দলবদলের মৌসুমে ইতালির সাংবাদিক ফাব্রিৎ্জিও রোমানোর ‘হেয়ার উই গো’ বার্তার জন্য ফেসবুক-ইন্সটাগ্রাম-এক্স-টুইচে অনেকেই অপেক্ষা করেন-- তাঁদের প্রিয় ফুটবলার তাঁর প্রিয় ক্লাবে আসলেই আসছেন কীনা সেটা নিশ্চিত হতে। জুলাই মাসে এই ‘হেয়ার উই গো’ বার্তায় এসি মিলানের নতুন তারকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল ইউরোজয়ী আলভারো মোরাতার নাম। সেই রীতি দেখে বোধহয় মিলানের করবেত্তা শহরের মেয়র মার্কো বালারিনি ভেবেছেন, এভাবেই হয়তো শহরের নতুন অতিথিকে স্বাগত জানানো যায়। যেই ভাবা সেই কাজ! কিন্তু হলো হিতে বিপরীত, মেয়রের ‘হেয়ার উই গো’ তাই হয়ে গেল মোরাতার বিরক্তির কারণ। কিন্তু এরকম শুভবার্তায় চটবেন কেন মোরাতা?
মূল ঘটনা হলো, মিলানে আসার পর নতুন বাসা খুঁজছিলেন স্প্যানিশ এই ফরোয়ার্ড। সেজন্য বেছে নিয়েছিলেন মিলান মেট্রোপলিটানের পাশে করবেত্তা শহরকে। মোরাতার আগমনী বার্তা কীভাবে যেন টের পেয়ে গিয়েছিলেন সে শহরের মেয়র। সেজন্যই ফাব্রিৎ্জিওকে অনুকরণ করে মোরাতাকে স্বাগত জানিয়ে মার্কো বালারিনি লিখেছেন, “হেয়ার উই গো! না, এটাকে এপ্রিল ফুল দিন ভেবে ভুল করবেন না। চ্যাম্পিয়ন আলভারো মোরাতা এখন করবেত্তা শহরের বাসিন্দা।”
নিজে ইন্তার সমর্থক হলেও প্রাণভরে নতুন রসোনেরি ফুটবলার মোরাতাকে স্বাগত জানিয়ে এই মেয়র লেখেন, ‘যেমনটা ফাব্রিৎ্জিও বলেন–করবেত্তাতে মোরাতা, হেয়ার উই গো”
শহরের মেয়র হয়তো ভালো মনেই এমন বার্তা ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু মোরাতা উল্টো হয়েছেন ক্ষুব্ধ। কারণটাও উল্লেখ করেছেন– ব্যক্তিগত এবং তাঁর পরিবারের গোপনীয়তা রক্ষা। মেয়রের দেওয়া পোস্টের প্রতিউত্তর হিসেবে মোরাতা নিজের ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করেছেন স্টোরি, সেখানে মেয়রকে মেনশন করে মোরাতা লিখেছেন, “শ্রদ্ধেয় মেয়র, আমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বারোটা বাজানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।”
পরিবারের নিরাপত্তা তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মোরাতা তাঁর স্টোরিতে আরো লেখেন, “আমি তেমন মূল্যবান সম্পদের মালিক নই; আমার সন্তানরাই আমার সম্পদ। যাদের নিরাপত্তা আপনার এই পোস্টের কারণে হুমকির মুখে পড়লো। আমি ভেবেছিলাম এই শহর আমাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে, কিন্তু এখন দেখছি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে অপারদর্শিতা আর শহরের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যর্থতার কারণে আমাকে এখনই শহর ছেড়ে অন্য কোনো বাসা দেখতে হবে।”
মোরাতার এমন বাক্যবাণে বিদ্ধ হয়ে বালারিনিও দিয়েছেন আরেকটি ইন্সটাগ্রাম স্টোরি, তবে আলাদা করে এবার কোনো কিছু লেখেননি, শুধু ইন্তার মিলানের ক্লাব ব্যাজ আর দুটো ইমোজি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘চাও’ অর্থাৎ বিদায়।
মিলানের হয়ে শুরুটা অতটাও খারাপ হয়নি আলভারো মোরাতার। মাঝে ইনজুরিতে কিছুদিন বাইরে ছিলেন, সব কম্পিটিশনে ছয় ম্যাচ খেলে করেছেন দুই গোল আর এক অ্যাসিস্ট।
বার্সেলোনা রীতিমত উড়ছে। বার্সাকে থামাতে গিয়ে কেউ বাধা পড়ছেন অফসাইডের ফাঁদে, আর তা না হলে বিপরীত পোস্টে ইয়ামাল-লেভানডফস্কি-রাফিনিয়ার মুহুর্মুহু আক্রমণে প্রতিপক্ষ ভেসে যাচ্ছে গোলবন্যায়। শেষ পাঁচ ম্যাচে রিয়াল-বায়ার্নসহ বার্সা গোল করেছে ২১ টা, সব প্রতিযোগিতা মিলে সেটা ৫০ ছুঁয়েছিল রেড স্টারের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই। বার্সেলোনার এই ‘গোলমেশিন’ যেন অটো মোডে এভাবেই গোল করে যায়, সেটাই প্রত্যাশা বার্সেলোনার জার্মান কোচ হান্স দিতার ফ্লিকের।
রেড স্টারের বিপক্ষে এক পর্যায়ে ১-১ এ সমতা থাকলেও বার্সেলোনা ম্যাচটা শেষ করেছে ২-৫ স্কোরলাইনে। সে সঙ্গে ৭৪ বছরের পুরোনো একটা রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে ফ্লিকের দল। এই মুহূর্তে সব কম্পিটিশন মিলে ১৬ ম্যাচ খেলেছে বার্সেলোনা, তাতে ম্যাচপ্রতি ৩.৪ গোল হারে তারা গোল করেছে ৫৫ টি। এর আগে স্লোভাক কোচ ফার্দিনান্দ দাউচিকের অধীনে ১৯৫০-৫১ সালে বার্সেলোনা প্রথম ১৬ ম্যাচে করেছিল ৫৪ গোল। এবারের ভয়ঙ্কর বার্সেলোনার কাছে ভেঙে গেল এত বছরের পুরোনো রেকর্ডটাও, যা কি না অক্ষত ছিল লিওনেল মেসি, ইব্রাহিমোভিচ, সুয়ারেজ, নেইমারদের সময় যাবার পরও। ওসাসুসানের কাছে ৪-২ গোলে হারার পর প্রতি ম্যাচেই তিনের অধিক গোল করেছে কাতালান ক্লাবটি। এই ১৬ ম্যাচের মধ্যে তারা তিন বা এর অধিক গোল করেছে ১০ ম্যাচে।
আরও পড়ুন
জিতেও যে কারণে দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন ফ্লিক |
কিন্তু এরকম ভয়াবহ গোলক্ষুধার পেছনে রহস্যটা কী? হান্সি ফ্লিক কী এমন জাদু করলেন যে খেলোয়াড়রা গোলমুখে এত ধারাবাহিক হয়ে উঠেছে? উত্তরটা স্মিত হেসে ফ্লিক নিজেই দিয়েছেন, বলছেন তার ফুটবলারদের মধ্যে ‘প্রতিযোগিতার মানসিকতা’ থাকার কারণেই বার্সায় চলছে সুসময়-
“আমরা প্রতিটা ম্যাচে আলাদা করে নজর দিচ্ছি, সেটা আপনারাও হয়তো দেখছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ম্যাচে খেলোয়াড়রা ওদের সেরাটা দিচ্ছে। মাঠে সেটা ওরা ভালো বোঝে এবং তাদের সফল হতে দেখাটা আনন্দদায়ক।”
বার্সেলোনার এই গোলের ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও জোর দিচ্ছেন ফ্লিক, বলছেন মৌসুমের এখনো অনেক সময় বাকি-
“আশা রাখছি ওরা এমনটা ধরে রাখতে পারবে। আমাদের সেই আত্মবিশ্বাসটা আছে। এটা শুধু একটা ম্যাচে ভালো করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমরা মৌসুমে এখন পর্যন্ত যে কয়টা ম্যাচ খেলেছি– সেটা মাথায় রেখেই আমরা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।”
চ্যাম্পিয়নস লিগে এরকম ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করা অতীত বার্সেলোনার সন্ধান পেতে চাইলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে ২০১১-১২ সালে। সেবার টানা তিন ম্যাচে তিন বা তার অধিক গোল করেছিল বার্সেলোনা, ১২ বছর পর সেটা বার্সেলোনা আবারো করে দেখালো ইয়াং বয়েজ আর রেড স্টারের জালে পাঁচ এবং বায়ার্নের জালে ৪ গোল দিয়ে।
আরও পড়ুন
এল ক্লাসিকোর জয়ে গর্বিত ফ্লিক |
চ্যাম্পিয়নস লিগে ৪ ম্যাচ শেষে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে আছে বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট এবারের চমক ফ্রেঞ্চ ক্লাব ব্রেঁস। তবে তার আগে লা লিগাতে রিয়াল সোসিয়েদাদ ও সেলতা ভিগোর সঙ্গে ম্যাচ খেলবে তারা।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসির পর ৩য় ফুটবলার হিসেবে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে শততম গোলদাতার তালিকায় ঢুকতে যাচ্ছেন রবার্ট লেভানদোভস্কি। এখন পর্যন্ত উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে এই স্ট্রাইকারের গোল সংখ্যা ৯৯।
চ্যাম্পিয়নস লিগে গেল রাতে রেড স্টারের বিপক্ষে জোড়া গোল করে নিজেকে ৯৯’র ঘরে নিয়েছেন বার্সেলোনার এই স্ট্রাইকার। তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ব্রেস্টের বিপক্ষে পরের ম্যাচের জন্য। রেড স্টারের বিপক্ষে মাঠে ছিলেন ৭৮ মিনিট পর্যন্ত, পুরো সময় পেলে হয়তো চ্যাম্পিয়নস লিগে শততম গোলের অপেক্ষাটা ফুরিয়ে ফেলতে পারতেন এই স্ট্রাইকার। ম্যাচ শেষে বার্সেলোনা কোচ হ্যান্সি ফ্লিকও রসিকতা করে সেই আফসোসটাই করেছেন-
“এটা আমি জানতাম না, জানলে হয়তো পুরো ম্যাচ না খেলিয়ে আমি তাকে বদল করতাম না।”
এর আগে বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলেছেন লেভানদোভস্কি। ৯৯ চ্যাম্পিয়নস লিগ গোলের ৬৯টাই করেছেন বাভারিয়ানদের হয়ে। যা একক কোন ক্লাবের হয়ে গোলের হিসেবে রয়েছে ৪র্থ স্থানে। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মেসির গোল ১২০, রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোল ১০৫, কারিম বেনজেমাও রিয়ালের হয়ে করেছেন ৭৮টি গোল।
আরও পড়ুন
ভিনির মন খারাপ, তবে সেটা ভ্যালেন্সিয়ার বন্যার্তদের জন্য : আনচেলত্তি |
২০১৯/২০ চ্যাম্পিয়নস লিগে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন রবার্ট লেভানদোভস্কি। সেবার বায়ার্ন মিউনিখকে ইউরোপ সেরার মুকুট এনে দিয়েছিলেন এই পোলিশ স্ট্রাইকারই। গোল করেছিলেন পুরো আসর জুড়ে ১৫টা।
বার্সেলোনার হয়ে এই মৌসুমে ৪ ম্যাচে গোল করেছেন ৫টি। সব মিলিয়ে বার্সার জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ গোল হলো ১৩টি।