কাট শটটায় এতটাই জোর ছিল শ্রীলঙ্কার ফিল্ডাররা জায়গা থেকে নড়ার সময়টাও পাননি। চার মেরেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করা নাজমুল হোসেন শান্তও নড়লেন না এতটুকু। জায়গায় দাঁড়িয়েই উদযাপন, ড্রেসিংরুমে দিকে তাকিয়ে দুহাত তুললেন। অধিনায়ক শান্ত যেন সতীর্থদের বলতে চাইলেন,”আমি আছি তো!”
উদযাপনে কোনো কিপ্টেমি করেননি অপরপ্রান্তে থাকা মুশফিকুর রহিমও। দুহাত তুলে দৌড়ে ছুটে আসলেন শান্তর দিকে। জড়িয়ে ধরে অভিবাদন জানালেন নয়া অধিনায়ককে। শান্ত প্রমাণ করলেন, ফিরে আসাটা যদি কোনো উপখ্যান হয়-সেই উপাখ্যান তিনি বারবার লিখতে জানেন।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে যে গুটি কয়েক দর্শক ছিলেন তারাও সাক্ষী হলেন দারুণ এই মুহূর্তে। অধিনায়ক হিসেবে পূর্ণ দায়িত্ব পাবার পর এটাই ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। আর এই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে শান্ত বার্তা দিয়ে রাখলেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়াটাই তার স্টাইল।
আরও পড়ুন: শান্ত-মুশফিকুরের রেকর্ড জুটি, ৬ উইকেটের জয় বাংলাদেশ
অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছিল শান্ত রান করতে পারছেন না। গতবছর এশিয়া কাপ অবধি তিনি ছিলেন অবিশ্বাস্য ফর্মে। তবে এরপর ইনজুরিতে পড়ে নিজেকে আবার হারিয়ে ফেলেছিলেন। ছোট ছোট ইনিংস খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছিল।
তবে অধিনায়ক হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব ছিল তার ওপর আজ। মাত্র ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের শঙ্কাও ছিল বাংলাদেশের। সেই সময়ে বাইশ গজে দলের হাল ধরলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। শুধু সেঞ্চুরি করেই থামেননি, মাঠ ছেড়েছেন দলের জয় নিশ্চিত করেই।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচটায়ও তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৯০ রানের ইনিংস। তবে এবার আর কোনো আক্ষেপ নয়, তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিটা। আর এই সেঞ্চুরি দিয়ে শান্তর আক্ষেপ মিটেছে আরো একটি।
বাংলাদেশের এই ব্যাটার আগের দুইটা সেঞ্চুরি করেছিলেন দেশের বাইরে। একটা চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, আরেকটি করেছিলেন লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। অবশেষে দেশের মাটিতে দেখা পেলেন তিন অংকের ম্যাজিকাল ফিগারের।
মাত্র ১০৮ বল থেকে ১০০ রান করে ওয়ানডে ফরম্যাটে অধিনায়ক হিসেবে নিজের যাত্রাটা শুরু করলেন শান্ত। এর আগেও অবশ্য বিভিন্ন সময়ে ৬ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। পরিসংখ্যান বলছে, অধিনায়ক শান্তই ব্যাট হাতে বেশি সফল।
সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৫ ইনিংসে করেছেন ১০০১ রান। যার ব্যাটিং গড় ২৯.৪৪ ও ৭৮.২৬ স্ট্রাইক রেট। অন্যদিকে অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্ত ৭ ইনিংসে করেছেন ৩২৩ রান। ব্যাটিং করছেন ৬৪.৬০ গড় ও ৯১.০২ স্ট্রাইক রেট নিয়ে। আর অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটাও করে ফেললেন এই ম্যাচে।
আরও পড়ুন: টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে নেই মুস্তাফিজ
মুশফিকুর রহিমের সাথে গড়েছেন ১৬৫ রানের অপরাজিত জুটি। তাদের এই জুটিতেই ৩২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। শান্ত শেষ পর্যন্ত ১২৯ বল থেকে করেছেন ১২২ রান।
অধিনায়ক হিসেবে যা কোনো বাংলাদেশি ব্যাটারের সর্বোচ্চ ইনিংস। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল মুশফিকুর রহিমের। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে তিনি খেলেছিলেন ১১৭ রানের ইনিংস। প্রায় ১০ বছর পর সেটিকেই ছাপিয়ে গেলেন শান্ত।
অধিনায়ক হিসেনে শান্ত’র যাত্রাটা তাই মনে রাখার মতই হলো। ওয়ানডে ফরম্যাটে দলের জয় ও নিজের সেঞ্চুরিতে ম্যাচটা রাঙিয়ে রাখলেন এই ব্যাটার। চট্টগ্রামে ও দেশের মাটিতে নিজের প্রথম এই সেঞ্চুরি শান্ত মনে রাখবেন লম্বা সময়।
৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪:৩৬ পিএম
৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩:০৩ পিএম
সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের ম্যাচে কানপুরে ভারত জয় তুলে নিয়েছিল আড়াই দিনেরও কম সময়ে। তবে ওই ম্যাচে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল কানপুর স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড। শেষ পর্যন্ত ভেন্যুটির আউটফিল্ডকে ‘অসন্তোষজনক’ রেটিং দিয়েছে আইসিসি। এই রেটিংয়ের ফলে ভেন্যুটি পেয়েছে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত হওয়া ম্যাচটির প্রথম দিনে খেলা সম্ভব হয়েছিল মাত্র ৩৫ ওভার। এরপর একটি বলও মাঠে গড়ায়নি পরের দুই দিনেও। যদিও তৃতীয় দিন ম্যাচের জন্য নির্ধারিত সময়ে বৃষ্টি ছিল না। শুধু তাই নয়, টেস্ট শুরুর আগে কানপুর রাজ্যের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট গ্রিন পার্কের একটি স্ট্যান্ডকে অনিরাপদ বলেছিল এবং স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দেশ দিয়েছিল যে, দর্শকদের জন্য যেন গ্যালারির ওপরের দিকের স্তরে সীমিত সংখ্যক আসন রাখা হয়।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ দলকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে, দুর্বল পরিকল্পনা স্পষ্ট: বুলবুল |
উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ইউপিসিএ) কানপুরের গ্রীন পার্ক স্টেডিয়ামটি ইউপি সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত একটি এমওইউ চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবহার করে। স্টেডিয়ামের জমির মালিক সরকার, তবে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী স্টেডিয়াম এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ইউপিসিএরই।
কানপুর টেস্টে আড়াই দিনেরও বেশি সময় নষ্ট হওয়ার পরও অবিশ্বাস্য দক্ষতা দেখিয়ে পঞ্চম দিন শেষ সেশনের আগেই জয় তুলে নেয় ভারত। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ওভারপ্রতি ৭.৩৬ ওভারে রান তুলে ৫২ ওভারে করে ৩৮৩ রান। বাংলাদেশকে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১২১.২ ওভারের মধ্যে অলআউট করে মাঠ ছাড়ে বিজয়ীর বেশে।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অনিশ্চিত মুশফিক |
আউটফিল্ড ‘অসন্তোষজনক’ রেটিং পেলেও কানপুরের উইকেটকে আইসিসির কাছ থেকে ‘সন্তোষজনক’ রেটিং পেয়েছে।
প্রথম ম্যাচে অল্প রান নিয়েও অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। সেদিন বল হাতে দুর্দান্ত এক স্পেল করা হারিস রউফ আরও একবার জ্বলে উঠলেন। তার ফাইফারে লড়াই করার মত একটা স্কোরও গড়তে ব্যর্থ হল অজিরা। পেশাদার রান তাড়ায় পাকিস্তানকে বড় জয় এনে দিলেন ব্যাটাররা।
অ্যাডিলেডে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তান জয় পেয়েছে ৯ উইকেটে। অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১৬৩ রানে গুটিয়ে সফরকারীরা ম্যাচ শেষ করেছে মাত্র ২৬.৩ ওভারেই। তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা এখন ১-১।
আরও পড়ুন
হংকং সিক্সেসে’র ফাইনালে পাকিস্তান, হারলো অস্ট্রেলিয়া |
অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালোই ছিল। তিন বাউন্ডারিতে দুই ডিজিটে পা রাখার পরই অবশ্য খেই হারান জ্যাক-ফ্রেসার-ম্যাকগ্রাক। শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম শিকার ছিলেন তরুণ এই ডানহাতি ব্যাটার। আরেক ওপেনার ম্যাথু শর্টও ইতিবাচকভাবে ইনিংসের শুরু করলেও বড় করতে হন ব্যর্থ।
চারে নামা জস ইংলিস আগের ম্যাচে খেলেছিলেন দারুণ এক ইনিংস। এদিন অবশ্য হাসেনি তার ব্যাট। রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে করতে পারেন ১৮ রান। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের ওপর ঝড় বইয়ে দেন রউফ। তার গতির সামনে হিমশিম খান অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা।
নিয়মিত বিরতিতে রউফ উইকেট নেওয়া চালিয়ে যান, ফলে অস্ট্রেলিয়া পায়নি বড় একটি জুটি। একপ্রান্তে স্টিভ স্মিথ কিছুটা লড়াই করেছিলেন, তবে মোহাম্মদ হাসনাইনের বলে ইতি ঘটে তার ৩৫ রানের ইনিংসের। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩৫ ওভারেই শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের। ৮ ওভারে ২৯ রানে ৫ উইকেট নেন রউফ।
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়া সিরিজে পাকিস্তান দলে বাবর-শাহিন-নাসিম |
আগের ম্যাচে মাত্র ২০৩ রান নিয়েও দারুণ লড়াই জমিয়েছিল পাকিস্তান। তেমন কিছু করতে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল শুরুতে কিছু উইকেট। তবে ক্ল্যাসিক্যাল ও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের মিশ্রনে অজি বোলারদের দাঁড়াতেই দেননি দুই ওপেনার সাইম আইয়ুব ও আবদুল্লাহ শফিক। জুটিতে শতরানের পাশাপাশি দুজনই দেখা পান ফিফটির। কামিন্স-স্টার্ক-জাম্পার মত বিশ্বসেরা বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে তারা রানও তোলেন দ্রুততার সাথে।
জুটিতে বেশি আগ্রাসী থাকা সাইম যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে তার সেঞ্চুরি অনিবার্য বলেই মনে হচ্ছিল। তবে বিধিবাম। দলের জয় যখন নিশ্চিত, নেই রানের চাপ, সেই সময়ই ম্যাচের ধারার বিপরীতে আউট হয়ে যান ৮২ রানে। মাত্র ৭১ বলে ইনিংসটি সাজান ৫টি চার ও ৬ ছক্কায়।
বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন শফিকুল্লাহ (৬৯ বলে ৬৪*) ও বাবর আজম (২০ বলে ১৫*)।