চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনে দারুণ শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। তবে শেষ সেশনে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে ভারতের সপ্তম উইকেট জুটি। তাদের বিশাল জুটি ভাঙার কোনো পথই যেন খুঁজে পাচ্ছিল না বাংলাদেশের বোলাররা। দ্বিতীয় দিন সকালে সেই অসাধ্যই সাধন করলেন তাসকিন আহমেদ।
প্রথম দিনে বল হাতে অবশ্য কোনো উইকেট পাননি তাসকিন। সুযোগ অবশ্য তৈরি করেছিলেন এই পেসার। তবে ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের কারণে খাতাটা খোলা হয়নি।
সেটা তিনি করেছেন দ্বিতীয় দিন সকাল সকালই। রবীন্দ্র জাদেজাকে আউট করে ভেঙেছেন ১৯৯ রানের জুটি। এরপর ফিরিয়েছেন আকাশদ্বীপ সিংকেও। আগেও একবার তাসকিনের বলে আউট কতে পারতেন তিনি। তবে সাকিব আল হাসান ক্যাচ ফেলে দেয়ায় সেবার আর হয়নি।
ভারতের হয়ে সেঞ্চুরি করা রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও ফিরতে হয়েছে তাসকিনের বলেই। সকালের প্রথম তিনটা উইকেটই পেয়েছেন এই পেসার। আর ভারতের শেষ উইকেটটা নিয়ে নিজের দ্বিতীয় ফাইফার পূরণ করেছেন হাসান মাহমুদ। শেষ পর্যন্ত ভারত অল আউট হয়েছে ৩৭৬ রানে।
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬:৪৭ পিএম
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:৫৪ এম
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:০০ এম
হাসান মাহমুদ প্রথম বাংলাদেশি বোলার যিনি ভারতে টেস্ট ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করলেন। এরআগের সফরগুলোতে সাকিব-তাইজুল-মিরাজদের মত কোন স্পিনারও এই সাফল্য দেখাতে পারেননি। একজন পেসার হিসেবে চেন্নাইয়ের উইকেটে হাসানের সাফল্যে ভারতকে ৩৭৬ রানে অলআউট করে টাইগাররা।
২০১৯ সালে ইন্দোর টেস্টে পেসার আবু জাহেদ রাহি ১০৮ রানে চার উইকেট নিয়েছিলেন- এটাই ছিল বাংলাদেশি কোন বোলারের সেরা সাফল্য। এবার হাসান মাহমুদ ৮৩ রান খরচায় নিলেন পাঁচ উইকেট। জাসপ্রীত বুমরাহকে জাকির হাসানের ক্যাচ বানিয়ে পাঁচ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছেন হাসান। বুমরাহ ছাড়া তার বাকি চার শিকারের সবাই প্রতিষ্ঠিত ও নামকরা ব্যাটসম্যান। রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, ভিরাট কোহলি ও রিশাভ পান্ত- প্রত্যেকেই টেস্টের প্রথমদিন তাঁর দুর্দান্ত সুইং বোলিংয়ের শিকার হন। এরমধ্যে প্রথম তিন জন আউট হন সিঙ্গেল ফিগারে, একমাত্র পান্ত খেলেছেন ৩৯ রানের ইনিংস।
রাওয়ালপিণ্ডি টেস্টের শেষ ইনিংসে ৪৩ রান খরচায় পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন হাসান, যেটি ঐ টেস্ট জিততে সহায়তা করেছিল টাইগারদের। অর্থাৎ টানা দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেলেন হাসান। মাত্র চতুর্থ টেস্ট খেলছেন তিনি, সবমিলে ১৯ উইকেট তাঁর ঝুলিতে ২২.৭৮ গড়ে। তাঁর এই দুর্দান্ত শুরু নতুন দিনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বাংলাদেশের পেস অ্যাটাকে। এখনও ২৫ বছর না ছোঁয়া হাসান টানা দুই ইনিংসে ফাইফার পেয়ে ধারাবাহিকতার নজিরও রাখলেন।
লক্ষীপুরের লক্ষ্মী ছেলে হাসান এখন পর্যন্ত ২০টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেছেন, কিন্তু পাঁচ উইকেটের দেখা পেয়েছেন কেবল ঐ টেস্ট ম্যাচে। দু’বারই ঘটনা ঘটেছে বিদেশের মাটিতে।
এরআগে বাংলাদেশি পেসারদের মধ্যে ইনিংসে সর্বাধিক চারবার পাঁচ উইকেট নেন শাহাদাত হোসেন। দু’বার করে নেন রবিউল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ। এছাড়া একবার করে নিয়েছেন মঞ্জুরুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, এবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদ। সবমিলে ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের ক্লাবে আছে ৭ বাংলাদেশি পেসারের নাম।
প্রথম সেশনের পর দ্বিতীয় সেশনেও ভারতকে চাপে রেখে ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতেই রেখেছিল বাংলাদেশ। তবে রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার অনবদ্য এক জুটিতে দিন শেষে স্বাগতিকরাই আছে শীর্ষে। এরই মধ্যে বোর্ডে জমা হয়েছে শক্তিশালী স্কোর। এমন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচে ফেরার জন্য প্রথম দিনের ‘হিরো’ হাসান মাহমুদ মনে করেন, প্রতিপক্ষকে যেভাবেই হোক চারশ'র আগেই আটকাতে হবে তাদের।
