১২ নভেম্বর ২০২৪, ৬:৩৩ পিএম
হাতে আছে চার মাসেরও কম সময়। আইসিসির আর দশটা টুর্নামেন্ট হলে এমন সময়ে আয়োজক দেশ ব্যস্ত থাকে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে, সূচিও প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় বা হওয়ার পথে থাকে। ভেন্যুগুলোতে চলে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। তবে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তানে হওয়ার এই সময়েও রয়েছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা। ভারত কোনোভাবেই যাবে না প্রতিবেশী দেশে খেলতে, আর ছাড় দিতে নারাজ পাকিস্তানও। তাদের দাবি, হয় ভারতকে তাদের দেশে আসতে হবে বা রোহিত-কোহলিকে ছাড়াই আয়োজন হবে এবারের আসরের।
সবকিছু ঠিক থাকলে, গত সোমবার থেকে ১০০ দিনের কাউন্টডাউন শুরু হতো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫-এর। লাহোরে হত বিশাল আয়োজন। জানানো হতো টুর্নামেন্টের সূচি। কিন্তু তা আর হলো কই। এর পেছনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের অনড় অবস্থানও কম দায়ী নয়।
আরও পড়ুন
‘ভারত-পাকিস্তান আছে বলেই আইসিসি টিকে আছে’ |
পাকিস্তানে হিয়ে খেলার ক্ষেত্রে গোড়ামি যে শুধু ভারতেরই নয়। পাকিস্তানও যেন পণ করেছে, একচুল ছাড় ভয় ভারত ক্রিকেট বোর্ডকে। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপের হাইব্রিড মডেলকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তারা কিছুতেই মানবে না। গেল বছর এশিয়া কাপে ভারত ছাড়া বাকি দলগুলো খেলেছে পাকিস্তানের মাঠে। শুধু ভারতের জন্যে শ্রীলঙ্কাতেও বসাতে হয়েছিল ভেন্যু। তবে এবার পাকিস্তান তাতেও রাজী না।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আইসিসিকে ই-মেইলে জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানে খেলতে যেতে অপারগ। ভারত সরকার তাদের পাঠাবেন না। প্রস্তাব দিয়েছে হাইব্রিড মডেলে তাদের ম্যাচগুলো অন্য আরেকটি দেশের রাখার জন্য। সেটা আবার আইসিসি পাকিস্তানকে মেইল করে জানিয়েছে।
পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, ভারত যদি এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে না আসে, তবে মাইনাস ইন্ডিয়া বা বয়কট ইন্ডিয়া নীতিতে এগোতে পারে পাকিস্তান। অর্থাৎ, ভারতকে ছাড়াই টুর্নামেনট আয়োজনের কথা ভাবছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। গণমাধ্যমগুলো এমনও বলছে, ভারত পাকিস্তানে না খেলা অব্দি পাকিস্তানও কোন টুর্নামেন্টেই ভারতের সঙ্গে আর খেলবে না। পিসিবিও নাকি এগোচ্ছে এমন পরিকলল্পনার দিকেই।
আরও পড়ুন
রউফের ফাইফারে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিল পাকিস্তান |
ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা তো নতুন কিছু না। তবে এরপরেও দুই দলের মধ্যে সফর ছিল প্রায় নিয়মিত। মাঝে শুধু ১৯৬২ থেকে ১৯৭৭ সাল দুবার যুদ্ধে জড়িয়ে আসা যাওয়া বন্ধ ছিল দুই দেশ। এর আগে-পরেও একাধিকবার সফর বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। তবে একুশ শতকে কোনো যুদ্ধ না লাগলেও এক যুগ ধরে ভারত-পাকিস্তান একে অপরের দেশে সফর করে না।
পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে সবশেষ ভারতে গেছে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। আর ভারতীয় দলের সর্বশেষ পাকিস্তান সফর ২০০৭ সালে। এর পরের বছরও ভারতের একটি দল পাকিস্তানে গেছে, তবে সেটা এশিয়া কাপের জন্য। এর পর থেকে চলছে লম্বা বিরতি। আর গত ৮ বছরে দুই ফরম্যাটের দুটি বিশ্বকাপ খেলতে দুইবার ভারতে গেছে পাকিস্তান।
