৮ নভেম্বর ২০২৪, ৬:০০ পিএম
সময় যখন খারাপ যায়, সবদিক থেকেই যায়। কিলিয়ান এমবাপের বেলায় এই মুহূর্তে ঠিক সেটাই চলছে। রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর থেকে খুব একটা খারাপ না খেললেও প্রত্যাশার পাহাড়ের কারণে সমালোচনা হচ্ছে অহরহ। দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে যে জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন, সেই পথও হয়ে গেছে আপাতত বন্ধ। চলতি মাসের দুটি ম্যাচের জন্য তিনি খেলতে চাইলেও ফরাসি তারকাকে দলের বাইরেই রেখেছেন ফ্রান্স কোচ দিদিয়ে দেশম। তবে কী দ্বন্দে জড়িয়ে পড়েছেন দুজন? স্পষ্ট না বললেও কিছু বিষয়ে অমত যে হচ্ছে, তার আভাস ঠিকই দিয়েছেন দেশম।
গত মাসে আন্তর্জাতিক বিরতিতে নিজেই ফ্রান্সের হয়ে খেলা থেকে বিরত থাকেন এমবাপে। যদিও ঠিক তার আগে চোট কাটিয়ে রিয়ালের হয়ে খেলেন কিছু ম্যাচ। সেই কারণে নিজ দেশে প্রবল তোপের মুখে পড়েন তিনি। তবে চলতি মাসে ইউয়েফা নেশন্স লিগে ইসরায়েল ও ইতালির বিপক্ষে তিনি খেলতে চেয়েছিলেন। তবে এবার তার অনুরোধ উপেক্ষা করে রিয়াল ফরোয়ার্ডকে দলের বাইরে রেখেছেন দেশম।
আরও পড়ুন
নৈশক্লাবে এমবাপে কী করছেন, তা নিয়ে চিন্তা নেই ফ্রান্স কোচের |
দলের অধিনায়ক ফিট থাকার পরও দলে জায়গা না পাওয়ায় তাই উঠছে নানা প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে সেই পালে হাওয়া না দিলেও বাতাসে যা ভাসছে, তার কিছুটা যে সত্যি তা ফুটে উঠেছে ফ্রান্স কোচের কণ্ঠে-
“আমি তার সাথে কথা বলেছি। কিলিয়ান আসতে চেয়েছিল। এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত যা আমি শুধুমাত্র এই দুই ম্যাচের জন্য নিয়েছি। কাইলিয়ান আসতে চেয়েছিল।”
পিএসজি থেকে রিয়ালে এই মৌসুমে নাম লেখানো এমবাপে এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচে গোল করেছেন ছয়টি। তবে এল ক্লাসিকো ও এসি মিলানের বিপক্ষে টানা দুটি হাইভোল্টেজ ম্যাচে তার মলিন পারফরম্যান্স স্পেনে জন্ম দিয়েছে তীব্র সমালোচনার। বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচে গোলের দেখা না পাওয়া এমবাপে অফসাইড হন ৮ বার, যা গত ১৫ বছরে লা লিগায় এক ম্যাচে একজন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ অফসাইড হওয়ার রেকর্ড।
আরও পড়ুন
এমবাপের জায়গায় ফ্রান্সের অধিনায়কত্ব পেলেন রিয়াল মিডফিল্ডার |
কঠিন সময়ে বরাবরই এমবাপেকে আগলে রাখা দেশমও যেন কিছুটা দূরত্বে চলে গেছেন-
“আমরা সবকিছুতেই একমত নাও হতে পারি। আমি খেলোয়াড়দের সাথে আলোচনা করতেই পারি। আমি এখানে খেলোয়াড়দের এটা বলার জন্য আসিনি যে, ‘আমি সেরা এবং সবচেয়ে সুদর্শন।’ আমি তাদের কথাও শুনি। আর এই আলোচনাগুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সবদিক বিবেচনায় এরপর আমি সেই সিদ্ধান্তগুলি নিই, যা আমার কাছে সবচেয়ে ভালো বলে মনে হয়।”
আন্তর্জাতিক বিরতির ঠিক আগে স্পেনের জন্য দুঃসংবাদ। গত বৃহস্পতিবার এসি মিলানের অনুশীলন সেশনের সময় মাথায় আঘাতের কারণে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তারকা স্প্যানিশ স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতাকে।
এসি মিলান বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য শনিবারও হাসপাতালে থাকবেন মোরাতা। আর তাতে মিস করতে যাচ্ছেন শনিবার রাতে সেরি আয় ক্যাগলিয়ারির বিপক্ষে।
আরও পড়ুন
মেয়রের উপর চটেছেন মোরাতা, ছাড়বেন নতুন এলাকা |
এসি মিলান বিবৃতিতে বলেছে,
“আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে অনুশীলনে সংঘর্ষের পর মোরাতা গুরুতর ক্র্যানিয়াল ট্রমায় আক্রান্ত হন।। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এমআরআই স্ক্যানের নেতিবাচক ফলাফল আসে। আলভারো ভালো বোধ করছে এবং প্রোটোকল মেনে চলার স্বার্থে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে থাকবেন।”
গত মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এসি মিলানের ৩-১ গোলে জয়ের ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন মোরাতা। করেন একটি গোলও।
আরও পড়ুন
ইউরো জয়ের উদযাপনে মোরাতা-রদ্রির শাস্তি |
মোরাতার এই আঘাত প্রভাব ফেলতে পারে স্পেনের চলতি মাসের ইউয়েফা নেশন্স লিগের দলে। আগামী ১৫ ও ১৮ নভেম্বর যথাক্রমে ডেনমার্ক ও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে ইউরো ২০২৪ জয়ী স্পেন। এই ম্যাচ সামনে রেখে শুক্রবার স্কোয়াড ঘোষণা করবেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে।
বার্সেলোনা রীতিমত উড়ছে। বার্সাকে থামাতে গিয়ে কেউ বাধা পড়ছেন অফসাইডের ফাঁদে, আর তা না হলে বিপরীত পোস্টে ইয়ামাল-লেভানডফস্কি-রাফিনিয়ার মুহুর্মুহু আক্রমণে প্রতিপক্ষ ভেসে যাচ্ছে গোলবন্যায়। শেষ পাঁচ ম্যাচে রিয়াল-বায়ার্নসহ বার্সা গোল করেছে ২১ টা, সব প্রতিযোগিতা মিলে সেটা ৫০ ছুঁয়েছিল রেড স্টারের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই। বার্সেলোনার এই ‘গোলমেশিন’ যেন অটো মোডে এভাবেই গোল করে যায়, সেটাই প্রত্যাশা বার্সেলোনার জার্মান কোচ হান্স দিতার ফ্লিকের।
রেড স্টারের বিপক্ষে এক পর্যায়ে ১-১ এ সমতা থাকলেও বার্সেলোনা ম্যাচটা শেষ করেছে ২-৫ স্কোরলাইনে। সে সঙ্গে ৭৪ বছরের পুরোনো একটা রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে ফ্লিকের দল। এই মুহূর্তে সব কম্পিটিশন মিলে ১৬ ম্যাচ খেলেছে বার্সেলোনা, তাতে ম্যাচপ্রতি ৩.৪ গোল হারে তারা গোল করেছে ৫৫ টি। এর আগে স্লোভাক কোচ ফার্দিনান্দ দাউচিকের অধীনে ১৯৫০-৫১ সালে বার্সেলোনা প্রথম ১৬ ম্যাচে করেছিল ৫৪ গোল। এবারের ভয়ঙ্কর বার্সেলোনার কাছে ভেঙে গেল এত বছরের পুরোনো রেকর্ডটাও, যা কি না অক্ষত ছিল লিওনেল মেসি, ইব্রাহিমোভিচ, সুয়ারেজ, নেইমারদের সময় যাবার পরও। ওসাসুসানের কাছে ৪-২ গোলে হারার পর প্রতি ম্যাচেই তিনের অধিক গোল করেছে কাতালান ক্লাবটি। এই ১৬ ম্যাচের মধ্যে তারা তিন বা এর অধিক গোল করেছে ১০ ম্যাচে।
আরও পড়ুন
জিতেও যে কারণে দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন ফ্লিক |
কিন্তু এরকম ভয়াবহ গোলক্ষুধার পেছনে রহস্যটা কী? হান্সি ফ্লিক কী এমন জাদু করলেন যে খেলোয়াড়রা গোলমুখে এত ধারাবাহিক হয়ে উঠেছে? উত্তরটা স্মিত হেসে ফ্লিক নিজেই দিয়েছেন, বলছেন তার ফুটবলারদের মধ্যে ‘প্রতিযোগিতার মানসিকতা’ থাকার কারণেই বার্সায় চলছে সুসময়-
“আমরা প্রতিটা ম্যাচে আলাদা করে নজর দিচ্ছি, সেটা আপনারাও হয়তো দেখছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ম্যাচে খেলোয়াড়রা ওদের সেরাটা দিচ্ছে। মাঠে সেটা ওরা ভালো বোঝে এবং তাদের সফল হতে দেখাটা আনন্দদায়ক।”
বার্সেলোনার এই গোলের ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও জোর দিচ্ছেন ফ্লিক, বলছেন মৌসুমের এখনো অনেক সময় বাকি-
“আশা রাখছি ওরা এমনটা ধরে রাখতে পারবে। আমাদের সেই আত্মবিশ্বাসটা আছে। এটা শুধু একটা ম্যাচে ভালো করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমরা মৌসুমে এখন পর্যন্ত যে কয়টা ম্যাচ খেলেছি– সেটা মাথায় রেখেই আমরা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।”
চ্যাম্পিয়নস লিগে এরকম ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করা অতীত বার্সেলোনার সন্ধান পেতে চাইলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে ২০১১-১২ সালে। সেবার টানা তিন ম্যাচে তিন বা তার অধিক গোল করেছিল বার্সেলোনা, ১২ বছর পর সেটা বার্সেলোনা আবারো করে দেখালো ইয়াং বয়েজ আর রেড স্টারের জালে পাঁচ এবং বায়ার্নের জালে ৪ গোল দিয়ে।
আরও পড়ুন
এল ক্লাসিকোর জয়ে গর্বিত ফ্লিক |
চ্যাম্পিয়নস লিগে ৪ ম্যাচ শেষে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে আছে বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট এবারের চমক ফ্রেঞ্চ ক্লাব ব্রেঁস। তবে তার আগে লা লিগাতে রিয়াল সোসিয়েদাদ ও সেলতা ভিগোর সঙ্গে ম্যাচ খেলবে তারা।