৪ নভেম্বর ২০২৪, ৮:৪১ পিএম
ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সমর্থক যারা আছেন, তাদের অনেকের মনে এই ২০২৪ সালে এসেও একটা প্রশ্ন বেশ জোরেশোরেই ঘুরপাক খাচ্ছে, রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কি চূড়ায় যেতে পারবেন? নাকি ব্যালন ডি’অরের মত এটাও আটকে যাবে যদি, কিন্তুর ধাঁধাঁয়?
গত কয়েক বছর ধরেই প্রতিনিয়ত নিজেকে যেভাবে ছাপিয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস, সাথে গত মৌসুমের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ধরেই নেওয়া হয়েছিল - এবারের ব্যালন ডি’অরটা উঠতে যাচ্ছে তারই হাতে। তবে শেষ সময়ে গিয়ে যেভাবে নাটকীয়ভাবে সেটা চলে গেছে ম্যানচেস্টার সিটির রদ্রির হাতে, সেটা যেকোনো ফুটবলারের জন্যই মানসিকভাবে হতে পারে বড় এক ধাক্কা।
কারণ, পুরো বিশ্বের পাশাপাশি ভিনিসিয়ুস নিজেও নিশ্চিত ছিলেন এই খেতাব জেতার ব্যাপারে। সেটাও এতোটাই যে, এল ক্লাসিকোর সময় গাভিকে বলেই দেন যে তিনি ব্যালন ডি’অর জিততে যাচ্ছেন। গুঞ্জন রয়েছে, খুব কাছের ৩০ জন বন্ধুকে নিয়ে এটি জেতার পার্টির আয়োজনও করে ফেলেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরওয়ার্ড। এমন নিশ্চিত থাকার পর বর্ষসেরা না হওয়াটা মানসিকভাবে একজন খেলোয়াড়কে অনেকটাই দমিয়ে দিতেই পারে।
ব্যালন ডি’অর সেদিনই ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘দরকার হলে আরও দশগুণ লড়াই করব। তারা এটার জন্য তৈরি নয়।’ আগামী মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এসি মিলানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই হয়ত শুরু হবে ভিনিসিয়ুসের নিজেকে প্রমাণের নতুন লড়াই।
সাবেক ফ্ল্যামেঙ্গো যুব ফুটবল কো-অর্ডিনেটর কার্লোস নোভাল, যিনি ১০ বছর বয়স থেকে ভিনিসিয়ুসকে দেখেছেন, বিবিসি স্পোর্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের অদম্য মানসিকতা।
“বেড়ে ওঠার পথে যারাই তাকে প্রথমবারের মতো দেখছে, তখনই বুঝতে পেরেছে যে সে ভন্ন ধাতুতে গড়া। আমার মনে আছে সে কোপা ভোটোর্যান্টিমে খেলেছিল, যা অনেকটা অনূর্ধ্ব-১৫ ব্রাজিলিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মতো। সেখানে সে যেন উড়ছিল। এটা ছিল প্রায় প্রতিটি ম্যাচে দুই, তিন গোল করার মতো। সে অপ্রতিরোধ্য ছিল। একদিন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন স্কাউট আমাকে এসে বলল, ‘সে যা যা করছে, আমি কখনও ১৪ বছর বয়সী একটি ছেলেকে তা করতে দেখিনি। মাঠের বাইরে তার খুব ভালো যত্ন নিন, কারণ মাঠে যা করছে তাতে সে অনেকদূর যাবে।”
ভিনিসিয়ুস অনেক পথ পাড়ি দিয়েছেন, ১৪ বছর বয়সী সেই কিশোর এখন বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের একজন। তবে পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না তার জন্য।
এমনকি সেটা পারেনি সাও গনকালো, রিও ডি জেনিরোর বাইরের যে শহর মাদক গ্যাংদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সেখানে কেউই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। আর এই কারণেই ২০১৮ সালে অমিত প্রতিভাবান ভিনিসিয়ুস রিয়ালে যখন যোগ দেন, তখন তার কল্পনাতেও ছিল না যে তার সামনে কী কী অপেক্ষা করছে।
যেমনটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন স্কাউট বলেছিলেন, মাঠের ফুটবলে রিয়ালে ক্রমেই উন্নতি করেছেন ভিনিসিয়ুস। সময়ের পরিক্রমায় হয়েছেন দলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন। তবে গত কয়েক বছর ধরে মাঠের বাইরে তাকে সামলাতে হচ্ছে ভিন্ন এক যুদ্ধ, যেখানে তিনি ভীষণ একাকী হয়ে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত স্পেনের বিভিন্ন মাঠে স্রেফ ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধেই জমা হয়েছে ২১টি বর্ণবাদী ঘটনার অভিযোগ। গত মৌসুম থেকে যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় নিয়মিত চিত্র। প্রতিপক্ষের সমর্থকরা তাকে গালিগালাজ করছেন, কুশপুত্তলিকা টাঙাচ্ছেন বা এমনকি বানরের স্লোগানই দিচ্ছেন দলবেধে।
গত বছর তো ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে ম্যাচই বন্ধ ছিল ১০ মিনিট এসবের প্রেক্ষিতে। মেজাজ হারিয়ে দর্শকদের সাথে মাঠ থেকেই তর্কে লিপ্ত হন ভিনিসিয়ুস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিন ভ্যালেন্সিয়ার ভক্তকে ৮ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে, যা স্পেনে আগে হয়নি।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছিলেন, “আমি বর্ণবাদের শিকার নই। আমি বর্ণবাদীদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। আমি চাই বর্ণবাদীরা যাতে ভয় পায়, লজ্জিত হয় এবং ছায়ায় লুকিয়ে থাকে। আর নাহলে আমি আপনাদের ধরে ফেলব।”
তবে আগের ও ভ্যালেন্সিয়ার স্টেডিয়ামের সেই ঘটনা যে ভিনিসিয়ুসকে মানসিকভাবে বেশ নাড়িয়ে দিয়েছে, সেটা বোঝা যায় ব্রাজিল জাতীয় দলের এক সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে কথা বলতে গিয়ে চোখের জল আর আটকে রাখতে পারেননি। তাতে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, যতই প্রতিবাদ করুন না কেন, এই অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো তার ওপর প্রভাব ফেলছে।
তবে দমে না গিয়ে ব্যক্তিগত ও অন্যান্য পর্যায় থেকে ক্রমাগত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস। তার ক্লাব রিয়ালের অবশ্য শঙ্কা ছিল, এসবের প্রভাব না আবার মাঠের পারফরম্যান্সে পড়ে যায়। তবে সেটা আর হয়নি। উল্টো মাঠের ফুটবলেই যেন সব জবাব দেওয়ার মঞ্চ খুঁজে নেন ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
২০২৩-২৪ মৌসুমে ভিনিসিয়ুস পার করেছেন তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৪ গোলের পাশাপাশি তার নামের পাশে ছিল ৯টি অ্যাসিস্টও। রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর পথে ২৩ বছর ৩২৫ দিন বছর বয়সে ভেঙে দেন লিওনেল মেসির করা সবচেয়ে কম বয়সে ফাইনালে বেশি গোলের রেকর্ড। রিয়ালের লা লিগা জয়েও রাখেন বড় অবদান।
