জ্যামের শহর আর বসবাস অযোগ্য শহরের র্যাংকিংয়ে ঢাকা শহর অসংখ্য বার এক নম্বরেই ছিল। হাজারটা মন খারাপের খবরের একটা দেশের জনগণ রোজ বুধবার ধ্রুবকের মতো একটা বিষয়ে এক নম্বরে ঠিকই থাকত। আইসিসির অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে এক নাম্বার জায়গাটা যে সাকিব আল হাসানের জন্যই বরাদ্ধ থাকত।
‘থাকত’ বলছি। এই বুধবার থেকে ‘সাকিবই এক নাম্বার’ এই সত্যটা আর সত্য নয়। সাকিব আর এক নম্বর নন। বুধবার ক্রিকেটারদের র্যাংকিংয়ের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রকাশ করেছে আইসিসি। টি-টোয়েন্টির অলরাউন্ডারদের মধ্যে চার ধাপ পিছিয়ে এখন পাঁচে বাংলাদেশ পোস্টার বয়।
এক ঝড়ে সাকিব পাঁচে নেমেছেন বটে। গেলো ১২ বছরের এটাই সর্বনিম্ন র্যাংকিং সাকিবের। অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার শেষবার পাঁচে ছিলেন সেই ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে। ৪ হাজার ২৭৮ দিন আগের কথা। হাজার হাজার দিন সাকিব স্রেফ এক নম্বরেই থাকতে পছন্দ করতেন।
আরও পড়ুন: বোলারদের র্যাংকিংয়ে বড় উন্নতি মুস্তাফিজ-তাসকিনদের
অন্য একটা ফ্যাক্ট যোগ করি। টেনিস কিংবদন্তি রজার ফেদেরার প্রায় ২৩৭ সপ্তাহ র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে ছিলেন। সেখানে সাকিব শুধু ওয়ানডে অলরাউন্ডার হিসেবেই ৩২৪ সপ্তাহের বেশি এক নম্বর স্থানে ছিলেন। তুলনা নয়, এটা কেবল সাকিবের র্যাংকিংয়ের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতেই বলছি।
ক্রিকেট ইতিহাসে অলরাউন্ডারের কমতি নেই একেবারেই। তবে ৩০০ সপ্তাহের বেশি এক নম্বরে থাকা বড্ড কঠিনই ছিল। তবে সাকিব ঠিকই সেই কাজটা করে দেখিয়েছেন এবং নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। সাকিবের সম-সাময়িক বা আগে সাবেক হওয়া কিছু ম্যাচ উইনার অলরাউন্ডারের নামের তালিকা দেখলে তা আরও পরিস্কার হবে। জ্যাক ক্যালিস (২০৩ সপ্তাহ), শন পোলক (১৩৮ সপ্তাহ), ফ্লিনটফ (১১৩ সপ্তাহ) ছিলেন ওয়ানডের সেরা।
বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবই তিন ফরম্যাটের শীর্ষে আহরণ করেছিলেন। ছিলেন যেখানে অনেকটা সময়। আপাতত কোথায় নেই আর এক নম্বরে। সব কিছুরই যে একটা শেষ থাকে!
ঐ যে জ্যামের শহরের শীর্ষস্থানে, বসবাস অযোগ্য শহরের দেশের নাগরিক হয়ে আপনি অনেক রাত ঘুমাতে গেছেন, অনেক ভোরের ঘুম ভেঙ্গেছে। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, কমপক্ষে ২ হাজার ২৬৮ দিন আপনি ঘুমিয়েছেন বিশ্বের সেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডারের দেশের নাগরিক হয়ে। আপনি কমপক্ষে ১ হাজার ১৬৮টা ভোরের সকাল দেখেছেন টেস্ট ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারের দেশের নাগরিক হয়ে। অবশ্য তাতে আর কীইবা আসে যায়!
জনপ্রিয় উপস্থাপক বিক্রম সাঠে, শচীন টেন্ডুলকার নিয়ে একটা দারুণ বই লিখেছিলেন। বইটার নামের বাংলা তর্জমা, 'শচীন যেভাবে আমার জীবন ধ্বংস করেছে... কিন্তু জীবনের সব ক্রিকেটীয় পরীক্ষায় পাস করার অনুমতি দিয়ে গেলো...'
সাকিব এই বাংলায় কাউকে জীবনের সব ক্রিকেটীয় পরীক্ষায় পাস করার অনুমতি দিয়ে যেতে পারেননি। পারেননি আরো অনেককিছুই। স্যার নেভিল কার্ডাসের মতে, ‘মানুষ স্কোরকার্ড ভুলে যায়। বেঁচে থাকে মূহুর্ত…’ সাকিব হয়তো এমন কোনো মূহুর্তও অনেক ক্রিকেট প্রেমীকে দিতে পারেননি। নাহয় বলুন, সাকিবের অবসরের এপিটাফ এখনই লিখে কেন ফেলবেন অসংখ্যা মানুষ!
সাবেক অজি ফাস্ট বোলার আর্নি ম্যাককরমিকের কথাটা জানেন কিনা! নিজের অবসর নিয়ে বলেছিলেন ‘'যখন একটা বুট খোলার আধা ঘণ্টা পর আরেকটা বুট খোলা হয়, বুঝতে হবে অবসর নেওয়ার সময় হয়ে গেছে। বয়স হয়ে গেলে তিনটা জিনিস ঘটে। মানুষের নাম মনে থাকে না... আর দুটি কী, আর দুটি কী...আমি ভুলে গেছি।’ ৩৭ বছর ৮০ দিন বয়সের বিশ্বের সাবেক নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিবের মানুষের নাম মনে থাকে কি না কে জানে… তবে তাকে ভুলে যাওয়াও কী সম্ভব?
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৮ দিন আগে