৩ নভেম্বর ২০২৪, ৭:৪০ পিএম
লোকে বলে, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আসলেই কী তাই? আপনার উত্তরটা যাই হোক, উইল ইয়ংয়ের কাছে পাবেন ইতিবাচক উত্তরই। স্বপ্ন দেখা ও সেটা পূরণেরও তো একটা সীমা থাকে। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কিউই ব্যাটারের জীবনে যা যা ঘটেছে, সেটা স্রেফ রুপকথারই শামিল। ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের ঐতিহাসিক জয়ের পর সিরিজ সেরা নির্বাচিত হয়েছে ইয়ং। অথচ সব ঠিক থাকলে তারই কিনা এই সিরিজ খেলারই কথা ছিল না! নিয়তির খেল তো একেই বলে।
ভারত সফরে কীর্তির আগে যদি ইয়ংয়ের ক্যারিয়ারের দিকে একটু ফিরে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে তাকে ফেলা যায় ‘লেট ব্লুমার’-দের কাতারে। শুরুর দিক বা এমনকি এখনও তাকে প্রতিটি ম্যাচে লড়তে হয়ে দলে জায়গার জন্য, সংগ্রাম করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয় বারবার। ভারতকে সিরিজ হারানোর পথে স্পিনের বিপক্ষে খেললেন দুর্দান্ত সব ইনিংস, অথচ কে বলবে এই ভারতেই সাত বছর আগে স্রেফ স্পিন খেলা রপ্ত করতে চেন্নাইয়ে একটি বিশেষ ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিলেন ইয়ং!
আরও পড়ুন
জাদেজা-অশ্বিন ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন |
শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্টে ভীষণ বাজেভাবে হেরে ভারতে পা রেখেছিল নিউজিল্যান্ড। তখনও দেশের বাইরে কেন উইলিয়ামসন। চোট থেকে সেরে না ওঠায় প্রথমে ছিটকে যান প্রথম টেস্ট থেকে। দলে ডাক পান উইল ইয়ং। সোজা পেয়ে যান মহাগুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশন। ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সিরিজের পরও যে ব্যাটারের গড় মোটে ৩০, তাকে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সিরিজের প্রাক্কালে ছিল না বাড়তি প্রত্যাশা।
তবে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মাঝে একটা জিনিস বেশ লক্ষ্যনীয়, আর সেটা হল সুযোগ পেলে তা দুহাতে কাজে লাগানো। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারতকে মাত্র ৪৬ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর নিউজিল্যান্ড পায় বিশাল স্কোর। ৩৩ রান আসে ইয়ংয়ের ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য খেলেন ভালো একটি ইনিংস। রান তাড়ায় দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর ৪৮ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জেতান ৮ উইকেটে।
উইলিয়ামসনের ‘কভার’ হিসেবে দলে এসে এমন পারফরম্যান্সের পরও ইয়ংয়ের জানা ছিল না দ্বিতীয় টেস্টে খেলার ব্যাপারে। তবে উইলিয়ামসনের সেরে ওঠার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাওয়ায় ফের মেলে আরেক সুযোগ। টার্নিং উইকেটে এবার অবশ্য সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি এই ডানহাতি ব্যাটার। দুই ইনিংসে করেন যথাক্রমে ১৮ ও ২৩ রান। তবে একটি ম্যাচে দুই দলের পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায় ১১৩ রান, সেখানে ইয়ংয়ের ৪১ রানও ভালোই অবদান রেখেছিল নিউজিল্যান্ডের জয়ে।
আরও পড়ুন
স্যান্টনারের ঘূর্ণিতে কুপোকাত ভারত, ইতিহাস গড়া সিরিজ জয় নিউজিল্যান্ডের |
উইলিয়ানসন শেষ পর্যন্ত ছিটকে যান শেষ টেস্ট থেকেও। পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করা হয়, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসছে টেস্ট সিরিজে খেলবেন প্রথম ম্যাচ থেকেই। ইয়ংয়ের সামনে তাই মুম্বাই টেস্ট হয়ে দাঁড়ায় নিজেকে মেলে ধরার এবং উইলিয়ামসন দলে ফিরলেও একাদশে জায়গা ধরে রাখার লড়াই।
প্রথম দিন থেকেই সাপের মত টার্ন নেওয়া উইকেটে দুই দলের জন্যই ব্যাটিং এবং রান করাটা ছিল ভীষণ কঠিন এক কাজ। এমন উইকেটে প্রতিটি রানই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেখানেই নিজের ব্যাটিং সামর্থ্য প্রমাণের চ্যালেঞ্জটা নেন ইয়ং। ভারতের স্পিন ত্রয়ীকে সামলান সুইপ, ‘হার্ড’ সুইপ, রিভার্স সুইপ, কাট এবং ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলা দারুণ সব শটে। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করে ২৩৫ রান, যেখানে ইয়ংয়ের অবদান দলীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭১।
ভারত প্রথম ইনিংসে ২৮ রান নেওয়ার পর এটা একরকম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, ম্যাচ জিততে মোটামুটি একটা টার্গেট ছুঁড়ে দিতেও ভালোই কাঠগড় পোড়াতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। ভারত স্পিনারদের তোপের মুখে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছিল সফরকারীরা। তবে একপ্রান্ত আগলে বোলারদের লড়াকু পুঁজি এনে দিতে রান বের করে নেন ইয়ং। অষ্টম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে করেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি (৫১)।
দুই অফস্পিনার রবিচন্দন অশ্বিন, ওয়াশিংটন সুন্দর এবং বাঁহাতি রবীন্দ্র জাদেজার বিপক্ষে ইয়ং পরিচয় দেন তার স্পিন বোলিংয়ে তার চূড়ান্ত স্কিলের। ‘রাফ’ এরিয়াতে পিচ করা ডেলিভারি সামলেছেন ফরওয়ার্ড ডিফেন্সে। বাউন্ডারি বা বড় শট এড়িয়ে এই ইনিংসে মনোযোগ দেন সিঙ্গেলসের ওপর। দুই চার ও এক ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি পরিস্থিতির বিবেচনায় সিরিজে তার সেরাই বটে। যে উইকেটে টিকে থাকতেই দুই দলের ব্যাটারদের নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার দশা, সেখানে ১০১ বল খেলাটা বিশেষ স্কিলেরই প্রদর্শনী।
আরও পড়ুন
৩৬ বছর পর নিউজিল্যান্ডের জয় ভারতের মাটিতে |
ইয়ংয়ের সেই ইনিংস নিউজিল্যান্ডকে এনে দেয় ১৪৬ রানের লিড, যা শেষ পর্যন্ত দলটিকে এনে দেয় ২৫ রানের নাটকীয় জয়। সিরিজের ৬ ইনিংসে ২৪৪ রান করে তারকায় ঠাসা সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ওঠে ইয়ংয়ের হাতে।
তিন ম্যাচ ধরে যে তিনটি ভিন্ন উইকেটে রানের জন্য সংগ্রাম করেছেন ভারতের দুই তারকা ব্যাটার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি, সেই একই সিরিজে প্রতিটি ইনিংসেই যেভাবে মূল্যবান রান করেছেন ইয়ং, সেটা বোধকরি তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না। সিরিজটি খেলার মানসিক প্রস্তুতিই যে ছিল না তার। সেখানে দেশের মাটিতে প্রায় অপরাজেয় হয়ে ওঠা একটি দলকে ধবলধোলাই করার অন্যতম নায়ক বনে যাওয়া রূপকথার গল্পই কেবল হতে পারেন।
ভারতবধের পর সবসময়ই একটু চুপচাপ স্বভাবের ইয়ং এমন পারফরম্যন্সের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “আমাকে আমার ডিফেন্সের ওপর আস্থা রাখতে হয়েছে। আর এটা নিশ্চিত করতে হয়েছে যে আমি কোথায় রান বের করতে চাই। চেয়েছি যতক্ষণ সম্ভব সেটা চালিয়ে যেতে। আমার যদি জানা থাকে যে আমি কোথায় রান করতে চাই এবং নিজের ডিফেন্সের ওপর বিশ্বাসটা রাখি, তাহলে সেটা মনকে অনেক পরিষ্কার করে দেয়।”
ইয়ং যতোটা নির্লিপ্তভাবে নিজের ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ভারতের বিপক্ষে সিরিজে তার ব্যাট মোটেও সেভাবে কথা বলেনি। স্কোয়াডের বাইরে থাকা একজন ব্যাটার দলে এসে তিন নম্বর পজিশনে নেমে ইনিংসের পর ইনিংস যেভাবে ব্যাট করে গেছেন, ব্যবধান গড়ে দেওয়া ইনিংস খেলেছেন, তা করাটা ভারতের মাটিতে টেস্টে একজন ‘বিদেশী’ ব্যাটারদের জন্য কেবল স্বপ্নই হতে পারে।
