টেস্টের আরেকবার হতাশার গল্প বাংলাদেশের। আগেরদিন চার আর টেস্টের তিন নম্বর দিনে ১৬ উইকেট হারিয়ে ইনিংস ব্যবধানেই সাউথ আফ্রিকার সাথে হার বাংলাদেশের। পাকিস্তানে ইতিহাস গড়ে আসা দলটা ভারতের পর আফ্রিকা, হেরেছে টানা চার টেস্ট।
৩৮ রান করতেই ২য় দিনের বিকেলে ৪ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বাকি ৪ উইকেট হারাতে অত সময় নেয়নি দল। ৩য় দিন সকালে মাত্র ১০ রান বোর্ডে যোগ করতেই সবাই যাওয়া আসার মিছিলে।
কাগিসো রাবাদার বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে উইকেট কিপারের কাছে ক্যাচ দিয়ে ৯ রান করে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিজে টিকে থাকতে পারেননি অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও। ড্যান প্যাটারসনের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ফেরেন কোনো রান না করেই।
মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে আসে মাত্র এক রান। আর অভিষিক্ত অঙ্কন ফেরেন শূন্যতে। দুজনকে ফিরিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬ তম ফাইফার পূরণ করেন রাবাদা। মাত্র ১ ঘন্টাতেই তছনছ বাংলাদেশের ব্যাটিং। ৪৮ রানে দলের ৮ উইকেট নাই। ম্যাচ জেতা বা ড্রয়ে আশা সর্ম্পূর্ণ বাদ। দল কাঁপছে তখন ফলো অন এড়াতে বাংলাদেশকে।
এত না পারার মাঝেও ক্রিজে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন মুমিনুল হক আর তাইজুল ইসলাম। কেশভ মহারাজের বলে একবার রিভিউ নিয়ে অবশ্য বাঁচতে হয় মুমিনুলকে। এরপর মুমিনুল রান করে গেছেন আর তাইজুল দিয়েছেন তাকে সমর্থন। অবশেষে এই দুই ব্যাটারের ধৈর্য্যৈময় ৮৯ রানের জুটিতে শেষ হয় প্রথম সেশন। মুমিনুলের ব্যাটে ৭৪ আর তাইজুলের ১৮। ৮ উইকেটে ১৩৭ করে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ।
তবে লাঞ্চের পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি তাদের জুটি। মুমিনুল-তাইজুলের ২৭ ওভারে করা ১০৩ রানের জুটি ভাঙেন মুথুসামি। ১১২ বলে ৮২ রানে আউট হন মুমিনুল। বন্দরনগরীর ৮ নম্বরের সেঞ্চুরিটা আর পাওয়া হয়নি তার। ৩০ রান করে মাহারাজের বলে আউট হন তাইজুল। ১৫৯ রানে অলআউট ফলো অনে পড়ে বাংলাদেশ।
ফলো অনে পড়ে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। বোধ করি আলাদা করে আর ব্যাখ্যার দরকার নাই পরের গল্পটা। ১ম ইনিংসের গল্পটাই আরো একবার আপনি শুনে নিতে পারেন। আবারও ব্যাটিং ধ্বস। আউটের ভিন্নতা থাকলেও স্ক্রিপ্টে কোন বদল নাই।
২য় ইনিংসেও ব্যাটারদের ব্যর্থতা। আগের ইনিংসে ৮২ করা মুমিনুল ফেরেন শূন্য করে। ৪৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ১৪৩ রানে অলআউট হয় শান্তর দল। ইনিংস আর ২৭৩ রানে ম্যাচ হেরে সাউথ আফ্রিকার কাছে ২-০ তে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ বাংলাদেশ।
৩০ অক্টোবর ২০২৪, ৭:০১ পিএম
৩০ অক্টোবর ২০২৪, ৪:৫৭ পিএম
২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭:১৬ পিএম
প্রায় এক মাস ধরেই তুমুল আলোচনার ছিল বিষয়টি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট দিয়ে সাকিব আল হাসান অবসর নিতে চাইলেও সেখানে চলে আসে নান মাঠের বাইরের বাস্তবতা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ছাড়াও সেখানে চলে আসে বর্তমান সরকারের অবস্থানও। শেষ পর্যন্ত শুরুতে স্কোয়াডে থাকলেও বাদ পড়ে আর দেশে আসাই হয়নি সাকিবের। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন সাবেক অধিনায়ককে প্রাপ্য সম্মানটা দিতে।
বাংলাদেশে গত আগস্টে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের একজন এমপি ছিলেন সাকিব। রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথেই তার বিরুদ্ধে হয়েছে একটি হত্যা মামলা। ফলে বিদায়ী টেস্ট খেলতে সাকিব শর্ত দিয়েছিলেন তাকে দেশে এসে খেলতে এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তা দিতে। শুরুতে সবুজ সংকেত পেলেও শেষ পর্যন্ত তাকে দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়।
বিসিবির কী এখানে বাড়তি কিছু করা উচিত ছিল? মিরপুরে বুধবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় ফারুক অকপটে বলেছেন, তাদের এখানে কিছুই করার ছিল না। “আপনি যেটা বললেন যে শেষ টেস্ট খেলতে ফিরতে পারেনি… একেবারেই আমরা কোনোভাবে জড়িত নই এই ব্যাপারটায়। এটা হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও সাকিব আল হাসান (তাদের ব্যাপার)..। এখানে আমাদের পুরোপুরি অক্সিলারি একটা পার্ট নেওয়ার কথা ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের সামনে যত কথাই বলি, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি যাতে সাকিব আল হাসান দেশ থেকে অবসরে যেতে পারে। আমার চেষ্টা আমি করেছি।”
সাকিবকে মিরপুর টেস্টের দলে রাখার প্রতিবাদে ম্যাচ শুরুর কয়েকদিন আগে থেকে স্টেডিয়ামের বাইরে শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থকদের নানা পদক্ষেপ। একদল সাকিবকে দেশের মাটিতেই আর দেখতে চান না, আবার আরেকদল দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারকে তার রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে সম্মান দেওয়ার পক্ষে দাবি জানান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পুরো টেস্ট জুড়েই তৈরি হয় এক যুদ্ধময় পরিস্থিতি। নিরাপত্তার চাদরে ধেকে ফেলা হয় স্টেডিয়ামের চারপাশ।
ফারুক তাই মনে করছেন, তাদের পক্ষে চাইলেও এখানে বাড়তি কিছু করার সুযোগ ছিল না। “সাকিব এখন শুধু একজন খেলোয়াড় নয়। তার একটা পরিচয় আছে যে, গত সরকারের একজন এমপি ছিল এবং কিছু সেন্টিমেন্ট আছে (তাকে নিয়ে)। সব মিলিয়ে সরকারের দৃষ্টিকোণ ও ক্রিকেট বোর্ডের দৃষ্টিকোণ তো এক নয়।”
সাকিব আলাদা কিছু না বললেও মিরপুর টেস্ট না খেলতে পারায় বলাই যায়, ২০ ওভারের পাশাপাশি টেস্টেও তার ক্যারিয়ারে ইতি ঘটেছে। লম্বা সময় ধরে দেশে ও দেশের বাইরে সাকিব তার নানা অর্জনের মধ্য দিয়ে বয়ে এনেছেন গৌরবময় সব মুহুর্ত। অথচ তিনি ইচ্ছা থাকলেও পারলেন না দেশের মাঠে দর্শকদের সামনে খেলে টেস্টকে বিদায় জানাতে। ওয়ানডেতেও এমন কিছুর আশা করাটা এখন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিসিবি প্রধান মনে করেন, বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া সবার আর কিছু করার নেই। “আমি সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে মনে করেছি যে, একটা ছেলে ১৭ বছর ক্রিকেট খেলেছে, সে একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, বাংলাদেশের জন্য অনেক করেছে, এজন্য আম মনে করেছি, এটা (দেশ থেকে অবসর) হলে ভালো হতো। কিন্তু সঙ্গে অন্য জিনিসগুলোও তো দেখতে হবে আপনার। ওই জিনিসগুলো মিলিয়ে শেষ মুহূর্তে সে আসতে পারেনি, এটার ব্যাপারে বোর্ডের কিছু করার ছিল না। এটা পুরোপুরি আইনগত ব্যাপার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে জড়িত আছে। সুতরাং এটা সাকিব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপার ছিল। বোর্ড এটার অংশ ছিল না। সে এলে বোর্ডের যতটুকু ক্ষমতা আমরা তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষটা করতাম। যেহেতু সে আসেনি, এটা নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই।”
আগামী মাসে ক্যারিবিয়ান সফরে ওয়ানডেও খেলবে বাংলাদেশ। সেই দলে কী থাকবেন সাকিব? ফারুক রেখে দিলেন ধোঁয়াশা। “সাকিব আল হাসানের ব্যাপারটা… এখনও যেহেতু দল দেয়নি (ঘোষণা হয়নি), আমার মনে হয় অ্যাভেইলঅ্যাবল আছে সে।”
সেই অবধারিত দৃশ্যের অবতারণা আরও একবার। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রতিপক্ষ দল রান করল অবলীলায়, একে একে চারজন করলেন সেঞ্চুরি। অথচ সেই একই উইকেটে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেটিকেই বানিয়ে ফেললেন যেন বোলিং সহায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে রান পাহাড় গড়ার পর ব্যাট করতে নেমেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেই ব্যাকফুটে চলে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানে ইনিংস ঘোষণার পর নেমে ৩৮ রান তুলতেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছে স্বাগতিকরা। পিছিয়ে আছে ৫৩৭ রানে। ক্রিজে আছেন মুমিনুল হক (৬) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (৪)।
আরও পড়ুন
তাইজুল পাঁচে পাঁচ, আবারও ফাইফার |
কেউ যদি এই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস না দেখে স্রেফ বাংলাদেশের ইনিংসটুকু দেখেন, তাদের মনে হতে পারেই যে এ বুঝি ব্যাটারদের জন্য রান করার কঠিন এক মঞ্চ। যেভাবে শেষ বিকেলে মাত্র এক ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যাটিংয়েই যেভাবে নড়ে গেছে টপ অর্ডারের ভিত, তাতে এই ফলো-অন এড়াতেই পাহাড় ডিঙাতে হবে শান্তর দলকে।
ব্যাটিংয়ের আগেই অবশ্য বল হাতে বাংলাদেশ যা সর্বনাশ করার, করেছে। প্রথম দিনের নির্বিষ বোলিংয়ের ধারা দ্বিতীয় দিন শুরুর দিকে কিছুটা হলেও কমার আভাস ছিল। ২ উইকেটে ৩০৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালোই ছিল। প্রথম ঘণ্টায় অনায়াসেই বোর্ডে ফিফটি প্লাস স্কোর গড়ে ফেলেন টনি ডি জর্জি ও ডেভিড বেডিংহাম। দেড়শ ছাড়িয়ে ভালোভাবেই ডাবল সেঞ্চুরির পথে ছিলেন জর্জি। তবে তাইজুল ইসলামকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে শেষ হয় সেই আশা। তবে তার আগে খেলেন ১৭৭ রানের দারুণ এক ইনিংস।
আরও পড়ুন
প্রতিপক্ষ ৪০০-৫০০ করলেও জেতার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ |
এটি ছিল দিনে তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার। এর আগে ফিফটি করার পর বেডিংহামকেও ফেরান তিনি। বোল্ড হওয়ার আগে এই ডানহাতি ব্যাটার করেন ৫৮ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর চাপ বজায় রেখে এরপর আবার আঘান হানেন সেই তাইজুলই। এবার শূন্য রানে তার বলে আউট হন প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা কাইল ভেরেইনা। পাঁচ রানে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৪তম ও টানা দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় তাইজুলের।
অন্যপ্রান্তে রায়ান রিকেলটনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান পেসার নাহিদ রানা। বল হাতে বাংলাদেশের হাসি মুখ সেখানেই শেষ। সেনুরান মুথুসামিকে নিয়ে আরও একবার লোয়ার অর্ডারে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন উইয়ান মুল্ডার। দুজন শুধু জুটিই গড়েননি বড়, সাথে শুরু থেকে রান তুলেছেন ৮০-৯০ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে। ফলে ক্রমেই আলগা হয়ে যায় চাপ, আর বোলাররা দেন বাজে বল। দলীয় স্কোর ৫০০ পার হওয়ার পর তাই দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যে আর কত রান হলে ইনিংস ঘোষণা করবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশের নখদন্তহীন বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে ছক্কা মেরে শতক তুলে নেন সাতে নামা মুল্ডার। এরপরই ডিক্লেয়ার করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এতে কিছুটা আক্ষেপ করতেই পারেন মুথুসামি, আর কিছুক্ষণ সময় পেলে হয়ত তিনিও সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যেতেন।
আর এটাই বলে দেয়, দ্বিতীয় দিনে কীভাবে প্রতিপক্ষকে এক পর্যায়ে বাগে পেয়েও বাজে বোলিংয়ের কারণে বিশাল রানের নিচে চাপা পড়তে হয়েছে। ১৯৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল।
আরও পড়ুন
ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ ড্রয়ের আশা হারাচ্ছেন না অঙ্কন |
এরপর দিনের খেলা বাকি ছিল খুব বেশি হলে ১০-১২ ওভার। তবে শুরু থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের সামনে নড়বরে ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ওপেনার। কাগিসো রাবাদার করা প্রথম ওভারে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিতে গিয়ে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শাদমান ইসলাম। কয়েক ওভার বাদে এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরার জাকির হাসানের হন্তারকওই রাবাদা। তিনিও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই মাহমুদুল হাসান জয়কেও হারায় বাংলাদেশ। ডেন পিটারসনের অফস্ট্যাম্পের একটু বাইরে পিচ করা ডেলিভারি তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা হাসান মাহমুদও পারেননি টিকতে। কেশভ মহারাজের স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে টার্নে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন তিনি।
দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ থেকে এখনো সাউথ আফ্রিকা এগিয়ে আছে ১০১ রানে। ম্যাচে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশ দলকে গড়তে হবে বড় পুঁজি। উইকেট বিবেচনায় কাজটা ব্যাটারদের জন্য বেশ কঠিনই বটে। তবে বাংলাদেশ পেসার হাসান মাহমুদ এখনই আশা হারাচ্ছেন না। ম্যাচে টিকে থাকার পথ বাতলে দিয়েছেন ব্যাটারদের। জানিয়েছেন কেবল লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং বাংলাদেশকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখতে পারে এই ম্যাচে।
পিচে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল হাসান জয়। মুশফিক ৩১ রানে আর জয় টিকে আছেন ৩৮ রান নিয়ে। ফিরে আসার দারুণ এক গল্প লিখতে এই দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ দল। কাজটা কঠিন মনে হলেও সম্ভব বলেই মানছেন বাংলাদেশ বোলার হাসান মাহমুদ, “জয় ও মুশফিক ভাই অনেক ভালো একটা সময় পার করছেন। কালকে ইনশাআল্লাহ চেষ্টা থাকবে যত লম্বা সময় ব্যাট করতে পারে, জুটিটা যত বড় করতে পারে, পরের ব্যাটারদেরও একই ইন্টেনশন নিয়ে ব্যাট করা উচিত, যে আমরা কত বড় পার্টনারশিপ করতে পারবো।”
ম্যাচ জিততে হলে চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ দলকে অন্তত ২০০ রানের লক্ষ্য দিতে হবে। সেই হিসেবে বাকি ৭ উইকেটে আরও ৩০০ রান চায় টাইগারদের। কমপক্ষে আরও তিন সেশন ব্যাট করতে হবে বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি, “আমার মনে হয় ২০০ রানের বেশি লক্ষ্য দিলে অবশ্যই আমরা পারবো ইনশাআল্লাহ। কাল তিন সেশন ব্যাটিং করলে চারশ রানের কাছে যাওয়া সম্ভব।”
প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ দল অল আউট হয় মাত্র ১০৬ রানে। বল হাতে সাউথ আফ্রিকাকেও চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। ১০৮ রানের মধ্যে প্রোটিয়াদের ৬ উইকেট ফেলে দিলেও উইয়ান মুল্ডারের সঙ্গে ভেরাইনির ১১৯ রানের জুটি বাংলাদেশকে ফেলে ব্যকফুটে। শেষ পর্যন্ত সাউথ আফ্রিকার ইনিংস থামে ৩০৮ রানে। শেষ চার উইকেটে ২০২ রান করেছে প্রোটিয়ারা।
ভালো শুরুর পরও টেল এন্ডারদের কাছে খাবি খেয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। যা নিয়ে সংবাদসম্মেলনে কথা বলেছেন হাসান, “আসলে টেস্টে এমনটা হয়, অহরহ হতে থাকে, আমরাও দেখি, আমাদেরও বিরক্তি চলে আসে। আমরা তখন চাই রান কম দিতে, বেসিকটা ধরে রাখতে হবে। আপনার চেষ্টা করতে হবে ব্যাটারকে চাপে রাখার। দুই পাশ থেকে জুটি গড়ে বোলিং করা। এটাই আপনার হাতে আছে। এটাই আরকি!”
প্রতিপক্ষের টেইলএন্ডাররা সফল হয়েছে, এখন বাংলাদেশ যদি সফল হয়- তাহলে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরে আসবে। উইকেটও সহজ হয়ে এসেছে, এখানে বড় ইনিংস এখন খেলা সম্ভব বলে মানছেন হাসান মাহমুদ।
সকালের সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে ব্যাট করল, সেখানেই ম্যাচের লাগাম অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দ্বিতীয় সেশনে বল হাতে যেমনটা করা দরকার, সেটাও করতে পারেনি স্বাগতিকরা। কাইল ভেরেইনের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে তাই বিশাল লিড পেয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। আরও একবার টপ অর্ডারের ব্যাটারা দলকে হতাশ করলেন। তবে শেষবেলায় বাংলাদেশের হয়ে লড়াই চালালেল প্রথম ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা মাহমুদুল হাসান জয়। যোগ্য সঙ্গ দিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ১০১। ৩৮ রানে অপরাজিত আছেন জয়, আর মুশফিকুরের রান ৩১। নাজমুল হোসেন শান্তর দল এখনও পিছিয়ে ১০১ রানে। বাংলাদেশের ১০৬ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেমেছিল ৩০৮ রানে।
বাংলাদেশের মূল সর্বনাশটা করেছেন মূলত উইয়ান মুল্ডার ও ভেরেইন দুজনে মিলেই। আগেরদিনের জুটি আরও পোক্ত হয় দ্বিতীয় দিন সকালে। দারুণ সব শট খেলে প্রতিপক্ষের বোলারদের আরও চাপে ফেলে দিয়ে সপ্তম উইকেটে তারা গড়েন ১১৯ রানের জুটি, যা এশিয়ার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সপ্তম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।
শেষ পর্যন্ত লাঞ্চ বিরতির আগে আক্রমণে ফিরে বিপজ্জনক জুটির ভাঙন ধরান হাসান মাহমুদ। দারুণ একটি ওভারে প্রথমে মুল্ডারকে ৫৪ রানে ফেরানোর পরের বলে বোল্ড করেন দেন কেশভ মহারাজকে। তবে ২২৭ রানে ৮ উইকেট হারানোর পরও দক্ষিণ আফ্রিকা হাল ছেড়ে দেয়নি।
বোলারদের নিয়ে আরও লড়াই চালিয়ে যান ভেরেইন। তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ভোগান্তি বাড়িয়ে নবম উইকেটে ডেন পিয়েডটের সাথে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। ৩২ রান আসে স্পিনার পিয়েডটের ব্যাট থেকে। চাপের মুখে নেমে অসাধারণ ব্যাটিং করা ভেরেইনের ইনিংসের ইতি ঘটে ১১৪ রানে, স্টাম্পড হন মেহেদি হাসান মিরাজের বলে।
বাংলাদেশের হয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার তাইজুল ইসলাম। তিন উইকেট হাসানের, আর দুই উইকেট যায় মিরাজের ঝুলিতে।
২০২ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিং করতে নেমে সেই সময়েই ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো উইকেটেও দলকে হতাশ করেন সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হক। কাগিসো রাবাদার করা তৃতীয় ওভারে প্রথম বলে খোঁচা দিতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাদমান। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই বাউন্সারে তাল সামলাতে না পেরে ভারসাম্য হারিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন অভিজ্ঞ মুমিনুলও।
মাত্র চার রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে তখন রীতিমত ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের শঙ্কা। তবে প্রথম ইনিংসের মত এবারও হাল ধরেন হয়। অধিনায়ক শান্তও ব্যাটিং করছিলেন ভালো ছন্দে। বাঁহাতি এই ব্যাটার খেলেন কয়েকটি আগ্রাসী শটও, যার মধ্যে ছিল বেরিয়ে আসে মহারাজকে মাথার ওপর দিয়ে মারা ছক্কাও।
তবে সেই মহারাজের বলেই শেষ হয় তার সম্ভাবনাময় ইনিংসের। তবে এখানে শান্তর করার ছিল সামান্যই। অফস্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করে বলটি লম্বা টার্ন নিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। নুয়ে পড়ে বলটি ঠেকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেও পারেননি। ২৩ রান আসে শান্তর ব্যাট থেকে।
এই টেস্টে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সেরা সময়টা আসে এরপরই। ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে জয় ও মুশফিকুর রান বের করেন সিঙ্গেলস ও বাউন্ডারিতে। তবে বিপত্তি প্রায় ঘটেই যাচ্ছিল দিনের একদম শেষভাগে।
পিয়েডটের বলে স্লগ করতে গিয়ে মিস করেন জয়, বাউন্স থাকায় সেটি লাফিয়ে ধরেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিপার ভেরেইন। জয়ও বেরিয়ে গিয়েছিলেন ক্রিজ ছেড়ে। ফলে বলটি লুফে নিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন ভেরেইন। পড়িমরি করে ক্রিজে ফেরার চেষ্টা করেন জয়। শেষ পর্যন্ত সেটা আর বিফলে যায়নি। অনেকটা সময় রিপ্লে দেখার পর নটআউট ঘোষণা করেন থার্ড আম্পায়ার। এরপরই দিনের খেলার ইতি টানা হয়।
প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকা পেসার কাগিসো রাবাদা বলেছিলেন, এই উইকেটে ১০০ রানের লিডই যথেষ্ট হবে তাদের জন্য। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে মিরপুর টেস্টে এরই মধ্যে বেশ এগিয়ে গেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে সপ্তম উইকেটে শতরানের জুটি গড়লেন উইয়ান মুল্ডার ও কাইল ভেরেইন। হাসান মাহমুদ জোড়া উইকেট নিলেন বটে, তবে নিউজিল্যান্ডের লিড প্রথম সেশনে প্রায় দেড়শ ছুঁইছুঁই হয়ে গেছে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার লিড ১৩৭ রানের। ৭১ ওভারে তাদের স্কোর ৮ উইকেটে ২৪৩। ৭৭ রানে অপরাজিত আছেন ভেরেইন। সকালের সেশনে বাংলাদেশের দুটি উইকেটই নিয়েছেন হাসান।
প্রথম দিনের শেষ বিকেলে যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক সেখান থেকেই যেন দ্বিতীয় দিন সকালে শুরুটা করেন মুল্ডার ও ভেরেইন। পেস-স্পিন আক্রমণ ভালভাবেই সামাল দেওয়ার পাশাপাশি বাজে বল পেলেই রানও বের করছিলেন সাবলীলভাবেই। তাতে ক্রমেই চাপ বাড়তে থাকে বাংলাদেশের ওপর। কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছিল, তবে ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় সেটা আর হয়নি।
জুটিতে শতরান হওয়ার পরই নাঈম হাসানের টার্ন করা ডেলিভারি বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়েছিলেন মুল্ডার, ব্যাটের কানায় লেগে তা চলে গিয়েছিল শর্ট লেগে। সেখানে থাকা ফিল্ডার মুমিনুল হক বলের নাগাল পেলেও এক হাতের প্রচেষ্টায় ক্যাচ আর ধরতে পারেননি। অবশেষে এশিয়ার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সপ্তম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৯ রানের জুটির ইতি টানেন হাসান।
তরুণ এই ডানহাতি পেসারের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে পাঞ্চ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন মুল্ডারের। শেষ হয় বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়া এই অলরাউন্ডারের ৫৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের। পরের বলেই আবার আঘাত হানেন হাসান। দারুণ এক ডেলিভারিতে ইনসাইড-এজের শিকার হয়ে বোল্ড হন কেশভ মহারাজ। তাতে জাগে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। তবে পরের ওভারের প্রথম বলে সেটা আর করতে পারেননি হাসান।
ডেন পিয়েডটকে (৬*) নিয়ে লাঞ্চের আগে বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন ভেরেইন। দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য এখন তাকেই ফেরানো, কারণ যেভাবে ব্যাট করছেন, তাতে তাকে থামানো বেশ কঠিন কাজ হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।
২ দিন আগে
৩ দিন আগে
১২ দিন আগে
১৫ দিন আগে
২৬ দিন আগে
২৬ দিন আগে
২৭ দিন আগে
২৮ দিন আগে
২৯ দিন আগে