২১ জুলাই ২০২৫, ৩:১৩ পিএম
এক বছরেরও বেশি সময় পর মিরপুরে টি-টোয়েন্টিতে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ বাংলাদেশ দল জয় দিয়ে রাঙালেও আলোচনায় এসেছে উইকেটের আচরণ। শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের চিরচেনা ধীরগতির উইকেট অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দেখা যায়নি। এরপরও মাত্র ১১০ রানে গুটিয়ে বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়া পাকিস্তান কোচ মাইক হেসন সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন উইকেটকে, যা তার কাছে মনে হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য অগ্রহণযোগ্য। আসলেই কি তাই?
মিরপুরের উইকেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে ২০ ওভারের ক্রিকেটে যেখানে আবেদন থাকে স্পোর্টিং উইকেটের, সেখানে অধিকাংশ সময়ই এখানে দেখা মেলে বেশ স্লো, টার্নিং ও নিচু বাউন্সের। ফলে ব্যাটাররা পারেন না সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিং করতে, আর বোলাররা দেখান দাপট। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়, বোর্ডে রান হয় কম আর ম্যাচ হয় লো-স্কোরিং।
মোটা দাগে রাখলে রোববার বাংলাদেশ-পাকিস্তানের প্রথম ম্যাচটিকে সেই কাতারে আপনি রাখতেই পারেন। কারণ, আগে ব্যাট করা দল মাত্র ১১০ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর সেটা তাড়া করতে প্রতিপক্ষকে খেলতে হয়েছে ১৬তম ওভার পর্যন্ত। ম্যাচটি যদি ২০২১-২২ সালের দিকেও হত, হেসনের দাবিকে আপনি যৌক্তিক মনে করতেই পারতেন। তবে এটা তো ২০২৫ সালের ম্যাচ এবং বাংলাদেশ দল তাদের ব্যাটিংয়ের সময় দেখিয়ে দিয়েছে, মিরপুরের উইকেট অন্তত এদিন লো-স্কোরিং ছিল না।
অবশ্য বাংলাদেশের আগে আনা যেতে পারে পাকিস্তানের ইনিংসের কথাও। বাংলাদেশকে চাপে ফেলে প্রথম তিন ওভারেই দলটি তুলে ফেলেছিল ৩২ রান। তবে অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে ভেঙে পড়ে তাদের ব্যাটিং অর্ডার। উইকেটের আচরণের সাথে তাল না মিলিয়ে বারবার বড় শট খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন পাকিস্তান ব্যাটাররা। ৪৬ রানেই তাতে হারাতে হয় ৫ উইকেট।
এর মাঝেও ফখর জামান খেলেন ৩৪ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংস, যেখানে আবার তিনি জীবন পান দুই বার। এরপর আউট হন বিব্রতকর এক রান আউটে। পাকিস্তানের ইনিংসে এটি ছাড়াও ছিল আরও দুটি রান আউটের ঘটনা। একটি দলের তিন ব্যাটার যখন রান আউটের শিকার হন, ব্যাটিং বিপর্যয় তখন প্রায় অবধারিতই।
এর সাথে যোগ হয় মুস্তাফিজুর রহমানকে একেবারেই না বুঝতে পারা। এটা বলার তো অপেক্ষা রাখে না যে, মিরপুরের উইকেটে মুস্তাফিজুর বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর পেসার। তার স্লোয়ার, কাঁটার এখানে ভীষণ কার্যকর হয়। প্রথম ম্যাচে তিনি আবার ছিলেন নিজের সেরা ছন্দে। চার ওভারে ১৮টি ডট দিয়ে মাত্র ৬ রানে নেন ২ উইকেট।
তার মানে, বাকি ১৫.৩ ওভারে পাকিস্তান করেছে মোটে ১০৪ রান! এই ফরম্যাটে প্রতিপক্ষের একজন বোলার যদি চার ওভারে দেন মাত্র ৬ রান, তাহলে নিশ্চিতভাবে ব্যাটিং করা দলকে অন্য বোলারদের ওপর ভীষণ চড়াও হতেই হবে। পাকিস্তান দল সেটাও পারেনি। অধিকাংশ ব্যাটাররা বাজে শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। ফলে ফখরের ইনিংস ও শেষের দিকে আব্বাস আফ্রিফির ক্যামিও বাদে রানের জন্য বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে সালমান আঘার দলকে।
ম্যাচ শেষে হেসন অবশ্য ব্যাটারদের ব্যর্থতা আড়াল করে অনেকটাই দায় চাপান উইকেটের ওপর। “এই উইকেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কোনো দলের জন্যই আদর্শ নয়। আমরা যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটার দায় আমাদেরই। তবে এই ধরনের উইকেট আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যবহার করা ঠিক নয়। হ্যাঁ, ফখর শুরুতে কিছু শট খেলেছিল। আর সেজন্যই আমাদের মনে হয়েছিল উইকেট হয়ত সহজ। কিন্তু আসলে তা ছিল না। বল মুভ করছিল বেশ, হঠাৎ হঠাৎ লাফ দিচ্ছিল। আর তখনই আমাদের ব্যাটাররা ভুল শট বেছে নিয়েছে। সাথে তিনটি রান আউটও আমাদের কাজটা আরও কঠিন করেছে।”
হেসনের মন্ত্যবের প্রেক্ষিতে আসা যাক বাংলাদেশের ইনিংস। তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস যখন আউট হন, তখন ২.২ ওভারে বোর্ডে রান মাত্র ৭। সেখান থেকে বাংলাদেশ ম্যাচ শেষ করেছে ২৭ বল হাতে রেখে। অর্থাৎ, পাকিস্তানের মত চাপের মুখে ছিল বাংলাদেশও, তবে এই উইকেটে সেটা কীভাবে কাউন্টার করতে হয়, সেই ব্যাপারে পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ হৃদয় রেখেছিলেন স্বচ্ছ ধারণা। জুটিতে তাই একজন বলের মেধা বুঝে আক্রমণে গেছেন, অন্যজন আবার অনেকটা ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করেছেন।
টার্গেট ছোট হওয়ায় এটাই ছিল ব্যাট করার সেরা উপায়। শেষ পর্যন্ত তাওহীদ ৩৭ বলে ৩৬ করে আউট হলেও ইমন ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। খেলেন মাত্র ৩৯ বলে ৫৬ রানের ইনিংস, যা তিনি সাজান ৫ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারিতে। সাথে শেষের দিকে ১৫ রানের ক্যামিও খেলেন জাকের আলি অনিক।
এই তিনজনের ব্যাটিংই বলে দেয়, দ্বিতীয় ইনিংসেও মিরপুরের উইকেট মোটেও ব্যাটিং বিরুদ্ধ ছিল না। টার্গেট নাগালের মধ্যে থাকায় রয়েসয়ে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। নাহলে অনায়াসেই তারা এই রান ১২-১৩ ওভারের মধ্যেও তাড়া করতে পারতেন। সব মিলিয়ে তাই বলা যায়, পাকিস্তান তাদের ব্যাটিং পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করতে পারত, তাহলে ১৫০-১৬০ রান খুব সম্ভব ছিল তাদের জন্য। বাংলাদেশের ইনিংস তারই প্রমাণ।
অথচ হেসন কিনা অতীতের মিরপুরের উইকেটের সাথে এই ম্যাচের উইকেটের মিল টেনে দিয়েছেন সতর্ক বার্তা। “ভালো ক্রিকেটার তৈরি করতে হলে ভালো মানের উইকেট দরকার। বিপিএলে কিছু ভালো উইকেট দেখা গেছে ঠিকই, কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে এই উইকেটের কোনো মিল নেই। বাংলাদেশ দল যখন বিদেশে খেলে, তখন এমন উইকেট কিন্তু তাদের কোনো সাহায্য করে না। আপনি জানেন না এখানে ১০০, ১৩০ বা ১৫০ – কোনটা ভালো স্কোর। এটা কোনো দলের জন্যই ইতিবাচক নয়।”
হেসন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা কোচদের একজন। ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবেও তার জুড়ি মেলা ভার। ক্রিকেটে ডাটার ব্যবহার তিনি বেশ করেন। অথচ পাকিস্তান কোচ কিনা তার দলের ব্যাটারদের ব্যর্থতা আড়াল করলেন উইকেটের ওপর দোষ চাপিয়ে, যা বেশ হতাশাজনকই। তিনি যদি ঠিক হতেন, তাহলে একই উইকেটে বাংলাদেশ দলকেও করতে হত অনেক সংগ্রাম। ১১১ রান করতেই দেখা যেত উইকেটে চলে গেছে ৭-৮টি, আর ম্যাচ গড়িয়েছে ১৯-২০ ওভারে। এর কোনোটিই যেহেতু হয়নি, তাই হেসনের অভিযোগ আর ধোপে টেকে না, অন্তত এই ম্যাচের প্রেক্ষাপটে।
২৫ জুলাই ২০২৫, ২:৩৫ পিএম
২৪ জুলাই ২০২৫, ৬:১৩ পিএম
প্রাথমিকভাবে টেস্ট সিরিজ থেকে মিলেছিল ছুটি। তবে গ্লেন ফিলিপস ছিটকে যাওয়ায় জিম্বাবুয়ের সফরে মাইকেল ব্রেসওয়েলকে দেখা যেতে পারে সাদা পোশাকেও। অভিজ্ঞ এই বোলিং অলরাউন্ডারকে ছুটি বাতিল করে টেস্ট সিরিজের স্কোয়াডে যোগ করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজিসি)।
‘দ্য হান্ড্রেড’-এর ব্যস্ততা থাকায় শুরুতে ব্রেসওয়েল জিম্বাবুয়ে সফরের টেস্ট স্কোয়াডে ছিলেন না। তাকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলের অংশ হিসেবে জিম্বাবুয়েতেই অবস্থান করছেন ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে। ফলে সময়সূচি সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় তাকে প্রথম টেস্টের দলে যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিউইরা।
গত ১৩ জুলাই মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি)-এর ফাইনালে ওয়াশিংটন ফ্রিডমের হয়ে খেলতে গিয়ে গ্রোয়েন চোটের শিকার হন ফিলিপস। ফলে তাকে পুরো টেস্ট সিরিজ থেকেই বাদ দিতে বাধ্য হয় নিউজিল্যান্ড। দলটির প্রধান কোচ রব ওয়াল্টার বলেছেন, ফিলিপসের কোয়ালিটির সবচেয়ে কাছাকাছি বিকল্প হওয়ায় তারা ব্রেসওয়েলকে দলে নিয়েছেন।
তবে ব্রেসওয়েলকে নিউজিল্যান্ড দল পাবে কেবল প্রথম টেস্টের জন্যই। বুলাওয়েতে প্রথম ম্যাচের পর তিনি ফিরে যাবেন ইংল্যান্ডে, সাউদার্ন ব্রেভ দলে যোগ হতে। আর দ্বিতীয় টেস্টের জন্য এনজিসি পরে আরেকজন বিকল্প খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে।
১০ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের উৎসবকে হোয়াইট ওয়াশের উৎসবে রূপ দেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশ সমর্থকরা। ভেন্যুটা মিরপুর বলেই এমন স্বপ্ন দেখেছে দর্শক। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচকে সামনে রেখে ১০ বছর আগে এই ভেন্যুতে পাকিস্তানকে ওডিআই সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের ছবিটাও ভেসে উঠেছে বাংলাদেশ সমর্থকদের চোখে। তবে সিরিজ জয়ের উৎসব শেষ ম্যাচে ম্লান করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সভাপতির উপস্থিতিতে ৭৪ রানের সান্ত্বনা নিয়ে দেশে ফেরার উপলক্ষ্য পেয়েছে পাকিস্তান।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ছিল না টি-টোয়েন্টির উত্তাপ। প্রথম ম্যাচে ইনিংস টেনেটুনে ১১০ পর্যন্ত নিতে পেরেছে সফরকারী দলটি। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৪ রানের চ্যালেঞ্জে থেমেছে পাকিস্তান ১২৫-এ। উইকেট নিয়ে পাকিস্তান কোচ মাইক হেসনের অসন্তুষ্টি প্রকাশের কোনো সুযোগ শেষ ম্যাচে দেননি কিউরেটর গামিনি সিলভা। ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচ উপহার পেয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) সভাপতি স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকায় তাকে সন্তুষ্ট করতে প্রানান্ত চেষ্টা করেছে পাকিস্তান টপ অর্ডাররা। টি-টোয়েন্টির উত্তাপ দিয়ে স্কোর টেনে নিয়েছে ১৭৮/৭ পর্যন্ত।
টানা দুই জয়ে সিরিজের ট্রফি নিশ্চিত করেই যেনো মহাখুশি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। সাইড বেঞ্চের শক্তি এদিন পরখ করতে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৫ পরিবর্তনে প্রকারান্তরে তা জানিয়ে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরাজকে ফিরিয়ে আনার সুফল এদিন বোলিংয়ে পাওয়া যায়নি। শ্রীলঙ্কা সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মিতব্যয়ী বোলিং থেকে এদিন টনিক নিতে পারেননি। এক ওভারে (১-০-১৪-০) থেমেছে তার বোলিং। আর এক অফ স্পিনার শেখ মেহেদীও এদিন ছিলেন অকার্যকর (৩-০-৩৬-০)। সাইফউদ্দিনের প্রত্যবর্তনটা এদিন ছিল চোখে পড়ার মতো। ১ ওভারের শেষ স্পেলটি ছিল খরুচে (১-০-১৯-০)। তবে তার প্রথম তিন স্পেল (১-০-৬-০, ১-০-২-০ ও ১-০-১-১) ছিল দারুণ মিতব্যয়ী। দুই বছর পর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছেন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম (৪-০-২২-২)। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেট পাওয়ার পর (৩/২২) এক ম্যাচ বিশ্রামে ছিলেন তাসকিন। ফিরেই নামতা গুনে তিন উইকেট শিকার করেছেন (৩/৩৮)। তার দ্বিতীয় স্পেলটি ছিল খরুচে (১-০-১৫-০)। এই ম্যাচে মার খেয়েছেন বাঁ হাতি পেসার শরিফুল (৪-০-৩৯-১)।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে'র প্রথম ৬ ওভারে এদিন একটু বেশিই অমিতব্যয়ী বোলিং করেছে বাংলাদেশ বোলাররা। শেখ মেহেদী-শরিফুল-তাসকিনের অমিতব্যয়ী প্রথম স্পেলে ওই ৬ ওভারে উইকেটহীন ৫৭ করেছে পাকিস্তান। শাহিবজাদা ফারহান-সাইম আইয়ুব ওপেনিং পার্টনারশিপে ৪৭ বলে ৮২ রান যোগ করে বাংলাদেশ দলকে রান পাহাড়ে চাপা দেয়ার আভাস দিয়েছিলেন। ৮২ রানে এই পার্টনারশিপ থামিয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম। ২ বছর পর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে প্রথম ওভারেই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। ডিপ স্কোয়ার লেগে সাইম আইয়ুব (১৫ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ২১) দিয়েছেন ক্যাচ। মিরাজকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কার চুমোয় ২৮ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফিফটিতে ভয়ংকর রূপ ছড়িয়েছেন শাহিবজাদা ফারহান। তার উইকেটটিও পেয়েছেন নাসুম। নাসুমের লেগ স্ট্যাম্পে পিচিং ডেলিভারিতে সুইপ করতে যেয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন শাহিবজাদা ফারহান (৪১ বলে ৬ চার ৫ ছক্কায় ৬৩)।
দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে'র ৯ ওভারে ৬৫'র বেশি রান নিতে দেয়নি বাংলাদেশ বোলাররা। শেষ পাওয়ার প্লে'র ৩০ বলে ৪৬ রানে ফেলে দিয়েছে ৩ উইকেট। মাঝে ২৬টি বলের একটিতেও পাকিস্তান ব্যাটারদের বাউন্ডারি মারতে দেয়নি বোলাররা। পুরো ইনিংসে ১২০টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৫৩টি ডট। তারপরও বাউন্ডারি এবং ছক্কার সংখ্যা কম নয়। ১২টি বাউন্ডারির পাশে সমসংখ্যক ছক্কা! তাতেই বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জটা কঠিন করে দিতে পেরেছে পাকিস্তান।
১৭৯ রানের চ্যালেঞ্জ নিতে এসে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ব্যাকফুটে নেমে গেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে সালমান মীর্জাকে তানজিদ হাসান তামিম কাট করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে (২ বলে ০) হতাশ করেছেন। ফাহিম আশরাফের ৪র্থ ডেলিভারিতে অধিনায়ক লিটন ফ্লিক করতে যেয়ে বোল্ড হয়েছেন (৮ বলে ৮)। ফাহিম আশরাফ নিজের দ্বিতীয় ওভারের ৪র্থ বলে মিরাজ মিড অফে দিয়েছেন ক্যাচ (৮ বলে ৯)। সালমান মীর্জার ৩য় ওভারে লো বাউন্সি ডেলিভারিতে জাকের আলী অনিক বোল্ড (২ বলে ১) এবং শেখ মেহেদী সুইংয়ে বোল্ড হলে বড় হারের শঙ্কা দেখা দেয়।
সালমান মীর্জা (৩-০-১৫-৩) এবং ফাহিম আশরাফের (২-০-১৩-২) প্রথম স্পেলে স্কোরশিটে ২৯ উঠতে ৫ উইকেট হারালে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোরের শঙ্কা পর্যন্ত দেখেছে সমর্থকরা। তবে ২০১৬ সালে ইডেন গার্ডেনসে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানে অল আউট হওয়ার সে লজ্জা পেতে হয়নি। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সাইফউদ্দিনের ব্যাটিংয়ে ( ৩৪ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩৫* ) বড় লজ্জা থেকে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ।
অবশ্য সংক্ষিপ্ত সংস্করনের ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোরের অপবাদ নিয়ে শেষ হয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ২০১১ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৫/৯ ছিল এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোর। সেই স্কোর টপকে গেছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে করাচিতে ২০৪ রান তাড়া করতে যেয়ে ১০২ রানে হার ছিল এতোদিন এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় হার। ১৭ বছর আগের সেই হারকেও উপরে রেখেছে বাংলাদেশ।
এদিন বিরক্তিকর ব্যাটিং করেছেন নাঈম শেখ। ১৭ বলে করেছেন মাত্র ১০ রান এই ওপেনার। আহমেদ দানিয়েলকে সিলি মিড অফে ক্যাচ দিয়ে তার আউটটিও দৃষ্টিকটু লেগেছে।
বাংলাদেশের ইনিংসের স্থায়ীত্ব ১০০ বল। এই ১০০ বলের ইনিংসে ৫০ টি ডট। ৮টি বাউন্ডারির পাশে ৩টি ছক্কা। তিনটি ছক্কার তিনটিতে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশের ২ টেল এন্ডার সাইফউদ্দিন-শরিফুল। সাইফউদ্দিন পর পর দুটি ছক্কা মেরেছেন এক্সট্রা কভার এবং লং অনের উপর দিয়ে। শরিফুল মেরেছেন লং অনের উপর দিয়ে।
গত ২১ জুলাই উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে একটি বিমান বিদ্ধস্ত হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একটি মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের টিকিট বিক্রির পুরো অর্থ বিসিবি দান করবে মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় এবং ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের শহিদ ও আহতদের পরিবারকে।
বিসিবি এক বিবৃতিতে লিখেছে, “বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ঘোষণা করেছে যে আজ শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের টিকিট বিক্রির পুরো আয় সাম্প্রতিক জাতীয় ট্র্যাজেডিগুলোর প্রেক্ষিতে মানবিক সহায়তায় দান করা হবে।”
অন্যদিকে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবেই দেখছেন, “বাংলাদেশে ক্রিকেট শুধুই একটি খেলা নয়—এটি আমাদের জাতীয় আত্মার অংশ। শোকের এই সময়ে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। যারা তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁদের আর্তনাদে আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ। বিসিবি এ ক্ষত সামাল দিতে সামান্য ভূমিকা রাখতে পেরে কৃতজ্ঞ। আমাদের প্রার্থনা ও সহানুভূতি সব সময় তাঁদের সঙ্গে থাকবে।”
এই দুর্ঘটনার পর বিসিবি সিরিজ জয়ের উৎসর্গ করে নিহত ও আহতদের স্মরণে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে এক মিনিটের নিরবতা পালন করে এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে লিটন কুমার দাসের দল। শেষ ম্যাচটা জিতলে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করাবে টাইগাররা। অন্যদিকে শেষ ম্যাচ জিতে নিজেদের মান বাঁচাতে মাঠে নামছে পাকিস্তান।
গত ম্যাচের একাদশ থেকে আজ পাঁচটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে পারভেজ ইমন, তাওহিদ হৃদয়, তানজিম সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেনকে। তাদের জায়গায় একাদশে ফিরেছেন নাঈম শেখ, তানজিদ তামিম, মেহেদী মিরাজ, সাইফউদ্দিন ও নাসুম আহমেদ।
বাংলাদেশ একাদশ:
লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, নাইম শেখ, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, মো. সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদ।
পাকিস্তান একাদশ:
সালমান আলি আগা (অধিনায়ক), সাহেবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব, মোহাম্মদ হ্যারিস, হাসান নওয়াজ, হুসেইন তালাত, মুহাম্মদ নওয়াজ, ফাহিম আশরাফ, আব্বাস আফ্রিদি, আহমেদ দানিয়াল ও সালমান মির্জা।
না আন্দ্রে রাসেল বিদায় বেলায়ও পারলেন না! জন্মস্থান কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে বিদায়ী সংবর্ধনার ম্যাচেও পারলেন না তিনি! টেস্ট সিরিজ ৩-০ তে হারের পর এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ২-০ তে পিছিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদিও সিরিজে এখনও তিন টি-টোয়েন্টি বাকি, কিন্তু সে পর্যন্ত আর অপেক্ষা করলেন না রাসেল, আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বললেন এই ফর্মাটের মহাতারকা।
আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৭২ রান করেছিল ক্যারিবীয়রা। বিদায়ী ম্যাচে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেছেন রাসেল। ২৮ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে ১৬ রান খরচ করে উইকেট পাননি রাসেল।
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজও জিতে নিল বাংলাদেশ |
![]() |
এদিন জয় পাননি রাসেল, তবে গার্ড অব অনার পেয়েছেন সতীর্থ ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। উপহার পেয়েছেন জ্যামাইকার পতাকায় মোড়ানো স্মারক ব্যাট ও বল। ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা নিজের শহরে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে চেয়েছিলেন, তাঁর সেই আব্দার রক্ষা করেছে ক্যারিবীয় ক্রিকেট বোর্ড।
১৪ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ৯৯, শেষ ৬ ওভারে ৭৩ রান যোগ করে তারা! টস হারা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভুগিয়েছে অ্যাডাম জাম্পার লেগস্পিন আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অফস্পিন। শাই হোপ আর শিমরোন হেটমায়ারের উইকেট তুলেছেন ম্যাক্সওয়েল, আর ব্রান্ডন কিং, রোস্টন চেইস ও শেরফানে রাদারফোর্ডকে ঘরে ফিরিয়েছেন জাম্পা। প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই এ দু’জনের শিকার। রাসেল ১৫ বলে খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস, ছিল চারটি ছক্কা। জবাবে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও খুব ভাল ছিল না। ৪২ রানের মাঝেই ফিরে যান দুই ওপেনার ম্যাক্সওয়েল ও মার্শ। এরপর ১৩১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি জশ ইংলিশ ও ক্যামেরন গ্রিনের মাঝে। ইংলিশ ৭৮ ও গ্রিন ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচসেরা হন জশ ইংলিশ।
আরও পড়ুন
মিরপুরের উইকেট ‘অগ্রহণযোগ্য’, যেখানে ‘ভুল’ পাকিস্তান কোচ হেসন |
![]() |
শনিবার সেইন্ট কিটস এন্ড নেভিসে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি, এই ম্যাচ জিতলে দুই ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নেবে সফররত অস্ট্রেলিয়া! সিরিজের বাকি অংশে আর দেখা যাবে না বিদায়ী আন্দ্রে রাসেলকে।
২ দিন আগে
৯ দিন আগে
১০ দিন আগে
১৯ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে