২৫ আগস্ট ২০২৪, ৪:৫৪ পিএম
পঞ্চম দিনের সকালের সেশনে একের পর এক উইকেট তুলে প্রায় নিশ্চিত ড্র হতে যাওয়া ম্যাচে জয়ের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ঠিক সেভাবে, যেভাবে ২১ বছর আগে এই পাকিস্তানেই বাংলাদেশের মুঠো থেকে এমনই পরিস্থিতি থেকে একাই জয় ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ইনজামাম-উল-হক। তবে এবার তার উত্তরসূরি তার পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি। মুলতানে খালেদ মাহমুদ সুজন, মোহাম্মদ রফিকদের কান্নাভেজা স্মৃতি রাওয়ালপিন্ডিতে মুশফিকুর রহিম, মেহেদি হাসান মিরাজরা ভুলিয়ে দিলেন বিজয়ের হাসিতে। এই জয়টা তাই সবদিক থেকেই অনেক হিসেব মেলানোর এক মেলবন্ধনই।
শুরুটা করা যাক ২০০৩ সালের মুলতান টেস্টের ‘জিরো টু হিরো’ ইনজামামকে দিয়েই। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে থেকেই দলে জায়গা নিয়ে প্রবল চাপের মুখে ছিলেন তিনি। চারদিকে তীব্র সমালোচনার মুখে তাকে ক্যারিয়ার বাঁচানোর শেষ সুযোগ দেওয়া হয় বাংলাদেশের বিপক্ষে। ব্যর্থ হলেই ছুড়ে ফেলা নিশ্চিত। প্রথম দুই টেস্টে মোটামুটি ভালো করলেও চাপটা ছিলোই তার ওপর। এমন সমীকরণে তৃতীয় টেস্টের চতুর্থ ইনিংস ‘ইনজি’ যখন ব্যাট করতে নামলেন, তখন ২৬১ রানের টার্গেটে পাকিস্তানের স্কোর ২ উইকেটে ৬২…
তবে মুলতান কাব্য রচনার মঞ্চ তৈরি করার মন্ত্রে একের পর এক উইকেট নিয়ে জয়ের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে ফেলে বাংলাদেশ। ১৩২ রানে পাকিস্তান হারায় ৬ উইকেট। আর অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে ২০৫ রান। জয় আর বাংলাদেশের মাঝে তখন ব্যবধান সেই ইনজামাম। উমর গুলকে নিয়ে তিনি এরপর গড়েন ৫২ রানের জুটি, যা জয় নিশ্চিত করে ফেলে। তবে এই জুটি ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ ছিল রফিকের সামনে।
রান চুরির জন্য বোলার বল ডেলিভারির আগেই নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন গুল। তবে স্পোর্টস্ম্যানশিপের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গুলকে ‘মানকাড’ না করে তাকে সতর্ক করেন রফিক। গুল শেষ পর্যন্ত দলীয় ২৫৭ রানে আউট হন। তবে বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে অপরাজিত ১৩৮ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংসে পাকিস্তানকে জেতান ইনজামাম। পরাজয়ের কষ্টে সেদিন রুমাল দিয়ে অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের চোখ মোছার দৃশ্য গোটা দেশকেই কাঁদিয়েছিল।
