২৯ জুন ২০২৪, ২:০৯ পিএম
ব্যাটার হিসেবে রোহিত শর্মার বিশেষ একটা গুণ আছে, যেটা এই মুহূর্তে নেই খুব বেশি ক্রিকেটারের। আর তা হল, উইকেট, কন্ডিশন, বোলিং লাইনআপ নির্বিশেষে আগ্রাসী ব্যাটিং করা এবং সেটাও ঠিক নিজের ঢঙ্গেই। চলতি বিশ্বকাপে এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন এমন কিছু ইনিংস, যা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব। নিজের দিনে এখনও বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণকে ধসিয়ে দিতে সক্ষম ভারত অধিনায়ক। বিরাট কোহলি একেবারেই ফর্মে না থাকায় দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনালে রোহিতই হতে পারেন ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। আসর জুড়ে অপরাজিত থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা, বিশেষ করে দুই পেসার আনরিখ নরকিয়া ও কাগিসো রাবাদা যে অদম্য ফর্মে আছেন, তাতে তাদের বিপক্ষে রোহিতের পারফরম্যান্সই তাই হয়ে উঠতে পারে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য।
ঘরের মাটিতে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলেছিল ভারত। এর পেছনে একটা বড় অবদান ছিল রোহিতের। খেলাটা ৫০ ওভারের হলেও তিনি ইনিংসের শুরু থেকেই ব্যাটিং করেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে। তাতে প্রথম পাওয়ার প্লেতেই ভারত নিয়মিত পাচ্ছিল দারুণ একটা শুরু, যা পরের দিকের ব্যাটারদের জন্য কাজটা সহজ করে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালেও একই গতিতে ব্যাটিং করেছিলেন রোহিত। তবে ফিফটির আগে তার আউট হওয়ার মধ্যে দিয়ে ভারতের পথ হারানোর শুরু হয়, যা শেষ হয় ম্যাচ হারের মধ্য দিয়ে।
এই বিশ্বকাপেও ঠিক একই ভূমিকায় আছেন রোহিত। ২০২২ বিশ্বকাপের পর বলেছিলেন, তার নিজের ও দলকে খেলার ধরনে বদল আনতে হবে এবং আগ্রাসী হতে হবে। কথা রেখেছেন রোহিত। ব্যাটারদের জন্য বেশ কঠিন এক আসরে তিনি আছেন আপন ছন্দে। সাত ইনিংসে তিন ফিফটিতে করেছে আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪৮ রান। তবে তিনি নিজেই বলেছেন, এই ফরম্যাটে ব্যক্তিগত অর্জনের কোনো মূল্য নেই, ইন্টেন্টটাই আসল। আর সেটার প্রমাণ মেলে স্ট্রাইক রেটের দিকে তাকালেই, যা কিনা ১৫৫.৯৭!
