খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন ওয়ানডেই ছিল বাংলাদেশের প্রিয় ফরম্যাট। তবে সময়ের বাকে এখন ৫০ ওভারের ক্রিকেটেই ভীষণ অধারাবাহিক দলটি। কঠিন এই সময়ে অধিনায়কত্ব পেয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, যার সামনে চ্যালেঞ্জ থাকবে তরুণদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার মনে করেন, তার নেতৃত্বে দল হিসেনে গুছিয়ে নিতে পারবে বাংলাদেশ।
মিরাজ জাতীয় দলের হয়ে প্রথম অধিনায়কত্ব করেন ২০২৪ সালের নভেম্বরে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ওয়ানডেতে। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ছিলেন টেস্ট ও ওয়ানডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্র করলেও ওয়ানডেতে তিন ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা সফরকে সামনে রেখে আগামী এক বছরের জন্য তাকেই শান্তর স্থলাভিষিক্ত করেছে বিসিবি। সাকিব-তামিমের পাশাপাশি এই সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ নতুন পথচলা শুরু করবে অবসরে যাওয়া আরও দুই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহকে ছাড়া।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ জানালেন, দলকে একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ তার সামনে।
“আমাদের এখন সময় এসেছে ওয়ানডে দলটাকে একটা জায়গায় দাঁড় করানোর। কারণ সম্প্রতি আমাদের দুইজন সিনিয়র ক্রিকেটার রিয়াদ ভাই, মুশফিক ভাই কিন্তু ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছে। অধিনায়ক কে, সেটা এখানে বিষয় না। দল হিসেবে খেলার গুরুত্ব সবচেয়ে বড়। আমাদের লক্ষ্য একটাই, আগামী এক বছরের মধ্যেই ওয়ানডে দলকে একটি নির্ভরযোগ্য ও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো। অনেক সময় কঠিন পরিস্থিতিতে শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেটা কিন্তু সবসময় পক্ষে যাবে না, আবার বিপক্ষে নাওয় যেতে পারে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরনটাই এখানে আসল। আমার আগে যারা আগে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া আমি অনুসরণ করব।”
কদিন আগেও ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে ছিল না তেমন প্রশ্ন। তবে শ্রীলঙ্কা সফরের ঠিক আগে আচমকাই শান্তকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি যে বিষয়টি নিয়ে অবগত ছিলেন না আগে থেকে, সেটা তার টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে করা একদিন আগের সংবাদ সম্মেলনেই স্পষ্ট।
তবে মিরাজের বিশ্বাস, পূর্বসূরি ও পুরনো বন্ধুর কাছ থেকে পূর্ণ সহায়তাই পাবেন তিনি।
“শান্ত আর আমার মধ্যে এই ব্যাপারগুলো কখনোই কাজ করবে না। ও যখন ক্যাপ্টেন্সি করেছে, তখন আমি ওকে অনেক সাহায্য করেছি। আশা করি সেও আমাকে সেভাবেই সাহায্য করবে। ওর সাথে আমার এমন কথাই হয়েছে।”
মিরাজ জাতীয় দলে এসে ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে পান মাশরাফি বিন মোর্তোজাকে। আর টেস্টে পান মুশফিকুরকে। এরপর নানা সময়ে খেলেছেন সাকিব, তামিমদের নেতৃত্বেও। এছাড়া নিজেরও রয়েছে বয়সভিত্তিক দল থেকে অধিনায়কত্ব করার সহজাত দক্ষতা।
এবার নেতা হিসেবে সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান মিরাজ।
“বাংলাদেশ দলে আমার ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল মাশরাফি ভাইয়ের অধীনে। এরপর অনেক নেতার সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখেছি, যা এখন কাজে লাগানোর সময় এসেছে। যারা জুনিয়র, তাদের পারফর্ম করতেই হবে। পাশাপাশি অভিজ্ঞ হিসেবে আমি চেষ্টা করবো ড্রেসিংরুমের পরিবেশটাকে এমনভাবে রাখতে, যাতে সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকে। আমরা যখন দলে এসেছিলাম, বড় ভাইয়েরা যেভাবে পাশে থেকেছেন, সেটাই অনুসরণ করব।”
