
আগের ম্যাচে লো-স্কোরিং হলেও ব্যাট হাতে বাংলাদেশ ছিল প্রাণবন্ত। তবে এদিন সেটা হলো না। শুরু থেকেই কেউ পারলেন না বড় ইনিংস খেলতে। ফলে চাপ বাড়ল মিডল অর্ডারের ওপর। অন্যরা না পারলেও সেটা একাই সামাল দিলেন জাকের আলি অনিক। লড়িয়ে ফিফটিতে দলকে এনে দিলেন ফাইট করার মত এক স্কোর। এরপর বোলাররা দিলেন স্বপ্নের শুরু। তবে পাকিস্তানের হয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ফেলেন ফাহিম আশরাফ। জমল রোমাঞ্চ। শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি হাসল বাংলাদেশ। নিশ্চিত হল ইতিহাস গড়া সিরিজ জয়।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পেয়েছে ৮ রানের নাটকীয় জয়। জাকের আলির বীরত্বে ১৩৩ রান করার পর প্রতিপক্ষকে ১৯.২ ওভারে ১২৫ রানে অলআউট করেছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই তাতে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের সিরিজ জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে এটা বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়।
গত সোমবার মাইলস্টোনের মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার শোক স্মরণে মঙ্গলবার একদিনের শোক পালন করেছে বাংলাদেশ। সেই আবহেই মিরপুরে শুরু হয় ম্যাচ। খেলা শুরুর আগে মাঠে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আরও পড়ুন
| রাসেলের বিদায়ের রাগিণী আরও শোকাতুর দলের পরাজয়ে |
|
টস হেরে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ একাদশে বাংলাদেশ আনে দুটি পরিবর্তন। বাদ পড়েন বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও পেসার তাসকিন আহমেদ। তাদের জায়গায় দলে আসেন ব্যাটার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা সফরে একটি টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি নাঈম। এবারও ব্যর্থ হন তিনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মাত্র ৩ রান করে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে। স্কুপ শটে ফাহিম আশরাফের বল উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু টাইমিং না হওয়ায় ধরা পড়েন মোহাম্মদ হারিসের গ্লাভসে।
খুব একটা সময় টিকলেন না লিটনও। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে এক ডিজিটে আউট হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ছক্কার চেষ্টায় সালমান মির্জার বলে ক্যাচ তুলে দেন ডিপ মিড উইকেটে। অহেতুক রান চুরি করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তাওহীদ হৃদয়। সালমান মির্জার অফ স্টাম্পের বাইরের বল মিড অফে ঠেলেই রানের জন্য দৌড় দেন এই ডানহাতি ব্যাটার, তবে সালমান আগার সরাসরি থ্রোয়ে ডাইভ দিয়েও বাঁচাতে পারেননি উইকেট।
আগের ম্যাচে দারুণ এক ফিফটি করা পারভেজ হোসেন ইমন শুরুটা করেছিলেন ভালো। তবে ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। মিড অনের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে টাইমিং মিস করে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে এক চার ও এক ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান।
৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে মাত্র ২৯। সেখান থেকে বাংলাদেশের ফেরার লড়াইয়ে রানে গতি দেন শেখ মাহেদি হাসান। খুশদিল শাহ ও মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে পরপর চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে কিছুটা চাপ সরান এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। জাকের আলিকে নিয়ে গড়েন ৪৯ বলে ৫৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি।
শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙে মাহেদির বিদায়ে। ২৫ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় এই ফরম্যাটে নিজের সর্বোচ্চ ৩৩ রানের ইনিংস খেলে শিকার হন মোহাম্মদ নাওয়াজের। ফিনিশিং দিতে ব্যর্থ হন শামীম হোসেন। আহমেদ দানিয়েলের বলে বোল্ড হয়ে যান মাত্র ১ রানেই।
আরও পড়ুন
| রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজও জিতে নিল বাংলাদেশ |
|
৯৩ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ইনিংসকে এরপর একাই টেনে নেন জাকের আলি। বলের মেরিট বুঝে আক্রমণ শানান বোলারদের ওপর। তাতে একটু একটু করে এগিয়ে যান ফিফটির পথে। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় ধরা পড়ার আগে দলকে এনে দেন সম্মানজনক একটা স্কোর। ৪৮ বলে পাঁচটি ছক্কা ও একটি চারে সাজান ৫৫ রানের ইনিংস। এই ফরম্যাটে এটা জাকের আলির তৃতীয় ফিফটি।
মিরপুরেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ১১০ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর সহজেই সেটা তাড়া করেছিল বাংলাদেশ। তবে এই ম্যাচে সফরকারীদের জন্য শুরুতেই কাজটা দুর্গম করে তোলেন বাংলাদেশের বোলাররা মিলে।
একদম শুরু থেকেই দুই প্রান্ত থেকে চেপে ধরেন তারা। প্রথম ওভারেই সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় ব্রেকথ্রু পায় বাংলাদেশ। কাট করে পয়েন্টে খেলে রানের জন্য দৌড় দেন সাইম আইয়ুব, তবে সেটা পূর্ণ হওয়ার আগেই রান আউট হতে হয় তাকে। একাদশে ফেরা শরিফুল আঘাত হানেন নিজের প্রথম ওভারেই। অফ স্টাম্পের ভেতরে প্রবেশ করানো দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন মোহাম্মদ হারিস। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি তিনি, আম্পায়ার্স কল-এ সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
মিরপুরের পিচে যেন আগুন ছড়িয়ে দিলেন শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব। মাত্র ৫ ওভারের মধ্যে ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধস নামল পাকিস্তান ব্যাটিং লাইনআপে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটিই পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে অর্ধেক উইকেট হারানোর রেকর্ড।
এরপর ফের শরিফুলের আঘাত। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ফখর জামানের ইনিংস। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন লিটন। সেখানে বদলে যায় সিদ্ধান্ত।
বড় ধাক্কাটা আসে পঞ্চম ওভারে। আক্রমণে এসেই দুই উইকেট নেন তানজিম হাসান সাকিব। প্রথমে অফ স্টাম্পের বাইরে খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড হন হাসান নাওয়াজ। পরের বলেই প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মোহাম্মদ নাওয়াজ। মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধস নামে পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারে।
টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে (১৫) ৫ উইকেট হারানোর রেকর্ড এখন এটিই। আগের রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ২০২৩ সালে (১৬ রানে ৫ উইকেট)।
বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলের সবচেয়ে কম রানে ৫ উইকেট হারানোর ঘটনাও এটি। আগের রেকর্ডটি ছিল পাপুয় নিউগিনির (২৪ রান, ২০২১ বিশ্বকাপ ২০২১)।
রান রেটের চাপ সামাল দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আউট হতে হয় পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগাকে, যিনি রীতিমত রান বের করতেই সংগ্রাম করছিলেন। মাহেদির বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় লং অনে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। মাত্র ৯ রান করতে খেলেন ২৩ বল। পাকিস্তানের ইতিহাসে টি-টোয়েন্টিতে কমপক্ষে ২০ বল খেলা ব্যাটারদের মধ্যে এটাই সবচেয়ে ধীরগতির ইনিংস।
অন্য প্রান্তে রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণিতে ক্যাচ দিয়েও জীবন পান খুশদিল শাহ। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ পয়েন্টে, তবে পারভেজ হোসেন পারেননি সহজ সেই ক্যাচ নিতে। খুশদিলের রান তখন ১২।
আরও পড়ুন
| নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিসিবির আয় ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা |
|
এর কিছুক্ষণ বাদেই অবশ্য আঘাত হানে বাংলাদেশ। মাহেদির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান খুশদিল শাহ। ১৮ বলে ১৩ রান করেই ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটার। প্রবল চাপে পড়ে যাওয়া পাকিস্তানের ১২ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে মাত্র ৪৭ রান!
এরপর বাংলাদেশকে চাপে ফেলে প্রতিরোধ গড়েন আব্বাস আফ্রিদি ও ফাহিম। ২৭ বলে দুজনে যোগ করেন ৪১ রান। অবশেষে নিজের শেষ ওভারে এসেই প্রথম বলে জুটির ইতি টানেন শরিফুল। স্লগ খেলতে গিয়ে বোল্ড হতে হয় তাকে, তার আগে ১৩ বলে ১৯ রান।
তবে একপ্রান্তে আগলে দলকে ম্যাচে ধরে রাখেন ফাহিম। সুযোগ বুজে মারেন বড় শট, তাতে ক্রমেই কমে আসে বল ও রানের ব্যবধান। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন হয় ২৮ রানের। রিশাদের করা ১৯তম ওভারে প্রথম পাঁচ বলেই ফাহিম তুলে নেন ১৫ রান। তবে শেষ হাসি হাসেন এই লেগ স্পিনারই। ছক্কার চেষ্টায় নিচু হয়ে যাওয়া বল খেলতে গিয়ে ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলেন ফাহিম। তবে তার আগে খেলেন ৩২ বলে ৫১ রানের এক লড়াকু ইনিংস।
২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আহমেদ দানিয়ালকে ফিরিয়ে সব রোমাঞ্চের ইতি টেনে বাংলাদেশকে জেতান মুস্তাফিজুর। ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার শরিফুল।
No posts available.
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪:১৩ পিএম
৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম

আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে পিসিবি। ২০২৬ পিএসএলের কয়েকটি ম্যাচ ভেন্যুটিতে। লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আয়োজিত পিএসএলের রোডশোতে এ ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি।
নাকভি জানান, মুজাফফরাবাদ স্টেডিয়ামে পিএসএল আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে পিসিবি। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে ভেন্যুটি উন্নয়নের উদ্যোগও নিয়েছে বোর্ড। তাঁর ভাষায়, ‘মুজাফফরাবাদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে আমরা সর্বোচ্চ মানে উন্নত করব।’
পিসিবি চেয়ারম্যান নাকভি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ–সুবিধাই মুজাফফরাবাদে রয়েছে। সেখানে পাঁচতারকা মানের হোটেলসহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজনের মতো পরিবেশ তৈরি আছে।’
নাকভি জানান, শুধু পিএসএল নয়, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ম্যাচও আয়োজন করা হবে আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে। তবে মুজাফফরাবাদে কয়টি পিএসএল ম্যাচ হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি পিসিবি।
২০১৬ সালে পাঁচ দল নিয়ে যাত্রা শুরু করা পিএসএলে আগামী সংস্করণ থেকে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরও দুটি নতুন দল। ১১তম আসর থেকেই আট দলের লিগে রূপ নেবে টুর্নামেন্টটি। আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে হওয়ার কথা ২০২৬ পিএসএল।

টি-টোয়েন্টির মারকাটারি যুগে এখন হরহামেশাই দেখা যায় ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি। তবে একই ইনিংসে দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরির ঘটনা খুব বেশি নেই। বিশ্ব ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে খেলা হয়েছে ৩২ হাজারের বেশি দলীয় ইনিংস।
এর মধ্যে এক ইনিংসে দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরি দেখা গেছে মাত্র ১০ বার। এর দুটিতে জড়িয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নাম। যার সবশেষটি আবার বিপিএলের গত আসরেই।
রংপুর রাইডার্সের দুই ব্যাটার রাইলি রুশো ও অ্যালেক্স হেলস ২০১৯ সালের বিপিএলে এবং ২০২৫ সালে বিপিএলের সবশেষ আসরে ঢাকা ক্যাপিটালসের দুই ব্যাটার লিটন কুমার দাস ও তানজিদ হাসান পান সেঞ্চুরির দেখা।
২০১৯ সালের বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে শুরুতেই ফিরে যান ক্রিস গেইল। এরপর তাণ্ডব শুরুর করেন রুশো ও হেলস। দুজন মিলে দ্বিতীয় উইকেটে গড়ে তোলেন ১৭৪ রানের জুটি। ১১ চারের সঙ্গে ৫ ছক্কায় ৪৮ বলে ঠিক ১০০ রান করে ফেরেন হেলস।
আরও পড়ুন
| ৭ ইনিংসে ৩২ ছক্কা, এবার ব্যাট হাতে বিধ্বংসী রনি |
|
শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে রুশো খেলেন ৮ চার ও ৬ ছক্কায় ৫১ বলে ১০০ রানের ইনিংস। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে দুই সেঞ্চুরির মাত্র তৃতীয় ঘটনা ছিল এটি।
এর ছয় বছর পর বিপিএলের গত আসরে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ঝড় তোলেন লিটন ও তামিম। দুই ওপেনার মিলে উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেন ২৪১ রান। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ইতিহাসে যে কোনো উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি।
সেদিন ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হন ৬ চার ও ৮ ছক্কায় ৬৪ বলে ১০৮ রান করা তামিম। আর শেষ পর্যন্ত খেলে ১০ চার ও ৯ ছক্কায় মাত্র ৫৫ বলে ১২৫ রান করেন লিটন। দুজন তাণ্ডবে ১ উইকেটে ২৫৪ রান করে ঢাকা। যা বিপিএলে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।
সব মিলিয়ে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরির ঘটনা ১০টি। এর সর্বোচ্চ ৩টি হয়েছে ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আইপিএলে।
আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি হয়েছে তিনটি। ২০২২ সালে চেক প্রজাতন্ত্র ও গত বছর জাপান এবং ভারতের দুই ব্যাটার একই ইনিংস করেছেন সেঞ্চুরি।

ইংলিশ গতি তারকার ছিটকে যাওয়া অনেকটা অনুমিতই ছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। পার্থ টেস্টে চোট পাওয়া মার্ক উডের অ্যাশেজের বাকি অংশ খেলা হচ্ছে না। সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর বাঁ হাঁটুর চোট আবার ফিরে আসে। উডের পরিবর্তে ইংল্যান্ড দলে যোগ দিবেন ম্যাথু ফিশার।
অন্তত মেলবোর্ন ও সিডনিতে শেষ দু’টি টেস্টে খেলার আশায় ছিলেন উড। তবে ৩৬ বছর বয়সী এই পেসারের ওপর যে বয়সের প্রভাবও পড়ছে সেটাও স্বীকার করেন।ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) জানিয়েছে, ‘উড এই সপ্তাহের শেষের দিকে দেশে ফিরে আসবেন এবং দলের মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে তার পুনর্বাসন ও সুস্থতার জন্য।’
গত ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযান থেকে হাঁটুর চোটের জন্য অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন উড। পার্থে সিরিজের প্রথম টেস্ট ছিল তার ১৫ মাস পর প্রথম টেস্ট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আট উইকেটে হেরে যাওয়া ম্যাচে ১১ ওভার বোলিং করলেও কোনো উইকেট পাননি তিনি। ব্রিসবেনে দ্বিতীয় টেস্টে ছিলেন না উড, ওই টেস্টেও ৮ উইকেটে হেরে তাঁর দল অ্যাশেজে ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
উডের বদলি হিসেবে দলে সুযোগ পাওয়া ফিশার এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে মাত্র একটি টেস্টই খেলেছেন। ছয় ফিট দুই ইঞ্চি উচ্চতার এই পেসারের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি ছিল ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২৮ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ড লায়ন্স দলের হয়ে খেলছেন, এই সপ্তাহে সিনিয়র দলে যোগ দেবেন। অ্যাডিলেডে তৃতীয় টেস্ট শুরু হবে ১৭ ডিসেম্বর।
এর আগে দিনের শুরুতে জশ হ্যাজেলউডের পুরো অ্যাশেজ থেকে ছিটকে পড়ার খবর জানায় অস্ট্রেলিয়া। তবে ইতিমধ্যেই ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা স্বাগতিকদের স্কোয়াড আরও শক্তিশালী হচ্ছে প্যাট কামিন্সের ফেরায়। পিঠের সমস্যার কারণে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠের বাইরে থাকা উসমান খাজাও ফিরতে পারেন অজি দলে।

মূল পরিচয় বাঁহাতি পেসার হলেও, এবারের জাতীয় লিগে ব্যাট হাতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন আবু হায়দার রনি। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে পেস বোলিং অলরাউন্ডার তকমাটা বেশ ভালোভাবেই নিজের নামের সঙ্গে এঁটে নিয়েছেন ৩০ ছুঁইছুঁই ক্রিকেটার।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জাতীয় লিগের সপ্তম ও শেষ ম্যাচে সবচেয়ে বড় ঝড় তুলেছেন রনি। রাজশাহীর বিপক্ষে ১০ চারের সঙ্গে ১৩টি ছক্কা মেরে ১২৭ বলে ১৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন ময়মনসিংহ বিভাগের তারকা অলরাউন্ডার।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি ছক্কা আছে শুধু দুজনের। ২০১৪ সালের জাতীয় লিগে ১৬৮ রানের ইনিংসে ১৬টি ছক্কা মেরেছিলেন মুক্তার আলি। এর আগে ২০১২ সালের বিসিএলে ১৫২ করার পথে ১৫টি ছক্কা মারেন জিয়াউর রহমান।
রনির সমান ইনিংসে ১৩টি ছক্কা আছে জিয়াউর ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার বিশ্ব রেকর্ড তন্ময় আগারওয়ালের- গত বছর রঞ্জি ট্রফিতে ৩৩৬ রানের ইনিংসে ২৬টি ছক্কা মারেন ভারতীয় ব্যাটার
বাংলাদেশ 'এ' দলের হয়ে হংকং সিক্সেস ও এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস টুর্নামেন্ট খেলতে চলে যাওয়ায় এবার জাতীয় লিগের সব ম্যাচ খেলতে পারেননি রনি। তবে ৪ ম্যাচের ৭ ইনিংস ব্যাটিং করেই ছক্কার এমন উচ্চতায় উঠেছেন, যার অর্ধেকেও নেই কেউ।
এবারই প্রথম জাতীয় লিগে অংশ নিয়েছে ময়মনসিংহ। দলটির হয়ে ৪ ম্যাচের ৭ ইনিংসে ৩২টি ছক্কা মেরেছেন রনি। আর চার মেরেছেন ৩১টি। অর্থাৎ চারের চেয়ে তার ছক্কার সংখ্যাই বেশি।
সব মিলিয়ে এই ৭ ইনিংসে ১০৫.২৫ গড়, ১১৬.৯৪ স্ট্রাইক রেটে ৪২১ রান করেছেন রনি। শুধু বাউন্ডারি থেকে তিনি করেছেন ৩১৬ রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যা অবিশ্বাস্য বললেও হয়তো কম হবে!
এবারের জাতীয় লিগে আর কোনো ব্যাটার ১৫টি ছক্কাও মারতে পারেননি। দশ বা এর বেশি ছক্কা মারতে পেরেছেন শুধু চার জন- জিয়াউর রহমান (১৩), সোহাগ গাজী (১২), সৌম্য সরকার (১২) ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ (১০)।
লিগে আড়াইশ রান করা ব্যাটারদের মধ্যে আর কারও ৮০ স্ট্রাইক রেট বা ৬৫ গড়ও নেই।
আরও পড়ুন
| আইপিএল নিলামে নেই সাকিব, আছেন বাংলাদেশের ৭ জন |
|
সিলেটের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই ব্যাট হাতে জাদু দেখান রনি। আট নম্বরে নেমে ১০ চার ও ৬ ছক্কায় প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করে ১০৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
দ্বিতীয় রাউন্ডে রংপুরের বিপক্ষে ২ চার ও ৫ ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৩৪ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস।
এরপর 'এ' দলের ডাকে চলে যাওয়ায় টানা তিন রাউন্ড খেলা হয়নি রনির। ষষ্ঠ রাউন্ডে ফিরে আবার ঝড় তোলেন তিনি। এবার ৮ চারের সঙ্গে ৭ ছক্কায় ৭৬ বলে তিনি খেলেন ৯৭ রানের ইনিংস। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিসের হতাশায় পোড়েন তিনি।
আর শেষ রাউন্ডে রনি ফিরিয়ে আনেন প্রথম রাউন্ডের স্মৃতি। এবার ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে রাজশাহীর বোলারদের কচুকাটা করে ১০ চারের সঙ্গে মারেন ১৩টি, খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ১৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস।
রনির বিধ্বংসী সেঞ্চুরির পরও অবশ্য জিততে পারেনি ময়মনসিংহ। ৪২৮ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়ে ১৪৬ রানে জিতেছে রাজশাহী। রনি ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেও ২৮১ রানের বেশি করতে পারেনি ময়মনসিংহ।
দুই ইনিংসেই ৫টি করে উইকেট নিয়ে রাজশাহীর জয়ের নায়ক অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম

২০২৬ আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) নিলামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। শুরুতে বিসিসিআই বিশ্বের ১৪টি দেশের ১,৩৫৫ জনের একটি বড় তালিকা পাঠিয়েছিল। সেখান থেকে কোন খেলোয়াড়দের নিলামে দেখতে চায় তা জানতে চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছে। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন মোট ৩৫০ জন।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর আবুধাবির ইতিহাদ অ্যারেনায় অনুষ্ঠেয় নিলামে আছেন বাংলাদেশের সাত ক্রিকেটার। জায়গা হয়নি সাকিব আল হাসানের। প্রাথমিক তালিকায় ১ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যে নাম ছিলেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশের সাত জনের মধ্যে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, তানজিম হাসান সাকিব, রাকিবুল হাসান ও শরীফুল ইসলাম। প্রথমবারের মতো আইপিএলের নিলামের তালিকায় উঠল বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুলের নাম।
প্রাথমিক তালিকায় সর্বোচ্চ ২ কোটি তার ভিত্তিমূল্য ধরা রাখা হয় বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজকে। আইপিএলে নিয়মিত মুখ ‘কাটার মাস্টার’ এ পর্যন্ত সাত মৌসুমে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছেন। সবশেষ ২০২৫ আসরে তাকে দেখা গেছে দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সিতে।
আরও পড়ুন
| অস্ট্রেলিয়ার একটি সুসংবাদ ও একটি দুঃসংবাদ |
|
নিলামে তাসকিন, তানজিম সাকিব, শরীফুল ও নাহিদ রানার ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৭৫ লাখ রূপি। আর রাকিবুলের ৩০ লাখ।
আইপিএলের চূড়ান্ত তালিকায় যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ৩৫টি নতুন নাম। বিসিসিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, নিলাম শুরু হবে ক্যাপড খেলোয়াড়দের দিয়ে—ব্যাটার, অলরাউন্ডার, উইকেটকিপার-ব্যাটার, ফাস্ট বোলার ও স্পিনার। এরপর উঠবেন আনক্যাপড খেলোয়াড়রা।
এবারের নিলাম থেকে ৭৭ জন ক্রিকেটার দল পেতে পারেন। এর মধ্যে বিদেশি ক্রিকেটার হতে পারেন ৩১ জন। সর্বোচ্চ ৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাকি আছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের। তাদের স্কোয়াডে জায়গা বাকি ১৩ জনের।
নতুন অন্তর্ভুক্ত বিদেশি খেলোয়াড় :
আরাব গুল (আফগানিস্তান), মাইলস হ্যামন্ড (ইংল্যান্ড), ড্যান লেটেগান (ইংল্যান্ড), কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা), কনর এজারহুজেন (দক্ষিণ আফ্রিকা), জর্জ লিন্ডে (দক্ষিণ আফ্রিকা), বায়ান্ডা মাজোলা (দক্ষিণ আফ্রিকা), ত্রাভিন মথিউ (শ্রীলঙ্কা), বিনুরা ফার্নান্দো (শ্রীলঙ্কা), কুসল পেরেরা (শ্রীলঙ্কা), দুনিথ ওয়েলালাগে (শ্রীলঙ্কা), আকিম অগাস্ট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
নতুন অন্তর্ভুক্ত ভারতীয় খেলোয়াড় :
সাদেক হুসেইন, বিষ্ণু সোলাঙ্কি, সাবির খান, ব্রিজেশ শর্মা, কণিষ্ক চৌহান, অ্যারন জর্জ, জিক্কু ব্রাইট, শ্রীহরি নায়ার, মাধব বাজাজ, শ্রীবৎস আচার্য, যশরাজ পুঞ্জা, সাহিল পরাখ, রোশন ওয়াঘসারে, যশ দিচলকার, আয়াজ খান, ধূরমিল মাটকার, নমান পুশপক, পারিকশিত ভালসঙ্গকর, পুরভ আগরওয়াল, রিশভ চৌহান, সাগর সোলাঙ্কি, ইযাজ সাওয়ারিয়া এবং আমান শেকাওয়াট।