আরও পড়ুন
যার ছিল না খেলারই কথা, সেই ইয়ংই হলেন ভারতের হন্তারক |
ইয়ং মুখে না বললেও সেই স্বপ্নটা নিশ্চয়ই এঁকেছিলেন। আর সেটা করেছিলেন বলেই প্রতিটি ম্যাচেই না খেলার অনিশ্চয়তা সঙ্গী করে মাঠে নেমেছেন, রান করেছেন এবং দলকে জিতিয়েছেন। তবে ইয়ংএর জন্য পুরো ব্যাপারটা একটা স্বপ্ন হয়ে থাকতে পারে। কারণ, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ সেরা হওয়ার পরও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে যে তার খেলার নেই নিশ্চয়তা। একই চিত্র যে ছিল ভারত সিরিজের আগেও। মাঝের এই কয়েক সপ্তাহ তাই ইয়ংয়ের জন্য হয়ে থাকতে পারে ঘোরলাগা এক স্বপ্ন, যার পরদে পরদে মিশে থাকতে অবিশ্বাসের সুবাতাস।
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩:৫০ এম
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১:০০ এম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৭:১৫ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৫:৩৮ পিএম
প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিনেও যে উইকেটে বিশেষ জুজু নেই, সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার, এমনকি টেল এন্ডাররাও দেখিয়েছেন বেশ। আর সেটা কাজে লাগিয়ে জাস্টিন গ্রিভসের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ক্যারিবিয়ানরা পেল বিশাল স্কোর। ভারত সফর থেকেই টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের ব্যাটারা আরও একবার পারলেন না শুরুটা ভালো এনে দিতে। দুই দিন পার হওয়ার পর তাই ভালোভাবেই ম্যাচের লাগাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে।
অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসের বাংলাদেশ করেছে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ৪০ রান। দুই অপরাজিত ব্যাটার হলেন মুমিনুল হক (৭) ও শাহাদাত হোসেন দিপু (১০)। পিছিয়ে আছে ৪১০ রানে। ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দেড় দিনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান করেছিল ধীরগতিতেই। সেটা ধরে রেখে বাংলাদেশও ইনিংস শুরু করে স্বভাবজাত ব্যাটিংয়েই। প্রথম সাত ওভারে আসে মাত্র ৫ রান! অষ্টম ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান জাকির হাসান। পরের আলজারি জোসেফের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তবে বল তালুবন্দি করতে পারেননি ফিল্ডার, বেঁচে যান তরুণ এই ওপেনার। তবে সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।
চমৎকার এক স্পেলে প্রথম ছয় ওভারে তিন মেডেন দেওয়া জেডেন সিলসের এক ওভারে দুই চার মেরে কিছুটা আগ্রাসনের আভাস ছিল জাকিরের ব্যাটে। তবে সেই ওভারেই অফস্ট্যাম্পের বাইরেরর বল টেনে খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান ১৫ রানে।
পাঁচ রানে জীবন পাওয়া জয় আউট হন একই স্কোরে। আলজারির বলেই প্রায় একই ডেলিভারিতে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে দলে জায়গা পাওয়া তরুণ দিপু প্রথম ১৬ বলে করেন এক রান। এরপর চার মেরে কিছুটা চাপ সরান। অন্যপ্রান্তে মুমিনুল একপ্রান্ত আগলে রাখার কাজটা সামলান ঠিকঠাকভাবেই। তাতে দিনের খেলা শেষের আগে আর বিপদ হয়নি।