ওয়ানডেতে সাম্প্রতিক ফর্ম খারাপ হলেও দল নিয়ে আশাবাদী মিরাজ। “আমি এই দলের ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখি। আমাদের দলে প্রতিভার কোনো ঘাটতি নেই। আমরা সাহস নিয়ে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে চাই। ইনশাআল্লাহ, দেশের জন্য সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।”
অধিনায়ক হিসেবে মিরাজের প্রথম পরীক্ষা শুরু জুলাইয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে আগামী ২, ৫ ও ৮ জুলাই।
১৪ জুন ২০২৫, ৭:২১ পিএম
১৪ জুন ২০২৫, ৬:১৯ পিএম
১৪ জুন ২০২৫, ৫:৪৮ পিএম
নিজের আন্তুর্জাতিক ক্যারিয়ার পরে দেখেছেন কাছ থেকে, আর আগে মাঠের বাইরে থেকেও সাক্ষী জাতীয় দলের একের পর এক হতাশার গল্পের। বারবার শিরোপার খুব কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেমেছিল দক্ষিন আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই লড়াইয়ে বারদুয়েক হোঁচট খেলেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছেড়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াস অধিনায়ক মনে করেন, এবার ভাগ্য তাদের সহায় হয়েছিল বলেই মিলেছে সাফল্য।
সেই ১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপ (বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর থেকে ২৭ বছরে দলটি আইসিসি ইভেন্টে সেমিফাইনাল-ফাইনাল খেলেছে এর আগে ২০ বার। প্রতিবারই তুমুল সম্ভাবনা জাগিয়েও তারা পারেনি শেষ হাসি হাসতে। এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এসেছিল টানা সাত ম্যাচ জিতে। এরপরও ছিল শঙ্কা। তবে সেটা উড়িয়ে দিয়ে ৫ উইকেটের জয়ে শিরোপা খরা কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
রান তাড়ায় চোট নিয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা বাভুমা ম্যাচের পর জানালেন উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া।
“শেষ কয়েকটা দিন ছিল অসাধারণ। কিছু কিছু সময়ে তো মনে হচ্ছিল আমরা যেন দক্ষিণ আফ্রিকাতেই খেলছি। আমরা কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, জয়ের বিশ্বাস নিয়ে এখানে এসেছিলাম। যদিও অনেকেই আমাদের নিয়ে সন্দিহান ছিল। ভালো খেলতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। আমরা বারবার সাফল্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছেছি, আবার হতাশাও পেয়েছি। এবার সৌভাগ্য আমাদের সাথে ছিল। আশা করি এই জয় দিয়ে আরও অনেক কিছুর সূচনা হতে যাচ্ছে।”
ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন পেসার কাগিসো রাবাদা ও ওপেনার এইডেন মার্করাম। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নেওয়া রাবাদা দাঁড়াতেই দেননি অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারকে। আর প্রথম ইনিংসে ডাক মারা মার্করাম রান তাড়ায় উপহার দেন ১৩৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস, যা তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস বললেও কমই বলা হবে।
দুজনের জন্যই বাড়তি প্রশংসা বরাদ্দ বাভুমার।
“কাগিসো রাবাদা আমাদের এই দলের বড় শক্তি। কয়েক দিন আগে আমি 'হল অব ফেম'-এর নতুন সদস্যদের তালিকা দেখছিলাম। আমার বিশ্বাস, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তার নামও সেখানে চলে যাবে। আর এইডেন মার্করামও অসাধারণ ছিল। দলে তার জায়গা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তার যে মানসিক দৃঢ়তা আছে, সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। রাবাদা আর এইডেন দুজনেই দলের হার না মানা মানসিকতার প্রতিনিধিত্ব করেছে।”
বারবার হতাশ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দেশ হিসেবে জয়ের মাহাত্ব কেমন, সেটাও অনুধাবন করতে পারছেন বাভুমা।
“যত বিভক্তই হই না কেন, এটা আমাদের জন্য, আমাদের গোটা জাতির জন্য একটা সুযোগ এক হওয়ার। এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আমরা সবাই একসাথে মিলেমিশেই এই সাফল্য উদযাপন করব।”