কোহলির সাথে রোহিতের ওপেনিং জুটি নিয়ে সবার অনেক আশা থাকলেও একজন পুরো আসরেই করতে পেরেছেন মাত্র ৭৫ রান। কোহলির বাজে ফর্মের কারণে রোহিতের দায়িত্বটাও আরও বেড়ে গেছে। তিনি দলকে ভালো একটা শুরু এনে দিতে ব্যর্থ হলেই যে চাপ বাড়বে অন্য ব্যাটারদের। ফলে প্রথম ছয় ওভারে প্রতিপক্ষের বোলারদের চাপে ফেলার কাজটা একাই সামলাচ্ছেন ‘হিটম্যান’।
গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বটে, তবে ইনিংসের একদম শুরুতেই শাহিন শাহ আফ্রিদিকে যেভাবে ছক্কা মেরে বসেন, সেটা কিছুটা হলেও প্রতিপক্ষকে ভিন্নভাবে ভাবতে বাধ্যই করেছিল। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিউ ইয়র্কের ব্যাটিংয়ের জন্য দুর্গম এক উইকেটে রান তাড়ায় খেলেন ৩৭ বলে ৫২ রানের ইনিংস। ম্যাচটা যারা দেখেছেন, তারাই জানেন, ওই উইকেটে ব্যাটিং করা বা স্রেফ টিকে থাকাটাই ছিল ভীষণ কঠিন কাজ। অসমান বাউন্সে চোটের ঝুঁকি ছিল প্রায় প্রতিটি বলেই। রোহিত মাঠও ছাড়েন শেষে মাথায় চোট পেয়েই, তবে তার আগে খেলেন স্বভাবসুলভ এক ইনিংস।
সুপার এইটে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষেও পারেননি বড় ইনিংস খেলতে পারেননি রোহিত। তবে বড় মঞ্চের বড় খেলোয়াড় হিসেবে ঠিকই জ্বলে ওঠেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। মাত্র ৪১ বলে করেন ৯২। মিচেল স্টার্কের রীতিমতো পাড়ার বোলার বানিয়ে এক ওভারেই তুলে নেন ২৯ রান। বাঁচা-মরার ম্যাচে অজিদের একদম প্রথম ওভার থেকেই সেদিন ছিটকে দেন রোহিত একাই।
এরপর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও একই ধারা বজায় রাখেন। ৩৯ বলে তার করা ৫৭ রান অন্য যেকোনো উইকেটে ৮০-১০০ রানের সমতুল্য। কারণ উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। ইংলিশদের ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া তাই প্রমাণ করে। ফাইনালে বার্বাডোজের উইকেট অবশ্য স্পোর্টিংই হওয়ার কথা। তবে এবার যে রোহিতের সামনে আসরের সেরা পেস বোলিং লাইনআপ যাদের, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা।
গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচগুলোও হয়েছিল যথারীতি বোলিংবান্ধব উইকেটে। তবে সেটা কাজে লাগানোর জন্য বিশেষ স্কিলেরও প্রয়োজন। ইনিংসের শুরু ও শেষের দিকে সেই কাজটা ম্যাচের পর ম্যাচ করে গেছেন কাগিসো রাবাদা, আনরিখ নরকিয়া, মার্কো ইয়ানসেন ও ওটানিল বার্টম্যানরা। শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ৭৭ রানে গুটিয়ে দেওয়ার দলটির বিপক্ষে নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশ বা নেপাল, কোনো দলের ব্যাটারাই সুবিধা করতে পারেননি। বলা ভালো, দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রুপ পর্ব পার করতে পেসারদের ভূমিকাই ছিল বেশি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র ১১৩ রান করেও দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে যায় চার রানে। কেশভ মহারাজ শেষ ওভারে জয়ের নায়ক হলেও পাওয়ার প্লে ও ডেথ ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটারদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন মূলত রাবাদা ও নরকিয়া। নেপালের বিপক্ষে মাত্র এক রানে জয়ের ম্যাচেও ব্যতিক্রম হয়নি। বলের সমান রান প্রয়োজন, এমন সমীকরণ থেকেও দলটি হেরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার গতিময় পেসারদের অবিশ্বাস্য ডেথ বোলিংয়ের কারণে। প্রতিটি রানের জন্য ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা নেন তারা।
সুপার এইটে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে স্পোর্টিং উইকেতেও ধারা বজায় রাখেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। বিশেষ করে ইংলিশদের বিপক্ষে। সেদিন শেষ তিন ওভারে হাতে ছয় উইকেটে নিয়ে ২৫ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি ইংল্যান্ড। প্রবল চাপের মুখে পুরো আসরের মত সেই ম্যাচেও ভীষণ হিসেবী স্পেল উপহার দেন নরকিয়া। তাকে যোগ্য দিয়ে রাবাদা অন্যপ্রান্তে রান আটকে দেওয়ার পাশাপাশি উইকেট নিয়ে চাপ বজায় রাখার কাজটা করেছেন।
আসরে নরকিয়া ৮ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছেন। ইকোনমি রেটটা অবিশ্বাস্য, ৫.৬৭! কম যাননা রাবাদাও। ৫.৮৮ ইকোনমি রেটে তার শিকার ১২ রান। তাদের বিপক্ষে রান করাটা যে কতোটা কঠিন, এই পরিসংখ্যানই তা বোঝাতে যথেষ্ট।
ইয়ানসেনের ভূমিকা কম নয়। ইনিংসের শুরুতে, মাঝে এবং শেষের দিকে নানাভাবেই তাকে ব্যবহার করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্রেকথ্রু দেওয়ার পাশাপাশি কিপটে বোলিংয়ের কাজটাও ভালো সামলান তিনি। এই আক্রমণভাগের ‘দুর্বল’ নাম অনেকেই ধরেন বার্টম্যানকে। খরুচে হওয়ার কারণেই তাকে সেভাবে হিসাবে রাখা হয় না। তবে অন্য তিনজনের উপস্থিতির কারণে দলে তাকে রাখাই হয়েছে উইকেট-টেকিং বোলার হিসবে। একটু খরুচে হলেও গতিময় বার্টম্যানের কাছে তার দলের চাওয়া উইকেট এনে দেওয়া। আর সেই কাজটা তিনি করছেন ভালোই।
তাহলে কি দাঁড়ালো? একদিকে টানা দুই ফিফটি করা রোহিত, আর অন্যদিকে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার পেস লাইনআপ। যে পক্ষই শুরুতে সাফল্য পাবে, জয়ের পাল্লা তাই সেই দলের দিকেই ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে কোনো পক্ষের জন্যই কাজটা মোটেও সহজ যে হবে না, তা অনুমেয়। রোহিত প্রথম বল থেকেই আক্রমণ শানাবেন, আর রাবাদা-নরকিয়ারা তার চূড়ান্ত পরীক্ষা নেবেন গতি দিয়ে।
জয় হবে কার? উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে আর কিছুটা সময়। তবে রোহিত বনাম রাবাদা-নরকিয়াদের লড়াই জমে গেলে উপভোগ্য একটা ফাইনালই দেখতে পাবেন দর্শকরা।
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩:৫০ এম
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১:০০ এম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৭:১৫ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৫:৩৮ পিএম
প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিনেও যে উইকেটে বিশেষ জুজু নেই, সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার, এমনকি টেল এন্ডাররাও দেখিয়েছেন বেশ। আর সেটা কাজে লাগিয়ে জাস্টিন গ্রিভসের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ক্যারিবিয়ানরা পেল বিশাল স্কোর। ভারত সফর থেকেই টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের ব্যাটারা আরও একবার পারলেন না শুরুটা ভালো এনে দিতে। দুই দিন পার হওয়ার পর তাই ভালোভাবেই ম্যাচের লাগাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে।
অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসের বাংলাদেশ করেছে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ৪০ রান। দুই অপরাজিত ব্যাটার হলেন মুমিনুল হক (৭) ও শাহাদাত হোসেন দিপু (১০)। পিছিয়ে আছে ৪১০ রানে। ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দেড় দিনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান করেছিল ধীরগতিতেই। সেটা ধরে রেখে বাংলাদেশও ইনিংস শুরু করে স্বভাবজাত ব্যাটিংয়েই। প্রথম সাত ওভারে আসে মাত্র ৫ রান! অষ্টম ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান জাকির হাসান। পরের আলজারি জোসেফের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তবে বল তালুবন্দি করতে পারেননি ফিল্ডার, বেঁচে যান তরুণ এই ওপেনার। তবে সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।
চমৎকার এক স্পেলে প্রথম ছয় ওভারে তিন মেডেন দেওয়া জেডেন সিলসের এক ওভারে দুই চার মেরে কিছুটা আগ্রাসনের আভাস ছিল জাকিরের ব্যাটে। তবে সেই ওভারেই অফস্ট্যাম্পের বাইরেরর বল টেনে খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান ১৫ রানে।
পাঁচ রানে জীবন পাওয়া জয় আউট হন একই স্কোরে। আলজারির বলেই প্রায় একই ডেলিভারিতে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে দলে জায়গা পাওয়া তরুণ দিপু প্রথম ১৬ বলে করেন এক রান। এরপর চার মেরে কিছুটা চাপ সরান। অন্যপ্রান্তে মুমিনুল একপ্রান্ত আগলে রাখার কাজটা সামলান ঠিকঠাকভাবেই। তাতে দিনের খেলা শেষের আগে আর বিপদ হয়নি।
তবে দিনের আগের অংশে বাংলাদেশের সর্বনাশ করেন গ্রিভস ও কেমার রোচ। হাসান মাহমুদের দারুণ এক স্পেলে শুরুতেই দুই উইকেট পেয়ে গিয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজের দল। তবে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা ক্রমেই কমিয়ে এনেন গ্রিভস-রোচ জুটি। কয়েক দফায় সুযোগ দিলেও বেঁচে যান দুজনই। সেটার পাশাপাশি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করে ধীরে ধীরে তার জমিয়ে তোলেন জুটি।
চা বিরতির আগে ভাঙে দুর্দান্ত এই জুটি। ইতি টানেন সেই হাসানই। তবে তার আগে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৪০ রানের রেকর্ড গড়েন এই দুজন। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সাত উইকেটের পরও এটাই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান করেছিলেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খান।
হাসানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন রোচ। টেস্ট ক্রিকেটে এটাই তার এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। তিনি মাইলফলক মিস করলেও গ্রিভস সেই ভুল করেননি। দারুণ সব শটের এক ইনিংসকে পূর্ণতা দেন শতকে রুপ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন চার চারে ১১৫ রানে। ৮৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে হাসান ছিলেন বাংলাদেশের সেরা বোলার।
প্রথম সেশনে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশ রানের মধ্যেই আটকে দেওয়ার আশা যুগিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে টেল এন্ডার কেমার রোচকে নিয়ে জাস্টিন গ্রিভস গড়ে তুললেন অসাধারণ প্রতিরোধ। একজন করলেন সেঞ্চুরি, আর দুজনে মিলে অষ্টম উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন বেশ শক্ত অবস্থানে। এতে ভর করে প্রথম ইনিংসে বড় স্কোরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের চা বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১৩৯ ওভারে ৮ উইকেটে ৪১৫ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (১০৯) ও জেডেন সিলস (১)।
২৬১ রানে পতন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সপ্তম উইকেটের। কে ভেবেছিল, পরের উইকেটের জন্য রীতিমত ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার দশা হবে বাংলাদেশের বোলারদের? গ্রিভস ব্যাটিংটা ভালো জানলেও রোচও যে যেভাবে ‘ব্যাটার’ হয়ে যাবেন, সেটা না ভাবাটাই ছিল স্বাভাবিক।
অথচ অষ্টম উইকেটে এই দুজন মিলে খেললেন চিরায়ত টেস্ট মেজাজে। রান বের করলেন দেখেশুনে খেলে। বোলারকে প্রয়োজন মত দিয়েছেন সম্মান, আবার বাজে বল পেলেই মেরেছেন বাউন্ডারি। সিঙ্গেলস, ডাবলসে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন ফিল্ডারদেরও। সেই প্রক্রিয়ায় তিনশ ছাড়িয়ে দল পার করে ফেলেছে চারশ রানও।
শেষ পর্যন্ত চা বিরতির খানিক আগে জুটিতে ভাঙন ধরিয়েছেন দিনের সেরা বোলার হাসান মাহমুদ। তবে তার আগে গ্রিভস-রোচ জুটি যোগ করে ফেলেন ১৪০ রান, যা এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আর টেস্ট ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি এখন এটি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটিটি ছিল জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিক ও ট্রাভিস ফ্রেন্ডের। ২০০১ সালে তারা যোগ করেছিলেন ১০৮ রান। গ্রিভস-রোচের জুটি সাত উইকেটের পর সব মিলিয়েও এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান ছিল শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খানের।
হতাশাময় সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর চারশ পার করার পরই রোচকে ফেরান হাসান। বোল্ড করেন দেন ডানহাতি ব্যাটারকে। তবে তার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। অন্যপ্রান্তে সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল হয়নি গ্রিভসের। ক্যারিবিয়ানরা প্রথম ইনিংসে আরও কিছু রান যোগ করার জন্য শেষ সেশনে তাকিয়ে থাকবে তার দিকেই।
প্রথম দিনের শেষ দিকে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে অনেকটাই ভারসাম্য এনেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেই ধারাটা বজায় রেখে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে দারুণ এক স্পেলে হাসান মাহমুদ এনে দিলেন জোড়া উইকেট। তবে এরপরই যেন কমে গেল সফরকারীদের বোলিংয়ের ধার। সেই সুযোগে অষ্টম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন জাস্টিন গ্রিভস ও কেমার রোচ। বড় স্কোরের পথে তাতে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের লাঞ্চ বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১১০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৩৬ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (৬৩) ও রোচ (১৯)।
আরও পড়ুন
হাসানের প্রথম টেস্ট উইকেট, শক্ত ভিতে শ্রীলঙ্কা |
অথচ প্রথম ঘণ্টায় হাসানের স্পেল বাংলাদেশ শিবিরে আশা জাগিয়েছিল প্রতিপক্ষকে ২৮০-৩০০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলার। দিনের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই গ্রিভসের বিরুদ্ধে হাসানের ছিল কট বিহাইন্ডের আবেদন। তবে সাড়া মেলেনি। তবে তিন বল বাদে জোশুয়া দা সিলভাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তরুণ এই ডানহাতি পেসার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি এই কিপার-ব্যাটারের।
পরের ওভারের প্রথম বলে হাসানকে চার মারেন আলজারি জোসেফ। পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে। তবে এই উইকেটে বোলারের চেয়ে বড় কৃতিত্ব পেতে পারেন গালিতে দাঁড়ানো জাকির হাসান। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে নেন অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ। ওই ওভারেই রোচকে প্রায় ফিরিয়েই দিচ্ছিলেন হাসান। তবে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান ক্যারিবিয়ান পেসার।
আরও পড়ুন
হাসানের তোপ সামলে অশ্বিন-জাদেজার ব্যাটে চড়ে শক্ত অবস্থানে ভারত |
দুই ব্যাটার মিলে এরপর জুটি গড়েন ধীরলয়ে। ৫ রানে থাকতে তাইজুল ইসলামের বলে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন রোচ। ডিপে থাকা হাসান দৌড়ে গিয়ে পাননি বলের নাগাল, বাংলাদেশ হারায় উইকেটে সুযোগ। অন্যপ্রান্তে দেখেশুনে খেলা গ্রিভস। প্রায় নিখুঁত এই ইনিংস খেলার পথে তিনি পরিচয় দেন দুর্দান্ত টেম্পারমেন্টের, যা বাংলাদেশ বোলারদের কাজটা আরও কঠিন করে দেয়।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের একটা বড় অংশ জুড়ে রানের জন্য করতে হয়েছে সংগ্রাম। সেই ম্যাচে তাও একটা লড়াকু স্কোর ছিল দলটির। তবে নিউইয়র্ক স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের দলের কেউই পারলেন না আলো ছড়াতে ব্যাটে বা বলে। মামুলি পুঁজি নিয়ে সামান্যতম লড়াইও তাই জমাতে ব্যর্থ হল বাংলা টাইগার্স।
আবুধাবি টি-টেনের শনিবারের ম্যাচে বাংলা টাইগার্স হেরেছে ৭ উইকেটে। তাদের করা ৮ উইকেটে ৬৮ রান ৪ ওভার ও ২৪ বল হাতে রেখেই পাড়ি দিয়েছে নিউইয়র্ক।
শুরুতেই দুই ওপেনার হারানো বাংলা টাইগার্সের বড় আশা ছিলেন দাসুন শানাকা। আগের ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ রান করা এই শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার এদিনও ছন্দেই ছিলেন। তবে মাত্র ১০ ওভারের খেলায় যে ধরনের ব্যাটিং প্রয়োজন, সেটা করতে পারেননি। ১৯ বলে ২ ছক্কায় করেন মোটে ২২।
আরও পড়ুন
সাকিবে ট্রফি জিতবে বাংলা টাইগার্স? |
তবে দলকে বিপদে ফেলেন মূলত দুই তারকা স্পিন অলরাউন্ডার লিয়াম লিভিনস্টোন ও ইফতিখার আহমেদ। যাওয়া-আসার মিছিলের মধ্যে এক সাকিবই যা কিছুটা লড়াই করেন। খেলেন ১২ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ১৯ রানের ক্যামিও। তবে তাতেও কাজের কাজ হয়নি আর। তার দল বোর্ডে জমা করতে পারে মামুলি স্কোর।
এরপর বল হাতে বলতে গেলে প্রথম ওভারেই আশা মিলিয়ে যায় দলটির। ওয়াইড-নো বলময় ওভারে মোট ১২টি ডেলিভারি করা ডেভিড পেইনে দেন ১৭ রান। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে এভিন লুইসকে ফেরান ইমরান তাহির।
ছুটতে থাকা নিউইয়র্ককে জোড়া আঘাতে ধাক্কাটা দেন সাকিবই। প্রথম বলেই ডেল্যাড ব্রেভিসকে ফেরানোর পর আসিফ আলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এক বল বাদে। সেই ওভারে বাংলা টাইগার্স অধিনায়ক দেন মাত্র দুই রান।
আরও পড়ুন
সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলাতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি বিসিবি, বললেন ফারুক |
তবে হার আটকাতে তা যথেষ্ট হয়নি। চার ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেন নিউইয়র্ক।
দেশের ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির ঝড় তুলতে আসছে আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক এনসিএল টি-টোয়েন্টি পাওয়ার্ড বাই ওয়ালটন। সিলভার স্পন্সর হিসেবে থাকছে লিলি ময়েশ্চারাইজ লোশন। শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ, পরিচালক ফাহিম সিনহা। স্পন্সরদের পক্ষ থেকে ছিলেন আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ফরমান আর. চৌধুরী, ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিনুল ইসলাম খান ও রিমার্ক-হারল্যান গ্রুপের ব্র্যান্ড এম্বোসেডর, চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ।
বিসিবি সভাপতি ফারুক মনে করেন, এই টুর্নামেন্টে দেশীয় ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।
“বিপিএলের আগে এই টুর্নামেন্ট দেশী ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ। আমি আশা করি ক্রিকেটাররা সে সুযোগ নেবে এবং নিজেদের মেলে ধরবে, যা কিনা দেশের ক্রিকেটকে সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। এছাড়া আমি টুর্নামেন্টের ব্রডকাস্টার টি স্পোর্টসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করবে।”
শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এনসিএল টি-টোয়েন্টি। আগামী ১১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্ট। অংশ নেবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের সাত দল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, সিলেট বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো। আট দলের লিগ পর্বের ম্যাচগুলো হবে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম ও সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম আউটার মাঠে। প্লে-অফের চারটি ম্যাচ হবে ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
সবগুলো ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের প্রথম ও একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে। এছাড়া ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ফ্যানকোড ও বিশ্বের বাকি অংশে ম্যাচগুলো দেখা যাবে টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেলে।