দিনের শেষ ঘণ্টার খেলা চলছে, ওভারে আগে দুটি চার হজম করা নাসিম শাহ দিলেন বাউন্সার, সপাটে পুল করে সেটা মাঠের বাইরেই পাঠিয়ে দিলেন লিটন দাস। পরের বলে আরেকটি বাউন্ডারি মেরে ফিফটিও করে ফেললেন এই ড্যাশিং ব্যাটার। দিনে দুই দফায় চাপে পড়া বাংলাদেশ শেষ সেশনে এভাবেই প্রাধান্য দেখালো পাকিস্তান বোলারদের ওপর। এর আগে শাদমান ইসলামের চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ের পর সফরকারীদের শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেলন ফিফটি করা মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করেছে ৯২ ওভারে ৫ উইকেটে ৩১৬ রান। পিছিয়ে আছে ১৩২ রানে। পাকিস্তান তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে।
আগের দিন শেষ ঘণ্টায় পাকিস্তানের বোলারদের ভালোই সামাল দিয়েছিলেন দুই ওপেনার শাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। তৃতীয় দিনের শুরুটাও করেন সাবধানী ব্যাটিংয়ে। তবে তাদের সেই প্রতিরোধ বেশি স্থায়ী হয়নি। আগের কয়েক ওভারে জাকিরকে পরাস্ত করা নাসিম শাহ এবার তাকে উইকেটের ক্যাচ দিয়ে ফেরান দারুণ এক ডেলিভারিতে। ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। জাকিরের অবদান ১২।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা-নিউজিল্যান্ড টেস্টের মাঝে ১ দিনের বিরতি
ক্রিজে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তও সেভাবে দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। কয়েকবারই তাকে বিভ্রান্ত করেন বোলাররা। নাসিমের বাউন্সাড়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে এক প্রায় ক্যাচ তুলেই দিয়েছিলেন, বেঁচে যান অল্পের জন্য। সকালের প্রথম ঘণ্টায় ভীষণ হিসেবী বোলিং করে পাকিস্তান, আর তাতে রানের গতি বেশ কমে যায় বাংলাদেশের।
শাদমান একপ্রান্তে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করলেও শান্ত একেবারেই সেট হতে পারছিলেন না। পরপর দুই ওভারে রক্ষা পান লেগ বিফোর ও বোল্ড হওয়া থেকে। ক্রমশ জেকে বসা চাপই শেষ পর্যন্ত তার বিপদের কারণ হয়। খুররাম শাহজাদ তাকে ক্লিন বোল্ড করেন বাংলাদেশ অধিনায়ককে। ফর্মের সাথে লড়তে থাকা শান্ত করতে পারেন মোটে ১৬ রান।
এরপরই বাংলাদেশের ইনিংসের সেরা জুটিতে গড়েন শাদমান ও মুমিনুল হক। দুজনই বাজে বল কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে রান বাড়ান। সেট হয়ে মুমিনুল আগ্রাসনের আভাস দেন। নাসিমকে মারেন টানা দুই বাউন্ডারি। লাঞ্চ বিরতির আগে চার মেরে পঞ্চাশে পা রাখেন শাদমান। বাংলাদেশের স্কোর তখন ২ উইকেটে ১৩৪।
বিরতির পর প্রথম বলে আঘা আসলামকে বাউন্ডারি হাঁকান মুমিনুল। ৭৫ বলে ফিফটি তুলে নেন বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক। তবে এরপরই পাকিস্তানের আঘাত। শান্তর উইকেটের মত প্রায়ই একই ডেলিভারিতে ইনসাইড-এজ হওয়া মুমিনুলকেও বোল্ড করেন খুররাম। এই জুটিতে এসেছিল ৯৪ রান।
পার্টটাইম স্পিনার আঘাকে চাপে ফেলতেই কিনা, তার ওপর চড়াও হন শাদমান। পরপর তিন ওভারে এই অফ স্পিনারকে মারেন ওভারে দুটি করে চার। তার জায়গায় আক্রমণে আসা নাসিমের ফিরতি স্পেলের প্রথম ওভারেও একই ধারায় দুটি চার মারেন শাদমান।
নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে এরপর কিছুটা সাবধানী হয়ে যান এই বাঁহাতি ব্যাটার। আর সেটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায়। চা বিরতির আগে মোহাম্মদ আলির করা শেষ ওভারের শেষ বলে লাইন মিস করে বোল্ড হন শাদমান। শেষ হয় ১২ চারে সাজানো তার ৯৩ রানের চমৎকার এক ইনিংসের।
সাকিব আল হাসান ক্রিজে নেমে যথারীতি দ্রুত রান তোলার দিকেই মনোযোগ দেন। তবে তার সেই প্রচেষ্টা খুব একটা কাজে দেয়নি। পার্টটাইম লেগ স্পিনে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে ফিরিয়ে দেন সাইম আইয়ুব। দুই চারে করেন মাত্র ১৫ রান। ২১৮ রানে ৫ উইকেটে হারিয়ে চাপের মুখেই পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে পাল্টা লড়াইয়ের শুরু করেন মুশফিকুর ও লিটন দাস। দুজনই দেখেশুনে খেলে জুটি লম্বা করেন। ব্যক্তিগত ১৭ রানে থাকা অবস্থায় রান-আউট হতে পারতেন লিটন, তবে শান সরাসরি থ্রো মিস করায় বেঁচে যান। পরের ওভারে নাসিমকে দুই বার সীমানা পার করেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ‘এ’-পাকিস্তান শাহিন্স সিরিজ শেষ হলো ড্রয়ে
অন্যপ্রান্তে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে থাকা মুশফিকুর দিনের খেলার শেষ ভাগে শাহিনকে চার মেরে পঞ্চাশের ঘরে প্রবেশ করেন। তবে অন্যপ্রান্তে শুরু থেকেই ইতিবাচক ব্যাটিং করা লিটন ৮৯তম ওভারে রীতিমত তাণ্ডব বইয়ে দেন নাসিমের ওপর। তিন চার ও এক ছক্কায় তুলে নেন ১৮ রান। তাতে মাত্র ৫২ বলে হয়ে যায় তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৭তম ফিফটি।
বাকি সময়ে মুশফিকুর-লিটন জুটি পার করে দেন বিপদ ছাড়াই। যদিও খুররামের করা দিনের শেষ ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন ছিল মুশফিকুরের বিরুদ্ধে। তবে রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান।
মুশফিকুর অপরাজিত থাকেন ৫৫ রানে। আর ৮৯.৬৬ স্ট্রাইক রেটে লিটনের নামের পাশে রয়েছে ৫২ রান।
১৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০৯ এম
১৬ জুলাই ২০২৫, ১১:২৩ পিএম
শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় ভেন্যু প্রেমাদাসায় সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে অতীত রেকর্ডটা বাংলাদেশের দারুণ। কলম্বোর এই ভেন্যুতে এবারের টি-টোয়েন্টি সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে অবতীর্ন হওয়ার আগে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ম্যাচের ৩টিতে জয়ের সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। ৭ বছর আগে এই মাঠে নিদাহাস কাপে দুই লড়াইয়ের দুটিতে জিতে নাগিন নৃত্য উৎসব করেছে বাংলাদেশ। সেই অতীত থেকে টনিক নিয়ে প্রেমাদাসায় নতুন ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের এতোদিন ছিল না কোনো দ্বি-পাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের অতীত। ২০১৭ সালে ১-১ এ সিরিজ ড্র-ই ছিল বাংলাদেশের সান্ত্বনা।
শেখ মেহেদীর ভয়ংকর ছোবল (৪/১১) এবং তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাটিং ঝড়ে ( ৪৭ বলে ৭৩*) ২১ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটে জিতে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের উৎসব করেছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উইকেটহীন কাটিয়েছেন ঠিকই,তবে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের বিপক্ষে অফ স্পিনার শেখ মেহেদীর বোলিং ছিল মিতব্যয়ী। এন্টিগায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-০-২২-০, ভারতের বিপক্ষে ৪-০-২৮-০, এমন মিতব্যয়ী বোলিংয়ে হাততালি পাওয়ারই কথা এই অফ স্পিনারের। স্লো উইকেটে এই অফ স্পিনার কতোটা কার্যকর, তা জানিয়ে দিয়েছেন প্রেমাদাসায়। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে করেছেন টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং (৪-১-১১-৪)। তার স্পিন বিষে নীল শ্রীলঙ্কা ধুঁকেছে রানে। স্কোর টেনে নিতে পেরেছে ১৩২/৭ পর্যন্ত।
গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে এই অফ স্পিনার নিজেকে একটু বেশিই চিনিয়েছিলেন। তিন ম্যাচের ওই সিরিজে ৮ উইকেটে উড়েছেন হাওয়ায়। জ্যামাইকায় ওই সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪-০-১৩-৪ ছিল তাঁর এতোদিন সেরা বোলিং। সেই বোলিং ছাপিয়ে এদিন প্রেমাদাসায় বিস্ময়কর বোলিং করেছেন। ২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১৭টি দিয়েছেন ডট! একটিও বাউন্ডারি মারতে পারেনি তাকে কেউ। ১ ওভারের শেষ স্পেলটি আবার মেডেন উইকেট (১-০-০-১)। নিজের প্রথম ওভারে কুশল পেরেরাকে (০) স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে উইকেটের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার দিনে শ্রীলঙ্কার কোমর ভেঙ্গে দিয়েছেন শেখ মেহেদী আউটসাইড অফ ডেলিভারিতে চান্দিমালকে (৪) পয়েন্টে ক্যাচের পাতা ফাঁদে ফেলে। শেখ মেহেদীর বলে আসালাঙ্কা (৩) ব্যাক ফুটে ডিফেন্স করতে যেয়ে হয়েছেন বোল্ড। শ্রীলঙ্কার ইনফর্ম ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাকে (৩৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৪৬) হাফ সেঞ্চুরির আগে ফিরিয়ে দিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং শেষ করেছেন শেখ মেহেদী।
অকেশনাল স্পিনার শামীম পাটোয়ারি বল হাতে নিয়ে নির্ভরতা দিয়ে চলেছেন। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁর দ্বিতীয় ওভারে কামিন্দু মেন্ডিজ রিভার্স সুইপ করতে যেয়ে পয়েন্টে দিয়েছেন ক্যাচ (১৫ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ২১)। এদিন বাঁ হাতি পেসার মোস্তাফিজ করেছেন মিতব্যয়ী বোলিং (৪-০-১৭-১)। ২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১১টি ডট দিয়েছেন তিনি। ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করেছেন। তাঁর শেষ স্পেলটি (২-০-৬-১) এক কথায় অসাধারণ। ইনিংসের ৫ম বলে কুশল মেন্ডিজকে (৪ বলে ৬) স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে প্রথম ব্রেক থ্রু দিয়েছিলেন বাঁ হাতি পেসার শরিফুল। তবে খরুচে বোলিংয়ের (৪-০-৫০-১) অপবাদ গায়ে মাখাতে হয়েছে তাকে। তাঁর শেষ স্পেলটি ছিল খরুচে। ২০তম ওভারে খরচ তাঁর ২২ রান। শানাকার হাতে ওই ওভারে খেয়েছেন ২ ছক্কা,২ বাউন্ডারি।
ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কাকে ৮৩ রানে হারিয়ে সিরিজে ভালভাবে ফেরাটা ছিল সিরিজের শেষ ম্যাচে আত্মবিশ্বাসের রসদ। বোলারদের অসামান্য বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ১৩২/৭ এ আটকে ফেলে ১৩৩ রানের চ্যালেঞ্জটা সহজ করেছেন দুই টপ অর্ডার তানজিদ হাসান তামিম-লিটন দাস।
ইনিংসের প্রথম বলে তুষারার লো বাউন্সি ডেলিভারি ব্যাক প্যাডে আঘাত হানায় গোল্ডেন ডাক-এ ফিরতে হয় ওপেনার পারভেজ হাসান ইমনকে (১ বলে ০)। তবে স্কোর কার্ডে রান ওঠার আগে ওপেনিং পার্টনারশিপ ভেঙ্গে যাওয়ায় দুর্ভাবনায় পড়তে দেননি তানজিদ হাসান তামিম-লিটন দাস। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তাদের ৫০ বলে ৭৪ রান বড় জয়ের পথ করেছে প্রশস্ত। বাকি দায়িত্বটা পালন করেছেন অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিতে তানজিদ হাসান তামিম-তাওহিদ হৃদয় (৪৮ বলে ৫৯*)। এই দুটি পার্টনারশিপের কল্যানে ২১ বল হাতে রেখে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ব্যবধানে (৮ উইকেটে ) জিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের উৎসব করেছে। এটি উইকেটের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছর সিলেটে ১১ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটে জয়ের অতীত আছে বাংলাদেশের।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে লিটনের বিপক্ষে এলবিডাব্লুর সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন লঙ্কান আম্পায়ার। ওই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রিভিউ আপীলে লিটন জিতে ইনিংস টেনে নিয়েছেন ৩২ রান পর্যন্ত। ২৮ বলের যে ইনিংসে ছিল ২ চার ১ ছক্কা। চারের চেয়ে ছক্কার আধিক্যে নিজেকে একটু বেশিই চিনিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস এতোদিন ছিল তার ৬৩। গত বছর চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছেন ওই স্কোর। সেই স্কোরকে ছাপিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে করেছেন হার না মানা ৭৩ রান। ৪৭ বলের যে ইনিংসে ১ টি চারের পাশে মেরেছেন ৬টি ছক্কা। উইনিং রান নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরা হৃদয় ছিলেন ২৫ বলে ২৭ রানে অপরাজিত।
কোনো ফরম্যাটেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে আগে ছিল না সিরিজ জয়ের কীর্তি। দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ে জাগে সেই আশা। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শেষের ওভার বাদে বোলার তাদের কাজটা করলেন দারুণভাবেই। ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপ তৈরি হল এরপরও। তবে তানজিদ হাসান তামিমের ফিফটির সাথে অন্য ব্যাটারদের পেশাদার ব্যাটিংয়ে বিশাল জয়ে সিরিজ জয়ও হল লিটন দাসের দলের।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কাকে অনায়াসেই ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১৩৩ রানের টার্গেট সফরকারীরা স্পর্শ করেছে ১৬.৩ ওভারেই।
কলম্বোয় প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সবশেষ ১০ ম্যাচে ৯টি জিতেছে রান তাড়া করা দল। ১৩৩ রান তাড়া করা বাংলাদেশের জন্য তাই খুব কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। সেটাও হয়নিও।
ইনিংসের প্রথম বলেই অবশ্য বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। নুয়ান থুসারার ইনসুইংয়ে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি তরুণ এই ওপেনারের। আম্পায়ার্স কলে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। এটি ইমনের ক্যারিয়ারের ১৫তম ম্যাচে তৃতীয় গোল্ডেন ডাক।
এরপরই পাল্টা আক্রমণে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলে দেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম মিলে। অবশ্য লিটন ৮ রানে থাকা অবস্থায় একবার বিনুরা ফার্নান্দোর এক ইয়র্কারে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছিলেন। বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪৭।
তানজিদ এদিন শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। চারিথ আসালাঙ্কার প্রথম বলেই ছক্কার পর আর দুটি বড় শটে পূর্ণ করেন লিটনের সাথে জুটির পঞ্চাশ, বল প্রয়োজন হয় মাত্র ৩৬টি।
আগের ম্যাচে ৭৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা লিটন ফর্ম ধরে রেখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন আরেকটি ফিফটির দিকে। তবে এবার আর পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। কামিন্দু মেন্দিসের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে কুসাল মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়ার আগে ২৬ বলে করেন ৩২ রান। জুটিতে রান হয় ৭৪ রান।
তবে তানজিদ ঠিকই ফিফটি তুলে নেন। জেফ্রি ভ্যান্ডারসেকে প্রথমে ছক্কা, পরের বলে চার মেরে মাত্র ২৭ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তরুণ এই ওপেনার। এতে ভর করে ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৮৯ রান, যা গড়ে দেয় সহজ জয়ের ভিত।
তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে এরপর বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন তানজিদ। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে তারা যোগ করেন ৬৯ রান। তানজিদ অপরাজিত থাকেন ৪৭ বলে ৬ ছক্কা ও এক চারে ৭৩ রানে। আর তাওহীদ করেন ২৫ বলে ২৭।
এর আগে টস হেরে আগে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশ তৃতীয় ম্যাচেও দুইটি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায়। মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গায় দলে ফেরেন শেখ মাহেদি হাসান ও তানজিম হাসান সাকিব।
সিরিজে প্রথমবার মাঠে নেমেই বাজিমাত করেন মাহেদি। ম্যাচের প্রথম বলেই কুসাল পেরেরাকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ডানহাতি এই স্পিনার। লম্বা সময় ফর এই ফরম্যাটে দলে ফেরা দিনেশ চান্দিমালও সুবিধা করতে পারেননি। ৫ বলে মাত্র ৪ রান করে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
প্রথম তিন ওভারের মধ্যেই তিন উইকেটের দেখা পেতে পারত বাংলাদেশ, তবে কঠিন দুটি সুযোগ হাতছাড়া হয় ফিল্ডারদের ব্যর্থতায়।
দারুণ এক স্পেল করা মাহেদি তার তৃতীয় ওভারে ফের আঘাত হানেন। এবার বোল্ড করেন চারিথ আসালাঙ্কাকে। একপ্রান্ত আগলে পাওয়ার প্লেতে কিছু আগ্রাসী শট খেলেন পথুম নিসাঙ্কা। তবে শেষ পর্যন্ত তাকেও থামান সেই মাহেদি। কয়েকবার জীবন পাওয়া এই ব্যাটারকে ফেরান রিটার্ন ক্যাচে। চার ওভার শেষ করেন মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে, যা এই ফরম্যাটে তার তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংও।
অন্যদিকে শুরুতে একটি ক্যাচ ফেলা তানজিম কিছুটা ক্ষতিপূরণ করেন কামিন্দু মেন্ডিসকে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফিরিয়ে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার স্কোর একসময় দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৮৮ রান।
ওই সময়ে শ্রীলঙ্কার জন্য ১২০ রানই অনেক বড় মনে হচ্ছিল। তবে দলের ত্রাতা হিসেবে হাজির হন দাসুন শানাকা। শরিফুল ইসলামের করা শেষ ওভারে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় আদায় করে নেন ২২ রান। আর সেটাই শেষ পর্যন্ত দলটিকে নিয়ে যায় ১৩২ রান পর্যন্ত।
আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাট করা কাইল মায়ার্স শুরুটা পেলেও এবার পারলেন না ইনিংস বড় করতে। তবে দায়িত্বশীল ইনিংস খেললেন অভিজ্ঞ সৌম্য সরকার। মাঝের সময়ে এরপরও কিছুতা চাপে পড়ল রংপুর রাইডার্স। সেটা সামাল দিয়ে শেষের ঝড় তুললেন ইফতেখার আহমেদ ও অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। দুবাই ক্যাপিটালসকে তাতে চ্যালেঞ্জিং টার্গেট দিল রংপুর।
গায়ানায় গ্লোবাল সুপার লিগের গ্রুপ পর্বের বুধবারের ম্যাচে রংপুর ২০ ওভারে দাঁড় করিয়েছে ৫ উইকেটে ১৫৮ রানের স্কোর।
টস জিতে আগে ব্যাটিং নেওয়া রংপুর শুরুতেই ধাক্কা খায়। প্রথম ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন আগের দুই ম্যাচেও রানের দেখা না পাওয়া ইব্রাহিম জাদরান। সেটা সামলে দ্বিতীয় ওভারে কালেম সানাকে তিন ছক্কায় উড়িয়ে ১৯ রান আদায় করেন কাইল মায়ার্স ও সৌম্য সরকার।
গুলবাদিন নাইবকে এরপর আরেকটি ছক্কা হাঁকান সৌম্য। তবে আক্রমণে এসেই আঘাত হানেন রোহান মুসতাফা, ফিরিয়ে দেন দারুণ ফর্মে থাকা মায়ার্সকে। ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটার তার আগে এক চার ও দুই ছক্কায় ১১ বলে করেন ১৯ রান।
পাওয়ার প্লে এরপর নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন সৌম্য ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ছয় ওভারে রংপুরের স্কোর দাঁড়ায় ৫৫। নিজের প্রথম ওভারে দুবাইয়ের বাংলাদেশ তারকা সাকিব আল হাসান দেন মাত্র ২ রান।
জুটি গড়লেও অঙ্কন ছিলেন বেশ ধীর। শেষ পর্যন্ত ১৫ বলে থামেন ১১ রানে, শিকার হন কাইস আহমেদের। পরের ওভারেই ফের উইকেট! এবার আঘাত সাকিবের। প্রথম তিন বলে এক ছক্কায় ৮ রান নেওয়ার পর ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৮ বলে ৩৬ রান করার পর। ১০ ওভার শেষে রংপুরের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৭৫।
ইফতেখার আহমেদের সাথে এরপর ছোট একটি জুটি গড়েন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তবে আফগান অলরাউন্ডার পারেননি ইনিংস বড় করতে। স্বদেশী নাইবের শিকার হওয়ার আগে তার অবদান ৮ (১৩ বল)। তাতে ১৫ ওভারের পর সোহানের দলের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১০৫।
দারুণ বোলিং করা সাকিব তার স্পেল শেষ করেন চার ওভারে মাত্র ১৬ রানে এক উইকেটে। রংপুরের রানের গতি এই সময়ে কিছুটা কমে যায়। তবে সেটা অনেকটাই পুষিয়ে দেন ইফতেখার ও নুরুল হাসান সোহান মিলে, ১৯তম ওভারে। দুই চার ও এক ছক্কায় আদায় করেন ১৮ রান।
