২৯ জুলাই ২০২৪, ৪:৪০ এম
একটা ক্লাব যখন মূল একাদশে স্বীকৃত স্ট্রাইকার ছাডাই লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে, তা বলে দেয় দলটির আক্রমণভাগ কতোটা সমৃদ্ধ। করিম বেনজেমার বিদায়ের পর বড় মাপের ফরোয়ার্ড দলে না টেনেই অবিশ্বাস্য সেই কাজটাই গত মৌসুমে করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই মৌসুমে অবশ্য আক্রমণে শক্তি এরই মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগোদের সাথে যোগ দিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে ও এন্দ্রিক। তাদের একত্র করে রিয়ালের চোখ নিজেদের আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার।
স্রেফ কাগজে-কলমে যদি হিসেব করা হয়, তাহলে এই চারজনকে নিয়ে গড়া যেকোনো দলের আক্রমণেরই ‘ক্লিক’ করার কথা। তবে খোদ রিয়ালেই ইতিহাস রয়েছে, সব বড় মাপের তারকা দলে টানা মানেই নিশ্চিত সাফল্য নয়৷ উল্টো জিদান-রোনালদো-ফিগো-বেকহামদের বিখ্যাত ‘গ্যালোকটিকোস’-দের ব্যর্থ হতেও দেখেছে ক্লাবটি৷ এছাড়া ২০০৯-১০ সালে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, বেনজেমা, কাকা, মেসুত ওজিল, সামি খেদিরাদের দলে টেনেও রাতারাতি সাফল্য পায়নি রিয়াল। বরং বলা যায়, প্রথম কয়েক মৌসুমে মেলেনি আশানুরূপ সাফল্যও।
আর সেই কারণে সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, রিয়ালের নতুন আক্রমণ নিয়ে চিন্তার কারণও রয়েছে কিছু। সবচেয়ে বড় বিষয় লেফট উইংয়ে কে থাকবেন প্রথম পছন্দ, সেই বিষয়টি। ভিনিসিয়ুস ও এমবাপে দুজনই এই পজিশনে বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই খেলোয়াড়। রিয়ালে লম্বা সময় ধরেই এই পজিশনটি আছে ভিনিসিয়ুসের দখলে। তিনি যে মাপের খেলোয়াড় এবং পজিশনটি যেভাবে নিজের করে নিয়েছেন, তাতে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়াটা হবে বড় বোকামি।
আবার এমবাপেকে তার সেরা পজিশন ছাড়া খেলানোটাও খুব বিচক্ষণ কাজ হবে না হয়ত। ফ্রান্স ও পিএসজিতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ‘ফলস নাইন’ বা স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন তিনি। তবে একেবারেই ভালো করতে পারেননি। সরাসরি বলেও দিয়েছেন কয়েকবার, এই পজিশনে খেলাট উপভোগ করেন না তিনি। তবে রিয়ালে নিজের আনুষ্ঠানিক পরিচিতির দিন অবশ্য জানিয়েছেন, কোচ ও দল যেখানে চাইবে, সেখানেই খেলবেন তিনি।
আর কোচ কার্লো আনচেলত্তি যে আভাস দিয়েছেন, তাতে এমবাপেকে অন্তত মৌসুমের শুরুতে খেলতে হতে পারে স্ট্রাইকার ও রাইট উইং পজিশনে। উল্লেখ্য, রিয়ালে ফরাসি তারকা পেয়েছেন স্বীকৃত স্ট্রাইকারদের ‘৯ নম্বর জার্সিও। এটি অবশ্যই বড় ব্যাপার না হলেও, এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে ক্লাব তার কাছ থেকে স্ট্রাইকারের মতোই গোলের সার্ভিস চাইবে।
প্রশ্নটা এখানেই, নতুন দেশ, নতুন ক্লাব, নতুন একটা লিগে ভিন্ন পজিশনে শুরুর কয়েকটা ম্যাচে যদি এমবাপে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে আনচেলত্তি কি ফরমেশনে বদল আনবেন তার জন্য? কারণ, শুরুতে ভালো না করলে প্রত্যাশার চাপ এমবাপের ওপর তাতে আরও যে চেপে বসবে। আবার তার সেরাটা বের করে আনতে ভিনিসিয়ুসকে লেফট উইং থেকে সরিয়ে দিলে সেটা দলের ওপর ভিন্ন প্রভাবও ফেলতে পারে। ক্লাবে যে ব্রাজিলিয়ান তারকা বেশ জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী খেলোয়াড়দের একজন।
