বেশ কয়েক বছর আগের কথা। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ তখন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটার নিল ম্যাকেঞ্জি। সেই সময়েও বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য টি-টোয়েন্টি এমন এক গোলকধাঁধার নাম। তখন এই ফরম্যাটে ব্যাটারদের ভালো করতে একটা পথ বাতলে দিয়েছিলেন তিনি। সেটা অনেকটা এরকমই ছিল যে, চাইলেও যেহেতু আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ডদের মতো বড় বড় ছক্কা হাঁকানোর সামর্থ্য নেই, বাউন্ডারি এবং সিঙ্গেলস-ডাবলস নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করা উচিত। চারটি ছক্কা মারলেও ২৪ রান, ছয়টি চার মারলেও ২৪ রানই যোগ হবে। ম্যাকেঞ্জি অমনটা বলেছিলেন, কারণ খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতায় তার খুব ভালো জানা হয়ে গিয়েছিল, বাংলাদেশের খুব বেশি ব্যাটারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় বড় ছক্কা মারার সেই স্কিল সেট নেই। তার সেই কথাগুলো এই ২০২৪ সালেও এসেও ভীষণ বাস্তব বাংলাদেশের ক্রিকেটে।
সেটার খুব বড় একটা উদাহারণ হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের শেষ ওভারটি। বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজের নাটকীয় সেই ওভারে একটি করে ফুল টস পান জাকের আলি, মাহমুদউল্লাহ এবং শেষে তাসকিন আহমেদ। এই তিন ডেলিভারিতে বাংলাদেশ করতে পেরেছে স্রেফ তিন রান, উইকেট গেছে একটি। এর মধ্যে স্পেশালিষ্ট বোলার হওয়ায় তাসকিনকে হয়ত আপনি ছাড় দিতে চাইবেন। তবে বোলার হলেও অন্তত একটা ফুল টস বল সীমানা পার করার দক্ষতা দেখানো খুব বিশেষ কিছু নয়। তারচেয়েও বড় কথা, তিন জনই যে ফুল টসগুলো পেয়েছেন, এমন সব ফুল টসে তো তারা অহরহই করেন ‘রেঞ্জ হিটিং’।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে আপনি যা দেখেছেন এবং যা দেখেননি…
এই রেঞ্জ হিটিংয়ের মূল ব্যাপারটাই হল বড় শট মারার দক্ষতা বাড়ানো এবং কে কতদূর বল পাঠাতে পারেন, সেটার অনুশীলন। একজন থ্রোয়ার একের পর এক ফুল টস ছুড়বেন স্লটে, ব্যাটাররা তা সজোরে মারবেন। ছক্কা হলো কিনা, সেটা ছাপিয়ে দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বলটা কোথায় গেল। মহারাজের করা তিন ফুল টসের মধ্যে তাসকিনেরটা অবশ্য একটু উঁচুতে ছিল, তবে উচ্চতার কারণে তিনি ভালো পজিশনেই ছিলেন ছক্কা মারার। কিন্তু পারেননি। তবে প্রশ্ন আসতেই পারে, তাসকিন পর্যন্ত ম্যাচটা কেন গেল?
এই প্রশ্নের উত্তর আপনি দিতে পারেন অনেকগুলো দিক থেকেই। আম্পায়ারের কিছু ওয়াইডের কল না দেওয়া, ভুল এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত যা বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে চারটি লেগ বাইয়ের রান থেকে বা দুর্দান্ত খেলতে থাকা তাওহীদ হৃদয়ের আম্পায়ার্স কলে আউট হওয়ার মত অনেক কিছুই টানা যেতে পারে ৪ রানে হারের ‘অজুহাত’ হিসেবে। তবে মাঠের খেলায় ভাগ্যকে দুষে বা যদি, কিন্তু দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে নিজেদের ঘাটতির জায়গা অস্বীকার করাটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
শুরুটা করা যাক নাজমুল হাসান শান্তকে দিয়েই। তার ব্যাটিংয়ের যে ধরন, সেটা আধুনিক ২০ ওভারের ক্রিকেটে বেশ বেমানান। টার্গেট ১২০ হোক বা ১৮০, বাংলাদেশ অধিনায়ক ব্যাট করেন একশর আশেপাশে স্ট্রাইক রেটে। হ্যাঁ, গতকাল ওর্টনিল বার্টম্যানকে তিনি একটা ছক্কা হাঁকিয়েছেন বটে। তবে আনরিখ নরকিয়া, যিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা একজন পেসার, এমন স্লো উইকেটে আপনি কোন হিসেবে তাকে আক্রমণ করতে যাবেন? আসরে আগুন ঝরানো বোলিং করা দীর্ঘদেহী এই পেসারের ১৫০ কি.মি বেশি গতির সেই ডেলিভারিতে কোনোভাবেই ছক্কা মারা শান্তর পক্ষে সম্ভব নয়, এটা তারও নিশ্চয় জানা। তবুও, বৃথা চেষ্টায় বিসর্জন দেন উইকেট।
তার আগে ঠিক একই ভুলটা করেন এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব, যিনি সবচেয়ে বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলেছেন। ব্যাটে নেই সেই ধার, নেই মোটেও ফর্মে, এই অবস্থায় সাকিব কিনা নরকিয়াকে পুল করে সীমানা পার করতে চাইলেন! কোনো টাইমিং না হয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনিও। বাংলাদেশকে নিয়ে বরাবরই নেতিবাচক কথা বলা সাবেক ভারত ব্যাটার বীরেন্দর শেবাগ ক্রিকবাজে বলেছেন, সাকিবের মনে রাখা উচিত ছিল যে তিনি এডাম গিলক্রিস্ট বা ম্যাথু হেইডেন নন। তিনি বাংলাদেশের ব্যাটার, সেভাবেই তার নরকিয়াকে খেলা উচিত ছিল৷
বাংলাদেশের একজন ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে কথাটা ভীষণ তেতো লাগারই কথা। তবে নিজের স্কিলের সীমাবদ্ধতা ভুলে এলোপাতাড়ি পুল করতে চাওয়াটা অন্তত সাকিবের মত স্মার্ট ক্রিকেটারের কাছ থেকে ভীষণ হতাশাজনকই৷ জাকের আলি অনিক জাতীয় দলে এসেছেনই ‘ফিনিশার’ তকমা নিয়ে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তোলার কাজটা তিনি ভালোই করেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মহারাজের ওই ফুল টস সহ মোট ৯ বলে তিনি করেছেন ৮ রান। পেস, স্পিন দুটির বিরুদ্ধেই অনেক চেষ্টা করেও পারেননি ছক্কা মারতে। মানুন আর নাই মানুন, এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বোলারদের বিপক্ষে ছক্কা মারার জন্য বিশেষ স্কিলের প্রয়োজন হয়, যা জাকের অন্তত এখনও রপ্ত করতে পারেননি। হয়ত সামনে পারবেন।
অবশ্য বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা জাকেরের কাছে খুব বেশি প্রত্যাশা করাটাই হয়ত অনুচিত। কেন? ফিরে যান ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ভারতের বিপক্ষে ব্যাঙ্গালোরে সেদিন ক্রিজে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক থাকার পরও ৩ বলে মাত্র ২ রানের হিসেব মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ। হার্দিক পান্ডিয়ার নিরীহ এক হাফ ভলিতে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন প্রথম মুশফিকুর। সেই হতাশা দ্বিগুণ করে স্লটে পাওয়া ফুল টসে মাহমুদউল্লাহও ক্যাচ তুলে দেন। সেদিন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় সেই পরাজের মূল কারণ ছিল, অমন মূহুর্তে নিজেদের শক্তির জায়গা ভুলে রাসেল-পোলার্ডদের মতো ছক্কা মেরে নায়ক হওয়ার তাড়না। আর ঠিক বিষয়টিই ম্যাকেঞ্জি দেখতে চাইতেন না।