এই মৌসুমেও আছেন চেনা ছন্দে। ১৫ ম্যাচে ৮ গোল করার পাশাপাশি করিয়েছেন ৫টি গোলও। রিয়ালে শুরুর বছরগুলোতে ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল তার ফিনিশিং নিয়ে। ঝড়ের গতিতে ড্রিবলিং করে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে গোলের সামনে এগিয়ে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলতেন। তবে সেসব এখন অতীত। এই কাজটিতে তিনি এখন নিখুঁত, দুর্দমনীয়।
সেটা এতোটাই যে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই মৌসুমে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর ভিনিসিয়ুসকে রিয়াল কিংবদন্তি ও সহ-সভাপতি এমিলিও বুত্রাগুয়েনো তুলনা করেন পেলের সাথে, যাকে ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ফিনিশিংয়ে উন্নতি করা ভিনিসিয়ুস এর মধ্য দিয়ে ছাপ রেখেছেন তার তীব্র লড়াকু মানসিকতার। ক্লাউদিও কাকাপা, যিনি তাকে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৫ দলের কোচিং করিয়েছেন, তিনিও যেন বিস্মিত সাবেক শিষ্যর সামর্থ্যে।
“সত্যি বলতে আমি জানতাম না যে ভিনিসিয়ুস মানসিকভাবে এতটা শক্তিশালী। কারণ, সে যা যা যা মোকাবেলা করেছেন তা সহজ নয় ; এটা ভয়াবহ ছিল। তিনি এখন অনেক লোকের সমর্থন পাচ্ছেন এবং এটি দুর্দান্ত। তবে শুরু দিনগুলতে এটা ছিল তার বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের লড়াইয়ের মত। সে নাকি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়, এমন কিছু শুনতে হত আর সেটা ভুলে যেতে বলা হত। কিন্তু সেটা সে করেনি, লড়াই করেছে আর দেখিয়েছে যে সে কত বড় মাপের খেলোয়াড়। সে যেসবের মধ্য দিয়ে গেছে, এরপরও ফুটবল মাঠে যা যা করছে, সেটা অবিশ্বাস্য।”
আর ঠিক এই কারণেই বয়স ১৬ হওয়ার আগে থেকেই রিয়াল সহ ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো তার পেছনে পড়েছিল। সবার আগে ভিনিসিয়ুসের দিকে নজর দিয়েছিল লিভারপুল।
২০১৭ সালের শুরুর দিকে লিভারপুলের একজন স্কাউট ব্রাজিলিয়ান এজেন্ট ফ্রেডেরিকো পেনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আপনি কি মনে করেন ফ্ল্যামেঙ্গো এখন ভিনিসিয়ুসকে ২০ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করতে রাজি হবে? আমি এটা এখনই বাজিয়ে দেখতে চাই, কারণ আমার মনে হয় না অনূর্ধ্ব-১৭ দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের পরে ফ্ল্যামেঙ্গো আর চুক্তি করতে রাজি হবে।”
লিভারপুলের সেই স্কাউট ঠিক ছিলেন। সেই আসরে সাত গোল করে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ভিনিসিয়ুস। কয়েক মাস পেনা একটি ফোন কল পান, এবার সেটা ছিল রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে। তারা ৪৫ মিলিয়ন ইউরো বাইআউট ক্লজ দিয়ে ১৮ বছর বয়সে পা দিলে তাকে ক্লাবে স্বাগত জানাতে সম্মতি দেয়।
সেই সময়ে স্প্যানিশ তো বটেই, ইউরোপিয়ান ফুটবলেও বিষয়টি হৈচৈ ফেলে দেয়। কারণ, মাত্র ১৬ বছর বয়সী একজন তরুণ ফুটবলারের জন্য এত অর্থ ব্যয় করাটা বুদ্ধিমানের কাজ কিনা, তা নিয়ে রয়ে যায় প্রশ্ন। তবে রিয়ালের এই বিনিয়োগই বলে দেয়, ওই বয়সেই নিজের মাঝে ভিন্ন কিছু যে আছে, সেটা দেখাতে পেরেছিলেন ভিনিসিয়ুস।