রফিক যদি গুলকে ‘মানকাড’ করতেন, তাহলে ম্যাচের ফলাফল একই থাকত না বাংলাদেশ জিতে যেত, তা নিয়ে তর্কের অবকাশ আছে বেশ। তবে সেই টেস্টে বল হাতে দলকে জয়ের বন্দরে প্রায় নিয়ে যাওয়ার কাজটা তিনি তো করেছিলেন বেশ ভালোভাবেই। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে এই বাঁহাতি স্পিনার প্রতিপক্ষকে ১৭৬ রানে অলআউট করায় রাখেন বড় ভূমিকা। দ্বিতীয় ইনিংসেও নিয়েছিলেন দুই উইকেট, তবে সেটাও আর যথেষ্ট হয়নি। তবে ২০২৪ সালে এসে আরেক স্পিনার মিরাজ বাংলাদেশের জয়ে রাখলেন প্রায় একই ভূমিকা।
দুই দল মিলিয়ে এই টেস্টের একমাত্র স্পেশালিষ্ট স্পিনার ছিলেন মিরাজ। পেস সহায়ক উইকেটে প্রথম ইনিংসে এক উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ এক স্পেলে শিকার করেন চাড় উইকেট। পাকিস্তানকে মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে দেওয়ায় মিরাজের স্পেল ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে ব্যাট হাতেও তো তার অবদান কম নয়। মুশফিকুর রহিমের সাথে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের সপ্তম উইকেটে গড়েন রেকর্ড ১৯৬ রানের জুটি। খেলেন ৭৭ রানের এক ইনিংস। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ায় মিরাজের ব্যাটিং বড় একটা পার্থক্যই গড়ে দেয়।
মিরাজের এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের কারণেই ইনজামামের মত ‘হিরো’ হওয়ার সুযোগ আর হয়নি রিজওয়ানের। তিনি অবশ্য কোনো চাপ ছাড়াই এই টেস্ট খেলেছেন। প্রথম ইনিংসে নট আউট থাকেন ১৭১ রানে। আচমকা পাকিস্তান ইনিংস ঘোষণা না করলে ডাবল সেঞ্চুরিতা হয়ত পেয়েও যেতেন। দ্বিতীয় ইনিংসে একের পর উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান যখন খাদের কিনারায়, তখন দেয়াল হয়ে পাল্টা আক্রমণে দারুণ সব শটে একটু একটু করে লিড বাড়ানোর কাজটা করছিলেন এই কিপার-ব্যাটার। মুলতানে ইনজামামও ঠিক একই প্রক্রিয়ায় তার ইনিংসটা বড় করেছিলেন।
তবে মিরাজের বলে অহেতুক সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে শেষ হয় তার প্রতিরোধ আর পাকিস্তানের ড্র করার আশা। আউট হয়ে অনেকটা সময় ক্রিজেই দাঁড়িয়ে ছিলেন রিজওয়ান। কী ভাবছিলেন? তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে সেই মুলতান টেস্টে বাংলাদেশের প্রতিটি খেলোয়াড় মাঠ ছেড়েছিলেন এমনই এক বুক হতাশাকে সঙ্গী করে।
তবে সেই টেস্টে বাংলাদেশকে হতাশায় নিমজ্জিত করার পেছনে একজনের অবদানও কম নয়। তিনি পাকিস্তানের সেই সময়ের অধিনায়ক রশিদ লতিফ। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি কেমন, সেসব ছাপিয়ে সেই ম্যাচের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি ‘ভিলেন’ হিসেবেই পরিচিতি পান। একই টেস্টে যেখানে নিশ্চিত আউট করার সুযোগ পেয়েও রফিক যেখানে দেখান স্পোর্টসম্যানশিপ, সেখানে রশিদ কিনা প্রতারণা করে ক্যাচ ফেলেও সেটা থেকে উইকেট আদায় করে নিয়েছেন!
বিতর্কিত সেই ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে। ২২ রানে ব্যাট করছিলেন অলোক কাপালি। পেসার ইয়াসির আলির একটি ডেলিভারি ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে। ঝাঁপিয়ে সেটা তালুবন্দি করার চেষ্টা করেন রশিদ, তবে কয়েক দফার চেষ্টায় তিনি সেটা আর পারেননি। তবে শেষ মুহূর্তে বল মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর চোখের পলকে তা তুলে নিয়ে ক্যাচের আবেদনে কাপালিকে আউটই করে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, বল মাটিতে স্পর্শ করেছিল। কাপালি সেই সময়ে যদি আউট না হতেন, বাংলাদেশের লিড আরও বাড়তে পারত। যা ম্যাচের ফলাফলও হয়ত বদলে দিতে পারত। তবে রশিদ প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় সেটা আর হয়নি।
রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের জয়ের পথে আরেকজন উইকেটরক্ষকও ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন, তবে সেটা রশিদের মত চতুরতা নয়, স্রেফ স্কিলের প্রদর্শনী দিয়েই। তিনি লিটন দাস। দ্বিতীয় ইনিংসে একটি ক্যাচ ড্রপ ছাড়া পুরো ম্যাচে অসাধারণ কিপিং করেছেন তিনি। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে সাউদ শাকিল তখন ১৪১ রানে, বোলাররা কোনোভাবেই পারছেন না তাকে ফাঁদে ফেলতে। শেষ পর্যন্ত কাজের কাজটা করে দেন লিটন।
মিরাজের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ক্ষনিকের জন্য ক্রিজের বাইরে পা চলে যায় শাকিলের। চিলের মত ছো মেরে বলটা ধরে সেই সময়ের মধ্যেই তাকে স্টাম্পড করে ফেলেন লিটন। রিপ্লেতে যা দেখে গেছে, তাতে শাকিলের পা আর লাইনের মাঝে ব্যবধান ছিল সবচেয়ে সূক্ষ্ম। একটু এদিক-ওদিক হলেই বেঁচে যেতেন শাকিল। এই আউটে ভাঙে শাকিল ও রিজওয়ানের ২৪০ রানের জুটি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই লিটনের করা এই দুর্দান্ত স্ট্যাম্পিংও ম্যাচের গতিপথ বদলে রাখে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
পাকিস্তানের মাটিতে সব ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের ক্ষণে তাই সমর্থকদের মুলতান টেস্ট ফিরে আসাটা অবধারিত। সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে রাওয়ালপিন্ডিতে পাওয়া এই জয়টি অন্তত আনন্দের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেকটাই। অনেক হিসেব যে মেলানো গেছে এই জয়ের মধ্য দিয়েই।
নাজমুল হাসান শান্তর দল তাই একটা কুর্নিশ তো পেতেই পারেন, মুলতান দুঃখ ভোলানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ২.০ কে সব ধরণের খেলা মিলিয়ে একটা জয় উপহার দেওয়ার জন্যও।
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩:৫০ এম
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১:০০ এম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৭:১৫ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৫:৩৮ পিএম
প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিনেও যে উইকেটে বিশেষ জুজু নেই, সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার, এমনকি টেল এন্ডাররাও দেখিয়েছেন বেশ। আর সেটা কাজে লাগিয়ে জাস্টিন গ্রিভসের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ক্যারিবিয়ানরা পেল বিশাল স্কোর। ভারত সফর থেকেই টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের ব্যাটারা আরও একবার পারলেন না শুরুটা ভালো এনে দিতে। দুই দিন পার হওয়ার পর তাই ভালোভাবেই ম্যাচের লাগাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে।
অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসের বাংলাদেশ করেছে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ৪০ রান। দুই অপরাজিত ব্যাটার হলেন মুমিনুল হক (৭) ও শাহাদাত হোসেন দিপু (১০)। পিছিয়ে আছে ৪১০ রানে। ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দেড় দিনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান করেছিল ধীরগতিতেই। সেটা ধরে রেখে বাংলাদেশও ইনিংস শুরু করে স্বভাবজাত ব্যাটিংয়েই। প্রথম সাত ওভারে আসে মাত্র ৫ রান! অষ্টম ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান জাকির হাসান। পরের আলজারি জোসেফের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তবে বল তালুবন্দি করতে পারেননি ফিল্ডার, বেঁচে যান তরুণ এই ওপেনার। তবে সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।
চমৎকার এক স্পেলে প্রথম ছয় ওভারে তিন মেডেন দেওয়া জেডেন সিলসের এক ওভারে দুই চার মেরে কিছুটা আগ্রাসনের আভাস ছিল জাকিরের ব্যাটে। তবে সেই ওভারেই অফস্ট্যাম্পের বাইরেরর বল টেনে খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান ১৫ রানে।
পাঁচ রানে জীবন পাওয়া জয় আউট হন একই স্কোরে। আলজারির বলেই প্রায় একই ডেলিভারিতে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে দলে জায়গা পাওয়া তরুণ দিপু প্রথম ১৬ বলে করেন এক রান। এরপর চার মেরে কিছুটা চাপ সরান। অন্যপ্রান্তে মুমিনুল একপ্রান্ত আগলে রাখার কাজটা সামলান ঠিকঠাকভাবেই। তাতে দিনের খেলা শেষের আগে আর বিপদ হয়নি।
তবে দিনের আগের অংশে বাংলাদেশের সর্বনাশ করেন গ্রিভস ও কেমার রোচ। হাসান মাহমুদের দারুণ এক স্পেলে শুরুতেই দুই উইকেট পেয়ে গিয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজের দল। তবে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা ক্রমেই কমিয়ে এনেন গ্রিভস-রোচ জুটি। কয়েক দফায় সুযোগ দিলেও বেঁচে যান দুজনই। সেটার পাশাপাশি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করে ধীরে ধীরে তার জমিয়ে তোলেন জুটি।
চা বিরতির আগে ভাঙে দুর্দান্ত এই জুটি। ইতি টানেন সেই হাসানই। তবে তার আগে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৪০ রানের রেকর্ড গড়েন এই দুজন। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সাত উইকেটের পরও এটাই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান করেছিলেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খান।
হাসানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন রোচ। টেস্ট ক্রিকেটে এটাই তার এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। তিনি মাইলফলক মিস করলেও গ্রিভস সেই ভুল করেননি। দারুণ সব শটের এক ইনিংসকে পূর্ণতা দেন শতকে রুপ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন চার চারে ১১৫ রানে। ৮৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে হাসান ছিলেন বাংলাদেশের সেরা বোলার।
প্রথম সেশনে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশ রানের মধ্যেই আটকে দেওয়ার আশা যুগিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে টেল এন্ডার কেমার রোচকে নিয়ে জাস্টিন গ্রিভস গড়ে তুললেন অসাধারণ প্রতিরোধ। একজন করলেন সেঞ্চুরি, আর দুজনে মিলে অষ্টম উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন বেশ শক্ত অবস্থানে। এতে ভর করে প্রথম ইনিংসে বড় স্কোরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের চা বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১৩৯ ওভারে ৮ উইকেটে ৪১৫ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (১০৯) ও জেডেন সিলস (১)।
২৬১ রানে পতন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সপ্তম উইকেটের। কে ভেবেছিল, পরের উইকেটের জন্য রীতিমত ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার দশা হবে বাংলাদেশের বোলারদের? গ্রিভস ব্যাটিংটা ভালো জানলেও রোচও যে যেভাবে ‘ব্যাটার’ হয়ে যাবেন, সেটা না ভাবাটাই ছিল স্বাভাবিক।
অথচ অষ্টম উইকেটে এই দুজন মিলে খেললেন চিরায়ত টেস্ট মেজাজে। রান বের করলেন দেখেশুনে খেলে। বোলারকে প্রয়োজন মত দিয়েছেন সম্মান, আবার বাজে বল পেলেই মেরেছেন বাউন্ডারি। সিঙ্গেলস, ডাবলসে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন ফিল্ডারদেরও। সেই প্রক্রিয়ায় তিনশ ছাড়িয়ে দল পার করে ফেলেছে চারশ রানও।
