ইউরোর দামামা বাজতে শুরু করে দিয়েছে। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, কিলিয়ান এমবাপে, হ্যারি কেইন কিংবা টনি ক্রুসের মতো অভিজ্ঞরা প্রস্তুত ইউরোর মঞ্চ রাঙাতে। মূল লাইমলাইট থাকবে তাদের ঘিরেই। তবে এরই মাঝেও কয়েকজন তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়ও থাকবে, যারা আপনাকে চমকে দিতে পারে। দারুণ সব গোল, অ্যাসিস্ট বা স্কিলে আপনার নজর কাড়তে পারে। ইউরোর ২০২৪ নিয়ে আজকের আয়োজনে থাকবে এমন তরুণ কয়েকজন ফুটবলার। যারা ক্লাবের হয়ে আলো ছড়িয়ে এবার জাতীয় দলের হয়ে প্রস্তুত বড় মঞ্চ মাতাতে।
কোল পালমার (ইংল্যান্ড), পজিশন: মিডফিল্ডার
ক্লাব: চেলসি, বয়স: ২২
২০২২/২৩ মৌসুমে ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির ট্রেবল জয়ী দলের সদস্য। গেল মৌসুমে সিটি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন চেলসির ডেরায়। তাতেই রাতারাতি নায়কই বনে গেছেন কোল পালমার। চেলসির হয়ে কাটিয়েছেন দারুণ একটা মৌসুম।
চেলসির কঠিন সময়েও আলো ছরিয়েছেন এই তরুণ ফুটবলার। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ক্লাবটির হয়ে ৪৮ ম্যাচে করেছেন ২৭ গোল, আর সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১৫টি। দারুণ পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের। ডাক পেয়েছেন ইউরোর মূল স্কোয়াডেও।
আরও পড়ুন: ইউরোপে জার্মানদের আধিপত্য, হুমেলসের মজা ‘কৃষকদের ফলন ভালো হয়েছে’
তবে ইংল্যান্ডের শক্তিশালী আক্রমণভাগের শুরুর একাদশে সুযোগ পাওয়া তার জন্য কঠিনই বটে। বদলি হিসেবে নেমেও ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দেওয়ার ক্ষমতা আছে এই তরুণের। সব মিলিয়ে সাউথ গেটের জন্য ট্রাম্প কার্ড হিসেবেই কাজ করতে পারেন পালমার।
লামিন ইয়ামাল (স্পেন), পজিশন: ফরোয়ার্ড
ক্লাব: বার্সেলোনা, বয়স: ১৬
দারুণ এক রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে সময়ের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান ফুটবলার লামিন ইয়ামাল। ইউরোতে মাঠে নামলেই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ড গড়বেন এই তরুণ। বার্সেলোনার হয়ে মৌসুম জুড়েই পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন। এই বয়সেই স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়ে এক মৌসুমে খেলেছেন ৫০ ম্যাচ। করেছেন ৭ গোল, আর সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১০ গোল।
স্পেনের জার্সিতে এরই মধ্যে অভিষেকও হয়ে গেছে ইয়ামালের। সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে স্পেনের জার্সিতে গোল করার রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন এই তরুণ। আসছে ইউরোতে তরুণ্যে নির্ভর স্প্যানিশ দলের আক্রমণভাগে বড় দায়িত্বই সামলাতে হবে এই তরুণকে। বার্সার হয়ে নিজেকে প্রমাণ করা ইয়ামালের এবার পালা জাতীয় দলের হয়ে নিজের সামর্থের প্রমাণ দেওয়ার।
আর্দা গুলের (তুরস্ক), পজিশন:মিডফিল্ডার,
ক্লাব: রিয়াল মাদ্রিদ, বয়স: ১৯
প্রতিভার কারণে তাকে বলা হয় ‘তুরস্কের মেসি’। বল পায়ে পেলে যে আর্দা গুলের আর্জেন্টিনা তারকার মতোই জাদু দেখাতে পছন্দ করেন। গেল গ্রীষ্মে ফেনারবেচে ছেড়ে যোগ দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে। অবশ্য রিয়ালে এসে লম্বা সময়ই চোটে পড়ে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। চোট কাটিয়ে ফিরলেও বেশিরভাগ সময়ই কাটাতে হয়েছে ডাগআউটে বসে। তবে মৌসুমের শেষভাগে এসে কার্লো আনচেলত্তি সুযোগ করে দিয়েছেন গুলেরকে।
সুযোগ পেয়েই জানান দিয়েছেন তিনি প্রস্তুত। সব মিলিয়ে খেলেছেন ১২ ম্যাচে, করেছেন ৬ গোল। তুরস্কো জাতীয় দলেও মাত্র ১৭ বছর বয়সেই হয়েছে অভিষেক। দেখা পেয়েছেন গোলেরও। আসন্ন ইউরোতে গুলের নজর কাড়তে পারে গোল করে কিংবা করিয়ে।
জাবি সিমন্স (নেদারল্যান্ডস), পজিশন: মিডফিল্ডার,
ক্লাব: আরবি লাইপজিগ, বয়স: ২১
অ্যাটাকিং মিডফিল্ড, লেফট কিংবা রাইট উইঙ্গার সবখানেই খেলতে সমানভাবে পারদর্শি জাবি সিমন্স। লা মাসিয়া থাকতেই আসেন আলোচনায়। এরপর যান পিএসজিতে। সেখান থেকে এই মৌসুমে লোনে যোগ দেন আরবি লাইপজেগে। জার্মান ক্লাবে যোগ দিয়ে নিজেকে মেলে ধরেন বেশ ভালো ভাবেই। ৪৩ ম্যাচে করেন ১০ গোল ও ১৫ অ্যাসিস্ট। তাতে বার্সেলোনা বায়ার্ন মিউনিখের মতো ক্লাবগুলো তাকে কিনতে উঠে পড়েই লেগেছে।
নেদারল্যান্ডসের জার্সিতে বছর দেড়েক আগেই অভিষেকটা হয়ে গেছে। তবে ১৩ ম্যাচ খেলে ফেললেও এখনো গোলের দেখা পাওয়া হয়নি তার। জার্মানে বসা ইউরোতে হয়তো নিজেকে ভিন্নরূপে চেনাবেন ডাচ ফুটবলার।
ফ্লোরিয়ান ভার্টজ, জার্মানি, পজিশন: মিডফিল্ডার,
ক্লাব: বায়ার লেভারকুসেন, বয়স: ২১
পুরো মৌসুম জুড়ে লেভারকুসেন লিখেছে একের পর রূপকথার গল্প। প্রায় এক যুগ পর বায়ার্ন মিউনিখের দম্ব ভেঙে জিতে নিয়েছে বুন্দেসলিগা। মৌসুমের একমাত্র হার তাও ইউরোপা লিগের ফাইনালে আতালান্তার সাথে। লেভারকুসেনের এমন সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার ফ্লোরিয়ান ভার্টজ। ৪৭ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৮ গোল আর ১৯ অ্যাসিস্ট। দলবদলের বাজারে গুঞ্জন, রিয়াল মাদ্রিদ এরই মধ্যে এই তরুণ ফুটবলারকে দলে ভেড়াতে ছক আঁকা শুরু করে দিয়েছে।
জাতীয় দলেও অভিষেক হয়ে গেছে বছর তিনেক আগে। খেলে ফেলেছেন ১৮ ম্যাচ, করেছেন এক গোল। এতো দিন আসা যাওয়ার মিছিলে থাকলেও জুলিয়ান নাগেলসমানের ইউরোর বর্তমান স্কোয়াডে ভার্টজ বেশ গুরুত্বপূর্ণই বলা যায়। টনি ক্রুস, ইলকায় গুন্ডুয়ানদের সাথে মিডফিল্ডের গুরু দায়িত্ব সামলাতে হবে। সেই সাথে হয়তো পজিশন বদলে উইংগার হিসেবেও তাকে খেলাতে পারেন নাগেলসমান।
ওয়ারেন জাইরে-এমেরি (ফ্রান্স), পজিশন: মিডফিল্ডার,
ক্লাব: পিএসজি, বয়স: ১৮
পিএসজির হয়ে ১৬ বছর বয়সে অভিষেকে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। ফ্রান্স জাতীয় দলেও সবচেয়ে কম বয়সে গোল করে নজর কেড়েছেন জাইরে- এমেরি। সব মিলিয়ে এই মৌসুমে পিএসজির হয়ে খেলেছেন ৪৩ ম্যাচ, করেছেন ৩ গোল আর সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৭ গোল।
ফ্রান্সের মূল একাদশে তার জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা কমই। তবে সুযোগ আছে বদলি ফুটবলার হিসেবে মাঠে নেমে চিত্রনাট্য বদলে দেওয়ার।
আরও পড়ুন: ইউরোর আগেই ভবিষ্যৎ ‘স্পষ্ট করবেন’ এমবাপে
জেরমি ডকু (বেলজিয়াম), পজিশন: লেফট উইংগার
ক্লাব: ম্যানচেস্টার সিটি, বয়স: ২২
স্কিল, ড্রিবিলিং সেই সাথে স্পিড সব মিলিয়ে জেরমি ডকু পরিপূর্ণ এক প্যাকেজই বলা যায়। ম্যানচেস্টার সিটিতে পেপ গার্দিওলার প্রিয় ছাত্রদের একজনও তিনি। দুই উইংয়ে খেলতে পারেন সাবলীলভাবেই। সেই সাথে সামলাতে পারেন মিডফিল্ডটাও। এই মৌসুমে বেশীরভাগ সময়ে বদলি হিসেবে নামলেও যখনই গার্দিওলা তার ওপর আস্থা রেখেছেন প্রতিদান দিতে ভুল করেননি এই তরুণ। সব মিলিয়ে ৪৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ৭ গোল আর ১০ অ্যাসিস্ট।
বেলজিয়ামের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে বছর চারেক আগে। ২২ ম্যাচ খেলে করেছেন ২ গোল। বেলজিয়াম দলেও তাকে খেলতে হবে কয়েক জায়গায়। কখনও মিডফিল্ড তো কখনো উইংগার হিসেবে। তবে যেখানেই খেলেন না কেন, ডকুকে পালন করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
বেঞ্জামিন সেসকো (স্লোভেনিয়া), পজিশন: স্ট্রাইকার
ক্লাব: আরবি লাইপজিগ, বয়স: ২১
লাইপজিগের হয়ে মৌসুমের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। তবে মৌসুমের মাঝপথে এসে জ্বলে উঠেন বেঞ্জামিন সেসকো। ৪২ ম্যাচে ১৮ গোলের পাশাপাশি করেছেন ২ অ্যাসিস্ট।
স্লোভেনিয়ার জার্সিতেও খেলে ফেলেছেন ২৯ ম্যাচ। করেছেন ১১ গোল। স্লোভেনিয়ার এবারে ইউরো কতদূর যাবে তার অনেকখানি নির্ভর করবে এই তরুণের ওপর। তার গোলই হতে পারে স্লোভেনিয়ার জন্য ‘এক্স ফেক্টর’।
১ দিন আগে
২ দিন আগে
২ দিন আগে
৫ দিন আগে
৬ দিন আগে
৭ দিন আগে
১৯ দিন আগে