আলোচনাটা চলে আসছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মেহেদি হাসান মিরাজের অভিষেকের পর থেকেই। আর সেটা হল তিনি হবে ভবিষ্যৎ সাকিব। একসময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের টেস্ট ক্যারিয়ার শেষই বলা চলে। ফলে নতুন অধ্যায়ে তার জায়গায় মিরাজকে দেখছেন অনেকেই। সেই সম্ভাবনা তিনি দেখাচ্ছেনও বেশ ব্যাটে এবং বলে। তবে এই তুলনাটা যে একেবারেই উপযোগ করছেন না, সেটা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মিরাজ বরং মনে করেন, দুজনকে আলাদাভাবে দেখাটাই শ্রেয়।
সেই ২০১৬ সালে অভিষেকের পর থেকেই মিরাজকে নিয়ে সবার আশা একটাই, সাকিবের বিদায়ের পর তিনিই নেবেন সাকিবের জায়গাটা। গত কয়েক বছরে বোলিংয়ের পাশাপাশি নিচে নেমেও যেভাবে রান করে চলেছেন, তাতে তুলনাটা চলছে আরও জোরেশোরেই। সাকিবহীন মিরপুর টেস্টে সাতে নেমে দারুণ একটি ইনিংস খেলে মিরাজ যেন জানান দিয়েছেন, শূন্যতা পূরণে তিনি প্রস্তুত।
তবে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে এটাও বললেন, সাকিবের অর্জনের কাছাকাছি না গিয়ে কোনো তুলনায় যাওয়াটা সমীচীন মনে হয় না তার কাছে।
“দেখেন, আপনারা একটা কথা সবসময় বলেন যে আমি নাকি সাকিব ভাইয়ের জায়গাটা নিব। একটা জিনিস দেখেন, সাকিব ভাই কিন্তু অনেক বড় বড় অর্জন করেছেন। প্রায় ১৭ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন এবং সে একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। আমি মাত্র এক-দুই বছর ধরে ব্যাটিংয়ে নিয়মিতভাবে রান করা শুরু করেছি, আপনি যদি দেখেন। আর সাকিব ভাই শুরু থেকেই রান করেছেন। তাই সাকিব ভাইয়ের জায়গায় সাকিব ভাই, আমি আমার জায়গায়। একজন খেলোয়াড়কে আরেকজন খেলোয়াড়ের সাথে তুলনা না করাই বেস্ট মনে হয় আমার কাছে। কারণ, আমরা জানি সাকিব ভাইয়ের অর্জন কত।”
চলতি বছর ও এবারের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান ও উইকেট দুটিই মিরাজের। সাত ও আটে নেমে দলের সর্বোচ্চ রানস্কোরার হওয়াটা বলে দেয়, পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হিসেবেই ঠিক সাকিবের মতই খেলার সামর্থ্য অর্জন করছেন তিনি।
তবে এখানেও সাকিবের সাথে তুলনায় মিরাজ টেনে আনলেন তাদের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকার কথা।
“আমি যেখানে ব্যাটিং করি, সাত-আট নম্বরে ব্যাটিং করি। সাকিব ভাই টপ অর্ডারে ব্যাটিং করেছেন। এটা একটা কঠিন বিষয় তাই। আমার যখন সময় আসবে, আমি তখন অবশ্যই ভালো করার চেষ্টা করব দলের প্রয়োজনে ভালো ক্রিকেট খেলার।”
উল্লেখ্য, মিরপুর টেস্ট দিয়েই সাকিবের লাল বলের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার কথা ছিল। তবে নিরাপত্তার কারণে শেষ সময়ে তাকে স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া হয়। আর এই কারণেই প্রথম টেস্টের আগে ও পরে মিরাজের সাথে সাকিবের তুলনার প্রসঙ্গ চলে আসছে।
পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই বাংলাদেশের মিডল অর্ডার সামলে আসছেন মুশফিকুর রহিম। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য ছয় নাম্বারেই ব্যাটিং করছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। অথচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে মুশফিক নামলেন সাত নাম্বারে। পরে জানা যায়, মূলত আঙুলের চোটের কারণেই দেরিতে ব্যাট করতে নেমেছিলেন মুশফিক।
আরও পড়ুন
মুশফিকের ৬ হাজার টেস্ট রানের ছায়ায় জিরিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ |
প্রথম ম্যাচে উইকেট কিপিং করার সময়ই এই চোট পেয়েছিলেন মুশফিক। আঙুলে চিড় ধরায় পরের ওয়ানডেতে খেলা নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। জানা গেছে, এই মুহূর্তে তার আঙুলের যে অবস্থা তাতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুশফিকের না খেলার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আজ বেশি কিছু পরীক্ষা করা হবে মুশফিকের আঙুলে। তখনই পরিষ্কার জানা যাবে কবে নাগাদ আবার ফিরতে পারবেন এই উইকেট কিপার ব্যাটার। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো সিরিজের শেষ ম্যাচে আবার মাঠে নামতে পারবেন তিনি।
আরও পড়ুন
রেকর্ড গড়তে আর ৮১ রান দরকার মুশফিকের |
অন্য দিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাজে ভাবে হারতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। মাত্র ১১ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচ হারতে হয়েছে ৯২ রানে।
ফিল্ড সাজানো নিয়ে অধিনায়ক সাই হোপের সঙ্গে ঝামেলা বাধে পেসার আলজেরি জোসেফের। সেটা তর্কাতর্কি পর্যন্ত গড়িয়েছে। তাতে রেগেমেগে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বোলার আলজারি জোসেফ। ঐ ওভারটির প্রায় পুরোটাই দশজন নিয়ে ফিল্ডিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যদিও জোসেফ পরে মাঠে ফিরে আসেন। এমনই বিরল ঘটনা ঘটেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়-ইংল্যান্ড তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে। আর এই কাজের পরিণতি হিসেবে কোচ ড্যারেন স্যামির সমালোচনার শিকার হচ্ছেন জোসেফ।
ঘটনাটা্ ইংল্যান্ডের ইনিংসের চতুর্থ ওভারে, ঐ সময় বল করতে এসেছিলেন জোসেফ। অধিনায়ক শাই হোপকে ফিল্ডিং সাজানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন পেসার নিজেই। তিনি আসলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে একজন ফিল্ডার চেয়েছিলেন। কিন্তু অঞ্চল দিয়ে ইংরেজ ব্যাটার জর্ডান কক্স শট মারার পর অধিনায়কের উপরে রেগে যান জোসেফ। এরপর সেই ওভারেই কক্সকে আউট করেন তিনি। কক্সের গ্লাভসে বল লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপার হোপের হাতেই। এসময় অধিনায়কের ওপর ক্ষিপ্ত জোসেফকে কিছু বলতেও দেখা যায়।
আরও পড়ুন
নিউজিল্যান্ড সফরে ইংল্যান্ড দলে ডাক পেলেন তরুণ অলরাউন্ডার |
কিন্তু মূল ঘটনা ঘটে এরপরই। ওভার শেষ হতে অধিনায়কের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। হোপ এবং বাকি ক্যারিবীয় ক্রিকেটারেরা বুঝতেই পারছিলেন না কী করবেন। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসাবে হেডেন ওয়ালশ জুনিয়রকে দ্রুত নামানোর চেষ্টা করা হয়। যদিও হেডেন মাঠে নামার আগে জোসেফ মাঠে ফিরে আসেন। ক্রিকেটের সাথে যায় না এমন আচরণ দেখে ক্ষুব্ধ ধারাভাষ্যকার মার্ক বাউচার বলেন, “মাঝেমাঝে মাঠে থাকাকালীন অধিনায়ক বা খেলোয়াড় হিসাবে আপনার রাগ হতেই পারে। তবে এ সব কাজ বন্ধ দরজার পিছনে করা উচিত। অধিনায়কের পরিকল্পনায় আস্থা রাখা উচিত।”
খেলা শেষে শাই হোপ অবশ্য আর মনে রাখেননি ম্যাচের মধ্যের সেই ঘটনা, ‘মন্তব্য করতে চাই না। খেলায় এমনটা হতেই পারে।’ তা সে হোপ বিষয়টাকে যতটা হালকা করেই দেখুন না কেন, গুরুত্ব আছে কোচ ড্যারেন স্যামির কাছে। এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘ক্রিকেট মাঠে এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা সবাই বন্ধু হয়ে থাকব। আমি যে সংস্কৃতি তৈরির চেষ্টা করছি, সেখানে এটা মেনে নেওয়া যায় না’।
আরও পড়ুন
‘বাংলাদেশকে বলতে দিন, ইংল্যান্ডও অনেক কিছুই বলেছিল’, বললেন রোহিত |
ব্রেন্ডন কিং ও কেসি কার্টির জোড়া সেঞ্চুরিতে সহজ জয়ে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে সেই আনন্দ খানিকটা মলিন হয়ে গেছে আলজেরি জোসেফ মেজাজ হারানোয়!