১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৩:৩২ এম
টিম বাস থেকে নামছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা, প্রবেশ করবেন হোটেলে। স্বাভাবিকভাবেই লিওনেল মেসিকে ঘিরে আকর্ষণ বাকিদের চেয়ে ঢের বেশি। কিন্তু ওই বাস থেকে নামার সময় নজর কাড়লেন ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোও। বাস থেকে নামছেন, কাঁধে তার ব্যাগ, হাতে অক্সিজেন বুস্টার। বলিভিয়া যাত্রা মানেই যেন ফুটবলারদের বাড়তি আতঙ্ক, আলাদা দুশ্চিন্তা। যার নেই কোনো সমাধান, মানিয়ে নেওয়াই একমাত্র উপায়।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে আর্জেন্টিনা এখন বলিভিয়ায়। বুধবার রাতে রাজধানী লা পাজে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বিশ্বচ্যাপিয়নরা। মেসি সে ম্যাচে খেলবেন কি না তা নিয়ে আছে সংশয়। ইকুয়েডরের বিপক্ষে নিজ ইচ্ছায় বদলি হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন, কোচ লিওনেল স্কালোনিও রবিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে গেছেন মেসির খেলা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটবে সোমবার অনুশীলনের পর।
বলিভিয়ার এই মাঠ অবশ্য মেসির জন্য নতুন কিছু নয়। নিজের ক্যারিয়ারে এই মাঠে চার ম্যাচ খেলেছেন, জিততে পেরেছেন মোটে একটায়। যদিও বলিভিয়া দক্ষিণ আমেরিকার দুর্বল দলগুলোর একটাই। তবে সেই গল্পটাই বদলে যায় যখন বলিভিয়া নিজেদের ঘরের মাঠে খেলে। নিজেদের মাঠের রাজা ওরা। ১৯৯৩ সালের পর থেকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে আর জয়ের দেখাই পায়নি বলিভিয়া। এই সময়ে সবমিলিয়ে তারা খেলেছে ৬৫ ম্যাচ। অথচ ঘরের মাঠে শেষ ২৪ ম্যাচে তারা জিতেছে ১৪টায়, ড্র করেছে ১০টা।
ঘরের মাঠই আসলে বলিভিয়ার শক্তি। কিন্তু তার কৃতিত্ব পুরোটাই ভৌগলিক। সমুদ্রপৃষ্ঠ্ থেকে প্রায় ৩৬৫০ মিটার (১১,৯৭৫ ফিট) উঁচুতে অবস্থান দেশটির। ভিনদেশীদের জন্য অতো উঁচুতে যে কোনো খেলাই দুঃস্বপ্নের মতো। রোমেরোরা সে কারণেই হাতে করে অক্সিজেন বুস্টার নিয়ে প্রবেশ করেছেন বলিভিয়ায়।
এই গল্প অবশ্য নতুন কিছু নয়। বলিভিয়ায় ম্যাচ খেলতে গেলে যে আসল প্রতিপক্ষ উচ্চতা তা এতোদিনে প্রতিষ্ঠিত সত্য। হোম অ্যাডভান্টেজ পুরোটাই কাজে লাগানোর সুযোগ লাগে বলিভিয়ানদের সামনে। এই নিয়ে অবশ্য বহু আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। ২০০৭ সালে ২৫০০ মিটারের উঁচুতে ফুটবল ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। তাতে ভেন্যু হিসেবে বলিভিয়া বাদও পড়েছিল। সে সময় ফিফার এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছিলেন খোদ ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তোপের মুখে পরে ফিফাও ২০০৮ সালে সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে। বলিভিয়াতে আবারও ফেরে ফুটবল।
আরও পড়ুন: মেসির কারিশমাতেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শুভসূচনা আর্জেন্টিনার
ওই ঘটনার কিছুদিন পরই বলিভিয়ার মাঠে গিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে আর্জেন্টিনা হেরে এসেছিল ৬-১ গোলে। সে সময় আবার দলের কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা। ওই হার আর্জেন্টিনার ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় হারগুলোর একটি।
অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এর আগেও বলিভিয়ায় গেছে আর্জেন্টিনার। বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ চলার সময় হাফটাইমে পুরো ব্রাজিল দলকে একসঙ্গে অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে গিয়ে মাঠেই একবার বমিও করতে হয়েছিল লিওনেল মেসিকে। এতো ফিরিস্তি শুনে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কী এমন উচ্চতা যার কারণে বিশ্বসেরা ফুটবলাররাই বেমালুম বোকা বনে যান বলিভিয়ায়?
উচ্চতা যত বেশি, বায়ুর চাপ তত কম। অর্থাৎ আপনার গ্রহণ করা অক্সিজেন রক্তে ট্রান্সফার করতে শরীরকে কসরত করতে হয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে শরীরও দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সহজ কথায় বললে, বলিভিয়ার যে উচ্চতা তাতে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থানের চেয়ে আরও ২০-২৫ শতাংশ শক্তি বেশি প্রয়োজন। অভ্যস্ততা না থাকলে সেটা আপনাকে ভোগাবেই- মেসি, নেইমার সবার বেলায় সত্য সেটা।
অবশ্য এখানেই শেষ নয়। অমন উচ্চতায় বলের স্বাভাবিক গতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে, বলের গতিপ্রকৃতির অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা প্রায় সময় বলেছেনও ফুটবলাররা। বলিভিয়া মূলত প্রতিপক্ষের এই অনভ্যস্ততার সুযোগটাই কাজে লাগায়। ঘরের মাঠের দূরন্ত্ব ফর্মের সঙ্গে বলিভিয়ার অ্যাওয়ে ফর্মের তফাৎও তাই প্রমাণ করে।
আর্জেন্টিনা বলিভিয়ার সঙ্গে খেলার আগে ওদের মাঠে অনুশীলন করবে একদিন। মানিয়ে নেওয়ার জন্য ওইটুকু সময়ই আছে স্কালোনির দলের। ২০২০ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বলিভিয়ার মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফিরেছিল তার দল। তাতে ১৫ বছর ধরে বলিভিয়ার মাঠে জয়হীন থাকার ‘ভুতুড়ে’ রেকর্ডটাও আর্জেন্টিনার পিছু ছেড়েছিল। যদিও সেই ম্যাচেও আর্জেন্টিনাকে ভুগতে হয়েছিল বলিভিয়ার উচ্চতায়।
এবার আর্জেন্টিনা লা পাজে পা রেখেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে। কিন্তু তবুও স্বস্তি নেই। ঘুরে ফিরে সেই ‘উচ্চতা’ প্রশ্নের সমাধান জানা নেই কারও। স্কালোনিই বোধ হয় সবচেয়ে ভালোভাবে জবাবটা দিয়েছেন, “অনেক কিছুই তো চেষ্টা করা হয়েছে, আর যে কোনো দলই ওখানে গিয়ে হিমশিম খায়। এই নিয়ে এতো কথা বলতে চাই না, কারণ এসব তো আর পরিবর্তন করা যাবে না। এটা পরিস্কার একটা অ্যাডভান্টেজ ওই দলের জন্য, কিন্তু এই নিয়ে আমাদের অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই।“
৯ নভেম্বর ২০২৪, ৯:০৮ পিএম
রিয়াল মাদ্রিদ আর চোট যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এই মৌসুমে৷ লম্বা সেই তালিকায় শনিবার ওসাসুনার বিপক্ষে যোগ হয়েছে এদের মিলিতাওয়ের। ক্লাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বলেও ধারণা করা হচ্ছে যে, এসিএল চোটে পড়েছেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এবং শেষ হয়ে গেছে তার এই মৌসুম।
লা লিগার ম্যাচটির ৩০তম মিনিটে চোট পেয়ে লুটিয়ে পড়েন মিলিতাও। আঘাত এতোটাই গুরুতর যে, তাকে শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়তে হয় স্ট্রেচারে করে। ওই সময়ে হতাশায় জার্সি দিয়ে চোখের জলে মুখ ঢেকে রাখেন অভিজ্ঞ এই ফুটবলার।
আরও পড়ুন
আরও লম্বা সময়ের জন্য রিয়ালের জার্সিতেই মিলিতাও |
স্প্যানিশ কিছু সংবাদমাধ্যম ও জনপ্রিয় সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমারো দাবি, এই চোট গুরুতর এবং এই মৌসুমে আর মাঠে দেখা যাবে না মিলিতাওকে।
আর ম্যাচের পর রিয়াল মাদ্রিদ টিভির সাথে কথা বলার সময় ব্রাহিম দিয়াস আভাস দেন মিলিতাওয়ের গুরুতর চোটের। “আমি এই বিষয়ে কথা বলতে চাই না, কারণ সতীর্থদের কাঁদতে দেখলে আমার কষ্ট হয়। মনে হচ্ছে এটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গুরুতর হতে পারে। আমরা তাকে মিস করব।”
এসিএল চোট গত বছর থেকেই বেশ ভোগাচ্ছে রিয়ালের খেলোয়াড়দের। গত বছর হাঁটুতে চোট পাওয়া সেন্টার-ব্যাক ডেভিড আলাবা এখনও পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি। আরেক ডিফেন্ডার দানি কারভাহালও এসিএল চোটে ছিটকে গেছেন এই মৌসুম থেকে। গেল মৌসুম একই চোট পেয়েছিলেন মিলিতাও।
আরও পড়ুন
ভিনিসিয়ুসের হ্যাটট্রিকে এক ম্যাচে ৩ চোটের ধাক্কা সামলে বড় জয় রিয়ালের |
এছাড়া গত মৌসুমের এসিএল চোট কাটিয়ে ফেরা গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া নতুন চোটে এখন আছেন মাঠের বাইরে। তিনি ও চোট আক্রান্ত মিডফিল্ডার অহেলিয়া চুয়ামেনির ডিসেম্বরের আগে মাঠে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
ওসাসুনার বিপক্ষে প্রথমার্ধটা রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের জন্য কাটল অম্লমধুর এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। এক দিকে গোল করছে দল, আর অন্যদিকে একের পর এক চোটে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা। তাতে শক্তি অনেকটাই কমে গেলেও বিরতির পরও দাপুটে ফুটবলই খেলল কার্লো আনচেলত্তির দল। হ্যাটট্রিক করলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তাতে শেষ দুই ম্যাচে বিশাল দুটি পরাজয়ের পর রিয়াল পেল স্বস্তির এক জয়।
লা লিগার শনিবাররে ম্যাচে রিয়াল জিতেছে ৪-০ গোলে। ভিনিসিয়ুস বাদে জালের দেখা পেয়েছেন মিডফিল্ডার জুড বেলিংহাম। এর মধ্য দিয়ে ঘরের মাঠে শেষ দুই ম্যাচে বার্সেলোনা ও এসি মিলানের কাছে শেষ দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৪-০ ও ৩-১ ব্যবধানে হারের ধাক্কা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠেছে স্প্যানিশ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা।
আরও পড়ুন
রিয়ালের রেকর্ড নাকি বার্সার চমক? |
পুরো ম্যাচেই বজায় ছিল একতরফা আধিপাত্য। ম্যাচে গোলের জন্য ১৮টি শট নিয়ে আনচেলত্তির দল লক্ষ্যে রাখতে পারে ৮টি। বিপরীতে গোলের জন্য ওসাসুনা নিতে পারে মাত্র দুটি শট, সেগুলোও থাকেনি লক্ষ্যে।
এই মৌসুমে রিয়ালে যোগ দেওয়া কিলিয়ান এমবাপে কয়েক ম্যাচ ধরেই আছেন নিজের ছায়া হয়ে। এই ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। ১৩তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম বলার মত আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনিই। তবে ফরাসি তারকার বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া শট ব্লক করে দেন ওসাসুনার এক ডিফেন্ডার।
সাত মিনিট পর রিয়ালকে চিন্তায় ফেলে মুখ ঢেকে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন উইঙ্গার রদ্রিগো। ৩০তম মিনিটে ফের চোটের হানা। এবার হাঁটুতে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওকে। এর চার মিনিট পর লিড পায় মাদ্রিদের ক্লাবটি। বক্সের ভেতর বেলিংহামের পাস থেকে ডান পায়ের শটে বাঁদিক থেকে ঠিকানা খুঁজে নেন ভিনিসিয়ুস।
আরও পড়ুন
আনচেলত্তির ‘ভয়ে’ রিয়ালের ট্রেনিং-এ যাচ্ছেন না ক্রুস |
৪২তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ান বেলিংহাম। অভিষিক্ত রাউল আসেনসিওর কাছ থেকে বক্সের মাঝামাঝি জায়গা থেকে বল জালে পাঠিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন ইংলিশ তারকা। এই মৌসুমে এটি তার প্রথম গোল। বিরতির পর চোটের শিকার ডিফেন্ডার লুকাস ভাসকেসের বদলি হিসেবে নামেন মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ।
৬১তম মিনিটে দ্রুততার সাথে পাল্টা আক্রমণে ওসাসুনাকে চমকে দেয় রিয়াল। গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিনের লম্বা করে বাড়ানো বল পেয়ে এগিয়ে যান ভিনিসিয়ুস। গতিতে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে ছয় গজ থেকে নেওয়া শটে স্কোরলাইন ৪-০ করে ফেলেন ব্যালন ডি’অরের এবারের রানার্সআপ। এই মৌসুমে লা লিগায় ১২ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন ভিনিসিয়ুস।
আট মিনিট পর ফের ওসাসুনার জালে বল। আরও একবার গোলদাতা সেই ভিনিসিয়ুস। অ্যাসিস্ট করেন মরোক্কান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ব্রাহিম দিয়াস।
বাকি সময়ে আরও কিছু আক্রমণ শানালেও ব্যবধান আর বাড়াতে পারেনি রিয়াল।
আরও পড়ুন
‘ভিনিসিয়ুসের উদযাপনে বিব্রত রিয়ালের সমর্থকরাও’ |
এই জয়ের মাধ্যমে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে বার্সেলোনার সাথে ব্যবধান কমিয়ে এনেছে ভিনিসিয়ুস-এমবাপেরা। ১২ ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট ২৭, আর শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার ৩৩।
৮ ঘণ্টা আগে
১০ ঘণ্টা আগে
৩ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
১৭ দিন আগে