১১ জুন ২০২৪, ১১:২৬ এম
১৯.৫ ওভার, গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন কেশভ মহারাজ, টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথমবার করা ইনিংসের শেষ ওভারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডেলিভারিটি কয়ার আগে কী চলছিল তার মনে? তিনি জানেন, ব্যাটার মাহমুদউল্লাহর লক্ষ্য একটাই, যেভাবেই হোক বল ছক্কায় ওড়ানো। পুরো ম্যাচে লেন্থ ডেলিভারিতে ভরসা রাখলেও এবার ব্যাটারকে তিনি আটকে দিতে চাইলেন ইয়র্কারে। প্রচণ্ড নার্ভাস থাকার কারণেই কিনা, উল্টো দিয়ে বসলেন ক্রিকেটীয় ভাষায় ‘জুসি’ ফুল টস। অমন পরিস্থিতিতে ছক্কা মারার জন্য সম্ভবত এর চেয়ে সহজ বল আর পেতেন না মাহমুদউল্লাহ। যখন বলটা ব্যাটে লাগল, মনে হচ্ছিল লং অনের ওপর দিয়ে বুঝি ছক্কাই হয়ে যাবে। কিন্তু সেই বল ভাসতে ভাসতে শেষ পর্যন্ত চলে গেল এইডেন মার্করামের কাছে। উচ্চতা কাজে লাগিয়ে নেন সহজ ক্যাচ। মাথায় হাত দিয়ে চোখেমুখে একরাশ বিস্ময় আর অবিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশের কোটি দর্শকদের মতো অভিজ্ঞ এই ব্যাটারও যেন বলতে চাইলেন, ‘ইশ, আরেকটু হলেই…’
এই ধরণের টানটান উত্তেজনার ম্যাচ হারের পর যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে খেলোয়াড় থেকে ভক্তদের যদি, কিন্তু এবং আক্ষেপের নানা সংলাপ। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার এই ম্যাচ তেমন উপকরণ ভালোই দিয়েছে। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের লেগ-বাইয়ের চার রান মিস করা, তাওহীদ হৃদয়ের আম্পায়ার্স কলে আউট হওয়া বা এক-দুটি ওয়াইড না দেওয়া - মাত্র ৪ রানের হারের পর কাটাছেঁড়া চলছে এসব নিয়েই। আর সাথে যোগ হচ্ছে মাহমুদউল্লাহর সেই ছক্কা মিস করে আউট হওয়ার আক্ষেপ।
আরও পড়ুন: আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও পরাজয়ে নিজেদের ব্যর্থতাই দেখছেন তাওহীদ
তবে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, ক্রিকেট ভীষণ জটিল একটি খেলা। সুক্ষ্মতম একেকটি ইভেন্ট এখানে গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য, যা ব্রডকাস্টিংয়ের আধুনিক যুগেও সবসময় আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। পুরো ম্যাচ ছাপিয়ে আমরা যদি ফিরে যাই মহারাজের করা ঘটনাবহুল সেই ২০তম ওভারে, তাহলে এমন কিছুরই দেখা মিলবে, যা দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক বৈকি।
১১৪ রান তাড়ায় বাংলাদেশ যেভাবে ব্যাট করছিল, এরপরও ম্যাচ শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ায় একটা কৃতিত্ব পেতেই পারেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক মার্করাম। তবে সেটা করতে গিয়ে তিনি এমন এক ঝুঁকি নিয়েছিলেন, যা দশবারের মধ্যে নয়বারই দলকে ডোবানোর জন্য যথেষ্ট। মহারাজের হাতে যে তুলে দেন শেষ ওভারের দায়িত্ব, যে কাজটা পুরো ক্যারিয়ারেই আগে করেননি এই বাঁহাতি স্পিনার।
আর মহারাজই যে এই ওভারটি করবেন, সেটা কয়েক ওভার আগেই ঠিক করে ফেলেছিলেন মার্করাম। একটু যদি খেয়াল করে থাকেন, তাহলেই দেখবেন যে এর আগের ওভারগুলোতে মহারাজের শারীরিক ভাষা ছিল বেশ নার্ভাস। ম্যাচের পর তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন, ২০তম ওভারে বল হাতে নেওয়ার চেয়ে এর আগের কয়েকটি ওভারে ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
সেটার সত্যতা মেলে প্রথম বলেই। দিয়ে বসেন ওয়াইড। এরপর এক রান দিয়ে ওভারের দ্বিতীয় বলেই আবার তালগোল পাকান মহারাজ। ফুল টস দিয়েও বেঁচে যান, লং অন বল ঠেলে দুই রানের জন্য প্রাণপণ দৌড় লাগান জাকের আলি। তবে মার্করামের করা থ্রো যখন বোলিং প্রান্তে মহারাজের কাছে আসে, তখন ফ্রেমেই ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। তবে ‘চোকার্স’ দক্ষিণ আফ্রিকার যেন পুরনো ভূত ফিরে এসেছিল সেই সময়েই। মহারাজের ঠিক সামনে বাউন্স করে বাজে এক থ্রো করেন ফিল্ডার হিসেবে দুর্দান্ত মার্করাম, যা ধরতেই পারেননি বোলার।
এরপর জাকের আলিকে ফিরিয়ে আর রিশাদকে সিঙ্গেলসে আটকে মহারাজ সমীকরণ নিয়ে আসেন ২ বলে ৬ রানে। মাহমুদউল্লাহ কাবু করতে গিয়ে স্নায়ুর লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে করে বসেন এমন এক ডেলিভারি, যেন আমন্ত্রণই ছিল যে ‘আমাকে ছক্কা মারুন।’ স্লটে পাওয়া ফুল টসে সজোরে ব্যাটও চালিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ, কিন্তু কয়েক মিটারের জন্য আর পারেননি জয়-পরাজয়ের ব্যবধান হতে।
খালি চোখে দেখলে মনে হতেই পারে, শটে ছিল না পর্যাপ্ত জোর। আসলেই কী তাই? কারণটা বলেছেন মহারাজই। মাহমুদউল্লাহকে তিনি ইয়র্কারই করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বল তার হাত থেকে বের হওয়ার পরই নাকি বাতাসের প্রভাবে তা ভেসে পরিণত হয় ফুল টসে। ক্রিকেট খেলাটাকে শুরুতেই জটিল বলেছিলাম, কারণ মহারাজকে যা বিপদে ফেলেছে, ঠিক সেটাই আবার মাহমুদউল্লাহ তথা বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে।
মাহমুদউল্লাহ যে শটটা নিয়েছিলেন, সেটা ভালোভাবেই ছক্কা হওয়ার পথেই ছিল। লং অনে থাকা মার্করামেরও সেটাই মনে হয়েছিল প্রথমে। আর এই কারণেই তিনি ক্যাচ নেওয়ার আগে এক নজর দেখে নিয়েছিলেন বাউন্ডার লাইন। কারণ, ক্যাচ না হলে ঝাঁপিয়ে কোনোমতে বলটা মাঠের ভেতর রাখার একটা চেষ্টা তিনি যাতে নিতে পারেন। সেটা বুঝতে পেরে লং অফে থাকা মার্কো ইয়ানসেনও চলে আসছিলেন মার্করামের বেশ কাছাকাছি, উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, মার্করাম বলটা মাঠের ভেতরে পাঠালে তিনি যেন জুটি বেঁধে ক্যাচটা সম্পন্ন করতে পারেন।
আরও পড়ুন: ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে হারানোর খুশি ক্লাসেনের
কিন্তু যে বাতাসের প্রভাবে ফুল টস পেয়েছিলেন, সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় মাহমুদউল্লাহর জন্য। তার শটে যথেষ্ট জোর থাকার পরও তাই শেষ মুহূর্তে বিপরীত দিক আসা বাতাসে বাড়ি খেয়ে বলটির গতি কমে নিচু হয়ে যায়। ফলে যে ক্যাঁচটা বাউন্ডারি লাইনে লাফিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি ছিল মার্করামের, সেটা কয়েক মিটার এগিয়ে এসে অনায়াসেই তার হতে জমা হয়। টেলিভিশনের পর্দায় আমরা দেখেছি, মার্করাম বাউন্ডারির সামনে বাঁদিকে দৌড়ে ক্যাচটা নিয়েছেন।
তবে সেটা কেবলই এক ঝলক। এর আগে মাহমুদউল্লাহ শটটি মারার পর মার্করামের হাতে ছিল স্রেফ চার সেকেন্ড। এই সময়ের মধ্যেই তিনি বলটি ছক্কা হবে বলে ধরে নিয়েছেন, বাতাসের প্রভাবে বলের গতি বদলে যেতে দেখেছেন এবং চোখের পলকেই সেভাবে পজিশন নিয়ে ক্যাচটা নিয়েছেন - এই ছোট ছোট বিষয়গুলোই আদতে একটা রোমাঞ্চকর ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়। যা খালি চোখে হয়ত দেখা যায় না, তবে ৪০ ওভারের লড়াইয়ে কে জিতবে আর কে হারবে, সেটার নির্ণায়ক হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ, মাহমুদউল্লাকে অবশ্য এই ম্যাচ, এই শট বার বার মনে করিয়ে দিবে একটাই হাহাকার, ইশ, আরেকটু হলেই…
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩:৫০ এম
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১:০০ এম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৭:১৫ পিএম
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৫:৩৮ পিএম
প্রথম দিনের মত দ্বিতীয় দিনেও যে উইকেটে বিশেষ জুজু নেই, সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার, এমনকি টেল এন্ডাররাও দেখিয়েছেন বেশ। আর সেটা কাজে লাগিয়ে জাস্টিন গ্রিভসের দারুণ এক সেঞ্চুরিতে ক্যারিবিয়ানরা পেল বিশাল স্কোর। ভারত সফর থেকেই টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের ব্যাটারা আরও একবার পারলেন না শুরুটা ভালো এনে দিতে। দুই দিন পার হওয়ার পর তাই ভালোভাবেই ম্যাচের লাগাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে।
অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসের বাংলাদেশ করেছে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ৪০ রান। দুই অপরাজিত ব্যাটার হলেন মুমিনুল হক (৭) ও শাহাদাত হোসেন দিপু (১০)। পিছিয়ে আছে ৪১০ রানে। ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দেড় দিনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান করেছিল ধীরগতিতেই। সেটা ধরে রেখে বাংলাদেশও ইনিংস শুরু করে স্বভাবজাত ব্যাটিংয়েই। প্রথম সাত ওভারে আসে মাত্র ৫ রান! অষ্টম ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান জাকির হাসান। পরের আলজারি জোসেফের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তবে বল তালুবন্দি করতে পারেননি ফিল্ডার, বেঁচে যান তরুণ এই ওপেনার। তবে সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।
চমৎকার এক স্পেলে প্রথম ছয় ওভারে তিন মেডেন দেওয়া জেডেন সিলসের এক ওভারে দুই চার মেরে কিছুটা আগ্রাসনের আভাস ছিল জাকিরের ব্যাটে। তবে সেই ওভারেই অফস্ট্যাম্পের বাইরেরর বল টেনে খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান ১৫ রানে।
পাঁচ রানে জীবন পাওয়া জয় আউট হন একই স্কোরে। আলজারির বলেই প্রায় একই ডেলিভারিতে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে দলে জায়গা পাওয়া তরুণ দিপু প্রথম ১৬ বলে করেন এক রান। এরপর চার মেরে কিছুটা চাপ সরান। অন্যপ্রান্তে মুমিনুল একপ্রান্ত আগলে রাখার কাজটা সামলান ঠিকঠাকভাবেই। তাতে দিনের খেলা শেষের আগে আর বিপদ হয়নি।
তবে দিনের আগের অংশে বাংলাদেশের সর্বনাশ করেন গ্রিভস ও কেমার রোচ। হাসান মাহমুদের দারুণ এক স্পেলে শুরুতেই দুই উইকেট পেয়ে গিয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজের দল। তবে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা ক্রমেই কমিয়ে এনেন গ্রিভস-রোচ জুটি। কয়েক দফায় সুযোগ দিলেও বেঁচে যান দুজনই। সেটার পাশাপাশি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করে ধীরে ধীরে তার জমিয়ে তোলেন জুটি।
চা বিরতির আগে ভাঙে দুর্দান্ত এই জুটি। ইতি টানেন সেই হাসানই। তবে তার আগে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৪০ রানের রেকর্ড গড়েন এই দুজন। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সাত উইকেটের পরও এটাই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান করেছিলেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খান।
হাসানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন রোচ। টেস্ট ক্রিকেটে এটাই তার এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। তিনি মাইলফলক মিস করলেও গ্রিভস সেই ভুল করেননি। দারুণ সব শটের এক ইনিংসকে পূর্ণতা দেন শতকে রুপ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন চার চারে ১১৫ রানে। ৮৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে হাসান ছিলেন বাংলাদেশের সেরা বোলার।
প্রথম সেশনে দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশ রানের মধ্যেই আটকে দেওয়ার আশা যুগিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে টেল এন্ডার কেমার রোচকে নিয়ে জাস্টিন গ্রিভস গড়ে তুললেন অসাধারণ প্রতিরোধ। একজন করলেন সেঞ্চুরি, আর দুজনে মিলে অষ্টম উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন বেশ শক্ত অবস্থানে। এতে ভর করে প্রথম ইনিংসে বড় স্কোরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের চা বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১৩৯ ওভারে ৮ উইকেটে ৪১৫ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (১০৯) ও জেডেন সিলস (১)।
২৬১ রানে পতন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সপ্তম উইকেটের। কে ভেবেছিল, পরের উইকেটের জন্য রীতিমত ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার দশা হবে বাংলাদেশের বোলারদের? গ্রিভস ব্যাটিংটা ভালো জানলেও রোচও যে যেভাবে ‘ব্যাটার’ হয়ে যাবেন, সেটা না ভাবাটাই ছিল স্বাভাবিক।
অথচ অষ্টম উইকেটে এই দুজন মিলে খেললেন চিরায়ত টেস্ট মেজাজে। রান বের করলেন দেখেশুনে খেলে। বোলারকে প্রয়োজন মত দিয়েছেন সম্মান, আবার বাজে বল পেলেই মেরেছেন বাউন্ডারি। সিঙ্গেলস, ডাবলসে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন ফিল্ডারদেরও। সেই প্রক্রিয়ায় তিনশ ছাড়িয়ে দল পার করে ফেলেছে চারশ রানও।
শেষ পর্যন্ত চা বিরতির খানিক আগে জুটিতে ভাঙন ধরিয়েছেন দিনের সেরা বোলার হাসান মাহমুদ। তবে তার আগে গ্রিভস-রোচ জুটি যোগ করে ফেলেন ১৪০ রান, যা এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আর টেস্ট ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি এখন এটি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটিটি ছিল জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিক ও ট্রাভিস ফ্রেন্ডের। ২০০১ সালে তারা যোগ করেছিলেন ১০৮ রান। গ্রিভস-রোচের জুটি সাত উইকেটের পর সব মিলিয়েও এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। আগেরটি এসেছিল ২০০৪ সালে। দশম উইকেটে ১৩৩ রান ছিল শচীন টেন্ডুলকার ও জহীর খানের।
হতাশাময় সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর চারশ পার করার পরই রোচকে ফেরান হাসান। বোল্ড করেন দেন ডানহাতি ব্যাটারকে। তবে তার আগে ১৪৪ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। অন্যপ্রান্তে সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল হয়নি গ্রিভসের। ক্যারিবিয়ানরা প্রথম ইনিংসে আরও কিছু রান যোগ করার জন্য শেষ সেশনে তাকিয়ে থাকবে তার দিকেই।
প্রথম দিনের শেষ দিকে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে অনেকটাই ভারসাম্য এনেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেই ধারাটা বজায় রেখে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে দারুণ এক স্পেলে হাসান মাহমুদ এনে দিলেন জোড়া উইকেট। তবে এরপরই যেন কমে গেল সফরকারীদের বোলিংয়ের ধার। সেই সুযোগে অষ্টম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তুললেন জাস্টিন গ্রিভস ও কেমার রোচ। বড় স্কোরের পথে তাতে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা।
অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের লাঞ্চ বিরতিতে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১১০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৩৬ রান। ক্রিজে আছেন গ্রিভস (৬৩) ও রোচ (১৯)।
আরও পড়ুন
হাসানের প্রথম টেস্ট উইকেট, শক্ত ভিতে শ্রীলঙ্কা |
অথচ প্রথম ঘণ্টায় হাসানের স্পেল বাংলাদেশ শিবিরে আশা জাগিয়েছিল প্রতিপক্ষকে ২৮০-৩০০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলার। দিনের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই গ্রিভসের বিরুদ্ধে হাসানের ছিল কট বিহাইন্ডের আবেদন। তবে সাড়া মেলেনি। তবে তিন বল বাদে জোশুয়া দা সিলভাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তরুণ এই ডানহাতি পেসার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি এই কিপার-ব্যাটারের।
পরের ওভারের প্রথম বলে হাসানকে চার মারেন আলজারি জোসেফ। পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে। তবে এই উইকেটে বোলারের চেয়ে বড় কৃতিত্ব পেতে পারেন গালিতে দাঁড়ানো জাকির হাসান। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে নেন অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ। ওই ওভারেই রোচকে প্রায় ফিরিয়েই দিচ্ছিলেন হাসান। তবে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান ক্যারিবিয়ান পেসার।
আরও পড়ুন
হাসানের তোপ সামলে অশ্বিন-জাদেজার ব্যাটে চড়ে শক্ত অবস্থানে ভারত |
দুই ব্যাটার মিলে এরপর জুটি গড়েন ধীরলয়ে। ৫ রানে থাকতে তাইজুল ইসলামের বলে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন রোচ। ডিপে থাকা হাসান দৌড়ে গিয়ে পাননি বলের নাগাল, বাংলাদেশ হারায় উইকেটে সুযোগ। অন্যপ্রান্তে দেখেশুনে খেলা গ্রিভস। প্রায় নিখুঁত এই ইনিংস খেলার পথে তিনি পরিচয় দেন দুর্দান্ত টেম্পারমেন্টের, যা বাংলাদেশ বোলারদের কাজটা আরও কঠিন করে দেয়।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের একটা বড় অংশ জুড়ে রানের জন্য করতে হয়েছে সংগ্রাম। সেই ম্যাচে তাও একটা লড়াকু স্কোর ছিল দলটির। তবে নিউইয়র্ক স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের দলের কেউই পারলেন না আলো ছড়াতে ব্যাটে বা বলে। মামুলি পুঁজি নিয়ে সামান্যতম লড়াইও তাই জমাতে ব্যর্থ হল বাংলা টাইগার্স।
আবুধাবি টি-টেনের শনিবারের ম্যাচে বাংলা টাইগার্স হেরেছে ৭ উইকেটে। তাদের করা ৮ উইকেটে ৬৮ রান ৪ ওভার ও ২৪ বল হাতে রেখেই পাড়ি দিয়েছে নিউইয়র্ক।
শুরুতেই দুই ওপেনার হারানো বাংলা টাইগার্সের বড় আশা ছিলেন দাসুন শানাকা। আগের ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ রান করা এই শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার এদিনও ছন্দেই ছিলেন। তবে মাত্র ১০ ওভারের খেলায় যে ধরনের ব্যাটিং প্রয়োজন, সেটা করতে পারেননি। ১৯ বলে ২ ছক্কায় করেন মোটে ২২।
আরও পড়ুন
সাকিবে ট্রফি জিতবে বাংলা টাইগার্স? |
তবে দলকে বিপদে ফেলেন মূলত দুই তারকা স্পিন অলরাউন্ডার লিয়াম লিভিনস্টোন ও ইফতিখার আহমেদ। যাওয়া-আসার মিছিলের মধ্যে এক সাকিবই যা কিছুটা লড়াই করেন। খেলেন ১২ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ১৯ রানের ক্যামিও। তবে তাতেও কাজের কাজ হয়নি আর। তার দল বোর্ডে জমা করতে পারে মামুলি স্কোর।
এরপর বল হাতে বলতে গেলে প্রথম ওভারেই আশা মিলিয়ে যায় দলটির। ওয়াইড-নো বলময় ওভারে মোট ১২টি ডেলিভারি করা ডেভিড পেইনে দেন ১৭ রান। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে এভিন লুইসকে ফেরান ইমরান তাহির।
ছুটতে থাকা নিউইয়র্ককে জোড়া আঘাতে ধাক্কাটা দেন সাকিবই। প্রথম বলেই ডেল্যাড ব্রেভিসকে ফেরানোর পর আসিফ আলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এক বল বাদে। সেই ওভারে বাংলা টাইগার্স অধিনায়ক দেন মাত্র দুই রান।
আরও পড়ুন
সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলাতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি বিসিবি, বললেন ফারুক |
তবে হার আটকাতে তা যথেষ্ট হয়নি। চার ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেন নিউইয়র্ক।
দেশের ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির ঝড় তুলতে আসছে আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক এনসিএল টি-টোয়েন্টি পাওয়ার্ড বাই ওয়ালটন। সিলভার স্পন্সর হিসেবে থাকছে লিলি ময়েশ্চারাইজ লোশন। শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ, পরিচালক ফাহিম সিনহা। স্পন্সরদের পক্ষ থেকে ছিলেন আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ফরমান আর. চৌধুরী, ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিনুল ইসলাম খান ও রিমার্ক-হারল্যান গ্রুপের ব্র্যান্ড এম্বোসেডর, চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ।
বিসিবি সভাপতি ফারুক মনে করেন, এই টুর্নামেন্টে দেশীয় ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।
“বিপিএলের আগে এই টুর্নামেন্ট দেশী ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ। আমি আশা করি ক্রিকেটাররা সে সুযোগ নেবে এবং নিজেদের মেলে ধরবে, যা কিনা দেশের ক্রিকেটকে সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। এছাড়া আমি টুর্নামেন্টের ব্রডকাস্টার টি স্পোর্টসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করবে।”
শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এনসিএল টি-টোয়েন্টি। আগামী ১১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্ট। অংশ নেবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের সাত দল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, সিলেট বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো। আট দলের লিগ পর্বের ম্যাচগুলো হবে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম ও সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম আউটার মাঠে। প্লে-অফের চারটি ম্যাচ হবে ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
সবগুলো ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের প্রথম ও একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে। এছাড়া ভারতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ফ্যানকোড ও বিশ্বের বাকি অংশে ম্যাচগুলো দেখা যাবে টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেলে।
২ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৮ দিন আগে
১১ দিন আগে
১১ দিন আগে
১২ দিন আগে
১২ দিন আগে
১২ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৬ দিন আগে
১৭ দিন আগে
১৭ দিন আগে
২৮ দিন আগে