প্রথম সেশনে তিন উইকেট হারানো ভারত দ্বিতীয় সেশনেও তিন উইকেট হারিয়ে এক পর্যায়ে চাপের মুখে ছিল ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে। তবে আটে নামা অশ্বিনের সেঞ্চুরি ও জাদেজার ফিফটিতে ভারত দিন শেষ করেছে ৩৩৯ রানে, উইকেট সেই ছয়টিই। দুজনই যেভাবে সেট হয়েছেন আর রান করছেন আগ্রাসী মেজাজে, তাতে কাল সকালে তাদের দ্রুত ফেরানোর কোনো বিকল্প নেই নাজমুল হোসেন শান্তর দলের।
সংবাদ সম্মেলনে হাসান জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষকে যত কমে সম্ভব গুটিয়ে দেওয়াই এখন তাদের লক্ষ্য। “কালকে আমরা যদি চেষ্টা করি, যদি আর্লি উইকেট নিতে পারি তাহলে ম্যাচে ফিরে আসব। আমার মনে হয়, চারশর আগে অলআউট করতে পারলে খুব ভালো হবে আমাদের জন্য। তবে এখন উইকেট খুবই সহজ হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে চাপ তৈরি করা যায়। কালকে ইনশাআল্লাহ্ এটাই করব।”
টেস্ট ক্রিকেটে মোমেন্টাম খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একটি ছোট ইনিংস, একটি স্পেল, এমনকি একটি রান-আউটেও ঘুরে যায় ম্যাচের চিত্র। আর সেই কারনেই এক সময় প্রবল চাপের মুখে থাকা ভারত এখন চলে গেছে ‘ড্রাইভিং সিটে’। এর পেছনে শেষ সেশনে বোলারদের বেশি বেশি লুজ ডেলিভারি দেওয়া রেখেছে একটা বড় অবদান। বিশেষ করে শেষ দশ ওভারে অশ্বিন-জাদেজা তো রান করেছেন ওয়ানডে মেজাজে।
প্রথম দিনে চার উইকেট হাসান অবশ্য আশাবাদী, ম্যাচে ফেরার ভালো সুযোগ এখনও আছে তাদের সামনে। “আমার মনে হয়, বোলিংটা একটু ইকোনমিক্যাল হতে পারত, গুছানো হতে পারত। চেষ্টা করছি, সবাই মিলে একটু ভালো জায়গায় বল করে ব্যাটসম্যানকে চাপে রাখতে। এখন মোমেন্টাম ওদের দিকে আছে। কালকে দ্রুত অলআউট করতে পারলে মোমেন্টাম আমাদের দিকে আসবে। চারশর আগে অলআউট করতে পারলে ভালো হবে।”
ভারতের মাটিতে সফরকারী দলের জন্য অধিকাংশ পেসারদের জন্য অপেক্ষা করে কঠিন পরীক্ষা। তবে চলমান চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনে হাসান মাহমুদ দেখিয়েছেন, এখানেও বল হাতে ব্যাটারদের চ্যালেঞ্জ জানানোর স্কিল তার আছে। প্রথম সেশনে দুই দিকে সুইং করিয়ে খাবি খাইয়েছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির মত ব্যাটারদেরও। তরুণ এই পেসার মনে করেন, নিজের শক্তির জায়গা কাজে লাগিয়েই সফলতা পেয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের পথে দ্বিতীয় টেস্টর দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন হাসান। সেই ফর্ম ধরে রেখে এই টেস্টের প্রথম স্পেলে ব্যাটারদের কাঁপন ধরিয়ে দেন এই ডানহাতি পেসার। একে একে ফেরান রোহিত, শুবমান গিল ও কোহলিকে। ফিরতি স্পেলে এসে পরে শিকার বানান রিশাভ পান্তকেও। প্রথম দিনে চার উইকেট নিয়ে হাসানই বাংলাদেশের সেরা বোলার।
দিনের খেলে শেষে সংবাদ সম্মেলনে হাসান বলেছেন, স্রেফ পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করার চেষ্টা করেছেন তিনি। “আমার প্ল্যান খুব সিম্পল ছিল। নতুন বলে আমি নিজের শক্তি অনুযায়ী বোলিংয়ের চেষ্টা করেছি। যেটা আমি ভালো পারি, সেটাই পুরো সময় করতে চেয়েছি। এরই ফল পেয়েছি। সবাই নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। আমি নিজের জোনে ছিলাম। যেকোনো ব্যাটসম্যানের উইকেট নেওয়া আনন্দের বিষয়। তো খুব ভালো লাগছে। যেটা বললাম, আমার প্ল্যান খুব সিম্পল ছিল। শেপ ঠিক রেখে সিম আপ করার চেষ্টা করেছি, শেপ এওয়ে করার চেষ্টা করেছি।”
ভারতের মাটিতে ২০০০ সালের পর সফরকারী একটি দলের মাত্র দ্বিতীয় পেসার হিসেবে টেস্টের প্রথম দিনে চার বা বেশি উইকেট নিয়েছেন হাসান। এর আগে এই কীর্তি ছিল কেবল সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইনের। তিনি নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। কাল পাঁচ উইকেট শিকারের সম্ভাবনা থাকবে হাসানের সামনেও।
টানা দুই টেস্টে পাকিস্তানের পর ভারতের মাটিতেও পাঁচ উইকেট নিতে পারলে সেটা হাসানের জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে বরাবরই নিরাবেগ এই উদীয়মান পেসার এই ক্ষেত্রেও দেখালেন না বাড়তি আবেগ। “টেস্ট ম্যাচে উইকেট পাওয়াই আনন্দদায়ক আমার কাছে। পাকিস্তানে ৫ উইকেট পেয়েছি, ওটার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চেষ্টা করছি, যতটুকু দলের জন্য করতে পারি নিজের সেরাটা দিয়ে।”
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৯ দিন আগে
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৯ দিন আগে
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৯ দিন আগে
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৯ দিন আগে