গত বছর এশিয়া কাপের জন্য ভারতীয় দলের পাকিস্তানে যাওয়া না–যাওয়া নিয়ে যখন তুমুল আলোচনা, তখন জাভেদ মিয়াঁদাদের একটি মন্তব্য ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। মিয়াঁদাদ বলেছিলেন, “ভারত জানে পাকিস্তানের কাছে হারলে তাদের দেশের মানুষ ছেড়ে কথা বলবে না। এমনকি নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত উধাও হয়ে যাবেন, ভারতের জনগণ তাঁকেও ছাড়বে না। এই ভয়ৈই ভারত আসে না। পাকিস্তানে যদি তারা খেলতে না আসে, তাহলে তারা জাহান্নামে যাক।”
পাকিস্তানে না যাওয়া নিয়ে বিসিসিআই সব সময়ই সরকারের অনুমোদন না থাকার কথা বলে। কিন্তু ভারত সরকারের কেউ কখনোই স্পষ্ট করে বলেন না ঠিক কী কারণে অনুমতি দেওয়া হয় না। আর এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমে ভারতের ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একটা শব্দই নিয়মিত উচ্চারণ করে থাকেন—‘নিরাপত্তা’।
আরও পড়ুন
ভারতের অংশগ্রহণে পাকিস্তানেই হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, আশা পিসিবির |
পাকিস্তানে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে কিন্তু শঙ্কা কমবেশি সব দেশেরই থাকে। ২০০৯ সালের মার্চে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর হামলার ঘটনায় তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনেই চলে গিয়েছিল পাকিস্তানের ভেন্যু। এমনকি ২০১১ বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজক হলেও পাকিস্তানে শেষ পর্যন্ত কোনো ম্যাচই হয়নি।
পাকিস্তানে ভারত ক্রিকেট দলের সফর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে লাহোরের ঘটনা ছিল সবার জন্য ‘কমন ফ্যাক্টর’। লাহোর হামলার পরবর্তী ছয় বছর কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশই আর পাকিস্তানে সফর করেনি। তবে ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের মাধ্যমে আবার দরজা খোলার পর গত কয়েক বছরে প্রায সব দেশই পাকিস্তানে খেলতে গেছে। বাকি কেবল ভারতই।
এর পেছনে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর টানা চার দিন মুম্বাইয়ে দফায় দফায় সন্ত্রাসী হামলার কারণটিও জড়িত। ওই হামলায় প্রায় পৌনে দুই শ মানুষ নিহত হয়। মুম্বাইয়ে সেই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করে ভারত। এতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠেকে তলানিতে । সঙ্গে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর হামলার ঘটনা মিলিয়ে ভারত, পাকিস্তানে ক্রিকেট দল পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
২০১৫ সালের শেষে সম্ভাবনা দেখা দেয় পিসিবি আর বিসিসিআইয়ের মধ্যকার এক বৈঠকের আহবানে। বৈঠকের দিন ওয়াংখেড়েতে হানা দেন শিবসেনার কর্মীরা। প্রায় দুই শর মতো শিবসেনা বিসিসিআই প্রধান শশাঙ্ক মনোহরসহ অন্যদের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখলে পিসিবি-বিসিসিআই বৈঠক পণ্ড হয়ে যায়।
বিসিসিআইয়ের তখনকার সচিব অনুরাগ ঠাকুর বলেছিলেন, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা নিয়ে আলোচনা করতে পারি তিনটি শর্তে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা, ভারতীয় ক্রিকেটারদের স্বার্থ এবং ভারতীয় জনগণের অনুভূতিকে প্রাধান্য দিয়ে।”
তবে সেই শর্ত পূরণ হয়েছে নাকি হয়নি, আজ অব্দি তা নিয়ে কোনো পক্ষ থেকেই আসেনি পরিস্কার কোন বক্তব্য। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ ঘিরে দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক পুনরায় চালু নিয়ে আবার ব্যাপক মাত্রায় আলোচনা তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তান সব ভুলে কিন্তু বিশ্বকাপেও খেলেছে ভারতে গিয়ে। আবার ভারতের ইচ্ছেনুযায়ী হাইব্রিড মডেলও দিয়েছে এশিয়া কাপে। তবে পাকিস্তানে গিয়ে খেলার ব্যাপারে অতীতের অবস্থান পরিবর্তন এখন ও নিকট ভবিষ্যতেও হয়ত করবে না ভারত।