তবে দিনের আগের অংশে বাংলাদেশের সর্বনাশ করেন গ্রিভস ও কেমার রোচ। হাসান মাহমুদের দারুণ এক স্পেলে শুরুতেই দুই উইকেট পেয়ে গিয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজের দল। তবে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা ক্রমেই কমিয়ে এনেন গ্রিভস-রোচ জুটি। কয়েক দফায় সুযোগ দিলেও বেঁচে যান দুজনই। সেটার পাশাপাশি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করে ধীরে ধীরে তার জমিয়ে তোলেন জুটি।
চা বিরতির আগে ভাঙে দুর্দান্ত এই জুটি। ইতি টানেন সেই হাসানই। তবে তার আগে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৪০ রানের রেকর্ড গড়েন এই দুজন। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সাত উইকেটের পরও এটাই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান করেছিলেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খান।
হাসানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন রোচ। টেস্ট ক্রিকেটে এটাই তার এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। তিনি মাইলফলক মিস করলেও গ্রিভস সেই ভুল করেননি। দারুণ সব শটের এক ইনিংসকে পূর্ণতা দেন শতকে রুপ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন চার চারে ১১৫ রানে। ৮৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে হাসান ছিলেন বাংলাদেশের সেরা বোলার।
প্রথম সেশনে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশ রানের মধ্যেই আটকে দেওয়ার আশা যুগিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে টেল এন্ডার কেমার রোচকে নিয়ে জাস্টিন গ্রিভস গড়ে তুললেন অসাধারণ প্রতিরোধ। একজন করলেন সেঞ্চুরি, আর দুজনে মিলে অষ্টম উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন বেশ শক্ত অবস্থানে। এতে ভর করে প্রথম ইনিংসে বড় স্কোরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের চা বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১৩৯ ওভারে ৮ উইকেটে ৪১৫ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (১০৯) ও জেডেন সিলস (১)।
২৬১ রানে পতন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সপ্তম উইকেটের। কে ভেবেছিল, পরের উইকেটের জন্য রীতিমত ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার দশা হবে বাংলাদেশের বোলারদের? গ্রিভস ব্যাটিংটা ভালো জানলেও রোচও যে যেভাবে ‘ব্যাটার’ হয়ে যাবেন, সেটা না ভাবাটাই ছিল স্বাভাবিক।
অথচ অষ্টম উইকেটে এই দুজন মিলে খেললেন চিরায়ত টেস্ট মেজাজে। রান বের করলেন দেখেশুনে খেলে। বোলারকে প্রয়োজন মত দিয়েছেন সম্মান, আবার বাজে বল পেলেই মেরেছেন বাউন্ডারি। সিঙ্গেলস, ডাবলসে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন ফিল্ডারদেরও। সেই প্রক্রিয়ায় তিনশ ছাড়িয়ে দল পার করে ফেলেছে চারশ রানও।
শেষ পর্যন্ত চা বিরতির খানিক আগে জুটিতে ভাঙন ধরিয়েছেন দিনের সেরা বোলার হাসান মাহমুদ। তবে তার আগে গ্রিভস-রোচ জুটি যোগ করে ফেলেন ১৪০ রান, যা এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আর টেস্ট ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি এখন এটি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটিটি ছিল জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিক ও ট্রাভিস ফ্রেন্ডের। ২০০১ সালে তারা যোগ করেছিলেন ১০৮ রান। গ্রিভস-রোচের জুটি সাত উইকেটের পর সব মিলিয়েও এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান ছিল শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খানের।
হতাশাময় সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর চারশ পার করার পরই রোচকে ফেরান হাসান। বোল্ড করেন দেন ডানহাতি ব্যাটারকে। তবে তার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। অন্যপ্রান্তে সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল হয়নি গ্রিভসের। ক্যারিবিয়ানরা প্রথম ইনিংসে আরও কিছু রান যোগ করার জন্য শেষ সেশনে তাকিয়ে থাকবে তার দিকেই।
