২৫ জুন ২০২৪, ৪:২৫ পিএম
নাহ, বাংলাদেশের সাথে পর্তুগালকে মোটেও মেলানো হচ্ছে না। যে শিরোনামটা দেখছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাশাপাশি একই সময়ে ইউরো চলছে বলেই সেটা দেওয়া হয়নি মূলত। এর সাথে বড় একটা সংযোগ রয়েছে এবারের ইউরোর ফরম্যাটও, যেখানে ফিরে এসেছে একটা গ্রুপের কোনো দলের কোনো ম্যাচও না জিতে নকআউট পর্বে খেলার। ফরম্যাটের যে ফাঁকফোকর গলিয়ে জোড়াতালি দিয়ে গ্রুপ পর্ব পার করা পর্তুগাল শেষ পর্যন্ত জিতে ফেলেছিল ইউরো ২০১৬। আচ্ছা থাক, অতদূর নাই যাই বরং। যাদের নিয়ে মূল আলোচনা, তারা নিজেরাই তো মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে খাঁচাবন্দী হয়ে থাকতে চায়!
পর্তুগাল সেবার গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে ছিল খাঁদের কিনারায়। তবে শেষ ম্যাচে কোনোমতে ড্র করে ফেলে তারা। গ্রুপের তৃতীয় হওয়া সেরা চারটি দলের একটি হয়ে তাতে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর দল চলে যায় পরের রাউন্ডে। বাকিটা তো যেমনটা বলা হয়, ইতিহাস…
বাংলাদেশের সামনেও কী নতুন করে ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল না? সুপার এইটে এসে একটা দলের কোচ সরাসরি ঘোষণা করে দিলেন, যথেষ্ট হয়েছে। এখন যা পাবো তাই বোনাস। তার দল দুই ম্যাচে স্রেফ উড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কাছে। বলা ভালো, মাঠে নামার আগেই যেন হেরে বসেছিল বাংলাদেশ। এরপরও অভাবনীয়ভাবে আফগানিস্তান হারিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া, রোহিত শর্মা তুললেন স্মরণীয় এক ঝড়, যা অজিদের হারানোর পাশাপাশি বাংলাদেশকেও করে দিল সুযোগ - আফগানদের সমীকরণ মেনে হারাও আর ইতিহাস রচনা করো।
এরপর আফগানিস্তানের ব্যাটাররাও পারলেন না দাপট দেখাতে। বোলাররা এমন একটা টার্গেট এনে দিলেন, বিশ্বাস ও সাহস রেখে ব্যাটিং করলে ১২ ওভারে সেই রান আপনি তাড়া করতে পারবেন অধিকাংশ দিনেই। কিন্তু পুরো দুনিয়া আপনার পাতে খাবার তুলে দিলেও আপনি যদি খাবারটা নাই হজম করতে পারেন, তাহলে তো সব আয়োজনই বৃথা। বাংলাদেশ দলের অবস্থাটা ঠিক তেমনই হয়েছে গোটা ইনিংসে।
এই ফরম্যাটে যিনি দলের সেরা ব্যাটার, তিনি নামলেন ছয়ে! যার এই ফরম্যাটে বিশেষ করে এই ম্যাচে কোনোভাবেই পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং করা উচিত নয়, তিনি নামলেন তিনে। আর ক্রমশ ব্যাটিং করতেই ভুলে যাওয়া ব্যাটার নামলেন পাঁচে! যার খ্যাতি ফিনিশার হিসেবে, তিনি ম্যাচের এমন সময়ে এমন গা বাঁচানো ব্যাটিং করলেন, তাতে প্রশ্ন জাগতেই পারে, দল বা তিনি নিজেও কি একটিবার সেমিফাইনাল খেলার আশা করেননি?
অবশ্য দলপতি নাজমুল হোসেন শান্ত যা বলেছেন, তাতে নির্দিষ্ট কোনো ব্যাটারকে দোষারোপ করাটা অন্যায়ই বটে। প্রথম তিন উইকেটে মেরে খেলা, আর সেটা না হলে সেমিফাইনালের আশা বাদ দিয়ে জয়ের জন্য খেলা - এটাই নাকি চাওয়া ছিল বাংলদেশ দলের। আর সেটা ব্যাটিং নামার আগেই! নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ৬৩ বলে আপনাকে করতে হবে ১১৬ রান, সেটা করার আশা আপনি স্রেফ তিন উইকেটেই বিসর্জন দিয়ে দিলেন! পর্তুগাল ফুটবল দলের কথা বলছিলাম, তাদের ক্রিকেট দলকেও যদি আপনি একই জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিন, এটা নিশ্চিত তারাও প্রাণপণ চেষ্টা করবে। মেরে খেলবে প্রথম বল থেকে। কোনোভাবেই ১৯ বলে ৪৩ প্রয়োজন থাকা অবস্থায় পাঁচটা বল ডট দেবে না!
কিন্তু বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে বাংলাদেশ ঠিক সেটাই করেছে। লিটন দাস প্রথম ওভারে যেভাবে চার-ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল তিনি সেমির স্বপ্ন নিয়েই ব্যাট চালাবেন আজ। কিন্তু তিন উইকেট যাওয়ার পর হয়ত তার কাছেও বার্তা গেছে, ধীরগতিতে খেলে ম্যাচ জিতিয়ে আসো। কারণ সাত ম্যাচের চারটিতে জিতে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করা তো কম নয়!
কিন্তু ভাগ্য তো সাহসীদের পক্ষেই থাকে। বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ার জন্য অনেক আগেই হাল ছেড়ে দিলেও আফগানিস্তান এক মুহূর্তের জন্য লড়াই থেকে সরে আসেনি। এমনকি তখনও, যখন শেষ এক দফায় বৃষ্টিতে খেলা বন্ধের ঠিক আগের বলে তাসকিন আহমেদ পাগলাটে শটে বোল্ড হলেন। ওই সময়ে তাসকিন যদি আউট না হতেন আর খেলা পুনরায় শুরু না হতো, বাংলাদেশ জিতে যেতো দুই রানে। কিন্তু রশিদ-নাভিন-নবীরা তো মাঠে নেমেছিলেনই ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন বুকে চেপে। প্রথমে বাংলাদেশকে সমীকরণ থেকে বাদ দেওয়ার পর শেষ বিন্দু দিয়ে লড়ে তারা বিদায় করেছে অস্ট্রেলিয়াকেও। কারণ, তাদের সেই বিশ্বাসটা ছিল। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে পেরেছিলেন, এটা সম্ভব। আর বাংলাদেশ? তিন উইকেট যেতেই তো সব শেষ!
পর্তুগালের কথা বলছিলাম শুরুতে, এই দলটির গত ১০-১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল দল ছিল সম্ভবত সেবারই। পুরো আসরে একাই টেনেছিলেন রোনালদো। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে আশা যোগান, আমরাও পারি। সেটা এতোটাই প্রবল ছিল যে, ফাইনালে রোনালদো চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার পরও একটা ভাঙাচোরা দল নিয়েই ফ্রান্সকে হারিয়ে দেয় পর্তুগাল। মাঠে না খেলতে পারলেও চিৎকার চেঁচামেচি করে টাচলাইন থেকে দলকে সেদিন সাহস দিয়ে গেছেন রোনালদো। ক্লান্ত সতীর্থরা একটু বিশ্রাম নিতে চাইলে তাদের ধাক্কা দিয়ে মাঠে পাঠিয়েছেন, কারণ ইতিহাস গড়তে হবে, দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনতে হবে।
শান্তর সামনেও ভাগ্যদেবী নিয়ে এসেছিলেন রোনালদোর মতো অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা হওয়ার, বাংলাদেশকে নিয়ে পর্তুগালের মতো ইতিহাস গড়ার। কিন্তু তিনি হয়তো সেই সাহসটাই করতে পারেননি, বা নিজেদের সেই সামর্থ্য আছে বলেই বিশ্বাস রাখতে পারেননি। আর তাই, হারার অনেক আগেই হেরে বসেছেন। একটা অর্থহীন জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করতে চেয়েছেন, সেটাও আর জোটেনি। প্রকৃতি সুযোগ করে দিয়েছিল দুহাত ভরে নেওয়ার, কিন্তু শান্তরা ফিরলেন খালি হাতেই।
অবশ্য চান্দিকা হাথুরুসিংহে বলতেই পারেন, বোনাস নিয়ে এত মাতামাতি কিসের! আর সেদিক থেকে তিনি একবিন্দুও ভুল নন। তিনি ও তার দল তো সেমিফাইনালে খেলার সমীকরণ মেলাতেই চাননি। অযথাই সমর্থকদের অন্যায় দাবি কেনইবা তারা মেটাতে চাইবেন!
অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেভাবে আলো না ছড়াতে পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে অগ্নিঝরা এক স্পেল উপহার দেন তাসকিন আহমেদ। টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার উপহার দেন অভিজ্ঞ এই পেসার। তার একটা দারুণ স্বীকৃতি পেলেন তিনি। বোলারদের টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ দিয়েছেন তাসকিন।
বুধবার আইসিসি প্রকাশ করেছে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের হালনাগাদ। সেখানে ১৬ ধাপ এগিয়ে ৫১তম স্থানে উঠে এসেছেন তাসকিন। ডানহাতি এই পেসারের রেটিং পয়েন্ট এখন ৩৮৩, যা তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ। প্রথম ইনিংসে দুই উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৪ উইকেটে নেন ৬ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে এটাই ছিল তাসকিনের প্রথম ফাইফার।
প্রথম টেস্টে সেরা ছন্দে না থাকা তাইজুল ইসলাম কিছুটা পিছিয়ে গেছেন। বাঁহাতি এই স্পিনার ৫ ধাপ নেমে এখন আছেন ২৩তম স্থানে। দুই ইনিংসে চার উইকেট নিলেও আরেক স্পিনার ও বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের এক ধাপ অবনমনে অবস্থান ২৬তম।
অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য দারুণ উন্নতি করেছেন ম্যাচে ব্যাট হাতেও ভালো করা মিরাজ। ২৩ ও ৪৫ রানের দুটি ইনিংস ও সাথে চার উইকেট তাকে নিয়ে এসেছে যৌথভাবে সাকিব আল হাসানের সাথে তৃতীয় অবস্থানে। দুজনেরই রেটিং পয়েন্ট ২৬৯।
প্রথম ইনিংসে ৪০ রান করা লিটন দাস এক ধাপ উন্নতি করেছেন ব্যাটারদের র্যাঙ্কিংয়ে। যৌথভাবে তিনি এখন আছেন ৩২তম। প্রথম ইনিংসে ঠিক ৫০ রান করা অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হকেরও উন্নতি হয়েছে। এক ধাপ এগিয়ে তিনি এখন আছেন ৪৭তম অবস্থানে। চোটের কারণে এই সিরিজ মিস করা বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তিন ধাপ পিছিয়ে চলে গেছেন ৫৯তম স্থানে।
চলতি বছর বাংলাদেশের মেয়েদের সব ফরম্যাটে গেছে কঠিন একটি বছর। ব্যাটারদের অধারাবাহিকতা ম্যাচের পর ম্যাচ দলকে ভুগিয়েছে। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভিন্ন চেহারায় হাজির হলেন তারা। দেড় বছর পর দলে ফেরা শারমিন আক্তারের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের সাথে জ্বলে উঠলেন অন্য ব্যাটাররাও। এরপর বোলারদের সম্মিলিতে প্রয়াসে মিলল দাপুটে জয়।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ১৫৪ রানের। আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ২৫২, যা এই ফরম্যাটে এখন দলীয় সর্বোচ্চ। জবাবে মাত্র ৯৮ রানে অলআউট হয়ে গেছে আয়ারল্যান্ড নারী দল। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ লিড নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
শুরুটাই ছিল দারুণ বাংলাদেশের। ওপেনিং জুটিতে কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং হলেও ভালো একটা ভিত এনে দেন ফারজানা হক ও মুরশিদা খাতুন। পাঁচ বাউন্ডারিতে ৩৮ রান করে মুরশিদার বিদায়ে ভাঙে ৫৯ রানের জুটি। এরপরই বাংলাদেশ পায় ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া জুটিটি।
ফারজানা ধরে খেললেও এক বছরের বেশি সময় পর জাতীয় দলের জার্সিতে নামা শারমিন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে চাপে ফেলে দেন প্রতিপক্ষের বোলারদের। দারুণ সব শট খেলেন ইনিংসের একদম শুরু থেকেই। মাত্র ৪১ বলেই করে ফেলেন ফিফটি। শতরানের জুটি গড়ার পথে পঞ্চাশে পা রাখেন ফারজানাও।
শেষ পর্যন্ত ১১০ বলে ৬১ রান করে থামেন তিনি। তবে তার আগে শারমিনের সাথে গড়েন ১০৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। শেষের দিকে নেমে দ্রুত রান তোলার কাজটা ভালোই করে দেন অধিনায়ক নিগার। ১০০ স্ট্রাইক রেটে ৩ চারে করেন ২৮ রান।
চমৎকার একটি ইনিংস খেলার পরও আক্ষেপই সঙ্গী হয় শারমিনের। ফ্রেয়া সার্জেন্টের বল ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ৯৬ রানে। মাত্র ৮৯ বলের ইনিংসটি সাজান ১৪ বাউন্ডারিতে। তবে তার ইনিংসে ভর করেই বাংলাদেশ পায় ওয়ানডেতে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস। আগেরটি ছিল ২০২৩ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে (৩ উইকেটে ২৫০)।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় আয়ারল্যান্ড। কেউই পারেননি ইনিংস বড় করতে। ওপেনার সারাহ ফোর্বস কিছুটা লড়েন ২৫ রান করে। পুরো ইনিংসে তিনি ছাড়া আর মাত্র দুজন ব্যাটার পারেন দুই অঙ্কের ঘরে যেতে।
ফলে ২৮.৫ ওভারে একশর আগেই শেষ হয় আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের। পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত এক স্পেল করা মারুফা আক্তার চার ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। সুলতানা খাতুন ২৩ রানে নেন ৩ উইকেট। স্পিনার নাহিদা আক্তার ২ উইকেট নেন ২৩ রান খরচায়।
২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ এম
পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের পর থেকে যেন উল্টো পথে ছুটছে বাংলাদেশ। লাল বলের ক্রিকেটে একে একে টানা ছয় ম্যাচে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে দলটি। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ব্যাটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা। বোলাররা দারুণ লড়াই করলেও সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তাই বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে মেহেদি হাসানের মিরাজের দলকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক আশাবাদী, দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়াবে দল।
আর ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ রান করা জাকের আলি অনিকের চাওয়া ওপরের দিকের ব্যাটারদের চেয়ে আরও বেশি অবদান। মাত্র দুই টেস্ট খেলা তরুণ এই ব্যাটার এরই মধ্যে সাত-আটে নেমে খেলে ফেলেছেন দারুণ কয়েকটি ইনিংস। যার মধ্যে রয়েছে এই টেস্টে একটি ফিফটি ও ৩২ রানের ইনিংস এবং দুটিই চাপের মুখে। এর মূল কারণ শীর্ষ ছয়ের ব্যাটারদের ভালো না করতে পারা। প্রথম ছয় ব্যাটার মিলে দুই ইনিংসে ফিফটি এসেছে কেবল একটি।
২০১ রানে হারের পর মিরাজ শুনিয়েছেন ঘুরে দাঁড়ানোর কথা, যা কয়েক মাস ধরে লাল বলের ক্রিকেটে কোনভাবেই যেন করতে পারছে না বাংলাদেশ দল। “এই ম্যাচটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। যেভাবে খেলা উচিৎ ছিল, আমরা ব্যাটাররা সেভাবে খেলতে পারিনি। জ্যামাইকাতে নতুন কন্ডিশন, নতুন উইকেট থাকবে। উইকেট ও কন্ডিশন দেখে আমরা একাদশ সাজানোর চেষ্টা করব। এই ম্যাচে ভুলগুলো কোথায় করেছি তা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করব।”
প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রান করা বাংলাদেশের তিন ব্যাটার মুমিনুল হক (৫০ রান) লিটন দাস (৪০ রান) ও মিরাজ (২৩ রান) সেট হয়েও পারেননি ইনিংস লম্বা করতে। ফলে বড় একটা জুটি হয়নি, যা দলকে চারশ বা তার বেশি রানের স্কোর এনে দিতে পারত। যা বদলে দিতে পারত ম্যাচের চিত্র। কারণ, দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৫০ রানে গুটিয়ে দিয়েছিলেন বোলাররা।
মিরাজের আক্ষেপ তাই একটা বড় জুটি না হওয়ার। “আমাদের বড় জুটি হয়নি। ৩০, ৪০, ৫০ রানের ছোট ছোট জুটি হয়েছে। ১০০-১২০ রানের একটা জুটি হলে ম্যাচটা অন্যরকম হত। চারশর কাছাকাছি যেতে পারলে ম্যাচটা সহজ হয়ে যেত। দ্বিতীয় ইনিংসে ওদের দেড়শ রানে অলআউট করে দিয়েছিলাম।”
অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার ছিলেন জাকের। সাতে নেমে দুই ইনিংসেই ব্যাটিং করেছেন পরিস্থিতির চাহিদা মেনে। করেছেন মোট ৮৪ রান। ডানহাতি এই ব্যাটারের মতে, শুরুর ব্যাটারদের ভালো করার বিকল্প নেই। “নতুন বটা আমরা ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমার আশা, পরের ম্যাচে টপ অর্ডার থেকে কেউ না কেউ একটা বড় স্কোর করবে।”
২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ পিএম
পঞ্চম দিনে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই বাংলাদেশের হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস নিয়ে আক্ষেপ বেড়ে যাচ্ছেই। ২৬১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পরও যে দলটি করে ফেলে সাড়ে চারশ রান। অস্টম উইকেটে দলটি পায় রেকর্ড জুটি, যা শেষ পর্যন্ত ম্যাচে গড়ে দিয়েছে ব্যবধান। বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজও মনে করেন, ওই জুটিটাই টার্নিং পয়েন্ট ছিল।
অস্টম উইকেটে জাস্টিন গ্রিভস ও পেসার কেমার রোচ বাংলাদেশের বোলারদের রীতিমতো নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়েন। ১৪০ রানের জুটি গড়েন দুজন মিলে। গ্রিভস করেন সেঞ্চুরি, আর রোচ করেন ৪৭। প্রথম ইনিংসে তাতে বিশাল স্কোর পেয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা। শেষ পর্যন্ত ৩৩৪ রানের টার্গেট ২০১ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ আক্ষেপ করেন গ্রিভস ও রোচের সেই জুটি নিয়ে। “আমার মনে হয় আমরা ভালো বোলিং করেছি। দ্বিতীয় ইনিংসে তাসকিন ছয় উইকেট পেলেও (প্রথম ইনিংসে) তাদের (অস্টম উইকেটে) একটা ভালো জুটি ছিল। আমার মনে হয় সেই ১৪০ রানের জুটিটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। এই ম্যাচে আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। আমরা কিছু ভুল করেছি, তবে এটা খেলারই অংশ। এমনটা হতেই পারে। পরের ম্যাচের আগে আমাদের শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে হবে।”
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে ছিল ১৮১ রানে। তাসকিন আহমেদের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার, যেখানে তিনি নেন ছয় উইকেট, সেটা বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল। মাত্র ১৫২ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৩২ রানে প্যাকড হয়ে বড় হার বরণ করতে হয়েছে সফরকারীদের।
মিরাজ তাই দিলেন ব্যাটিংয়ে উন্নতির তাগিদ। “আমাদের উন্নতি করতে হবে এবং পরের ম্যাচে আরও ভালো করতে হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে এসব নিয়ে কথা বলব। আমাদের আক্রমণে ভালো পেসার আছে, তারা সত্যিই ভালো বোলিং করেছে। এই কন্ডিশনের জন্য আমাদের কিছু ভালো স্পিনারও আছে। এই টেস্টে আমরা দুই ইনিংসেই ভালো ব্যাট করতে পারিনি। আমরা দেখব যে সামনে কিভাবে ভালো করা যায়।”
২৬ নভেম্বর ২০২৪, ৮:০৯ পিএম
ওয়ানডে সিরিজের আগের দিন মিরপুরের একাডেমি মাঠে কখনো ব্যাটিংয়ে দেখা গেল যাবতীয় মনযোগ, কখনো আবার ফুটবলে প্রবল আগ্রহ। সাথে চলল আড্ডাও। তিনি আয়ারল্যান্ড নারী দলের অধিনায়ক গ্যাবি লুইস। ১৩ বছর বয়সেই যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরু! ক্রিকেটেই প্রেম, প্রেমের ক্রিকেট। আইরিশ ক্রিকেটার হ্যারি টেক্টরের ৫ বছরের প্রেমিকাকে এর চেয়ে বেশি আর কীইবা বলা যায়!
বলা যায় আরো অনেককিছুই। তবে তার ক্রিকেট প্রেমের কথাই আগে বলা যাক। যেখানে রয়েছে গ্যাবির যাবতীয় রেকর্ড আর সাফল্য গল্প। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তার অভিষেক ২০১৪ সালে, বয়স তখন মোটে ১৩, আইরিশদের ইতিহাসে যা রেকর্ড। এর আগে রেকর্ডটি ছিল সোলিহুলের, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৩ বছর ১৬৬ দিন বয়সে। ২০২২ সালে তিন ম্যাচে ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন গ্যাবি, সেটিও মাত্র ২১ বছর ৭৬ দিন বয়সে।
আরও পড়ুন
ইতিহাসের পাতায় ভারতের ১৩ বছরের বিস্ময়বালক |
গ্যাবি দারুণ মানূষ। সবই পারেন। প্রেম, ক্রিকেট, পড়াশোনায় কঠিন কোর্স, আয়ারল্যান্ডের হয়ে দারুণ খেলা, বাদ রইল কী! এই সার্টিফিকেট তাকে দিয়ে রেখেছেন আয়ারল্যান্ড ছেলেদের জাতীয় দলের চেনা মুখ হ্যারি টেক্টরই।
আইরিশদের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ রান। ২৮ এর বেশি গড়ে নামের পাশে রয়েছে ২ হাজার ২২৩ রান। অন্য কারো নেই ১ হাজার ৫০০ রানও। বাইরের লিগেও ট্রফি জেতার দারুণ অভ্যাস আছে গ্যাবির। নারীদের সিপিএল কিংবা দ্য হানড্রেডে খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
ওয়ানডে ব্যাটিং গড়টা ৩০ এর বেশি। লেগ ব্রেকটা করতে পারেন ঠিকঠাক। টেকটর ঠিকই বলেছিলেন, পড়াশোনায় দারুণ কোর্স কিংবা ম্যাচ জেতানো দারুণ ব্যাটিং সবই তো পারেন এই লুইস।
ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম ১ হাজার রান করার রেকর্ড টেক্টরের। গ্যাবির প্রেমিক আগেই বলেছিলেন ‘ও আমার চেয়ে অনেক অনেক ভালো খেলে!’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুজনের দারুণ সব ছবি মিলবে আপনার। এই লন্ডন, এই নিউইয়র্ক… পুরো দুনিয়া চষে বেড়ানো হাতে হাত রেখেই। কেবল ক্রিকেটই নয়। গ্যাবি-টেক্টর জীবনও জিতেছেন। টেক্টর-গ্যাবি দম্পতি হয়ে গেছেন ক্রিকেটের আরেক জনপ্রিয় দম্পতি মিচেল স্টার্ক ও অ্যালিসা হিলির মত, যারা দুজনই খেলেন নিজ নিজ জাতীয় দলে।
আরও পড়ুন
জাতীয় ক্রিকেট লিগের নতুন চ্যাম্পিয়ন সিলেট |
এই গ্যাবি এখন আছেন বাংলাদেশে, সাদা বলের সিরিজ খেলতে। এখানে জেতা যে কঠিন, তা জানা আছে তার বেশ। তবে ম্যাচের আগের দিন ঠিকই শুনিয়েছেন জেতার কথাই। অবাক বাংলাদেশের অসংখ্য মিডিয়া দেখেও। “এটা দুর্দান্ত। আমার অভিজ্ঞতায় আমি আগে এত ক্যামেরা দেখিনি। হয়তো লরা (ডেলেনি) দেখেছে। তবে হ্যাঁ, এটা দারুণ। ট্রফি উন্মোচনেও নারী ক্রিকেটারদের ঘিরে এত মিডিয়া দেখতে পারা দুর্দান্ত একটা ব্যাপার ছিল। আমরা এখানে খুব ভালো আথিতেয়তা পাচ্ছি। ঢাকায় দারুণ সময় কাটছে।”
গ্যাবিদের থামাতে নিগার-জাহানারারা প্রস্তুতু। ট্রফি উন্মোচনে থাকা এক চকচকে ট্রফি বাংলাদেশ চাইবে নিজেদের ড্রেসিংরুমেই রেখে দিতে। আর গ্যাবি? জীবন, ক্রিকেট যিনি জিতেছেন আগেই, ট্রফিটা কি আর হাতছাড়া করতে চাইবেন! এক লড়াকু সিরিজ তাই আপনি দেখার অপেক্ষায় থাকতেই পারেন! চোখ রাখুন, শুধুমাত্র টি-স্পোর্টসেই।