৪ নভেম্বর ২০২৪, ৮:৪১ পিএম
ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সমর্থক যারা আছেন, তাদের অনেকের মনে এই ২০২৪ সালে এসেও একটা প্রশ্ন বেশ জোরেশোরেই ঘুরপাক খাচ্ছে, রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কি চূড়ায় যেতে পারবেন? নাকি ব্যালন ডি’অরের মত এটাও আটকে যাবে যদি, কিন্তুর ধাঁধাঁয়?
গত কয়েক বছর ধরেই প্রতিনিয়ত নিজেকে যেভাবে ছাপিয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস, সাথে গত মৌসুমের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ধরেই নেওয়া হয়েছিল - এবারের ব্যালন ডি’অরটা উঠতে যাচ্ছে তারই হাতে। তবে শেষ সময়ে গিয়ে যেভাবে নাটকীয়ভাবে সেটা চলে গেছে ম্যানচেস্টার সিটির রদ্রির হাতে, সেটা যেকোনো ফুটবলারের জন্যই মানসিকভাবে হতে পারে বড় এক ধাক্কা।
কারণ, পুরো বিশ্বের পাশাপাশি ভিনিসিয়ুস নিজেও নিশ্চিত ছিলেন এই খেতাব জেতার ব্যাপারে। সেটাও এতোটাই যে, এল ক্লাসিকোর সময় গাভিকে বলেই দেন যে তিনি ব্যালন ডি’অর জিততে যাচ্ছেন। গুঞ্জন রয়েছে, খুব কাছের ৩০ জন বন্ধুকে নিয়ে এটি জেতার পার্টির আয়োজনও করে ফেলেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরওয়ার্ড। এমন নিশ্চিত থাকার পর বর্ষসেরা না হওয়াটা মানসিকভাবে একজন খেলোয়াড়কে অনেকটাই দমিয়ে দিতেই পারে।
ব্যালন ডি’অর সেদিনই ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘দরকার হলে আরও দশগুণ লড়াই করব। তারা এটার জন্য তৈরি নয়।’ আগামী মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এসি মিলানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই হয়ত শুরু হবে ভিনিসিয়ুসের নিজেকে প্রমাণের নতুন লড়াই।
সাবেক ফ্ল্যামেঙ্গো যুব ফুটবল কো-অর্ডিনেটর কার্লোস নোভাল, যিনি ১০ বছর বয়স থেকে ভিনিসিয়ুসকে দেখেছেন, বিবিসি স্পোর্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের অদম্য মানসিকতা।
“বেড়ে ওঠার পথে যারাই তাকে প্রথমবারের মতো দেখছে, তখনই বুঝতে পেরেছে যে সে ভন্ন ধাতুতে গড়া। আমার মনে আছে সে কোপা ভোটোর্যান্টিমে খেলেছিল, যা অনেকটা অনূর্ধ্ব-১৫ ব্রাজিলিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মতো। সেখানে সে যেন উড়ছিল। এটা ছিল প্রায় প্রতিটি ম্যাচে দুই, তিন গোল করার মতো। সে অপ্রতিরোধ্য ছিল। একদিন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন স্কাউট আমাকে এসে বলল, ‘সে যা যা করছে, আমি কখনও ১৪ বছর বয়সী একটি ছেলেকে তা করতে দেখিনি। মাঠের বাইরে তার খুব ভালো যত্ন নিন, কারণ মাঠে যা করছে তাতে সে অনেকদূর যাবে।”
ভিনিসিয়ুস অনেক পথ পাড়ি দিয়েছেন, ১৪ বছর বয়সী সেই কিশোর এখন বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের একজন। তবে পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না তার জন্য।
এমনকি সেটা পারেনি সাও গনকালো, রিও ডি জেনিরোর বাইরের যে শহর মাদক গ্যাংদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সেখানে কেউই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। আর এই কারণেই ২০১৮ সালে অমিত প্রতিভাবান ভিনিসিয়ুস রিয়ালে যখন যোগ দেন, তখন তার কল্পনাতেও ছিল না যে তার সামনে কী কী অপেক্ষা করছে।
যেমনটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন স্কাউট বলেছিলেন, মাঠের ফুটবলে রিয়ালে ক্রমেই উন্নতি করেছেন ভিনিসিয়ুস। সময়ের পরিক্রমায় হয়েছেন দলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন। তবে গত কয়েক বছর ধরে মাঠের বাইরে তাকে সামলাতে হচ্ছে ভিন্ন এক যুদ্ধ, যেখানে তিনি ভীষণ একাকী হয়ে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত স্পেনের বিভিন্ন মাঠে স্রেফ ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধেই জমা হয়েছে ২১টি বর্ণবাদী ঘটনার অভিযোগ। গত মৌসুম থেকে যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় নিয়মিত চিত্র। প্রতিপক্ষের সমর্থকরা তাকে গালিগালাজ করছেন, কুশপুত্তলিকা টাঙাচ্ছেন বা এমনকি বানরের স্লোগানই দিচ্ছেন দলবেধে।
গত বছর তো ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে ম্যাচই বন্ধ ছিল ১০ মিনিট এসবের প্রেক্ষিতে। মেজাজ হারিয়ে দর্শকদের সাথে মাঠ থেকেই তর্কে লিপ্ত হন ভিনিসিয়ুস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিন ভ্যালেন্সিয়ার ভক্তকে ৮ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে, যা স্পেনে আগে হয়নি।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছিলেন, “আমি বর্ণবাদের শিকার নই। আমি বর্ণবাদীদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। আমি চাই বর্ণবাদীরা যাতে ভয় পায়, লজ্জিত হয় এবং ছায়ায় লুকিয়ে থাকে। আর নাহলে আমি আপনাদের ধরে ফেলব।”
তবে আগের ও ভ্যালেন্সিয়ার স্টেডিয়ামের সেই ঘটনা যে ভিনিসিয়ুসকে মানসিকভাবে বেশ নাড়িয়ে দিয়েছে, সেটা বোঝা যায় ব্রাজিল জাতীয় দলের এক সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে কথা বলতে গিয়ে চোখের জল আর আটকে রাখতে পারেননি। তাতে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, যতই প্রতিবাদ করুন না কেন, এই অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো তার ওপর প্রভাব ফেলছে।
তবে দমে না গিয়ে ব্যক্তিগত ও অন্যান্য পর্যায় থেকে ক্রমাগত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস। তার ক্লাব রিয়ালের অবশ্য শঙ্কা ছিল, এসবের প্রভাব না আবার মাঠের পারফরম্যান্সে পড়ে যায়। তবে সেটা আর হয়নি। উল্টো মাঠের ফুটবলেই যেন সব জবাব দেওয়ার মঞ্চ খুঁজে নেন ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
২০২৩-২৪ মৌসুমে ভিনিসিয়ুস পার করেছেন তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৪ গোলের পাশাপাশি তার নামের পাশে ছিল ৯টি অ্যাসিস্টও। রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর পথে ২৩ বছর ৩২৫ দিন বছর বয়সে ভেঙে দেন লিওনেল মেসির করা সবচেয়ে কম বয়সে ফাইনালে বেশি গোলের রেকর্ড। রিয়ালের লা লিগা জয়েও রাখেন বড় অবদান।
এই মৌসুমেও আছেন চেনা ছন্দে। ১৫ ম্যাচে ৮ গোল করার পাশাপাশি করিয়েছেন ৫টি গোলও। রিয়ালে শুরুর বছরগুলোতে ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল তার ফিনিশিং নিয়ে। ঝড়ের গতিতে ড্রিবলিং করে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে গোলের সামনে এগিয়ে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলতেন। তবে সেসব এখন অতীত। এই কাজটিতে তিনি এখন নিখুঁত, দুর্দমনীয়।
সেটা এতোটাই যে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই মৌসুমে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর ভিনিসিয়ুসকে রিয়াল কিংবদন্তি ও সহ-সভাপতি এমিলিও বুত্রাগুয়েনো তুলনা করেন পেলের সাথে, যাকে ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ফিনিশিংয়ে উন্নতি করা ভিনিসিয়ুস এর মধ্য দিয়ে ছাপ রেখেছেন তার তীব্র লড়াকু মানসিকতার। ক্লাউদিও কাকাপা, যিনি তাকে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৫ দলের কোচিং করিয়েছেন, তিনিও যেন বিস্মিত সাবেক শিষ্যর সামর্থ্যে।
“সত্যি বলতে আমি জানতাম না যে ভিনিসিয়ুস মানসিকভাবে এতটা শক্তিশালী। কারণ, সে যা যা যা মোকাবেলা করেছেন তা সহজ নয় ; এটা ভয়াবহ ছিল। তিনি এখন অনেক লোকের সমর্থন পাচ্ছেন এবং এটি দুর্দান্ত। তবে শুরু দিনগুলতে এটা ছিল তার বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের লড়াইয়ের মত। সে নাকি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়, এমন কিছু শুনতে হত আর সেটা ভুলে যেতে বলা হত। কিন্তু সেটা সে করেনি, লড়াই করেছে আর দেখিয়েছে যে সে কত বড় মাপের খেলোয়াড়। সে যেসবের মধ্য দিয়ে গেছে, এরপরও ফুটবল মাঠে যা যা করছে, সেটা অবিশ্বাস্য।”
আর ঠিক এই কারণেই বয়স ১৬ হওয়ার আগে থেকেই রিয়াল সহ ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো তার পেছনে পড়েছিল। সবার আগে ভিনিসিয়ুসের দিকে নজর দিয়েছিল লিভারপুল।
২০১৭ সালের শুরুর দিকে লিভারপুলের একজন স্কাউট ব্রাজিলিয়ান এজেন্ট ফ্রেডেরিকো পেনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আপনি কি মনে করেন ফ্ল্যামেঙ্গো এখন ভিনিসিয়ুসকে ২০ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করতে রাজি হবে? আমি এটা এখনই বাজিয়ে দেখতে চাই, কারণ আমার মনে হয় না অনূর্ধ্ব-১৭ দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের পরে ফ্ল্যামেঙ্গো আর চুক্তি করতে রাজি হবে।”
লিভারপুলের সেই স্কাউট ঠিক ছিলেন। সেই আসরে সাত গোল করে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ভিনিসিয়ুস। কয়েক মাস পেনা একটি ফোন কল পান, এবার সেটা ছিল রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে। তারা ৪৫ মিলিয়ন ইউরো বাইআউট ক্লজ দিয়ে ১৮ বছর বয়সে পা দিলে তাকে ক্লাবে স্বাগত জানাতে সম্মতি দেয়।
সেই সময়ে স্প্যানিশ তো বটেই, ইউরোপিয়ান ফুটবলেও বিষয়টি হৈচৈ ফেলে দেয়। কারণ, মাত্র ১৬ বছর বয়সী একজন তরুণ ফুটবলারের জন্য এত অর্থ ব্যয় করাটা বুদ্ধিমানের কাজ কিনা, তা নিয়ে রয়ে যায় প্রশ্ন। তবে রিয়ালের এই বিনিয়োগই বলে দেয়, ওই বয়সেই নিজের মাঝে ভিন্ন কিছু যে আছে, সেটা দেখাতে পেরেছিলেন ভিনিসিয়ুস।
১৮-তে পা দেওয়ার আগ পর্যন্ত ফ্ল্যামেঙ্গোতে খেলার সময় ভিনিসিয়ুসকে মুখোমুখি হতে হয়ে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের দুয়োর মিছিল। খেপিয়ে তুলতে তারা তাকে 'নেগুইবিনহা' বলে ডাকেন, যা ছিল আরেক আরেকজন ফ্ল্যামেঙ্গোর সাবেক খেলোয়াড় নেগুয়েবারকে নিয়ে। আর এই খেলোয়াড়টি প্রতিভার ছাপ রাখতে পারেননি পরে, যিনি এখন খেলছেন থাইল্যান্ডে। অন্যদিকে ক্লারেন্স সিডর্ফের মত অনেকে এমনটাও বলেছেন, রিয়ালে গিয়ে এক মিনিটও খেলার সুযোগ পাবেন না ভিনিসিয়ুস।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন জে রিকার্ডো, যিনি ছিলেন ফ্ল্যামেঙ্গোর সিনিয়রে দলে ভিনিসিয়ুসের প্রথম কোচ।
“ভিনিসিয়াস যখন আসল, তখন তাকে ঘিরে প্রচুর হাইপ ছিল, তাই এই নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং আমরা সবাই যা আশা করেছিলাম, সেটা করে দেখাতে তার কিছুটা সময় লেগেছিল। কিন্তু তিনি সে তা করে দেখিয়েছে।”
মুখে হাসি নিয়ে সাম্পা নৃত্যের তালে ম্যাচের পর ম্যাচ এখন মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস। ফ্ল্যামেঙ্গো যেমন ছিল, রিয়ালেও সেটা চলছে একই গতিতে। যিনি তাকে ছোটবেলা থেকে দেখেছেন, সেই ক্লাউদিও কাকাপা তুলে ধরেছেন আরেকটি ঘটনা। যেটা তুলে ধরে মানুষ হিসেবে ভিনিসিয়ুসের সুন্দরতম দিকটি।
“আমরা ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ক্যাম্প করছিলাম। একদিন সে এবং তার কিছু সতীর্থ আমার কাছে এসে বলল যে তারা আমাদের ডিনারের জন্য একটি সারপ্রাইজ রাখতে চায়। আমি বললাম, 'অবশ্যই, এগিয়ে যাও'৷ সেদিন ডিনারের সময় তারা একটি বাচ্চাকে একটি মোবাইল ফোন, একজোড়া স্নিকার এবং জামাকাপড় উপহার দিয়েছিল৷”
“এটা খুব আবেগপূর্ণ একটা মুহূর্ত ছিল - কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাই হঠাৎ রেস্টুরেন্টে কান্নাকাটি করছিল। সেই বাচ্চাটিই স্কোয়াডের একমাত্র সদস্য ছিল যার কাছে ফোন ছিল না। আর এই কারণে সে তার বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে অক্ষম ছিল। ভিনিসিয়ুসের সেই সময়েই একটা একটি ব্যক্তিগত স্পনসরশিপ চুক্তি ছিল, তাই সেই বাচ্চাটির জন্য এটা করতে পেরেছিল। ওই বয়সে যে ছেলের হৃদয় এত বড় হতে পারে, সে অবশ্যই বিশ্বসেরা হওয়ার যোগ্য।”
মাঠে প্রতিপক্ষক একবিন্দু ছাড় না দেওয়া ভিনিসিয়ুস মাঠের বাইরে এভাবেই দুনিয়াটাকে দেখেন। সুন্দর, কোমল, নমনীয় এবং বিশাল মনের। আর সেই কারণেই নিশ্চিত জেতে ব্যালন ডি’অর হাতছাড়া হওয়া বা বর্ণবাদের আক্রমণ তাকে আটকে রাখতে পারবে না। কারণ তিনি জানেন, লড়াইটা ফুটবলের চেয়েও অনেক বড় জন্য। যেখানে তার দিকে তাকিয়ে, তাকে দেখে স্বপ্ন বুনছে ব্রাজিলের আজকের শিশুরা…
২১ জুন ২০২৫, ৩:৪৭ পিএম
নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও কোনোভাবেই যেন থামানো যাচ্ছে না ফুটবলে বর্ণবাদ। এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে টামোর্থ ক্লাবের সাবেক কৃষ্ণাঙ্গ ফরোয়ার্ড ক্রিস রে-কে বর্ণবাদী বার্তা পাঠানোর অপরাধে বড় শাস্তি দিয়েছে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ)। এই অপরাধে এক ব্যক্তিকে তিন বছরের জন্য মাঠে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি গত ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এফএ কাপের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচের, যেখানে টামোর্থকে টটেনহ্যাম হটস্পারকে হারায় ৩-০ গোলে। ওই ম্যাচের পর হ্যারি ডানবার, যিনি হোয়াইটলির জন বুনিয়ান ক্লোজের বাসিন্দা, ইনস্টাগ্রামে রে-কে বর্ণবাদী বার্তা পাঠান।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে এরপর শুরু হয় তদন্ত। গত শুক্রবার ডানবার পোর্টসমাউথ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে নেন। এরপর আদালত তাকে শাস্তি হিসেবে ১২ মাসের কমিউনিটি অর্ডার, ২০০ ঘণ্টা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ এবং ১০ দিন পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেয়।
এরপর এফএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা এই রায়ের মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে চাই যে, অনলাইন বা মাঠে, যেকোনো জায়গায় সব ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ সহ্য করা হবে না এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, যে ম্যাচে এই ঘটনাটি হয়েছিল, সেই ম্যাচের পর রে ক্লাবের হয়ে আর খেলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, কোচ অ্যান্ডি পিকসের সমর্থন থাকলেও, ক্লাবের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে করা বর্ণবাদী আচরণের ব্যাপারে প্রকাশ্যে নিন্দা না জানানোয় তিনি হতাশ হয়েছেন।
ক্লাবগুলোর দাবি স্বত্ত্বেও লম্বা সময় ধরে বিদেশি গোলকিপারদের কে-লিগে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি কে-লিগে। অবশেষে ইতি ঘটতে যাচ্ছে অপেক্ষার। দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ ফুটবল লিগে ২০২৬ মৌসুম থেকে প্রথমবারের মতো বিদেশি গোলরক্ষক নিবন্ধন খেলানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে, যা গত ২৭ বছর ধরে নিষিদ্ধ ছিল।
১৯৯৯ সালে মাত্র আটটি ক্লাব নিয়ে শুরু হওয়া কে-লিগ প্রথম আসর থেকেই বিদেশি গোলকিপারদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছিল। এই নিয়ম করা হয়েছিল যাতে দেশটির গোলকিপাররা ক্লাবে নিয়মিত খেলার সুযোগ পান। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ লিগে ১২টি দল রয়েছে। আর ২০১৩ সাল থেকে দ্বিতীয় স্তরের কে লিগ ২ শুরু হয়েছে। উভয় লিগেই এতদিন দলগুলো বাধ্য ছিল দেশি গোলরক্ষক খেলাতে।
আরও পড়ুন
রেকর্ড ফি তে লিভারপুলে ভার্টজ, জিততে চান সব শিরোপা |
![]() |
সম্প্রতি এক সংবাদ বিবৃতিতে কে-লিগ জানিয়েছে তাদের সিদ্ধান্ত বদলের কথা।
“গোলকিপার একটি নির্দিষ্ট পজিশন হওয়ায় আর বিদেশি খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ রাখায়, দেশীয় গোলকিপারদের বেতনে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। আর এটা মাঠের অন্যান্য পজিশনের খেলোয়াড়দের চেয়ে অনেক বেশি। বর্তমানে ক্লাবের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্তেও দেশীয় গোলকিপারদের যথেষ্ট খেলার সুযোগ থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।।”
এই ঘোষণার ফলে বাতিল হয়েছে কে-লিগ ও কে-লিগ ২ উভয় প্রতিযোগিতা গোলকিপার - এই শর্তটি। ক্লাবগুলো তাই এখন চাইলে বিদেশী গোলরক্ষক দিয়ে একাদশ সাজাতে পারবে, আবার দেশি গোলকিপারও ব্যবহার করতে পারবে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই প্রতিভার জানান দিয়ে বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। এরপর রিভার প্লেটের উদীয়মান মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্কো মাস্তান্তুয়োনোর সামনে রাস্তা ছিল দুটি - আর্জেন্টিনায় থেকে নিজের বিকাশ অব্যাহত রাখা বা ইউরোপে পাড়ি জমানো। তিনি বেঁছে নিয়েছেন দ্বিতীয়টি, যোগ দিয়েছেন স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। রিভার প্লেট কোচ মার্সেলো গায়ার্দোর আশঙ্কায়, একটু আগেভাগেই ঠিকানা বদল করেছেন মাস্তান্তুয়োনো।
চলতি মাসের শুরুতে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে ২০৩১ সাল পর্যন্ত রিয়ালে নাম লেখান মাস্তান্তুয়োনো। তিনি এখন অবশ্য আছেন রিভার প্লেটের সাথেই, খেলছেন ক্লাব বিশ্বকাপে। এই টুর্নামেন্টের পর যোগ দেবেন রিয়াল স্কোয়াডের সাথে। লাতিন আমেরিকার এই সময়ের অন্যতম সেরা এক এক প্রতিভাকে হারানো আর্জেন্টিনার ক্লাবটির জন্য হতে যাচ্ছে বড় এক শূন্যতাই।
আরও পড়ুন
চলছে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের জয়রথ, ধরাশায়ী চেলসি |
![]() |
গত শুক্রবার ইএসপিএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গায়ার্দো বলেন, মাস্তান্তুয়োনো আরেকটি শাণিত হতে পারতেন তাদের সাথে থেকেই।
“আমাদের আগামী মৌসুমের পরিকল্পনায় মাস্তান্তুয়োনো ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তবে এখন আমাদের পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে হবে। কারণ, এমন কিছু খেলোয়াড় থাকে, যাদের শূন্যস্থান পূরণ করা কঠিন কাজ। তবে এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা এই খেলোয়াড়দের বিশ্ব মঞ্চের জন্যই তৈরি করি। সবকিছুই এখন আগেভাগে ঘটে যাচ্ছে। তরুণরা অল্প বয়সেই ক্লাব ছাড়ছে। এটা এখনকার নিয়মের মধ্যেই পড়ে।”
রিভার প্লেট কোচের হতাশা যৌক্তিকই। ১৮-তে পা দেওয়ার আগেই মাস্তান্তুয়োনো খেলোয়াড় হিসেবে যে পরিণতবোধ দেখাচ্ছেন, সেটা চোখে পড়ার মতোই। আর সেই কারণেই তাকে ধরে রাখাটা কঠিনই ছিল ক্লাবটির জন্য। কারণ, রিয়ালের বেশ আগে থেকে তার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজিও। শেষ পর্যন্ত রিয়াল লড়াইয়ের শামিল হওয়ার পর লাতিন আমেরিকান ক্লাবটির পক্ষে একটা ভালো ট্রান্সফার ফি নিয়ে মাস্তান্তুয়োনোকে ছেড়ে দেওয়াটাই ছিল একমাত্র উপায়।
আরও পড়ুন
রেকর্ড ফি তে লিভারপুলে ভার্টজ, জিততে চান সব শিরোপা |
![]() |
গায়ার্দো তাই আশাবাদী, ভবিষ্যতটা যেন রাঙাতে পারেন মাস্তান্তুয়োনো।
“আমি শুধু চাই সে (ক্লাব বিশ্বকাপে) নিজের স্বাভাবিকভাবে খেলাটা খেলুক। যাতে সে এই পুরো ঘটনার কথা ভুলে যেতে পারে। যদিও এটা খুবই কঠিন। আমি তার সাথে ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আলোচনা করি না, শুধু চাই সে তার খেলায় মনোযোগ দিক।”
রিভার প্লেট ক্লাব বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেছে জাপানের উরাওয়া রেড ডায়মন্ডসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে। শনিবার পাসাডেনায় মনতের্রের বিপক্ষে দলটি খেলবে গ্রুপে তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ। আগামী বুধবার এরপর মুখোমুখি হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ রানার্সআপ ইন্তার মিলানের।
ফ্লোরিয়ান ভার্টজ লিভারপুলে যাচ্ছেন তা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। শুক্রবার রাতে সেটাও নিশ্চিত হয়ে গেছে। নতুন ক্লাবে যোগ দিয়ে জার্মান মিডফিল্ডার বলেছেন, সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতার দিকেই নজর তার।
লিভারপুল বলেছে, চুক্তি হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী। আর বিবিসির দাবি, ২০৩০ সাল পর্যন্ত অল রেডদের সঙ্গে চুক্তি সেরেছেন ভার্টজ। লেভারকুসেন থেকে তাকে দলে টানতে লিভারপুলকে খরচ করতে হয়েছে ১১৬ মিলিয়ন পাউন্ড। তাতে চেলসির এন্জো ফার্নান্দেসের ১০৭ মিলিয়ন পাউন্ডের রেকর্ড পেছনে ফেলে হয়ে গেছেন প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামি ফুটবলার।
নতুন ক্লাবে যোগ দিয়ে বেশ খুশি ভার্টজ।
“আমি নতুন এই যাত্রা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। প্রতি বছর আমি অনেক কিছু জিততে চাই। তবে সেক্ষেত্রে আমরা নিজের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করতে হবে।”
প্রতিভার বিচারে ভার্টজ বর্তমান তরুণদের মধ্যে বেশ এগিয়েই থাকবেন। গত মৌসুমে বুন্দেসলিগায় ৩১ ম্যাচে ১০ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট করা এই তরুণ ফুটবলারকে দলে পেতে তাই আগ্রহী ছিল ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি বেছে নিয়েছেন লিভারপুলকেই।
ভার্টজের দলগত অর্জনের মধ্যে রয়েছে মৌসুমের বুন্দেসলিগা জয়, ডিএফএল সুপারকাপ ও ডিএফবি পোকাল। আর ব্যক্তিগতভাবে জিতেছেন ২০২৩–২৪ ‘বুন্দেসলিগা প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ ও ২০২৪–২৫ ভিডিএফ ‘প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’'-এর খেতাব।
চলমান ক্লাব বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবগুলোই দেখাচ্ছে দাপট। প্রতিটি গ্রুপেই চলছে তাদের জয়জয়কার। জন্ম দিচ্ছে একের পর এক রুপকথার গল্প। পিএসজিকে হারিয়ে বোতাফোগো দিয়েছিল চমক, চেলসিকে উড়িয়ে দিয়ে সেই ধারায় যেন ধরে রাখলো ফ্ল্যামেঙ্গো। শনিবার ইংলিশ ক্লাবটিকে তারা হারিয়েছে ৩-১ গোলের ব্যবধানে।
ফিলাডেলফিয়ার লিঙ্কন ফাইনান্সিয়াল ফিল্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে অবশ্য শুরুতে লিড নিয়েছিল চেলসি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি ১৩ মিনিটে পেদ্রো নেতোর করা গোলে লিড নিয়ে প্রথমার্ধও শেষ করেছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই ছিল ফ্ল্যামেঙ্গো জাদু। ব্রুনো হেনরিকের গোলে সমতায় ফেরে সাও পাওলোর ক্লাবটা। এরপর দানিলো ও ওয়ালেস ইয়ানের গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।
আরও পড়ুন
দুর্দান্ত জয়ের কৃতিত্ব পুরো দলকেই দিচ্ছেন অধিনায়ক মেসি |
![]() |
এই জয়ে দারুণ খুশি ফ্ল্যামেঙ্গো কোচ ফিলিপে লুইস।
“এটা আমার ও ক্লাবের জন্য বিশেষ একটি দিন। আমি খেলাটি নিয়ে খুব খুশি। ম্যাচের শুরু থেকেই আমরা বিশ্বাস করছিলাম যে আমাদের সুযোগ আছে। আমি খুব গর্বিত; কারণ, ওয়েসলির ভুলের পরও দল থেমে যায়নি। আমরা আগের মতোই খেলা চালিয়ে গেছি। আমার খুবই ভালো লাগছে।”
এই ম্যাচ শেষে ক্লাব বিশ্বকাপের ‘ডি’ গ্রুপে ২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ফ্ল্যামেঙ্গো। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে চেলসি।
৯ ঘণ্টা আগে
১০ ঘণ্টা আগে
৭ দিন আগে
৭ দিন আগে
১০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৬ দিন আগে
২৭ দিন আগে