১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৩:৩২ এম

টিম বাস থেকে নামছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা, প্রবেশ করবেন হোটেলে। স্বাভাবিকভাবেই লিওনেল মেসিকে ঘিরে আকর্ষণ বাকিদের চেয়ে ঢের বেশি। কিন্তু ওই বাস থেকে নামার সময় নজর কাড়লেন ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোও। বাস থেকে নামছেন, কাঁধে তার ব্যাগ, হাতে অক্সিজেন বুস্টার। বলিভিয়া যাত্রা মানেই যেন ফুটবলারদের বাড়তি আতঙ্ক, আলাদা দুশ্চিন্তা। যার নেই কোনো সমাধান, মানিয়ে নেওয়াই একমাত্র উপায়।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে আর্জেন্টিনা এখন বলিভিয়ায়। বুধবার রাতে রাজধানী লা পাজে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বিশ্বচ্যাপিয়নরা। মেসি সে ম্যাচে খেলবেন কি না তা নিয়ে আছে সংশয়। ইকুয়েডরের বিপক্ষে নিজ ইচ্ছায় বদলি হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন, কোচ লিওনেল স্কালোনিও রবিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে গেছেন মেসির খেলা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটবে সোমবার অনুশীলনের পর।

বলিভিয়ার এই মাঠ অবশ্য মেসির জন্য নতুন কিছু নয়। নিজের ক্যারিয়ারে এই মাঠে চার ম্যাচ খেলেছেন, জিততে পেরেছেন মোটে একটায়। যদিও বলিভিয়া দক্ষিণ আমেরিকার দুর্বল দলগুলোর একটাই। তবে সেই গল্পটাই বদলে যায় যখন বলিভিয়া নিজেদের ঘরের মাঠে খেলে। নিজেদের মাঠের রাজা ওরা। ১৯৯৩ সালের পর থেকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে আর জয়ের দেখাই পায়নি বলিভিয়া। এই সময়ে সবমিলিয়ে তারা খেলেছে ৬৫ ম্যাচ। অথচ ঘরের মাঠে শেষ ২৪ ম্যাচে তারা জিতেছে ১৪টায়, ড্র করেছে ১০টা।

ঘরের মাঠই আসলে বলিভিয়ার শক্তি। কিন্তু তার কৃতিত্ব পুরোটাই ভৌগলিক। সমুদ্রপৃষ্ঠ্ থেকে প্রায় ৩৬৫০ মিটার (১১,৯৭৫ ফিট) উঁচুতে অবস্থান দেশটির। ভিনদেশীদের জন্য অতো উঁচুতে যে কোনো খেলাই দুঃস্বপ্নের মতো। রোমেরোরা সে কারণেই হাতে করে অক্সিজেন বুস্টার নিয়ে প্রবেশ করেছেন বলিভিয়ায়।
এই গল্প অবশ্য নতুন কিছু নয়। বলিভিয়ায় ম্যাচ খেলতে গেলে যে আসল প্রতিপক্ষ উচ্চতা তা এতোদিনে প্রতিষ্ঠিত সত্য। হোম অ্যাডভান্টেজ পুরোটাই কাজে লাগানোর সুযোগ লাগে বলিভিয়ানদের সামনে। এই নিয়ে অবশ্য বহু আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। ২০০৭ সালে ২৫০০ মিটারের উঁচুতে ফুটবল ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। তাতে ভেন্যু হিসেবে বলিভিয়া বাদও পড়েছিল। সে সময় ফিফার এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছিলেন খোদ ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তোপের মুখে পরে ফিফাও ২০০৮ সালে সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে। বলিভিয়াতে আবারও ফেরে ফুটবল।
আরও পড়ুন: মেসির কারিশমাতেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শুভসূচনা আর্জেন্টিনার
ওই ঘটনার কিছুদিন পরই বলিভিয়ার মাঠে গিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে আর্জেন্টিনা হেরে এসেছিল ৬-১ গোলে। সে সময় আবার দলের কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা। ওই হার আর্জেন্টিনার ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় হারগুলোর একটি।
অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এর আগেও বলিভিয়ায় গেছে আর্জেন্টিনার। বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ চলার সময় হাফটাইমে পুরো ব্রাজিল দলকে একসঙ্গে অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে গিয়ে মাঠেই একবার বমিও করতে হয়েছিল লিওনেল মেসিকে। এতো ফিরিস্তি শুনে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কী এমন উচ্চতা যার কারণে বিশ্বসেরা ফুটবলাররাই বেমালুম বোকা বনে যান বলিভিয়ায়?
উচ্চতা যত বেশি, বায়ুর চাপ তত কম। অর্থাৎ আপনার গ্রহণ করা অক্সিজেন রক্তে ট্রান্সফার করতে শরীরকে কসরত করতে হয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে শরীরও দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সহজ কথায় বললে, বলিভিয়ার যে উচ্চতা তাতে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থানের চেয়ে আরও ২০-২৫ শতাংশ শক্তি বেশি প্রয়োজন। অভ্যস্ততা না থাকলে সেটা আপনাকে ভোগাবেই- মেসি, নেইমার সবার বেলায় সত্য সেটা।
অবশ্য এখানেই শেষ নয়। অমন উচ্চতায় বলের স্বাভাবিক গতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে, বলের গতিপ্রকৃতির অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা প্রায় সময় বলেছেনও ফুটবলাররা। বলিভিয়া মূলত প্রতিপক্ষের এই অনভ্যস্ততার সুযোগটাই কাজে লাগায়। ঘরের মাঠের দূরন্ত্ব ফর্মের সঙ্গে বলিভিয়ার অ্যাওয়ে ফর্মের তফাৎও তাই প্রমাণ করে।
আর্জেন্টিনা বলিভিয়ার সঙ্গে খেলার আগে ওদের মাঠে অনুশীলন করবে একদিন। মানিয়ে নেওয়ার জন্য ওইটুকু সময়ই আছে স্কালোনির দলের। ২০২০ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বলিভিয়ার মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফিরেছিল তার দল। তাতে ১৫ বছর ধরে বলিভিয়ার মাঠে জয়হীন থাকার ‘ভুতুড়ে’ রেকর্ডটাও আর্জেন্টিনার পিছু ছেড়েছিল। যদিও সেই ম্যাচেও আর্জেন্টিনাকে ভুগতে হয়েছিল বলিভিয়ার উচ্চতায়।
এবার আর্জেন্টিনা লা পাজে পা রেখেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে। কিন্তু তবুও স্বস্তি নেই। ঘুরে ফিরে সেই ‘উচ্চতা’ প্রশ্নের সমাধান জানা নেই কারও। স্কালোনিই বোধ হয় সবচেয়ে ভালোভাবে জবাবটা দিয়েছেন, “অনেক কিছুই তো চেষ্টা করা হয়েছে, আর যে কোনো দলই ওখানে গিয়ে হিমশিম খায়। এই নিয়ে এতো কথা বলতে চাই না, কারণ এসব তো আর পরিবর্তন করা যাবে না। এটা পরিস্কার একটা অ্যাডভান্টেজ ওই দলের জন্য, কিন্তু এই নিয়ে আমাদের অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই।“
No posts available.
৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম
৫ নভেম্বর ২০২৫, ৭:৫৩ পিএম

দুয়ারে কড়া নাড়ছে ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ। আগামী বছর জুনে বসছে বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে বড় মহারণ। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ২৮টি দেশ। এর মধ্যে আজ একসাথে ২২টি দেশের জার্সি উন্মোচন করেছে অ্যাডিডাস। যেসব ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, তাদের জার্সি প্রকাশ করেছে বিশ্বের অন্যতম ক্রীড়া সরঞ্জাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্বকাপের জন্য নতুন জার্সি উন্মোচনের তালিকায় রয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, জার্মানি। অতীতের গৌরব আর আধুনিকতার ছোঁয়া মিলিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে লিওনেল মেসিদের নতুন জার্সি।
নতুন এই জার্সিতে থাকছে আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী আকাশি ও সাদা রঙের মিশ্রণ। ক্লাসিক নীল ডোরাকাটার উপর রাখা হয়েছে গ্রেডিয়েন্ট ইফেক্ট, অর্থাৎ মোটা নীল স্ট্রাইপের মাঝামাঝি থাকবে হালকা রঙের মিশ্রণ। নকশাটি ১৯৭৮, ১৯৮৬ ও ২০২২ সালের তিনটি বিশ্বকাপজয়ী জার্সির রঙ থেকে অনুপ্রাণিত।
গলার পেছনে যোগ করা হয়েছে বিশেষ এক স্মারক চিহ্ন ‘১৮৯৬’। এটি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) প্রতিষ্ঠাবর্ষের প্রতীক।
এএফএ জানিয়েছে, এই জার্সি কেবল পোশাক নয়, বরং আর্জেন্টাইন ফুটবলের ইতিহাস ও গর্বের প্রতিফলন।
আগামী বছরের ১১ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে বিশ্বকাপের ২৩তম আসর। তবে এখনও বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত হয়নি। বাছাইপর্বের খেলা শেষে আগামী ৫ ডিসেম্বর ড্র অনুষ্ঠিত হবে ওয়াশিংটন ডিসিতে।

আগামী ১৫ ও ১৯ নভেম্বর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সুইজারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়ার মুখোমুখি হবে সুইডেন। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ম্যাচের জন্য আজ দল ঘোষণা করেছেন কোচ গ্রাহাম পটার।
পটারের ঘোষিত দলে জায়গা পেয়েছেন আলেকজান্ডার ইসাক। তবে বাদ পড়েছেন আর্সেনাল স্ট্রাইকার ভিক্টর ইয়োকেরেস।
হ্যামস্ট্রিং চোটে ভুগছেন ইয়োকেরেস। গত মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগে সেভিয়ার বিপক্ষে বেঞ্চে বসেই খেলা দেখেছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, বেশ কিছুদিন মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। তাই ঝুঁকি নিতে চাননি কোচ পটার।
অন্যদিকে, কুঁচকির চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন ইসাক। সবশেষ ২২ অক্টোবর অল রেডসের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন তিনি। তবে সুইজারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ফিরছেন এই তারকা স্ট্রাইকার।
টটেনহ্যামের মিডফিল্ডার লুকাস বার্গভাল মাথায় আঘাত থেকে সেরে উঠছেন। নিউক্যাসলের উইঙ্গার অ্যান্থনি এলাঙ্গাও দারুণ ফর্মে আছেন। দুইজনকেই দলে ডেকেছেন সাবেক ব্রাইটন, চেলসি ও ওয়েস্ট হ্যাম কোচ গ্রাহাম পটার।
মাঠের পরিস্থিতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয় সুইডেনের। গ্রুপ ‘বি’-এর সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে তারা। চার ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট দলটির।
তবুও আশা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি সুইডেনের। সর্বশেষ নেশনস লিগে ভালো পারফরম্যান্সের কারণে, এখনো বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্লে-অফে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা ধরে রেখেছে সুইডেন।
গোলকিপার:
ভিক্টর জোহানসন, ক্রিস্টোফার নর্ডফেল্ট, নোয়েল টর্নকভিস্ট, জ্যাকব উইডেল জেটারস্ট্রম
ডিফেন্ডার:
গ্যাব্রিয়েল গুডমুন্ডসন, ইসাক হিয়েন, এমিল হোল্ম, গুস্তাফ লাগারবিয়েলকে, ভিক্টর লিন্ডেলফ, কেন সেমা, কার্ল স্টারফেল্ট, ড্যানিয়েল স্বেনসন
মিডফিল্ডার ও ফরোয়ার্ড:
তাহা আলী, ইয়াসিন আয়ারি, রুনি বার্দগজি, লুকাস বার্গভাল, আলেকজান্ডার বার্নহার্ডসন, অ্যান্থনি এলাঙ্গা, আলেকজান্ডার ইসাক, জেসপার কার্লস্ট্রম, হুগো লারসন, ইসাক লিডবার্গ, গুস্তাভ লুন্ডগ্রেন, বেনজামিন নিয়গ্রেন, ম্যাটিয়াস স্বানবার্গ, বেসফোর্ট জেনেলি

নভেম্বরে মাঝামাঝিতে দুটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ফুটবল দল। ১৩ তারিখ জাতীয় স্টেডিয়ামে হামজা চৌধুরীদের প্রীতি ম্যাচে অতিথি নেপাল। ৫ দিন পর এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের মুখোমুখি হবেন তাঁরা।
এই দুই ম্যাচের জন্য আজ সন্ধ্যায় ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
আগে থেকেই জানা ছিল, এশিয়ান কাপের ম্যাচে থাকছেন না ফাহামিদুল ইসলাম। দুই হলুদ কার্ডের কারণে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় রয়েছেন তিনি। নেপাল ম্যাচের জন্য ফাহামিদুলকে উড়িয়ে আনা প্রয়োজন মনে করেননি কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারত গত অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের কাছে ১–২ গোলে হেরে ‘সি’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে সবার নিচে নেমে গেছে। চার ম্যাচে তাদের পয়েন্ট দুই। বাংলাদেশও দুই পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে আছে। গ্রুপের শীর্ষে অবস্থান করছে হংকং ও সিঙ্গাপুর, যারা আট পয়েন্ট নিয়ে মূল পর্বের দৌড়ে দারুণভাবে টিকে আছে।
বাংলাদেশ দল
গোলকিপার:
মিতুল মারমা, সুজন হোসেন, পাপ্পু হোসেন, মেহেদী হাসান।
ডিফেন্ডার:
তারিক কাজী, রহমত মিয়া, শাকিল আহাদ, আবদুল্লাহ ওমর, শাকিল হোসেন, জায়ান আহমেদ, তপু বর্মণ, তাজ উদ্দিন, সাদ উদ্দিন।
মিডফিল্ডার:
কাজেম শাহ, শেখ মোরছালিন, জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা (সিনিয়র), সোহেল রানা (জুনিয়র), মোহাম্মদ হৃদয়, হামজা চৌধুরী, সমিত সোম।
ফরোয়ার্ড:
মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আল আমিন, আরমান ফয়সাল, শাহরিয়ার ইমন, ফয়সাল আহমেদ, রাকিব হোসেন

সপ্তাহখানেক আগে সংবাদমাধ্যমে সয়লাভ লামিন ইয়ামাল আর নিকি নিকোলের প্রেমের বিচ্ছেদ। তবে সেই রেশ না কাটতেই নতুন করে আলোচনায় বার্সেলোনার তারকা ফরোয়ার্ডের বাবার বাগদান সম্পন্ন।
মার্কা, ডেইলি মেইল ও দ্য সানের প্রতিবেদন, ইয়ামালের ৩৫ বছর বয়সী বাবা মুনির নাসরাউই সম্প্রতি বাগদান সম্পন্ন করেছেন ২৩ বছর বয়সী নারী ক্রিস্টিনার সঙ্গে। যিনি ১৮ বছর বয়সী ইয়ামালের চেয়ে পাঁচ বছরের বড়।
নাসরাউই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় মুখ। বাগদানের খবর জানিয়েছেন এক আবেগঘন পোস্টে। বারান্দায় ক্রিস্টিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের একটি ছবি দিয়ে, ক্যাপশনে জুড়ে দিয়েছেন ‘ব্লাক লাভ ও আংটির’ ইমোজি—যা ভক্তদের মধ্যে বিয়ের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
নাসরাউই ও ক্রিস্টিনার সম্পর্ক কবে শুরু হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। তবে গত কয়েক মাসে ক্রিস্টিনাকে একাধিকবার নাসরাউইয়ের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে দেখা গেছে।
অন্যদিকে ছেলে ইয়ামালের ব্যক্তিগত জীবনে চলছে উল্টো স্রোত। বার্সেলোনার এই তারকা ফরোয়ার্ড সম্প্রতি বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন তাঁর আর্জেন্টাইন গায়িকা প্রেমিকা নিকি নিকোলের সঙ্গে। ২৫ বছর বয়সী নিকি নাসরাউইয়ের হবু স্ত্রীর চেয়েও দুই বছর বড়।
নাসরাউইয়ের জীবনে এটি নতুন সুখের অধ্যায় হলেও কয়েক মাস আগেই তিনি পেরিয়েছেন এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। গত আগস্টে বার্সেলোনার উত্তরের শহর মাতারোতে নিজের কুকুর হাঁটাতে বেরিয়ে ছুরিকাহত হন তিনি। তর্কের জের ধরে কয়েকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন, এবং পরে তাঁকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ।
ভাগ্য সহায় শেষ পর্যন্ত তিনি প্রাণে বেঁচে যান। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে নাসরাউই বলেন,
‘সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় এখন অনেকটা ভালো আছি। ভয় পেয়েছিলাম, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু এখন শুধু চাই শান্তি আর ন্যায়বিচার।’
মুনির নাসরাউই দীর্ঘদিন ধরেই ছেলের সবচেয়ে বড় সমর্থক। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে যখন স্পেন শিরোপা জেতে, তখনও ছেলের পাশে ছিলেন তিনি। সেই টুর্নামেন্টেই ইয়ামাল ছিলেন দলের উজ্জ্বলতম তারকা।
বাবা নাসরাউই বরাবরই বিশ্বাস করেন, তাঁর ছেলে একদিন হবেন বিশ্বের সেরা ফুটবলার। ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘লামিন ইয়ামাল এখনই বিশ্বের সেরা ফুটবলার। আগামী বছর এই পুরস্কার ওরই হবে।’ব্যালন ডি’অর না পেলেও ইয়ামাল পেয়েছেন কোপা ট্রফি—বছরের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের হয়ে শুরু। এরপর ফ্রি ট্রান্সফারে যোগ দেন স্পেনের ক্লাব দেপোর্তিভো আলাভেসে। সেখান থেকে লোনে ক্লাব মিরান্দেসে। লোন শেষে ফেরেই স্ট্রাসবুর্গে পাড়ি জমান আর্জেন্টিনার ২৩ বছর বয়সি জোআকুইন পানিচেলি।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং ক্লাব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেকে আরও বেশি পরিণত করেছেন পানিচেলি। স্ট্রাসবুর্গের নতুন মৌসুমে প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল উপহার দিচ্ছেন, তৈরি করছেন সুযোগ। এখন পর্যন্ত লিগ ওয়ানে ১১ ম্যাচে মাঠে নেমে ৯ গোল করেছেন পানিচেলি। মোট ৮৬৮ মিনিট খেলেছেন। ১০ ম্যাচে ছিলেন শুরুর একাদশে।
২০২৪-২৫ মৌসুমে দেপোর্তিভো মিরান্দেসে থাকাকালীনও পানিচেলির পারফরম্যান্স ছিল বেশ উজ্জ্বল। ৪৪ ম্যাচে ২১ গোল করেছেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। অ্যাসিস্ট ছিল ৮টি। রেটিং ধরে রেখেছেন ৭.৩।
অথচ ২০২২-২৩ সালে গোল খরায় ছিলেন পানিচেলি। ছিলেন অবহেলিত। তবে স্ট্রাসবুর্গে লিয়াম রৌশনির ছায়ায় এসে বদলে যান। ফ্রান্সের ক্লাবের হয়ে মোট ৩১টি অন-টার্গেট শট ছিল পানিচেলির। যেখান থেকে লক্ষ্যভেদ করতে পারেন ৯টি।
শুধু গোল করেই স্ট্রাসবুর্গ কিংবা কোচ রৌশনি-কে সন্তুষ্ট করেননি তিনি। অ্যাকুরেট পাস, চান্স ক্রিয়েট করা, শট অ্যাটাম্পটস কিংবা এরিয়াল ডুয়েলে তার আধিক্যও চোখে পড়ার মতো। এসময় প্রায় ৯৫ শতাংশ এরিয়াল ডুয়েল জিতেছেন পানিচেলি। বল টাচেস ছিল ৭০ শতাংশ। চান্স ক্রিয়েট করেছেন ৬৯ শতাংশ। শট অ্যাটাম্পটস ৭৬ শতাংশ।
পানিচেলির আরও একটি বড় গুণ—এগ্রেসিভনেস। ২০২৫-২৬ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১৮টি ফাউল করেছেন তিনি। তাকে রুখা কতটা কষ্টসাধ্য, সেটা এই সংখ্যা প্রমাণ করে। অথচ এই ফাউলগুলোর জন্য মাত্র একবার হলুদ কার্ড দেখেছেন তিনি।
গত ১৮ অক্টোবর প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের বিপক্ষে ম্যাচে আরও বেশি আলোচনায় আসেন পানিচেলি। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ঘরের মাঠ পার্ক দে প্রিন্সে ৩-৩ গোলের ড্রয়ের দিনে দুটি গোল আসে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের পা থেকে। ফুটবলে তার রেটিং ছিল ৯.২। ম্যাচসেরাও ছিলেন তিনি।
পানিচেলির এমন উত্থান ও পারফরম্যান্সে যারপরনাই আনন্দিত কোচ রৌশনি। সে ম্যাচে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের হেডের দক্ষতা নিয়ে তিনি বলেছিলেন,
“আমার জীবদ্দশায় তার এই ম্যাচের হেডটি ছিল সবচেয়ে সেরা। শুধু তাই নয়, সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড হিসেবে তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ।”
মাঠের পারফরম্যান্সই নয়, রৌশনি মুগ্ধ পানিচেলির ব্যক্তিত্ব নিয়েও, “সে অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তার জন্য আমার গর্ব হয়।”
এমন পারফরম্যান্সের কারণে নিশ্চয়ই শিগগিরই নতুন কোনো বড় ক্লাবের দরজা খুলে যাবে পানিচেলির। গুঞ্জন উঠেছে, লা লিগার ক্লাব বার্সেলোনা নজরে রেখেছে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে। রবার্ট লেভানডফস্কির বিদায়ে তাঁকে ভিড়াতে পারেন হ্যান্সি ফ্লিক। যদিও এক্ষেত্রে হুলিয়ান আলভারেজ ও ইংলিশ তারকা হ্যারি কেইন এগিয়ে।
ইতালির সিরি আ-তে সুযোগ মিলতে পারে পানিচেলির। বিশেষ করে এসি মিলানকে বারবারই হতাশ করছেন সান্তিয়াগো গিমেনেজ। সেখানেও ডাক পড়তে পারে তাঁর। দেখার বিষয়, পানিচেলির নতুন ক্লাব কোনটি। আপাতত অপেক্ষা করা যাক।