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবারের ফাইনালেও নেমেছিল ফেভারিট হিসেবে। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটা চমক দেখিয়েই টানা সাত ম্যাচ জিতে শিরোপার লড়াইয়ে জায়গা করে নিলেও, তাদের ফেভারিট হিসেবে কেউই সেভাবে রাখতে চাননি। তবে চারদিনের লড়াইয়ের পর টেম্বা বাভুমার দলই মাঠ ছেড়েছে বিজয়ীর বেশে। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স মনে করেন, যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে তাদের প্রতিপক্ষ।
ফাইনালের প্রথম দিনেই অনেকটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ২১২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরও অবশ্য টিকিয়ে রাখেন বোলাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ১৩৮ রানেই। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটাররা সেভাবে বড় স্কোর না করলেও টার্গেট দাঁড় করাতে সক্ষম হয় ২৮২ রানের, যা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে হেরে টানা দ্বিতীয়বার এই প্রতিযোগিতার শিরোপা আর জেতা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার।
অধিনায়ক কামিন্স মনে করেন, নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি তারা দল হিসেবে।
“পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলে যেতে পারত, কিন্তু আমাদের জন্য এবার কাজটা একটু বেশিই কঠিন ছিল। কিছু জায়গায় আমরা ঠিকভাবে খেলতে পারিনি। প্রথম ইনিংসে ভালো লিড নিয়েও আমরা প্রতিপক্ষকে পুরোপুরিভাবে চাপে রাখতে পারিনি। (রান তাড়ায়) দক্ষিণ আফ্রিকা চতুর্থ ইনিংসে আমাদের কোনো সুযোগই দেয়নি। এইডেন (মার্করাম) আর টেম্বা (বাভুমা) আমাদের কোনো সুযোগ দেয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা দেখিয়ে দিয়েছে যে কেন তারা এই মঞ্চে এসেছে, আর যোগ্য দল হিসেবেই তারা জিতেছে।”
দুই ইনিংসেই অস্ট্রেলিয়াকে ভুগিয়েছে টপ অর্ডার। দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো একটা লিড নেওয়ার পর সুযোগ ছিল বড় টার্গেট ছুঁড়ে দেওয়ার। তবে মাত্র ৭৩ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে পড়ে যায় দলটি। সেখান থেকে টেল এন্ডারদের সহায়তায় একটা ভালো লক্ষ্যই দক্ষিণ আফ্রিকাকে দিয়েছিল অজিরা। তবে এইডেন মার্করামের সেঞ্চুরি ও টেম্বা বাভুমার ফিফটিতে অনায়াসেই জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এই হারের জন্য কামিন্স অবশ্য ব্যাটারদের দায় দিতে নারাজ।
“আমাদের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে কিছু চিন্তা আছে। তবে গত দুই বছরে তাদের অনেকেই ভালো করেছে। বোলাররা প্রথম দুই দিন বেশ ভালো করেছে। আমরা সবকিছুই দিয়েই চেষ্টা করে গেছি। নাথান লায়ন দুর্দান্ত বোলিং করেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে উইকেট পায়নি। ফাইনালে ওঠাও একটা বিশাল অর্জন। এক ম্যাচের শিরোপা নির্ধারণী লড়াই দারুণ রোমাঞ্চকর। যদিও ফলটা আমাদের পক্ষে আসেনি, তবুও একটা অসাধারণ সপ্তাহ কাটল।”
হাতে ৮ উইকেট, প্রয়োজন মাত্র ৬৯ রান, ক্রিজে দুই অপরাজিত ব্যাটার গড়েছেন ১৪৩ রানের জুটি - এমন প্রেক্ষাপটে একটা দল টেস্টে হারবে এটা ভাবাটাও বেশ কঠিন কাজ। তবে দলটা দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের চতুর্থ দিনের শুরুতেও অনেকেই নিশ্চিত ছিলেন না দলটির জয়ের ব্যাপারে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলেই নয়, এর মূল কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা চিরায়ত মোক্ষম সময়ে ‘চোক’ করার ইতিহাস।
চাইলেই আইসিসি ইভেন্টের অনেক ম্যাচ টেনে আনা যেতে পারে এর কারণ হিসেবে। তবে সবচেয়ে তাজা স্মৃতি এক বছর আগেরই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে এক পর্যায়ে ৩০ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল মাত্র ৩০ রান। হাতে ৬ উইকেট, ক্রিজে হাইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। এই ম্যাচ কীভাবে হারা সম্ভব?
তবে দলটার নাম যে দক্ষিণ আফ্রিকা। যে অবস্থান থেকে হেরে যাওয়াটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ, তারা করে ফেলে ঠিক সেটাই। নাটকীয়ভাবে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করে আরও একবার চোখের জলে নিজেদের অনাকাঙ্ক্ষিত চোকার্স খেতাবকে বরণ করতে বাধ্য হয় প্রোটিয়াসরা।
এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগে তাই তাদের কেউই রাখেননি ফেভারিট হিসেবে। টানা সাত ম্যাচ জিতে ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার পরও এমনটা ভাবার পেছনে যুক্তি একটাই, দক্ষিণ আফ্রিকা বড় মঞ্চে জেতার দল না। চাপের মুখে, সবচেয়ে কাজের সময়ে তারা তাসের ঘরে মত ভেঙে যায়।
ফাইনালের প্রথম ইনিংসেই বজায় ছিল সেই চিত্র। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২১২ রানে আটকে দেওয়ার পর নিজেরা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৩৮ রানেই। শেষ পাঁচ উইকেট যায় স্রেফ ১২ রানে। এরপর ৭৩ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেট শিকার করে আশা ছিল টার্গেট ২০০ রানের কমেই রাখার। তবে আরও একবার বড় মঞ্চের স্নায়ুচাপ পেয়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
বোলার মিচেল স্টার্ক করে বসেন ফিফটি, খেলে ফেলেন একশর বেশি বল। আর এমনভাবে ব্যাট চালাচ্ছিলেন, যেন তাকে আউট করতেই ভুলে গেছেন রাবাদা-ইয়ানসেনরা। ফলে শেষ পর্যন্ত টার্গেট গিয়ে দাঁড়ায় ২৮২ রানে, যা লর্ডসে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জেতার জন্য ভীষণ দুরূহ এক লক্ষ্যই।
৭০ রানে দুই উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার চোক করার ভূত যেন আবার তাড়া করছে তাদের। ইনিংসের শুরুতেই টেম্বা বাভুমার দেওয়া ক্যাচ স্লিপে যদি ফেলে না দিতেন স্টিভ স্মিথ, ইতিহাস হয়ত অনুসরণ করতে চেনা চিত্রপটই। তবে সেটা আর হয়নি।
এরপরই বাভুমা আবার পেলেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট। তবে অসামান্য লড়াইয়ের মানসিকতা দেখিয়ে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে পার করে দিলেন তৃতীয় দিন। সাথে সেঞ্চুরি করা এইডেন মার্করাম ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে চতুর্থ দিনের জন্য জমা রাখেন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা।
অবশ্য দিনের শুরুতে বাভুমার ৬৬ রানে বিদায়ে সবার মনেই জেঁকে বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার চোক করার শঙ্কা। তবে গত ২৭ বছরে অজস্র হৃদয়ভঙ্গের যন্ত্রণার সাক্ষী হওয়া দলটি এবার আর ভুল করেনি। মার্করাম শেষটা না করতে পারলেও ১৩৬ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে নিশ্চিত করেন দেশের ইতিহাস গড়ার প্রেক্ষাপট।
কাইল ভেরেইনের জয়সূচক বাউন্ডারির পর বাধভাঙ্গা উল্লাসে ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোয়াড। এই দলের অধিকাংশ সদস্যই যে এরই মধ্যে তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ‘চোকার্স’ ট্যাগের তেতো স্বাদ পেয়েছেন। আর যারা পাননি, তারাও সেই শৈশব থেকে দেখে এসেছেন পূর্বসূরিদের বারবার চাপের মুখে ভেঙে পড়ার কাব্য। এই এক জয় দিয়ে যেন মুক্তি মিলল তাদের ও অতীতের সব দলেরও। অন্তত দক্ষিন আফ্রিকাকে এখন আর কেউ এই ট্যাগ দেবেন না। কারণ তাদের পরিচয় এখন একটাই, চ্যাম্পিয়ন!
হাতে ৮ উইকেটে নিয়ে ৬৯ রান প্রয়োজন, এমন সমীকরণ থেকে হারাটাই হত বেশি কঠিন কাজ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বারবার তীরে গিয়ে তরী ডোবানোর লম্বা ইতিহাসের কারণে কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তা ছিলই। দিনের শুরুতে টেম্বা বাভুমার উইকেটে আশা জাগল অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। তবে আগেরদিন সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া এইডেন মার্করাম পূর্ণতা দিলেন নিজের দুর্দান্ত ইনিংসের, দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে। প্রথমবারের মত আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরল দক্ষিণ আফ্রিকা।
লর্ডসে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮২ রানের টার্গেটে জয় তুলে নিয়েছে ৫ উইকেটে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর পর আইসিসি ইভেন্টে শিরোপার দেখা পেল প্রোটিয়াসরা। এর আগের শিরোপা ছিল ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
আগের দিন হ্যামস্ট্রিং চোট নিয়েই বীরোচিত এক ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন বাভুমা। এদিনও শুরু থেকেই দৃশ্যমান ছিল তার আঘাতের বিষয়টি। কয়েকবার বিটও হন কামিন্সের বলে। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিতেই খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় বাভুমার ৬৬ রানের অনবদ্য ইনিংস।
তবে এরপরও ম্যাচে ফিরতে হলে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল উজ্জীবিত একটি স্পেল, যা তিন পেসারের কেউই উপহার দিতে পারেননি। আগেরদিন যেখানে থেমেছিলেন, ঠিক যেন সেখানে থেকেই শুরু করা মার্করাম ছিলেন যথারীতি সাবলীল।
রানের চাপ না থাকায় ব্যাট করেন রয়েসয়েই। তবে অন্যপ্রান্তে ক্রিস্টান স্তাবস শুরু থেকেই ব্যাট করেন খোলসবন্দী থেকে। আক্রমণে ফিরেই তাকে শিকার বানান এই ইনিংসে আগে দুই উইকেট পাওয়া মিচেল স্টার্ক। বোল্ড করেন ৮ রানে।
এরপরও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ জেতার সামান্যতম আশাও জাগেনি। কারণ, ক্রমেই জয়কে নাগালের মধ্যে নিয়ে আসেন মার্করাম ও ডেভিড বেডিংহাম মিলে। একটু একটু করে দুজন মিলে চলে যান জয়ের খুব কাছাকাছি। তবে জয় থেকে মাত্র ছয় রান দূরত্বে থাকা সাজঘরে ফিরতে হয় মার্করামকে।
জস হ্যাজেলউডকে একটি চার মারার পর চেষ্টা করেছিলেন আরেকটি বাউন্ডারি হাঁকানোর, তবে বল চলে যায় সোজা মিড-উইকেটে থাকা ট্রাভিস হেডের হাতে। শেষ হয় ডানহাতি এই ব্যাটারের ১৪ চারে সাজানো ১৩৬ রানের ঝকজকে ইনিংস। এরপর অনায়াসেই বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন বেডিংহাম (২১*) ও কিপার-ব্যাটার কাইল ভেরেইনে (৭*) মিলে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েক বছর ধরেই বেড়ে চলেছে টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে নানা ট্রল-মিমের বাহার। এর কারণ কী? অনেকেই মনে করেন এর পেছনে বড় ভূমিকা ২০২৩ বিশ্বকাপের সেই বিখ্যাত অধিনায়কদের সংবাদ সম্মেলনের ছবি, যেখানে বাভুমা ক্ষনিকের জন্য ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। আবার অনেকে টেনে আনেন তার সাথে দীর্ঘকায় সতীর্থ মার্কো ইয়ানসেনের একটি ছবি, যেখানে তাদের উচ্চতার ব্যবধান ছিল রীতিমত চোখে পড়ার মত। মূল কারণ যাই হোক, ‘লর্ড বাভুমা’ নামটা অন্তত ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বেশ পরিচিতই। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান জমানায় কাউকে লর্ড বলা মানেই তিনি সবার কাছে কেবলই হাসির পাত্র মাত্র।
বাভুমার যে চরিত্র, তাতে এসবে তিনি একেবারেই কান দেওয়ার লোক নন। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে এসেছে অনেক কিংবদন্তি মাপের খেলোয়াড়। সেখানে একদিন তার নাম থাকবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে লড়াকু একজন ক্রিকেটার হিসেবে তিনি এরই মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করে ফেলেছেন অনেকবারই। সেটাও এমন সব বাঁধা অতিক্রম করে, যার সামনে পড়লে অনেকেই হয়ত খেলাই ছেড়ে দিতেন।
বাভুমা দক্ষিণ আফ্রিকার এই টেস্ট দলের অধিনায়ক, যিনি খুব যে বাজে ফর্মে আছেন, তাও নয়। নেতা হিসেবে দলকে পরিচালনা করার সহজাদ দক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন আগেই। পুরো দলের সম্মানও রয়েছে তার প্রতি বেশ। এরপরও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সময় অনেকেই বলে উঠেছেন, বাভুমা কীভাবে দলে থাকে? বাভুমা কীভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হয়?
এমন সব প্রশ্ন কেবল এক ফরম্যাটেই নয়, বাকি দুই ফরম্যাটেও বাভুমা যখনই অধিনায়কত্ব করেছেন, এই একই প্রশ্নগুলো তোলা হয়েছে তাকে নিয়ে। দল ভালো করলেও তাকে সমালোচনা করা হয়েছে অহেতুক। আর ব্যাট হাতে খারাপ সময় গেলে তো কথাই নেই। এটা ঠিক যে, দক্ষিণ আফ্রিকা দলে এখনও অনেকেই সুযোগ পান স্কিলের চেয়ে তাদের গায়ের রঙের জন্য। কারণ, নিয়মটা বোর্ডের তরফ থেকেই বেঁধে দেওয়া। তবে বাভুমা কেবল সেটার সুফল পাচ্ছেন, সেটা ভাবলে তার প্রতি হবে বড় অন্যায়ই।
তবে এই যুগে এসে লোকেরা কি ভাববে বা বলবে, সেটার সীমারেখা টানা প্রায় অসম্ভবই। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা জাতীয় দলের অধিনায়ককে লর্ড বলাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাভাবিক ঘটনা। সেখানে তাকে কেন দলে রাখা হয়, সেই প্রশ্ন তোলা তো মামুলি ব্যাপার মাত্রই। আর ১.৬২ মিটার উচ্চতার বাভুমার উচ্চতা নিয়ে হাসিঠাট্টাও তো সবারই প্রিয় বিষয়।
তবে কোহলি-স্মিথ-রুট-উইলিয়ামসন-বাবর বা নিজ দলের এইডেন মার্করামের মত ক্লাসি না হয়েও বাভুমা জানেন কীভাবে আলো কেড়ে নিতে হয়। কারণ তিনি জানেন কীভাবে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে হয় সবচেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালের তৃতীয় দিন ২৮২ রান তাড়ায় তিনি যখন নামেন, তখন ৮ উইকেট হাতে রেখেও জেতার জন্য ফেভারিট ছিল না তার দল।
তার মধ্যে চা বিরতির আগে একটি রান নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ে বাভুমার। অনেকক্ষণ ধরে নেন চিকিৎসা। তখন ধারণা করা হচ্ছিল, হয়ত আপাপত আর ব্যাটিংয়ে নামবেন না তিনি। কারণ, আঘাত নিয়ে নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে যেমন সমস্যা হবে, তিন রান হবে দুই রান, আর দুই রান হয়ে যাবে এক। অন্যদিকে ছন্দে থাকা মার্করামের ওপরও বাড়বে চাপ। তবে অবিশ্বাস্যভাবে হয়নি এর একটিও।
চা বিরতির পর বাভুমা ঠিকই নেমে গেলেন। অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের সামলালেন সাবলীল ব্যাটিংয়ে। হুক-পুল করে গেলেন নিয়মিতই। প্যাট কামিন্সকে হুক করে মারা এক ছক্কায় অনেকটাই যেন নাড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষের আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে মার্করামকে বাড়তি চাপ না দিয়ে এক-দুই রানও বের করেন দৌড়ে।
তবে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে দৌড়ানো তো চাট্টিখানি কথা নয়। প্রতিটি রান নিতেই তাই সংগ্রাম করতে হয়েছেন বাভুমাকে। প্রায়ই দেখা গেছে রান নিচ্ছেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে। চোখেমুখে ব্যথা অনুভব যে হচ্ছিল, তা ছিল দৃশ্যমান। এরপরও একটিবারের জন্য হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা চিন্তা হয়নি তার। জুটিতে মার্করামকে সঙ্গ দিয়ে পার করেছেন শতক, নিজে করেছেন ফিফটি।
অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের মরিয়া সব প্রচেষ্টা যেভাবে ওভারের পর ওভার ব্যর্থ করে সলিড ডিফেন্স করেছেন বাভুমা, সেটা ক্রিকেটার হিসেবে তার সামর্থ্যেরই একটা প্রমাণ ছিল। তিনি লর্ড নন, তিনি বিশেষ বিবেচনায় দলে জায়গা পাওয়া কেউ নন, তিনি নন-পারফর্মিং ক্যাপ্টেনও নন - ফাইনালের মঞ্চে প্রতিটি বল মোকাবেলায় বাভুমার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় যেন মিশে ছিল এই বিষয়গুলোই।
হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারাই বলতে পারবেন যে এই আঘাত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটাও কতোটা কষ্টের। সেখানে বাভুমা দুই সেশন ব্যাট করেছেন কামিন্স-স্টার্ক-হ্যাজেলউডদের সামনে, লক্ষ্যে অবিচল থেকে। ব্যাটার হিসেবে তিনি হয়ত এবি ডি ভিলিয়ার্স মাপের কেউ নন। তবে বাভুমা ক্রিকেটের সেইসব নিরব চরিত্রদের একজন, যিনি আঁধারে মশাল জালিয়ে এরপর নিজেই মিশে যানা আধারিতে।
তবে বাভুমার সামনে দুর্দান্ত এক সুযোগ এসেছে নিজেকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসার। চতুর্থ দিন যদি তার দল শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়ে বিজয়ীর বেশে, তাহলে তিনি স্থায়ীভাবেই জায়গা করে নিবেন ইতিহাসে। নিজের অবিস্মরণীয় ইনিংস তো বটেই, সাথে যে যোগ হবে দেশের ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতা অধিনায়কের বিরল সম্মানও।
তবে ‘চোকার্স’ খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকা মিরাকেল ঘটিয়ে যদি এই ফাইনাল হেরেও যায়, তবুও বাভুমা নিজেকে লর্ড থেকে ‘কিং বাভুমা’ হিসেবে রুপান্তর ঘটাতে সক্ষম হবেন। ক্যারিয়ার জুড়ে অসংখ্য লড়াই পার করে আজকের অবস্থানে আসা বাভুমার এই সম্মানটুকু তো প্রাপ্যই, তাই না?
৩ দিন আগে
১৩ দিন আগে
১৩ দিন আগে
১৩ দিন আগে
১৩ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৮ দিন আগে
১৯ দিন আগে
২০ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৬ দিন আগে
২৬ দিন আগে
২৬ দিন আগে
২৬ দিন আগে