প্রথম দিনের শেষ দিকে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে অনেকটাই ভারসাম্য এনেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেই ধারাটা বজায় রেখে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে দারুণ এক স্পেলে হাসান মাহমুদ এনে দিলেন জোড়া উইকেট। তবে এরপরই যেন কমে গেল সফরকারীদের বোলিংয়ের ধার। সেই সুযোগে অষ্টম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন জাস্টিন গ্রিভস ও কেমার রোচ। বড় স্কোরের পথে তাতে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের লাঞ্চ বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১১০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৩৬ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (৬৩) ও রোচ (১৯)।
আরও পড়ুন
হাসানের প্রথম টেস্ট উইকেট, শক্ত ভিতে শ্রীলঙ্কা |
অথচ প্রথম ঘণ্টায় হাসানের স্পেল বাংলাদেশ শিবিরে আশা জাগিয়েছিল প্রতিপক্ষকে ২৮০-৩০০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলার। দিনের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই গ্রিভসের বিরুদ্ধে হাসানের ছিল কট বিহাইন্ডের আবেদন। তবে সাড়া মেলেনি। তবে তিন বল বাদে জোশুয়া দা সিলভাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তরুণ এই ডানহাতি পেসার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি এই কিপার-ব্যাটারের।
পরের ওভারের প্রথম বলে হাসানকে চার মারেন আলজারি জোসেফ। পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে। তবে এই উইকেটে বোলারের চেয়ে বড় কৃতিত্ব পেতে পারেন গালিতে দাঁড়ানো জাকির হাসান। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে নেন অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ। ওই ওভারেই রোচকে প্রায় ফিরিয়েই দিচ্ছিলেন হাসান। তবে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান ক্যারিবিয়ান পেসার।
আরও পড়ুন
হাসানের তোপ সামলে অশ্বিন-জাদেজার ব্যাটে চড়ে শক্ত অবস্থানে ভারত |
দুই ব্যাটার মিলে এরপর জুটি গড়েন ধীরলয়ে। ৫ রানে থাকতে তাইজুল ইসলামের বলে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন রোচ। ডিপে থাকা হাসান দৌড়ে গিয়ে পাননি বলের নাগাল, বাংলাদেশ হারায় উইকেটে সুযোগ। অন্যপ্রান্তে দেখেশুনে খেলা গ্রিভস। প্রায় নিখুঁত এই ইনিংস খেলার পথে তিনি পরিচয় দেন দুর্দান্ত টেম্পারমেন্টের, যা বাংলাদেশ বোলারদের কাজটা আরও কঠিন করে দেয়।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের একটা বড় অংশ জুড়ে রানের জন্য করতে হয়েছে সংগ্রাম। সেই ম্যাচে তাও একটা লড়াকু স্কোর ছিল দলটির। তবে নিউইয়র্ক স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের দলের কেউই পারলেন না আলো ছড়াতে ব্যাটে বা বলে। মামুলি পুঁজি নিয়ে সামান্যতম লড়াইও তাই জমাতে ব্যর্থ হল বাংলা টাইগার্স।
আবুধাবি টি-টেনের শনিবারের ম্যাচে বাংলা টাইগার্স হেরেছে ৭ উইকেটে। তাদের করা ৮ উইকেটে ৬৮ রান ৪ ওভার ও ২৪ বল হাতে রেখেই পাড়ি দিয়েছে নিউইয়র্ক।
শুরুতেই দুই ওপেনার হারানো বাংলা টাইগার্সের বড় আশা ছিলেন দাসুন শানাকা। আগের ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ রান করা এই শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার এদিনও ছন্দেই ছিলেন। তবে মাত্র ১০ ওভারের খেলায় যে ধরনের ব্যাটিং প্রয়োজন, সেটা করতে পারেননি। ১৯ বলে ২ ছক্কায় করেন মোটে ২২।