আরও পড়ুন: আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও পরাজয়ে নিজেদের ব্যর্থতাই দেখছেন তাওহীদ
স্কিল এমন এক ব্যাপার, বছরের পর বছর সাধনা করেও সেটা আয়ত্বে নিয়ে আসা মোটেও সহজ কাজ নয়। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা অলরাউন্ডার ল্যান্স ক্লুজনারের কথা নিশ্চয় মনে আছে। সেই নব্বই দশকের সেকেলে ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি দেখিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং। ক্রিজে গিয়েই ধুন্ধুমার ব্যাটিং শুরু করে দিতেন। দেখলে মনে হত, পাওয়ার হিটিং কতোই না সোজা। তবে ক্লুজনার নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নেটে হাজার হাজার বল তিনি স্রেফ এসবের অনুশীলনেই ব্যয় করতেন। নিজ তাগিদে আলাদা অনুশীলন করতেন কেবল এই ১০-১৫ বলের ইনিংসে ঝড় তোলার জন্য। শারীরিক গঠনে ক্যারিবিয়ানদের মত শক্তিশালী না হলেও তাই বড় শট নিয়মিতই খেলতে পারতেন তিনি।
দল থেকে বাদ পড়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভিন্ন রুপে হাজির হওয়া মাহমুদউল্লাহর এখন ছক্কা মারার দক্ষতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তবে স্কিলের যে একটা সীমাবদ্ধতা থাকে, সেই কারণে সেদিন ব্যাঙ্গালোরে তিনি হার্দিকের ফুল টসকে ছক্কায় ওড়াতে পারেননি। আর একই কারণে মহারাজের করা আরও সহজ এক ফুল টসে গায়ের সব শক্তি দিয়ে মেরেও লং অনের বাউন্ডারি পার করতে পারেননি তিনি। ভাগ্যের কথা যে বলি আমরা, সেটা ছাপিয়ে মূখ্য এটাই যে মাহমুদউল্লাহ কয়েক মিটারের জন্য ছক্কা মারার জন্য সেরা ডেলিভারিটা কাজে লাগাতে পারেননি।
আম্পায়ারদের ভুল, ভাগ্যকে পাশে না পাওয়ার আক্ষেপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাগে পেয়েও হারানোর এমন সুযোগ হারানোর আক্ষেপ তাই আপনি করতেই পারেন, পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, খেলোয়াড়রা তাদের স্কিলের শেষ বিন্দু দিয়েই ১১৩ রান তাড়ায় ১০৯ রান করেছেন। মাহমুদউল্লাহর বাউন্ডারি লাইন পার না করতে পারাটাই এই মূহুর্তে সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা। চেষ্টা করেছেন, সাধ্যের সবটা দিয়েই বলটা মেরেছেন, পারেননি। অথবা, পারার কথাই যে ছিলো না…
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩:৫০ এম
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১:০০ এম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৭:১৫ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৫:৩৮ পিএম
প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিনেও যে উইকেটে বিশেষ জুজু নেই, সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার, এমনকি টেল এন্ডাররাও দেখিয়েছেন বেশ। আর সেটা কাজে লাগিয়ে জাস্টিন গ্রিভসের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ক্যারিবিয়ানরা পেল বিশাল স্কোর। ভারত সফর থেকেই টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের ব্যাটারা আরও একবার পারলেন না শুরুটা ভালো এনে দিতে। দুই দিন পার হওয়ার পর তাই ভালোভাবেই ম্যাচের লাগাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে।
অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসের বাংলাদেশ করেছে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ৪০ রান। দুই অপরাজিত ব্যাটার হলেন মুমিনুল হক (৭) ও শাহাদাত হোসেন দিপু (১০)। পিছিয়ে আছে ৪১০ রানে। ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দেড় দিনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান করেছিল ধীরগতিতেই। সেটা ধরে রেখে বাংলাদেশও ইনিংস শুরু করে স্বভাবজাত ব্যাটিংয়েই। প্রথম সাত ওভারে আসে মাত্র ৫ রান! অষ্টম ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান জাকির হাসান। পরের আলজারি জোসেফের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তবে বল তালুবন্দি করতে পারেননি ফিল্ডার, বেঁচে যান তরুণ এই ওপেনার। তবে সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।
