১১ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০০ এম
চাঁদ রাতে বাংলাদেশের খেলা হয়না অনেক বছর হয়ে গেল। তবে এখনও এই দুই ঈদের চাঁদ রাত এলেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে হানা দেয় ২১ বছর আগের এক তেতো স্মৃতি, যা চাইলেও হয়ত আপনি, আমি ভুলতে পারব না অনেক বছর পরেও। বাংলাদেশ জাতীয় দল সেই ঈদের আগের গোটা দেশকে যে শোকের পাথর করেছিল, সেই ক্ষত আজও যেন ভীষণ জীবন্ত। রাত পার হলেই আরেকটি রোজার ঈদ, এমন ক্ষণে তাই না চাইলেও ঘুরেফিরে চলে আসে ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডার বিপক্ষে সেই ভূতূড়ে ম্যাচের স্মৃতি।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলেছিল আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে। সেই আসরে পাকিস্তান, স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেখিয়ে পরের বছর টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যায় বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আর টেস্ট খেলুড়ে দেশ হওয়ায় ২০০৩ বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের সমর্থকদের ছিল অনেক আশা। মনে আছে, সূচি ঠিক হওয়ার পর সব জায়গায় সবাই একটা বিশেষ ম্যাচ আলাদাভাবে ক্যালেন্ডারে মার্ক করে রেখেছিলেন। কোরবানির ঈদের চাঁদ রাতের ম্যাচ যে পুঁচকে আর আনকোরা কানাডার বিপক্ষে। কারণটা স্পষ্ট, বাংলাদেশের নিশ্চিত আর সহজ একটা জয় দেখে ঈদের দিনের খুশির আমেজ বরণ করা। কিন্তু কে জানত, সেই ম্যাচটিই যে দেশবাসীর ঈদ ‘মাটি’ করার উপলক্ষ্য হতে যাচ্ছে!
আফ্রিকায় হওয়া সেই আসরে ১১ ফেব্রুয়ারির সেই ম্যাচে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল ঠিকঠাকই৷ ১৮ রানে প্রথম জন ডেভিসনকে ফেরান তরুণ মাশরাফি বিন মোর্তজা। অন্য বোলাররাও ভালোই বোলিং করছিলেন, তবে এর মাঝেই ৪২ রানের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেন ইয়ান বিলক্লিফ৷ কঠিন উইকেটে দুই দল মিলিয়ে তার ইনিংসটি ছিল সর্বোচ্চ। বর্তমান নির্বাচক ও সাবেক ওপেনার হান্নান সরকারের সরাসরি থ্রোয়ে রান-আউট হয়ে শেষ হয় বিলক্লিফের ইনিংস।
১৩৪ রানে তার ফেরার পর বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল কানাডাকে অল্পেই গুটিয়ে ফেলার। কিন্তু শেষের দিকে কিছুটা গা-ছাড়া বোলিংয়ে অলআউট হওয়ার আগে ১৮০ করে ফেলে কানাডা।
দুটি করে উইকেট নেন মাশরাফি ও সানোয়ার হোসেন। একটি করে শিকার ধরেন তাপস বৈশ্য, মুনজুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ রফিক ও অলক কাপালি।
বাংলাদেশ তখনও দল হিসেবে খুন বড় না হলেও কানাডার বিপক্ষে এই রান তাড়া করাটা মামুলি বলেই মনে হচ্ছিল। তবে রান তাড়ায় শুরু থেকেই তালগোল পাকানোর শুরু হয় ব্যাটারদের। ৭৬ রানেই চলে যায় ৪ উইকেট। হান্নানের ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান।
এরপরও চিন্তার উদ্রেক কমই ছিল, কেননা সানোয়ার ব্যাট করছিলেন দারুণ ছন্দে। কাপালিকে নিয়ে গড়েন ৩১ রানের মাঝারি এক জুটি। বাংলাদেশের পথ হারানোর শুরু সানোয়ারের আউট হওয়ার মধ্য দিয়েই। ২৪ বলে তিনি করেন ২৫ রান।
বাকিটা ছিল স্রেফ দুঃস্বপ। বিস্ময় নিয়ে টিভি সেটের সামনে, রাস্তায়, চায়ের দোকানে সবাই দেখলেন বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধস। ১০৬ থেকে ১২০ রানের মধ্যেই টপাটপ চলে যায় ৫ উইকেট। ব্যাটাদের মধ্যে কাউকেই ক্রিজে স্বাচ্ছন্দ্যে দেখা যায়নি। কানাডার অখ্যাত সব বোলারদের বিপক্ষে মাত্র ২৮ ওভারেই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
হাবিবুল বাশার, আল শাহরিয়ার রোকন, খালেদ মাসুদ পাইলটদের মূল সর্বনাশটা করেন অস্টিন কড্রিংটন। তার নিরীহ মিডিয়াম পেসেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। ৯ ওভারে ৩ মেইডেনে মাত্র ২৭ রানে তার শিকার ৫ উইকেট। কড্রিংটনের মাত্র ৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সেটিই ছিল সেরা বোলিং ফিগার।
কানাডার কাছে বিস্ময়কর সেই হার পরদিন ঈদের আবহে বড় প্রভাবই ফেলেছিল। আড্ডায়-আলোচনায় বারবার আসছিল বাংলাদেশের ভরাডুবির গল্প। মনে পড়ে যায় এক রিক্সাচালকের বিখ্যাত বাণী, “কোরবানির ঈদে আমাগো সব আনন্দের কোরবানি দিল ক্রিকেট টিম।”
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সেই বিশ্বকাপ পরে উপহার দেয় আরও হতাশা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আরও একটি ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারতে হয় কেনিয়ার কাছে, কানাডার মত যে ম্যাচটি সবাই নিশ্চিত জয় ধরেই নিয়েছিল আসর শুরুর আগে।
২ দিন আগে
২ দিন আগে
৩ দিন আগে
৫ দিন আগে
৬ দিন আগে
৮ দিন আগে
৯ দিন আগে