১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
ভারতীয় ব্যাটারদের হাতে বেদম মার খেয়ে পানি পানের বিরতির পর ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা ফিরছিলেন ড্রেসিংরুমে, ধারণা ছিল ভারত ইনিংস ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে। তবে তাদের হতাশ করে ফেরত পাঠান রোহিত শর্মা, তবে সেটা মাত্র এক ওভারের জন্য। প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে ধাক্কা দেওয়ার ভারত অধিনায়কের এই টোটকা হয়ত বিশেষ কিছু নয়, তবে বিশাল রান তাড়ায় ইংলিশ ব্যাটারদের অপ্রস্তুত করে রবীন্দ্র জাদেজা। কোনো প্রতিরোধই জমাতে না পেরে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ল সফরকারীদের ইনিংস। তাতে ইয়াশাশভি জয়সওয়ালের রেকর্ড গড়া ম্যাচে বিশাল জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল ভারত।
রাজকোট পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টেস্টের ৪৩৪ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে ভারত। সিরিজে তারা এগিয়ে এখন ২-১ ব্যবধানে। রানের ব্যবধানে এটি ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বড় হার। আর ভারতের ইতিহাসে রানের ব্যবধানে এই জয়ই এখন শীর্ষে।
আরও পড়ুন: ‘ছক্কাময়’ সিরিজে ২৮ বছরের রেকর্ডে ভাগ বসালেন জয়সওয়াল
প্রথম ইনিংসে ৪৪৫ রান করা ভারত দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৪ উইকেটে ৪৩০ রানে। প্রথম দফায় ৩১৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১২২ রানেই অলআউট হয় ইংল্যান্ড।
ভারতের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে ৫৫৭ রান টার্গেট, ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামার আগে স্রেফ এটা দেখেই ম্যাচের ফলাফল যদি কেউ বলে দিতেন, তাকে ভুল বলাটা কঠিনই হত। তবে দলটা ইংল্যান্ড বলেই কিছুটা হলেও আশা ছিল, বাজবল ক্রিকেটে মন্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে তারা ড্র নয়, জয়ের লক্ষ্যেই খেলবে আগ্রাসী ক্রিকেটে। পুরো টেস্টেই দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে থাকা ইংলিশরা তাতে দৃষ্টিকটুভাবেই ব্যর্থ হয়েছে।
ইংল্যান্ডের শুরুটাই হয় সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপভাবেই, কারণ একটা টেস্ট ম্যাচে ওপেনার ব্যাটারের রান আউট হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনকই। প্রথম ইনিংসে ১৫০ ছাড়ানো ইনিংস খেলা বেন ডাকেট রান আউটে কাঁটা পড়েন মাত্র ৪ রানে। মিড উইকেটে বল ঠেলে রান নিতে চেয়েছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার, মাঝপথে চলেও গিয়েছিলেন। জ্যাক ক্রাওলির সাড়া না পেয়ে ক্রিজে ফেরার একটা চেষ্টা করেছিলেন, তবে তার আগেই সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে যায়।
চার বিরতির আগে শেষ ওভারে ক্রাওলিকেও সাজঘরে পাঠান বুমরাহ। প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের জয়ের ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৬ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন অলি পোপ। তবে এবার তেমন কিছুর ধারেকাছেও তাকে যেতে দেননি জাসপ্রিত বুমরাহ। রবীন্দ্র জাদেজার অফস্ট্যাম্প লাইনের বল কাট করতে গিয়ে স্লিপে রোহিতকে ক্যাচ দেন তিনি। ডানহাতি এই ব্যাটার এর আগে করেন মাত্র ৩ রান।
এই সিরিজে ব্যাট হাতে কঠিন সময় পার করা জনি বেয়াস্টো রানের খাতা খোলেন বাউন্ডারিতে। তবে আরও একবার দলকে হতাশ করে অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ফেরেন এক ডিজিটেই। জাদেজার বলে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন বেয়াস্টো। ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড তখন কাঁপছে।
আরও পড়ুন: অশ্বিনের ‘৫০০’ ছাপিয়ে রাজকোটে ডাকেটের রাজত্ব
প্রথম ইনিংসে বুমরাহকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন জো রুট। সেই কারণেই কিনা, এই দফায় ভীষণ সাবধানী ব্যাটিং করেন তিনি। তবে তার প্রতিরোধের দেয়াল ভেঙে দেন সেই জাদেজাই। শেষ হয় তারকা ব্যাটারের ৪০ বলে ৭ রানের সংগ্রামী ইনিংস।
কঠিন পরিস্থিতিতে টেস্টে গেল কয়েক বছরে অবিশ্বাস্য কিছু ইনিংস খেলা বেন স্টোকস ছিলেন ইংল্যান্ডের শেষ হয়ে আশা হয়ে, অন্তত ম্যাচটা পঞ্চম দিনে টেনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু পুরো দলের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে অধিনায়কও ফেরেন অল্পতেই। যাওয়া-আসার এই মিছিলের মধ্যে শেষের দিকে মার্ক উডের ৩৩ রানের ক্যামিওতে একশ রান করতে সমর্থ হয় দলটি।
৪১ রানে ৫ উইকেট নেন জাদেজা। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত একই টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পাশাপাশি ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। জাদেজার স্পিন বিষে নীল হওয়ার আগেই অবশ্য ম্যাচ থেকে ইংল্যান্ডকে পুরোপুরি ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন জয়সওয়াল, শুবমান গিল ও অভিষিক্ত সরফরাজ খান।
আগের দিন সেঞ্চুরির পরপর রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া জয়সওয়াল এদিন শুরু করেন সেখান থেকেই, যেখানে থেমেছিলেন। দারুণ ব্যাট করতে থাকা গিল ছিলেন সেঞ্চুরির পথেই। তবে ৯১-তে থাকতে রান আউট হন এই তরুণ ব্যাটার।
আরও পড়ুন: ১ দিন পর ফের ভারত দলে যোগ দিচ্ছেন অশ্বিন
এরপর প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর দিয়ে তান্ডব বইয়ে দেন জয়সওয়াল ও সরফরাজ। ৬টি চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৭২ বলে লাল বলের ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে সরফরাজ করেন ৬৮।
অন্যপ্রান্তে চার-ছক্কার বৃষ্টিতে রানের চাকা ওয়ানডে স্টাইলে এগিয়ে নেন জয়সওয়াল। ১৪টি বাউন্ডারি ও ১২টি ছক্কায় খেলেন ২১৪ রানের চমৎকারভা এক ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার তালিকায় তিনি এখন যৌথভাবে ওয়াসিম আকরামের সাথে শীর্ষে।
এই দুই ব্যাটারই যেভাবে খেলছিলেন, দর্শকদের জন্য তা ছিল ভীষণ আনন্দদায়ক। সেজন্যই ‘বেরসিক’ রোহিত যখন ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন, দর্শকরা তার দিকে ফিরে তাতে আপত্তি জানাচ্ছিলেন। তাদের চাওয়া ছিল জয়সওগালের ট্রিপল সেঞ্চুরি ও সরফরাজের সেঞ্চুরি। তবে সেটা আর হয়নি। দলের বিশাল জয়ে তাদের সেও আফসোস লাঘব হওয়ারই কথা।
৮ দিন আগে
১১ দিন আগে
২২ দিন আগে
২২ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৫ দিন আগে