চমৎকার এক স্পেলে প্রথম ছয় ওভারে তিন মেডেন দেওয়া জেডেন সিলসের এক ওভারে দুই চার মেরে কিছুটা আগ্রাসনের আভাস ছিল জাকিরের ব্যাটে। তবে সেই ওভারেই অফস্ট্যাম্পের বাইরেরর বল টেনে খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান ১৫ রানে।
পাঁচ রানে জীবন পাওয়া জয় আউট হন একই স্কোরে। আলজারির বলেই প্রায় একই ডেলিভারিতে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে দলে জায়গা পাওয়া তরুণ দিপু প্রথম ১৬ বলে করেন এক রান। এরপর চার মেরে কিছুটা চাপ সরান। অন্যপ্রান্তে মুমিনুল একপ্রান্ত আগলে রাখার কাজটা সামলান ঠিকঠাকভাবেই। তাতে দিনের খেলা শেষের আগে আর বিপদ হয়নি।
তবে দিনের আগের অংশে বাংলাদেশের সর্বনাশ করেন গ্রিভস ও কেমার রোচ। হাসান মাহমুদের দারুণ এক স্পেলে শুরুতেই দুই উইকেট পেয়ে গিয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজের দল। তবে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা ক্রমেই কমিয়ে এনেন গ্রিভস-রোচ জুটি। কয়েক দফায় সুযোগ দিলেও বেঁচে যান দুজনই। সেটার পাশাপাশি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করে ধীরে ধীরে তার জমিয়ে তোলেন জুটি।
চা বিরতির আগে ভাঙে দুর্দান্ত এই জুটি। ইতি টানেন সেই হাসানই। তবে তার আগে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৪০ রানের রেকর্ড গড়েন এই দুজন। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সাত উইকেটের পরও এটাই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান করেছিলেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খান।
হাসানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন রোচ। টেস্ট ক্রিকেটে এটাই তার এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। তিনি মাইলফলক মিস করলেও গ্রিভস সেই ভুল করেননি। দারুণ সব শটের এক ইনিংসকে পূর্ণতা দেন শতকে রুপ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন চার চারে ১১৫ রানে। ৮৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে হাসান ছিলেন বাংলাদেশের সেরা বোলার।
প্রথম সেশনে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশ রানের মধ্যেই আটকে দেওয়ার আশা যুগিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে টেল এন্ডার কেমার রোচকে নিয়ে জাস্টিন গ্রিভস গড়ে তুললেন অসাধারণ প্রতিরোধ। একজন করলেন সেঞ্চুরি, আর দুজনে মিলে অষ্টম উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন বেশ শক্ত অবস্থানে। এতে ভর করে প্রথম ইনিংসে বড় স্কোরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের চা বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১৩৯ ওভারে ৮ উইকেটে ৪১৫ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (১০৯) ও জেডেন সিলস (১)।
২৬১ রানে পতন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সপ্তম উইকেটের। কে ভেবেছিল, পরের উইকেটের জন্য রীতিমত ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার দশা হবে বাংলাদেশের বোলারদের? গ্রিভস ব্যাটিংটা ভালো জানলেও রোচও যে যেভাবে ‘ব্যাটার’ হয়ে যাবেন, সেটা না ভাবাটাই ছিল স্বাভাবিক।
অথচ অষ্টম উইকেটে এই দুজন মিলে খেললেন চিরায়ত টেস্ট মেজাজে। রান বের করলেন দেখেশুনে খেলে। বোলারকে প্রয়োজন মত দিয়েছেন সম্মান, আবার বাজে বল পেলেই মেরেছেন বাউন্ডারি। সিঙ্গেলস, ডাবলসে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন ফিল্ডারদেরও। সেই প্রক্রিয়ায় তিনশ ছাড়িয়ে দল পার করে ফেলেছে চারশ রানও।
শেষ পর্যন্ত চা বিরতির খানিক আগে জুটিতে ভাঙন ধরিয়েছেন দিনের সেরা বোলার হাসান মাহমুদ। তবে তার আগে গ্রিভস-রোচ জুটি যোগ করে ফেলেন ১৪০ রান, যা এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আর টেস্ট ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি এখন এটি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটিটি ছিল জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিক ও ট্রাভিস ফ্রেন্ডের। ২০০১ সালে তারা যোগ করেছিলেন ১০৮ রান। গ্রিভস-রোচের জুটি সাত উইকেটের পর সব মিলিয়েও এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান ছিল শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খানের।
হতাশাময় সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর চারশ পার করার পরই রোচকে ফেরান হাসান। বোল্ড করেন দেন ডানহাতি ব্যাটারকে। তবে তার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। অন্যপ্রান্তে সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল হয়নি গ্রিভসের। ক্যারিবিয়ানরা প্রথম ইনিংসে আরও কিছু রান যোগ করার জন্য শেষ সেশনে তাকিয়ে থাকবে তার দিকেই।
প্রথম দিনের শেষ দিকে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে অনেকটাই ভারসাম্য এনেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেই ধারাটা বজায় রেখে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে দারুণ এক স্পেলে হাসান মাহমুদ এনে দিলেন জোড়া উইকেট। তবে এরপরই যেন কমে গেল সফরকারীদের বোলিংয়ের ধার। সেই সুযোগে অষ্টম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন জাস্টিন গ্রিভস ও কেমার রোচ। বড় স্কোরের পথে তাতে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের লাঞ্চ বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১১০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৩৬ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (৬৩) ও রোচ (১৯)।
আরও পড়ুন
হাসানের প্রথম টেস্ট উইকেট, শক্ত ভিতে শ্রীলঙ্কা |
অথচ প্রথম ঘণ্টায় হাসানের স্পেল বাংলাদেশ শিবিরে আশা জাগিয়েছিল প্রতিপক্ষকে ২৮০-৩০০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলার। দিনের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই গ্রিভসের বিরুদ্ধে হাসানের ছিল কট বিহাইন্ডের আবেদন। তবে সাড়া মেলেনি। তবে তিন বল বাদে জোশুয়া দা সিলভাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তরুণ এই ডানহাতি পেসার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি এই কিপার-ব্যাটারের।
পরের ওভারের প্রথম বলে হাসানকে চার মারেন আলজারি জোসেফ। পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে। তবে এই উইকেটে বোলারের চেয়ে বড় কৃতিত্ব পেতে পারেন গালিতে দাঁড়ানো জাকির হাসান। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে নেন অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ। ওই ওভারেই রোচকে প্রায় ফিরিয়েই দিচ্ছিলেন হাসান। তবে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান ক্যারিবিয়ান পেসার।
আরও পড়ুন
হাসানের তোপ সামলে অশ্বিন-জাদেজার ব্যাটে চড়ে শক্ত অবস্থানে ভারত |
দুই ব্যাটার মিলে এরপর জুটি গড়েন ধীরলয়ে। ৫ রানে থাকতে তাইজুল ইসলামের বলে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন রোচ। ডিপে থাকা হাসান দৌড়ে গিয়ে পাননি বলের নাগাল, বাংলাদেশ হারায় উইকেটে সুযোগ। অন্যপ্রান্তে দেখেশুনে খেলা গ্রিভস। প্রায় নিখুঁত এই ইনিংস খেলার পথে তিনি পরিচয় দেন দুর্দান্ত টেম্পারমেন্টের, যা বাংলাদেশ বোলারদের কাজটা আরও কঠিন করে দেয়।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের একটা বড় অংশ জুড়ে রানের জন্য করতে হয়েছে সংগ্রাম। সেই ম্যাচে তাও একটা লড়াকু স্কোর ছিল দলটির। তবে নিউইয়র্ক স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের দলের কেউই পারলেন না আলো ছড়াতে ব্যাটে বা বলে। মামুলি পুঁজি নিয়ে সামান্যতম লড়াইও তাই জমাতে ব্যর্থ হল বাংলা টাইগার্স।
আবুধাবি টি-টেনের শনিবারের ম্যাচে বাংলা টাইগার্স হেরেছে ৭ উইকেটে। তাদের করা ৮ উইকেটে ৬৮ রান ৪ ওভার ও ২৪ বল হাতে রেখেই পাড়ি দিয়েছে নিউইয়র্ক।
শুরুতেই দুই ওপেনার হারানো বাংলা টাইগার্সের বড় আশা ছিলেন দাসুন শানাকা। আগের ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ রান করা এই শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার এদিনও ছন্দেই ছিলেন। তবে মাত্র ১০ ওভারের খেলায় যে ধরনের ব্যাটিং প্রয়োজন, সেটা করতে পারেননি। ১৯ বলে ২ ছক্কায় করেন মোটে ২২।
আরও পড়ুন
সাকিবে ট্রফি জিতবে বাংলা টাইগার্স? |
তবে দলকে বিপদে ফেলেন মূলত দুই তারকা স্পিন অলরাউন্ডার লিয়াম লিভিনস্টোন ও ইফতিখার আহমেদ। যাওয়া-আসার মিছিলের মধ্যে এক সাকিবই যা কিছুটা লড়াই করেন। খেলেন ১২ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ১৯ রানের ক্যামিও। তবে তাতেও কাজের কাজ হয়নি আর। তার দল বোর্ডে জমা করতে পারে মামুলি স্কোর।
এরপর বল হাতে বলতে গেলে প্রথম ওভারেই আশা মিলিয়ে যায় দলটির। ওয়াইড-নো বলময় ওভারে মোট ১২টি ডেলিভারি করা ডেভিড পেইনে দেন ১৭ রান। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে এভিন লুইসকে ফেরান ইমরান তাহির।
ছুটতে থাকা নিউইয়র্ককে জোড়া আঘাতে ধাক্কাটা দেন সাকিবই। প্রথম বলেই ডেল্যাড ব্রেভিসকে ফেরানোর পর আসিফ আলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এক বল বাদে। সেই ওভারে বাংলা টাইগার্স অধিনায়ক দেন মাত্র দুই রান।
আরও পড়ুন
সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলাতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি বিসিবি, বললেন ফারুক |
তবে হার আটকাতে তা যথেষ্ট হয়নি। চার ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেন নিউইয়র্ক।
দেশের ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির ঝড় তুলতে আসছে আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক এনসিএল টি-টোয়েন্টি পাওয়ার্ড বাই ওয়ালটন। সিলভার স্পন্সর হিসেবে থাকছে লিলি ময়েশ্চারাইজ লোশন। শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ, পরিচালক ফাহিম সিনহা। স্পন্সরদের পক্ষ থেকে ছিলেন আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ফরমান আর. চৌধুরী, ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিনুল ইসলাম খান ও রিমার্ক-হারল্যান গ্রুপের ব্র্যান্ড এম্বোসেডর, চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ।
বিসিবি সভাপতি ফারুক মনে করেন, এই টুর্নামেন্টে দেশীয় ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।
“বিপিএলের আগে এই টুর্নামেন্ট দেশী ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ। আমি আশা করি ক্রিকেটাররা সে সুযোগ নেবে এবং নিজেদের মেলে ধরবে, যা কিনা দেশের ক্রিকেটকে সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। এছাড়া আমি টুর্নামেন্টের ব্রডকাস্টার টি স্পোর্টসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করবে।”
শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এনসিএল টি-টোয়েন্টি। আগামী ১১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্ট। অংশ নেবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের সাত দল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, সিলেট বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো। আট দলের লিগ পর্বের ম্যাচগুলো হবে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম ও সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম আউটার মাঠে। প্লে-অফের চারটি ম্যাচ হবে ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
সবগুলো ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের প্রথম ও একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে। এছাড়া ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ফ্যানকোড ও বিশ্বের বাকি অংশে ম্যাচগুলো দেখা যাবে টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেলে।