১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১:৩৮ এম
আজাদ ময়দান নাকি ক্রিকেটারদের স্বপ্নপূরণের স্থান। কতো স্বপ্নের চারা গাছ এই আজাদ ময়দান মাড়িয়ে হয়ে উঠেছে বিশাল মহীরুহ… ক্রিকেট তারা শচীন টেন্ডুলকার থেকে শুরু হয়ে অকালে বিনষ্ট পৃথ্বী শ, সবাই মাড়িয়েছেন এই আজাদা ময়দান। আরেকজন আসছেন, নাম মুশির খান।
একটু পরিচিত মনে হচ্ছে? মনে হওয়ার কথা। তার আগে অবশ্য আপনাকে চিনতে হবে একজন নওশাদ খানকে কিংবা এই ছবিটাকেও। ‘ক্রিকেট ইজ আ জেন্টেলম্যান’স গেইম…’ না, এভ্রিওয়ান’স গেইম! মুশিরের বড় ভাই সরফরাজের অভিষেকের দিনের ছবি, কাঁদছেন নওশাদ, আনন্দ অশ্রু। সেই নওশাদের ছোট ছেলে এই মুশির খান। যে নিজেও হয়তো ক্যালেন্ডারের ১২ বার মাসের পাতা পাল্টানোর আগে খেলে ফেলতে পারে ভারতীয় দলে…
আজাদ ময়দান কিংবা লোকাল ক্রিকেটে রানের পর রান করে গেছেন এই মুশির… স্বপ্নটা ভাইয়ের মতোই জাতীয় দল। অবশ্য দু’জনই অনেকটা খেলেছেন বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য। মুশিরদের ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্নে নওশাদ খান যে নিজেকে পুরোটাই উৎস্বর্গ করেছেন তাও হয়তো দ্রুত ঢুকে যাবে ভারতীয় ক্রিকেট রূপকথায়।
বাংলাদেশ সিরিজের আগে এই সেপ্টেম্বরেই ইন্ডিয়া ‘এ’ আর ইন্ডিয়া ‘বি’ দলের ম্যাচে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশির। নজর কেড়েছিলেন সবার। সেঞ্চুরির পর চিন্নাস্বামীতে একই দলের ড্রেসিংরুমে থাকা মুশিরের ভাই সরফরাজও করেছিলেন হাঁত উঁচিয়ে দারুণ উদযাপন। ভাইয়ের সেঞ্চুরি করা বলে কথা, একটু বিশেষ না হলে চলে বলুন!
মুশিরের ছোটবেলার দারুণ এক গল্পও জানা যায় ইন্টারনেটের কল্যাণে। পৃথ্বী শ’র সাথে আসামে খেলা, আট বছর বয়সে নিয়েছিলেন যুবরাজের উইকেট। ট্রেন মিস করায় থাকতে হয়েছে স্টেশনেও। হোটেলে থাকবেন সে টাকাও যে ছিলনা মুশিরদের।
ভেঙেছেন দুলীপ ট্রফিতে অভিষেকে সর্বোচ্চ রানের শচীন টেন্ডুলকারের ৩৩ বছরের পুরনো রেকর্ডও। মাস্টার ব্লাস্টারের ব্যাটে ছিল ১৫৯, মুশিরের ব্যাটে ১৮১।
বয়স ক্যালেন্ডারে ১৯ বছর ২০০ দিন। লিস্ট ‘এ’ কিংবা টি-টোয়েন্টি এখনো খেলা না হলেও ৭ ম্যাচ খেলা হয়েছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। ১২ ইনিংসে ৭১০ রান কিংবা ৬৪ গড় জানাচ্ছে ক্রিকেট ম্যারাথনে দৌড়াতে মুশিরকেও দারুণ প্রস্তুত করে রেখেছেন একজন নওশাদ। মুশিরের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সেরা আনবিটেন ২০৩ রানও তাতে দিবে সায়।
সবশেষ যুব বিশ্বকাপ্টাও খেলেছেন ভারতের হয়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। সবমিলিয়ে ১৩ যুব ওয়ানডেতে রান করা হয়েছে ৫৫৪। দুই ফিফটি আর দুই সেঞ্চুরি জানাবে মুশির সাদা বলেও প্রস্তুত।
শুধু ব্যাট হাতে না স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্সেও দারুণ কার্যকরী মুশির। আড়াই (২.৫৫) ইকোনমিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তুলেছেন ৭ ম্যাচে ৭ উইকেট।
সরফরাজের স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে… মুশিরের কবে? কবে চাপাবেন ভারতীয় জার্সিটা? কবে নওশাদ হয়তো আবার কাঁদবেন? দুঃখিত, যাকে কান্না না বলে আনন্দ অশ্রু না বললে ভুল করা হবে। সে ভুলটা কী করে করি, বলুন?
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩:০৭ এম
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১:৪৬ এম
লাল মাটির উইকেটের পাশাপাশি দুই দলের স্কোয়াডে স্পিনারদের আধিক্যের কারণে মনে হচ্ছিল, চেন্নাই টেস্টে হয়ত স্পিনাররা ভালো করবেন। তবে প্রথম দিনে সেটা আর হয়নি। দাপট দেখিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। তবে সেটা সামলে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ভারতকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন। ঘরের মাঠ বলেই এখানকার উইকেটের আচরণ তার খুব চেনা। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ভারত স্পিনার জানিয়েছেন, সময় যত গড়াবে স্পিনাররা ততই সফলতা পাবেন।
এই টেস্টে দুই দলই নেমেছে একাদশে তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে। টসে জিতে আগে বোলিং নেওয়া বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন হাসান মাহমুদ। তিনি সহ অন্য দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ গতি, সুইং, মুভমেন্ট দিয়ে ভালোই ভুগিয়েছেন ব্যাটারদের। তাতে এক পর্যায়ে ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপের মুখে পড়েছিল ভারত। সেখান থেকে অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ভারতের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন অশ্বিন।
দিনের খেলা শেষে চেন্নাইয়ের ঘরের ছেলে অশ্বিন বলেছেন, দ্বিতীয় দিনেও পেসাররা উইকেট বেশ কিছুটা সাহায্য পাবেন। “এটা একটা সাধারণ, চিরচেনা চেন্নাই উইকেট, যেখানে ওভারস্পিন করলে কিছুটা বাউন্স থাকবে। ম্যাচের অনেক পরের দিকে উইকেট তার খেলা দেখাতে শুরু করবে। স্পিনাররা পরের দিকে সুবিধা পাবে। আমরা যদি সিম সুন্দর রাখতে পারি, তাহলে গতিময়, ভালো ক্যারি, ভালো বাউন্সের জন্য যথেষ্ট উপাদান থাকবে। নতুন বল কিছুটা কাজ করে দেবে, বোলারদের জন্যও কিছু সাহায্য থাকবে। আগামীকাল আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে।”
অশ্বিন যখন নেমেছিলেন, ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত রীতিমত কাঁপছিল। স্পেশালিষ্ট স্পিনার হিসেবে খেললেও অশ্বিন ব্যাটার হিসেবে অনেকবার দেখিয়েছেন তার উইলোর জাদু। আর সেটাই আরও একবার হাজির হয় প্রচণ্ড চাপের মুখেই। রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে গড়েন দুর্দান্ত ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি, যা ভারতকে দিন শেষে এনে দিয়েছে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রানের স্কোর।
এই পথচলায় অশ্বিন তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক। ৫০০ উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে সেঞ্চুরি করার দিক থেকে কেউ নেই তার ধারেকাছেও। এমন ব্যাটিংয়ের রহস্য কী? অশ্বিন শোনালেন নিজেকে শাণিত করার গল্প। “অবশ্যই, আমি সবসময় আমার ব্যাট অফ স্টাম্পের বাইরে চালিয়ে এসেছি। মাত্রই একটা টুর্নামেন্ট খেলে এসেছি যা আমাকে সাহায্য করেছে। কিছু জিনিস নিয়ে কাজ করেছি। এই ধরণের উইকেটে যেখানে একটু স্পাইস আছে, সেখানে আপনি যদি শট খেলতে চান, তাহলে রিশাভের (পান্তের) মতই খেলতে হবে।”
ভারতের মাটিতে বরাবরই দাপট দেখান স্পিনাররাই। সেই দেশে গিয়ে একটা টেস্টের প্রথম দিনে ভারতের ব্যাটারদের নাকানিচুবানি খাওয়ানো তাই যেকোনো বোলারের জন্য পরম আরাধ্য এক বিষয়। বাংলাদেশের পেস বিপ্লবের অন্যতম সেনানী হাসান মাহমুদ চেন্নাই টেস্টের প্রথম দুই সেশনে ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছেন। আর সেটা তাকে পাশে বসিয়েছে ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার দক্ষিণ আফ্রিয়ার ডেল স্টেইনের পাশে।
দিনের শুরুতেই অফস্ট্যাম্পের বাইরে দারুণ এক ডেলিভারিতে রোহিত শর্মাকে বিভ্রান্ত করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান হাসান। পরের ওভারে লেগ স্ট্যাম্পের বল তাড়া করে কট বিহাইন্ড হন শুবমান গিল, এবারও বোলার সেই হাসান। টানা তৃতীয় ওভারে উইকেট শিকার করে নিজের পরের ওভারে বিরাট কোহলিকেও ফেরান তরুণ এই পেসার।
লাঞ্চ বিরতির পর বিপজ্জনক হয়ে ওঠা রিশাভ পান্তকেও এরপর সাজঘরের পথ দেখান হাসান। ভারতের ইনিংসে প্রথম চারটি উইকেটই তাতে যায় তার ঝুলিতে। আর স্পেলের চিত্রটা দাঁড়ায় বাঁধিয়ে রাখার মত ৯-৩-১৯-৪!
দিনের বাকি অংশে আর উইকেট না পেলেও এই চার উইকেটই হাসানকে জায়গা করে দিয়েছে বিরল এক ক্লাবে, যেখানে এতদিন ছিলেন কেবল স্টেইন। আর সেটা হল ভারতের মাটিতে এই শতকে ভারতের মাটিতে বিদেশী পেসার হিসেবে টেস্টের প্রথম দিনে চার বা তার বেশি উইকেট নেওয়া।
স্টেইন সেই কীর্তি গড়েছিলেন ২০০৮ সালে, আহমেদাবাদ টেস্টে। প্রথম দিনের প্রথম সেশনে তার করা বলগুলো যেন গোলার মত গিয়ে বিঁধেছিল ভারত ব্যাটারদের। তাল সামলাতে না পেরে ২০ ওভারে গুটিয়ে যায় স্রেফ ৭৬ রানে। ২৩ রানে ৫ উইকেট নেন স্টেইন। সেই টেস্টে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছিল ইনিংস ও ৯০ রানে।
হাসানের ওই স্পেলের পরও অবশ্য চেন্নাইয়ে চালকের আসনে রয়েছে এখন ভারতই। প্রথম দিন শেষ করেছে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রানে। ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন (১০২) ও রবীন্দ্র জাদেজা (৮৬)।
দুজনের জুটির যখন শুরু, ১৪৪ রানে ভারতের ছয় উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ দল রীতিমত উড়ছিল। তবে সময় যত গড়িয়েছে, শুরুতে রয়েসয়ে খেলা রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা ক্রমেই বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চেপে বসেছেন। দিনের শেষ বেলায় এসে সেই জুটি শুধু ভারতকে শক্ত অবস্থানেই নিয়ে যায়নি, গড়েছে নতুন একটি রেকর্ডও।
প্রথম দিন শেষে ৮০ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ৬ উইকেটে ৩৩৯। এর মধ্যে সপ্তম উইকেটে অশ্বিন ও জাদেজা অবিচ্ছিন্ন আছেন ১৯৫ রানে। আর এটাই তাদের নিয়ে গেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে জুটিতে একটি রেকর্ডের চূড়ায়।
টেস্ট ক্রিকেটে সাত বা তার নিচের উইকেটের জুটিতে বাংলাদেশের এটিই এখন সর্বোচ্চ রান। এর আগের সেরা জুটিটিও ছিল ভারতেরই। ২০০৪ সালে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারত করেছিল ৫২৬ রান। আর সেটা সম্ভব হয়েছিল দশম উইকেটে শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খানের অবিশ্বাস্য এক জুটিতে। বাংলাদেশে বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে এই দুজন মিলে যোগ করেন ১৩৩ রান। ক্যারিয়ার সেরা ৭৫ রান করে জহীরের বিদায় ভাঙে সেই জুটি। আর শচীন অপরাজিত থেকে যান টেস্ট ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ২৪৮ রানে।
ম্যাচের প্রেক্ষাপটে সেই জুটিটি খুব বড় ব্যবধান না গড়লেও অশ্বিন ও জাদেজার জুটি এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন। এই দুজন জুটি গড়ার আগে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছিল ভারতকে ২০০ রানের মধ্যে গুটিয়ে দেওয়ার। সেখান থেকে অভিজ্ঞ এই দুই ক্রিকেটারের ব্যাটে চড়ে স্বাগতিকরা এখন চোখ রাখছে ৪০০ রানের দিকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দ্বিতীয় দিন যত দ্রুত সম্ভব এই জুটির ইতি টানতে চাইবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
প্রথম দিনশেষে অশ্বিন অপরাজিত আছেন ১০২ রানে, আর জাদেজা ৮৬ রানে।
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৮ দিন আগে
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৮ দিন আগে
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৮ দিন আগে
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৮ দিন আগে