রীড়াঙ্গনেই অনেকটা অপ্রত্যাশিত।
দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে কোনো প্রতিযোগিতায় এটাই বাংলাদেশের প্রথম টেবিল টেনিস পদক। গত ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে নারী এককে সাদিয়া রহমান মেৌ খেলেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে।
জাতীয় দাবায় হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন নোশিন
জাতীয় মহিলা দাবার মুকুট এবারও নোশিন আনজুমের মাথায়। টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি জেতেন এই খেতাব। একাদশ ও শেষ রাউন্ডে ওয়ারসিয়া খুশবুর সঙ্গে ড্র করে শিরোপা নিশ্চিত করেন নোশিন। মাত্র ছয় চালেই ড্রয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। খুশবুও তাতে রাজি হন। দেশের মহিলা দাবায় দ্বিতীয় কোনো খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়লেন নোশিন আনজুম। ১৯৭৯ সালে জাতীয় মহিলা দাবা শুরু হওয়ার পর রানী হামিদ প্রথম ছয়বার টানা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। পরে ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আবারও জেতেন টানা তিনবার।
২০২৫ তাই শুধু একটি বছর নয়; এটি ছিল সংগ্রাম, বিদ্রোহ, বিদায় আর বিজয়ের এক যেৌথ কাব্য। স্মৃতির পাতায় অম্ল-মধুর স্বাদ রেখে বছরটি বিদায় নেয়, আর সামনে রেখে যায় নতুন ভোরের অপেক্ষা, আরো স্বপ্ন, আরো ইতিহাসের।

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। বছরজুড়ে ঘটন-অঘটন, আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক আর নানান ইস্যুতে ব্যস্ত ছিল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। মাঠের ক্রিকেটে কখনও হেসেছেন, কখনও হতাশায় ডুবেছেন লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজরা। আর মাঠের বাইরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত রেখেছেন ফারুক আহমেদ, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, তামিম ইকবাল বা জাহানারা আলমরা।
সব কিছু মিলিয়ে ২০২৫ সালে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রেই ছিল ক্রিকেট। নতুন বছর শুরুর আগে একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিগত বছরে ক্রিকেটের আলোচিত সব কিছু।
মাঠে মিশ্র পারফরম্যান্স
নিজেদের প্রিয় সংস্করণ ওয়ানডেতেই বছরজুড়ে বেশি অচেনা ছিল বাংলাদেশ দল। বছর শুরু হয়েছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দিয়ে। যেখানে প্রত্যাশা ছিল নতুন বছরের সূচনা হবে আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্সে। কিন্তু পাকিস্তানে সেই টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সুযোগ ছিল, প্রস্তুতিও ছিল- ফলটা আসেনি।
পুরো বছরে ওয়ানডে খেলেছে ১১টি। জয় এসেছে মাত্র তিনটিতে, হেরেছে সাত ম্যাচে, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। পরিসংখ্যানের এই খসড়া চিত্রই বলে দেয়, কীভাবে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্রিকেটে ফলাফল তুলনামূলক ভালো দেখালেও তাতে স্বস্তি পুরোপুরি আসে না। ছয় টেস্টে তিন জয়, দুই হার ও একটি ড্র- সংখ্যার হিসেবে ভারসাম্য থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন।
বছরের শুরুতেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু, পরের টেস্টে জিতে সিরিজ সমতায় শেষ। জুনে শ্রীলঙ্কা সফরে একটি টেস্ট ড্র, অন্যটিতে হার। বছর শেষ হয়েছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে—তবে প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনায় সেটিও বড় অর্জন হিসেবে ধরা কঠিন।
টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচের সংখ্যা আর পারফরম্যান্স- দুটোই ছিল চোখে পড়ার মতো। এক বছরে বাংলাদেশ খেলেছে ৩০টি টি-টোয়েন্টি, যা আগে কখনও হয়নি। ১৫টি জয়, ১৪টি হার ও একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত-জয়ের হার ৫১.৭২ শতাংশ। দলীয় ফলাফল ওঠানামায় ভরা হলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল ছিলেন একাধিক ক্রিকেটার।
ব্যাটাররা মিলিয়ে করেছেন ২৩টি ফিফটি। এক বছরে সর্বোচ্চ আটটি ফিফটির রেকর্ড গড়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। রান করেছেন সর্বোচ্চ ৮১৪, হাঁকিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ ৪১টি ছক্কা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকালে ছক্কায় তার ওপরে ছিলেন শুধু ভারতের অভিষেক শর্মা ও পাকিস্তানের সাহিজদা ফারহান। রানেও এগিয়ে কেবল অভিষেক শর্মা ও জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান বেনেট।
বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টিতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক আসে মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে। সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে তিনি বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির কীর্তি গড়েন- ১৫৮ উইকেট নিয়ে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে উইকেটের ফিফটি পূরণ করেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন, যা তার উত্থানের ইঙ্গিত দেয়।
অধিনায়কত্বে নাটকীয়তা
২০২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ২০২৫ সালের শুরুতেও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনিই ছিলেন তিন ফরম্যাটের দায়িত্বে। কিন্তু নতুন বছরের শুরুর দিকেই শান্ত জানিয়ে দেন, টি-টোয়েন্টিতে আর অধিনায়কত্ব করবেন না তিনি। পরে এই ফরম্যাটে লিটন কুমার দাসকে অধিনায়কত্ব দেয় বিসিবি।
এরপর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যর্থতার পর তাকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে দায়িত্ব দেওয়া দেয়। সেই ক্ষোভ থেকেই হয়তো শ্রীলঙ্কা সফরের দুই টেস্ট শেষ করে লাল বলের ক্রিকেটের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দেন শান্ত। তবে এর চার মাস পর আবার শান্তকেই টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয় বিসিবি।
ফলে তিন ফরম্যাটে এখন বাংলাদেশের অধিনায়ক তিন জন- টেস্টে শান্ত, ওয়ানডেতে মিরাজ ও টি-টোয়েন্টিতে লিটন। এছাড়া তিন ফরম্যাটে ভিন্ন তিন জন সহ-অধিনায়কও আছে এখন দলে- টেস্টে মিরাজ, ওয়ানডেতে শান্ত ও টি-টোয়েন্টিতে সাইফ হাসান।
বিসিবির নির্বাচন
ক্রিকেট মাঠের বাইরেও বছরটি ছিল অস্থিরতায় ভরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেন বোর্ডের পরিচালকেরা।
ফারুক আহমেদ পদ হারানোর পর অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব নেন আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অক্টোবরে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি পূর্ণ মেয়াদে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান।
বোর্ড নির্বাচনে বুলবুল ছাড়াও জয়লাভ করেন আরও তিন সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ, খালেদ মাসুদ পাইলট ও আব্দুর রাজ্জাক।
বুলবুলের অধীনে নতুন বোর্ডে প্রথম বড় ধাক্কা আসে ঘরোয়া ক্রিকেটে। প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায় আটটি ক্লাব। এছাড়া ৪০টি বেশি ক্লাব ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। যা দেশের ক্রিকেট কাঠামোর ভেতরের অসন্তোষের চিত্র স্পষ্ট করে।
শত টেস্টের ক্লাবে মুশফিক
বছরের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত আসে নভেম্বরে। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলেন মুশফিকুর রহিম। শুধু ম্যাচ খেলেই থেমে থাকেননি, ব্যাট হাতে তুলে গড়েছেন অভিজাত এক কীর্তি।
প্রথম ইনিংসে ১০৬ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানে অপরাজিত- শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা বিশ্বের মাত্র ১১তম ব্যাটার হিসেবে নিজেকে যুক্ত করেছেন অভিজাত তালিকায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এই কীর্তি আলাদা করে জায়গা করে নেয়, একটি মিশ্র বছরের মাঝে হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষ করে দেশে ফিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেন অভিজ্ঞ ব্যাটার ও সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। এর আগেই অবশ্য টি-টোয়েন্টি (২০২৪) ও টেস্ট (২০২১) থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। গত মার্চে ওয়ানডেকেও বিদায় জানিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ।
টেস্টে ৫০ ম্যাচে ২ হাজার ৯১৪ রান, ওয়ানডেতে ২৩৯ ম্যাচে ৫ হাজার ৬৮৯ রান ও টি-টোয়েন্টিতে ১৪১ ম্যাচে ২ হাজার ৪৪৪ রান নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে মাহমুদউল্লাহর। এছাড়া বল হাতে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তার ঝুলিতে আছে ১৬৬ উইকেট।
সাকিবের ইউটার্ন, অবসরের নতুন সিদ্ধান্ত
২০২৪ সালের অক্টোবরের পর থেকেই থমকে আছে সাকিব আল হাসানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। গত ১৮ মাসে একবারের জন্যও দেশে আসতে পারেননি তিনি। তাই ধরেই নেওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক অধ্যায় হয়তো শেষ।
তবে বছরের শেষ দিকে 'বিয়ার্ড বিফোর ক্রিকেট' পডকাস্টে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন সাকিব নিজেই। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কোনো ফরম্যাট থেকেই অবসর নেননি। বরং দেশে ফিরে একটি করে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বিদায় নিতে চান তিনি।
মাঠেই তামিমের হার্ট অ্যাটাক, জাকি-হাসানের বিদায়
২০২৫ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ম্যাচ শুরুর আগে মাঠেই হার্ট অ্যাটাক করেন তামিম ইকবাল। গুরুতর অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যান বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। তবে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরি ডালিম ও সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রাণপন চেষ্টায় নতুন জীবন পান দেশসেরা এই ওপেনার।
তামিমের মতোই মাঠে হার্ট অ্যাটাক করেন জাতীয় ক্রিকেট লিগে বরিশালের ফিজিও হাসান আহমেদ ও বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ মাহবুব আলি জাকি। গত অক্টোবরে মাঠে হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেন হাসান আর ডিসেম্বরে পরপারে পাড়ি জমান জাকি।
নারী ক্রিকেটে তোলপাড়
বছরের শেষ ভাগে এসে যৌন হয়রানির ভয়াবহ ও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও তারকা পেসার জাহানারা আলম। বোর্ডের নারী ক্রিকেট বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা প্রয়াত তৌহিদ মাহমুদ ও নারী দলের সাবেক নির্বাচক-ম্যানেজার ও জাতীয় দলের সাবেক পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ আনেন জাহানারা। এছাড়া নারী দলের বর্তমান অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও করেন তিনি।
জাহানারার দেখাদেখি জাতীয় দলের আরও কয়েকজন ক্রিকেটারও যৌন হয়রানিসহ আরও কিছু অভিযোগ করেন। যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় দেশের ক্রিকেটে। আপাতত এটি নিয়ে তদন্ত করছে বিসিবি। কয়েক দফা তদন্তের মেয়াদ বাড়িয়ে নতুন বছরের শুরুর দিকে হয়তো পাওয়া যেতে পারে চূড়ান্ত প্রতিবেদন।
বিপিএলে নতুন আশা
অনেকটা তাড়াহুড়োর মধ্যে ২০২৫ সালের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেট আয়োজন করে সুনামের বদলে দুর্নামই কুড়িয়েছে বিসিবি। ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিংয়ের গুরুতর অভিযোগ, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর পারিশ্রমিক পরিশোধে গড়িমসি ও অব্যবস্থাপনার নানান অভিযোগে জর্জরিত হয় বিপিএলের ১১তম আসর।
সেসব থেকে শিক্ষা নিয়ে ১২তম সংস্করণের আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বিসিবি। সব দলের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ও গ্যারান্টি অর্থ নিয়ে রেখেছে তারা। এর মাঝেও টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন সরে দাঁড়ায় চট্টগ্রাম রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে একদমই সময় নষ্ট না করে চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিয়ে নেয় বিসিবি।
এর বাইরে এবারের বিপিএলের আগে ফিরিয়ে আনা হয় নিলাম পদ্ধতি। যেখানে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। এছাড়া ব্রডকাস্টিংয়ের মান উন্নয়নে টিপিটি গ্লোবালের সঙ্গে চুক্তি, ম্যাচ ফিক্সিং রোধে আইসিসি ও সিআইডির সহায়তা নিয়ে জিরো টলারেন্স নীতিসহ আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। যা বিপিএল নিয়ে নতুন করে আশা দেখাচ্ছে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর এক মাসের বেশি সময় আগে নিজেদের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করে দিল ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। চোটের সঙ্গে লড়াই করতে থাকা জফ্রা আর্চারকে রাখা রয়েছে দলে। তবে জায়গা পাননি আরেক পেসার সাকিব মাহমুদ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার আগামী মাসে শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ এবং বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে ইসিবি। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের সাদা বলের দলে ডাক পেয়েছেন লাল বলে আলো ছড়ানো পেসার জশ টাং।
২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা ৮ জন আছে সামনের টুর্নামেন্টেরও দলে। নতুন অধিনায়ক হ্যারি ব্রুকসহ সাবেক অধিনায়ক জস বাটলার, ফিল সল্ট, বেন ডাকেট, স্যাম কারান, উইল জ্যাকস, আদিল রশিদ ও আর্চার।
২০২৪ বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছেন মইন আলি, জনি বেয়ারস্টো, টম হার্টলি, ক্রিস জর্ডান, লিয়াম লিভিংস্টোন, রিস টপলি ও মার্ক উড। তাদের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন রেহান আহমেদ, টম ব্যান্টন, জ্যাকব বেথেল, লিয়াম ডসন, জেমি ওভারটন, জশ টাং ও লুক উড।
আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী সব দলকে প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করতে হবে। এরপর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই স্কোয়াডে পরিবর্তন আনা যাবে। এরপর স্কোয়াডে পরিবর্তন আনতে হলে টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটির অনুমোদন নিতে হবে।
চলতি অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্ট খেলার পর সাইড স্ট্রেইনের কারণে ছিটকে গেছেন আর্চার। এখন ইসিবির তত্ত্বাবধানেই বারবাডোজে চলছে তার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। যে কারণে শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলা হবে না গতিতারকার। সরাসরি বিশ্বকাপে যোগ দেবেন তিনি।
দল থেকে জায়গা হারিয়েছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জেমি স্মিথ ও টপ-অর্ডার ব্যাটার জর্ডান কক্স। এর বাইরে চোটের সঙ্গে লড়তে থাকা পেসার সাকিবকে রাখা হয়নি দলে। নিউ জিল্যান্ড সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজ মিস করা বেন ডাকেটকে ফেরানো হয়েছে সামনের সিরিজ ও বিশ্বকাপের দলে।
আরও পড়ুন
| খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাফুফের শোক, ফুটবলে দিনের সব ম্যাচ স্থগিত |
|
এছাড়া ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন স্পিনিং অলরাউন্ডার উইল জ্যাকস। ২০২৩ সালের পর এই প্রথম ওয়ানডে দলে জায়গা পেয়েছেন ওপেনার জ্যাক ক্রলি।
শ্রীলঙ্কা সফরের সাদা বলের দুই সিরিজ খেলতে ১৮ জানুয়ারি দেশ ছাড়বে ইংল্যান্ড। কলম্বোতে আগামী ২২ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে ওয়ানডে সিরিজ। এরপর ক্যান্ডিতে ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের প্রথম ম্যাচ ৮ ফেব্রুয়ারি, মুম্বাইয়ে নেপালের বিপক্ষে। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ইতালির মুখোমুখি হবে টি-টোয়েন্টিতে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও বিশ্বকাপের জন্য ইংল্যান্ড স্কোয়াড
হ্যারি ব্রুক (অধিনায়ক), রেহান আহমেদ, জফ্রা আর্চার (শুধু বিশ্বকাপ), টম ব্যান্টন, জ্যাকব বেথেল, জস বাটলার, ব্রাইডন কার্স (শুধু শ্রীলঙ্কা সিরিজ), স্যাম কারান, লিয়াম ডসন, বেন ডাকেট, উইল জ্যাকস, জেমি ওভারটন, আদিল রশিদ, ফিল সল্ট, জশ টাং ও লুক উড।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ইংল্যান্ড স্কোয়াড
হ্যারি ব্রুক (অধিনায়ক), রেহান আহমেদ, টম ব্যান্টন, জ্যাকব বেথেল, জস বাটলার, ব্রাইডন কার্স, জ্যাক ক্রলি, স্যাম কারান, লিয়াম ডসন, বেন ডাকেট, উইল জ্যাকস, জেমি ওভারটন, আদিল রশিদ, জো রুট ও লুক উড।

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপরসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তিন দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের সব খেলা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার দুপুরে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) পক্ষ থেকে এই খবর জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনে মোট ৯টি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল।
তবে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ৩০ ডিসেম্বর, ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারির সব ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। এই ম্যাচগুলোর নতুন সূচি যথাসময়ে জানিয়ে দেবে সিসিডিএম।
স্থগিত হয়েছে যেসব ম্যাচ
৩০ ডিসেম্বর
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব - শেখ জামাল ক্রিকেটার্স
প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব - ট্রাই স্টেট ক্রিকেটার্স
উত্তরা ক্রিকেট ক্লাব - বিকেএসপি
৩১ ডিসেম্বর
বাংলাদেশ পুলিশ ক্রিকেট ক্লাব - লালমাটিয়া ক্লাব
ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব - ঢাকা ইউনাইটেড
ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব - বারিধারা ড্যাজলার্স
০১ জানুয়ারি
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব - উত্তরা ক্রিকেট ক্লাব
শেখ জামাল ক্রিকেটার্স - ট্রাই স্টেট ক্রিকেটার্স
প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব - বিকেএসপি

কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের ব্যবহৃত একটি বিখ্যাত ‘ব্যাগি গ্রিন’ ক্যাপ নিলামে উঠছে। এই ক্যাপটি ভারতের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার এস. ডব্লিউ. সোহোনিকে উপহার দিয়েছিলেন ব্র্যাডম্যান। গত ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি সোহোনি পরিবারের কাছেই সংরক্ষিত ছিল।
লয়েডস অকশনস-এ আগামী বছরের ৬ জানুয়ারিতে ১ ডলার থেকে শুরু হবে নিলাম। ব্র্যাডম্যানের এই ক্যাপের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে লয়েডস অকশনসের লি হ্যামস বলেন, ‘এই ক্যাপ ক্রিকেট ইতিহাসের একটি সত্যিকারের মূল্যবান অংশ যা ব্যক্তিগতভাবে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান উপহার দিয়েছেন।’ ‘দ্যা ডন’ হিসেবে পরিচিত ব্র্যাডম্যানের এই ব্যাগি গ্রিন এর আগে কখনও বিক্রির জন্য তোলা হয়নি বা পরিবারের বাইরে কোথাও প্রদর্শন করা হয়নি।
১৯৪৭-৪৮ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের সময় এই ক্যাপটি ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রকাশ্য নিলামে উঠতে যাওয়া এই ব্যাগি গ্রিন নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত সংগ্রাহক, জাদুঘর, প্রতিষ্ঠান এবং ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।
ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা হিসেবে সমাদৃত ব্র্যাডম্যান ১৯২৮ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যে মাত্র ৫২টি টেস্ট ম্যাচে ২৯টি সেঞ্চুরি করেছেন। ১৯৪৮ সালে ব্র্যাডম্যান যখন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন, তখন তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৯৯.৯৪।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তথ্যমতে, ১৯২৮ সালে অভিষেকের মৌসুমে ব্র্যাডম্যানের পরা প্রথম ব্যাগি গ্রিন ক্যাপটি ২০২০ সালে সাড়ে চার লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।
তবে এখন পর্যন্ত ব্যাগি গ্রিন ক্যাপের জন্য সর্বোচ্চ মূল্যের রেকর্ড শেন ওয়ার্নের দখলে। ২০১৯-২০ সালের ভয়াবহ দাবানলে জরুরি পরিষেবাগুলোর জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এই লেগ স্পিনারের ক্যাপটি ১০ লাখ ৭ হাজার ৫০০ ডলারে কমনওয়েলথ ব্যাংক কিনে নিয়েছিল। অবশ্য ওয়ার্ন তার পুরো ক্যারিয়ারে কেবল ওই একটিই ক্যাপ ব্যবহার করেছিলেন।