৩০ অক্টোবর ২০২৪, ৪:৫৭ পিএম
সেই অবধারিত দৃশ্যের অবতারণা আরও একবার। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রতিপক্ষ দল রান করল অবলীলায়, একে একে চারজন করলেন সেঞ্চুরি। অথচ সেই একই উইকেটে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেটিকেই বানিয়ে ফেললেন যেন বোলিং সহায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে রান পাহাড় গড়ার পর ব্যাট করতে নেমেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেই ব্যাকফুটে চলে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানে ইনিংস ঘোষণার পর নেমে ৩৮ রান তুলতেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছে স্বাগতিকরা। পিছিয়ে আছে ৫৩৭ রানে। ক্রিজে আছেন মুমিনুল হক (৬) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (৪)।
আরও পড়ুন
তাইজুল পাঁচে পাঁচ, আবারও ফাইফার |
কেউ যদি এই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস না দেখে স্রেফ বাংলাদেশের ইনিংসটুকু দেখেন, তাদের মনে হতে পারেই যে এ বুঝি ব্যাটারদের জন্য রান করার কঠিন এক মঞ্চ। যেভাবে শেষ বিকেলে মাত্র এক ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যাটিংয়েই যেভাবে নড়ে গেছে টপ অর্ডারের ভিত, তাতে এই ফলো-অন এড়াতেই পাহাড় ডিঙাতে হবে শান্তর দলকে।
ব্যাটিংয়ের আগেই অবশ্য বল হাতে বাংলাদেশ যা সর্বনাশ করার, করেছে। প্রথম দিনের নির্বিষ বোলিংয়ের ধারা দ্বিতীয় দিন শুরুর দিকে কিছুটা হলেও কমার আভাস ছিল। ২ উইকেটে ৩০৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালোই ছিল। প্রথম ঘণ্টায় অনায়াসেই বোর্ডে ফিফটি প্লাস স্কোর গড়ে ফেলেন টনি ডি জর্জি ও ডেভিড বেডিংহাম। দেড়শ ছাড়িয়ে ভালোভাবেই ডাবল সেঞ্চুরির পথে ছিলেন জর্জি। তবে তাইজুল ইসলামকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে শেষ হয় সেই আশা। তবে তার আগে খেলেন ১৭৭ রানের দারুণ এক ইনিংস।
আরও পড়ুন
প্রতিপক্ষ ৪০০-৫০০ করলেও জেতার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ |
এটি ছিল দিনে তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার। এর আগে ফিফটি করার পর বেডিংহামকেও ফেরান তিনি। বোল্ড হওয়ার আগে এই ডানহাতি ব্যাটার করেন ৫৮ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর চাপ বজায় রেখে এরপর আবার আঘান হানেন সেই তাইজুলই। এবার শূন্য রানে তার বলে আউট হন প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা কাইল ভেরেইনা। পাঁচ রানে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৪তম ও টানা দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় তাইজুলের।
অন্যপ্রান্তে রায়ান রিকেলটনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান পেসার নাহিদ রানা। বল হাতে বাংলাদেশের হাসি মুখ সেখানেই শেষ। সেনুরান মুথুসামিকে নিয়ে আরও একবার লোয়ার অর্ডারে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন উইয়ান মুল্ডার। দুজন শুধু জুটিই গড়েননি বড়, সাথে শুরু থেকে রান তুলেছেন ৮০-৯০ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে। ফলে ক্রমেই আলগা হয়ে যায় চাপ, আর বোলাররা দেন বাজে বল। দলীয় স্কোর ৫০০ পার হওয়ার পর তাই দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যে আর কত রান হলে ইনিংস ঘোষণা করবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশের নখদন্তহীন বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে ছক্কা মেরে শতক তুলে নেন সাতে নামা মুল্ডার। এরপরই ডিক্লেয়ার করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এতে কিছুটা আক্ষেপ করতেই পারেন মুথুসামি, আর কিছুক্ষণ সময় পেলে হয়ত তিনিও সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যেতেন।
আর এটাই বলে দেয়, দ্বিতীয় দিনে কীভাবে প্রতিপক্ষকে এক পর্যায়ে বাগে পেয়েও বাজে বোলিংয়ের কারণে বিশাল রানের নিচে চাপা পড়তে হয়েছে। ১৯৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল।
আরও পড়ুন
ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ ড্রয়ের আশা হারাচ্ছেন না অঙ্কন |
এরপর দিনের খেলা বাকি ছিল খুব বেশি হলে ১০-১২ ওভার। তবে শুরু থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের সামনে নড়বরে ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ওপেনার। কাগিসো রাবাদার করা প্রথম ওভারে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিতে গিয়ে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শাদমান ইসলাম। কয়েক ওভার বাদে এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরার জাকির হাসানের হন্তারকওই রাবাদা। তিনিও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই মাহমুদুল হাসান জয়কেও হারায় বাংলাদেশ। ডেন পিটারসনের অফস্ট্যাম্পের একটু বাইরে পিচ করা ডেলিভারি তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা হাসান মাহমুদও পারেননি টিকতে। কেশভ মহারাজের স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে টার্নে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন তিনি।