মেহেদি হাসানের মিরাজের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল টেনে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, এরপর ঠিক সেই পজিশনেই যেন থমকে গেলেন কিছুক্ষণ। ব্যাটিং ধসের মাঝে তিনিই যে ব্যাট করছিলেন পাকিস্তানের শেষ আশা হয়ে। তার লড়াকু ইনিংসের ইতি টেনে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল জয়ের দিকে আরও এক ধাপ। বাংলাদেশের স্পিন-পেসের সাড়াশি আক্রমণে শেষ পর্যন্ত যে লিড নিয়ে স্বাগতিকদের ইনিংস শেষ হল, তাতে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের জয় স্রেফ সময়ের ব্যাপার মাত্র।
রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট জিততে পঞ্চম দিনে বাংলাদেশকে ৩০ রানের টার্গেট দিয়েছে পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানে পিছিয়ে থাকা স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ১৪৬ রানে।
১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে নামা পাকিস্তানের শুরুটা ভালোই ছিল। দ্বিতীয় ওভারে হাসান মাহমুদকে বাউন্ডারি মারেন শান মাসুদ। তবে সেই ওভারের শেষ বলেই আঘাত হানেন বাংলাদেশ পেসার। বেশ বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে পরাস্ত পাকিস্তান অধিনায়ক। উইকেটের পেছনে ক্যাচ নিয়ে লিটন দাস আবেদন করলেও আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি৷ তবে রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ১৪ রানে থামে শানের ইনিংস।
পরের ওভারেই বাংলাদেশকে বড় উইকেট উপহার দেওয়ার খুব কাছাকাছি গিয়েও হতাশ হতে হয় শরিফুল ইসলামকে। তার লেন্থ ডেলিভারি বাবর আজমের ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম স্লিপ অঞ্চলের দিকে যায়৷ ঝাপিয়ে দুই হাত দিয়ে বল গ্লাভসে নিলেও নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হন ম্যাচে দারুণ কিপিং করা লিটন।
এরপর কয়েকটি ওভার বাবর ও আবদুল্লাহ শফিককে বেশ চাপে রাখেন বোলাররা। ধীরে ধীরে চাপ সরিয়ে দৃষ্টিনন্দন কিছু শটে রানের চাকায় হাওয়া দেন বাবর। এই ইনিংসে প্রায় নিয়মিতভাবে ঘন্টায় ১৪০ কি.মি প্লাস গতিতে বোলিং করা নাহিদ রানা শেষ পর্যন্ত গতিতেই কাবু করেন সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ককে।
অফস্ট্যাম্পের বাইরে বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বাবর, তবে সেটা ইনসাইড-এজ হয়ে ছত্রখান করে স্ট্যাম্প। সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটারকে ২২ রানে ফিরিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন তরুণ পেসার নাহিদ। তার করা ২৬তম সেই ওভারের প্রতিটি ডেলিভারিই ছিল ঘন্টায় ১৪০ কি.মি-এর বেশি গতিতে। একটি ছিল ১৪৯.৯ কি.মি! বাংলাদেশের একজন পেসারের ধারাবাহিকভাবে এমন গতিতে বোলিং করাটা চমক জাগানিয়াই বটে।
এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে অন্যপ্রান্তে উইকেট শিকারে যোগ দেন সাকিব। টার্নে পুরোপুরিভাবে পরাস্ত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ক্রিজ ছেড়ে বের হন সাউদ শাকিল। স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ আর মিস করেননি লিটন। পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে খুব দ্রুতই চালকের আসনে বসে বাংলাদেশ। আর ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে প্রচন্ড চাপের মুখে পাকিস্তান।
তবে নাহিদকে এক ওভারে তিনটি চার মেরে পাল্টা-আক্রমণের আভাস দেন প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ রিজওয়ান। খানিক বাদে পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়ান সাকিব। পুরো ইনিংসে ধীরলয়ে ব্যাটিং করা শফিক ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে বড় শট মারতে উদ্যত হন। সেটা টের পেয়ে শেষ সেকেন্ডে বলটা ঝুলিয়ে দেন সাকিব, ব্যাটে-বলে না করতে পেরে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন শফিক। শাদমাদ ইসলামের ক্যাচে শেষ হয় তার ৮৬ বলে ৩৭ রানের লড়াকু ইনিংসের।
লাঞ্চ বিরতির আগে পাকিস্তানকে প্রবল চাপের মুখে ঠেলে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে লাইন মিস করে শাদমানকে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ডাক মেরে বিদায় নেন আঘা আসলাম।
৬ উইকেটে ১০৮ রান আর ৯ রানে পিছিয়ে থেকে একরাশ অস্বস্তি নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় পাকিস্তান। আর বাংলাদেশ শিবির পায় প্রতিবেশী দেশটির বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট জয়ের প্রবল সুবাস। আর সেই সময়ে পাকিস্তানের শেষ আশা ছিলেন ২৬ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকা রিজওয়ান।
বিরতির পর আরেকটি উইকেট নিতে বেশি সময় নেননি মিরাজ। এবার তার ঝুলিতে জমা হয় শাহিন শাহ আফ্রিদির উইকেট। নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে বলের নাগাল না পেয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। দ্রুতই তাকে অনুসরণ করেন আরেক পেসার নাসিম শাহ।
ডটের পর ডট দেওয়া নাসিমকে সাকিব ট্র্যাপে ফেলেন ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে। বড় শট খেলার লোভ সামলাতে পারেননি তিনি। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় মিড-উইকেটে থাকা মুশফিকুর রহিমের হাতে।
বাংলাদেশ ও জয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে যাওয়া রিজওয়ানকেও এরপর প্রায় ফিরিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশ। মিরাজের বলে তার প্যাডে আঘাত হানতেই আবেদন জানায় বাংলাদেশ। আম্পায়ার তাতে সাড়া না দিলে রিভিউ নেওয়া হয়। তাতে আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান রিজওয়ান। সেই সময়ে এই ডানহাতি ব্যাটারের রান ছিল ২৮।
সাকিবের করা পরের ওভারে দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চল্লিশের ঘরে পা রাখেন রিজওয়ান। সলিড ডিফেন্সের পাশাপাশি সুযোগ বুঝে রান বের করে ধীরে ধীরে ফিফটিও করে ফেলেন তিনি। লিড খুব বড় না হলেও রিজওয়ানের টিকে যাওয়াটা ক্রমেই বাংলাদেশের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
তবে শেষ পর্যন্ত নিজের ভুলেই বিপদ ডেকে আনেন রিজওয়ান। রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে করা মিরাজের বল স্ট্যাম্পে টেনে নেন এই কিপার-ব্যাটার। ৬ চারে তার ব্যাট থেকে আসে মহামূল্যবান ৫১ রান। এরপর মোহাম্মদ আলিকে শুন্য রানে ফিরিয়ে দেন মিরাজই।
২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। আর সাকিব ৪৪ রানে শিকার ধরেন তিনটি।
১ দিন আগে
১ দিন আগে
১ দিন আগে
২ দিন আগে
৩ দিন আগে
৩ দিন আগে
৩ দিন আগে
৪ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে
৮ দিন আগে