শেষ পর্যন্ত চা বিরতির খানিক আগে জুটিতে ভাঙন ধরিয়েছেন দিনের সেরা বোলার হাসান মাহমুদ। তবে তার আগে গ্রিভস-রোচ জুটি যোগ করে ফেলেন ১৪০ রান, যা এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আর টেস্ট ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি এখন এটি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটিটি ছিল জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিক ও ট্রাভিস ফ্রেন্ডের। ২০০১ সালে তারা যোগ করেছিলেন ১০৮ রান। গ্রিভস-রোচের জুটি সাত উইকেটের পর সব মিলিয়েও এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান ছিল শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খানের।
হতাশাময় সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর চারশ পার করার পরই রোচকে ফেরান হাসান। বোল্ড করেন দেন ডানহাতি ব্যাটারকে। তবে তার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। অন্যপ্রান্তে সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল হয়নি গ্রিভসের। ক্যারিবিয়ানরা প্রথম ইনিংসে আরও কিছু রান যোগ করার জন্য শেষ সেশনে তাকিয়ে থাকবে তার দিকেই।
প্রথম দিনের শেষ দিকে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে অনেকটাই ভারসাম্য এনেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেই ধারাটা বজায় রেখে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে দারুণ এক স্পেলে হাসান মাহমুদ এনে দিলেন জোড়া উইকেট। তবে এরপরই যেন কমে গেল সফরকারীদের বোলিংয়ের ধার। সেই সুযোগে অষ্টম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন জাস্টিন গ্রিভস ও কেমার রোচ। বড় স্কোরের পথে তাতে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের লাঞ্চ বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১১০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৩৬ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (৬৩) ও রোচ (১৯)।
আরও পড়ুন
হাসানের প্রথম টেস্ট উইকেট, শক্ত ভিতে শ্রীলঙ্কা |
অথচ প্রথম ঘণ্টায় হাসানের স্পেল বাংলাদেশ শিবিরে আশা জাগিয়েছিল প্রতিপক্ষকে ২৮০-৩০০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলার। দিনের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই গ্রিভসের বিরুদ্ধে হাসানের ছিল কট বিহাইন্ডের আবেদন। তবে সাড়া মেলেনি। তবে তিন বল বাদে জোশুয়া দা সিলভাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তরুণ এই ডানহাতি পেসার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি এই কিপার-ব্যাটারের।
পরের ওভারের প্রথম বলে হাসানকে চার মারেন আলজারি জোসেফ। পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে। তবে এই উইকেটে বোলারের চেয়ে বড় কৃতিত্ব পেতে পারেন গালিতে দাঁড়ানো জাকির হাসান। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে নেন অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ। ওই ওভারেই রোচকে প্রায় ফিরিয়েই দিচ্ছিলেন হাসান। তবে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান ক্যারিবিয়ান পেসার।
আরও পড়ুন
হাসানের তোপ সামলে অশ্বিন-জাদেজার ব্যাটে চড়ে শক্ত অবস্থানে ভারত |
দুই ব্যাটার মিলে এরপর জুটি গড়েন ধীরলয়ে। ৫ রানে থাকতে তাইজুল ইসলামের বলে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন রোচ। ডিপে থাকা হাসান দৌড়ে গিয়ে পাননি বলের নাগাল, বাংলাদেশ হারায় উইকেটে সুযোগ। অন্যপ্রান্তে দেখেশুনে খেলা গ্রিভস। প্রায় নিখুঁত এই ইনিংস খেলার পথে তিনি পরিচয় দেন দুর্দান্ত টেম্পারমেন্টের, যা বাংলাদেশ বোলারদের কাজটা আরও কঠিন করে দেয়।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের একটা বড় অংশ জুড়ে রানের জন্য করতে হয়েছে সংগ্রাম। সেই ম্যাচে তাও একটা লড়াকু স্কোর ছিল দলটির। তবে নিউইয়র্ক স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের দলের কেউই পারলেন না আলো ছড়াতে ব্যাটে বা বলে। মামুলি পুঁজি নিয়ে সামান্যতম লড়াইও তাই জমাতে ব্যর্থ হল বাংলা টাইগার্স।
আবুধাবি টি-টেনের শনিবারের ম্যাচে বাংলা টাইগার্স হেরেছে ৭ উইকেটে। তাদের করা ৮ উইকেটে ৬৮ রান ৪ ওভার ও ২৪ বল হাতে রেখেই পাড়ি দিয়েছে নিউইয়র্ক।
শুরুতেই দুই ওপেনার হারানো বাংলা টাইগার্সের বড় আশা ছিলেন দাসুন শানাকা। আগের ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ রান করা এই শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার এদিনও ছন্দেই ছিলেন। তবে মাত্র ১০ ওভারের খেলায় যে ধরনের ব্যাটিং প্রয়োজন, সেটা করতে পারেননি। ১৯ বলে ২ ছক্কায় করেন মোটে ২২।
আরও পড়ুন
সাকিবে ট্রফি জিতবে বাংলা টাইগার্স? |
তবে দলকে বিপদে ফেলেন মূলত দুই তারকা স্পিন অলরাউন্ডার লিয়াম লিভিনস্টোন ও ইফতিখার আহমেদ। যাওয়া-আসার মিছিলের মধ্যে এক সাকিবই যা কিছুটা লড়াই করেন। খেলেন ১২ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ১৯ রানের ক্যামিও। তবে তাতেও কাজের কাজ হয়নি আর। তার দল বোর্ডে জমা করতে পারে মামুলি স্কোর।
এরপর বল হাতে বলতে গেলে প্রথম ওভারেই আশা মিলিয়ে যায় দলটির। ওয়াইড-নো বলময় ওভারে মোট ১২টি ডেলিভারি করা ডেভিড পেইনে দেন ১৭ রান। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে এভিন লুইসকে ফেরান ইমরান তাহির।
ছুটতে থাকা নিউইয়র্ককে জোড়া আঘাতে ধাক্কাটা দেন সাকিবই। প্রথম বলেই ডেল্যাড ব্রেভিসকে ফেরানোর পর আসিফ আলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এক বল বাদে। সেই ওভারে বাংলা টাইগার্স অধিনায়ক দেন মাত্র দুই রান।
আরও পড়ুন
সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলাতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি বিসিবি, বললেন ফারুক |
তবে হার আটকাতে তা যথেষ্ট হয়নি। চার ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেন নিউইয়র্ক।
দেশের ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির ঝড় তুলতে আসছে আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক এনসিএল টি-টোয়েন্টি পাওয়ার্ড বাই ওয়ালটন। সিলভার স্পন্সর হিসেবে থাকছে লিলি ময়েশ্চারাইজ লোশন। শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ, পরিচালক ফাহিম সিনহা। স্পন্সরদের পক্ষ থেকে ছিলেন আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ফরমান আর. চৌধুরী, ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিনুল ইসলাম খান ও রিমার্ক-হারল্যান গ্রুপের ব্র্যান্ড এম্বোসেডর, চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ।
বিসিবি সভাপতি ফারুক মনে করেন, এই টুর্নামেন্টে দেশীয় ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।
“বিপিএলের আগে এই টুর্নামেন্ট দেশী ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ। আমি আশা করি ক্রিকেটাররা সে সুযোগ নেবে এবং নিজেদের মেলে ধরবে, যা কিনা দেশের ক্রিকেটকে সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। এছাড়া আমি টুর্নামেন্টের ব্রডকাস্টার টি স্পোর্টসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করবে।”
শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এনসিএল টি-টোয়েন্টি। আগামী ১১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্ট। অংশ নেবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের সাত দল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, সিলেট বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো। আট দলের লিগ পর্বের ম্যাচগুলো হবে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম ও সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম আউটার মাঠে। প্লে-অফের চারটি ম্যাচ হবে ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
সবগুলো ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের প্রথম ও একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে। এছাড়া ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ফ্যানকোড ও বিশ্বের বাকি অংশে ম্যাচগুলো দেখা যাবে টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেলে।