২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ পিএম
লামিন ইয়ামাল যখন মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্পেনের হয়ে ইউরো জিতলেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল মজার সব ‘মেমে’। যেখানে বলা হত, ইয়ামাল ১৬ বছরে এটা করছেন, আর অন্য ১৬ বছর বয়সীরা তখন ফিফা গেমস খেলেই সময় পার করতে ব্যস্ত। তবে ১৪ বছর বয়সী বৈভব সুরিয়াভানসি যেহেতু উপমহাদেশের একজন, তাই আইপিএলে তার তাক লাগানো ব্যাটিং দেখে মেমেতে চলে আসছে এই বয়সে অন্য বালকদের মার্বেল খেলার গল্প। স্থান, কাল ভেদে এভাবেই একই চিত্রের উদাহারনও বদলে যায়। তবে মিল থাকে একটাই, এই অল্প বয়সেই এমন জেনারেশনাল ট্যালেন্টদের পরিণতবোধ।
এর আগে একটু বয়সের আলোচনায় যাওয়া যাক। উপমহাদেশের ক্রিকেটারেরদের বয়স নিয়ে বেশ আগে থেকেই থেকে যায় একরকম ধোঁয়াশা। কোনটা আসল বয়স, আর কোনটা যে স্রেফ সার্টিফিকেট বয়স, তা নিয়ে পুরো ক্যারিয়ারেই তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যেমন ধরুন সাবেক পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদির কথা। ১৮-তে পা দেওয়ার আগেই সেই সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড তিনি গড়েন, সেই সময়েই তার আসল বয়স ২২ বা তার চেয়েও বেশি বলে জোর গুঞ্জন।
হাল সময়ের আফগান মহাতারকা রশিদ খান তো আরেক জলন্ত উদাহারন। অফিশিয়ালি সব জায়গায় তার বয়স ২৬ দেখালেও আসল বয়সটা যে প্রায় ৩০ ছুঁইছুঁই বা তার চেয়েও বেশি, সেটা তার ভিন্ন ভিন্ন সাক্ষাৎকারে দেওয়া কথা শুনলেও আন্দাজ করা যায়। এছাড়া উপমহাদেশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে নির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে অনেক বেশি বয়সের খেলোয়াড়দের নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও হয় অহরহ।
আর ঠিক এই কারণেই ভারতের অমিত প্রতিভাবান ব্যাটার সুরিয়াভানসির অফিশিয়াল বয়স ১৪ বছর বলা হলেও তা নিয়ে বেশ আগে থেকেই চলছে আলোচনা। বিশেষ করে আইপিএলে অভিষেকের পর থেকে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আইপিলের মত তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার একটি টুর্নামেন্টে রাজস্থান রয়্যালসের মত একটি দলে তিনি যখন জায়গা পেয়ে যান, অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন তাতে বেশ। তবে যারা ভারতীয় ক্রিকেটের টুকটাক খোঁজ খবর রাখেন, তারা জানতেন, এমন কিছু হওয়াটাই বরং স্বাভাবিক।
নাহ, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স এখানে মূল বিষয় নয়। সেটা সুরিয়াভানসির ক্ষেত্রে এখনও খুব হাইলাইট করার মত জায়গা নয়। তবে যা আলোচ্য বিষয়, তা হল তিনি এই বয়সেই ভারতের অ-১৯ দলে খেলছেন। মাত্র ১২ বছর বয়সেই হয়ে গেছে রঞ্জি অভিষেক। গত জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছেন মাত্র ৫৮ বলের সেঞ্চুরি, যা যুব টেস্টের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম। এসব বলে দেয়, বিশাল স্কোর বা এসবের রেকর্ডের চেয়েও বালক বয়সেই সুরিয়াভানসি পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছেন তার পরিণতবোধ এবং আধুনিক ক্রিকেটের ব্যাপক পরিচিত শব্দ ‘ইন্টেন্ট’-এর জন্য। ফরম্যাট যাই হোক, প্রথম বল থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংটা তিনি করতে জানেন ক্লাসিক্যাল ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞা ধরে রেখেই।
আর সেই কারণেই গেল বছর আইপিলের মেগা নিলামের সময় মাত্র ১৩ বছর বয়সী সুরিয়াভানসির নাম আসতেই একটা কাড়াকাড়ি লেগে যায়। রীতিমত যুদ্ধ করে তাকে দলে নেয় রাজস্থান। দলটির মেন্টর ও সাবেক ভারত অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় প্রতিভা চেনা এবং তা ঘষামাজা করার কাজটা করেন বেশ ভালো। তিনি নিলামের আগে সুরিয়াভনসিকে ট্রায়ালে দেখেই বলেছিলেন, এই ছেলের মাঝে অবিশ্বাস্য স্কিল আছে।
তবে রঞ্জিতে, অ-১৯ দলে এবং আইপিএলে খেলার জন্য সুরিয়াভানসির মানসিকভাবে ভীষণ পরিণতবোধ রেখেছে বড় একটা ভূমিকা। তার জন্মের আগে থেকে ক্রিকেট খেলা আন্তর্জাতিক মানের বোলারদের যেভাবে পেটাচ্ছেন প্রথম বল থেকেই, সেটিকে আপনি ‘ঝড়ে বক’ এর মধ্যে চাইলেও ফেলতে পারবেন না। কোন বলটিকে কোথায় মারতে হবে, কোন বোলারকে শুরুতেই আক্রমণ করে চাপে ফেলে দিতে হবে, এই বিষয়গুলো ব্যাটাররা রপ্ত করেন খেলতে খেলতে, অভিজ্ঞতায় রিদ্ধ হয়ে।
তবে আপনি যদি হুট করে এই আইপিএলে সুরিয়াভানসির ব্যাটিং দেখেন, বলতে বাধ্য হবেন এই ছেলে নিশ্চয় কয়েক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলেছে। মাথাটা ঠিক সেভাবেই যে কাজ করে তার। সাবেক ভারত ওপেনার ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জারেকার যেমন বলেছেন,
“বয়সটা মাত্র ১৪ হলেও সুরিয়াভানসি চিন্তা করে একজন ৩০ বছর বয়সীর মত।”
গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই তাই ভারতীয় ক্রিকেটে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন সুরিয়াভানসি। আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচের প্রথম বলেই যে হাঁকিয়েছেন বিশাল এক ছক্কা। তবে আপনি যত বড় প্রতিভাবানই হন না কেন, মাত্র ১৪ বছর বয়সে যখন আপনার মার্বেল বা ইয়ামালদের মত ফিফা গেমস খেলার কথা, তখন আপনাকে আইপিএলের মত অবিশ্বাস্য কঠিন মঞ্চে নামিয়ে দেওয়া যায়… এটা একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি তখনই ভাবতে পারে, যখন আপনি প্রমাণ করতে পারেন অন্যদের চেয়ে নিজের বয়সের তুলনায় ঢের এগিয়ে থাকার সামর্থ্য।
সুরিয়াভানসি নিশ্চয় নেটে এবং অনুশীলনেও রাজস্থানকে এটা বোঝাতে পেরেছিলেন যে, তার ওপর বাজিটা ধরা যায়। প্রথম কয়েক ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা পেলেও বড় ইনিংস অবশ্য হচ্ছিল না। সাবেক ভারত ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ তাই আশঙ্কা করে বলেও ফেলেছিলেন, এক বছরের ঝলক দেখিয়ে অতীতের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের মত না আবার হারিয়ে যান সুরিয়াভানসি।
তবে তার মত প্রতিভারা তো প্রতিদিন আসেন না। এই কারণেই অন্যদের সাথে সুরিয়াভানসিদের মেলানো যায় না। শেবাগকে ভুল প্রমাণ করে তাই গুজরাটের বিপক্ষে রান তাড়ায় খেললেন বড় ইনিংস। সেটাও টর্নেডো গতিতে। ৭ চার ও ১১ ছক্কায় মাত্র ৩৮ বলে ১০১ রান করার পথে হয়েছেন আইপিলের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান। আর বয়সের হিসেবে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টির ইতিহাসের কনিষ্ঠ সেঞ্চুরি করা ব্যাটারের নাম এখন সুরিয়াভানসি। পুরো ইনিংসে যে দাপট দেখিয়েছেন, ব্যাট সুইং করেছেন, স্লগ করেছেন, নিখুঁত টাইমিং দেখিয়েছেন, তা অতিমানবীয় কিছুই ছিল।
হ্যাঁ, এই ইনিংস খেলার পথে বেশ কিছু শটে ভাগ্যের সহায়তাও তিনি পেয়েছেন। অল্পের জন্য ক্যাচ আউট হতে পারতেন কয়েকবারই। তবে এটাই তো ক্রিকেট। আর ভাগ্য তো সাহসীদের পক্ষেই থাকে। আর সুরিয়াভানসি সেই সাহসের শিক্ষাটা পেয়েছেন পরিবার থেকেই। ভারতীয় মিডিয়ার খবরে যা এসেছে, তাতে জানা যায় তার বাবা একজন কৃষক ও পার্টটাইম সাংবাদিক ছিলেন।
তবে ছেলের ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসাকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য তিনি কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, যা সুরিয়াভানসি নিজেই বলেছেন। নিয়ম করে ছেলেকে অনুশীলন করতে নিয়ে যাওয়া, অপেক্ষা করে বসে থাকার কাজটা তিনি করে গেছেন। বিহারের মত জায়গার একটা দরিদ্র পরিবারের জন্য এটা অনেক বড় একটা ঝুঁকি। তবে সন্তানের মঙ্গলের জন্য বাবারা তো হরমেশাই এমন ত্যাগ স্বীকার করেই থাকেন…
অবশ্য তিনি সেই সাহসটা করতে পেরেছিলেন বড় ছেলের জন্য, যিনি ভাইয়ের স্বপ্নকে লালন করে দায়িত্ব নেন পরিবারের। নেমে যান আয় উপার্জনে। বাবা-ভাইয়ের এমন অবদানে আড়াল করার সুযোগ নেই সুরিয়াভানসির মায়ের গল্প। দিনের পর দিন তিনি মাত্র তিন ঘণ্টা করে ঘুমিয়েছেন, রাত ২টায় যখন সবাই ঘুমে কাতর, তখন উঠে ছেলের জন্য খাবার প্রস্তুত করতে নেমে গেছেন, যাতে ভোরে ছেলেটা বের হওয়ার আগে সময় মত খাবারটা টেবিলে পায়…
সুরিয়াভানসির মা-বাবা, ভাই তার জন্য এসব যখন করেছেন, তখন তাদের কল্পনাতে ছিল না আজকের দিনের চিত্রটা। হয়ত ছিল। তবে সেখানে যে ছিল স্বপ্ন বাস্তবে রুপ হওয়ার চিন্তাও। এসবের পরও তারা একটি বালকের স্বপ্নকে পরিবার হিসেবে ধারণ করেছেন, সাহস করেছেন একসাথে এগিয়ে যাওয়ার।
কাছ থেকে দেখার কারণে সেই সাহসটা সুরিয়াভানসির মধ্যেও অনুদিত হয়ে গেছে। ফলে, দুনিয়ার বাঘা বাঘা বোলারদের বিপক্ষে মাঠ ভর্তি দর্শকের চাপেও তিনি ভেঙে পড়েন না। চোখে চোখ রেখে তাদের উল্টো আক্রমণ করেন, চার-ছক্কায় ওড়ান বারবার। নামও তাই জুটে গেছে 'বেবি বস'! ভবিষ্যৎ তাকে কোথায় নিয়ে যায়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই আইপিএলে সুরিয়াভানসি দেখিয়ে দিয়েছেন, স্রেফ বয়সের দাঁড়িপাল্লায় যদি মাপতে যান, তাহলে বড্ড ভুলই করবেন বোলাররা। সেটা আজকেও, আগামীতেও…
৩০ এপ্রিল ২০২৫, ৬:১১ পিএম
৩০ এপ্রিল ২০২৫, ৪:৪৫ পিএম
দিনের শুরুতেই ম্যাচের লাগাম স্পষ্টভাবে ছিল না কোনো দলের হাতে। তবে অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে লড়িয়ে এক ইনিংসে ক্রমেই বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেলেন মিরাজ, করলেন দারুণ এক শতক। তাতে বড় একটা লিড পেয়ে যাওয়া বাংলাদেশ আর দাঁড়ানোর সুযোগ দিল না জিম্বাবুয়েকে। ব্যাটের পর বল হাতেও বাজিমাত করা মিরাজ পেলেন ফাইফারের দেখা, যা স্বাগতিকদের সাত ম্যাচ পর এনে দিল টেস্ট জয়।
চট্টগ্রামে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে ইনিংস ও ১০৬ রানে। সিরিজ ড্র হয়েছে ১-১ স্কোরলাইনে।
দ্বিতীয় দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম মিলে সকালের প্রথম ঘণ্টা কাটিয়ে দেন নির্বিঘ্নেই। তুলনামূলক ইতিবাচক ব্যাটিং করা মিরাজ শুরু থেকেই মন দেন দ্রুত রান তোলায়। প্রায় প্রতি ওভারেই হাঁকান বাউন্ডারি। সময়ের সাথে তাইজুলও কিছু রান বের করছিলেন। তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি বেশি।
পুরো ম্যাচে দারুণ বল করা ভিনসেন্ট মাসেকেসার বলে স্টাম্পড হওয়ার আগে তাইজুলের ব্যাট থেকে আসে ৩ চারে ২০ রান। এরপরই শুরু হয় মিরাজ ও তানজিমের সেই প্রতিরোধ। অন্য প্রান্তে সঙ্গীর ব্যাটে আস্থা রেখে ফিফটি পেরিয়ে যাওয়ার পরও মিরাজ হাঁটেননি আগ্রাসনের দিকে। বরং দুজনেই মন দেন দেখেশুনে খেলে রান বের করার।
তাতে ধীরে ধীরে বড় হয় জুটি, বাড়তে থাকে বাংলাদেশের লিড আর স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচে ফেরার আশায় থাকা জিম্বাবুয়েকে ভাসায় হতাশায়। প্রথম ১৯ বলে ২ রান করা তানজিম মাসেকেসাকে ছক্কা মেরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার আভাস দেন। সেট হয়ে এরপর ভালোভাবেই মিরাজকে সঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস বড় করার কাজটা সহজ করেন এই ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অভিষিক্ত তানজিম।
আশির ঘরে মাসেকেসার এক ওভারে দুইবার অল্পের জন্য আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান মিরাজ। একবার হতে পারতেন ক্যাচ আউট, আরেকবার রিভিউ নিয়ে সফল হন এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্তে। এরপর স্বাচ্ছন্দ্যেই পা রাখেন নব্বইয়ের ঘরে। আরেক প্রান্তে তানজিমও ছিলেন ফিফটির পথে। তবে ৯ রানের জন্য হতাশ হতে হয় তাকে।
তবে তার আগে উপহার দেন নবম উইকেটে ৯৬ রানের জুটি। এরপর দেখার বিষয় ছিল মিরাজ কতোটা টেনে নিতে পারেন নিজের ও দলের ইনিংস। তানজিম ফিফটি মিস করলেও মিরাজ আর সেই ভুল করেননি। তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। শেষ ব্যাটার হিসেবে মাসেকেসার বলে স্টাম্পড হন, তার আগে নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ১০৪ রান, যা তিনি সাজান ১১ চার ও এক ছক্কায়। ১১৫ রানে ৫ উইকেট নেন লেগ স্পিনার মাসেকেসা। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৪৪৪ রানে।
২১৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা জিম্বাবুয়ে টার্নিং উইকেটে খাবি খায় শুরু থেকেই। দুই প্রান্ত থেকে মিরাজ ও তাইজুলকে আক্রমণে এনে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার মঞ্চ সাজান শান্ত, যা দুজন মিলে সামাল দেন দৃঢ়তার সাথে।
তাইজুল একপ্রান্তে নিজের কাজটা করে যান নিয়ম মেনেই। তবে এই ইনিংসে তাকে পার্শ্বচরিত্র বানিয়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামান মিরাজই। অন্যপ্রান্তে আসা-যাওয়ার মিছিলে নীরব প্রতিরোধ জানিয়ে একাই শেষ পর্যন্ত লড়ে যান বেন কারান। অভিজ্ঞ এই ওপেনারের কারণেই মূলত ম্যাচ গড়ায় দিনের শেষ ভাগ পর্যন্ত।
নবম ব্যাটার হিসেবে তার আউটের আগ পর্যন্ত ফলাফল ছাপিয়ে মূল বিষয় ছিল ম্যাচ চতুর্থ দিনে গড়ায় কিনা। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা আর হতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। তাতে ১১১ রানেই প্যাকড হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
মাত্র ৩২ রানে পাঁচ উইকেট নেন মিরাজ। প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেট নেওয়া তাইজুল শিকার করেন তিন উইকেট। আর আরেক স্পিনার নাঈম হাসান পান একটি উইকেট। অন্যটি হয় রান আউট।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাতারাতি ইন্তার মিলানের চিত্র বদলে গেছে। ট্রেবল জয়ের লড়াইয়ে থাকা দলটির সামনে শঙ্কা শিরোপাহীন থাকারও। গেল সাত দিনে তিন ম্যাচ হেরে টালমাটাল অবস্থায় সেরি আ ক্লাবটি এখন খেলতে ফর্মে থাকা বার্সেলোনার বিপক্ষে। শেষ চারের মহারণের আগে ইন্তার কোচ সিমোন ইনজাগি তাই দলকে দেখতে চান পুরবো ছন্দে। আর সেটা করতে হলে কঠিন সপ্তাহটি ভুলে যেতে হবে বলেই মনে হচ্ছে তার।
বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে প্রথম লেগে মাঠে নামবে ইন্তার। আর এই ম্যাচের আগে ২০১৭ সালের পর প্রথমবার টানা তিন ম্যাচ হেরেছে মিলানের ক্লাবটি। কোপ্পা ইতালিয়া থেকে বাদ পড়ার পর সেরি আয় দুই ম্যাচ হেরে পয়েন্ট টেবিলে নেমে গেছে দুইয়ে।
এক সপ্তাহ আগে একটি ট্রেবল জয়ের আশায় থাকা একটা দলের জন্য এটা বড় ধাক্কাই। বার্সেলোনা ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য ইনজাগি এরপরও ইতিবাচকই থাকার চেষ্টা করলেন। “গত সপ্তাহের সব কিছু ভুলে যান। গত চার বছর ধরে এই খেলোয়াড়রা দুর্দান্ত কাজ করছে এবং তারা সেটা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। এক সপ্তাহের বাজে ফলাফল তা মুছে দিতে পারে না। আমাদের জন্য এটা দারুণ একটা মৌসুম ছিল। আমরা শেষ তিনটি ম্যাচ বিশ্লেষণ করেছি, আমাদের আরও ভালো করতে হবে।”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সাম্প্রতিক সময়ে ইন্তারের রয়েছে ভালো ইতিহাস। ২০২৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে রানার্সআপ হয় ক্লাবটি। এই প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয় না হলেও ইনজাগির হাত ধরে যিনি একটি সেরি আ এবং দুটি কোপ্পা ইতালিয়া জিতেছে।
টানা তিন ম্যাচ হেরে বেকায়দায় পড়ে গেলেও দল নিয়ে গর্বিত ইনজাগি। “গত সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা প্রতিটি শিরোপার জন্য লড়াই করছিলাম, যেখানে কেউ কেউ বলেছিল যে ইতালিয়ান লিগে শীর্ষ চারে থাকাই কঠিন হবে। আপনি আমাকে এই ছেলেদের এবং দল নিয়ে কোনো খারাপ কথা বলতে শুনবেন না।”
মালিকানা নিয়ে জটিলতায় লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে (এলপিএল) ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ছিটকে যাওয়ার ধারা এবারও অব্যাহত রয়েছে। ফলে নতুন আসরে অংশ নেওয়া হচ্ছে না দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি জাফনা কিংস এবং কলম্বো স্ট্রাইকার্সের। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) এই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।
এলপিএলের পঞ্চম বছরে এসে এখনও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে নিয়ে একটা কাঠামোতে আসতে পারেনি এসএলসি। প্রথম আসরে অংশ নেওয়া মূল পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের মধ্যে একটিও এখন এই টুর্নামেন্টের অংশ নয়। এক মালিকানায় থাকা জাফনা কিংসই ছিল সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে টিকে থাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি, যারা দ্বিতীয় মৌসুম থেকেই এলপিএলের অংশ ছিল।
জাফনা ফ্র্যাঞ্চাইজির বাদ পড়ার অর্থ হল, চারটি টুর্নামেন্টে তিনটিতে জেতা দলটি এখন খেলবে তৃতীয় মালিকানার অধীনে। আর কলম্বো ফ্র্যাঞ্চাইজি পাবে চতুর্থ মালিকানায়। এর আগে ছিল কলম্বো কিংস এবং কলম্বো স্টার্স নামে।
এই দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি বাদ পড়ায় এলপিএলে এখন প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকই নতুন। অন্য তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি গল মার্ভেলস, ড্যাম্বুল্লা সিক্সার্স এবং ক্যান্ডি ফ্যালকনস-এর মালিকরা গত বছর নিজ নিজ দলের সাথে যুক্ত হন।
ফ্র্যাঞ্চাইজি দুটিকে বাদ দেওয়ার কারন হিসেবে এসএলসি জানিয়ছে, তারা চুক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করতে পারেনি। যদিও বোর্ড ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ব্যর্থতা কী, তা নিয়ে বিশদভাবে বর্ণনা করেনি।
পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ী আগামী মে মাসে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তানে সাদা বলের সফর ছিল ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের। তবে শেষ সময়ে এসে তাতে আসল বদল। দুই দল এখন স্রেফ অংশ নেবে ২০ ওভারের সিরিজে, যা আকারে করা হয়েছে আগের চেয়ে আরও বড়।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) বুধবার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মুখোমুখি হবে কেবল পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের।
আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামের (এফটিপি) অংশ হিসেবে এই সফরে বাংলাদেশের খেলার কথা ছিল মূলত তিনটি ওয়ানডে এবং তিনটি টি -টোয়েন্টি।
আরও পড়ুন
১৪ বছরেই বিশ্ব জয়ের গান, 'বেবি বস' সুরিয়াভানসির সাহসী লড়াই |
![]() |
তবে আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ওয়ানডে ম্যাচ খেলা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশের বোর্ড। পারস্পরিক সম্মতিতে তিনটি ৫০ ওভারের ম্যাচ বাতিল করে যোগ করা হয়েছে অতিরিক্ত দুটি টি-টোয়েন্টি।
এই সিরিজটি আগানী ২৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত চলবে। ম্যাচগুলো হবে ফয়সালাবাদ এবং লাহোরে। প্রথম দুটি ম্যাচ হবে ফয়সালাবাদের ইকবাল স্টেডিয়ামে (২৫ ও ২৭ মে)। এর মধ্য দিয়ে ১৭ বছর পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে স্বাগত জানাবে এই স্টেডিয়াম। এই ভেন্যুতে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটিও ছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের, ২০০৮ সালে।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ তিনটি ম্যাচ হবে যথাক্রমে ৩০ মে, ১ ও ৩ জুন। পাঁচটি ম্যাচই শুরু হবে রাত ৮ টায়। সিরিজটিতে অংশ নিতে বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে পা রাখবে আগামী ২১ মে।
গত বছর হয়ে যাওয়া জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের রেশ পড়েছে আবাহনী লিমিটেড ক্লাবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে আবাহনীর সাফল্যে এতোটাই ক্ষুব্ধ হয়েছে প্রতিপক্ষ সমর্থকরা যে, সরকার পতনের পর ক্লাব ভবনের শোকেশে সাজানো ট্রফিগুলো লুট করে নিয়েছিল দুবৃত্তরা! আবাহনী ক্রিকেট দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড জন-আক্রোশে পড়ায় এবং এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান কারাবন্দি হওয়ায় ক্রিকেট টিম গঠন নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়তে হয় আবাহনীর পরীক্ষিত সংগঠকদের।
গতবার যেখানে আবাহনীতে ছিল তারকার সমাবেশ, সেখানে এবার জোড়াতালি দিয়ে একটা মিডিওকার দল তৈরি করাই ছিল এক ধরণের চ্যালেঞ্জ। অথচ, আবাহনী ক্রিকেট কমিটির দায়িত্ব নিয়ে পরিচালক তানভীর মাজহার তান্না, শেখ বশির আল মামুন এবং ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব ফিরে পাওয়া জি এস হাসান তামিম আবাহনী সমর্থকদের করেছেন চাঙ্গা। সর্বশেষ আসরে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বাজেটের টিমের চ্যাম্পিয়নশিপে ছিল কলঙ্কের দাগ। এবার একই অঙ্কের বাজেটে দল গঠন করে রানার্স আপের সস্তুষ্টি নিয়ে লিগ শেষ করেছে তামিম-মুশফিক-রিয়াদ-হৃদয়দের মোহামেডান।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে আবাহনী ক্রিকেট দলের ৭ বার লিগের ট্রফি জয়ের প্রতিটিতেই ছিল প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং। এবার সেই কলঙ্কের দাগ পড়েনি আবাহনী ক্রিকেট দলের গাঁয়ে।
তাতেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন লিগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারি জি এস হাসান তামিম। “অনেক দিন পর ক্রিকেট লিগের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মোহামেডান-আবাহনী মুখোমুখি হয়েছে। এ এক অন্য উত্তেজনা। এবার আর কেউ বলতে পারবে না, আবাহনী আম্পায়ারদের ফেভার পেয়েছে। এভাবে ফেয়ার প্লে-তে ট্রফি জেতার মজা আলাদা।”
এবার আবাহনী ক্রিকেট টিম গঠনে যে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, তা স্বীকার করছেন তামিম। “বর্তমানে ক্লাবের যে পরিস্থিতি, তাতে আবাহনী ক্লাবকে টাকা দেয়ার মতো লোকের এখন বড়ই অভাব। তাই এবার আড়াই কোটি টাকার মধ্যে টিমের বাজেট রাখতে চেয়েছি।”
তামিম-তাওহিদ হৃদয়রা মোহামেডানে খেলে যেখানে ৬০-৭০ লাখ টাকা করে নিয়েছেন, সেখানে আবাহনী থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা সম্মানী পেয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, এমনটাই জানিয়েছেন জি এস হাসান তামিম। “শান্ত যে মানের ক্রিকেটার, ও-কে ছেড়ে দিলে চোখ বুজে ৫০-৬০ লাখ টাকা অন্য ক্লাব থেকে নিতে পারতো। আমরা সেখানে ৪০ লাখ টাকার মতো দিতে পারব বলে কথা দিয়েছি। আবাহনী নিবেদিতপ্রাণ মোসাদ্দেক সৈকতকে সেখানে ২৫ লাখ টাকায় রাজি করিয়েছি। গতবারের ২২ জন প্লেয়ারের মধ্যে বেশ ক'জনকে ছেড়ে দিয়েও তাই দুর্ভাবনায় পড়তে হয়নি।”
আবাহনী ক্রিকেট টিম এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন দৃষ্টান্ত আর কোনো দলের নেই। এবারের ট্রফি জয়ে কোচ হান্নান সরকারের অবদানকে এগিয়ে রাখছেন ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারি। “যখন শুনতে পেলাম জাতীয় দলের নির্বাচকের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইছে হান্নান সরকার, তখন ও-কে কোচের অফার দিলাম। ১৫ লাখ টাকার মতো দিতে পারব বলেছিলাম তাকে। তারপরও হান্নানকে রাজি করাতে পেরেছি। হান্নান প্লেয়িং ক্যারিয়ারে আবাহনীতে খেলেছে, আবাহনী ক্লাবের পরিবেশ ওর জানা আছে। তাই তাকে তেমন কোনো নির্দেশনা দিতে হয়নি। হার-জিত বড় কথা নয়, টিম হিসেবে আবাহনী খেলতে পারলে খুশি আমরা, এটাই হান্নানকে বলেছিলাম। ও নিজ থেকে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল এবং সেই চ্যালেঞ্জে জিতেছে।”
এর-ওর কাছ থেকে টাকা পয়সা জোগাড় করে চুক্তির ৬০ শতাংশ পেমেন্ট খেলোয়াড়দের হাতে ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে আবাহনী ক্রিকেট দল। বাকিটাও খুব দ্রুত দিয়ে দেয়া হবে বলে বিদেশ থেকে ফোনে জানিয়েছেন জি এস হাসান তামিম। “আমার জানামতে প্রায় ৪০% পেমেন্ট এখন বাকি আছে। চ্যাম্পিয়ন যখন হয়েছি, তখন এই টাকা যোগাড় করা কঠিন হবে না।”
আবাহনী ক্রিকেট দলের সবার জন্য বিশেষ বোনাস দেয়ার কথাও ভাবছেন জি এস হাসান তামিম। “তান্না ভাই, মামুনের সঙ্গে কথা বলে ক্রিকেটার এবংসাপোর্ট স্টাফদের জন্য বোনাস দেয়ার কথা বলেছি। টিমের কেউ বোনাস থেকে বাদ যাবে না। বোনাস মিলে বাজেটটা ৩ কোটির মধ্যে রাখতে চাইছি।”
আবাহনীর ক্লাব টেন্ট থেকে লুট হয়ে যাওয়া ট্রফিগুলো ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারি। তবে লুট হওয়া ট্রফির রুম আবারও ভরে উঠবে ট্রফিতে, সে স্বপ্ন দেখছেন এই কর্মকর্তা। “সব ট্রফি হারিয়ে নতুন করে ট্রফি সাজানোর স্বপ্ন দেখছি আমরা। এটাই আবাহনীর সৌন্দর্য।”
২ দিন আগে
১০ দিন আগে
১০ দিন আগে
১০ দিন আগে
১১ দিন আগে
১১ দিন আগে
১১ দিন আগে
১৩ দিন আগে
১৩ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৭ দিন আগে
২৮ দিন আগে
২৮ দিন আগে