১৮-তে পা দেওয়ার আগ পর্যন্ত ফ্ল্যামেঙ্গোতে খেলার সময় ভিনিসিয়ুসকে মুখোমুখি হতে হয়ে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের দুয়োর মিছিল। খেপিয়ে তুলতে তারা তাকে 'নেগুইবিনহা' বলে ডাকেন, যা ছিল আরেক আরেকজন ফ্ল্যামেঙ্গোর সাবেক খেলোয়াড় নেগুয়েবারকে নিয়ে। আর এই খেলোয়াড়টি প্রতিভার ছাপ রাখতে পারেননি পরে, যিনি এখন খেলছেন থাইল্যান্ডে। অন্যদিকে ক্লারেন্স সিডর্ফের মত অনেকে এমনটাও বলেছেন, রিয়ালে গিয়ে এক মিনিটও খেলার সুযোগ পাবেন না ভিনিসিয়ুস।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন জে রিকার্ডো, যিনি ছিলেন ফ্ল্যামেঙ্গোর সিনিয়রে দলে ভিনিসিয়ুসের প্রথম কোচ।
“ভিনিসিয়াস যখন আসল, তখন তাকে ঘিরে প্রচুর হাইপ ছিল, তাই এই নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং আমরা সবাই যা আশা করেছিলাম, সেটা করে দেখাতে তার কিছুটা সময় লেগেছিল। কিন্তু তিনি সে তা করে দেখিয়েছে।”
মুখে হাসি নিয়ে সাম্পা নৃত্যের তালে ম্যাচের পর ম্যাচ এখন মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস। ফ্ল্যামেঙ্গো যেমন ছিল, রিয়ালেও সেটা চলছে একই গতিতে। যিনি তাকে ছোটবেলা থেকে দেখেছেন, সেই ক্লাউদিও কাকাপা তুলে ধরেছেন আরেকটি ঘটনা। যেটা তুলে ধরে মানুষ হিসেবে ভিনিসিয়ুসের সুন্দরতম দিকটি।
“আমরা ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ক্যাম্প করছিলাম। একদিন সে এবং তার কিছু সতীর্থ আমার কাছে এসে বলল যে তারা আমাদের ডিনারের জন্য একটি সারপ্রাইজ রাখতে চায়। আমি বললাম, 'অবশ্যই, এগিয়ে যাও'৷ সেদিন ডিনারের সময় তারা একটি বাচ্চাকে একটি মোবাইল ফোন, একজোড়া স্নিকার এবং জামাকাপড় উপহার দিয়েছিল৷”
“এটা খুব আবেগপূর্ণ একটা মুহূর্ত ছিল - কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাই হঠাৎ রেস্টুরেন্টে কান্নাকাটি করছিল। সেই বাচ্চাটিই স্কোয়াডের একমাত্র সদস্য ছিল যার কাছে ফোন ছিল না। আর এই কারণে সে তার বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে অক্ষম ছিল। ভিনিসিয়ুসের সেই সময়েই একটা একটি ব্যক্তিগত স্পনসরশিপ চুক্তি ছিল, তাই সেই বাচ্চাটির জন্য এটা করতে পেরেছিল। ওই বয়সে যে ছেলের হৃদয় এত বড় হতে পারে, সে অবশ্যই বিশ্বসেরা হওয়ার যোগ্য।”
মাঠে প্রতিপক্ষক একবিন্দু ছাড় না দেওয়া ভিনিসিয়ুস মাঠের বাইরে এভাবেই দুনিয়াটাকে দেখেন। সুন্দর, কোমল, নমনীয় এবং বিশাল মনের। আর সেই কারণেই নিশ্চিত জেতে ব্যালন ডি’অর হাতছাড়া হওয়া বা বর্ণবাদের আক্রমণ তাকে আটকে রাখতে পারবে না। কারণ তিনি জানেন, লড়াইটা ফুটবলের চেয়েও অনেক বড় জন্য। যেখানে তার দিকে তাকিয়ে, তাকে দেখে স্বপ্ন বুনছে ব্রাজিলের আজকের শিশুরা…
কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথমবার টানা চার ম্যাচ হারের অভিজ্ঞতার পর ম্যানচেস্টার সিটির সাথে চুক্তি নবায়ন করে পেপ গার্দিওলা বলেছিলেন, ঠিক এই কারণেই তিনি ক্লাবে থেকে গেছেন। তবে তাতেও ভাগ্যের বদল আর হলো না। যেই টটেনহাম হটস্পারের কাছে হেরে শুরু হয়েছিল হারের চক্র, তাদের কাছে আরও একবার হেরে লম্বা হল ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের পরাজয়ের তেতো অভিজ্ঞতার রেকর্ড। আন্তর্জাতিক বিরতির পর প্রথম ম্যাচে সিটি উপহার দিল মলিন পারফরম্যান্স। আর দুর্দান্ত ফুটবলের এক প্রদর্শনীতে প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে ‘স্পার্স’রা তুলে নিল ধ্রুপদী এক জয়।
