১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৩:৩২ এম
টিম বাস থেকে নামছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা, প্রবেশ করবেন হোটেলে। স্বাভাবিকভাবেই লিওনেল মেসিকে ঘিরে আকর্ষণ বাকিদের চেয়ে ঢের বেশি। কিন্তু ওই বাস থেকে নামার সময় নজর কাড়লেন ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোও। বাস থেকে নামছেন, কাঁধে তার ব্যাগ, হাতে অক্সিজেন বুস্টার। বলিভিয়া যাত্রা মানেই যেন ফুটবলারদের বাড়তি আতঙ্ক, আলাদা দুশ্চিন্তা। যার নেই কোনো সমাধান, মানিয়ে নেওয়াই একমাত্র উপায়।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে আর্জেন্টিনা এখন বলিভিয়ায়। বুধবার রাতে রাজধানী লা পাজে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বিশ্বচ্যাপিয়নরা। মেসি সে ম্যাচে খেলবেন কি না তা নিয়ে আছে সংশয়। ইকুয়েডরের বিপক্ষে নিজ ইচ্ছায় বদলি হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন, কোচ লিওনেল স্কালোনিও রবিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে গেছেন মেসির খেলা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটবে সোমবার অনুশীলনের পর।
বলিভিয়ার এই মাঠ অবশ্য মেসির জন্য নতুন কিছু নয়। নিজের ক্যারিয়ারে এই মাঠে চার ম্যাচ খেলেছেন, জিততে পেরেছেন মোটে একটায়। যদিও বলিভিয়া দক্ষিণ আমেরিকার দুর্বল দলগুলোর একটাই। তবে সেই গল্পটাই বদলে যায় যখন বলিভিয়া নিজেদের ঘরের মাঠে খেলে। নিজেদের মাঠের রাজা ওরা। ১৯৯৩ সালের পর থেকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে আর জয়ের দেখাই পায়নি বলিভিয়া। এই সময়ে সবমিলিয়ে তারা খেলেছে ৬৫ ম্যাচ। অথচ ঘরের মাঠে শেষ ২৪ ম্যাচে তারা জিতেছে ১৪টায়, ড্র করেছে ১০টা।
ঘরের মাঠই আসলে বলিভিয়ার শক্তি। কিন্তু তার কৃতিত্ব পুরোটাই ভৌগলিক। সমুদ্রপৃষ্ঠ্ থেকে প্রায় ৩৬৫০ মিটার (১১,৯৭৫ ফিট) উঁচুতে অবস্থান দেশটির। ভিনদেশীদের জন্য অতো উঁচুতে যে কোনো খেলাই দুঃস্বপ্নের মতো। রোমেরোরা সে কারণেই হাতে করে অক্সিজেন বুস্টার নিয়ে প্রবেশ করেছেন বলিভিয়ায়।
এই গল্প অবশ্য নতুন কিছু নয়। বলিভিয়ায় ম্যাচ খেলতে গেলে যে আসল প্রতিপক্ষ উচ্চতা তা এতোদিনে প্রতিষ্ঠিত সত্য। হোম অ্যাডভান্টেজ পুরোটাই কাজে লাগানোর সুযোগ লাগে বলিভিয়ানদের সামনে। এই নিয়ে অবশ্য বহু আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। ২০০৭ সালে ২৫০০ মিটারের উঁচুতে ফুটবল ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। তাতে ভেন্যু হিসেবে বলিভিয়া বাদও পড়েছিল। সে সময় ফিফার এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছিলেন খোদ ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তোপের মুখে পরে ফিফাও ২০০৮ সালে সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে। বলিভিয়াতে আবারও ফেরে ফুটবল।
আরও পড়ুন: মেসির কারিশমাতেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শুভসূচনা আর্জেন্টিনার
ওই ঘটনার কিছুদিন পরই বলিভিয়ার মাঠে গিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে আর্জেন্টিনা হেরে এসেছিল ৬-১ গোলে। সে সময় আবার দলের কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা। ওই হার আর্জেন্টিনার ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় হারগুলোর একটি।
অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এর আগেও বলিভিয়ায় গেছে আর্জেন্টিনার। বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ চলার সময় হাফটাইমে পুরো ব্রাজিল দলকে একসঙ্গে অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে গিয়ে মাঠেই একবার বমিও করতে হয়েছিল লিওনেল মেসিকে। এতো ফিরিস্তি শুনে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কী এমন উচ্চতা যার কারণে বিশ্বসেরা ফুটবলাররাই বেমালুম বোকা বনে যান বলিভিয়ায়?
উচ্চতা যত বেশি, বায়ুর চাপ তত কম। অর্থাৎ আপনার গ্রহণ করা অক্সিজেন রক্তে ট্রান্সফার করতে শরীরকে কসরত করতে হয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে শরীরও দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সহজ কথায় বললে, বলিভিয়ার যে উচ্চতা তাতে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থানের চেয়ে আরও ২০-২৫ শতাংশ শক্তি বেশি প্রয়োজন। অভ্যস্ততা না থাকলে সেটা আপনাকে ভোগাবেই- মেসি, নেইমার সবার বেলায় সত্য সেটা।
অবশ্য এখানেই শেষ নয়। অমন উচ্চতায় বলের স্বাভাবিক গতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে, বলের গতিপ্রকৃতির অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা প্রায় সময় বলেছেনও ফুটবলাররা। বলিভিয়া মূলত প্রতিপক্ষের এই অনভ্যস্ততার সুযোগটাই কাজে লাগায়। ঘরের মাঠের দূরন্ত্ব ফর্মের সঙ্গে বলিভিয়ার অ্যাওয়ে ফর্মের তফাৎও তাই প্রমাণ করে।
আর্জেন্টিনা বলিভিয়ার সঙ্গে খেলার আগে ওদের মাঠে অনুশীলন করবে একদিন। মানিয়ে নেওয়ার জন্য ওইটুকু সময়ই আছে স্কালোনির দলের। ২০২০ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বলিভিয়ার মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফিরেছিল তার দল। তাতে ১৫ বছর ধরে বলিভিয়ার মাঠে জয়হীন থাকার ‘ভুতুড়ে’ রেকর্ডটাও আর্জেন্টিনার পিছু ছেড়েছিল। যদিও সেই ম্যাচেও আর্জেন্টিনাকে ভুগতে হয়েছিল বলিভিয়ার উচ্চতায়।
এবার আর্জেন্টিনা লা পাজে পা রেখেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে। কিন্তু তবুও স্বস্তি নেই। ঘুরে ফিরে সেই ‘উচ্চতা’ প্রশ্নের সমাধান জানা নেই কারও। স্কালোনিই বোধ হয় সবচেয়ে ভালোভাবে জবাবটা দিয়েছেন, “অনেক কিছুই তো চেষ্টা করা হয়েছে, আর যে কোনো দলই ওখানে গিয়ে হিমশিম খায়। এই নিয়ে এতো কথা বলতে চাই না, কারণ এসব তো আর পরিবর্তন করা যাবে না। এটা পরিস্কার একটা অ্যাডভান্টেজ ওই দলের জন্য, কিন্তু এই নিয়ে আমাদের অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই।“
২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
বলনিয়া ম্যাচটা কোচ নুরি শাহিনের জন্য ছিল বড় এক অগ্নিপরীক্ষা। দলের বাজে পারফরম্যান্সে যে আগে থেকেই ছিলেন প্রবল চাপের মুখে। হারলেই বিদায়, এমন ম্যাচেও পাননি জয়ের দেখা। ফলে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড নিয়েছে কঠিন সিদ্ধান্ত। নিয়োগের ছয় মাস না যেতেই বরখাস্ত করেছে ক্লাবের সাবেক এই ফুটবলারকে।
বুন্দেসলিগায় বরুশিয়ার অবস্থান টেবিলের দশ নম্বরে। সবার ওপরে থাকা বায়ার্ন মিউনিখের সাথে পয়েন্টের ব্যবধানটা ২০। আর চতুর্থ স্থানে থাকা দলের সাথে সেই ব্যবধান দাঁড়িয়েছে সাত পয়েন্টে। দলটির পারফরম্যান্স এতটাই নাজেহাল যে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত তারা পায়নি কোনো জয়ের দেখা। তাতে শাহিনের চাকরিটা ছিল শঙ্কায়। বলনিয়া ম্যাচে শেষে সেই শঙ্কায় রূপ নিয়েছে বাস্তবতায়।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাহিনকে ছাটাই করার কথা নিশ্চিত করেছে ডর্টমুন্ড। যেখানে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। শাহিনও অবশ্য মেনে নিয়েছেন ক্লাবের সিদ্ধান্ত। বিদায় নিয়েছেন ক্লাবকে শুভকামনা জানিয়েই।
গেল মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে হারার পর ক্লাব ছেড়েছিলেন এদিন টেরেজিস। তারপরই দায়িত্ব দেওয়া হয় শাহিনের কাঁধে। সব মিলিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডর্টমুন্ডের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন ২৭ ম্যাচে। যেখানে ১২ জয়ের বিপরীতে দেখেছেন ১১ হার, বাকি ৪ ম্যাচ হয়েছে ড্র।
লেভারকুসেনের বিপক্ষে প্রথমার্ধে এক গোল হজমের পাশাপাশি এক লাল কার্ড দেখায় দশজন নিয়েও খেলতে হচ্ছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া গোল করে আতলেতিকো মাদ্রিদকে দারুণ এক জয় এনে দেওয়ার কারিগর হুলিয়ান আলভারেজ। দলটির কোচ দিয়েগো সিমিওনের আশা, সামনে এমন আরও পারফরম্যান্স দেখাবেন আর্জেন্টিনার এই স্ট্রাইকার।
ম্যাচের ২৪তম মিনিটে জেরেমি ফ্রিম্পংকে পেছন থেকে বেপরোয়া স্টাডস-আপ ট্যাকেলের কারণে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন আতলেতিকোর মিডফিল্ডার পাবলো ব্যারিওস। বিরতির ঠিক আগে এরপর করতে হয় গোল হজম। তবে ৫৫তম মিনিটে সমতা ফিরিয়ে লড়াইয়ের সূচনা করেন আলভারেজ। প্রতিপক্ষের একজনও এরপর লাল কার্ড দেখার পর ৯০তম মিনিটে ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেওয়া গোলটি করেন আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা এই ফুটবলারই।
গত গ্রীষ্মে ম্যানচেস্টার সিটি থেকে আতলেতিকোতে যোগ দেওয়ার প্রতিভাবান আলভারেজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সিমিওনে।
“আমরা যখনই হুলিয়ানকে নিয়ে কথা বলি, তখন সেখানে এমন কিছুই মিশে থাকে। সে একজন শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড়। সে বর্তমান সময়ের এমন একজন খেলোয়াড়, যা সামনে রয়েছে আরও ভালো একটা ভবিষ্যৎ। আশা করি দল হিসেবে, আময়া কোচিং টিমের সবাই মিলে তাকে আরও উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারব।”
ম্যাচে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আতলেতিকোকে খেলতে হয়েছে ১০ জন নিয়ে। এরপর এক গোলে পিছিয়ে থাকার পরও দলটি লড়ে গেছে শেষ পর্যন্ত, আলভারেজের হাত ধরে সেটাই তাদের এনে দিয়েছে জয়। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে নিজেদের ১৭ ম্যাচে এটি আতলেতিকোর ১৬তম জয়, যা তাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পয়েন্ট টেবিলে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে নিয়ে এসেছে তিন নম্বর স্থানে।
তবে সিমিওনে খুশি সমর্থকদের জন্যও, যারা সাক্ষী হয়েছেন দারুণ এক ম্যাচের।
“যারা যারা ম্যাচটা দেখেছে, নিশ্চিতভাবে এটা এমন একটি ম্যাচ ছিল, যা নিশ্চিতভাবেই অনেকদিন সেই লোকদের স্মৃতিতে থাকবে। কারণ, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল এবং একটি খুব রোমাঞ্চকর চ্যাম্পিয়নস লিগের রাতে অর্জিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়। স্টেডিয়ামে আসা লোকেরা যে আনন্দ নিয়ে বাড়ি গেছে, তাতে আমি খুশি। আমাদের জয়ে তারা একটি সুন্দর, সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরের আরেকটি নাটকীয় রাতে বিরতির আগেই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল বার্সেলোনা। তিন গোল হজমের পর দ্বিতীয়ার্ধে স্কোরলাইন হয়ে গিয়েছিল ৪-২। তবে ক্লাবের ইতিহাসের আরেকটি অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস রচনা করে কাতালান ক্লাবটি বেনফিকাকে হারিয়ে দেয় ৫-৪ গোলে! বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক তাই বলেই ফেললেন, এমন ম্যাচ তিনি আগে দেখেননি কখনই।
বার্সেলোনার জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজের প্রথম ম্যাচে গড়বড় করা গোলরক্ষক ভয়চেক সেজনি দুটি ভুল করে বসেন। তাতে বিরতির আগেই হ্যাটট্রিক করে ফেলেন বেনফিকার ভাজলিস পাভলিদিস। এরপর আরেকটি গোল হজমে হারের দিকেই যাচ্ছিল বার্সেলোনা। তবে হার না মানার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে রবার্ট লেভানদোভস্কির দ্বিতীয় গোলের পর এরিক গার্সিয়া সমতা টানেন বার্সেলোনার। আর ইনজুরি টাইমে জয় এনে দেওয়া গোলটি করেন রাফিনিয়া।
ফ্লিকের কাছেও তাই ম্যাচটি হয়ে আছে খুব বিশেষ কিছুই।
“এটা একটা পাগলাটে ম্যাচ ছিল। সবচেয়ে ইতিবাচক দিক ছিল আমাদের মানসিকতা। আমরা কামব্যাক করেছি, এটা দুর্দান্ত ব্যাপার। এটাই ফুটবল, আর এটাই আমরা ভালোবাসি। আমার মনে হয় না এর আগে এমন একটা কামব্যাক দেখার অভিজ্ঞতা ছিল আমার।”
এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই বার্সেলোনার আছে পিএসজির বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ক্লাসিক এক জয়ের রেকর্ড। সেটা ছাপিয়ে না গেলেও, কাছাকাছিই থাকবে এখন বেনফিকা ম্যাচটি। ৭৮তম মিনিটে লেভানদোভস্কির যখন দলীয় তৃতীয় গোল করেন, তখনও যথেষ্ট ভালো খেলছিল বেনফিকা। তবে যেভাবেই হোক জিততে হবে, পুরো বার্সেলোনা দলের এমন এক দুর্দমনীয় মানসিকতা শেষ পর্যন্ত তাদের এনে দেয় জয়।
এই কারণেই জয়ের জন্য শিষ্যদের বাড়তি প্রশংসাই করেছেন ফ্লিক।
“আমরা বিরতির আগে ভালো ছিলাম না। তারা ভালো খেলে আগে গোলটাও পেয়ে যায়। তারা আমাদের অনেক নিচে নেমে ডিফেন্ড করতে বাধ্য করেছিল। আমরা ঠিক জায়গায় ছিলাম না। বিরতির পর আমরা ভালো খেলেছি এবং বদলি খেলোয়াড়রা সবাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।”
ম্যাচে দুটি ভুল করে সেজনির সমালোচনা হলেও তার কাঁধে আস্থার হাতই রাখলেন ফ্লিক।
“এমন কোন খেলোয়াড় আছে, যে ভুল করে না? এটা স্বাভাবিক। সেজনি কিছু ভুল করেছে, তবে বিরতির আগে সব খেলোয়াড়ই কিছু না কিছু ভুল করেছে।”
স্প্যানিশ রেডিও ওন্দা সেরো সোমবার দাবি তুলেছিল মৌসুম শেষেই রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির কোচ কার্লো আনচেলত্তি। তবে তাদের সেই দাবি ২৪ ঘণ্টাও ধোপে টেকেনি। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে আনচেলত্তি খোলসা করেছেন রিয়ালে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। নিজ ইচ্ছায় রিয়াল যে তিনি ছাড়তে চান না সে ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন ইতালিয়ান এই কোচ।
রিয়ালের সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখেই পড়েছেন আনচেলত্তি। ফলে চলতি মৌসুমে যাই হোক, লস ব্লাঙ্কোসদের ডেরা আনচেলত্তি ছাড়তে চান বলেই জানিয়েছিল ওন্দা সেরো। তাতে রিয়াল সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান আবেগি ভিডিও বানিয়ে ফেলেছিল আনচেলত্তিকে নিয়ে। অনেকে আবার তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিল রিয়াল কোচের বিদায়ের খবরে। যার কারণ অবশ্য রিয়ালের সাম্প্রতিক ফর্ম।
তবে মঙ্গলবার সালজবুর্গের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আনচেলত্তি জানালেন ভিন্ন কথা। নিজ ইচ্ছায় রিয়াল ছাড়তে চান না বলেই দিয়ে রাখলেন ইঙ্গিত, “ব্যাপারটা আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই। এই ক্লাব আমি কবে ছাড়বো সেটা আমার উপর নির্ভর করছে না। জানি সেটা আসবে একদিন। তবে কবে সেটা তা মোটেও আমার সিদ্ধান্ত হবে না।”
রিয়ালের সাথে আনচেলত্তির চুক্তির মেয়াদ আছে ২০২৬ পর্যন্ত। তবে ৬৫ বছর বয়সী এই কোচ রিয়ালের ডেরায় থাকতে চান কমপক্ষে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। ততদিন পর্যন্ত রিয়ালে সভাপতি হিসেবে থাকবেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। একসাথে দুজন বিদায় নিতে পারলে দারুণ হবে বলেও মন্তব্য করেছেন আনচেলত্তি।
“এটা যে কোনো সময়ই হতে পারে। কালকে, পরের সপ্তাহে, এক বছর কিংবা পাঁচ বছর। ফ্লোরেন্তিনো এখানে আরও চার বছর আছে, আমার ইচ্ছে এখানে আরও চার বছর থাকা, যাতে দুজন একসাথে বিদায় জানাতে পারি ক্লাবকে।”
গেল মৌসুমে রিয়ালকে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতালেও চলতি মৌসুমে রিয়ালের পারফরম্যান্সে দেখা মিলেছে অধারাবাহিকতার ছাপ। যা নিয়েই মূলত সমালোচনার মুখে পড়েছেন আনচেলত্তি। তবে মৌসুমের মাঝপথে এসে তার দলের অবস্থান লা লিগার শীর্ষে। চ্যাম্পিয়নস লিগে টেবিলের ২০ নম্বরে থাকলেও ভালোভাবেই সুযোগ আছে নকআউট পর্বে যাওয়ার। এছাড়া তারা জায়গা করে নিয়েছে কোপা দেল রের কোয়ার্টার ফাইনালেও।
প্রথমার্ধে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব বেশ কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছিল আবাহনীর। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর তারা আটকে রাখতে পারেনি আকাশী-নীলদের। শেষ মুহূর্তের ঝলকে তারা শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। দিনের অন্য ম্যাচে জয় পেয়েছে রহমতগঞ্জ। চট্টগ্রাম আবাহনীকে তারা উড়িয়ে দিয়েছে ৩-০ গোলে।
দুই দল জয় তুলে নেওয়ায় জমে উঠেছে ফেডারেশন কাপের গ্রুপ ‘বি’-এর শীর্ষস্থানের লড়াই। তিন ম্যাচ খেলে তিনটাতেই জয় পেয়েছে দুই দলই। সমান নয় পয়েন্ট হলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় টেবিল টপার রহমতগঞ্জ। তাই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন কে হবে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। যে ম্যাচে আবার লড়বে দুই দল। ম্যাচ ড্র হলে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গ্রুপ সেরা হয়ে পরের পর্বে যাবে রহমতগঞ্জ।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে এদিন দুই দল শুরুটা করেছে ধীরগতির। তবে সময়ের সাথে সাথে জমে উঠে ম্যাচ। দুই দলই পেয়েছিল বেশ কিছু সুযোগ, তবে কাজের কাজ গোলের দেখাই মেলেনি কারও। তাতে গোল ছাড়াই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধেও খেলা চলে একই তালে। তবে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে ঝিন্টু মিয়ার এক ভুলে কপাল খোলে আবাহনীর। এনামুল গাজিকে আটকাতে গিয়ে বক্সে ট্যাকেল করে বসেন ঝিন্টু। রেফারি সাথে সাথেই বাজান পেনাল্টির বাঁশি। স্পট কিক থেকে আবাহনীকে এগিয়ে দেন ইয়াসিন।
এই গোলটাই যেন পাল্টে দেয় ম্যাচের চিত্র। তিন মিনিট পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করে তারা। আগের পেনাল্টি আদায় করা সেই এনামুল গাজীর নাম জড়িয়ে এখানেও। তার দেওয়া পাস দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুর্দান্ত এক শটে জাল খুঁজে নেন মুরাদ। ৭১ তম মিনিটে তিন নম্বর গোলটা আসে মাহাদি ইউসুফের বাঁ পায়ের চমৎকার ফিনিশিংয়ে।
দিনের অন্য ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীকে পাত্তাই দেয়নি রহমতগঞ্জ। প্রথমার্ধেই জোড়া গোল করে তারা নিয়ন্ত্রণ নেয় ম্যাচের। ৩২ মিনিটে প্রথম গোলটা করেন রহমতগঞ্জ অধিনায়ক মোস্তফা আব্দুল খালিক। ৩৮ মিনিটে স্যামুয়েল বোয়াটেংকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন সাজন মিয়া। মিনিট তিনেক বাদে কর্নার থেকে ভেসে আসা বল বুলেট গতির এক শটে জালে জড়ান বোয়াটেং।
দ্বিতীয়ার্ধেও চাপ ধরে রাখে রহমতগঞ্জ। ৭১ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান তোহা। তাতে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রহমতগঞ্জ।