এমবাপেকে রাইট উইংয়ে খেলানোর যে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও বেশ ঝুকিপূর্ণ। এমনিতেও গত দুই মৌসুমে অনেকটা সময় এই পজিশনে রদ্রিগোকে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা জানাচ্ছেন মিডফিল্ডার ফেদে ভালভের্দে। এমবাপে যদি এই পজিশনে মূল একাদশে খেলেন নিয়মিত, তাহলে রদ্রিগোকে একটা বড় সময় কাটাতে হবে বেঞ্চেই। ক্লাবে দারুণ সব কীর্তির পর বদলি খেলোয়াড়ের রোল নিশ্চয় ভালোভাবে নেবেন না তিনি।
এই দুই পজিশনের পর আসে স্ট্রাইকারের বিষয়টি। ব্রাজিল জাতীয় দলে বদলি নেমে কিছু ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিলেও এন্দ্রিক এখনও আছেন শুরুর দিনগুলোতে। বয়স মাত্র ১৭। তুমুল প্রতিভা থাকলেও ফলে পরিণতবোধের ঘাটতি আছে বেশ। কোপা আমেরিকায় যা স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। রিয়ালের মত একটি ক্লাবে শীর্ষ পর্যায়ের ধারাবাহিকভাবে গোল করার জন্য তিনি যোগ্য কিনা, তা নিয়ে তাই প্রশ্ন থেকেই যায়।
আর এমবাপে যদি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন, তাহলে এন্দ্রিকের ওপর চাপ বাড়বে বেশ। কারণ, তখন অল্প সুযোগ পেলে সেটাই কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প থাকবে না তার সামনে। একজন উঠতি খেলোয়াড়ের জন্য রিয়ালের মাপের একটি ক্লাবে খেলাটাই বিশাল চাপের। সেখানে যদি শুরুতেই সেরাটা দেওয়ার চাপও যোগ হয়, তাহলে সেটা গড়বড় হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। ফলে এই পজিশনটি রিয়ালের জন্য ভালো চিন্তার বিষয় হতে পারে যদি এমবাপে বা এন্দ্রিক শুরুটা ভালো না করতে পারেন।
এই চারজন বাদে মিডফিল্ডার হলেও গত মৌসুমে রিয়ালের আক্রমণের প্রাণ হওয়া জুড বেলিংহামকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। এমবাপে দলে আসায় তার ভূমিকাটা কেমন হবে, সেটা নিশ্চিত নয়। ৪-৩-৩ ফরমেশনে তিনি কী আগের মত ওপরে উঠে খেলার স্বাধীনতা পাবেন, নাকি মিডফিল্ডার হিসেবেই মূল কাজটা সামলাবেন, সেটাই আলোচনার বিষয়। এখানে এটাও মাথায় রাখতে হবে, গত মৌসুমে রিয়াল ছেড়েছেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার টনি ক্রুস, যিনি প্রায় এক যুগ ধরে ছিলেন দলটির মাঝমাঠের কান্ডারি।
তার চলে যাওয়ায় মিডফিল্ড পরিকল্পনায় নিশ্চিতভাবেই পরিবর্তন আনতে হবে আনচেলত্তিকে। আরেক অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচের বয়স হতে যাচ্ছে ৩৯। ফলে তিনিও একাদশে নিয়মিত থাকবেন না। যা আভাস দিচ্ছে, ফরমেশনে পরিবর্তন এনে বেলিংহামকে নিচে নেমেই হয়ত খেলাবেন রিয়াল কোচ।
সব মিলিয়ে রিয়ালের নতুন যে আক্রমণ লাইনআপ, তার মাঝে অবিশ্বাস্য সম্ভাবনা থাকলেও নতুন-পুরনো খেলোয়াড়দের একসাথে ভালো করার জন্য বেশ কিছু বিষয়কে ‘ক্লিক’ করতে হবে। আর নানা সমীকরণের প্রভাবে সেই কাজটা আনচেলত্তির জন্য মোটেও সহজ হতে যাচ্ছে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এমবাপেকে ভিন্ন পজিশনে খেলিয়ে সেরাটা বের করে আনা, এন্দ্রিককে পরিণত করা এবং দলীয় সাম্য ধরে রাখাটাই হবে ইতালিয়ান কোচের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি যদি তা পারেন, রীতিমতো উড়বে রিয়াল। আর যদি না পারেন? উত্তরটা রিয়ালের সমর্থকরা জানেন, তবে দেখতে চাইনেন না নিশ্চয়।
৭ দিন আগে
৭ দিন আগে
১১ দিন আগে
১১ দিন আগে
১২ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৬ দিন আগে
১৭ দিন আগে
২৮ দিন আগে