ইনিংসের শেষ ওভারে টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়ে রংপুরের স্কোর দেড়শ পার করান। ১৮ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান। আর ইফতেখার ৪১ রান করেন ৩২ বলে।
গ্লোবাল সুপার লিগে (জিএসএল) দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রংপুর রাইডার্স টুর্নামেন্টে তাদের তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামছে দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রংপুর।
প্রথম দুই ম্যাচ জেতা রংপুর নিজেদের প্রথম ম্যাচে গায়ানা আমাজন ওয়ারিওর্সের সাথে ৮ রানের দারুণ এক জয় পায় রংপুর। পরের ম্যাচে ধরা দেয় আও রোমাঞ্চকর এক জয়। বিগ ব্যাশ চ্যাম্পিয়ন হোবার্ট হারিকেন্সের বিপক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে দলটি ম্যাচ জেতে মাত্র এক রানে।
দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে রংপুরের প্রতিপক্ষ দুবাই ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে আছে চার নম্বরে। এই দলটির হয়ে খেলছেন বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, যিনি দলটির প্রথম ম্যাচে চার উইকেট ও ফিফটি করে হন ম্যাচ সেরা।
এবার সাকিব খেলবেন বিপিএলে তার সাবেক দল রংপুরের বিপক্ষে, যা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। ম্যাচটি দেখতে চোখ রাখুন টি স্পোর্টসের পর্দায়।
রংপুর রাইডার্স একাদশ : ইব্রাহিম জাদরান, সৌম্য সরকার, কাইল মায়ার্স, আজমাতউল্লাহ ওমরজাই, সাইফ হাসান, নুরুল হাসান (অধিনায়ক), ইফতেখার আহমেদ, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, রাকিবুল হাসান, তাবরাইজ শামসি, খালেদ আহমেদ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টির আগে বড় সুসংবাদ পেলেন রিশাদ হোসেন। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে বড় অবদান রেখে টি-টোয়েন্টি বোলারদের র্যাংকিংয়ে ১২ ধাপ উন্নতি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই লেগ স্পিনার। এর মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছেন শীর্ষ বিশের মধ্যে।
বুধবার আইসিসি প্রকাশিত নতুন টি-টোয়েন্টি বোলারদের র্যাংকিংয়ে ১৭ নম্বর স্থানে উঠে এসেছেন রিশাদ। এই ফরম্যাটে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা অবস্থান।
শ্রীলঙ্কা সফরের আগে পাকিস্তানের সাথে সিরিজে রিশাদের পারফরম্যান্স ভালো ছিল না একেবারেই। তাতে তিনি নেমে গিয়েছিলেন ২৯ নম্বরে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাম্প্রতিক চলমান সিরিজে, বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচে ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে র্যাংকিংয়ে বড় লাফিয়ে দিয়েছেন তরুণ এই লেগ স্পিনার।
রিশাদ ছাড়াও বড় উন্নতি হয়েছে শরিফুল ইসলামেরও। সিরিজের প্রথম ম্যাচে না খেলা বাঁহাতি এই পেসার দারুণ বোলিং করেন একাদশে ফিরেই। ১২ রানে নেন দুই উইকেট, যার মাধ্যমে ২০ ধাপ উন্নতি করে তিনি এখন উঠে এসেছেন ৫৭তম স্থানে।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে আর কারও উন্নতি হয়নি। ২৬তম স্থানেই আছেন মুস্তাফিজুর রহমান। চার ধাপ নেমে গেছেন শেখ মাহেদি হাসান (২৫তম)। তাসকিন আহমেদ ২৪ থেকে চলে গেছেন ২৮ নম্বরে। দুই ধাপ নেমে হাসান মাহমুদের অবস্থান ৩৬তম আর তানজিম হাসান সাকিব ৪৩ থেকে নেমে গেছেন ৪৬তম স্থানে।
টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদের র্যাংকিংয়ে অবশ্য বাংলাদেশের চিত্র খুব একটা সুবিধার নয়। শীর্ষ ১০০ জনের মধ্যেই আছেন কেবল ৬ জন ব্যাটার। তাদের মধ্যে সবার ওপরে আছেন তাওহীদ হৃদয় (৪১তম)। অন্যরা হলেন লিটন দাস (৪৪তম), তানজীদ হাসান তামিম (৫৫তম), নাজমুল হোসেন শান্ত (৬৭তম), জাকের আলী অনিক (৭০তম) ও পারভেজ হোসেন ইমন (৮৫তম)।
২৩ ঘণ্টা আগে
১ দিন আগে
১১ দিন আগে
১১ দিন আগে
১১ দিন আগে
২২ দিন আগে
২২ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৫ দিন আগে