আর সেই কারণেই উঠছে প্রশ্ন, অল্প সময়ের মধ্যে আয়োজক দেশ ও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই - দুই পক্ষকে খুশি রেখে আইসিসি কী পারবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঠিক সময়ে আয়োজনে এগিয়ে যেতে? বাস্তবতা বলছে, খুব জটিল সময় অপেক্ষা করছে ৫০ ওভারের এই টুর্নামেন্টের জন্য।
৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২:০৫ এম
২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ পিএম
বোলাররা দারুণভাবে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার পর দায়িত্বটা ছিল ব্যাটারদের কাঁধে। প্রথম ইনিংসে বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখানো ব্যাটাররা এই দফায় লড়লেন যথাসাধ্য। ইনিংসের শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে উল্টো চাপে ফেলে দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। শেষ বেলায় কয়েকটি উইকেট হারালেও তাই রোমাঞ্চকর ম্যাচে কিছুটা হলেও এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
স্যাবাইনা পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে করেছে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান। লিড ২১১ রানের। ক্রিজে আছেন জাকের আলি অনিক (২৯) ও তাইজুল ইসলাম (৯)।
নাহিদের আগুন ঝড়ানো স্পেলের ধাক্কা ব্যাটিং বিপর্যয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও বিপদে ফেলে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ব্যাটিংয়ের সময় নাহিদের বাউন্সারে আঘাত পাওয়ায় ৩০ ওভারের আগে বল হাতে নিতে পারেননি কেমার রোচ, যিনি বরাবরই নতুন বলে বাংলাদেশের বিপক্ষে আতঙ্কের এক নাম।
সেটা কাজে লাগিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে চা বিরতির আগেই আগ্রাসী এক ফিফটি জুটিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন সাদমান ইসলাম ও মিরাজ। শেষ সেশনের শুরুতেও ছিল ইতিবাচকতার সুর। শামার জোসেফকে চার মেরে একশর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা মিরাজ আভাদ দেন একই গতিতে এগিয়ে যাওয়ার।
তবে শামারের বলেই অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়া করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় সাদমানের ৭ বাউন্ডারিতে সাজানো ৪৬ রানের দারুণ একটি ইনিংস। এরপর কিছুটা ধীর হয়ে যায় মিরাজের রাত তোলার গতি।
শেষ পর্যন্ত ফিফটি মিস করেন বাংলাদেশ অধিনায়কও। তবে শামারের বলে অহেতুক ফ্লিক করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন মিরাজ। তবে তার আগে চারে নেমে খেলে যান ৩৯ বলে ৪২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। ক্রিজে গিয়েই কয়েকটি চার মেরে আগ্রাসনের ইঙ্গিত দেন লিটন দাসও।
শুরুটা ধীরলয়ে করা জাকের আলি অনিক খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন শামারকে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। দুজনের জুটি যখন ক্রমেই জমে উঠছিল, তখনই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কাঙ্ক্ষিত ব্রেকথ্রু এনে দেন জাস্টিন গ্রিভস। স্লোয়ার ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত হয়ে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন ২৫ রানে।
আলো স্বল্পতায় দিনের খেলা আগেভাগে শেষ হওয়ার আগে সাবধানী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সুযোগ বুঝে রানও বের করেন জাকের আলি। একপ্রান্ত আগলে রাখার কাজটা ভালোভাবে সামাল দিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তিতে দিন পার করতে সাহায্য করেন তাইজুল। চতুর্থ দিন এই জুটির ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।
বল হাতে প্রথম সেশনেই ঘুরে দাঁড়ানোর সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন বোলাররা। দ্বিতীয় সেশনে যেন তাতে পূর্ণতা দেওয়ার কাজটা শুরু করলেন ব্যাটাররা। বোলারদের কৃতিত্বে প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় দফায় ব্যাট করল রীতিমত ওয়ানডে মেজাজে। পাল্টা আক্রমণে সাদমান-দিপু-মিরাজরা চমকে দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের। এর ফলে দ্রুতই ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে নেওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
স্যাবাইনা পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের চা বিরতিতে বাংলাদেশ আছে দুর্দান্ত অবস্থানে। প্রতিপক্ষকে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর লিড নিয়েছে ১২৮ রানের। স্কোর এখন পর্যন্ত ২০ ওভারে ২ উইকেটে ১১০ রান।
নাহিদ রানার তোপে লাঞ্চ বিরতির আগেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ পারেনি বেশিদূর এগিয়ে যেতে। এর আটে মূল অবদান রাখার পথে তরুণ এই পেসার তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। ১৬ ওভারে ৫ উইকেট নেন ৬১ রানের বিনিময়ে। নিয়মিতই ঘণ্টায় ১৪৫ কি.মি. গতিতে বল করে পুরো ইনিংসেই নাজেহাল করেছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের।
নাহিদকে যোগ্য সমর্থন দিয়ে বাকি চার স্পেশালিস্ট বোলার ভাগ করেন নেন পাঁচটি উইকেট। ১৪৬ রান করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলে ৬৫ ওভার, যার মধ্যে ২০ ওভারই ছিল মেডেন! তাদের অনবদ্য পারফরম্যান্সই মাত্র ১৬৪ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করা বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনে ম্যাচে, দেয় ১৮ রানের মূল্যবান লিডও।
ব্যাট হাতে নড়বরে থেকে লিড নিতে ব্যর্থ হওয়া বা তাসের ঘরের মত ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে পড়ার কারনেই কিনা, বল হাতে প্রথম ওভারটা বাদে অচেনা রুপেই হাজির হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজে চতুর্থবারের মত ব্যর্থ ওপেনার দলকে বিপদে ফেলে বিদায় নেন রানের খাতা খোলার আগেই।
তবে প্রথম ইনিংসে ধীরলয়ে ব্যাটিং করা সাদমান ইসলাম ও শাহাদাত হোসেন দিপু এরপর আগ্রাসী ব্যাটিং চাপে ফেলে দেন প্রতিপক্ষকে। দুজন ব্যাটারই ধীরে ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত হলেও এই ইনিংসে তারা হাত খুলেই খেলেন, আসে একের পর এক বাউন্ডারি। শুরুটা করেন দিপুই।
বাজে বল করে তাদের কাজটা আরও সহজ করে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের গতিময় পেসাররাও। শামার জোসেফকে টানা দুই চার মারা দিপুকে শেষ পর্যন্ত থামান আলজারি জোসেফ। তবে তার আগে ম্যাচের প্রেক্ষাপটে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ২৬ বলে ২৮ রানের ইনিংস আসে তরুণ এই ক্রিকেটারের ব্যাট থেকে।
প্রমোশন পেয়ে চারে নামা মেহেদি হাসানের উদ্দেশ্য ছিল শুরু থেকেই স্পষ্ট। আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিং করে দ্রুত রান বের করা এবং প্রতিপক্ষকে আরও চাপে ফেলে দেওয়া। সেটা কাজেও লেগে যায় দারুণভাবে। শামারের এক ওভারে হাঁকান টানা চার বাউন্ডারি।
পরের ওভারে জেডেন সিলসকে টানা দুটি চার মারেন সাদমান। একই ওভারে আরেকটি বাউন্ডারি আসে মিরাজের ব্যাট থেকেও। দুই প্রান্ত থেকে দুজনের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে মাত্র ২৯ বলেই জুটিতে হয়ে যায় ফিফটি। বাংলাদেশের স্কোর ও লিডও পার করে একশ।
৬২ বলে ৬৩ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন থেকেই বিরতিতে গেছেন সাদমান (৪৪) ও মিরাজ (২৬)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য আরও দুঃসংবাদের কারণ পেসার কেমার রোচকে এই ইনিংসে বোলিংয়ে না পাওয়া। ব্যাটিংয়ের সময় আঘাত পেয়ে অভিজ্ঞ এই পেসার গেছেন মেডিকেল চেকআপে।
অল্প রানে গুটিয়ে গেলেও দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভালোই চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। রানের জন্য দলটির ব্যাটারদের রীতিমতো যে সংগ্রাম, তা অব্যাহত রইল তৃতীয় দিনেও। তবে এবার প্রতিপক্ষকে নাহিদ রানারা আরও চাপে ফেললেন একের পর এক উইকেট তুলে। ফলে প্রথম ইনিংসে মামুলি স্কোর করার পরও বাংলাদেশের সামনে সম্ভাবনা জেগেছে লিড নেওয়ার।
লাঞ্চ বিরতির আগে বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে লড়াই করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ করতে পেরেছে ৮ উইকেটে ১৩৫ রান। পিছিয়ে এখনও ২৯ রানে। তিন পেসারের পাশাপাশি উইকেট নেওয়াত তালিকায় নাম লিখিয়েছেন অভিজ্ঞ স্পিনার তাইজুল ইসলামও।
ক্রিজে আছেন শামার জোসেফ (৫) ও আলজারি জোসেফ (৫)।
আগেরদিন ৩৭ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করতে পেরেছিল মাত্র ৭০ রান, যা বলে দেয় খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করতে পারেনি তারা। তৃতীয় দিনেও মাত্রাতিরিক্ত ডিফেন্ডিং ব্যাটিং চালিয়ে যায় স্বাগতিকরা। আগের দিন গতির ঝড় তোলা নাগিদ নিজের প্রথম ওভারে প্রায় ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন কার্টিকে। অল্পের জন্য স্লিপে ক্যাচ জমাতে পারেননি সাদমান ইসলাম।
তবে খুব দ্রুতই দলকে আনন্দে ভাসান তরুণ এই পেসার। এনে দেন বড় উইকেটটা। পঞ্চম স্ট্যাম্প লাইনে করা ডেলিভারি ব্যাটে-বলে হয়নি ক্রেইগ ব্রাথওয়েটেরর। গালিতে ক্যাচ নেন বদলি ফিল্ডার জাকির হাসান। ১২৯ বলে ৩৯ রান আসে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের কাছ থেকে।
গতি দিয়ে বারবার ব্যাটারদের ‘বিট করা নাহিদ যেন আভাস দিচ্ছিলেন আরেকটি উইকেটের। কেভাম হজের ক্যাচ তাসকিন আহমেদ ফেলে দিলেও একই ওভারে উইকেটের দেখা পান তিনি। বাউন্সার সামলাতে ব্যর্থ হয়ে হজ বিদায় নেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। অল্প সময়ের মধ্যে দুই উইকেটে হারিয়ে আরও কমে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের গতি।
আর সেটা কাজে লাগিয়ে অন্যপ্রান্তে আলিক আথানাজকে নিচু হয়ে যাওয়া এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন তাসকিন। এরপর যোগ দেন তাইজুলও। টসড আপ ডেলিভারিতে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন জাস্টিন গ্রিভস, তবে বল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক হলে আঘাত হানে স্ট্যাম্প।
এরপরই হাসান হাজির হন দারুণ এক স্পেল নিয়ে। যার শুরুটা হয় ভেতরে প্রবেশ করানো এক ডেলিভারিতে জোশুয়া দা সিলভাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে। পুরোপুরি পরাস্ত হন ক্যারিবিয়ান কিপার। রিভিউ নিয়েও হয়নি রক্ষা। একপ্রান্ত আগলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন কার্টি।
তবে তাকে কিপারের ক্যাচ বানিয়ে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট এনে দেন হাসান। তার আগে ৪০ রান করেন কার্টি। পুরো সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটারদের বাউন্সারে কাবু করা আলজারি জোসেফকে বাউন্সার নিয়ে প্রথমেই চাপে ফেলেন নাহিদা। এরপর স্লোয়ারে ক্যাচ বানান আলজারিকে। ৮ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান মোটে ১২৩।
বাকি সময়টা কোনোমতে পার করে দেন শামার ও রোচ। ৫৭ রানে চার উইকেট নিয়েছেন নাহিদ।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে সেভাবে বাংলাদেশকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমাতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। তৃতীয় ম্যাচেও বজায় রইল একই চিত্র। রান তাড়ায় ফর্মে থাকা ফারজানা হক ও শারমিন আক্তারের ফিফটি নিশ্চিত করল বড় জয়। সাথে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল পেল প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদও।
মিরপুরে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ নারী দল জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৮৬ রানের লক্ষ্য নিগারের দল স্পর্শ করেছে ৩৭.৩ ওভারেই।
শুরুতেই উইকেট হারালেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেটে ভালো ভিত পায় আয়ারল্যান্ড। ৯ বাউন্ডারিতে ৫২ রানের দারুণ এক ইনিংস আসে ওপেনার গ্যাবি লুইসের ব্যাট থেকে। ডানহাতি এই ব্যাটারকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান ফাহিমা খাতুন। এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে আর বড় কোনো জুটিই গড়তে পারেনি আইরিশরা।
১০ ওভারের কোটা দুর্দান্ত স্পেল উপহার দেওয়া শারমিন সুলতানা শেষ করেন ২ মেডেন সহ ২৯ রানে ২ উইকেটে। বাহাতি নাহিদা আক্তার বাদে অন্য বোলাররাও ছিলেন বেশ হিসেবী। ৪৩ রানে ৩ উইকেট নেন ফাহিমা।
আয়ারল্যান্ডের শেষের দিকের ব্যাটাররা পারেননি সেভাবে প্রতিরোধ গড়তে। ফলে ৫০ ওভার খেলে অলআউট হওয়ার আগে দুইশ রানও করা সম্ভব হয়নি দলটির।
দলীয় ৯ রানে মুরশিদা খাতুনকে হারালেও ম্যাচে কোনো রোমাঞ্চের সুযোগই রাখেননি সিরিজ জুড়ে রানের মধ্যে থাকা ফারজানা ও শারমিন। দুজনই ফিফটি করার পথে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ১৪৩ রান। টানা তৃতীয় ম্যাচে ফিফটি করা শারমিন আউট হন ৭২ রানে। ৮৮ বলের ইনিংস সাজান ১১ বাউন্ডারিতে।
ফারজানাও পারেননি ম্যাচ শেষ করে আসতে। তিনি থামেন ৬১ রানে। তবে বড় জয়ের মঞ্চ তার আগেই তৈরি হয়ে যায়। বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন অধিনায়ক নিগার (১৮) ও সোবহানা মোস্তারি (৭)।
সোমবার মিরপুরে ওয়ানডে সিরিজ খেলা প্রসঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত উত্তর ঠেলে দিয়েছিলেন ফিজিওর কোর্টে। চোট থেকে এখনও যে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ফলে শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজ থেকেও ছিটকে গেলেন শান্ত। লাল বলের পর এই সিরিজেও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের জন্য সোমবার স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম টেস্টের পর মিস করবেন ৫০ ওভারের সিরিজও।
এছাড়া চোটের কারণে দলের বাইরে আছেন ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়। এই সিরিজ থেকে ছুটি নিয়েছেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
আফগান সিরিজ থেকে বাদ পড়েছেন টপ অর্ডার ব্যাটার জাকির হাসান। দলে এসেছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ও ব্যাটার ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। ফিরেছেন কিপার-ব্যাটার লিটন দাস। দলে আরও এসেছেন পেসার হাসান মাহমুদ।
এছাড়া দলে নেই আর নেই পরিবর্তন। আরও একটি সিরিজে দলের বাইরেই আছেন তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
আগামী ৮ ডিসেম্বর শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ।
বাংলাদেশ দল:
মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), লিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিম, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার, পারভেজ হোসেন ইমন, জাকের আলি অনিক, আফিফ হোসেন, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসান তামিম, নাহিদ রানা, তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।