“সামনে আসবা, আসো!” - কথাটা নেটে তানজিদ তামিমকে বলছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বড় ভাইয়ের পাতা ফাঁদে পাও দিলেন তানজিদ। পরের বলটাতেই সামনে এগিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ উঠলো। ছোট ভাইকে বোকা বানিয়ে মিরাজের উল্লাস,”কীরে, আউট হয়ে গেলি!”
তানজিদও সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন। পরের কয়েকটা বল আর মিরাজের কথায় কান দিলেন না। নিজের মত করেই খেললেন। এরপর একটা বল স্লটে পেয়ে বড় শট খেলতেও দ্বিধা বোধ করেননি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি ঘেষা নেট থেকে বলটা পেরিয়ে গেল সেন্ট্রাল উইকেটও।
এবার খানিকটা টিপ্পনী কেটেই মিরাজকে জিজ্ঞেস করলেন, ”ভাই, এটা কয় রান?” মিরাজও ছোট ভাইকে রান দিতে কিপ্টেমি করেননি। বললেন, ”এইটা ১২ হবে তামিম।“ আর কিপ্টেমি করবেনই বা কেন? ম্যাচে তানজিদ রান করলে তো বাংলাদেশেরই লাভ!
অনুশীলনে যতই খোঁচাখুঁচি চলুক, ম্যাচে দল হিসেবে খেলতে চায় বাংলাদেশ। সেই কথাটাই সংবাদ সম্মেলনেও মনে করিয়ে দিয়ে গেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
আরও পড়ুন: অনুশীলনে পেসারদের ছুটি, প্রথম ওয়ানডেতে কারা থাকছেন বোলিং আক্রমণে?
“সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দল হিসেবে আমরা খেলছি কিনা। আমরা জিতি কিংবা হারি। পরের বিশ্বকাপ আসা পর্যন্ত এটাই পরিকল্পনা থাকবে যে দল হিসেবে কতটা ভালো খেলছি এবং একজন আরেকজনকে কতটা সমর্থন দিচ্ছি। বিশেষ করে কারো যদি খারাপ সময় যায় ওই খেলোয়াড়কে আমরা কীভাবে ব্যাক করছি। পরের তিন বছরে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা একসঙ্গে কতটা আছি।“
চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবার আগের দিন লম্বা সময় একই নেটে অনুশীলন করেছেন তানজিদ তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। নতুন বলে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন তানজিদ। ফলে আগামীকাল প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ওপেনার হিসেবে দেখা যেতে পারে তাকে।
একই মাইন্ড গেম মিরাজ খেলতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সাথেও। শান্ত অবশ্য বন্ধুর চালাকি আগেই বুঝতে পেরেছেন। মিরাজের বল দেখে শুনে খেলেই নেট সেশন পার করেছেন।
কোনভাবেই শান্তর উইকেট না নিতে পারা মিরাজ হতাশ হয়ে বলেই ফেললেন, ”কীরে দোস্ত, তুই বেরই হইতেসস না। ঘটনা কী?” বন্ধুকে স্নায়ুযুদ্ধে পরাজিত করতে পারা শান্ত মুখে কিছু বললেন না। মুচকি হেসেই উত্তরটা বুঝিয়ে দিলেন।
একইসাথে বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলেছেন এই দুজন। ফলে একে অপরকে ভালো করেই চেনা শান্ত আর মিরাজের। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মিরাজের নেতৃত্বে খেলেছিলেন শান্ত। জাতীয় দলে অবশ্য এখন চরিত্রটা পাল্টে গেছে।
তবে ওয়ানডে দলে মিরাজের গুরুত্বটা ভালো করেই জানেন শান্ত। বল হাতে তিনি এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মার। ব্যাট হাতেও এখন দারুণ ফর্মে তিনি। ফলে এই সিরিজে শান্ত’র সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা হতে পারেন মিরাজ।
সেকারণেই হয়তো অনুশীলন শেষেও দুই বন্ধুর আলোচনা চললো খানিকক্ষণ। শ্রীলঙ্কাকে ওয়ানডে সিরিজ হারাতে হলে তাদেরকেই তো রাখতে হবে বড় ভূমিকা।
দিন যত যাচ্ছে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসর নিয়ে উন্মাদনা বেড়েই চলেছে। নানা আয়োজনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চেষ্টা করছে এবারের আসরকে সবচেয়ে স্মরণীয় করে রাখতে। সেই ধারায় এবারের বিপিএলের মাসকটও বেছে নেওয়া হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ডানা ৩৬। শান্তির প্রতীক হিসেবে সেখানে দেখা যাবে একটি সুসজ্জিত পায়রাকে।
বিপিএলের মাসকটটিকে স্বাধীনতা এবং ক্রীড়া চেতনার স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ডানা বিস্তৃত, আত্মবিশ্বাসী, আনন্দদায়ক হাসিতে পায়রাটি গ্রাফিতি শিল্পে সজ্জিত একটি ক্রিকেট ব্যাট ধরে আছে। এর পালকের রঙিন গ্রাফিতি প্যাটার্ন এবং ব্যাট আমাদের স্বাধীনতা, ইতিবাচক শক্তি এবং সাংস্কৃতিক গর্বের থিম উপস্থাপন করে। এই প্রাণবন্ত মাসকটটি একটি উজ্জীবিত চেতনা বহন করে, যা ক্রিকেট নিয়ে রোমাঞ্চ এবং উদযাপনকে ফুটিয়ে তোলে।
আরও পড়ুন
বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর ডাচ-বাংলা ব্যাংক |
এই পায়রার মাসকটটিকে স্বাধীনতার চেতনার সাথে মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা খেলাধুলার একটি অপরিহার্য অংশ এবং ক্রিকেট সংস্কৃতিরও একটি মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। পায়রাকে শান্তি এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, যা একটি জাতির শক্তি এবং ঐক্যকে প্রতিফলিত করে। মাসকটের গ্রাফিতিটি আধুনিক, তারুণ্যের স্পর্শময়, যা সমসাময়িক ক্রিকেট ভক্তদের প্রগতিশীল, প্রাণবন্ত প্রাণশক্তির সাথে আমাদের স্বাধীনতার ঐতিহ্যগত মূল্যবোধকে একসুতোয় গেঁথেছে।
এবারের বিপিএল শুরু হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। টুর্নামেন্টের পর্দা উঠবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে সাতটি দল -
রংপুর রাইডার্স, ঢাকা ক্যাপিটালস, চিটাগং কিংস, দুর্বার রাজশাহী, ফরচুন বরিশাল, খুলনা টাইগার্স ও সিলেট স্ট্রাইকার্স।
দীর্ঘদিন ধরে আছেন জাতীয় দলের বাইরে। খেলে যাচ্ছিলেন কেবল ঘরোয়া ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস ঘোষণা দিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের। বুধবার নিজেই নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।
নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা জানিয়েছেন ইমরুল। সাদা বলের ক্রিকেটে অনেকটা সময় ধরেই বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকলেও এই দুটিতে খেলার দুয়ার খোলা রেখেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
আরও পড়ুন
‘অভাগা যেদিকে চায়, সাগর (ইমরুল) শুকিয়ে যায়’ |
২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে এই ফরম্যাটে পথচলা শুরু হয় ইমরুলের। শেষবার খেলেছেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে। মাঝের এই সময়ে খেলেছেন ৩৯টি ম্যাচ। ৭৬ ইনিংসে ২৬.২৮ গড়ে রান করেছেন ১ হাজার ৭৯৭। সেঞ্চুরি তিনটি আর ফিফটি চারটি।
টেস্টে ইমরুলের সর্বোচ্চ ইনিংসটি এসেছিল ২০১৫ সালে। খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র হওয়া ম্যাচে খেলেছিলেন ১৫০ রানের দারুণ এক ইনিংস। ওই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের সাথে ওপেনিং জুটিতে ইমরুল যোগ করেছিলেন রেকর্ড ৩১২ রান।
আরও পড়ুন
ছয়ের রেকর্ডে তামিমের সঙ্গী ইমরুল |
চলতি এনসিএলে খেলছেন ইমরুল। শেষ ম্যাচে সিলেটের বিপক্ষে দুই ইনিংসে করেছেন যথাক্রমে শূন্য ও ৭১ রান।