আরও পড়ুন
সাকিবে ট্রফি জিতবে বাংলা টাইগার্স? |
তবে দলকে বিপদে ফেলেন মূলত দুই তারকা স্পিন অলরাউন্ডার লিয়াম লিভিনস্টোন ও ইফতিখার আহমেদ। যাওয়া-আসার মিছিলের মধ্যে এক সাকিবই যা কিছুটা লড়াই করেন। খেলেন ১২ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ১৯ রানের ক্যামিও। তবে তাতেও কাজের কাজ হয়নি আর। তার দল বোর্ডে জমা করতে পারে মামুলি স্কোর।
এরপর বল হাতে বলতে গেলে প্রথম ওভারেই আশা মিলিয়ে যায় দলটির। ওয়াইড-নো বলময় ওভারে মোট ১২টি ডেলিভারি করা ডেভিড পেইনে দেন ১৭ রান। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে এভিন লুইসকে ফেরান ইমরান তাহির।
ছুটতে থাকা নিউইয়র্ককে জোড়া আঘাতে ধাক্কাটা দেন সাকিবই। প্রথম বলেই ডেল্যাড ব্রেভিসকে ফেরানোর পর আসিফ আলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এক বল বাদে। সেই ওভারে বাংলা টাইগার্স অধিনায়ক দেন মাত্র দুই রান।
আরও পড়ুন
সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলাতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি বিসিবি, বললেন ফারুক |
তবে হার আটকাতে তা যথেষ্ট হয়নি। চার ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেন নিউইয়র্ক।
দেশের ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির ঝড় তুলতে আসছে আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক এনসিএল টি-টোয়েন্টি পাওয়ার্ড বাই ওয়ালটন। সিলভার স্পন্সর হিসেবে থাকছে লিলি ময়েশ্চারাইজ লোশন। শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ, পরিচালক ফাহিম সিনহা। স্পন্সরদের পক্ষ থেকে ছিলেন আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ফরমান আর. চৌধুরী, ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিনুল ইসলাম খান ও রিমার্ক-হারল্যান গ্রুপের ব্র্যান্ড এম্বোসেডর, চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ।
বিসিবি সভাপতি ফারুক মনে করেন, এই টুর্নামেন্টে দেশীয় ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।
“বিপিএলের আগে এই টুর্নামেন্ট দেশী ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ। আমি আশা করি ক্রিকেটাররা সে সুযোগ নেবে এবং নিজেদের মেলে ধরবে, যা কিনা দেশের ক্রিকেটকে সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। এছাড়া আমি টুর্নামেন্টের ব্রডকাস্টার টি স্পোর্টসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করবে।”
শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এনসিএল টি-টোয়েন্টি। আগামী ১১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্ট। অংশ নেবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের সাত দল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, সিলেট বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো। আট দলের লিগ পর্বের ম্যাচগুলো হবে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম ও সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম আউটার মাঠে। প্লে-অফের চারটি ম্যাচ হবে ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
সবগুলো ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের প্রথম ও একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে। এছাড়া ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ফ্যানকোড ও বিশ্বের বাকি অংশে ম্যাচগুলো দেখা যাবে টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেলে।