৩১ অক্টোবর ২০২৪, ৫:০৬ পিএম
টেস্টের আরেকবার হতাশার গল্প বাংলাদেশের। আগেরদিন চার আর টেস্টের তিন নম্বর দিনে ১৬ উইকেট হারিয়ে ইনিংস ব্যবধানেই সাউথ আফ্রিকার সাথে হার বাংলাদেশের। পাকিস্তানে ইতিহাস গড়ে আসা দলটা ভারতের পর আফ্রিকা, হেরেছে টানা চার টেস্ট।
৩৮ রান করতেই ২য় দিনের বিকেলে ৪ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বাকি ৪ উইকেট হারাতে অত সময় নেয়নি দল। ৩য় দিন সকালে মাত্র ১০ রান বোর্ডে যোগ করতেই সবাই যাওয়া আসার মিছিলে।
কাগিসো রাবাদার বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে উইকেট কিপারের কাছে ক্যাচ দিয়ে ৯ রান করে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিজে টিকে থাকতে পারেননি অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও। ড্যান প্যাটারসনের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ফেরেন কোনো রান না করেই।
মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে আসে মাত্র এক রান। আর অভিষিক্ত অঙ্কন ফেরেন শূন্যতে। দুজনকে ফিরিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬ তম ফাইফার পূরণ করেন রাবাদা। মাত্র ১ ঘন্টাতেই তছনছ বাংলাদেশের ব্যাটিং। ৪৮ রানে দলের ৮ উইকেট নাই। ম্যাচ জেতা বা ড্রয়ে আশা সর্ম্পূর্ণ বাদ। দল কাঁপছে তখন ফলো অন এড়াতে বাংলাদেশকে।
এত না পারার মাঝেও ক্রিজে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন মুমিনুল হক আর তাইজুল ইসলাম। কেশভ মহারাজের বলে একবার রিভিউ নিয়ে অবশ্য বাঁচতে হয় মুমিনুলকে। এরপর মুমিনুল রান করে গেছেন আর তাইজুল দিয়েছেন তাকে সমর্থন। অবশেষে এই দুই ব্যাটারের ধৈর্য্যৈময় ৮৯ রানের জুটিতে শেষ হয় প্রথম সেশন। মুমিনুলের ব্যাটে ৭৪ আর তাইজুলের ১৮। ৮ উইকেটে ১৩৭ করে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ।
তবে লাঞ্চের পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি তাদের জুটি। মুমিনুল-তাইজুলের ২৭ ওভারে করা ১০৩ রানের জুটি ভাঙেন মুথুসামি। ১১২ বলে ৮২ রানে আউট হন মুমিনুল। বন্দরনগরীর ৮ নম্বরের সেঞ্চুরিটা আর পাওয়া হয়নি তার। ৩০ রান করে মাহারাজের বলে আউট হন তাইজুল। ১৫৯ রানে অলআউট ফলো অনে পড়ে বাংলাদেশ।
ফলো অনে পড়ে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। বোধ করি আলাদা করে আর ব্যাখ্যার দরকার নাই পরের গল্পটা। ১ম ইনিংসের গল্পটাই আরো একবার আপনি শুনে নিতে পারেন। আবারও ব্যাটিং ধ্বস। আউটের ভিন্নতা থাকলেও স্ক্রিপ্টে কোন বদল নাই।
২য় ইনিংসেও ব্যাটারদের ব্যর্থতা। আগের ইনিংসে ৮২ করা মুমিনুল ফেরেন শূন্য করে। ৪৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ১৪৩ রানে অলআউট হয় শান্তর দল। ইনিংস আর ২৭৩ রানে ম্যাচ হেরে সাউথ আফ্রিকার কাছে ২-০ তে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ বাংলাদেশ।
৩০ অক্টোবর ২০২৪, ৭:০১ পিএম
৩০ অক্টোবর ২০২৪, ৪:৫৭ পিএম
প্রায় এক মাস ধরেই তুমুল আলোচনার ছিল বিষয়টি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট দিয়ে সাকিব আল হাসান অবসর নিতে চাইলেও সেখানে চলে আসে নান মাঠের বাইরের বাস্তবতা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ছাড়াও সেখানে চলে আসে বর্তমান সরকারের অবস্থানও। শেষ পর্যন্ত শুরুতে স্কোয়াডে থাকলেও বাদ পড়ে আর দেশে আসাই হয়নি সাকিবের। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন সাবেক অধিনায়ককে প্রাপ্য সম্মানটা দিতে।
বাংলাদেশে গত আগস্টে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের একজন এমপি ছিলেন সাকিব। রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথেই তার বিরুদ্ধে হয়েছে একটি হত্যা মামলা। ফলে বিদায়ী টেস্ট খেলতে সাকিব শর্ত দিয়েছিলেন তাকে দেশে এসে খেলতে এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তা দিতে। শুরুতে সবুজ সংকেত পেলেও শেষ পর্যন্ত তাকে দেশে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়।
বিসিবির কী এখানে বাড়তি কিছু করা উচিত ছিল? মিরপুরে বুধবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় ফারুক অকপটে বলেছেন, তাদের এখানে কিছুই করার ছিল না। “আপনি যেটা বললেন যে শেষ টেস্ট খেলতে ফিরতে পারেনি… একেবারেই আমরা কোনোভাবে জড়িত নই এই ব্যাপারটায়। এটা হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও সাকিব আল হাসান (তাদের ব্যাপার)..। এখানে আমাদের পুরোপুরি অক্সিলারি একটা পার্ট নেওয়ার কথা ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের সামনে যত কথাই বলি, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি যাতে সাকিব আল হাসান দেশ থেকে অবসরে যেতে পারে। আমার চেষ্টা আমি করেছি।”
সাকিবকে মিরপুর টেস্টের দলে রাখার প্রতিবাদে ম্যাচ শুরুর কয়েকদিন আগে থেকে স্টেডিয়ামের বাইরে শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থকদের নানা পদক্ষেপ। একদল সাকিবকে দেশের মাটিতেই আর দেখতে চান না, আবার আরেকদল দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারকে তার রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে সম্মান দেওয়ার পক্ষে দাবি জানান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পুরো টেস্ট জুড়েই তৈরি হয় এক যুদ্ধময় পরিস্থিতি। নিরাপত্তার চাদরে ধেকে ফেলা হয় স্টেডিয়ামের চারপাশ।
ফারুক তাই মনে করছেন, তাদের পক্ষে চাইলেও এখানে বাড়তি কিছু করার সুযোগ ছিল না। “সাকিব এখন শুধু একজন খেলোয়াড় নয়। তার একটা পরিচয় আছে যে, গত সরকারের একজন এমপি ছিল এবং কিছু সেন্টিমেন্ট আছে (তাকে নিয়ে)। সব মিলিয়ে সরকারের দৃষ্টিকোণ ও ক্রিকেট বোর্ডের দৃষ্টিকোণ তো এক নয়।”
সাকিব আলাদা কিছু না বললেও মিরপুর টেস্ট না খেলতে পারায় বলাই যায়, ২০ ওভারের পাশাপাশি টেস্টেও তার ক্যারিয়ারে ইতি ঘটেছে। লম্বা সময় ধরে দেশে ও দেশের বাইরে সাকিব তার নানা অর্জনের মধ্য দিয়ে বয়ে এনেছেন গৌরবময় সব মুহুর্ত। অথচ তিনি ইচ্ছা থাকলেও পারলেন না দেশের মাঠে দর্শকদের সামনে খেলে টেস্টকে বিদায় জানাতে। ওয়ানডেতেও এমন কিছুর আশা করাটা এখন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিসিবি প্রধান মনে করেন, বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া সবার আর কিছু করার নেই। “আমি সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে মনে করেছি যে, একটা ছেলে ১৭ বছর ক্রিকেট খেলেছে, সে একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, বাংলাদেশের জন্য অনেক করেছে, এজন্য আম মনে করেছি, এটা (দেশ থেকে অবসর) হলে ভালো হতো। কিন্তু সঙ্গে অন্য জিনিসগুলোও তো দেখতে হবে আপনার। ওই জিনিসগুলো মিলিয়ে শেষ মুহূর্তে সে আসতে পারেনি, এটার ব্যাপারে বোর্ডের কিছু করার ছিল না। এটা পুরোপুরি আইনগত ব্যাপার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে জড়িত আছে। সুতরাং এটা সাকিব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপার ছিল। বোর্ড এটার অংশ ছিল না। সে এলে বোর্ডের যতটুকু ক্ষমতা আমরা তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষটা করতাম। যেহেতু সে আসেনি, এটা নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই।”
আগামী মাসে ক্যারিবিয়ান সফরে ওয়ানডেও খেলবে বাংলাদেশ। সেই দলে কী থাকবেন সাকিব? ফারুক রেখে দিলেন ধোঁয়াশা। “সাকিব আল হাসানের ব্যাপারটা… এখনও যেহেতু দল দেয়নি (ঘোষণা হয়নি), আমার মনে হয় অ্যাভেইলঅ্যাবল আছে সে।”
সেই অবধারিত দৃশ্যের অবতারণা আরও একবার। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রতিপক্ষ দল রান করল অবলীলায়, একে একে চারজন করলেন সেঞ্চুরি। অথচ সেই একই উইকেটে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেটিকেই বানিয়ে ফেললেন যেন বোলিং সহায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে রান পাহাড় গড়ার পর ব্যাট করতে নেমেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেই ব্যাকফুটে চলে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানে ইনিংস ঘোষণার পর নেমে ৩৮ রান তুলতেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছে স্বাগতিকরা। পিছিয়ে আছে ৫৩৭ রানে। ক্রিজে আছেন মুমিনুল হক (৬) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (৪)।
আরও পড়ুন
তাইজুল পাঁচে পাঁচ, আবারও ফাইফার |
কেউ যদি এই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস না দেখে স্রেফ বাংলাদেশের ইনিংসটুকু দেখেন, তাদের মনে হতে পারেই যে এ বুঝি ব্যাটারদের জন্য রান করার কঠিন এক মঞ্চ। যেভাবে শেষ বিকেলে মাত্র এক ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যাটিংয়েই যেভাবে নড়ে গেছে টপ অর্ডারের ভিত, তাতে এই ফলো-অন এড়াতেই পাহাড় ডিঙাতে হবে শান্তর দলকে।
ব্যাটিংয়ের আগেই অবশ্য বল হাতে বাংলাদেশ যা সর্বনাশ করার, করেছে। প্রথম দিনের নির্বিষ বোলিংয়ের ধারা দ্বিতীয় দিন শুরুর দিকে কিছুটা হলেও কমার আভাস ছিল। ২ উইকেটে ৩০৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালোই ছিল। প্রথম ঘণ্টায় অনায়াসেই বোর্ডে ফিফটি প্লাস স্কোর গড়ে ফেলেন টনি ডি জর্জি ও ডেভিড বেডিংহাম। দেড়শ ছাড়িয়ে ভালোভাবেই ডাবল সেঞ্চুরির পথে ছিলেন জর্জি। তবে তাইজুল ইসলামকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে শেষ হয় সেই আশা। তবে তার আগে খেলেন ১৭৭ রানের দারুণ এক ইনিংস।
আরও পড়ুন
প্রতিপক্ষ ৪০০-৫০০ করলেও জেতার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ |
এটি ছিল দিনে তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার। এর আগে ফিফটি করার পর বেডিংহামকেও ফেরান তিনি। বোল্ড হওয়ার আগে এই ডানহাতি ব্যাটার করেন ৫৮ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর চাপ বজায় রেখে এরপর আবার আঘান হানেন সেই তাইজুলই। এবার শূন্য রানে তার বলে আউট হন প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা কাইল ভেরেইনা। পাঁচ রানে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৪তম ও টানা দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় তাইজুলের।
অন্যপ্রান্তে রায়ান রিকেলটনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান পেসার নাহিদ রানা। বল হাতে বাংলাদেশের হাসি মুখ সেখানেই শেষ। সেনুরান মুথুসামিকে নিয়ে আরও একবার লোয়ার অর্ডারে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন উইয়ান মুল্ডার। দুজন শুধু জুটিই গড়েননি বড়, সাথে শুরু থেকে রান তুলেছেন ৮০-৯০ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে। ফলে ক্রমেই আলগা হয়ে যায় চাপ, আর বোলাররা দেন বাজে বল। দলীয় স্কোর ৫০০ পার হওয়ার পর তাই দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যে আর কত রান হলে ইনিংস ঘোষণা করবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশের নখদন্তহীন বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে ছক্কা মেরে শতক তুলে নেন সাতে নামা মুল্ডার। এরপরই ডিক্লেয়ার করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এতে কিছুটা আক্ষেপ করতেই পারেন মুথুসামি, আর কিছুক্ষণ সময় পেলে হয়ত তিনিও সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যেতেন।
আর এটাই বলে দেয়, দ্বিতীয় দিনে কীভাবে প্রতিপক্ষকে এক পর্যায়ে বাগে পেয়েও বাজে বোলিংয়ের কারণে বিশাল রানের নিচে চাপা পড়তে হয়েছে। ১৯৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল।
আরও পড়ুন
ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ ড্রয়ের আশা হারাচ্ছেন না অঙ্কন |
এরপর দিনের খেলা বাকি ছিল খুব বেশি হলে ১০-১২ ওভার। তবে শুরু থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের সামনে নড়বরে ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ওপেনার। কাগিসো রাবাদার করা প্রথম ওভারে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিতে গিয়ে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শাদমান ইসলাম। কয়েক ওভার বাদে এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরার জাকির হাসানের হন্তারকওই রাবাদা। তিনিও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই মাহমুদুল হাসান জয়কেও হারায় বাংলাদেশ। ডেন পিটারসনের অফস্ট্যাম্পের একটু বাইরে পিচ করা ডেলিভারি তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা হাসান মাহমুদও পারেননি টিকতে। কেশভ মহারাজের স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে টার্নে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন তিনি।
No recent posts available.