২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ পিএম
লামিন ইয়ামাল যখন মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্পেনের হয়ে ইউরো জিতলেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল মজার সব ‘মেমে’। যেখানে বলা হত, ইয়ামাল ১৬ বছরে এটা করছেন, আর অন্য ১৬ বছর বয়সীরা তখন ফিফা গেমস খেলেই সময় পার করতে ব্যস্ত। তবে ১৪ বছর বয়সী বৈভব সুরিয়াভানসি যেহেতু উপমহাদেশের একজন, তাই আইপিএলে তার তাক লাগানো ব্যাটিং দেখে মেমেতে চলে আসছে এই বয়সে অন্য বালকদের মার্বেল খেলার গল্প। স্থান, কাল ভেদে এভাবেই একই চিত্রের উদাহারনও বদলে যায়। তবে মিল থাকে একটাই, এই অল্প বয়সেই এমন জেনারেশনাল ট্যালেন্টদের পরিণতবোধ।
এর আগে একটু বয়সের আলোচনায় যাওয়া যাক। উপমহাদেশের ক্রিকেটারেরদের বয়স নিয়ে বেশ আগে থেকেই থেকে যায় একরকম ধোঁয়াশা। কোনটা আসল বয়স, আর কোনটা যে স্রেফ সার্টিফিকেট বয়স, তা নিয়ে পুরো ক্যারিয়ারেই তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যেমন ধরুন সাবেক পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদির কথা। ১৮-তে পা দেওয়ার আগেই সেই সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড তিনি গড়েন, সেই সময়েই তার আসল বয়স ২২ বা তার চেয়েও বেশি বলে জোর গুঞ্জন।
হাল সময়ের আফগান মহাতারকা রশিদ খান তো আরেক জলন্ত উদাহারন। অফিশিয়ালি সব জায়গায় তার বয়স ২৬ দেখালেও আসল বয়সটা যে প্রায় ৩০ ছুঁইছুঁই বা তার চেয়েও বেশি, সেটা তার ভিন্ন ভিন্ন সাক্ষাৎকারে দেওয়া কথা শুনলেও আন্দাজ করা যায়। এছাড়া উপমহাদেশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে নির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে অনেক বেশি বয়সের খেলোয়াড়দের নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও হয় অহরহ।
আর ঠিক এই কারণেই ভারতের অমিত প্রতিভাবান ব্যাটার সুরিয়াভানসির অফিশিয়াল বয়স ১৪ বছর বলা হলেও তা নিয়ে বেশ আগে থেকেই চলছে আলোচনা। বিশেষ করে আইপিএলে অভিষেকের পর থেকে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আইপিলের মত তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার একটি টুর্নামেন্টে রাজস্থান রয়্যালসের মত একটি দলে তিনি যখন জায়গা পেয়ে যান, অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন তাতে বেশ। তবে যারা ভারতীয় ক্রিকেটের টুকটাক খোঁজ খবর রাখেন, তারা জানতেন, এমন কিছু হওয়াটাই বরং স্বাভাবিক।
নাহ, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স এখানে মূল বিষয় নয়। সেটা সুরিয়াভানসির ক্ষেত্রে এখনও খুব হাইলাইট করার মত জায়গা নয়। তবে যা আলোচ্য বিষয়, তা হল তিনি এই বয়সেই ভারতের অ-১৯ দলে খেলছেন। মাত্র ১২ বছর বয়সেই হয়ে গেছে রঞ্জি অভিষেক। গত জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছেন মাত্র ৫৮ বলের সেঞ্চুরি, যা যুব টেস্টের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম। এসব বলে দেয়, বিশাল স্কোর বা এসবের রেকর্ডের চেয়েও বালক বয়সেই সুরিয়াভানসি পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছেন তার পরিণতবোধ এবং আধুনিক ক্রিকেটের ব্যাপক পরিচিত শব্দ ‘ইন্টেন্ট’-এর জন্য। ফরম্যাট যাই হোক, প্রথম বল থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংটা তিনি করতে জানেন ক্লাসিক্যাল ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞা ধরে রেখেই।
আর সেই কারণেই গেল বছর আইপিলের মেগা নিলামের সময় মাত্র ১৩ বছর বয়সী সুরিয়াভানসির নাম আসতেই একটা কাড়াকাড়ি লেগে যায়। রীতিমত যুদ্ধ করে তাকে দলে নেয় রাজস্থান। দলটির মেন্টর ও সাবেক ভারত অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় প্রতিভা চেনা এবং তা ঘষামাজা করার কাজটা করেন বেশ ভালো। তিনি নিলামের আগে সুরিয়াভনসিকে ট্রায়ালে দেখেই বলেছিলেন, এই ছেলের মাঝে অবিশ্বাস্য স্কিল আছে।
তবে রঞ্জিতে, অ-১৯ দলে এবং আইপিএলে খেলার জন্য সুরিয়াভানসির মানসিকভাবে ভীষণ পরিণতবোধ রেখেছে বড় একটা ভূমিকা। তার জন্মের আগে থেকে ক্রিকেট খেলা আন্তর্জাতিক মানের বোলারদের যেভাবে পেটাচ্ছেন প্রথম বল থেকেই, সেটিকে আপনি ‘ঝড়ে বক’ এর মধ্যে চাইলেও ফেলতে পারবেন না। কোন বলটিকে কোথায় মারতে হবে, কোন বোলারকে শুরুতেই আক্রমণ করে চাপে ফেলে দিতে হবে, এই বিষয়গুলো ব্যাটাররা রপ্ত করেন খেলতে খেলতে, অভিজ্ঞতায় রিদ্ধ হয়ে।
তবে আপনি যদি হুট করে এই আইপিএলে সুরিয়াভানসির ব্যাটিং দেখেন, বলতে বাধ্য হবেন এই ছেলে নিশ্চয় কয়েক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলেছে। মাথাটা ঠিক সেভাবেই যে কাজ করে তার। সাবেক ভারত ওপেনার ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জারেকার যেমন বলেছেন,
“বয়সটা মাত্র ১৪ হলেও সুরিয়াভানসি চিন্তা করে একজন ৩০ বছর বয়সীর মত।”
গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই তাই ভারতীয় ক্রিকেটে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন সুরিয়াভানসি। আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচের প্রথম বলেই যে হাঁকিয়েছেন বিশাল এক ছক্কা। তবে আপনি যত বড় প্রতিভাবানই হন না কেন, মাত্র ১৪ বছর বয়সে যখন আপনার মার্বেল বা ইয়ামালদের মত ফিফা গেমস খেলার কথা, তখন আপনাকে আইপিএলের মত অবিশ্বাস্য কঠিন মঞ্চে নামিয়ে দেওয়া যায়… এটা একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি তখনই ভাবতে পারে, যখন আপনি প্রমাণ করতে পারেন অন্যদের চেয়ে নিজের বয়সের তুলনায় ঢের এগিয়ে থাকার সামর্থ্য।
সুরিয়াভানসি নিশ্চয় নেটে এবং অনুশীলনেও রাজস্থানকে এটা বোঝাতে পেরেছিলেন যে, তার ওপর বাজিটা ধরা যায়। প্রথম কয়েক ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা পেলেও বড় ইনিংস অবশ্য হচ্ছিল না। সাবেক ভারত ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ তাই আশঙ্কা করে বলেও ফেলেছিলেন, এক বছরের ঝলক দেখিয়ে অতীতের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের মত না আবার হারিয়ে যান সুরিয়াভানসি।
তবে তার মত প্রতিভারা তো প্রতিদিন আসেন না। এই কারণেই অন্যদের সাথে সুরিয়াভানসিদের মেলানো যায় না। শেবাগকে ভুল প্রমাণ করে তাই গুজরাটের বিপক্ষে রান তাড়ায় খেললেন বড় ইনিংস। সেটাও টর্নেডো গতিতে। ৭ চার ও ১১ ছক্কায় মাত্র ৩৮ বলে ১০১ রান করার পথে হয়েছেন আইপিলের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান। আর বয়সের হিসেবে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টির ইতিহাসের কনিষ্ঠ সেঞ্চুরি করা ব্যাটারের নাম এখন সুরিয়াভানসি। পুরো ইনিংসে যে দাপট দেখিয়েছেন, ব্যাট সুইং করেছেন, স্লগ করেছেন, নিখুঁত টাইমিং দেখিয়েছেন, তা অতিমানবীয় কিছুই ছিল।
হ্যাঁ, এই ইনিংস খেলার পথে বেশ কিছু শটে ভাগ্যের সহায়তাও তিনি পেয়েছেন। অল্পের জন্য ক্যাচ আউট হতে পারতেন কয়েকবারই। তবে এটাই তো ক্রিকেট। আর ভাগ্য তো সাহসীদের পক্ষেই থাকে। আর সুরিয়াভানসি সেই সাহসের শিক্ষাটা পেয়েছেন পরিবার থেকেই। ভারতীয় মিডিয়ার খবরে যা এসেছে, তাতে জানা যায় তার বাবা একজন কৃষক ও পার্টটাইম সাংবাদিক ছিলেন।
তবে ছেলের ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসাকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য তিনি কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, যা সুরিয়াভানসি নিজেই বলেছেন। নিয়ম করে ছেলেকে অনুশীলন করতে নিয়ে যাওয়া, অপেক্ষা করে বসে থাকার কাজটা তিনি করে গেছেন। বিহারের মত জায়গার একটা দরিদ্র পরিবারের জন্য এটা অনেক বড় একটা ঝুঁকি। তবে সন্তানের মঙ্গলের জন্য বাবারা তো হরমেশাই এমন ত্যাগ স্বীকার করেই থাকেন…
অবশ্য তিনি সেই সাহসটা করতে পেরেছিলেন বড় ছেলের জন্য, যিনি ভাইয়ের স্বপ্নকে লালন করে দায়িত্ব নেন পরিবারের। নেমে যান আয় উপার্জনে। বাবা-ভাইয়ের এমন অবদানে আড়াল করার সুযোগ নেই সুরিয়াভানসির মায়ের গল্প। দিনের পর দিন তিনি মাত্র তিন ঘণ্টা করে ঘুমিয়েছেন, রাত ২টায় যখন সবাই ঘুমে কাতর, তখন উঠে ছেলের জন্য খাবার প্রস্তুত করতে নেমে গেছেন, যাতে ভোরে ছেলেটা বের হওয়ার আগে সময় মত খাবারটা টেবিলে পায়…
সুরিয়াভানসির মা-বাবা, ভাই তার জন্য এসব যখন করেছেন, তখন তাদের কল্পনাতে ছিল না আজকের দিনের চিত্রটা। হয়ত ছিল। তবে সেখানে যে ছিল স্বপ্ন বাস্তবে রুপ হওয়ার চিন্তাও। এসবের পরও তারা একটি বালকের স্বপ্নকে পরিবার হিসেবে ধারণ করেছেন, সাহস করেছেন একসাথে এগিয়ে যাওয়ার।
কাছ থেকে দেখার কারণে সেই সাহসটা সুরিয়াভানসির মধ্যেও অনুদিত হয়ে গেছে। ফলে, দুনিয়ার বাঘা বাঘা বোলারদের বিপক্ষে মাঠ ভর্তি দর্শকের চাপেও তিনি ভেঙে পড়েন না। চোখে চোখ রেখে তাদের উল্টো আক্রমণ করেন, চার-ছক্কায় ওড়ান বারবার। নামও তাই জুটে গেছে 'বেবি বস'! ভবিষ্যৎ তাকে কোথায় নিয়ে যায়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই আইপিএলে সুরিয়াভানসি দেখিয়ে দিয়েছেন, স্রেফ বয়সের দাঁড়িপাল্লায় যদি মাপতে যান, তাহলে বড্ড ভুলই করবেন বোলাররা। সেটা আজকেও, আগামীতেও…
No posts available.
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩:২২ পিএম
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
২০২৫ নারী ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ১৫ সদস্যের দলের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটার অ্যালিসা হিলি।
২০২২ বিশ্বকাপজয়ী দলের ১০ খেলোয়াড় এবারও অস্ট্রেলিয়া দলে জায়গা ধরে রেখেছে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলবেন তরুণ ব্যাটার জর্জিয়া ভল। হাঁটুর চোট কাটিয়ে দলে ফিরেছেন বাঁ-হাতি স্পিনার সোফি মোলিনিউক্স।
অস্ট্রেলিয়া যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত বললেন অধিনায়ক হিলি,
‘ভারতে ক্রিকেট খেলা সবসময় দারুণ অভিজ্ঞতা। ভিন্ন কন্ডিশনে চ্যালেঞ্জ থাকবে, তবে আমাদের দল যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।'
আরও পড়ুন
ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে গেলেন লাউতারো |
![]() |
৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম সংস্করণ। এবারের টুর্নামেন্টের আয়োজক দেশ যৌথভাবে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ১ অক্টোবর ইন্দোরে নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ অভিযান।
বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দল: অ্যালিসা হিলি (অধিনায়ক), ডার্সি ব্রাউন, অ্যাশ গার্ডনার, কিম গার্থ, গ্রেস হ্যারিস, আলানা কিং, ফিবি লিচফিল্ড, তাহলিয়া ম্যাকগ্রা, সোফি মোলিনিউক্স, বেথ মুনি, এলিস পেরি, মেগান শুট, আনাবেল সাদারল্যান্ড, জর্জিয়া ভল, জর্জিয়া ওয়্যারহ্যাম।
নিজের ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণে কিছুদিন আগেই ইতালিকে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে তুলেছিলেন সাবেক অজি ব্যাটার জো বার্নস। এবার নিজের মায়ের দেশকে বিশ্বকাপে তোলার লক্ষ্যে অবসর ভেঙে আবারও মাঠে ফিরছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক তারকা ব্যাটার রস টেলর। এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া- প্যাসিফিক অঞ্চলের বাছাইপর্বে সামোয়ার হয়ে মাঠে নামবেন তিনি।
সামোয়ার হয়ে খেলার বিষয়টি টেলর নিজেই জানিয়েছেন নিজেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে সাবেক কিউই তারকা লিখেছেন,
'এটা এখন অফিশিয়াল। গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমি নীল জার্সি গায়ে সামোয়ার হয়ে মাঠে নামছি। এটা শুধু আমার প্রিয় খেলায় ফেরার বিষয় নয়, বরং আমার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, গ্রাম আর পরিবারকে প্রতিনিধিত্ব করার বিশাল সম্মান।'
তিন সংস্করণ মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৪৫০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন টেলর, করেছেন ১৮১৯৯ রান। ২০২১ সালে কিউইদের ঐতিহাসিক টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলেরও প্রতিনিধি। ২০২২ সালের এপ্রিলে নিউজিল্যান্ডের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তিন বছরের অপেক্ষার পর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক দলে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন এই ব্যাটার।
আরও পড়ুন
ইংল্যান্ডের মাঠে ২৭ বছরের গেরো কাটল দক্ষিণ আফ্রিকা |
![]() |
কোচিং পেশার দিকেই এগোচ্ছিলেন, ৪১ বছর বয়সী টেলর সিদ্ধান্ত বদলের ব্যাপারে বললেন,
'আমি দারুণ উচ্ছ্বসিত। কয়েক মাস ধরে এই বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন ছিল। তবে আজ দল ঘোষণা হয়েছে, তাই জানাতে হলো। ভেবেছিলাম কোচিংয়ের দিকেই এগোব, খেলব সেটা ভাবিনি। সুযোগ এল, আর আমি সামোয়ার হয়ে সেরাটা দেওয়ার অপেক্ষায় আছি।'
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচ খেলেননি টেলর। দ্রুত ছন্দে ফেরা চ্যালেঞ্জ হতে পারে বললেন তিনি,
‘অবশ্যই আগের মতো আর খেলা হয়নি। তবে কিছু টুর্নামেন্ট খেলেছি, তাই একেবারে তিন-চার বছর বাদ পড়িনি। তবুও দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। গত এক-দুই মাস অনুশীলন করেছি, শরীর কেমন সাড়া দেয় দেখেছি। বয়স ৪১, তাই আগের মতো নেই, তবে আশা করি সামোয়ার জন্য যথেষ্ট ভালো হবে।'
আগামী ৮ অক্টোবর ওমানে নিজেদের কোয়ালিফায়ার মিশন শুরু করবে সামোয়া। প্রতিপক্ষ হিসেবে তাদের গ্রুপে আছে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি।
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে ইংলিশদের হারিয়ে ২৭ বছরের গেরো কাটল প্রোটিয়ারা। ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম ইংল্যান্ডের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ জিতল তারা।
লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ৩৩০ রান স্কোরে জমা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ৫০ ওভারে ৯ উইকটে ৩২৫ রান করতে সক্ষম হয় ইংলিশরা।
৩৩১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ইনিংসের প্রথম বলে বোল্ড হন জেমি স্মিথ। দ্বিতীয় উইকেটে জো রুট ও ওপেনার বেন ডাকেট ৬৫ রানের জুটি গড়েন। তবে স্বভাবসুলব ব্যাটিং করতে পারেননি ডাকেট ১৩তম ওভারে ফেরেন ৩৩ বলে ১৪ রানে।
তৃতীয় উইকেটে জ্যাকব বেথেল ও রুট ৭৭ রানের আরেকটি জুটি গড়েন। ২৮ বলে ফিফটি করে রানের চাকা সচল রাখেন বেথেল, রুট ফিফটি করেন ৫৮ বলে। তবে পরপর দুই ওভারে দুই থিতু হওয়ার ব্যাটার আউট হলে বিপর্যয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। বেথেল ৪০ বলে ৫৮ ও রুট ৭২ বলে করেন ৬১ রান।
পঞ্চম উইকেটে ৬৯ রান যোগ করেন অধিনায়ক হ্যারি ব্রুক ও জস বাটলার। ভালো শুরু পেলেও অধিনায়ক ব্রুক ৩৩ রান করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। বাটলার আউট হন ৬১ রানে। সিরিজে সমতা ফেরাতে শেষ ছয় ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৬৪ রান।
উইল জ্যাকস ও জফরা আর্চার চেষ্টা করলেও দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি। জ্যাকস ৩৩ বলে ৩৯ রান করে আউট হন, আর্চার ১৪ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন । প্রোটিয়াদের হয়ে নান্দ্রে বার্গার ৩ উইকেট। কেশভ মহারাজ নেন ২ উইকেট।
তার আগে টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ইংল্যান্ড। ওপেনার ম্যাথু ব্রিটজকের ৮৫, ট্রিস্টান স্টাবসের ৫৮, এইডেন মার্করামের ৪৯, এবং ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের ২০ বলে ৪২ রানের ঝোড়ো ইনিংসের কল্যাণে ৩৩০ রান সংগ্রহ করে অতথিরা।
ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ ইনিংসে টান পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েছেন ব্রিটজকে। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন আর্চার। ২ উইকেট নেন আদিল রশিদ। আগামী পরশু সাউদাম্পটনে ধবলধোলাই এড়াতে সিরিজে শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।
এক ম্যাচ পর জয়ে ফিরল পাকিস্তান। ফাখার জামানের ঝড়ো ফিফটির পর আবরার আহমেদের লেগ স্পিন জাদুতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠে গেল পাকিস্তান।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৩১ রানে হারায় পাকিস্তান। আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৭১ রান করে তারা। জবাবে ৭ উইকেটে ১৪০ রানে থামে স্বাগতিকরা।
চার ম্যাচে তিন জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত হলো পাকিস্তানের। আরব আমিরাত হেরে যাওয়ায় তিন ম্যাচে দুই জয় পাওয়া আফগানিস্তানের ফাইনালের টিকেটও চূড়ান্ত৷ স্বাগতিক দলটি তিন ম্যাচে হেরেছে সবকটি।
প্রথম রাউন্ডের শেষ টি-টোয়েন্টিতে নিয়মরক্ষার ম্যাচে শুক্রবার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। পরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ফাইনাল হবে রোববার।
বৃহস্পতিবার রাতের ম্যাচে টস জিতে শুরুতে তেমন সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্তান। ১২ ওভারের মধ্যে ৮০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। তবে একপ্রান্ত আগলে রাখেন ফাখার।
পরে মোহাম্মদ নওয়াজকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন বাঁহাতি মারকুটে ব্যাটার। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৫১ বলে ৯১ রান যোগ করেন ফাখার ও নওয়াজ।
১০ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ বলে ৭৭ ইনিংস খেলেন ফাখার। আর নওয়াজের ব্যাট থেকে আসে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৭ রান।
আমিরাতের পক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রানে ২ উইকেট নেন হায়দার আলি।
পরে লেগ স্পিনের জাদু দেখান আবরার। তার ঘূর্ণির কোনো জবাব দিতে পারেননি আমিরাতের ব্যাটারর। আলিশান শারাফু ছাড়া আর কেউ উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি।
৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন আবরার। এটিই তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং।
ওপেনিংয়ে নেমে ১৭তম ওভার পর্যন্ত খেলেন শারাফু। ৪টি করে চার-ছক্কায় ৫১ বলে ৬৮ রান করেন তিনি। শেষ দিকে ধ্রুব পারাশার ১৫ বলে ১৮ ও হায়দার আলি ৯ বলে ১২ রান করে পরাজয়ের ব্যবধান কমান।
ম্যাথু ব্রিটস্কির ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুটা স্বপ্নের মতো হয়েছে বললেও হয়তো পুরোপুরি ঠিক হবে না। কারণ এতটা ভালো শুরুর স্বপ্ন হয়তো ব্রিটস্কি নিজেও দেখেননি। অভিষেকের পর থেকে টানা পাঁচ ম্যাচে ফিফটি করে একাধিক বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার।
চোটের কারণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে খেলতে পারেননি ব্রিটস্কি। দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে ফিরেই তিনি খেললেন ৭৭ বলে ৮৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস। তাতেই অনন্য কীর্তিতে নাম উঠে গেছে ২৬ বছর বয়সী ব্যাটারের।
ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে নিজের প্রথম পাঁচ ইনিংসেই পঞ্চাশ পেরিয়েছেন ব্রিটস্কি। এত দিন ধরে রেকর্ডটি ছিল ভারতের নভোজিত সিং সিধু ও নেদারল্যান্ডসের টম কুপারের। দুজনই নিজেদের প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতে খেলেছিলেন পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস।
গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে অভিষেক হয় ব্রিটস্কির। প্রথম ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৮ বলে ১৫০ রান করে তিনি গড়েন ওয়ানডে অভিষেকে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড।
এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে করেন ৮৪ বলে ৮৩ রান। এরপর আবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে খেলেন দুই ওয়ানডে। ওই দুই ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৬ বলে ৫৭ ও ৭৮ বলে ৮৮ রানের ইনিংস। আর এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করলেন ৮৫ রান।
সব মিলিয়ে প্রথম পাঁচ ম্যাচে ৯২.৬০ গড় ও ১০৪.৫১ স্ট্রাইক রেটে ব্রিটস্কির সংগ্রহ ৪৬3 রান। ওয়ানডে ইতিহাসে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ ম্যাচে এত বেশি রান করতে পারেননি আর কেউ।
এখানেও টম কুপারের রেকর্ড ভেঙেছেন ব্রিটস্কি। নেদারল্যান্ডসের সাবেক তারকা ব্যাটার নিজের প্রথম পাঁচ ম্যাচে করেছিলেন ৩৭৪ রান। এছাড়া তিনশর বেশি রানের নজির আছে আরও ৭ জনের। তবে চারশর বেশি করা একমাত্র ব্যাটার ব্রিটস্কিই।
এছাড়া সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে ফিফটি করা চতুর্থ ব্যাটার ব্রিটস্কি। তার আগে এই কীর্তি গড়েছেন জন্টি রোডস, কুইন্টন ডি কক (দুবার) ও হেনরিখ ক্লাসেন।