ইতিহাস স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগের শনিবার রাতের ম্যাচে সিটিকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে টটেনহাম। জোড়া গোল করেছেন জেমস ম্যাডিসন। অন্য গোল দুটি পেড্রো পোরো ও ব্রেনান জনসনের করা।
বল দখলের দিক থেকে দুই দল প্রায় সমানে সমান থাকলেও গোলের জন্য সিটির শট ছিল মোট ২৩টি, যার মাত্র ৫টি তারা রাখতে পারে লক্ষ্যে। বিপরীতে মাত্র ৯টি শটের ৭টি লক্ষ্যে রেখেই বাজিমাত করেছে টটেনহাম।
এর মধ্যে দিয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে টটেনহারের কাছে হারল সিটি। অন্যটি ছিল গত মাসে, লিগ কাপে। সেখানে ২-১ গোলে হারের পর একে একে প্রিমিয়ার লিগের দুটি ম্যাচে ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিয়ন ও বোর্নমাউথ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্পোর্টিং সিপির কাছেও পরাজয় বরণ করে দলটি।
তাতে আরেকটি নতুন অভিজ্ঞতা হল গার্দিওলার। এর আগে কোচিং ক্যারিয়ারে টানা তিন ম্যাচের বেশি না হারা এই স্প্যানিয়ার্ড এবার স্বাদ পেলেন টানা পাঁচ হারের। আর ২০০৮ সালের পর টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারের নতুন রেকর্ড গড়েছে সিটি।
১১তম মিনিটে বলার মত প্রথম আক্রমণেই সিটিকে চমকে দেয় টটেনহাম। দেজান কুলুসেভস্কির ক্রস থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর থেকে শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ম্যাডিসন। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই স্কোরলাইন করেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। সন হিউং-মিনের ক্রস থেকে বাঁ পায়ের লবে বল পাঠান জালে। বিরতির আগে টানা আক্রমণ করে গেলেও গোলের সামনে গিয়ে বারবার খেই হারায় সিটি। পাল্টা আক্রমণে উল্টো লিড বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি করে পোস্তকগোলুর দল।
৫২তম মিনিটে কাউন্টার এটাক থেকে বল নিয়ে দ্রুত এগিয়ে সিটির অরক্ষিত রক্ষণের সুযোগ নেয় টটেনহাম। বক্সের ভেতর বল পেয়ে ডান পায়ের জোড়াল শটে লিড বড় করেন পেদ্রো। গোলের জন্য মরিয়া সিটি আক্রমণের ঢেউ তুলেও আর পায়নি গোলের দেখা। হতাশ করেন আর্লিং হলান্ড, ফিল ফোডেনরা। বরং ইনজুরি টাইমে আরেকটি পাল্টা আক্রমণ থেকে সিটিকে এক হালি গোলে হারানোর দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা দলকে উপহার দেন ব্রেনান।
এই হারের পরও ১২ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে সিটি। সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্টে ছয় নম্বরে আছে টটেনহাম। ১১ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে আছে লিভারপুল।
গত অক্টোবরে এল ক্লাসিকোর পরই বিষয়টি জন্ম দিয়েছিল তীব্র আলোচনা-সমালোচনার। অভিযোগ ছিল, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দর্শকদের দ্বারা বর্ণবাদী অপমানের শিকার হয়েছেন লামিন ইয়ামাল সহ বার্সেলোনার কয়েকজন খেলোয়াড়। সেই ঘটনার দায়ে শেষ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে স্প্যানিশ পুলিশ।
হাইভোল্টেজ সেই ম্যাচে বার্সেলোনার ৪-০ জয়ে বড় অবদান রাখা লামিন ইয়ামাল করেন একটি গোল। পারিবারিকভাবে তরুণ এই ফরোয়ার্ডের যোগসূত্র আছে গিনি ও মরক্কোর সাথে। ম্যাচ চলাকালীন দর্শকদের একটি অংশ জেনোফোবিক এবং বর্ণবাদী মন্তব্য ছুঁড়ে দেন বার্সেলোনার যে কজন খেলোয়াড়ের দিকে, তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইয়ামাল।
স্পেনের জাতীয় পুলিশ শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি পোস্টে শনিবার বলেছে-
“গত অক্টোবরে এল ক্লাসিকোর ম্যাচ চলাকালীন দুই ফুটবল খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী অপমান করার জন্য তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জেনোফোবিক মন্তব্য করেছিল, যা উভয় ফুটবলারের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে।”
স্প্যানিশ সুপ্রিম স্পোর্টস কাউন্সিল (সিএসডি) এবং লা লিগা এরই মধ্যে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্পেনের অভিবাসন মন্ত্রী এলমা সাইজও। আর অপরাধীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু করেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
আর স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন বলেছে যে, তারা স্পেনের স্টেডিয়ামে বর্ণবাদী আচরণ এবং সহিংসতার বিষয়ে জিরো-টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করছে। কারণ, তাড়া এটিকে ‘সামাজিক ক্ষতি’ বলে অভিহিত করেছে।
উল্লেখ্য, গত মাসে রিয়ালের তারকা ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে বর্ণবাদী মন্তব্য করার দায়ে অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর কয়েক ম্যাচে ছন্দের দেখা পেলেও শেষ কয়েকটি ম্যাচ ধরে কিলিয়ান এমবাপেকে ধুঁকতে হচ্ছে গোলের জন্য। স্ট্রাইকার হিসেবে খেললেও ম্যাচের পর ম্যাচ ধরে পাচ্ছেন না জালের দেখা। ফলে বাড়ছে সমালোচনা। তবে এসব নিয়ে একেবারেই চিন্তার অবকাশ পাচ্ছেন না কোচ কার্লো আনচেলত্তি। ফরাসি তারকার কাঁধে তিনি রাখছেন আস্থার হাত। বললেন, এমবাপে শীঘ্রই ফিরবেন চেনা ছন্দে।
এমবাপে মূলত উইঙ্গার হলেও রিয়ালে আসার পর থেকে তার ভূমিকা হয়ে গেছে স্ট্রাইকারের। তবে শেষ সাত ম্যাচে মাত্র একবার গোল করায় প্রশ্নের মুখে ভিন্ন পজিশনে তার সামর্থ্য নিয়েও। ৪০০ মিনিট ধরে গোল না করায় মানসিকভাবেও যেন চাপের মুখে পড়ে গেছেন সাবেক পিএসজি ফরোয়ার্ড। ফ্রান্স জাতীয় দলে এই মাসের দুটি ম্যাচে এই কারণে তাকে দলে রাখেননি কোচ দিদিয়ে দেশম।
আরও পড়ুন
নতুন ফরম্যাটে রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে চান আনচেলত্তি |
তবে রোববার লা লিগায় লেগানেসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে আনচেলত্তি বলেছেন, এমবাপের গোলখরা কেটে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। “এটা (গোলখরা) সব দুর্দান্ত স্ট্রাইকারের সাথেই ঘটে, এটা নিয়ে সে হতাশ হতে পারত। কিন্তু তার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তা নয়। আমি তাকে তার সতীর্থদের সাথে অনুশীলনে অনুপ্রাণিত এবং প্রাণোচ্ছল দেখতে পাচ্ছি। খুব শীঘ্রই বা বা কিছুটা পরে সে এই গোলখরা কাটিয়ে উঠবে। আগামীকাল সে একটি দুর্দান্ত ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে, কারণ তার গোল পাওয়া স্রেফ সময়ের ব্যাপার মাত্র। তার অবিশ্বাস্য কোয়ালিটি রয়েছে এবং শীঘ্রই সে তা দেখাবে।”
অনেক স্বপ্ন নিয়ে রিয়ালে পাড়ি জমানো এমবাপে মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন পজিশনে মানিয়ে নেওয়া। দলে তার পছন্দের পজিশন লেফট উইংয়ে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র খেলায় তাকে সেখানে খেলাতে পারছেন না আনচেলত্তি। ফলে অন্তত এই মৌসুমে স্ট্রাইকার হিসেবেই নিজেকে প্রমাণের বিকল্প নেই এমবাপের।
আরও পড়ুন
ভিনিসিয়ুসের ‘বিরল’ পারফরম্যান্সে মুগ্ধ আনচেলত্তি |
রিয়াল কোচ জানিয়েছেন, ভিন্ন পজিশনে খেলা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই এমবাপের। “আমার মনে হয় কিলিয়ান আমাকে কখনও কোথায় খেলবে সেটা নিয়ে কিছু বলেছে, সবাই একাদশে জায়গা করে শুরু থেকে খেলতে চায় শুধু। তবে এমবাপে ও ভিনিসিয়ুসের মাঠে একটি নির্দিষ্ট পজিশন নেই। এটা ম্যাচের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।”
মাঠের ফুটবল তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রের জীবনযাপনও বেশ উপভোগ করার কথা লিওনেল মেসি নিজেই বলেছেন কয়েকবার। তবে ইন্টার মায়ামিতে চুক্তির মেয়াদ শেষের দিকে চলে এলেও এখনও আলোচনা হচ্ছে না নবায়নের। ফলে গুঞ্জন বাড়ছে আর্জেন্টাইন তারকার ভবিষ্যৎ নিয়ে। তবে মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) সহ-মালিক হোর্হে মাস আশাবাদী, আরও সময় ধরে মায়ামিতেই থেকে যাবেন মেসি।
মেসি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে পিএসজি ছেড়ে যোগ দেন মিয়ামিতে। সেই সময় চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৫ সাল পর্যন্ত। সেখানে মেয়াদ দুই পক্ষের সম্মতিতে এক বছর বাড়ানোর শর্ত রাখা হয়নি। ফলে বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী আর এক মৌসুমই ক্লাবটিত জার্সিতে দেখা যাবে তাকে।
আরও পড়ুন
হ্যাটট্রিক করে মায়ামিকে জিতিয়ে মেসি পেলেন বড় সুখবর |
তবে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মেসির ভবিষ্যৎ নিয়ে মায়ামি সমর্থকদের ইতিবাচক খবরই দিয়েছেন মাস।
“মেসি ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ আছেন। লিও এবং আমি বসে তার ভবিষ্যতের ব্যাপারে শীঘ্রই আলোচনা করব। যেমনটা আমি আগেও বলেছি, আর এখন আমি তা আবারও বলব যে, আমি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি ২০২৫ সালের ট্রফি-জয়ী মৌসুমের পরে আমাদের ২০২৬ এমএলএস মৌসুমের শুরুতে এবং ২০২৬ সালে আমাদের নতুন স্টেডিয়াম উদ্বোধনে লিও মেসিই আমাদের ১০ নম্বরে থাকবেন।”
২০২৪ সালে মায়ামির দারুণ সব সাফল্যে একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করেছেন মেসি। পুরো মৌসুমে মাত্র ২১টি এমএলএস ম্যাচ খেলেও করেছে ২১টি গোল। এছাড়াও নামের পাশে রয়েছে রেকর্ড ১৭টি অ্যাসিস্টও। লিগে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৭৪ পয়েন্ট অর্জন করে মায়ামি।
তিন বছর আগে ক্লাব ছাড়ার পর কয়েকবারই আলোচনায় এসেছিল লিওনেল মেসির আবার বার্সেলোনায় ফেয়ার বিষয়টি। তবে নানা বাস্তবতার তা আর হয়নি। বর্তমানে তিনি ও কাতালান ক্লাবটির যে অবস্থান, তাতে নিকট ভবিস্যতে পুনর্মিলনী হওয়ার সম্ভাবনা কমই। তবে যে ক্লাব থেকে পেশাদার ফুটবল যাত্রা শুরু বা বিশ্বসেরা হয়ে ওঠা, সেই বার্সেলোনাকে তো মেসি মন থেকে একবিন্দুও সরাতে পারবেন না। আর্জেন্টিনা তারকা বলেছেন, এখনও বার্সেলোনা তিনি ও তার পরিবার ভীষণ মিস করেন।
বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়া একাডেমি থেকে উঠে আসা মেসির আজকের মহাতারকা হয়ে ওঠার প্রতিটি ধাপ শুরু হয়েছিল সেখানেই। ক্লাবটির প্রতিচ্ছবি হয়ে গিয়েছিলেন একটা সময়। তবে নাটকীয়ভাবে ২০২১ সালে তাকে ছাড়তে হয় ক্লাব। পিএসজি ঘুরে এখন খেলছেন ইন্টার মায়ামিতে। এখানে চুক্তির মেয়াদ শেষে কী করবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বার্সেলোনার ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সমর্থকদের যেন আশার আলোই দেখিয়েছেন ৮ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা।
বার্সেলোনার ফিরবেন কিনা, সেই প্রশ্নে মেসি দিয়েছেন আবেগী উত্তর।
“আমার বাচ্চাদের এখানেই জন্ম। আমি আমার সারাটা জীবন ওখানে কাটিয়েছি। আমার মনে হয় আমি বার্সেলোনারই একজন। আমার তো এখানেই সব। আমার পরিবার এবং আমি সবসময় সেখানে একদিন ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা করি। আমি, আমার স্ত্রী ও আমার সন্তানরা সেখানকার জীবন অনেক মিস করি। আমরা সেখানে থাকা আমাদের বন্ধুদের খুব মিস করি। আমরা সেখানে অনেক কিছু ফেলে এসেছি।”
মায়ামির সাথে মেসির চুক্তি শেষ হবে আগামী বছর। গুঞ্জন রয়েছে, এক বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করতে পারেন তিনি। তবে এর বাইরে বার্সেলোনায় খেলোয়াড় হিসেবে ফেরার সম্ভাবনা আপাতত কিছুটা কমই। কারণ, গত বছর নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ভিন্ন ভূমিকায় অবসরের পর প্রিয় ক্লাবে ফিরতে চাইবেন তিনি।
তবে ক্লাবের খোঁজখবর ঠিকই রাখেন মেসি। চলতি মৌসুমে হান্সি ফ্লিকের কোচিংয়ে দুর্দান্ত খেলা বার্সেলোনা লা লিগায় আছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই মাঠে রীতিমত গুঁড়িয়ে দিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও আছে ভালো ছন্দে।
ফ্লিকের বার্সেলোনা যেভাবে খেলছে, তা মনে ধরেছে মেসির।
“আমি বার্সেলোনাকে দেখছি। তারা দুর্দান্ত কাজ করছে এবং এতে আমি মোটেও অবাক হইনি।”
৭ দিন আগে
৭ দিন আগে
১১ দিন আগে
১১ দিন আগে
১২ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৬ দিন আগে
১৭ দিন আগে
২৮ দিন আগে